#হয়ত
পর্ব:- ২৪
.
তাপৌষি সুস্থ হয়েছে আজ পাঁচ দিন। জ্বর একেবারেই নেই। দিশা, অথৈ পালাক্রমে তাপৌষির জন্য বাড়িতে ছিল। ওকে একা রেখে কেউ বাড়ির বাইরে যায় নি। অথৈর আর সেদিনের পর নিজের বাসায় যাওয়া হয়নি। দিশা যেতে দেয়নি। দিশার রুমেই ওরা তিনজন ঘুমায়। তিনজনের মাঝে ইতোমধ্যে বেশ ভাব গড়ে উঠেছে।
আজ দিশাকে ভার্সিটি যেতে হয়েছে খুব জরুরি দরকারে। অথচ আজই তাপৌষিকে নিয়ে মৌচাকের ওইদিকে যাওয়ার কথা ছিল ওর। বাড়িতে অথৈ, রৌদ, তাপৌষি আর বর্ষণ। কয়েকদিন ধরে তিনবেলার খাবার অথৈই রান্না করছে। কিন্তু অথৈ এর রান্না ঠিক দিশার মতো। মনে হয় রোগীর পথ্য রান্না করে ওরা। রৌদ আর বর্ষণ প্রায়ই বাইরে খেয়ে আসে। বেচারি তাপৌষির জন্য ওদের মায়া হয়। মেয়েটাকে রোগীর পথ্য খেয়েই থাকতে হয়।
.
আজ অথৈ নিজের বাসায় গেছে। তবে বিকেল নাগাদ চলে আসবে। ওর মাকে নিয়ে ডায়াবেটিস সেন্টারে যেতে হবে। তাপৌষি বাসায় একা না। বর্ষণও আছে। তবে নিজের ঘরে দরজা আটকে বসে আছে। তাপৌষির প্রচুর বোরিং ফিল হচ্ছে। টিভির রিমোটের পাওয়ার বাটন টিপছে বারবার। যার ফলে টিভি একবার অন হচ্ছে তো আরেকবার অফ হচ্ছে।
.
-‘ তাপৌষি রেডি হয়ে নাও। দিশা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।’
তাপৌষি বর্ষণের পিছনে উঁকি দিয়ে বলল,
-‘ দিশা আপু কোথায়?’
-‘ মৌচাকে। তোমাদের কী কী জানি কিনার কথা। যাও রেডি হয়ে আসো। আমিও বের হবো। তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আমাকে কাজে যেতে হবে।’
বাপরে, কী গুরুগম্ভীর মুখ! মনে হচ্ছে ঠেকায় পড়ে তাপৌষিকে নিয়ে বের হচ্ছে।
তাপৌষির রেডি হতে বেশি সময় লাগেনি। ও খুব তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে যেতে পারে। আজকালকার আধুনিক মেয়েদের মতো ওর চেহারা সাজানোর প্রয়োজন পড়ে না। তাপৌষির এই গুণটা বর্ষণের খুব পছন্দের। বাইরে যাওয়ার সময় মুখে রঙ মাখতে যেয়ে ঢিলামি বর্ষণের একদম অপছন্দ।
লিফটে উঠে বর্ষণ তাপৌষিকে জিজ্ঞেস করলো,
-‘ এখনো কি লিফটে উঠলে তোমার মাথা ঘুরায়?’
-‘ সামান্য।’
-‘ওহ।’
তারপর দুজনেই চুপ। মেইন গেটের সামনে এসে বর্ষণ তাপৌষিকে একটু অপেক্ষা করতে বলে। রিকশা পাওয়া যায় না এদিকে। তার উপর আজকে কড়া রোদ উঠেছে। একটু এগিয়ে পল্টন টাওয়ারের ওইদিকে যেতে হবে রিকশার জন্য।
.
-‘ কী ম্যাডাম, কই যান? ‘
তাপৌষি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল ওর পাশে দাঁড়িয়ে আছে সেদিনের সেই দারোয়ানটা। কেমন লালসাপূর্ণ দৃষ্টি লোকটার চোখে। তাপৌষি লোকটাকে কোন জবাব দিল না। বরং উনার থেকে একটু দূরে সরে এসে দাঁড়াল।
-‘ কত নিয়েছেন দুই ভাইয়ের থেকে?’
তাপৌষি অবাক দৃষ্টিতে তাকায় লোকটার দিকে। ও আসলে বুঝতে পারছে না কী বিষয়ে লোকটা কথা বলছে। দেখতে তো বয়স্ক মনে হচ্ছে।
-‘ কী হলো? কইতাসেন না কেন? রেট কত?’
তাপৌষির এবার খুব ভালো মতো বুঝতে পারে এই লোক আসলে কী বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করছে। ওর হাত ঘামছে, কপাল থেকে ঘাম গাল বেয়ে ঝরছে। এই মাঝ দুপুরে এদিকে তেমন কেউ নেই। পিছের পার্কিং লট পুরোটাই খালি। শুধু কয়েকটা গাড়ি অবহেলায় পড়ে আছে। জনমানবহীন এই জায়গায় লোকটা যদি তাপৌষির সাথে উল্টা পাল্টা কোন আচরণ করে তাহলে? ভাবতেই তাপৌষির গায়ে জারকাটা দিয়ে উঠছে।
তাপৌষির ভীত, অস্থির অবস্থা আর ছটফট করতে থাকা চাহনি দেখে রুবেল আজ মনে ভীষণ জোর পেয়েছে। আশেপাশে একবার তাকিয়ে সে তাপৌষির পাশে আরেকটু সরে এসে দাঁড়াল। এদিকে এই সময় এত দ্রুত রিকশা পাওয়া যাবেনা তা রুবেল ভালো মতোই জানে। বর্ষণের আসতে যে দেরি হবে তা রুবেলের অজানা নয়। আজ এই মেয়েকে ও বাগে পেয়েছে। প্রথম দিনই এই কচি জিনিসটা ওর চোখে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এরপর দুই রাত ওর হাত নিশপিশ নিশপিশ করেছে এই মেয়েরে কাছে পাওয়ার জন্য। গলাটা খ্যাঁক করে রুবেল আবার বলল,
-‘ কথা কন না ক্যা? রেট বেশি হলেও সমস্যা নাই। দুই ভাই কী বেশি টাকা দেয়? সার্ভিস কেমন দেন?’
তাপৌষি হাতের ফোনটা বের করে বর্ষণকে ফোন লাগাতে যায় কিন্তু রুবেল খপ করে তাপৌষির হাত থেকে ফোনটা নিয়ে নেয়।
-‘ কী ফোন দেহি। ওমা এ দেহি অনেক দামি ফোন। কে দিসে? ওই দুই ভাই?’
তাপৌষি এবার পারলে কেঁদেই দিবে। এধরণের পরিস্থিতির স্বীকার ও আগে কখনো হয়নি। ওর ভয় হচ্ছে খুব। অশ্রুজলে সিক্ত চোখ দুটো বারবার বর্ষণকে খুঁজছে। ওর সামনে দিয়ে কিছু মানুষ চলে যাচ্ছে। তাপৌষির সাথে দারোয়ানের অসভ্যতামি কী কারও নজরে পড়ছে না?
-‘ বোবা নাকি? যাই হোনগা। আমি কিন্তু বেশি দিব। দারোয়ান বলে ভেবেন না আমার কম আছে।’
রুবেল ঠিক বলেছে। দারোয়ান হিসেবে তাকে সম্পদশালী বলা চলে। ওর কোন এক দুঃসম্পর্কের এমপি চাচা ওর কাছে কালো টাকা গচ্ছিত রেখেছে। গত মাসে এমপির বাসায় র্যাব অপ্রত্যাশিত হানা দেয়। সে সময় রুবেল কোন একটা কাজে তার দুঃসম্পর্কের সেই এমপি চাচার বাসায় গেছিল। র্যাবের আসার খবর পেয়ে কালো টাকার ব্যাগ নিয়ে চাচার ইশারায় রুবেল বাড়ির পেছনের ইমারজেন্সি দরজা দিয়ে পালিয়ে আসে। দারোয়ানের চাকরি করায় সন্দেহ রুবেলের দিকে যাবেনা তা এমপি চাচা আর ভাতিজা দুজনেই জানে।
রুবেল সেই থেকে টাকা পাহারাদার হিসেবে প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের টাকা পায় এমপি চাচার থেকে।
-‘ এর থেকে দামি ফোন কিন্তু কিনে দিমু। কাস্টমারকে মানা করতে নেই।’
এরপর রুবেল খুবই ঘৃণ্য এক কাজ করে বসে। তাপৌষির ফর্সা হাতের উপর নিজের হাত ছোঁয়ায়। আহ! কী নরম হাত। কী সুন্দর মসৃন হাত। বহু আকাঙ্খা এই মেয়েটিকে নিয়ে রুবেলের।
তাপৌষি হাতের পার্সটা শক্ত করে চেপে ধরেছে। এবার ভয়ের পাশাপাশি ওর রাগ লাগছে। রাগ লাগছে নিজের উপর। এই লোকটাকে ও জবাব দিতে পারছে না। জবাব দিতে গেলেই ভিতরের আরেকটা সত্ত্বা ওকে মনে করিয়ে দিচ্ছে, “তুই মেয়ে। এখানে আওয়াজ তুললে লোকে তোর চরিত্রে আগে আঙুল তুলবে। তুই এখানে নতুন তাপৌষি।”
তাপৌষির রাগ এরপর আবার জলে পরিণত হয়। তবে লোকটা যতবার কুৎসিত ইঙ্গিত দিচ্ছে ততবার তাপৌষির অন্তরে জ্বলমান অগ্নি কুণ্ডে ঘি বর্ষিত হচ্ছে।
আজ রুবেল একেবারে কোমর বেধে মাঠে নেমেছে। পাক্কা খিলাড়ি সে। তাপৌষিকে দেখে আগেই বুঝে গিয়েছিল টাকা ছিটালে এই মেয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে কোলে এসে বসবে। মেয়ে মানুষ চিনতে ওর কখনো ভুল হয়না। তবে এই মেয়ে একটু বেশি রঙ্গ করছে। মনে হয় কাস্টমার নিয়ে একটু বেশি লয়াল। তবুও রুবেলের বাজপাখির দৃষ্টি তাপৌষিকে নিজের করে চাইছে বারবার। এর আগেও ও এমন প্রস্তাব দিয়েছে অনেককে। তবে গত বছর তিন তলার বাসিন্দা ব্যারিস্টার আনিসুল উদ্দিনের এক আত্মীয়কে চিনতে সে ভুল করে। ওই আত্মীয় মেয়েটাও তাপৌষির মতো এই ঢিলা সালোয়ার কামিজ পরহিতা ছিল। তবে মেয়েটা চক্ষু লজ্জার ভয়ে কাউকে আর এই বিষয়ে কিছু বলতেও পারেনি। মেয়েটার ওড়না ধরে টানও মেরেছিল রুবেল। অল্পবয়সী গ্রাম্য পরিবেশে বেড়ে উঠা সেই মেয়েটা কী ভয়টাই না পেয়েছিল সেদিন রুবেলকে! ভাবতেই ভিতর থেকে এক দাম্ভিক হাসি বের হয়ে আসে রুবেলের।
কিন্তু হঠাৎ রুবেলের পরিকল্পিত স্বচ্ছ আকাশে এক দল কালো দাপুটে মেঘ হানা দেয়। তাপৌষি পার্স দিয়ে রুবেলের স্পাইরাল কড বরাবর সজোরে বারি দেয়। রুবেল সেখানেই বসে পড়ে উঁহ! উঁহ! শব্দ করে গোঙাতে থাকে। কী হলো এটা ওর সাথে? তাপৌষি তো ধীর স্থির ভাবে সব শুনছিল। তবে সে যে আচমকা এরকম আক্রমণ করে বসবে তা রুবেল কখনো ভাবেনি। তার এই সাতচল্লিশ বছরের জীবনে সে নারীদের কেবল ভোগ্য বস্তু হিসেবেই ভেবে এসেছে। কখনো কোন নারী তার বিরুদ্ধে এমন মাথা চাড়া দিয়ে উঠে নি। কিন্তু আজ, এটা কী হলো?
কথায় আছে, কোন মানুষকে অতিরিক্ত ভয় দেখাতে নেই। একসময় সেই ভয়ের জায়গায় তৈরি হয় ক্ষোভ। ক্ষোভ থেকে অগ্নি শিখা। আজ তাপৌষি ভয়কে জয় করেছে। রাস্তার পাশ দিয়ে যাওয়া দুজন মহিলা পথচারীকে দেখে ওর মনে সাহসের সঞ্চার ঘটে। রুখে দাঁড়ায় রুবেল নামের এই বিকৃত মস্তিষ্কের দারোয়ানটির সামনে। পার্স দিয়ে দেওয়া বারিটা ঠিক জায়গায় লেগেছে তা তাপৌষি রুবেলের উঁহ! উঁহ! আওয়াজ শুনেই বুঝতে পেরেছে। এরপর রুবেলের কোন প্রতিক্রিয়ার আগেই তাপৌষি পা দিয়ে ওর পেট বরাবর জোরে লাথি মারে। এবার রুবেল বিকট চিৎকার করে উঠে। ইতোমধ্যে কয়েকজন মানুষ এসে জড়ো হয়েছে রাস্তায়। সবাই তাপৌষিকে জিজ্ঞেস করছে, “কী হয়েছে? কী হয়েছে?” তবে তাপৌষি এখন ক্রোধান্ধ। পা দিয়ে আরও কয়েকটা লাথি মারে রুবেলে পিঠ বরারবর। যেই মহিলাদের দেখে তাপৌষি মনে জোর পায় তারা তাপৌষিকে আটকাতে চলে আসে। অথচ রুবেলকে মারার সময় ওদের মাঝকার প্রায় কথাই তাপৌষি বলেছিল। তবে এই মহিলাগুলো তাপৌষিকে সাহায্য করতে না এসে এই অমানুষ দারোয়ানটাকে বাঁচাতে ছুটে এলো কেন তা তাপৌষির বোধগম্য হচ্ছে না।
.
বর্ষণ যখন এপার্টমেন্ট ব্লকের সামনে এলো তখন দেখতে পেলো অনেক মানুষের ভীড়। এদিকে ভীড় হয়ই। শ্যুটিং এর জন্য এই জায়গাটা খুব জনপ্রিয়। অনেক হাই প্রোফাইল মানুষের বাসা এখানে যারা বাংলা চলচিত্র ইন্ডাস্ট্রির সাথে জড়িত। তবে ভীড় ঠেলে ভিতরে ঢুকে রুবেল নামের দারোয়ানটিকে দেখতে পাওয়া গেল। সে রাস্তায় প্রায় রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছে। কী হলো এর? তবে বর্ষণের চোখ এখন তাপৌষিকে খোঁজায় ব্যস্ত। কোথায় গেলো মেয়েটা? এখানেই তো রেখে গিয়েছিল ও। একটু বা’ পাশে তাকাতে চোখে পড়লো দুজন মহিলা তাপৌষিকে ধরে আছে। ওর অবস্থা পাহাড়ের পাদদেশ থেকে উগরে আসা সেই উষ্ণ লাভার ন্যায়। তাপৌষি মহিলাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে রুবেলের দিক ক্ষিপ্রগতিতে এগোচ্ছে। তবে ওরা আবার তাপৌষি আটকিয়ে দিচ্ছে। ভীড়ের মাঝে একসময় তাপৌষির রাগান্বিত দৃষ্টি বর্ষণের উপর পরে। দু জোড়া চোখ পূর্ণ দৃষ্টিতে মিলিত হয়। তাপৌষির চোখে রাগ, কষ্ট, ঘৃণা স্পষ্ট। ঘটনা বুঝতে বর্ষণৈর কিছুক্ষণ সময় লেগেছিল। যখন বুঝতে পারলো তখন বর্ষণ দৌড়িয়ে তাপৌষির দিকে এগোয়। তাপৌষির চোয়াল শক্ত হয়ে আছে। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। বিদ্ধস্থ অবস্থা।
বর্ষণ তাপৌষির হাত ধরে ওকে সেই মহিলাদের থেকে দূরে নিজের পাশে নিয়ে আসে। তাপৌষি রাস্তায় উপস্থিত মানুষগুলোর দিক তাকিয়ে চিল্লিয়ে বলে উঠে,
-‘ নাটক শেষ। এবার বাড়ি যান সকলে।’
এরপর বর্ষণের দিকে তাকিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা রুবেলকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলে,
-‘ এই জানোয়ারটা আমাকে উত্যক্ত করছিল। আমাকে কটুক্তি করে মজা নিচ্ছিল। আমার ভয়কে অস্ত্র বানিয়ে আমাকে মানসিক আঘাত করছিল। রাস্তার অনেক মানুষই দেখেছে। তবে কেউ এগিয়ে আসেনি। অথচ যখন আমি একে মেরেছি, নিজের জন্য রুখে দাঁড়িয়েছি তখন এরা আমাকে আটকাতে এসেছে। স্যার আলবার্ট আইনস্টাইন আসলে ঠিকই বলেছেন, “দ্যা ওয়ার্ল্ড উইল নট বি ডিস্ট্রয়েড বাই দোস হু ডু ইভিল। বাট বাই দোস হু ওয়াচ দেম উইথাউট ডুয়িং অ্যানিথিং” ( এই পৃথিবীটা অসৎ লোকেদের অসৎ কাজের কারণে ধ্বংস হবেনা, অসৎ লোকেদের অসৎ কাজগুলো দেখেও সৎ লোকেদের দ্বারা কিছুই না করার কারণে ধ্বংস হবে)।
.
তারপরের ঘটনা একটু ভিন্ন। রুবেলকে পুলিশে দেওয়া হলো। এপার্টমেন্টের সভাপতি নিজে সেখানে উপস্থিত থেকে রুবেলকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন। এবং এও আস্বস্ত করলেন রুবেলের কঠিন শাস্তি হবে। রুবেলকে রমনা থানায় দেওয়া হয়েছে। বর্ষণ সেখানকার ইনচার্জের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছে রুবেল কঠিন শাস্তি পেতে চলেছে। থানা ইনচার্জ অফিসার ওকে বুঝিয়ে বলেছে এই যৌন হয়রানি বিষয়ক আইন সম্পর্কে।
“নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০, এর ১০ ধারাতে কোন পুরুষ অবৈধ ভাবে কোন নারী বা শিশু কে যৌনহয়রানি করলে তার শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। শুধুমাত্র ধর্ষন করলে ই অপরাধ হয়না বরং কোন নারী বা শিশুর সাথে অশোভন আচরণ বা যৌন কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে কোন অঙ্গ বা কোন বস্তু দ্বারা কোন নারী বা শিশুকে হয়রানি করলে অত্র ধারা মতে তা অপরাধ বলে গণ্য হবে।
ধারা (১০) যদি কোন ব্যক্তি অবৈধভাবে তার যৌন কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে তার শরীরের যে কোন অঙ্গ বা কোন বস্তু দ্বারা কোন নারী বা শিশুর যৌন অঙ্গ বা অন্য কোন অঙ্গ স্পর্শ করেন বা কোন নারীর শ্লীলতাহানি করেন তাহা হলে তার এই কাজ হবে যৌন পীড়ন এবং তজ্জন্য উক্ত ব্যক্তি অনধিক দশ বছর কিন্তু অন্যুন তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন এবং এর অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবেন।”
.
আজ আর তাপৌষির মার্কেটে যাওয়া হলো না। ফ্ল্যাটে ফিরে ও প্রথমেই এসে ঝরনার নিচে দাঁড়ায়। বর্ষণ তাপৌষিকে ফ্ল্যাটে রেখে আবার নিচে যায় পুলিশের নিকট।
তাপৌষির গায়ে মনে হচ্ছে অনেক দিনের ময়লা জমে গেছে। পচা বাসি গন্ধ বের হচ্ছে শরীর থেকে। বর্ষণ দিশাকে ফোন দিয়ে বাসায় চলে আসতে বলে। ওর ধারণা তাপৌষি হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ও তাপৌষিকে একা রেখে নিচেও যেতে চাচ্ছিল না। তবুও যেতে হয়েছে। কিন্তু বর্ষণ যখন ফ্ল্যাটে ফিরে তখন তাপৌষিকে দেখে অবাক হয়ে যায়। মাত্র শাওয়ার নিয়েছে বোঝাই যাচ্ছে। চোখেমুখে ক্লান্তি নেই বরং ওকে বেশ প্রাণোচ্ছল দেখাচ্ছে। টেবিল থেকে প্লেটে খাবার বেড়ে নিচ্ছে। সেই সাথে গুণগুণ গান করছে। এমন ভাব যেন একটু আগে তেমন কোন ঘটনাই ঘটেনি।
-‘ তাপৌষি তুমি ঠিক আছো? ‘
-‘ হুম ঠিক আছি। এই সামান্য ব্যাপার মনে রাখার কোন মানেই হয়না। আপনাকে ভাত বেড়ে দিব?’
-‘ না আমি নিজেই বেড়ে নিব।’
-‘ আচ্ছা।’
বর্ষণের সামনে দুপুরে ঘটে যাওয়া বিষয়টাকে সামান্য হসেবে তুলে ধরলেও তাপৌষি জানে, এই একটি ঘটনা ওর কয়েকদিনের ঘুম হারাম করে দিবে। সামনের কয়েকদিন ভয়ানক সব স্বপ্ন দেখবে ও। নবম শ্রেনিতে পড়ার সময় স্কুলের এক সিনিয়র বড় ভাই তাপৌষির হাত ধরে জোর করে ওকে প্রেম প্রস্তাবে রাজি করানোর চেষ্টা করেছিল। বাচ্চা তাপৌষির ব্রেইনে সূক্ষ্ম ইমপ্যাক্ট ফেলে দেয় সেই ঘটনা। এরপর অনেক রাত ও ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনি, খেতে পারেনি, পড়তে পারেনি। সাবান দিয়ে হাত ধুতো খালি।
কিছু ভয়ঙ্কর স্মৃতি বরাবরই আমাদের সাথে থেকে যায়। এই স্মৃতিগুলো দুঃস্বপ্নের মতো আমাদের সারাটা জীবন তাড়া করে বেড়ায়। আজকের এই কালো স্মৃতিও ওকে খুব ভুগাবে।
.
.
চলবে…