#হৃদমাঝারে_শুধু_তুমি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পার্ট:০৩
অরিন:কেনো করলি এমন হৃদিতা?
হৃদিতা:অরিন দেখ,আমি ভুলে করেছি!আমি তখন নিজের মধ্যে ছিলাম না।
অরিন:তোর একটা ভুলের কারণে আজ সব শেষ।
হৃদিতা:অরিন শোন,আমি সব ঠিক করে দিবো।প্লীজ তুই বিশ্বাস কর সব ঠিক করে দিবো।
অরিন:সব ঠিক হলেও তোর আর আমার সম্পর্ক ঠিক হবে,বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবতাম তোকে।কিন্তু তুই ধোঁকা দিলি।
হৃদিতা:অরিন এমন করিস না ।
অরিন:তুই একটা ধোঁকাবাজ, ঠকবাজ,প্রতারক..
বলতে বলতে অরিন মিলিয়ে গেল অন্ধকারে..
হৃদিতা:অরিন..
বলে চিৎকার দিয়ে উঠে বসলো।আসে পাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলো,স্বপ্ন ছিল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ১:৫০ বাজে।হৃদিতা বেড সাইড এ থাকা বোতল নিয়ে পানি খেতে লাগলো।ঘেমে গেছে পুরো।ভয় ও পেয়েছে।কিছুক্ষণ নিজেকে শান্ত করে জানালার কাছে দাড়ালো।
হৃদিতা:আজ আমার একটা ভুলের জন্য দুইজন ভালোবাসার মানুষকে বিচ্ছেদের স্বাদ নিতে হচ্ছে।কি করে বলবো আমি অরিন কে,সত্যি টা কিভাবে বলবো।আর বললে কি ও সত্যি আমায় ছেড়ে দিবে।
ডুকরে কেঁদে উঠলো হৃদিতা।
হৃদিতা:সব দোষ আমার ,কি করবো আমি এখন?ফ্রেন্ডশিপ নাকি অরিনের ভালোবাসা ! কাকে বেছে নিবো?
আর ভাবতে পারছে না ও। রাত টা ওর নির্ঘুম কাটলো।
হৃদিতা:এরকম গাল ফুলিয়ে থেকে লাভ কি? স্যার তো বললো নাম উঠানো যাবে না।
অরিন: কেনো যাবে না শুনি?একটা নাম উঠালে কি হয়?
মমি:তোর প্রবলেম কেন এত ?
অরিন চুপ করে রইলো ।
হৃদিতা:দেখ নাম যখন দিয়েছিস কাজ করতেই হবে।চল।
অনিচ্ছা স্বত্বেও যেতে হলো ল্যাবরেটরির উদ্দেশ্যে।আদ্রিয়ান আর বাকি সবাই কাজ করছিলো।অরিনকে দেখে আদ্রিয়ান কিছুটা চমকে গেছিলো। ও আর কাজ করতে চায় নি,কিন্তু এটা না করলে অনেক শিক্ষার্থী সফল হবে না প্রজেক্ট নির্মাণে।
আদ্রিয়ান:তুই কেন ওকে দেখে পালাবি,এক প্রতারকের জন্য তুই পালাবি?নো আদ্রিয়ান । ইউ হেভ টু স্টে।(মনে মনে)
স্যার:তো তোমরা তিনজন সহায়তা কাজের জন্য রাইট?(অরিনদের উদ্দেশ্য করে)
অরিন:জি।
স্যার:নাম?
অরিন:আমি অদ্রি বিন অরিন।
হৃদিতা:আমি হৃদিতা হৃদি।
মমি:উম্মে মমি।
স্যার: ওকে,মিস মমি আপনি সাগর ইসলাম কে সহায়তা করবেন,হৃদিতা আপনি অনিকেত অনি কে সহায়তা করবেন,আর অদ্রি আপনি আদ্রিয়ান কেন।
হৃদিতা:ওকে স্যার।
স্যার চলে গেলেন ,আর শিক্ষার্থীরাও তার প্রজেক্ট নির্মাণে ব্যাস্ত।
অরিন অগ্নি চক্ষু নিয়ে হৃদিতার দিকে তাকিয়ে আছে । তা দেখে হৃদিতা এক ঢোক গিলল।
হৃদিতা:আমি কি করলাম?
অরিন:তোকে পরে দেখে নিব।
বলেই আদ্রিয়ান এর কাছে গেলো,আদ্রিয়ান ওকে দেখেও না দেখার ভান করলো।
অরিন:ইহ, ব্যাটার ভাব দেখো,মনে হয় জানেই না আমি এসেছি।বজ্জাত হনুমান ।আর ওই ভুড়িওয়ালা স্যার কে আমি ছাড়বো না ।ঘুরে ফিরে একেই আমার সাথে দিতে হল।(মনে মনে)
আদ্রিয়ান:মনে মনে বক বক শেষ হলে ওদিকের গাইড টা দিন।
অরিন বিরক্তি মাখা চোখে তাকালো।তারপর ওদের কাছে গেলো।এক গ্রুপ কিছু তার জুড়তে পারছে না।তাই আদ্রিয়ান সেই তার জুড়ে দিচ্ছে আর অরিন পাশে দাড়িয়ে দেখছে।অরিনের হাতের পাশে ছিল কিছু কাচের টুকরা যা প্রজেক্টের কাজের জন্য ব্যাবহার করে।ভুলবশত ওটাতে হাত লেগে অরিনের বৃদ্ধা আঙ্গুল কেটে যায় আর অরিন মৃদু চিৎকার করে উঠে।অরিনের আওয়াজ শুনে আদ্রিয়ান ওর দিকে তাকায়।অরিনের বৃদ্ধা আঙ্গুল থেকে রক্ত পড়তে দেখে খানিকটা রেগে যায়।
আদ্রিয়ান: স্টুপিড, চোখ কই থাকে তোমার?
বলেই অরিনের আঙ্গুল নিজের মুখে পুরে নিয়ে রক্ত শুষে নিল।
অরিন অবাক চোখে তাকিয়ে আছে,আদ্রিয়ান কি করছে বুঝতে পেরে আস্তে করে হাত ছেড়ে দিয়ে ওর দিকে তাকালো। দুইজনে একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে ডুব দিল পুরনো সেই স্মৃতিতে।
অরিনের আজকে এসএসসি এর লাস্ট এক্সাম।আদ্রিয়ান বেশ খানিকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে অরিনের আসার। অবশেষে অরিন আসলো।
আদ্রিয়ান:এক্সাম কেমন হয়েছে?
অরিন:ঝাকানাকা টেস্টি টেস্টি।
আদ্রিয়ান:হুমম, তা আপনার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ।তো চলো হোস্টেল ড্রপ করে দেই।
অরিন:হুমম।
কিছুদূর এগোতেই এক বাচ্চা মেয়েকে গোলাপ বেচতে দেখলো।বাচ্চা মেয়ের থেকে অরিন একটা গোলাপ কিনলো।
আদ্রিয়ান:কাটা থাকতে পারে সাবধান।
অরিন: হু,ঠিক আছে।
বলেই ফুল নিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগলো।হুট করে একটা কাঁটা অরিনের বৃদ্ধা আঙ্গুলে ঢুকে গেল।
অরিন: আউচ!
আদ্রিয়ান :স্টুপিড,বার বার বললাম কাঁটা থাকতে পারে।
বলেই আঙ্গুল মুখে নিয়ে রক্ত শুষে নিল।অরিন তা দেখে মুচকি হাসলো।
অরিন: ওয় এডি,সামান্য লেগেছে। মরে যাই নাই।
আদ্রিয়ান:মেরে ফেলবো মরার কথা বললে।
অরিন:এত ভালোবাসো আমায়?
আদ্রিয়ান:জীবনের থেকেও বেশি?
অরিন:কখনও আমি যদি ধোঁকা দেই তখনও কি এভাবেই ভালোবাসবে?
আদ্রিয়ান: মরার আগ পর্যন্ত ভালোবেসে যাবো।
অরিন মৃদু হাসলো।
সাগর:আদ্রিয়ান!
সাগরের ডাকে দুইজন হুশে আসলো।ছিটকে সরে দাঁড়ালো দুজন দুজনের থেকে।
অরিন:মিথ্যে ছিল সেদিনের ভালোবাসা (মনে মনে)
আদ্রিয়ান: ধোঁকাবাজ তুমি অরিন ,ধোঁকাবাজ(মনে মনে)
সাগর:অরিন তুমি এখানে?
অরিন এতক্ষণে সাগর কে দেখলো।আদ্রিয়ান এর ভার্সিটির ফ্রেন্ড ,অরিন আর আদ্রিয়ান সম্পর্কে ও অবগত।
হৃদিতা:সাগর ভাইয়া তুমি এখানে?
সাগর: হ্যাঁ,এইতো ভার্সিটির কিছু কাজের জন্য আমাদের তিনজনের আসা,নাহলে হয়তো কেও এই এলাকায় দ্বিতীয়বার আসতো না ।(বলেই আদ্রিয়ান এর দিকে আড়চোখে তাকালো)
অরিন বুঝতে না পারলেও হৃদিতা বুঝেছে ।অরিন ব্যাগ হাতে বেরিয়ে গেলো ।
মমি:আচ্ছা ,অরিনের কি হয়েছে বল তো?
হৃদিতা দীর্ঘশ্বাস ফেললো,
হৃদিতা:অনেক ভয়ঙ্কর কিছু।
মমি:মানে?
হৃদিতা:তুই বুঝবি না।আর পরে বলবো ।
স্কুল ছুটির পর তনয়া,ফাহিমা আর মুন তিনজন মিলে রাস্তার পাশে ফুচকা খাচ্ছে।
তনয়া: আহ,কি শান্তি!
ফাহিমা:তোর আপু কিছু বলবে না?
মুন:কি বলবে?
তনয়া:ধুর আপু আমাকে কিছু বলার সাহস ই পায় না,আপু উল্টে আমায়.. আ.. আ..আম্মু ।আপু লাগছে ছাড়ো।
তনয়ার স্কুল অরিনের ভার্সিটির সামনে। ভার্সিটি থেকে বের হওয়ার পর তনয়া কে দেখে এখানে এসেছে।আর এসে মেয়ের পাকনামি মার্কা কথা শুনতে পায়।আর ফলস্বরূপ তনয়ার কান টেনে ধরে।
অরিন: কি বলছিলি,আপু উল্টে কি?
তনয়া: হে হে..মজা করছিলাম।আমি তোমাকে ভয় পাই না থুক্কু তুমি আমাকে ভয় পাও না, আমি উল্টে তোমাকে ভয় পাই।এবার ছাড়ো।লাগছে।
অরিন ছেড়ে দিল ।
অরিন:এই কচুরি পানার দল।
ফাহিমা: জি আপু।
অরিন:বিকেলে বাসায় চলিয়া আসিয়েন।
মুন:কেনো?
অরিন:বাড়িতে কেও নেই।সেই সূত্রে সবাই মিলে ছোট্ট পার্টি করবো।আসবি তো?
ফাহিমা আর মুন:অবশ্যই!!.
অরিন:আর ওই চুন্নি,চল বাসায়।
তনয়া:আমার সুন্দর নাম আছে,তনয়া।ঐটা বলে ডাকো।
অরিন:ইহ ,যেই না চেহারা নাম রাখছে আবার পেয়ারা!চল ।
অরিন তনয়া কে নিয়ে চলে গেলো । ভার্সিটির গাছতলায় চোখ বন্ধ করে বসে আছে আদ্রিয়ান।
আদ্রিয়ান:বলেছিলাম না অরি পাখি,তুমি ধোঁকা দিকেও তোমায় ভালোবাসবো! হ্যাঁ তোমায় ভালবাসি এখনও।কেনো করলে এমন অরি পাখি।কি দোষ ছিল আমার।কেনো করলে?
চোখ বন্ধ করে এসব ভাবনায় বিভোর আদ্রিয়ান।তখনই ফোন বেজে উঠলো।স্ক্রিনে বিথী নাম জ্বলজ্বল করছে।অনিচ্ছা থাকা সত্বেও ফোন ধরলো।
আদ্রিয়ান:বলো!
বিথী: ব্যাস্ত বেশি?
আদ্রিয়ান: হ্যাঁ।
বিথী:ওহ তাহলে ফ্রী হয়ে কল দিও।
আদ্রিয়ান:সময় হবে না,কিছু বলবে?
বিথী:একটু কথা বলতাম আরকি।
আদ্রিয়ান:সরি কিন্তু আমার টাইম হবে না।
বলেই কেটে দিলো আদ্রিয়ান,আবারও চোখ বন্ধ করে ভাবনায় চলে গেলো।তার অরি পাখির ভাবনায়।
ওদিকে বিথী দীর্ঘশ্বাস ফেললো।আদ্রিয়ান কেনো তাকে এভাবে ইগ্নোর করে তার তা জানা নেই।পাশ থেকে বিথীর মেজো মনির মেয়ে লামিয়া বলে উঠলো।
লামিয়া:আজকেও ব্যাস্ত ছিল?
বিথী মেকি হাসি দিয়ে বললো,
বিথী:আরে জানোই তো ,ওর কত কাজ,এখন এভাবে ডিস্টার্ব করা কি মানায়?
লামিয়া: বুঝ কাকে দিচ্ছিস?আমাকে না নিজেকে?
বিথী চুপ করে রইলো।লামিয়া আর কিছু বলল না।
লামিয়া:কবে বুঝবি বিথী কেও একজন তোকে পাগলের মত ভালোবাসে।তার গোটা দুনিয়া তোকে নিয়ে।তোর বিয়ে হয়ে গেলে সে বাঁচবে কিভাবে?(মনে মনে কথা টি বলে বেরিয়ে গেলো)বিথীর দুই মনি,মেজো মনির বাড়ি তাদের বাড়ির পাশেই।আর ছোটো মনি থাকে ঢাকা।
হোস্টেলের দেয়াল টপকে রাতে বেরিয়ে আসলো অরিন।
আদ্রিয়ান:এসব কি অরিন?কয়েকদিন পর কলেজ শুরু হবে,আর তুমি এখনই এরকম বাচ্চামো করছো।
অরিন:কেনো খুব কি বিরক্ত করি?
আদ্রিয়ান:অরিন..
অরিন:বিরক্ত হলেও কাজ হবে না,এই বিরক্তিকে নিজের অভ্যাসে পরিণত করতে হবে ।বলেই মিষ্টি হাসলো।
আদ্রিয়ান:তোমার নিজের বাড়ি তো এখানেই ,তো হোস্টেল এ কেন থাকো?
অরিন:আরে বাড়ি তৈরির কাজ এখনও শুরু হয়নি,বাড়ি তৈরি হলেই ফুল ফ্যামিলি চলে আসবো।
আদ্রিয়ান:হুমম ,বুঝলাম।
অরিন:আচ্ছা আমাদের বিয়ে হলে আমরা কি ঢাকায় থাকবো?
আদ্রিয়ান:উহু, রাজশাহী তে!
অরিন:এত দূর?
আদ্রিয়ান:ওখানেই তোমার শ্বশুর বাড়ি মেডাম।
অরিন:হুমম বুঝলাম ।
আদ্রিয়ান:গুড এবার যাও।
অরিন:আরেকটু থাকি না।
আদ্রিয়ান:না যাও…
অরিন:বজ্জাত বেটা।বলেই দৌড়..
আদ্রিয়ান:হিসাব তোলা রইলো।
দরজার কড়া আঘাতে ভাবনার বেঘাত ঘটলো অরিনের।
অরিন রুমে বসে আছে তখনই কড়া নাড়ল সামান্তা ।
সামান্তা:মিস ভাবুক কুমারী কি ভাবছেন?
অরিন:কিছু না আপি।
সামান্তা: ভার্সিটি আসার পর থেকে দেখছি কিছু ভাবছিস!কি হয়েছে?
অরিন:তেমন কিছুই না!
সামান্তা:বিকেলে কি প্ল্যান করলি?
অরিন:আজকের প্লান,আমি, তুমি,তনয়া,মুন,ফাহিমা আর সোহা মিলে ঘুরতে যাবো।
সামান্তা: ওকে!
হৃদিতা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো।নিজের ডায়েরি নিয়ে লিখতে বসলো,
জানিস ডায়েরি,
আজ আমার জন্য আদ্রিয়ান আর অরিন আলাদা।আমার জন্য দুইটা মানুষের ভালোবাসা আজ তিক্ততায় ভরপুর।আচ্ছা আমি কেনো এমন করলাম? প্রতিশোধের জন্য দুইটা মানুষকে এভাবে আলাদা করলাম?জানিস ,খুব ইচ্ছা করে অরিন কে সব বলে দিয়ে ওর পায়ে ধরে ক্ষমা চাইবো।কিন্তু পারি না।ভয় করে । ও যদি আমায় দূরে ঠেলে দেয়।আমাদের ফ্রেন্ডশিপ ভেঙ্গে দেয়।খুব ভয় করে । ওকে যে খুব আপন ভাবি।আচ্ছা আমি কী কোনোদিন এই ভয় কাটিয়ে সত্যি বলতে পারবো না?
#চলবে