#হৃদমাঝারে_শুধু_তুমি
#লেখনিতে_সাবরিন_জাহান
#পার্ট:০৯
হৃদিতা মুখ চেপে ধরে আছে। কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। কাঁধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ঘুরে তাকালো।অনিক ওর দিকে তাকিয়ে আছে অদ্ভুত ভাবে।কিছু না ভেবেই ঝাপটে ধরলো অনিককে।
অনিক:হৃদিতা?
হৃদিতা:আজ আমার জন্য সব হয়েছে,আমি খুব খারাপ।একদম খারাপ।খুব খারাপ।
অনিক:হৃদিতা রিলাক্স,শান্ত হও।
হৃদিতা:আজকে আমার কারণে অরিন আর আদ্রিয়ান আলাদা ।আজকে আমার জন্যে ওদের বিচ্ছেদ হলো।আমার জন্যে ওদের ভালোবাসা অপূর্ণ রইলো।আমার কারণে ওরা কষ্ট পাচ্ছে।আমার কারণে ওরা বেচে থেকেও মরার মতো বেঁচে আছে।আজ শুধু আমার জন্য ওদের এতটা সাফার করতে হচ্ছে।আমার জন্য ওদের হাসিখুশী থাকার অভিনয় করতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত গুমরে খাচ্ছে এই একটা ভুল।আমার কারণে ওদের ক্ষতি হয়ে গেলো।
অনিক:দেখো,আমাদের সমাজ টা ভালো খারাপ মিলিয়ে।হয়তো প্রথমে তুমি ভুল করেছো।এখন তো করো নি তাই না?
হৃদিতা:কিন্তু ওই একটা ভুল আমাকে খুঁড়ে খুঁড়ে খাচ্ছে।আমার বেঁচে থাকার অধিকার নেই।মরলে ভালো হবে ।আমি মরতে চাই..
বলতে না বলতেই সজোরে চড় পড়লো হৃদিতার।হৃদিতা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল অনিকের দিকে ।অনিক হৃদিতার মাথা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো।
অনিক:আরেকবার এই কথা বললে জানে মেরে দিবো।তুমি নিজেও জানো না তুমি আমার জন্য কি।হৃদি প্লিজ,দেখো যা হবে ভালোই হবে।
হৃদিতা কিছু বললো না।অনিকের বুকে মাথা রেখেই নি:শব্দে কেঁদে চললো।অনিক ও কিছু বললো না। কাঁদুক না ও একটু।
আকাশ পানে তাকিয়ে রয়েছে মমি।নিজের বান্ধবীর এই দুর্দিনে কি করে ও সবার সাথে আনন্দ করবে। এনগেজমেন্ট আরেকটু পর শুরু হবে।অরিনের অবস্থার কথা ভাবতেই বুক কেঁপে উঠলো ওর।কিভাবে পারবে ও সব সহ্য করতে?হুমম,হয়তো ওর সাথে অরিনের কেবল কয়েক মাসের আলাপ।কিন্তু তাও ওকে যে খুব ভালোবাসে।আরেকদিকে হৃদিতা।যে কিনা প্রতিনিয়ত অপরাধবোধে মরছে।চোখের সামনে নিজের কলিজার টুকরা বান্ধবীদের এই দশা কি করে সহ্য করছে ওই জানে।
সাগর:মমি?
মমি:হুমম?
সাগর:নিচে যাবে না? এনগেজমেন্ট শুরু হয়ে গেছে।কিছুক্ষণ পর আংটি বদল হবে।
মমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
মমি:অরিন গেছে?
সাগর দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মমির পাশে দাঁড়ালো।
সাগর:প্রিয় মানুষটি তারই সামনে অন্য কারোর হতে চলেছে,এটা কি ও সহ্য করতে পারবে?
মমি উত্তর দিলো না।
সাগর:আজ হৃদির একটা ভুলের জন্য অরিন আর আদ্রিয়ান আলাদা। ভাবিনি ওরা কখনো আলাদা হবে ।অরিন কে যখন আবার আদ্রিয়ান এর সাথে দেখলাম ভেবেছিলাম হয়তো আবার ওরা এক হবে।কিন্তু..জানো আমাদের ভার্সিটির প্রায় সবাই জানতো অরিন আর আদ্রিয়ান এর কথা।অনেকে বলতো মেড ফর ইচ আদার।ওদের জুটির নাম ও দিয়েছিল। “অরিয়ান”। কিন্তু এবারের বিচ্ছেদে ওরা চিরো তরে আলাদা।
মমি:আমরা কিছু করতে পারবো না।
সাগর:চাইলে বিথী কে বলতে পারতাম,কিন্তু অরিনের নির্দেশ বিথীকে বলা যাবে না।অবশ্য একদিকে ঠিক।বিথী গ্রামের মেয়ে।ওর বিয়ে না হলে,গ্রামের মানুষের কাছে কথা শুনতে হবে।
মমি: দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া কোনো উপায় নেই,তাই না?
সাগর:হুমম
মমি:চলুন,নিচে যাই।
সাগর আর মমি নিচে গেলো।বিথী রেডী হয়ে আকাশের রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলো আকাশ ডায়রিতে কিছু লিখছে।
বিথী:আকাশ ভাইয়া!
আকাশ বিথীর গলা শুনে চমকে গেলো, তাড়াতাড়ি ডায়রি বন্ধ করে বিথীর দিকে তাকালো।
আকাশ:কিছু বলবে?
বিথী:নিচে যাবে না?
বিথীর এই কথা আকাশের বুক এ আঘাত এর জন্য যথেষ্ট।তাও মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো
আকাশ:তুই যা আমি আসছি!
বিথী:কি লিখছিলে?
আকাশ:আব..না ,পার্সোনাল ডায়রি,তোমার জেনে কাজ নেই। যাও।
বিথী উসখুস করতে করতে নিচে নামলো।আকাশ দম নিলো।বিথী নিচে নামতে গেলে লামিয়ার সাথে দেখা হয়।লামিয়া নিজের চোখের কাজল নিয়ে বিথীকে টিকা লাগিয়ে দিলেন।
লামিয়া:মাশাআল্লাহ,খুব সুন্দর লাগছে।
বিথী লজ্জা পেলো।
লামিয়া:জানিস বিথী, ভালোবাসায় না সুখের থেকে কষ্ট বেশি।কাওকে খুব বেশি ভালোবাসলে কষ্ট ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না।আর যদি হয় সেটা এক তরফা তাহলে তো কথাই নেই।
বিথী:মানে?একতরফা?
লামিয়া:আরে কলেজে তোকে অনেকেই ভালোবাসতো,তাদের মধ্যে কেও হয়তো আজ তোকে হারিয়ে ফেলার কষ্ট টের পাচ্ছে ।
বিথী কিছুই বুঝছে না।লামিয়া কিছু না বলে উপরে গেলো।কিছুটা যেতেই অরিনের সামনে পড়লো।অরিনের চোখ ফুলে আছে।
লামিয়া: একিরে অরিন তোর এই অবস্থা কেন?
অরিন:আকাশ ভাইয়ার জন্য কষ্ট পাচ্ছো না আপু?
লামিয়া কি বলবে বুঝছেনা,আসলেই তো তার ভাইটার জন্য ভীষণ খারাপ লাগছে।
অরিন: ঠিকই বলেছো। ভালোবাসায় কষ্ট অনেক বেশি।হোক সেটা এক তরফা বা উভয়ের।
লামিয়া বুঝলো না অরিন কেন এই কথা বললো। এনগেজমেন্ট শুরু হচ্ছে।আদ্রিয়ান ব্লু কোর্ট, ব্ল্যাক শার্ট আর ব্ল্যাক জিন্স পড়েছে।একেবারে রাজপুত্র লাগছে।কিন্তু রাজপুত্র কে অন্যের মনের রাজা হবে এখন ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো অরিনের।করবেই বা কি?
আরিফা:অরিন আপু!
অরিন:হুমম
আরিফা:তনয়া কে দেখেছো?
অরিন:না, ও কোথায়?ওর সাথে কথা আছে আমার!
আরিফা:আমি জানি কি নিয়ে কথা বলবে!
অরিন নির্লিপ্ত ভাবে তাকালো।কারণ ও জানে তনয়া সবাইকে বলবে এটা।তাই ওকে খোঁজা।
আরিফা:কিন্তু দেখো তাও তো বিয়ে টা আটকানো যাচ্ছে না।তোমাকে ভাবি হিসেবে পেলে খুব খুশি হতাম।
অরিন:আর কেও জানে এই ব্যাপারে?
আরিফা:না!!
অরিন:বোন হিসেবে বলছি আর যেনো কেও এই ব্যাপারে না জানে।ঠিক আছে?
আরিফা মাথা নাড়লো।অরিন তনয়া কে খুজতে লাগলো আর পেয়েও গেলো।
অরিন:তনয়া!
তনয়া:হুমম বলো আপু!
অরিন:আদ্রিয়ান কে কি বলেছিস তুই?
তনয়া মাথা নিচু করে বললো,
তনয়া: যা সত্যি তাই বলেছি!
অরিন এবার রেগে গেলো,
অরিন:বয়স কত তোমার? হ্যাঁ? এতটুকু বয়সে পাকনামি করতে কে বলে?তোমায় এরকম করতে একবারও বলেছি আমি?কেনো করেছো?আর তুমি আরিফা কেও কেনো বলেছো?খবরদার আর কাওকে যেনো বলতে না শুনি!!আমার ব্যাপারে তোমার নাক না গলালেও চলবে!
তনয়া মাথা নিচু করে কাঁদছে।বকা গুলোতে কষ্ট লাগছে না ,লাগছে ওর অরিনের তুমি করে বলাতে।
তনয়া:আমি কি করবো?সামু আপির থেকে তোমার আর আদ্রিয়ান ভাইয়ার কথা শুনেছি।প্রতিদিন দোয়া করতাম যেনো তুমি তোমার আদ্রিয়ানকে ফিরে পাও।দুইজন এক হয়।তোমার কষ্ট দেখতে পারতাম না।আর যখন জানলাম এই আদ্রিয়ানই তোমার আদ্রিয়ান তখন কি করে তাকে অন্য কারো হতে দেই?আমি তো দেখি নাকি?রোজ রাতে বালিশে মুখ চেপে কাঁদো!কষ্ট হয় তো!চোখের সামনে নিজের বোনকে এভাবে কে দেখবে?আজ যখন আদ্রিয়ান ভাইয়াকে পাওয়ার এক সুযোগ পেয়েছি,তাই বলে দিয়েছি।যাতে তুমি আবার আগের মত হও।আমি না আমার ওই চঞ্চল আপুটাকে মিস করি যে মিনিটে মিনিটে আমার পিছনে লাগতো।আদ্রিয়ান ভাইয়া যাওয়ার পর তুমি আগের মত হয়ে গেছো দেখালেও তুমি আগের মত ছিলে না।মিথ্যে হাসির মাঝে নিজের চাপা কষ্ট গুলো ডাবিয়ে রাখতে।তাই আমি যা করেছি বেশ করেছি!
অরিন তনয়া কে জড়িয়ে ধরলো।
অরিন:প্লিজ আর কিছু করিস না!মায়ের সম্মান মিশে যাবে।তুই তো জানিস মনি’রা আমাদের জন্য কত কি করেছে?আজকে আমাদের কারণে বিথীকে পুরো গ্রাম ছোটো বলবে।ওকে দোষ দিবে। মাকে প্রতিনিয়ত মরতে হবে,ছোটো হতে হবে এই ভেবে তার মেয়ের জন্য আজকে এই অবস্থা।তখন যে আরো পারবো না।প্লিজ বোন আমার।
তনয়া কিছু বললো না।
#চলবে
(