সুখপাখির খোঁজে পর্ব৪

#সুখপাখির_খোঁজে 💔
#লেখনিতে_সুমাইয়া_ইসলাম_মিম
#পর্ব_৪
.
ইয়াসিন বাসায় ফিরে নাদিরাকে রুমে দেখতে পায় না। ওয়াশরুমে পানির আওয়াজ পেয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। ইয়াসিন খাটে বসে। দশ মিনিট হয়ে গেলো এখনো নাদিরা ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে না। হঠাৎ খাটে চোখ বুলাতেই দেখে নাদিরার ব্যাগে একটা ফাইল। কৌতুহলবশত ইয়াসিন ফাইলটা হাতে নেয়। যেই না খুলে দেখতে যাবে তার আগেই ওয়াশরুমের ভেতর থেকে চিৎকার করে কান্নার আওয়াজ আসলো। ইয়াসিন ভয় পেয়ে যায়। সে দরজায় শব্দ করে নাদিরাকে ডাকতে থাকে। তৎক্ষণাৎ কান্নার শব্দ বন্ধ হয়ে যায়। তাও ইয়াসিন নাদিরাকে ডাকে। কিন্তু ভিতর থেকে কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। ইয়াসিন একবার ভাবলো দরজাটা ভাঙবে এছাড়া আর কোন উপায় নেই। কিন্তু দরজা ভাঙার আর প্রয়োজন হয় নি তার আগেই নাদিরা দরজা খুলেছে। ইয়াসিন তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। চোখ মুখ ভিজে আছে। শরীর বারবার কেঁপে উঠছে। নাদিরার নজর দিকে। মুখে নেই কোন কৃত্তিম সৌন্দর্য, চুলগুলো অগোছালোভাবে মুখের দুদিকে পড়ে আছে। এতোদিনেও ইয়াসিন নাদিরাকে ভালো করে লক্ষ্য করে নি। কিন্তু আজ মনে হচ্ছে তাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে যে আদো তাকে তৈরি করতে উপরওয়ালা কোন ত্রুটি রেখেছে কিনা। নাদিরা ইয়াসিনকে পাশ কাটিয়ে তার ব্যাগ নিয়ে তার কাবার্ডে রেখে দেয়। ইয়াসিন এখনো ওইভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। তার নিজের কাছে বড্ড অসহায় লাগছে। কেমন এক স্তব্ধতা তাকে ঘিরে ফেলেছে চারিপাশ থেকে। খুব কষ্টে নিজেকে সামলালো ইয়াসিন। নাদিরার দিকে ঘুরতেই দেখে সে ঘরের কাজ করছে আর তার ঠোঁটজোড়া মৃদু কাঁপছে, যেন কিছু বিড়বিড় করছে। ইয়াসিন যে এতোক্ষন ধরে এখানে এই রুমে দাঁড়িয়ে তা যেন তার খেয়ালেই নেই। একবারও তাকায় নি ইয়াসিনের দিকে আর না কোন কথা বলেছে। ইয়াসিন একটু অপমানিত বোধ করলো। সে এগিয়ে এসে বলল,

-“নাদিরা! তুমি কোথায় গিয়েছিলে?”

নাদিরা নিরুত্তর। নাদিরাকে দেখে মনে হচ্ছে সে কোন ঘোরের মধ্যে আছে। একা একা বিড়বিড় করছে। আরেকটু এগিয়ে এসে সে নাদিরার বিড়বিড় করা কথা শুনতে চেষ্টা করে।

-“কল্পনায় এসে বারবার জ্বালাবে। বাস্তবেও জ্বালাবে। কিন্তু আমার হবে না। কখনো না। আমি কেউ না তার কিন্তু সে আমার সব। আর জ্বলবো না। মরে যাবো।”

ইয়াসিন কেঁপে ওঠে নাদিরার বিড়বিড় করা কথা শুনে। ইয়াসিন মনে মনে ভাবতে থাকে কতটা ভালোবাসলে নিজের প্রিয় মানুষকে তার সব জায়গা দেওয়া যায়। এমন কি নিজের গড়া কল্পনায়ও। কই সেও তো উপমাকে ভালোবাসে, কিন্তু সে তো ভুলে কখনো স্বপ্নেও উপমাকে দেখে না। ইয়াসিন নাদিরার বাহু ধরে তাকে নিজের দিকে ফিরাতেই নাদিরা চমকে ওঠে। ইয়াসিনের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। ইয়াসিনের এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা দেখে সে বেশ অবাক হয়। হঠাৎ করেই হেলে পড়ে যায় সে। ইয়াসিন তার বাহু ধরে থাকায় নিচে পড়ে নি সে।

.
পাক্কা পাঁচ ঘন্টা ঘুমিয়ে ছিল নাদিরা। ঘুম বললে ভুল হবে সে একদমই বেহুঁশ ছিল। তার শরীর থরথর করে কাঁপছে। বিছানায় শোয়া থেকে উঠতেই দেখে ইয়াসিন ফোনে কথা বলছে। তার মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেল। চারপাশ তাকাতেই দেখে রাত, ঘড়ির দিকে তাকাতে দেখে রাত ৮:৫৬ বাজে। সে এতোক্ষন মরার মতো শুয়ে ছিল ভাবতেই কেমন লাগলো। বাসার কোন কাজই কম্পলিট হয় নি। কে জানে তার শাশুড়ি একা একা কতো কষ্ট করছে।

নাদিরাকে উঠতে দেখে ইয়াসিন এগিয়ে আসে। নাদিরা ইয়াসিনকে দেখতেই ভাবে সে কি দুপুরে স্বপ্ন দেখেছিল? তা নয়তো কি? ইয়াসিন নাদিরাকে দেখে ভ্রু কুঁচকালো। সে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। রাগ লাগছে প্রচুর। নাদিরা কোন কথা না বলে উঠতে নিতেই মাথা ঘুরে পড়তে নেয়। ইয়াসিন “সাবধানে” বলে তাকে ধরতে যায় কিন্তু তার আগেই নাদিরা নিজেকে সামলে নেয়। ইয়াসিন নাদিরাকে জিজ্ঞাসা করে,

-“কেমন লাগছে শরীর? বেশি দুর্বল লাগছে?”

নাদিরা কোন কথা না বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। ইয়াসিনের প্রচুর রাগ লাগে তবু নিজেকে সামলে নেয়।

একবারের জন্যও ইয়াসিন নাদিরাকে একা পায় নি। রাতে নাদিরা রুমে এসে দেখে ইয়াসিন বিছানায় আধশোয়া হয়ে ল্যাপটপ চালাচ্ছা। সে নাদিরার দিকে তাকায় কিন্তু নাদিরা তার দিকে একবারও তাকায় না। সে বারান্দায় চলে যায়।

রাত ১২ টা ছুঁই ছুঁই। চারপাশে কেমন যেন শুন্যতায় ঘেরা। আস্তে আস্তে রাস্তা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। সোডিয়ামের আলোতে রাস্তাটা বেশ। মোহনীয় লাগছে নাদিরার কাছে। তার মনে এক অসম্ভব ইচ্ছা জাগলো। কিন্তু সে জানে এটা কখনোই পূরণ হবে না। এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে গ্রিলে মাথা ঠেকালো সে। হঠাৎ পাশে কারো অস্তিত্বের আভাষ পেলো নাদিরা। পাশে তাকাতেই দেখে ইয়াসিন। নাদিরা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মাথা নুইয়ে রাখে। কঠিন নিরবতা যেন তাদের ঘিরে রেখেছে। এই দমবন্ধ পরিস্থিতির ইতি ঘটিয়ে ইয়াসিন বলল,

-“নাদিরা তুমি কি কিছু লুকাচ্ছো? আজ কোথায় গিয়েছিলে তুমি?”

নাদিরা করুন সুরে বলে,

-“রেস্টুরেন্ট এর বিষয়টা নিছক কাকতালীয় বিষয়! আমি আপনাকে কোনভাবেই ফলো করছিলাম না। আর না এতে আমার কোন লাভ আছে।”

ইয়াসিন অবাক চোখে নাদিরার দিকে তাকিয়ে রইলো। নাদিরা আবারও বলল,

-“ইয়াসিন সাহেব! আপনি আমাদের ডিভোর্স ফাইল করেন! আপনার কোন ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। আমি আপনাকে এই সম্পর্ক থেকে, আমার থেকে মুক্তি দিতে চাই!”

হঠাৎই ইয়াসিন নাদিরার বাহু ধরে নিজের একদম কাছে এসে চেঁচিয়ে বলল,

-“চাইনা আমার তোর থেকে মুক্তি!”

,
,
,
চলবে………………..❣️

(আমি একটু অসুস্থ! তাই আজকের পর্ব ছোট হয়েছে। কাল বড় দিবো ইনশাল্লাহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here