অন্তর দহন পর্ব -০৬+৭

#অন্তর_দহন
#লেখনিতে_আরুহি_অহি

পর্ব_৬

__আমার ছেলেটা এমন ছিলো না চন্দ্র।ও পরিস্থিতিতেই এমন হয়ে গেছে মা। জীবনে দুঃখ ছাড়া ছেলেটা কিছুই পায়নি।ওর ভেতরের মনুষ্যত্ব ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে রে চন্দ্র। ভুল বুঝে ওকে ছেড়ে চলে যাস না তুই। আজকে তোর আমাকে স্বার্থপরের মতো মনে হচ্ছে কিন্তু এমন একদিন আসবে যেদিন তুই বলবি বড় আম্মু তুমি ঠিক বলেছিলে। তোমার ছেলের মতো কেউ আমাকে ভালোবাসতে পারবেনা।

__তুমি ভুল ভাবছো বড় আম্মু। আমার জীবনে এমন দিন কোনো দিন আসবে না। কারণ আমি তোমার ছেলের সাথে থাকতে পারবোনা কখনো।সে মানুষ নয়।সে কখনো ভালোবাসতে পারে না কাউকে।

__এভাবে বলিস না চন্দ্র। আমি ওর মা। আমার ছেলেটা ভেঙে গেছে ভেতরে ভেতরে। উপরে শক্ত আবরণ পড়ে আছে শুধু। বিশ্বাস কর চন্দ্র ওর বুকেও ভালোবাসা আছে।ও কাউকে ভালোবেসে আগলে রাখতে পারে। তুই ঐ শুষ্ক মরুর বুকে বৃষ্টি চন্দ্র। আমি আমার ছেলের হয়ে তোর দুটি পায়ে পড়ি চন্দ্র।এক মা’কে তুই চোখে জল নিয়ে ফিরিয়ে দিস না।

__বড় আম্মু? আমি তোমার মেয়ের মতো । তোমাকে বড় আম্মু বলে ডাকি। এভাবে আমার পায়ে পড়ে আমাকে অপরাধী করো না তুমি। তুমি যা চাইবে আমি তাই করবো।বলো তুমি কি চাও?

__আমি চাই মরতে মরতে বেঁচে থাকা স্পন্দনের বুকটা তুই পাথর থেকে ঝর্ণা ধারা করে দে।ওকে আগলে রেখে দে সারা জীবনের জন্য। কথা দে চন্দ্র আমার কথা তুই রাখবি?

__রাখবো বড় আম্মু। তোমাকে ফেরানোর সাধ্য আমার নেই।আগে বলো তোমার ছেলে এমন হলো কেনো?সবাই ওকে খারাপ ছেলের চোখে দেখে কেনো?

__সেটা আমি জানি না চন্দ্র।তবে বাপ ছেলের মধ্যে কিছু একটা বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে গত দুই বছর ধরে।এই দুই বছর আগেও আমার ছেলে বাবা মায়ের বাধ্য সন্তান ছিলো চন্দ্র।কখনো রাত করে বাড়িতে আসতো না।কাজ পাগল ছেলে আমার। সারাদিন নিজের ব্যাবসা আর কাজ নিয়ে পড়ে থাকতো।একটু একটু করে তোর বড় আব্বুর সাথে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। সাজানো গোছানো আমার ছেলেটা দিনদিনই কেমন এলোমেলো হতে থাকে।নেশায় ডুবে নিজেকে শেষ করতে থাকে।তোর বড় আব্বু এই নিয়ে সব সময় আমাকে কথা শোনাতে থাকে। কয়েক দিন আগে আম্মা ডেকেছিলো ও বাড়িতে তোর বড় আব্বু কে। সেদিন উনি বললেন,মির্জা তোর ছেলে স্পন্দনের বিয়ে দিতে হবে চন্দ্রের সাথে।কেনো কি এসব নিয়ে কোনো প্রশ্ন করবি না।তোর বড় আব্বুর এই বিয়েতে মত না থাকলে ও আম্মার কথা ফেলতে পারেনি।তোর বাবার ও মত ছিল না এই বিয়েতে।সেও আম্মার কথা রাখতেই রাজি হয়েছে। আম্মা সেদিন আমার হাতটা ধরে বলেছিলেন,বড় বৌমা তোমার ছেলের সাথে চন্দ্রের বিয়ে হলে তোমার চোখের জল আর কখনো পড়বে না। আমি তোমাকে কথা দিলাম আমার চন্দ্র দিভাই তাকে আগের মতো সাজানো গোছানো জীবন দিবে। তুমি এই নিয়ে কখনো মন খারাপ করবে না আর।

__দাদিমাকে আমি এতো ভালোবাসতাম আর সেই কিনা আমাকে এমন একটা জীবন দিলো নিজের হাতে।দাদিমা এটা কেনো করলো বড় আম্মু?

__আমি জানিনা মা।তবে আম্মা হয়তো কিছু ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।উনি আমাদের সবার বড়।তার জ্ঞান বুদ্ধি অনেক বেশি। ভালো মন্দের হিসাব নিকাশ ও সেই ভালো জানেন।তাই হয়তো এমন একটা সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছেন।স্পন্দন দাদিকে কথা দিয়েছিলো তার বলা প্রতিটি কথা সে রাখবে।তাই ও এই বিয়ে অমত থাকলেও করেছে।

চন্দ্র কিছু ভাবতে লাগলো।এর মধ্যেই স্পন্দন হন্তদন্ত হয়ে এলো।ওর মা’কে বললো,

__চন্দ্রকে খেতে দিয়েছো মা?আর মেডিসিন?

__না দেওয়া হয়নি বাবা। এই তো দিবো।চল চন্দ্র।

চন্দ্র স্পন্দনের দিকে না তাকিয়েই বড় আম্মুর পেছনে পেছনে চলে গেলো।নিচে এসে দেখে সবাই বাড়ি ঘর পরিষ্কার করতে ব্যস্ত। চন্দ্র সিঁথি কে বললো,

__এসব কি হচ্ছে রে সিঁথি?

__আরে চন্দ্র আপু সরি ভাবী। তোমাদের বিয়ের বৌভাত কাল।তার আয়োজন চলছে।

চন্দ্র সিঁথির মাথায় গাট্টা মেরে বললো,

__আমি তোর আপু গাঁধী।ঐ গোমড়া মুখোর বউ বলে মোটেও ডাকবি না আমাকে।

__সিঁথি? এখানে দাঁড়িয়ে বকবক না করে কাজে যা।ওর এখনো নাস্তা খাওয়া হয়নি।

স্পন্দনের কথা শুনেই সিঁথি ভয়ে ভয়ে বললো,

__আচ্ছা ভাইয়া।আপু তুমি খেয়ে নাও যাও।

__আরে সিঁথি?

চন্দ্রকে আর কিছু বলতে না দিয়ে স্পন্দন ওকে ডাইনিংএ বসিয়ে দিয়ে ওর মা’কে ডেকে বললো,

__ওর জন্য খাবারে শুধু স্যুপ আর সিদ্ধ ডিম দিবা মা।আর এক গ্লাস দুধ।

দুধের কথা শুনে চন্দ্র নাক সিঁটকিয়ে বললো,

__বড় আম্মু?দুধ দিবা না। আমি খাবো না।

__দুধটা আগে শেষ করবি চন্দ্র।

অসহায় চোখে বড় আম্মুর দিকে তাকিয়ে চন্দ্র।উনি বললেন,

__জোর করে খাওয়াস না স্পন্দন।ও যখন খেতে চাইছে না তখন,,,,

__ওকে একদম মাথায় উঠাবে না মা।ও এই বাড়িতে কয়েক দিনের জন্য এসেছে। আমি তুমি আমাদের কারো ব্যবহার বা কাজ ওকে কষ্ট না দেয় সেদিকে খেয়াল রাখবে মা। আর ওর শরীর দূর্বল।পর্যাপ্ত খাওয়া দাওয়া করে রেস্ট নেওয়া দরকার।এদিকটাও খেয়াল রাখবে। খাওয়ার পর এই মেডিসিন গুলো দিয়ে দিও মা।আর ওদের সাথে মিশে যেনো লাফালাফি না করে সেদিকে খেয়াল রাখবা। আমার কাজ আছে।আসতে দেরি হয়ে যাবে।

__ও দুইদিনের জন্য এ বাড়িতে আসেনি স্পন্দন। সারাজীবনের জন্য এসেছে।

__আমি ওকে আমার মতো ছেলের সাথে সারাজীবন রেখে জীবন নিয়ে আফসোস করতে দিবো না মা।

__তুই আম্মাকে কথা দিয়েছিলি স্পন্দন।

__আমার কথা আমি রেখেছি।ওকে বিয়ে করেছি আর ওর ভালো থাকা না থাকা নিয়ে চিন্তাও করছি।এর বাইরে দাদিমা কে দেওয়া আমার আর কোনো কথা নেই মা।

__কিন্তু স্পন্দন?

__আমার যা বলার তা বলে দিয়েছি মা।এই নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন নয়।

__দেখেছো বড় আম্মু?আর এই ছেলের জন্য তুমি আমাকে অনুরোধ করে চলেছো সাথে থেকে যাওয়ার জন্য।

স্পন্দনের মা কিছু না বলে চন্দ্রকে মেডিসিন দিয়ে চলে গেলেন। চন্দ্র হা করে সেদিকে তাকিয়ে বললো,

__যাহ্ বাবা ।এই বড় আম্মুর আবার কি হলো? আমার তো বহুত শান্তি লাগতাছে। আমাকে নিজের ইচ্ছায় এ বাড়ি থেকে বর করে দেবে। উফ্ এর থেকে শান্তির আর কি হতে পারে?

__দিভাই?

__জ্বী দাদিমা।

__কোথায় যাওয়ার কথা বলছো তুমি?এর মধ্যেই তোমাদের কি হানিমুনে যাওয়ার প্লান তৈরি হয়ে গেছে নাকি?তাও আমাকে ছেড়ে?

__আরে ওসব কিছু নয় দাদিমা। আমি বলছি তোমার বড় নাতি আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার উপায় খুঁজে চলেছে। সেই আনন্দে আমি,,,,

__কি বললে তুমি?

__না মানে কিছু না দাদিমা।মিতু আপু ডাকছে আমাকে। আমি যাই।

দাদিমা সব বুঝেও কথা বাড়ালেন না। চন্দ্র ছেলে মানুষ।ওর সাথে এসব নিয়ে কথা না বলাই ভালো মনে করে ভেতরে চলে গেলেন।

__চন্দ্র আপু তুমি এখানে কেনো?

__কেনো?কোন সংবিধানে লেখা আছে চন্দ্র এ বাড়ির এখানে সেখানে ঘুরতে পারবে না?

__স্পন্দনের ব্যক্তিগত সংবিধানে চন্দ্র।

__মিতু আপু তুমি ও এদের দলে?আমাকে কেউ ভালোবাসে না আর।

__হ্যাঁ ভাই চন্দ্র স্পন্দনের বউকে ভালোবাসা দেই আর সেই বেডায় এসে আমাদের মতো মাসুম মাসুম বাচ্চাদের গর্দান নিয়ে নিক।আমরা বাপু এর মধ্যে নেই।

__এই তোরা আমার সাথে এমন করছিস কেনো? ঠিক করে বল তো ঐ গোমড়া মুখো তোদের কি বলে ভয় দেখিয়ে গিয়েছে?

__শোন চন্দ্র সামনের সপ্তাহে আমার বিয়ে।তাই এখন মরতে চাই না। তুই ঘরে গিয়ে শুয়ে থাক চন্দ্র।এটাই আমার ভাইয়ের তার প্রাণপ্রিয় বউয়ের জন্য আদেশ।

__আমি কি ভাবছি বল তো মিতু?

__তুই আবার কি ভাবছিস রেহান ভাই?

__না মানে যদিও তোদের মতো ছোট ছোট পোলাপাইনের সামনে আমার এগুলো বলা উচিত নয়। তবুও পেটে চেপে রাখতে পারছিনা রে।

__ভনিতা না করে বলবা রেহান ভাই।

__আরে চন্দ্র বলছিলাম কি প্রথম দিন তো হেব্বি ঝার খেলাম ভাইয়ার কাছে। কিন্তু আজকে আবার আমাদের ই দায়িত্ব দিয়ে গেছে তোর খেয়াল রাখতে। ঘটনা কিরে চন্দ্র?

__মিতু আপু দেখো রেহান ভাই কি সব বলছে।

__দেখ রেহান ভাই ওরা হয়তো নতুন নতুন প্রেমে পড়েছে।আর তুই মাঝখান থেকে কাবাব মে হাড্ডি হয়ে ঢুকতে চাচ্ছিস ? লজ্জা করে না তোর ভাইয়া?অন্তুকে বলে দেই এসব?

__আরে আপু এই অন্তুটা আবার কে?

__কি রেহান ভাই বলবো?

__তোর পায়ে পড়ি বোন। ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি।এই সমাজে একবার ওর কথা তুলে সারা জীবনের জন্য আমার মুখ বন্ধ করার পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করে ফেললি রে বইন।

সবাই হু হা করে হাসাহাসি করতে লাগলো।আর মিতু বেশ ঘটা করে অন্তু আর রেহানের প্রেমের গল্প সবাইকে শুনিয়ে শুনিয়ে মজা নিতে লাগলো।

#চলবে,,,,,,,,,

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন। গল্প পড়ে লাইক কমেন্ট করে পাশে থাকবেন। সবাইকে ভালোবাসা।#অন্তর_দহন
#লেখনিতে_আরুহি_অহি

পর্ব_৭

সন্ধ্যা বেলায় ক্লান্ত হয়ে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে ঘরের দিকে এলো স্পন্দন। ভেতরে গিয়ে দেখে চন্দ্র নেই কোথাও।ওয়াশরুম, বেলকনিতে না পেয়ে আবার নিচে এলো। মা’কে দেখে বললো,

__চন্দ্র কোথায় মা?

__ভাই বোনদের সাথে আছে হয়তো। সারাদিন তো ওদের সাথেই ছিলো।

__জ্বর কমেছে?

__সেটা দিয়ে তোমার কি স্পন্দন?মেয়টা কেমন আছে সারাদিন খোঁজ নিয়ে দেখেছো? প্রয়োজন মনে করো নাই নিশ্চয়ই?

__সে কৈফিয়ত দিতে আমি বাধ্য নই।তাও আপনার কাছে।

স্পন্দন বড় বড় পা ফেলে উপরে যেতেই সৈয়দ মির্জা স্পন্দনের মা’কে বললেন,

__ আশরাফ ফোন করেছিলো।কাল ওরা আসবে।আর চন্দ্র স্পন্দনকে ও বাড়িতে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু তোমার ছেলে যাবে বলে মনে হচ্ছে না। আমার মান সম্মানের কথা একটাবার তোমার ছেলে ভাবে না। এমন একটা ছেলের মা তুমি। তোমার ও লজ্জা হওয়া উচিত ছেলের এমন ব্যবহারের জন্য।

__চুপ কর মির্জা।সারা জীবন ধরে শুধু একজনের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপাতে চাপাতে তোর অভ্যাস খারাপ হয়ে গেছে।

__আম্মা? আপনি জানেন না কিছু।তাই এভাবে বলছেন।

__আমি জানিনা করে করে যেটুকু জানি তাতে যথেষ্ট তোকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু আমি তো মা। নিজের হাতে নিজের ছেলের বিচার করতে হবে বলেই আমি পিছিয়ে যাই সব সময়। না হলে তোর অপরাধের শাস্তি তোর প্রাপ্য মির্জা।

__আম্মা?

__গলা নামিয়ে কথা বল মির্জা। আমি এই সৈয়দ বাড়ির মান সম্মান রক্ষার জন্য এখনো মুখ বন্ধ করে রেখেছি। এমন কোনো কাজ করিস না যাতে আমি বাধ্য হই যেটা এতো বছর লুকিয়ে রেখেছি সেটা বলতে।

সৈয়দ মির্জা মাথা নিচু করে চুপচাপ চলে গেলেন।স্পন্দনের মা এখনো দাঁড়িয়ে আছেন।উনার দিকে তাকিয়ে উনার শ্বাশুড়ি বললেন,

__বড় বৌমা তুমি এই সৈয়দ বাড়ির বড় বউ।এতো দিন ধরে পরে পরে মুখ লুকিয়ে কেঁদেছো। এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে শেখো। ভুলে যেওনা তোমার শ্বাশুড়ি আম্মা এখনো বেঁচে আছে।আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যখন এই বিয়ের আমি বুঝে শুনেই নিয়েছি।এই নিয়ে তোমার মনের মধ্যে যেনো কোনো প্রকার কিন্তু না থাকে বড় বৌমা।

__জ্বী আম্মা।

__যাও রাতের খাবার যেনো সবাই এক টেবিলে বসে খায় সেই ব্যবস্থা করো গিয়ে।

স্পন্দনের দাদিমা নিজের রুমে চলে গেলেন।স্পন্দনের মা ও নিজের কাজে চলে গেলেন।স্পন্দন ছাদে গিয়ে দেখে সবাই গোল হয়ে বসে গল্প আড্ডায় মেতে আছে। চন্দ্র উল্টো দিকে বসে আছে বলে খেয়াল করেনি যে স্পন্দন এসেছে পেছনে।স্পন্দন বলে উঠলো,

__এখানে বসে আছিস কেনো চন্দ্র?

চন্দ্র ভাবলেশহীন ভাবে বললো,

__চোখে কি কম দেখেন? দেখছেন না সবার সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছি।

__ওহ্।তা তোর কোথায় থাকার কথা ছিলো চন্দ্র?

মিতু বলে উঠলো,

__ভাইয়া চন্দ্র আসতে চায়নি। আমি জোর করে এনেছি ওকে। আমি আসলে বুঝতে পারিনি। দেখলাম জ্বর নেই তাই নিয়ে এসেছি।

__অনেক বড় হয়ে গেছিস মিতু? কিন্তু এই বিচ্চুর হয়ে সাফাই গাইতে গিয়ে যে মিথ্যা বলতে হয় সেটা ভুলে গেছিস। তুই এটা ভুলে গেছিস যে মিথ্যা কথাটা তুই স্পন্দনকে বলছিস।যাক ভালো।তা রেহান দিপ্ত রাতুল তোদের কোনো কাজ নেই?

__না মানে আপাতত নেই ভাইয়া।

__আচ্ছা তাই বুঝি বোন গুলোকে নিয়ে এখানে বসে আড্ডা দেওয়া হচ্ছে।যা নিচে যা।দাদিমা ডেকেছেন তোদের।

ওরা তিনজন এক ছুটে নিচে নেমে গেলো। চন্দ্র অসহায় মুখে বোনদের দিকে তাকিয়ে আছে।তারাও এক পা দু’পা করে হাওয়া হয়ে গেছে। এবার শুধু স্পন্দন আর ও।স্পন্দন চন্দ্রকে বললো,

__তো মহারাণীকে কি আলাদা করে আমন্ত্রণ করতে হবে?নিচে যাওয়ার জন্য?

__দেখুন আপনি কিন্তু এটা ঠিক করলেন না।

__হ্যাঁ তো?কি করবি তুই?

__আমি মানে,,,

__হ্যাঁ তুই।বল কি করবি?

চন্দ্র উঠেই এক দৌড়ে ছাদ থেকে নামতে গিয়েই হোঁচট খেয়ে পড়ে নিতে গেলে স্পন্দন গিয়ে ধরলো।বললো,

__নিজের পায়ে এখনো ঠিক মতো হাঁটতে শিখিস নি চন্দ্র। তুই আবার এই স্পন্দনকে ভয় দেখাতে যাস? সাহসের তারিফ করতে হবে রে চন্দ্র।

চন্দ্র চোখ খিঁচে বন্ধ করে আছে।ভয়ে ঠোঁট গুলো মৃদু কাঁপছে।স্পন্দন সেদিকে তাকিয়ে থমকে গেলো।ওর হার্টবিট মিস্ হয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।শরীর দিয়ে ঠান্ডা শীতল কিছু নেমে যাচ্ছে বলে মনে হলো। চন্দ্র চোখ পিটপিট করে তাকালো।স্পন্দনকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নড়েচড়ে উঠলো।স্পন্দনের ঘোর কেটে গেলো। দ্রুত চন্দ্রকে ছেড়ে দিয়ে নিচে নেমে গেলো। চন্দ্র এখনো হাবার মতো সেদিকে তাকিয়ে আছে।কিছুই বুঝতে পারলো না ও।স্পন্দন নেশা করার জন্য বেলকনিতে গিয়ে একের পর এক খেতে লাগলো।না চন্দ্রের ঐ মুখটা কিছুতেই ভুলতে পারছেনা। চোখের সামনে ভেসে উঠছে বারবার। নিজের মস্তিষ্কের উপর প্রেসার দিয়েও হৃদির মুখটা মাথায় আনতে পারলো না। বিরক্ত হয়ে বোতল গ্লাস সব ফেলে দিলো ফ্লোরে।ঝনঝন করে শব্দে সব টুকরো টুকরো হয়ে গেলো।স্পন্দন মাথার চুল গুলো পেছনে টেনে ধরে অসহায়ের মতো আর্তনাদ করতে করতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। চন্দ্র দৌড়ে এলো ওর আর্তনাদ শুনে।স্পন্দনকে ধরতে গেলেই ধাক্কা দিলো চন্দ্রকে।বললো,

__স্পর্শ করবি না চন্দ্র। আমাকে তুই স্পর্শ করবি না।যা বেরিয়ে যা এই ঘর থেকে। আমার জীবন থেকে। আমি তোর মুখ ও দেখতে চাইনা।চলে যা তুই চন্দ্র। বেরিয়ে যা।

চন্দ্র ভয়ে সেঁধিয়ে গেছে।স্পন্দনের এমন রূপে আরো ভয় পেয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো।স্পন্দন তেড়ে এসে।দু হাত দিয়ে চন্দ্রের মুখটা আগলে ধরে এলোমেলো করে বললো,

__কাঁদবি না চন্দ্র।তোর চোখে কান্না মানায় না চন্দ্র। মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকতে হবে তোকে। এভাবে আমার মতো মানুষের সাথে থেকে তোর জীবনটা নরক বানাতে দেবো না আমি চন্দ্র। কিছুতেই না। চোখের জল মুছে উঠে দাঁড়িয়ে আমার মুখোমুখি হয়ে প্রতিবাদ করতে শেখ চন্দ্র। এভাবে চোখের জলে নিজেকে হেরে যাওয়া অবলা নারী করে রাখিস না।তোকে শক্ত হতে হবে।আরো শক্তিশালী হয়ে স্পন্দনকে আঘাত করতে হবে। ক্ষতবিক্ষত করে দিতে হবে স্পন্দনের মধ্যের মানুষটাকে।

বলতে বলতেই চন্দ্রের কপালে কপাল ঠেকিয়ে দিয়ে স্পন্দন আরো কিছু বলতে লাগলো অস্ফুট স্বরে। চন্দ্র এতোটাই ভয় পেয়ে গেছে যে তা আর শোনা বা বোঝার বোধ নেই তখন।এখনো ফুঁপিয়ে কাঁদছে। বাড়ির সবাই ওদের ঘরে চলে এসেছে। এভাবে চেঁচামেচিতে সবাই থমকে আছে।কেউ সামনে এগিয়ে আসতে সাহস পাচ্ছে না। একসময় স্পন্দন চন্দ্রের উপর সমস্ত ভর ছেড়ে দিলো। চন্দ্র ধরে রাখতে না পেরে সোফায় বসিয়ে দিয়ে রেহানকে ডাকলো।

__রেহান ভাইয়া উনাকে একটু ধরে বিছানায় শুইয়ে দেও না। আমি পারছিনা সামলাতে।

রেহান আর দিপ্ত এসে ধরে বিছানায় শুইয়ে দিলো।স্পন্দনের বাবা আসেন নি।রুমেই আছেন।তখন আম্মার কথা শোনার পর থেকেই ভেতরে আছেন।বাইরে আসেনি।ওর মা কাঁদছে। এগিয়ে গিয়ে বললেন,

__এসব কিভাবে হলো চন্দ্র?একটু আগেও তো স্বাভাবিক ছিলো স্পন্দন।

__আমি জানি না বড় আম্মু।কি থেকে কি হয়ে গেলো আমি বুঝতে পারছি না। বিশ্বাস করো আমি কিছু জানি না।

__বড় বৌমা বাদ দেও এসব। একদিনের তৈরি ঘা নয় যে এক দুই দিন মলম পড়তেই সেরে যাবে।সময় দাও ওকে।সবার জন্য খাবার দেও।সবাই খেতে চলো। চন্দ্র দিভাই তুমি ও এসো। দাদুভাই ঘুমিয়ে গেছে।তাকে ডাকার প্রয়োজন নেই।

সবাই একে একে বেড়িয়ে গেলে চন্দ্র স্পন্দনের চোখ মুখ মুছে দিলো।জুতা খুলে ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে বাইরে গেলো। খাওয়ার সময় চন্দ্র আর কিছুই বললো না। চুপচাপ বসে অল্প কিছু খেয়ে উঠে আসলো। চন্দ্রের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে হঠাৎ করেই কেনো এভাবে ক্ষেপে গেলো স্পন্দন। কারণ কি? মেহেদী লাগানোর কথা ছিলো রাতে।সেটা বেমালুম ভুলে চন্দ্র স্পন্দনের পাশে গিয়ে গুটিসুটি দিয়ে শুয়ে পড়লো।সকালে ঘুম ভাঙার পর দেখে হাত ভর্তি মেহেদী দেওয়া। গায়ে আবার কাঁথা দেওয়া।উঠে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে দেখে স্পন্দন বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে সামনের দিকে তাকিয়ে।কিছু একটা বির বির করছে। চন্দ্র ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে শুনতে চেষ্টা করলো। কিন্তু তার আগেই দরজায় নক পড়তেই স্পন্দন পেছনে তাকিয়ে চন্দ্রের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো।স্পন্দন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দেখে চন্দ্র চোখ নামিয়ে দরজা খুলে দিল।দেখে বড় আম্মু দাঁড়িয়ে।হাতে কাপড় গয়না ও ফুল।

__এগুলো কার জন্য বড় আম্মু?

__আমার চন্দ্রের জন্য।যা ঝটপট গোসল করে রেডি হয়ে নিচে আয়। মেহমান একটু পরেই চলে আসবে।তার আগে কিছু খেয়ে নিতে হবে।না হলে সারাদিন আর সময় হবে না মা। আমি মিতু নিরা সিঁথি কে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

__আচ্ছা বড় আম্মু।

চন্দ্র ওয়াশরুমে যেতেই দাদিমা ডেকে পাঠালেন স্পন্দনকে।

#চলবে,,,,,,

ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট করবেন। ভালোবাসা সবাইকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here