পর্বঃ৫০
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(গল্প কপি পোস্ট সম্পূর্ণ নিষেধ।)
…
কলিং বেলের শব্দ পেয়ে রাইদা দৌড়ে রুমে থেকে বের হয়। মারিয়া দরজা খুলতে নিলে রাইদা এসে দরজা খুলে। দরজা খুলে মান্নান রাফায়েতকে দেখে রাইদা মন খারাপ করে।
‘কখন ফিরলা? আমাকে কল দিয়ে তো জানালা না।’,মান্নান রাফায়েত জিজ্ঞেস করে।
‘সকালে ফিরেছি।’,রাইদা জবাব দেয়।
‘তোমার কি মন খারাপ? কিছু হয়েছে?’,মান্নান রাফায়েত রাইদাকে জিজ্ঞেস করে।
রাইদা জবাব দিতে নিলে মাইমুনা এসে বাঁধা দেয়।
‘আপা তো বেইন্না কাল হইতে ঘরে দুয়ার দিয়া বইয়া রইছে হেই খবর আমনের ধারে কইছে কেউ? হেই কথাডা তো কেউ কইবো না। হারাডা দিন গেলো নাওয়া খাওয়া সব বাদ দিয়া এমনে বইয়া আছে।এদিকে যে আপারে অপমান করছে হে তো খবরই নিলো না।’,মাইমুনা রসিয়ে রসিয়ে কথাগুলো বলে।
‘রওশনের আবার কি হয়েছে? চলো তো দেখি গিয়ে।’
মান্নান রাফায়েত রুমের দিকে যায়। রাইদাও পিছন পিছন যায়।
‘রওশন দরজা খুলো। কি হয়েছে খুলো দরজা।’,মান্নান রাফায়েত দরজায় নক করে কথাগুলো বলে।
‘আমাকে তো কেউ বলেনি উনি দরজা লাগিয়ে বসে আছে। দেখি সরো আমি ডাকছি। দরজা খুলো এভাবে রাগ করে দরজা লাগিয়ে বসে আছো কেনো?’
কথাগুলো বলে রাইদা দরজায় আঘাত করতে থাকে।
‘তুমি রওশনকে কি বলেছো?’,মান্নাত রাফায়েত রাইদাকে জিজ্ঞেস করে।
‘সকালে হুট করেই রেগে গিয়েছিলাম তখন অনেক কিছু বলেছি যা আমার বলা উচিত হয়নি।’,রাইদা অপরাধীর ন্যায় কথাগুলো বলে।
‘এহন তো এইডিই কবি অথচ তহন অপমান করার সময় মনে আছিলো না?’,মাইমুনা রাইদাকে চেচিয়ে বলে।
‘মাইমুনা চুপ করো এখন এসব বলে লাভ নেই। রওশন দরজা খুলো আমাকে বলো কি হয়েছে।’
হুট করে রওশন আরা রুমের দরজা খুলে। মান্নান রাফায়েত দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করে। রাইদাও পিছন পিছন ঘরে ঢুকে মাইমুনার মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দেয়। মাইমুনা রুমে ঢুকতে নিচ্ছিলো রাইদার এমন কান্ডে ক্ষেপে যায়।
রওশন আরা চুপ করে বিছানায় বসে আছে। মান্নান রাফায়েত এসে পাশে বসে আর রাইদাও এসে আরেক পাশে বসে।
‘কি হয়েছে রওশন আমাকে বলো।’,মান্নান রাফায়েত জিজ্ঞেস করে।
রওশন আরা কোনো জবাব না দিয়ে চুপ করে থাকে। রাইদা রওশন আরার কাঁধে হাত রাখে। রওশন আরা কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায় না। রাইদা ঘাড় নুইয়ে রওশন আরার কাঁধে রেখে তার বাম হাত জড়িয়ে ধরে।
‘আমি জানি যত যাইহোক দিন শেষে আমার কোনো ক্ষতি হোক তুমি চাও না। অতীতে তুমি নিজের কর্মের জন্য অনুতপ্ত সেটাও আমি জানি কিন্তু আমিও যে তোমার মেয়ে তাই তো জেদটা বেশি। তুমি এখন যত যাই করো আমার অতীতটা বদলাতে পারবে না তবে আমার পাশে থেকে আমার ভবিষ্যৎটা সুন্দর করতে সাহায্য করতে পারো। মায়ের কাছ থেকে মেয়েরা ভরসার জায়গা টুকু চায় সবসময়। মা তুমি আমার মা এই সত্যিটা যেমন আমি বদলাতে চাই না তেমনি সায়ন আমার বর এটাও আমি বদলাতে চাই না। তোমাদের মধ্যে আমি কোনো কম্পেয়ার করছি না তবে এতগুলো বছরের মধ্যে সায়ন আমার জীবনে এবার এসে অনেক কিছু বদলে দিয়েছে। লোকটা ধৈর্য্য ধরে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসে আমার পাশে রয়েছে এমনটা কয়জনে করে বলো? রাগ না করে একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করো।’
রাইদার কথা শুনে রওশন আরা কোনো জবাব দেয় না।
‘তখনকার ব্যবহারের জন্য আমি ক্ষমা চাচ্ছি। সম্মান দিলে সম্মান পাওয়া যায় এই টুকু শিক্ষা আমি সায়নের মায়ের থেকে পেয়েছি। নিজের মাকে সম্মান দিলে তবেই আমি সম্মান পাবো। আমি কথা দিচ্ছি আজকের পর থেকে কখনোই তোমাকে অসম্মান করবো না কিংবা কারো সামনে ছোট হতে দিবো না।’
‘এবার মেয়েটার সাথে রাগ করে থেকো না রওশন। মেয়েটা এমনিতেই ভেঙে পড়েছে কোনো বিষয় নিয়ে। ওর এখন এই মূহুর্তে আমাদের সাপোর্টের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি। এত বছর পর তোমার মেয়ে তোমাকে মা ডেকেছে এরপরও তুমি রাগ করে থাকবে?’
মান্নান রাফায়েতের কথায় রওশন আরার চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। ডান হাত তুলে রাইদার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
‘ঠিক আছে আমি আর রাগ করবো না। তোর ইচ্ছেই আমার ইচ্ছে আর সংসার করবি তুই মাঝখানে আমি বাঁধা দেওয়ার কেউ না। মনে রাখবি তোর মা সবসময়ই তোর পাশে আছে।’,রওশন আরা রাইদাকে কথাগুলো বলে।
‘তাহলে আজকে থেকে ঘরে মা মেয়ের ঝগড়া একেবারে বন্ধ। আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক ঠিক হয়েছে আমার আর কিছু চাওয়ার নেই।’,মান্নান রাফায়েত কথাটা বলে।
‘আপনার কাজ আছে অনেক এভাবে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকলে হবে না। বেয়াই-বেয়াইনকে কল দিয়ে বলবেন মেয়েকে আমরা তুলে দিবো তারা যেনো এসে তারিখ ঠিক করে যায়। ওদের বিয়েটাও তো রেজিস্ট্রি করতে হবে।’
রওশন আরার কথা শুনে মান্নান রাফায়েত খুশি হয়।
‘ঠিক আছে কালকেই কল দিয়ে জিজ্ঞেস করবো। এখন আমি হাত-মুখ ধুয়ে আসি।’,মান্নান রাফায়েত জবাব দেয়।
‘রান্না-বান্না মর্জিনা কি করেছে কে জানে আমিও গিয়ে ভালো কিছু রান্না বসাই। তুই রুমে গিয়ে সায়নকে খবরটা দে।’,রওশন আরা কথাটা বলে রাইদাকে।
রওশন আরার কাঁধ থেকে মাথাটা তুলে রাইদা বসে থাকে। তার মাথায় চলছে অন্য চিন্তা।
‘কি হলো মুখটা এমন পেঁচার মতো রাখছিস কেনো?’
রওশন আরার কথা শুনে রাইদা জোরপূর্বক হাসে।
‘কিছু না চলো খিদে পেয়েছে আমার।’,রাইদা বলে।
‘হ্যা চল রান্না বসাই।’
দরজা খুলে রুম থেকে রওশন আরা রান্নাঘরে যায়। রাইদা চলে যায় নিজের রুমে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে সায়ন কল ব্যাক করেনি।
সায়নের নাম্বার আবারো ডায়াল করলে রিং বাজতে বাজতে কল কেটে যায় কিন্তু সায়ন কল রিসিভ করে না।
মেসেজ অপশনে গিয়ে রাইদা মেসেজ টাইপ করে।
‘আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন? সারাদিন গেলো একটা খোঁজ ও নিলেন না আবার আমার কলও রিসিভ করছেন না। আপনাকে একটা গুড নিউজ দেওয়া আছে। মা আপনার বাবা-মায়ের সাথে দেখা করে আমাদের রেজিস্ট্রি বিয়ের তারিখ ঠিক করবে। বিয়েটা হলে আমি একেবারে আপনাদের বাড়ি চলে আসবো।’
মেসেজ টাইপ করা শেষ হলে সায়নের নাম্বারে পাঠায় রাইদা। ফোন হাতে নিয়ে সায়নের উত্তরের অপেক্ষা করতে থাকে।
সায়ন অফিস থেকে বের হচ্ছিলো ফোনে মেসেজ আসার শব্দ পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে রাইদার মেসেজ। কৌতুহল হয়ে মেসেজটা ওপেন করে পড়তে শুরু করে। মেসেজটা পড়ে সায়ন খুশি হয় কিন্তু খুশিকে চাপা দিয়ে রাইদার সাথে অভিমানটা বজায় রাখার সিদ্ধান্ত নেয়।
এদিকে মেসজের উত্তর না পেয়ে রাইদা আবারো মেসেজ পাঠায়।
‘আপনি কি রাতে আসবেন? বাসায় না ফিরলে চলে আসেন।’
ফোনটা সায়নের হাতেই ছিলো রাইদার দ্বিতীয় মেসজটা সে সাথে সাথেই পড়ে।
মেসেজ পড়ে সায়নের ইচ্ছে করছে এক্ষুণি গিয়ে রাইদাকে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু নিজেকে সামলে নেয় সে। খানিকক্ষণ পর রাইদার মেসেজের রিপ্লাই করে।
‘আমি অনেক ব্যস্ত সম্ভব না আসা।’
সায়নের রিপ্লাই পড়ে রাইদার মুখ কালো হয়ে যায়। এতো কিছু বলার পরও সায়ন নিজের রাগটা দেখাবে ভাবতে পারেনি রাইদা।
সায়নের নাম্বারে কল লাগায় কিন্তু সায়ন কল রিসিভ করে না। জিদে ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে মেরে বারান্দায় চলে যায় রাইদা। নিজের উপরই তার রাগ হচ্ছে কেনো সায়নকে আগ বাড়িয়ে এতো কিছু বললো এই জন্যই সায়ন এখন এমন করছে সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না তার।
গাড়িতে বসে ফোন হাতে নিয়ে রাইদার পাঠানো মেসেজ দু’টোতে বারবার চোখ বুলায় সায়ন। এই টেকনিক এতো জলদি কাজ করবে সে ভাবতে পারেনি।
‘আর কয়েকটা দিন সবুর করো রি এরপর একেবারে বাসায় এনে ঘরে তালা মেরে রেখো দিবো যাতে আমাকে ফেলে না যেতে পারো। তোমাকে ছেড়ে কয়েকটা রাত নির্ঘুম কাটাতে হবে এর বিনিময়ে তোমাকে সারাজীবনের জন্য পেলে এই কষ্ট কিছুই না।’,বিরবির করে কথাগুলো বলে সায়ন হাসে।
গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বাসায় রওনা দেয়।
বাসায় ফিরে কলিংবেল দিলে নিপা এসে দরজা খুলে। হাসিমুখে সায়ন ঘরে প্রবেশ করে।
‘মা এদিকে আসে শুনে যাও।’
সায়নের ডাকে মিসেস রিনা নিজের রুম থেকে বের হয়। সায়ন্তিকাও ছুটে আসে ডাক শুনে।
‘ভাইয়া ভাবী কবে ফিরবে? আজকে তো ভার্সিটিতেও যায়নি। ভাবীকে ছাড়া ভার্সিটি বাসা কোনোটাই আমার ভালো লাগছে না। মিস করছি অনেক ভাবীকে।’,সায়ন্তিকা মন খারাপ করে সায়নকে বলে।
‘ফিরবে খুব জলদি। মা তোমার বউমার বাবা আমাকে আমার শ্বশুড় তোমাদের কল দিয়ে আমাদের রেজিস্ট্রি বিয়ের কথা বলবে আর তেমার বউমাকে সারাজীবনের জন্য আমার হাতে তুলে দিবে।’
‘কি বলছিস! এতো জলদি ওরা রাজি হলো কীভাবে? আর বউমাও রাজি হয়ে গেছে?’,সায়নের কথা শুনে চমকে প্রশ্ন করে মিসেস রিনা।
‘তোমার বউমাকে এমন ঔষধ দিয়েছি সে তো একদম রাজি তবে বিয়ের তারিখ নিয়ে দেরি করবা না পারলে কয়েকদিনের মধ্যে তারিখ দিবা। তোমার বউমাকে ছেড়ে থাকতে আমার কষ্ট হয়। মেয়েটাকে ভালোবেসে বুঝালে বুঝে না কিন্তু রাগ করলাম এখন ঠিকই বুঝতেছে। আমি আবার তোমার বউমার সাথে বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারি না তাই যা করার জলদি করবা।’
সায়নের কথায় মিসেস রিনা হেঁসে দেয়।
‘রাগ করে থাকতে পারিস না যখন তাহলে রাগ করিস কেনো?’,মিসেস রিনা সায়নকে বলে।
‘রাগ না করলে সে তো বুঝে না মা। দেখো রাগ করলাম বলেই তার মনে হলো তার বর আছে তার সংসার আছে না হলে সে তো নিজেকে সিঙ্গেল মনে করে।’,সায়ন হতাশ গলায় কথাগুলো বলে।
‘ভাইয়া ভাবীর বাসায় মা-বাবার সাথে আমিও গিয়ে দেখা করে আসবো।’,সায়ন্তিকা বলে।
‘ঠিক আছে যাবি তবে শিখিয়ে দিবো কি কি করবি।’,সায়ন জবাব দেয়।
‘যা গোসল সেরে আয় আমি খাবার দিচ্ছি। তোর বাবাও এখন ফিরবে।’,মিসেস রিনা বলে।
সায়ন চলে যায় নিজের রুমে।
রাইদা এসে খাবার টেবিলে বসেছে। রওশন আরা টেবিলে এনে রাইদা আর মান্নান রাফায়েতের পছন্দের তরকারি রাখছে। মান্নান রাফায়েত চেয়ার টেনে রাইদার পাশে বসে। মারিয়া,মাইমুনাও খেতে বসে।
রওশন আর সবাইকে খাবার বেড়ে দিতে নিলে রাইদা তাকে টেনে খেতে বসায়। মর্জিনাকেও ডাকে খেতে।
সকলে এক সাথে খেতে বসে গল্প করতে শুরু করে। ধীরে ধীরে খাবারের টেবিলের পরিবেশ বদলে আড্ডায় রুপান্তরিত হয়। রাইদা ভীষণ খুশি হয় বাবা-মায়ের সাথে একসাথে এভাবে খেতে বসে।
খাওয়া শেষ করে মারিয়া আর রাইদা রুমে চলে যায়। রুমে এসে সায়নকে আবারো কল দেয় কিন্তু সায়ন কল রিসিভ করে না। রাইদাও অভিমান করে শুয়ে পড়ে।
….
পরেরদিন সকালে ভার্সিটিতে এসে অডিটোরিয়ামে অনুশীলন করতে শুরু করে রাইদা। রাইদার সাথে অর্ক,পায়েল,বাপ্পি ছিলো অনুশীলনে। ফাহিমের একটা কাজ থাকায় তার দেরি হবে আসতে আর রুহি গেছে ডিউটিতে।
অনুশীলন করে হাঁপাতে হাঁপাতে রাইদা চেয়ারে বসে তখন ফাহিম প্রবেশ করে। পানির বোতল থেকে পানি পান করে রাইদা ফাহিমের দিকে তাকায়। ততক্ষণে ফাহিম এসে রাইদার পাশের চেয়ার টেনে বসেছে।
‘মনির কি অবস্থা? আন্টির পছন্দ হয়েছে ওকে? কোনো সমস্যা নেই তো?’,ফাহিমকে রাইদা প্রশ্ন করে।
‘মা তো সঙ্গী পেয়ে খুব খুশি। আশা করি মনিও খুশি হবে আমাদের বাসায় থেকে।’,ফাহিম জবাব দেয়।
‘ওর এসএসসি পরীক্ষাটা শুধু গ্রামে গিয়ে দিয়ে আসবে এরপর এখানেই তোদের কাছে থাকবে। মেয়েটার একটা ভালো জীবন হোক সেটা চাই। তুই আর আন্টিই পারবি ওকে ভালো একটা জীবন দিতে। আন্টির মেয়ে আর তোর বোন হয়ে থাকবে।’
‘চিন্তা করিস না এই বিষয় নিয়ে আর।তুই ভরসা করেছিস সেটার মর্যাদা আমি রাখবে। ওকে আমার বোনের মতো লালনপালন করবো।’
ফাহিমের কথায় রাইদা কিছুটা ভরসা পায়।
মনিকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছিলো তখন রাইদার সাথে যোগাযোগ হলে রাইদা তাকে ঢাকায় আসতে বলে। গতকালকে মনি রাইদার ছোট খালার সাহায্য নিয়ে ঢাকায় আসে। ফাহিম মনিকে রিসিভ করে নিজের বাসায় নিয়ে যায় অবশ্য রাইদার অনুরোধে। ফাহিমের মা মনিকে পেয়ে এখন খুশি।
অনুশীলন শেষ হলে সকলে চলে যায় ক্লাস করতে। টানা ক্লাস করে বের হয় রাইদা। হাঁটতে হাঁটতে ক্যান্টিনে যাচ্ছলো দূর থেকে সায়ন্তিকাকে দেখে ডাক দেয়।
‘এই সায়ন্তিকা শুনো।’
রাইদার ডাক শুনে সায়ন্তিকা তাকায়। রাইদা দ্রুত হেঁটে সায়ন্তিকার সামনে আসে।
‘আপু আমি এখন ক্লাসে যাবো পরে কথা বলবো তোমার সাথে।’,কথাটা বলে সায়ন্তিকা চলে যায়।
রাইদা মন খারাপ করে ফোনের দিকে তাকায়। সায়ন এখনো তাকে কল ব্যাক করেনি তাই সেও জেদ করে আর সায়নকে কল দেয়নি।
মন খারাপ করে ক্যান্টিনে চলে যায়।
ক্লাস শেষ করে রাইদা ভর দুপুরে বাসায় ফিরে। দরজায় নক করতেই মারিয়া দরজা খুলে নিজের কাজে চলে যায়। রাইদার নাকে এসে ঠেকে বিভিন্ন রান্নার ঘ্রাণ।
রান্নাঘরে গিয়ে দেখে তার মা রান্নায় ব্যস্ত সাথে মাইমুনা, মার্জিনা,মারিয়াও কাজ করছে।
‘এতো রান্না করছো কারা আসবে? ‘,রাইদা রওশন আরাকে প্রশ্ন করে।
‘তুই এসেছিস এখন? তোর বাবা তোর শ্বশুড়কে সকালে কল দিয়েছিলো তারা বললো আজকে বিকালে আসবে কথা বলতে তাই তো জলদি জলদি সব করতেছি। তুই গোসল করে খেয়ে নে। তোর বাবা ছুটি নিয়েছে সে গেছে বাজারে বাকি জিনিস আনতে।’,রওশন আরা কথাগুলো বলে আবারো কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
রাইদা কোনো কথা না বলে নিজের রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে গোসল সেরে টেবিলে এসে খেয়ে নেয়।
খেয়ে রুমে গিয়ে বসে থাকে। মান্নান রাফায়েত ততক্ষণে বাসায় চলে এসেছে। বিকাল হতেই রওশন আরা একটা শাড়ি এনে রাইদার হাতে দিয়ে রেডি হতে বলে।
শাড়ি পরে রাইদা সাজগোজ না করে বসে থাকে।
আসরের নামাজের পর বাসার কলিং বেল বেজে উঠে। কলিং বেলের শব্দ পেয়ে রাইদা নড়েচড়ে বসে। দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে মারিয়া আসার অপেক্ষায়। মারিয়া রুমে প্রবেশ করলে রাইদা প্রশ্ন সূচক চাহনিতে তাকায়।
মারিয়া হাত নাড়িয়ে না বোধক উত্তর দেয়। রাইদা বুঝে যায় সায়ন আসেনি। হতাশায় রাইদার চোখমুখে অন্ধকার নেমে আসে। মারিয়াকে বলে রেখেছিলো সায়ন আসলে তাকে জানাতে।
কিছুক্ষণ পর রাইদাকে ডাকা হয় বসার ঘরে। মাথায় ঘোমটা দিয়ে রাইদা যায়। সায়ন্তিকা উঠে রাইদাকে জায়গা দেয় মিসেস রিনার পাশে বসার। রাইদা এসে মিসেস রিনার পাশে বসে। মিসেস রিনা রাইদাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে।
‘কেমন আছো বউমা? তুমি আমাদের রেখে আসার পর থেকে বাড়িটা পুরো খালি লাগে।’,মিসেস রিনা রাইদাকে বলে।
‘তা ঠিক কিন্তু একেবারে বউমাকে নিয়ে যাবো তখন তো ঘর একদম ভরা থাকবে।’,আরমান শেখ হেঁসে বলেন।
‘ভাইয়াকে কতবার বললাম আসতে সে কাজের দোহাই দিয়ে আসলো না।’,সায়ন্তিকা বলে উঠে।
সায়ন্তিকার কথা শুনে রাইদা মাথা নিচু করে ফেলে।
‘আমিও তো ওকে ছুটি দিয়েছিলাম কিন্তু কোনো এক ক্লাইন্ট আজকে ভিজিটে এসেছে ও সেখানেই আছে।’,আরমান শেখ বলে।
‘আচ্ছা এসব কথা বাদ বউমার জন্য যা এনেছি তা আগে দেই। সায়ু ব্যাগটা দে।’
সায়ন্তিকা ব্যাগটা দিলে ব্যাগ থেকে একটা আংটি বের করে রাইদার হাতে পরিয়ে দেয়।
সকলে গল্পে মেতে উঠে।
‘আমার শরীরটা একটা খারাপ লাগছে রুমে গেলাম।’,কথাটা বলে রাইদা উঠে রুমে চলে গেলো।
রুমে এসে রাইদা চুপ করে বসে থাকে। সন্ধ্যা হলে বসার ঘরে সকলে আড্ডা দিতে থাকে। রাইদাকে আবারো ডাক দেয় বসার ঘরে। রাইদা গিয়ে সায়ন্তিকার পাশে বসে থাকে। সায়ন্তিকাও নানান গল্প করতে থাকে রাইদা শুধু শুনতে থাকে সব।
রাতের বেলা খাওয়া দাওয়া শেষ হলে সায়নের পরিবার বিদায় নেয়। রওশন আরা সায়নের জন্য খাবার পাঠিয়ে দেয়। সকলে চলে যেতে রাইদার হঠাৎ কান্না আসে। বারান্দায় এসে শব্দহীন কান্নায় ভেঙে পড়ে। মারিয়া রুমে এসে রাইদাকে না পেয়ে বারান্দায় উঁকি দিলে রাইদাকে কান্না করতে দেখে তার পা থেমে যায়। চুপচাপ সেখান থেকে চলে যায়।
ফোন বন্ধ করে রুমে এসে রাইদা শুয়ে থাকে।
….
মাঝে কেটে গেছে দু’দিন। সায়ন এখনো রাইদাকে কোনো কল দেয়নি। এক সপ্তাহ পর বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়েছে। রাইদা নিজের রুটিন মতোই চলছে তবে তার মন পড়ে আছে সায়নের কাছে।
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে বাথরুমে একটা বক্স নিয়ে রাইদা ঢুকে। বক্সটা খুলে প্রেগ্ন্যাসির টেস্ট কিট বের করে।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর কিটে স্পষ্ট দু’টো লাল দাগ দেখতে পায়। কিটের দিকে তাকিয়ে বিস্ময়ে মুখে হাত দেয় রাইদা।
‘টেস্ট পজিটিভ তারমানে আমি প্রেগন্যান্ট! সায়নের বাচ্চার মা হতে চলেছি আমি!’,বিরবির করে কথাটা বলে ফ্লোরে বসে পড়ে রাইদা।
..
(চলবে..)
(কোথাও বানান ভুল হলে অবশ্যই জানাবেন।)