অন্তর দহন পর্ব -০৪+৫

#অন্তর_দহন
#লেখনিতে_আরুহি_অহি

পর্ব__৪

সকালে নাস্তার টেবিলে বসে বাঁধল আরেক তুলকালাম কাণ্ড।সবাই মিলে শপিং এ যেতে চায়। কিন্তু স্পন্দন যাবে না।সে গো ধরেই বসে আছে।খেতে খেতে রেহান বললো,

__আমাদর পালা শেষ হয়েছে দাদিমা। তোমার বড় নাতিকে রাজি করানো যায় নি। এবার তুমি বলো দাদিমা।

__আমি বলছি আমার দাদুভাই কে।সে আমার কথা রাখবে বলেই আমার বিশ্বাস।কি দাদুভাই রাখবে না?

__দাদিমা প্লিজ এসবের মধ্যে আমাকে জড়িও না। আমার অন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে এর থেকে।

__সারা দিন কি কাজ করো শুনি স্পন্দন?দেখি তো শুধু টইটই করে ঘুরতে।

বাবার কথায় খাওয়া থামিয়ে দিয়ে স্পন্দন বললো,

__আমি কি করি আর না করি সেটা আপনার না ভাবলেও চলবে মিস্টার সৈয়দ মির্জা। আমার জীবনের তো আর কিছুই বাকি নেই আপনার হস্তক্ষেপে। এবার যেটুকু বাকি আছে সেটুকু অন্তত আমাকে আমার মতো বুঝতে দেন।

__তোমার স্পর্ধা দিন দিন সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে স্পন্দন। বাবার সাথে কথা বলার নূন্যতম শালিনতা টুকু নেই তোমার মধ্যে। আমি তোমাকে এমন কি বললাম যে তুমি ঠিক এভাবে রিয়াক্ট করছো?

খাওয়া ছেড়ে এবার উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল স্পন্দন। একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে বড় বড় পা ফেলে বেড়িয়ে গেলো বাড়ি থেকে।ওর দাদিমা বললো,

__খাওয়ার সময় অন্তত ছেলেটাকে এভাবে বলা তোর উচিত হয়নি মির্জা। নিজের রাগ জেদ নিজের কাছে রাখতে শেখো এখন থেকে।ছেলে মেয়েরা বড় হয়েছে। তাদের সামনে নিজেকে আর ছোট করবে না কখনো। তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেদের নিতে দাও। আশাকরি আমার কথা তোমার বুঝতে অসুবিধা হয় নি।

__কিন্তু আম্মা?

হাত উঁচিয়ে সৈয়দ মির্জাকে থামিয়ে দিলেন তার মা। বললেন,

__সবাই নিজেদের খাবার শেষ করে যার যার কাজে চলে যাও। আমি এখানে দ্বিতীয় বারের মতো এসব বিষয়ে আর কোনো আলোচনা শুনতে চাই না।

সবকিছু নিরব হয়ে গেলো। শুধু খাবার খাওয়ার টুকটাক শব্দ ছাড়া আর কিছুই শোনা গেলো না।সবাই রেডি হয়ে বসে আছে। চন্দ্র যাবেনা বলে মুখ ফুলিয়ে আছে।সবাই অনুনয় বিনয় করে ক্লান্ত হয়ে ফিরে এসে সোফায় বসে আছে মুখে হাত দিয়ে।মিতু এখনো চন্দ্রের পাশে বসে আছে। শেষ বারের মতো বললো,

__চন্দ্র? ভাইয়া যাবে না বলেই কি তুই যাবি না?

__আপু! তোমার ভাইয়ের সাথে আমার কি?ঐ গোমড়া মুখো কোথায় গেলো আর না গেলো তার ধার এই চন্দ্র ধারে না। তুমি আমাকে দুই মিনিট দাও আমি রেডি হয়ে নিচে আসছি।

মিতুর মুখে এবার হাসি ফুটে উঠলো।ও বুঝে গেছে চন্দ্রের উপর প্রয়োগ করার মক্ষোম ঔষুধ কোনটা।সবাই মিলে হেসে খেলে গাড়িতে উঠে পড়লো। চন্দ্র উঠতেই যাবে তার আগেই ঝড়ের বেগে স্পন্দন কোথা থেকে এসে বললো,

__তুই এই গাড়িতে যাবি চন্দ্র। ওখানে ওতো চাপাচাপি করে যেতে হবে না।যা এই গাড়িতে উঠে বস।

__আমি আপনার সাথে যাবো না। আমি এদের সাথেই এসেছি তাই এদের সাথেই যাবো।আর আপনার তো গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। আপনি আবার সে সব ফেলে আমাদের সাথে যেতে একপায়ে রাজি হলেন কখন?

স্পন্দন চন্দ্রের কথায় কিছু না বলে ধুপধাপ শব্দ করে এগিয়ে এসে চন্দ্রের হাত ধরে নিয়ে ওর গাড়িতে বসিয়ে লক করে দিলো। চন্দ্র এতোটাই অবাক হয়েছে যে কি হলো বুঝার আগেই ড্রাইভারের সিটে স্পন্দন এসে বসে পড়লো।স্পন্দন চন্দ্রকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,

__এমন হাবার মতো না তাকিয়ে সিট বেল্ট বেঁধে নে চন্দ্র।

__কি? আমি হাবা?এই যে শুনুন?

চন্দ্র কথা শেষ করার আগেই স্পন্দন ঝুঁকে এসে চন্দ্রের সিটবেল্ট বেঁধে দিতে লাগল।আর চন্দ্র এক কোণে গুটিয়ে গেলো।স্পন্দনের নিঃশ্বাস চন্দ্রের উপর পড়তেই চন্দ্র চমকে উঠলো।স্পন্দন চন্দ্রকে না ছুঁয়েই সিট বেল্ট বেঁধে দিয়ে নিজের জায়গায় এসে গাড়ি চালাতে শুরু করলো। চন্দ্র নিজের বুকে একটা ফুঁ দিয়ে মনে মনে শ’খানেক বকবকি করলো স্পন্দনকে।স্পন্দন গাড়ি চালাতে চালাতে বললো,

__বকাবকি গুলো সব এক দিনেই শেষ করে ফেললে ভবিষ্যতে কি বলবি চন্দ্র? তখন তো বলার মতো কোনো কথাই খুঁজে পাবি না।

স্পন্দন মুচকি মুচকি হাসছে দেখে চন্দ্র আরো রেগে গেলো।মুখ ফুলিয়ে লুচির মতো করে বসে আছে চন্দ্র।তা দেখে স্পন্দন আবার বললো,

__এমনিতেই খেয়ে খেয়ে কুমড়া পটাস হয়ে গেছিস। এখন যদি এভাবে আরো মুখ ফুলিয়ে থাকিস তো বিশ্বাস কর চন্দ্র তোকে আর চোখে দেখার মতো থাকবে না।

বলেই শব্দ করে হেসে উঠলো স্পন্দন। চন্দ্র সেদিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলো,

__এই বদরাগী,নেশাখোর,গোমড়ামুখো তো হাসতেও পারে।কি সুন্দর লাগছে হাসি মুখে দেখতে।তা না সব সময়ই মুখটা কালি করে চোখ রাঙিয়ে ঘুরে বেড়ায়। অদ্ভুত লোক বটে স্পন্দন মির্জা।এতো দিন ধরে তার এতো এতো কথা শুনে ভয়েই অর্ধেক ম’রে গেছি। এখন তো দেখছি এর রূপের শেষ নেই।সকালে এক রূপ তো বিকালে আরেক রূপ আবার রাতে অন্য রূপ।বেডায় কি যাদু টাদু জানে নাকি না কি?আজব তো?

__চন্দ্র খবর দার বলছি আমার দিকে তাকিয়ে থাকবি না এভাবে? এভাবে তাকিয়ে থেকে থেকে তুই দুই চোখ দিয়ে আমাকে চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছিস। আমি কিন্তু সব জানি চন্দ্র। ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।

চন্দ্র একটু লজ্জা পেয়ে গেলো।চোখ সরিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখতে লাগলো।সবার কেনাকাটা শেষ হয়েছে। এবার ফেরার পালা। চন্দ্রের মনেই শুধু শান্তি নেই।ও ওর পছন্দের ড্রেস নিতে পারেনি স্পন্দনের জন্য।বাধ্য হয়ে স্পন্দনের পছন্দের ড্রেস ই নিতে হয়েছে।এই নিয়ে মুখ ফুলিয়ে আছে চন্দ্র। সামনে তাকাতেই ঝালমুড়ি বিক্রি করতে দেখে চন্দ্র আর এদিকে ওদিকে না তাকিয়ে ছুটতে শুরু করলো।সবাই ওর নাম ধরে ডাকছে তাতে কি?ওর পছন্দের ঝালমুড়ি দেখেই ওর আর মাথা ঠিক নেই। হঠাৎ করেই মনে হলো কেউ ওকে টেনে সরিয়ে আনলো। সামনে তাকিয়ে দেখতেই দেখলো একটা ট্রাক সাঁই করে বেরিয়ে গেলো ওর গা ঘেঁষ।পাশে তাকিয়ে দেখে স্পন্দন একহাতে ওকে ধরে রেখেছে আর চোখ মুখে স্পষ্ট রাগের ছাপ।কিছু বুঝে ওঠার আগেই স্পন্দন ওকে নিয়ে ঝালমুড়ির দোকানে গিয়ে বললো,

__মামা?যত ঝাল তোমার দোকানে আছে সব দিয়ে একটা ঝালমুড়ি বানিয়ে দাও।

চন্দ্র ফাঁকা ঢোক গিলে সবার দিকে অসহায় হয়ে তাকিয়ে রইল।সবাই এমনিতেই ভয়ে আছে। এবার চন্দ্রের অবস্থা বুঝতে পেরে ওরা আরও ভয়ে সেঁধিয়ে গেলো। ঝালমুড়ি ওয়ালা স্পন্দনের কথায় বেশি ঝাল দিয়ে মুড়ি মাখিয়ে দিলো। চন্দ্র তো ভয়ে কেঁদে ফেললো।চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝরছে চন্দ্রর। তবুও স্পন্দনের নির্দেশ মতো সবটুকু খেতে হলো।নাক মুখ লাল হয়ে গেছে চন্দ্রর। অসম্ভব জ্বলছে। তবুও কিছু বলছে না।আর না পানি খেতে চেয়েছে ও। তবুও স্পন্দন পানি এগিয়ে দিলো। সেটাও রাগে অভিমানে না নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো। সারাটা পথ চুপচাপ বসে থাকলো।স্পন্দন ও আর কিছু বললো না।বাড়িতে পৌঁছে কাউকে কিছু না বলেই হেঁটে রুমে চলে গেলো।গিয়েই বাথরুমে ট্যাপ ছেড়ে নিচে বসে পড়লো। খুব কান্না পাচ্ছে ওর।বুকটা খা খা করছে। এদিকে স্পন্দন ও উপরে যেতেই সবাই থমথমে মুখে জিজ্ঞেস করলো,

__কি হয়েছে রেহান?নিরা বল কিছু।

__বড় আম্মু ভাইয়া না চন্দ্রকে না মানে ভাবীকে জোর করে অনেক ঝাল দিয়ে বানানো ঝালমুড়ি খাইয়েছে।

__তোমার ছেলে আর মানুষ হলো না।দেখেছো ছেলের অবস্থা?আর একটু আগে খুশিতে আটখানা হয়ে বসেছিলে। না কি ছেলে তার বউকে নিয়ে বৌভাতের শপিং করতে গেছে।দেখো দেখো এই তার নমুনা।

__তুই চুপ কর মির্জা। দাদাভাই কোনো কারণ ছাড়াই এমন করেনি।এই তোরা সত্যি করে বল তো ওখানে কি হয়েছে।

সবকিছু শুনে সবাই চুপচাপ বসে থাকলো। মেয়েটার উপর দিয়ে আজকে বড় বিপদ গেছে। তবুও স্পন্দন এমনটা না করলেও পারতো।ঘরে গিয়ে স্পন্দন সোফায় বসে আছে।ওয়াশরুমের থেকে পানির শব্দ আসছে। কিন্তু চন্দ্র এখনো বাইরে কেনো আসছেনা। এবার স্পন্দন উঠে দাঁড়িয়ে পায়চারি করতে লাগলো। টেনশন লাগছে ওর।হয়তো বেশি রিয়াক্ট করে ফেলেছে। তবুও নিজের মনকে গুরুত্ব না দিয়ে চন্দ্রের অপেক্ষা করতে লাগলো। দীর্ঘ সময় পর চন্দ্র বের হলো।চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।হয়তো কেঁদেছে অনেকক্ষণ।সাথে ঝালের ঝাঁঝ তো আছেই। চন্দ্র স্পন্দনের দিকে না তাকিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।স্পন্দন কিছু বলতে গিয়েও বললো না।এসি বাড়িয়ে দিয়ে বাইরে চলে গেলো।রাতের খাবার খেতেও চন্দ্র উঠলো না।উঠবে কি করে পানি খেতে খেতে পেট ভরে আছে। খাবার খাবে কিভাবে?

__মা?

__এসেছিস বাবা।বস খেয়ে নে।

__সবাই খেয়েছে?

__হ্যাঁ খেয়েছে। শুধু চন্দ্র খায়নি।ওর নাকি খিদে পায়নি।

__মা ! তুমি বরং এক কাজ করো। আমার আর চন্দ্রের খাবার দিয়ে দাও। উপরে বসে খেয়ে নিবো।

ওর মা খুশি হয়ে গেলেন। দুজনের খাবার স্পন্দনের হাতে দিয়ে উনি খুশিমনে চলে গেলেন।

__চন্দ্র?উঠে বস। খাবার খেতে হবে।

চন্দ্র কোনো উত্তর দিলো না।স্পন্দন আবার বললো,

__তোকে উঠতে বলেছি চন্দ্র।

__আমি খাবো না।

স্পন্দন টেনে তুলে বসিয়ে দিলো চন্দ্রকে। তারপর মুখে খাবার ঢুকিয়ে দিলো। দুই তিন গাল খেয়ে চন্দ্র আবার পানি খেয়ে বললো,

__প্লিজ আর খেতে পারবো না।

স্পন্দন ও আর কিছু বললো না। খাবার একটু খেয়ে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো।মাঝ রাতে মনে হচ্ছে চন্দ্র কাঁদছে। ছটফট করছে।স্পন্দন উঠে এলো সোফা থেকে।দেখলো চন্দ্র এদিকে ওদিকে ছটফট করছে আর কাঁদছে।

#চলবে,,,,,,,

ভুল ত্রুটি মার্জনীয়। লেখিকার লেখা ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট করে সাথে থাকবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।#অন্তর_দহন
#লেখনিতে_আরুহি_অহি

পর্ব_৫

চন্দ্রের কপালে হাত দিয়ে স্পন্দন দেখে জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি করে পানি এনে মাথায় জল পট্টি দিতে লাগলো। কিন্তু না চন্দ্র প্রচন্ড অস্থির হয়ে উঠেছে। ছটফট করছে শুধু। উপায় না দেখে নিচে গিয়ে মা’কে ডাকলো স্পন্দন।ওর বাবাও উঠে এলেন।এসে ঐ অবস্থা দেখে সৈয়দ মির্জা বললেন,

__দেখো স্পন্দন মেয়েটার কি হাল করেছো তুমি। এখন আমি আমার ছোট ভাইকে কি জবাব দিবো? একবার ভেবে দেখেছো তুমি?এতটা দায়িত্ব জ্ঞানহীন কাজ তোমার মতো ছেলের কাছ থেকে ছাড়া আর কারো কাছে আশা করা যায় না।

__আপনি দয়া করে একটু শান্ত হন।কি করবেন এখন সেটা নিয়ে ভাবেন।

__কি আর করবো? তোমার ছেলের জন্য যখন এমন হয়েছে চন্দ্রর তখন ওকেই সব সামলাতে হবে।

স্পন্দন চুপচাপ মাথা নুইয়ে চন্দ্রর হাতটা ধরে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।মনে মনে ভাবলো,

__মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে চন্দ্রর।কতটা যন্ত্রণা পাচ্ছে মেয়েটা তাইতো এমন ছটফট করছে। না আর বসে থকলে চলবে না ।

উঠে দাঁড়িয়ে মা’কে বললো,

__তুমি একটু ওর মাথায় জলপট্টি দাও মা।আমি একটা ডাক্তার নিয়ে আসছি। কোথাও যেওনা মা।ওর পাশে থেকো প্লিজ।

ওর মায়ের চোখে জল। চন্দ্র এভাবে ছটফট করছে।স্পন্দন ও যে ভেতরে ভেতরে কতটা ছটফট করছে তা কেউ না বুঝলেও ওর মা বুঝতে পারলো।তাই স্পন্দনের কথামতো চন্দ্রের পাশে গিয়ে বসলো। বারবার দোয়া পড়ে চন্দ্রের চোখে মুখে ফুঁ দিতে লাগলো। সৈয়দ মির্জা বললেন,

__তুমি যে ডাক্তার আনতে যাচ্ছো, তা এতো রাতে ডাক্তার পাবে?

__সেটা আপনার না ভাবলেও চলবে মিস্টার সৈয়দ মির্জা সাহেব।আসছি মা।

__দেখেছো দেখেছো? তোমার ছেলে আমার সাথে কিভাবে কথা বলে?

__আহ্ একটু চুপ করেন না। দেখছেন তো মেয়েটার ছটফটানি দেখে ছেলেটা কেমন ভেঙে পড়েছে।তার মধ্যে আপনি আবার এসব বলে ওর মাথা নষ্ট না করে ঘরে গিয়ে শুয়ে থাকেন।এদিকটা আমি আর স্পন্দন সামলে নিবো।

__কি আর সামলাবে তোমরা?সব তো আমার জ্বালা। ছেলে বকে গেছে তো সামলাতে বিয়ে করালাম।আর এখন তো আরো খারাপ ব্যবহার শুরু করেছে তোমার ছেলে।

এভাবে বকবক করতে করতে সৈয়দ মির্জা ঘর থেকে চলে গেলেন।আধ ঘন্টা পর স্পন্দন ডাক্তারকে নিয়ে ফিরে এলো।দেখেই বোঝা যাচ্ছে ডাক্তার বাবুকে ঘুম থেকে ডেকে আনা হয়েছে। উনি দেখে মেডিসিন দিলেন চন্দ্রকে। বললেন,

__খুব বেশি মানসিক প্রেসারে আছে মেয়েটা।নিতে পারছেনা এতো চাপ। আচ্ছা এরমধ্যে কি এমন কিছু হয়েছে যাতে মানসিক ভাবে খুব বেশি ভেঙে পড়েছে মেয়াটা?

স্পন্দনের মা একবার স্পন্দনের দিকে তাকিয়ে বললেন,

__আসলে বিয়ের এতো চাপ হয়তো নিতে পারে নি মেয়েটা।

__না তো? শুধু এটা হলেও এতো ভেঙে পড়ার কথা নয়।হয়তো আরো বড় কোনো ধাক্কা খেয়েছে। যাইহোক কোনো মানসিক চাপ দেওয়া যাবেনা ওকে।সেদিকে খেয়াল রাখুন।আর সবার সাথে হাসিখুশি রাখতে চেষ্টা করুন। মেডিসিন দিয়ে দিবেন। আশাকরি দুই একদিনের মধ্যেই ভালো হয়ে যাবে। আমি এখন আসি।

__ডাক্তার বাবুকে এগিয়ে দিয়ে আয় স্পন্দন।

__তার আর দরকার হবে না।ভোর হতে এসেছে। আমি যেতে পারবো। তাছাড়া ওর এখন বউয়ের পাশে থাকা অনেক বেশি জরুরী।

__মা তুমি গিয়ে ঘুমিয়ে নাও একটু।আমি আছি চন্দ্রের কাছে। তোমার শরীর খারাপ করবে।

__কিন্তু বাবু?

__ভয় নেই মা। তোমার ছেলে আর যাইহোক কাউকে মে’রে ফেলবে না কোনো দিন। আমি থাকতে চন্দ্রের কিছু হবে না মা। আমি জানি এমনিতেই ওর জীবনে নরক হয়ে উঠেছে শুধু আমার জন্য।আর এখন যদি আমি ওকে সেখান থেকে মুক্ত না করি তাহলে তো নিঃশেষ হয়ে যাবে চন্দ্র।স্পন্দন থাকতে সেটা কখনোই হতে পারে না মা।

স্পন্দনের মা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।স্পন্দন গিয়ে চন্দ্রের পাশে বসে ওকে ধরে আধশোয়া করে বসালো। চন্দ্রের মধ্যে তেমন হুঁশ নেই। শরীরে আর কোনো জোর দিচ্ছে না এখন।স্পন্দন মুখটা হা করে অনেক কষ্ট করে কিছু খাইয়ে মেডিসিন গুলো দিলো। এরপর শুইয়ে দিয়ে আবার মাথায় জলপট্টি দিতে লাগল।আর মনে মনে ভাবলো,

__তোকে এই নরকে আর থাকতে হবে না চন্দ্র। আমি খুব তাড়াতাড়ি করে তোকে মুক্তি দিয়ে দিবো। শুধু আমাকে একটু সময় দে। এভাবে নিজের হাতে নিজের ক্ষতি করিস না চন্দ্র।প্লিজ!

সকালের সূর্য উঁকি দিচ্ছে পূর্ব আকাশে। রোদের ঝিলিক চোখেমুখে আছড়ে পড়ছে।একটু একটু করে চোখ খুললো চন্দ্র।মাথাটা ভীষণ যন্ত্রণা করছে। কপালে ঠিক মাঝ বরাবর কারো গরম নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে।হাত দিতেই বিপরীত লিঙ্গের কিছু অনুভব হলো চন্দ্রের।মুখে চোখে হাত ঠেকাতেই খোঁচা খোঁচা দাড়ি বাঁধলো হাতে।পাপরি গুলো ও বড় বড়।এক ঝটকায় উঠে বসলো চন্দ্র। তাকিয়ে দেখে স্পন্দন একহাত ধরে রেখেছে চন্দ্রের আর কপালে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমিয়ে আছে।কিছু বুঝে উঠার আগেই স্পন্দনের ঘুম ভেঙে গেলো।উঠে ধড়ফড় করে বসে পড়লো। চন্দ্রের কপালে হাত ঠেকিয়ে দেখে পানির মগ আর ভেজা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। চন্দ্র মনে মনে ভাবলো,

__এই গোমড়া মুখোর আবার কি হলো। আমার কপালে ছুঁয়ে দিয়ে কি জ্বল দেখলো নাকি?রাতে তাহলে জ্বর এসেছিলো মনে হয়। কোথায় মাথা ব্যথা ছাড়া আমার তো আর কিছুই মনে নেই।

এতো সব না ভেবে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াতেই মাথা ঘুরে গেলো চন্দ্রের।ধপ করে আবার বসে পড়লো। স্পন্দন বাইরে এসে বললো,

__ফ্রেশ হয়ে নে চন্দ্র। ভালো লাগবে।

বলেই তড়িঘড়ি করে জামা কাপড় পড়ে বাইরে বেরিয়ে গেলো। চন্দ্র এখনো অবাক হয়ে বসে আছে।এর মধ্যে বড় আম্মু এলো।বললো,

__এখন কেমন লাগছে চন্দ্র?

__মাথা ব্যথা করছে শুধু।আর উঠতে গিয়ে একটু চক্কর খেলাম মনে হলো।

__স্পন্দন আমাকে বললো তোকে খাইয়ে মেডিসিন দিয়ে দিতে।আর লাফালাফি করতে মানা করে গেছে।বলেছে সারাদিন শুয়ে থাকতে।

__আমি এসব কথা শুনতে পারবোনা বড় আম্মু।আর আমি তো ঠিক আছি।কিছু হয়নি তো আমার।

__কাল রাতে জ্বরে বেহুঁশ ছিলি। ছটফট করে সারা রাত কেটেছে।স্পন্দন ঐ রাতে ছুটে গিয়ে ডাক্তার ডেকে এনে মেডিসিন খাইয়েছে। সারারাত ধরে মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিয়েছে। আমার শরীর খারাপ করবে বলে থাকতেই দেয়নি।

চন্দ্র অবাকের উপর চরম অবাক হয়ে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে বড় আম্মুর দিকে।

__আমরা ভুল সিদ্ধান্ত নেইনি চন্দ্র। তুই আমাদের ভুল বুঝিস না মা। আমাদের সিদ্ধান্ত ভুল নেই।অন্তত কালকে তোর ঐ অবস্থায় স্পন্দনের সেই বিধ্বস্ত মুখটা দেখার পর আমার মনে হলো আমরা ঠিক করলাম চন্দ্র।

__আমাকে তোমার ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে আমার জীবনটা নরক বানিয়ে বলছো ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছো বড় আম্মু?

__হ্যাঁ বলছি চন্দ্র। আমার ছেলেটা এমন ছিলো না মা।ওর মতো ভালো ছেলে কোথাও পাবি না তুই। আমার উপর বিশ্বাস কর চন্দ্র।ও খারাপ ছেলে নয়।

স্পন্দনের মা শাড়ির আঁচল টেনে ভেজা চোখ গুলো মুছতে মুছতে বললো,

__ওকে কখনো ছেড়ে যাস না মা। আমার কথটা রাখিস চন্দ্র। আমার ছেলেটা খারাপ নয়।

__ঐ রকম একটা বদরাগী, নেশাগ্রস্ত লোককে তুমি বলছো ভালো ছেলে বড় আম্মু। আমাকে ঐ মানুষটার সাথে আবার সারাজীবন থেকে যেতে বলছো।কেনো বড় আম্মু? আমি তোমার নিজের মেয়ে না বলে আমার জীবনের কোনো মূল্য নেই তোমার কাছে? আজকে যদি তোমার মেয়ের এমন একটা ছেলের সাথে বিয়ে হতো তাহলেও এক কথাই বলতে বড় আম্মু?এতোটা স্বার্থপর কেনো বড় আম্মু? তোমার ছেলের জীবনে আমি থাকবো না। কিছুতেই না।আর কয়েকটা দিন যেতে দাও আমি অনেক দূরে চলে যাবো তোমাদের থেকে। আমি নিজের হাতে নিজেকে শেষ করে দিবো তবুও এই ছেলের সাথে এক ঘরে এক ছাদের নিচে কোনো দিন করবো না। আমাকে ক্ষমা করে দাও বড় আম্মু। আমি তোমার কথা রাখতে পারবোনা।

__চন্দ্র? আমি তোর দুটি হাত ধরে মিনতি করছি আমার ছেলেটা সত্যি খুব ভালো ছেলে।তাকে ছেড়ে যাস না মা। আমি তোর মায়ের মতো।তোর খারাপ কোনোদিন চাইবো না। শুধু নিজের ছেলের স্বার্থেই নয় আমি বলছি স্পন্দন তোকে যতটা ভালোবাসা দিতে পারবে তা আর কেউ দিতে পারবে না চন্দ্র। তবুও এই ঘর এই সংসার স্পন্দন কে ছেড়ে যাস না মা।যাস না তুই।

এই মুহূর্তে চন্দ্রের চোখের সামনে বসে আছে যে মহিলা তাকে তার চোখে সবচেয়ে স্বার্থপর মনে হচ্ছে।মনে হচ্ছে এই মানুষটি তার ছেলের জন্য আমার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।না এ চন্দ্র কোনো দিন করতে পারবে না।থাকবেই না চন্দ্র।

#চলবে,,,,,

ভুল ত্রুটি মার্জনীয়। গল্প ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট করে লেখিকাকে লেখায় উৎসাহিত করবেন।হয়তো অনেকের কাছে ভালো না লাগতে পারে তবুও পড়তেই পারেন।নিরাশ হবেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here