#হৃদয়ের_আঙ্গিনায়_তুমি
#ইশা_আহমেদ~
#পর্ব_৫
হঠাৎ জোড়ে কাছাকাছি কোথাও বাজ পরে ওহি চিল্লিয়ে ওঠে।ওয়াশরুমের দরজা ধাক্কা দিতে থাকে।
-“মিস্টার খান দরজাটা খুলুন না প্লিজ আমার ভীষণ ভয় করছে।”
ইনহাজ দ্রুত বের হলো ওয়াশরুম থেকে।ওহি ইনহাজকে দেখে শান্ত হয়।বাইরে ঝড় হচ্ছে।আগের থেকে বৃষ্টি পরাও বেড়েছে।ওহি ইনহাজের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করছে।যেই ওহি পারলে ইনহাজের থেকে একশোহাত দূরে থাকে সে এখন ইনহাজের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করছে।
ইনহাজ বেডে গিয়ে শুয়ে পরে।ওহি বেডের একপাশে বসে।ইনহাজ ঘুমিয়ে পরেছে।ওহির কিছুতেই ঘুম আসছে।বাড়ি থাকলে এখন তার আম্মু তার কাছে এসে থাকত।বাড়ির কথা মনে হতেই মনটা খারাপ হয়ে যায় ওইফার।তার মনে পরে অতীতের কথা।
একদিন রাতে ভীষণ বৃষ্টি আর ঝড় হচ্ছিল।ওহির আম্মু সেদিন সারারাত জেগে মেয়েকে গল্প শোনান।ওহি ওইদিন নিজেও ঘুমাইনি সাথে তার আম্মুকেও ঘুমাতে দেয়নি।তার ভাইয়ুও সেদিন তার পাশেই ছিলো।তার বাবাই অসুস্থ থাকায় সে ঘুমিয়ে ছিলো।
৬.
ইনহাজের ঘুম ভাঙ্গতেই সে নিজের হাতের উপর ভারী কিছু অনুভব করে।চোখ খুলে হাতের দিকে তাকাতেই ওহিকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখতে পায়।ওহি নিচে বসে ওর একহাত জড়িয়ে ধরে হাতের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে।ইনহাজ বিরক্ত হয়।ব্যাথা করছে হাতটা।ইনহাজ নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়।এতে ওহির ঘুম ভেঙে যায়।
ওহি ইনহাজের দিকে ঘুমঘুম চোখে তাকিয়ে আছে।ইনহাজ বিরক্ত হয়ে বলে,,
-“কি সমস্যা তোমার সারাটা রাত হাতের উপর মাথা দিয়ে ঘুমিয়েছ।বেডে বালিশ ছিলো বালিশ রেখে আমার হাতটাই বেছে নিতে হলো তোমার”
ওহি মাথা নিচু করে ধীর কন্ঠে বলে,,
-“আমি ভয় পাচ্ছিলাম তাই আপনার হাতটা ধরেছিলাম কিন্তু কখন ঘুমিয়ে পরেছি টের পায়নি আমি দুঃখিত”
ইনহাজ কিছু বলে না ফ্রেশ হতে চলে যায়।সকালের নাস্তা কার জন্য নিচে নামে ওহি।ইনহাজ বসে আছে।খাবার সামনে নিয়ে।ওহি এসে খেতে শুরু করে।ইনহাজও খেয়ে নেয়।খাওয়া শেষ হতেই ওইফা ইনহাজকে বলে,,
-“মিস্টার খান আমি কি ভার্সিটিতে যেতে পারি”
ইনহাজ কিছু সময় ভেবে বলে,,
-“হ্যা যাবে কিন্তু কোনো ছেলের সাথে মিশতে পারবে না”
ওহির রাগ হয়।সে ফোসফাস করতে করতে বলে,,
-“আমি কার সাথে মিশবো কি মিশবো না এখন তা আপনার কাছ থেকে জানতে হবে”
ইনহাজ দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,
-“শোনো মেয়ে আমি এখন তোমার হ্যাসবেন্ড তাই আমি যা বলবো তা তোমার শুনতেই হবে”
ওহি তাচ্ছিল্য কন্ঠে বলে,,
-“আদেও আপনি আমায় বউ হিসাবে মানেন!আপনি আপনার মতো থাকুন আর আমি আমার।আমি কখনো আপনার থেকে কৈফিয়ত চেয়েছি আপনি কোথায় গিয়েছেন কার সাথে মিশেছেন।না কিছু জিজ্ঞেস করলে বলেছেন!আপনি যেমন আপনার স্বাধীনতায় আমার হস্তক্ষেপ পছন্দ করেন না তেমন আমিও”
ইনহাজের রাগ আকাশ ছুঁয়ে যায়।সে ওহির কাছে এসে ওইফার বাহু চেপে ধরে বলে,,,
-“তুমি আমাকে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য।তোমার আমাকে বলেই সবকিছু করতে হবে”
ওহি চিল্লিয়ে বলে,,
-“আপনি একটা অমানুষ পাশান”
ইনহাজ ওহিকে ছেড়ে টি-টেবিল লাথি মেরে ভেঙে ফেলে।যা দেখে ওহি ভয় পায়।সে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।ইনহাজ একেরপর এক জিনিস ভাঙতে থাকে।আর চিল্লিয়ে বলে,,,
-“হ্যা হ্যা আমি অমানুষ পাশান।তাতে তোমার কি”
ওহি ভয়ে দৌড়ে উপরে এসে রুমে দরজা দিয়ে বসে বসে কাঁদতে থাকে।ইনহাজ শান্ত হয়ে বসে।সার্ভেন্টরা সব ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ইনহাজ নিজেকে শান্ত করে গম্ভীর কন্ঠে বলে,,
-“আমি ফেরার আগেই যেনো এগুলো সব পরিষ্কার থাকে”
ইনহাজ হনহন করে বেরিয়ে আসে বাড়ি থেকে।তার ভেতরেই ফোন আসে রাফিনের।ফোন রিসিভ করতেই রাতুল বলে,,,
-“ভাই আজকে একটা ঝামেলা হয়েছে আপনার এখনই আসতে হবে”
ইনহাজ মাথা ঠান্ডা করে বলে,,,
-“আমি আসছি রাফিন”
৭.
কালকে ইনহাজ বাড়ি ফেরেনি।সেই সকালে যে বের হলো তারপর আর বাড়িতে আসেনি।ওহি মাথা ঘামায়নি।কিন্তু সে সব কিছু জানার জন্য বাড়িটা খুঁজে দেখেছে।কিন্তু কিছুই পায়নি।এখন সে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে ভাবছে কি করলে সে সব কিছু জানতে পারবে।তার ভেতরেই ইনহাজ বাড়িতে ফেরে।ওহি এক পলক তাকিয়ে আর তাকায় না।
ইনহাজ নিজের রুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়।ভীষণ ক্লান্ত সে।ওহি কিছু একটা ভেবে রুমে চলে আসে।ইনহাজ হাত পা ছড়িয়ে বেডের উপর শুয়ে আছে।ঘুমিয়ে পরেছে তা দেখেই বোঝা যাচ্ছে।ওহি কাবার্ড থেকে একটা ড্রেস বের করে ওয়াশরুমে যায়।ড্রেস চেঞ্জ করে আসে।তারপর চুপিচুপি ইনহাজের ফোনটা হাতে নেয়।ফোনে লক দেওয়া।সে ইনহাজের হাত ধরে ভীষণ কষ্টে লক খুলে।লক খুলে আহিয়াকে ফোন করে কারণ আহিয়ার নাম্বার তার মুখস্থ আছে।
ওহি বেলকনিতে গিয়ে আহিয়াকে বলে,,
-“শোন তুই একটু মাহিরকে মিস্টার খানের বাড়িতে পাঠা।ফার্স্ট”
আহিয়া বলে,,
-“তুই ঠিক আছিস তো ওহি।জানিস ইনহাজ ভাইয়া মিডিয়ায় কি ছড়িয়েছে”
ওহি ভ্রু কুচকায়।কি ছড়িয়েছে ইনহাজ।কিন্তু সে বলে,,
-“শোন তুই মাহিরকে পাঠা সামনাসামনি সব বলিস রাখছি।আর ভুলেও এই নাম্বারে ফোন দিস না”
আহিয়া আচ্ছা বলে রেখে দেয়।মাহিরকে ফোন করে বলে,
-” দোস্ত তুই যত তাড়াতাড়ি পারিস ইনহাজ ভাইয়াদের বাড়ির সামনে যা।ওহি তোর জন্য ওয়েট করবে”
মাহির চমকে উঠে বলে,,
-“কি বলিস তুই ওহি বের হবে কি করে ওখানে যে অনেক গার্ড”
আহিয়া বিরক্ত হয়।ও দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,
-“ওতো কিছু ভাবতে বলছে কে তোরে তোর যাওয়ার কাজ যা তুই”
মাহির কথা বাড়ায় না।বেশি কথা বললে যে আহিয়া তাকে পেলে আস্ত রাখবে না তা সে জানে।তাই তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পরে বাইক নিয়ে।অন্যদিকে ওহি গার্ডের ফাঁকি দিয়ে বের হয়।বাইরে এসে মাহিরকে দেখে বাইকে উঠে বলে,,
-“দোস্ত দ্রুত চল।”
মাহিরও ওকে নিয়ে সোজা একটা পার্কে চলে আসে।যেখানে আগে থেকেই আহিয়া দাঁড়িয়ে ছিলো।ওহি নেমে আহিয়াকে জড়িয়ে ধরে।আহিয়া বলে,,
-“তুই ঠিক আছিস তো ওহি।ইনহাজ ভাইয়া তোর কিছু করেনি তো”
ওহি তাচ্ছিল্য কন্ঠে বলে,,,
-“যে মানুষটার সাথে আছি তার সাথে কি আদেও ঠিক থাকার কথা বলতো।”
মাহির ওহির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,,
-“দোস্ত তুই চিন্তা করিস না আমি আর আহিয়া আঙ্কেলকে বোঝানোর চেষ্টা করতে পারি”
-“মোটেও না।যে আমাকে বিশ্বাস করেনি তাকে দ্বিতীয় বার বোঝার চেষ্টা না করাই শ্রেয়”
মাহির আর আহিয়া চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।তাদের আসলেই কিছু বলার নেই।ওহি বলে,,
-“আহিয়া তুই তখন কি যেনো বলতে চেয়েছিলি!”
আহিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইনহাজ এসে ওহির হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায়।মাহির আর আহিয়া স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।থতমত খেয়ে গিয়েছে তারা।কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব হয়ে গেলো।ইনহাজ ওহিকে বাড়ি এনে ওর গাল চেপে ধরে বলে,,
-“সাহস কি করে হলো বাড়ি থেকে বের হওয়ার তোমার।তোমার ডানা বেড়ে যাচ্ছে এই ডানা আমি দু মিনিটেই ছেটে দিতে জানি”
ইনহাজ ওহিকে টেনে নিয়ে বদ্ধরুমে আটকে চলে যায়।ওহি দরজা ধাক্কায় কিছু সময় কিন্তু কোনো লাভ হয় না। ইনহাজ তো তার চিৎকার চেঁচামেচি কিছুই শুনবে না।কারণ সে তো সেই কখন বের হয়ে গিয়েছে বাড়ি থেকে।বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে আসে তার প্রিয় জায়গায়।জায়গাটা তার ভীষণ পছন্দের।কারণ এই জায়গাটাও যে সেই মানুষটার ভীষণ পছন্দের জায়গা।দুজনে মিলে কতই না গল্প করতো এখানে বসে।আগের কথা মনে হতেই চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি গরিয়ে পরলো।
৮.
ইনহাজ বাড়ি ফেরে অনেক রাত করে।সে রুমে এসে ফ্রেশ হতে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে এসে ওহির কথা মনে পরে।সে দৌড়ে চলে যায় স্টোর রুমের উদ্দেশ্যে।লক খুলে ভেতরে ঢুকতেই ওহিকে সেন্সলেস অবস্থায় পরে থাকতে দেখে।ইনহাজ দ্রুত কোলে তুলে নেয় ওহিকে।
পিটপিট করে চোখ খুলে ওহি।চোখ খুলে আশেপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারে সে ইনহাজের রুমে আছে।মাথাটা ভীষণ ব্যাথা করছে।
চলবে~