#অজানা_অনুভূতি
#পর্বঃ১১
#লেখাঃInsia_Ahmed_Hayat
দেখতে দেখতে ১ মাস পার হয়ে গেলো হায়াত চলে যাওয়ার। সবাই অনেকটা বদলে গিয়েছে। নিজের জীবন আরো সুন্দর করে সাজিয়ে তুলেছে। কিন্তু সব কিছুর মাঝেও হায়াতকে কেউ ভুলেনি। এভাবে একটা মেয়ে সবার আড়ালে চলে গেলো ভাবতেই কষ্ট হয়। আদনানও জানে না হায়াত কোথায় গিয়েছে। আদনান বলেছিলো সে শুধু জেসিকা ও আরিয়ানকে কিডন্যাপ করা আর ইনফরমেশন নেওয়ায় হায়াতকে সাহায্য করেছিলো। জেসিকা ও আরিয়ান পুলিশ হেফাজতে আছে। জেসিকার পরিবার সবার কাছে ক্ষমা চেয়েছে জেসিকার জন্য। আরহামও অনেকটা বদলে গিয়েছে এই এক মাসে। এই এক মাসে এমন একটা সেকেন্ড নেই যে সে হায়াতকে মনে করেনি। হায়াতের শেষ কথা গুলো আরহাম সুন্দর করে পূরন করেছে। হায়াতকে খোজার চেষ্টা করেনি কেউ আরহাম সবাইকে মানা করেছে। তারপরও হায়াতের ভাইয়েরা অনেক জায়গায় খোজ নিয়েছে কিন্তু ফলাফল শুন্য। আদনানও বলেছে সে হায়াতকে খোজার ব্যবস্থা করবে কিন্ত আরহাম মানা করে দেয়। কারন হায়াত বারবার এক কথাই বলেছিলো ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ হারিয়ে গেলে খুজে পাওয়া অনেক কঠিন। আপাতত হায়াত নিজেকে নিয়েই থাকুক যখন সময় হবে সে নিজেই আসবে। একটা জল জ্যন্ত হাসি খুশি মেয়েকে হাতের পুতুল বানিয়ে নাচিয়েছি তার মন কে টুকরো টুকরো করে মাটি চাপা দিয়েছি তার শাস্তি তোহ পেতেই হবে। আরহাম হায়াতকে ভুলতে চায় না। হায়াতের প্রতি যে অবিচার গুলো করা হয়েছে সেগুলো ভুলতে চায় না। কেউ ভুলে গেলে তাকে বারবার মনে করিয়ে দেয়। এখন আরহাম আর আগের মতো মানুষকে কথা শোনায় না।মানুষকে বোঝার চেষ্টা করে হয়তো এটাই হায়াত চেয়েছিলো। ৬ মাস এক সাথে থেকেও হায়াতের মনে কি আছে কেমন আছে বুঝতে পারেনি আরহাম। হায়াতের বলা কথাগুলো অনেক ভেবেছিলো আরহাম হায়াত বলেছিলো ” জেসিকা ও হায়াত দুজনেই গায়েব হয়েছিলো তখন কার জন্য কেমন লেগেছে” আরহাম তখন বুঝতে পেরেছিলো হায়াত কি বলতে চেয়েছে। হায়াত যাওয়ার আগে আরহামের মনে ভালোবাসার মানে বুঝিয়ে দিয়ে গিয়েছে। জেসিকাকে সে আদৌ ভালোবাসেনি তার মোহে পড়েছিলো। এতোদিন সে অন্ধকারের মাঝে ভালোবাসা খুজেছে অথচ আলো তার সাথেই ছিলো। আরহাম রোজ সময় করে হায়াতের পছন্দর যায়গা গুলো গিয়ে ঘুরে বেরায় সেখানে যে তার ভালোবাসার মানুষটির স্মৃতি রয়েছে। সে যে হায়াতকে ভালোবাসে তা বুঝতে এতোই দেরি হয়ে গেলো যে ভালোবাসি কথাটা বলা হলো না।
হায়াতের বলা শেষ কথা গুলো সে পূরন করেছে। আদনানের মা বাবাকে বাসায় নিয়ে এসেছে আরহামের দাদী রেশমি চৌধুরী তাদের মেনে নিয়েছে। আদনানের মা অনেক খুশি তিনিও হায়াতের চলে যাওয়ায় আফসোস করছে। যাওয়ার পরও একটা মানুষ সবাইকে সব কিছু জানিয়ে দিয়ে গিয়েছে কি করা উচিত। অর্পা ও ইভান নিজেদের দোষ দিচ্ছে হায়াত চলে যাওয়ার। কারন ওরা হায়াতের ভালো করতে গিয়ে উল্টো কি করে ফেললো। ইশান ও ইফাত ইভানের সাথে কথা বলা অফ করে দিয়েছিলো আরহাম সবাইকে বুঝিয়েছে কারন আরহাম চায়না হায়াত ফিরে এসে দেখুক সে যা চেয়েছে তা না হয়ে উলটো হয়েছে এতে হায়াত কষ্ট পাবে আরহাম হায়াতকে আর কষ্ট দিতে চায় না। সবাই আরহামের এতো পাগলামিতে অবাক হয়ে গিয়েছে আরহাম অনেক বুঝিয়ে সবাইকে স্বাভাবিক করেছে। এরপর আনিশার বাবাকে বিয়ের জন্য অনেক কষ্টে রাজি করায় আনিশা ও ইফাতের বিয়ে ঘরয়া ভাবে হয়েছে কারন এক বছরে তিন ভাইয়ের বিয়ে তারপর অনেক খরচ তা অনেকটা কষ্টসাধ্য। হায়াত ফিরলে ওদের অনুষ্ঠান করবে। এইসব করে আরহাম হালকা আনন্দ পায় কারন হায়াত থাকলে সেও তাই করতো। আসলে মানুষের আত্নসম্মান থাকা উচিত নয়তো মানুষকে পাথর ভেবে তার উপর আঘাত করতেই থাকি করতেই থাকি যে একটা সময় সেই মানুষটা ভেঙে যায়। আরহাম হায়াতের সিদ্ধান্তকে অনেক বেশি সম্মান করেছে। এভাবে বিনা কারনে অত্যাচার সহ্য করে সবাইকে মাফ করে নতুন করে সব শুরু করা যায় না। সব সময় মানিয়ে নিয়ে চলা যায় না কখনো কখনো নিজের নাবলা কথা গুলো হারিয়ে যাওয়ার আগে সবাইকে এভাব এজানিয়ে দেওয়া উচিত। নয়তো একটার নারীর কষ্ট আদৌ কেউ জানবে না। বিয়ে নামক পবিত্র জিনিসটাকে আমরা জোর করে আরেকজনের গলায় জুলিয়ে দেওয়া মোটেও ঠিক নয়। আয়াত ও আরনাবের বিয়ে দিবে বলেছিল কিন্তু আয়াত বলেছে হায়াত যখন আসবে তখনই বিয়ে করবে। আরহামের বাবা মা আরহামকে অনেক কথা শুনিয়েছিলো সে চুপচাপ শুনেছে। সে যদি ব্যাপার গুলো ভালোভাবে সামলাতো তাহলে আজ হায়াত তার সাথে থাকতো সে শাস্তি পাওয়ার যোগ্য ইচ্ছা করে হোক বা অনিচ্ছায় হোক অত্যাচার অত্যাচারই হয়।
আরহাম রোজ রাতে ব্রিজের উপর গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকে। তেমনি আজ দাঁড়িয়ে আছে ঘরির কাটায় রাত ১২ টা বাজে আরহাম ব্রিজে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ বন্ধ করে বাতাস খাচ্ছে।চোখের সামনে হায়াতে হাস্য উজ্জল চেহারা বেহে উঠছে তেমনি তার করা অত্যাচার গুলো বারবার ভেসে আসে।
” আর কতো নিজেকে শাস্তি দিবি আরহাম”
আরহাম চোখ খুলল না কারন সে জানে আরদান ও আরনাব এসেছে রোজ রাতে আরহামের সাথে এসে দাঁড়ায় নিজের ভাইকে এভাবে কষ্ট পেতে দেখে ওদের ও খারাপ লাগছে।
আরহাম চোখ মেলে তাকালো।
আরহামঃ যতদিন হায়াত নিজে এসে আমাকে বলবে না যে নীলবাবু আপনাকে আমি বরবাবু হিসেবে মেনে নিয়েছি।
আরনাবঃ ভাই হায়াত ভাবি যদি না আসে।
আরহাম একটু চুপ হয়ে বলল
আরহামঃ আসবে আমি ওর অপেক্ষায় থাকবো। শেষ নিশ্বাসও পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। আর এই অপেক্ষাই আমার জন্য শাস্তি হবে। হায়াতের উপর করা জুলুমের শাস্তি।।
আদনানঃ আরহাম তুই তোহ আর ইচ্ছা করে করিসনি। তুইও পরিস্থিতির শিকার।
আরহাম মলিন হেসে বলল
আরহামঃ ভাই পরিস্থিতির শিকার কিন্তু পরিস্থিতিটা সুন্দর করে সামলে নিলে হয়তো আজ আমরা এক সাথে থাকতাম। আর অত্যাচার তোহ অত্যাচারই তুমি ইচ্ছে করে করো অনিচ্ছায় করো কষ্ট হবেই। আর আমি হায়াতকে যা কষ্ট দিয়েছি তাতে করে তোহ এই শাস্তি কিছুই না।
তিন ভাই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। আরহাম আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
আরহামঃ হায়াত তুমি যেখানেই আছো আমি জানি আজ তুই তোমার জোসনার মাকে দেখছো। জোসনার মা প্লিজ হায়াতকে একটু বলবেন আমার সাথে কথা বলতে ওকে ছাড়া না নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। এক নজর দেখার অনেক ইচ্ছে জাগে কিন্তু তা যে বলতে পারিনা আমার যে শাস্তি পাওয়া দরকার।(মনে মনে)
আদনানঃ হায়াত তুমি ফিরে আসো। আমি তোমায় পছন্দ করতাম। প্রথম তোমায় দেয়ালের উপর দিয়ে যেতে দেখেছি। এখনো করি কিন্তু আমি চাই তুমি আর আরহাম এক হও। আমার ভাই অনেক বেশি কষ্টে আছে হায়াত। একবার ওকে মাফ করে ফিরে আসো। এই এক মাসে অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে কিন্তু কেউ তোমাকে ভুলেনি। তোমার জন্য কারো ভালোবাসা বিন্দু মাত্র কমেনি। হয়তো আমার ওত কষ্ট হচ্ছে না যতটা আরহামের হচ্ছে। তোমার জন্য আমার ভালোলাগা কাজ করতো। তুমি আমার মনে সব সময় থাকবে কিন্তু তোকে নিয়ে এক সাথে থাকার সপ্ন আমি দেখিনি। আমার বাবা যদি আমায় না জানিয়ে তোমাদের বাড়িতে না যেতো তাহলে হয়তো তোমার জীবনটা এমন হতো না। এইসবে আমারও দোষ আছে। হায়াত তওমার সিদ্ধান্তকে স্যালুট করে। কিন্তু এবার তোহ ফিরে আসো। সবাই যে তোমার অপেক্ষা করছে।(মনে মনে)
তিন ভাই বাসায় চলে গেলো। আরহাম এখন আর বিছানায় ঘুমায় না এই বিছানা হায়াতের কারন তারা তিন মাস তিন মাস করে ভাগ করে নিয়েছিল।
আরহাম এসে ফ্রেশ হয়ে স্কাউচে শুয়ে পড়লো। খাটের উপরে দেয়ালে বড় করে হায়াত ও আরহামের ছবি। যেটা বাসর ঘরে জোর করে তুলেছিলো হায়াত। সব ছবি আরহামের কাছে পাঠিয়েছিল। হায়াতে আইডিটা পড়ে আছে। এখনো তাদের ম্যারিড পোস্ট দেওয়া সাথে কাপল পিক যা একটাও ডিলিট করেনি হায়াত।
এভাবে আরো এক সপ্তাহ কেটে যায়। একদিন আরহাম ইভানদের বাড়িতে কাচা আম নিয়ে হাজির।
অর্পাঃ আরহাম ভাই এতো কাচা আম দিয়ে কি করবো।
আরহামঃ আয়াতের জন্য এনেছি। আয়াত নাকি কাচা আমের আইসক্রিম বানাতে পারে যেটা হায়াতের পছন্দ। আয়াত তুমি আইসক্রিম বানিয়ে আমাকে দিএব আমি ফ্রিজে রেখে দিবো তুমিও রেখে দিবা। হায়াত এসে আইসক্রিম দেখলে খুব খুশি হবে। ওর তোহ আইসক্রিম অনেক প্রিয়।
আয়াত নির্বাক হয়ে চেয়ে আছে আর কতো এই লোকটার পাগলামি দেখবে। আরহামের অবস্থা দেখে সবার অনেক কষ্ট লাগছে। এই তোহ কি তোহ কিছুদিন আগে এক ডজন চুড়ি কিনে নিয়ে আসছে। হায়াত আসলে ওকে দিবে। হায়াতের কটন ক্যান্ডি পছন্দ তাই তা কিনে নিজের রুমে রেখে দিয়েছে হায়াত আসলে খেতে ইচ্ছে করলে খাবে বলে তাই। এইসব করে আরহামের তৃপ্তি হয় না।
হায়াতের জন্য শাড়ি কিনে রেখেছে। হায়াতের শাড়ি খুব পছন্দ সে বলেছিলো বিয়ের পর সে শুধু শাড়ি পড়ে থাকবে কিন্তু তা আর করা হলো না। আরহাম হায়াতের জন্য পান্ডা ডলও কিনে রেখেছে।
হায়াতের দেওয়া কলেজের সেই ম্যাংগোবার কি মনে করে যেনো রেখে দিয়েছিলো আজও সেটা নিজের কাছে অতি যত্নে রেখে দিয়েছে। আরহামের রুমের আনাচে কানাচে হায়াতের স্মৃতি তা নিয়েই বেচে আছে আরহাম।
একদিন দুপুরে সবাই খাবার খাচ্ছে। আজকে আদনানের বাবার জন্য অনেক আয়োজন সব আরহাম করেছে। হায়াত বলেছিলো ” জামাই আদরে যেনো কমতি না থাকে আর হোক জামাই বুড়া তাতে কি ”
সেই কথা রাখতে গিয়ে আরহাম এক মাসে ১০ বার তার ফুফাকে দাওয়াত খাওয়াচ্ছে। সবাই আরহামের কাজে অবাক হচ্ছে আর আফসোস করছে।
আরহামঃ আম্মু আজকে পায়েশ রান্না করোনি।
আরহামের মাঃ করেছি তোহ।
আরহামঃ জানো ফুপ্পিমা হায়াত কিন্তু আম্মুর হাতের পায়েশ অনেক প্রিয়। খেয়ে দেখুন অনেক মজা আম্মু তুমি বেশি করে রান্না করে রাখবা যদি হায়াত আসে আর পায়েশ খেতে ইচ্ছে করে তখন।
আরহামের দাদী আরহামের কষ্টে কাদে। কিন্তু কিছু বলতে পারেনা আরহাম তার করা অপরাধের শাস্তি পাচ্ছে এই কথা বলে বেড়ায়।
এখন আরহাম আর তার বাবার দেওয়া গাড়ি করে যায় না। কারন একদিন হায়াত বলেছিলো। নিজের টাকায় কিছু করুন বাবার টাকা খরচ করছেন৷ নিজের ইনকামের টাকা দিয়ে কিছু করার মজাই আলাদা। তাই আরহাম তার বাবার কাছ থেকে কোনো খরচ চায় না। সে তার কলেজের থেকে পাওয়া বেতন দিয়েই দিন পার করবে। এতে করে সে সীমায় রেখে খরচ করবে। হায়াতের সব কথা এখন আরহাম অক্ষরে অক্ষরে পালন করে। প্রথমে কষ্ট হলেও এখন সে মানিয়ে নিয়েছে।
হায়তের রিক্সায় করে যেতে খুব ভালো লাগে তাই আরহাম রিক্সায় করে যাচ্ছে।
আরহামের পরিবর্তন টা নিয়ে সবাই খুব দুশ্চিন্তায় আছে আরহাম কি উল্টা পালটা কিছু করবে না তোহ তা ভেবে। এভাবে চলতে থাকলে কি তার পরিনতি কি হবে তা ভেবেই সবাই অস্থির। আরহাম নিজের সব সাধ্য দিয়ে হায়াতের কথা গুলো মেনে চলছে। মানুষ প্রেমে পড়লে ভালোবাসার মানুষটির জন্য কি কি করতে পারে তা আরহামকে না দেখলে বুঝা যেতো না সে সব কিছুর বিনিময়ে শুধু হায়াতকে চায়। এক নজর অরান ভরে দেখতে চায়। নিজের মতো করে ভালোবাসতে চায়। নিজের ভালোবাসা দিয়ে হায়াতের সব দুঃক্ষকে মিটিয়ে দিতে চায়। হায়াতের হাতে হাত রেখে তার সব ইচ্ছাকে পূরন করতে চায়। সব কিছুর মাঝেও হায়াতকে সে নিজের করে চায়। আরহাম কানে হায়াত আসবে যদি একেবারে যেতে হতো তাহলে তাকে ডিভোর্স দিয়েই যেতো। ডিভোর্স এর থেকে বড় শাস্তি বিচ্ছেদ যা হায়াত আরহামকে দিয়ে গিয়েছে। হায়াতে অনুপস্থিতি হারে হারে টের পাচ্ছে আরহাম।
★★
আয়াতঃ আরনাব আরহাম জিজু কোথায়।
আরনাবঃ হবে কোথাও । কোনো এক ফুসকার দোকানে নয়তো আইসক্রিমের দোকানে।
আয়াতঃ আরহাম জিজুর জন্য আমার অনেক খারাপ লাগছে। এভাবে থাকলে ভাইয়া পাগল হয়ে যাবে। আমাদের কিছু করা উচিত।
আরনাবঃ কি করবো আয়াত বলো। ভাবিকে কোথায় খুজবো। ভাবি নিজে ধরা না দিলে খুজে পাবো কিভাবে।
আয়াতঃ ঠিক বলেছো সব আত্নীয়স্বজন বন্ধু বান্ধবকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কেউ জানে না।
আরনাবঃ অপেক্ষা ছাড়া কিছু করার নেই আয়াত।
আয়াতঃ আমাফ বোনের সাথে এমন কেনো হলো আরনাব। ওর তোহ কোনো দোষ ছিলো না (কান্না করে দিয়ে) কতো দিন ধরে দেখি না আমার বোনকে। বেচে আছে নাকি মরে গিয়েছে তাও জানি না।
আরনাবঃ সব ঠিক হয়ে যাবে আয়াত টেনশন করো না।
আয়াতঃ কি করবো বলো৷ খেতে গেলে ঘুমাতে গেলে এক সাথে আড্ডা দিতে গেলেও হায়াতের কথা মনে পড়ে।
আরনাবঃ আয়াত হায়াত ভাবি ঠিক আছে আমার বিশ্বাস আর উনি ঊনাকে সময় দিচ্ছে। এমন হওয়াটা জরুরি। তাই তোহ ভাই হায়াত ভাবিকে বুঝতে পারছে। মাঝে মাঝে দূরত্বটা মানুষকে তার গুরুত্ব বুঝিয়ে দেয়।
আয়াতঃ জানি না কবে হায়াত ফিরবে। দাদী তোহ রোজ ইভান ও অর্পাকে বকাবকি করে। এভাবে তার নাতনিটা চলে গেলো।
আরনাবঃ সব ঠিক হয়ে যাবে আয়াত।
★★★
অনেক দিন পর আয়াত, অর্পা,আনিশা,প্রিসা শপিং এ বের হলো এই একমাসে কোথাও বের হয়নি কেউ। হায়াত চলে যাওয়াটা বাতাসের মতো পুরো এলাক ছড়ে যায়। মানুষ তিলকে তাল বানিয়ে ফেলে। কেউ কেউ বলে বেড়াচ্ছে হায়াত অন্য কারো সাথে চলে গিয়েছে। কেউ কেউ আবার বলছে মানিয়ে নিলেও পারতো। আসলে আমাদের সমাজ এমনই অন্যের জীবন নিয়ে আমরা মাতামাতি করে থাকি।
আয়াতরা ৫ টা সেম ড্রেস কিনল হায়াত আসলে এক সাথে পরবে। আজ হায়াত থাকলে হয়তো ঝগড়া করে দামাদামি করতো। সব কিছু ৪ বান্ধুবির মনে পড়ছে। অনেক বেশি খারাপ লাগছে।
★★
আদনান রাতে ফেসবুকে ক্রোল করছিলো। মেসেজ টন বেজে উঠলো সাধারণত সে মেসেজ দেখে না আজ মেসেজ অপশনে গিয়ে অবাক। সেই ৪ বছর আগে এই আইডি থেকে মেসেজ আসতো আদনান রিপ্লাই দিতো। আজও চেনে না মেয়েটাকে। আইডির নাম আফিয়া জান্নাত নৌশিন। হঠাৎ চার বছর পর আবার নক করলো কেন।
নৌশিনঃ আসসালামু আলাইকুম
আদনানঃ ওলাইকুম আসসালাম
নৌশিনঃ কেমন আছেন আদনান।
আদনানঃ ভালো আপনি। এতো বছর পর।
নৌশিনঃ বাহ তাহলে আমায় আজও মনে রেখেছেন। আপনার স্মৃতিশক্তি তোহ খুব ভালো
আদনানঃ তোহ কি মনে করে নক দিলেন।
নৌশিনঃ একটা সাহায্য লাগবে। আর তাতে আপনারই লাভ।
আদনানঃ আচ্ছা কি সাহায্য আর কি লাভ।
নৌশিনঃ আপনাকে আমি কল দিচ্ছি ফোনেই সব বলবো।
আদনানঃ আমার ফোন নাম্বার কোথায় পেলেন।
নৌশিনঃ মঙ্গলগ্রহ থেকে। হোয়াটস আপে আসেন কল দিচ্ছি। না আসলে ফোন থেকে বের হয়ে ঘুষি মারবো।
আদনানঃ বাপরে কি রাগ। সে আগের মতোই ঘুষির মারার কথা বল। কি মনে করে যে এই মেয়ের রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করেছিলাম আল্লাহ। রোজ আমায় মেসেজ দিয়ে জালাতো হঠাৎ করে ৪ বছর আগে গায়েব হয়ে গেল কোন খোজ নেই। আজ ৪ বছর পর আসল তাও সাহায্য নিতে(মনে মনে)
★★
পরেরদিন আরহাম রাতে ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে আছে। চুপচাপ। এটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ওই ব্রিজটা হায়াতের খুব প্রিয় ছিলো। তাই এখানে আসা।
হঠাৎ একটা গাড়ি এসে থামলো। গাড়ির আওয়াজে আরহাম হালকা তাকালো তারপর আবার নিজের মতো আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।
গাড়ি থেকে কেউ একজন বের হয়ে আরহামের দিকেই যাচ্ছে।
” জোসনার মাকে খুব সুন্দর লাগছে তাই না নীলবাবু”
চলবে
(ব্যস্ততার কারনে দিতে দেরি হলো তার জন্য স্যরি। আর পার্ট ছোট হওয়ার জন্য দুঃক্ষিত আজ এতটুকুই নেক্স বড় করে দিবো। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন রিচেক দেইনি)