#অভিমানে_তুমি (সিজন ২)
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ১৭
স্পর্শ বলে কেউ ডাকাতে ধ্যান ভাঙলো স্পর্শের!!তাকিয়ে চিন্তে বেশি বেগ হলো না তার!!কারণ এ তো তার নিজের বাবা!!জন্মদাতা বাবা!!!স্পর্শ ফোন পকেটে নিয়ে উঠে দাঁড়াল!!
অভ্র বেশ অসুস্থ তাই হালকা চফতুয়া ট্রাউজার পরহিত!!চোখে পানি!!কাঁপা পায়ে স্পর্শের দিকে এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে স্পর্শকে!!
কিন্তুু স্পর্শ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে!!!
তারপর বলে–আপনার সাথে কথা আছে চৌধুরী সাহেব!!!একটু আলাদা কথা বলার ব্যবস্হা হবে কি??
অভ্র কান্নামাখা চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে—
অবশ্যই!! চল!!
স্পর্শ –১ মিনিট!!
স্পর্শ এবার নিদ্রিতাকে উদ্দেশ্য করে বলে–নিদু!!আমার কাছে এসো!!
নিদ্রিতা ধীর গতিতে উঠে স্পর্শের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়!!
স্পর্শ অভ্রকে উদ্দেশ্য করে বলে–সি ইজ নিদ্রিতা!!
আপনার ছোট ভাইয়ের একমাত্র মেয়ে আর আপনার অজান্তে জন্ম দেওয়া ছেলের স্ত্রী!!
অভ্র কার্নিশের চোখের পানি ছেড়ে নিদ্রিতার মাথায় হাত রাখল!!
নিদ্রিতা মিষ্টি হেসে অভ্র কে সালাম করল!!
অভ্র পকেট থেকে একটা বেশ লম্বা বাক্স বের করে নিদ্রিতার হাতে দিয়ে বলল–এতে ২ টো জিনিস আছে!!একটা তোর জন্মের সময় দেওয়ার কথা ছিল আরেকটা তোর বিয়ের উপহার!!
নিদ্রিতা মুচকি হেসে বলল–ধন্যবাদ চাচ্চু!!
অভ্র হালকা হেসে কিছু বলতে যাবে তার আগেই স্পর্শ বলল–পরিচয় পর্ব শেষ আশা করি এবার আলাদা কথা বলা যাবে!!!
অভ্র–হুমম!!আয় আমার সাথে!!
স্পর্শ আর অভ্র চলে গেল একটা ঘরে!!
নিদ্রিতাকে ঘিরে মামা-মামি,ফুপি, নানু সবাই বসলেও নিদ্রিতার ধ্যান স্পর্শের যাওয়া ঘরের দিকে!!!
ঘরের ভেতরে,,,
অভ্র দাঁড়িয়ে আছে,,
আর স্পর্শ একটা চেয়ারে বসে সামনের জানালার দিকে তাকিয়ে আছে।।
অভ্র–সবটাই তুই জানিস!!নতুন করে তোকে কিছু বলবো না!!
স্পর্শ–আসলেই তো আপনার কি সত্যি বলার মুখ আছে??
অভ্র–আমার দোষ টা কোথায় তুই বল!!আমি তো নিজেই ধোকার স্বীকার!! নাশিতা আমাকে ছেড়ে গিয়েছিল!!তুই যে তার গর্ভে আছিস সে তো জানতামই না আমি!!
স্পর্শ এবার ঘুরে টেবিলে বারি দিয়ে বলে–এই না জানাটাই আপনার ভুল!!!খুব তো বলছেন ভালোবসতেন আমার মা কে!!একবার ভেবে দেখুন তো আসলেই সত্যি কিনা!!!
ভালোবাসার কোনো অতীত রূপ নেই চৌধুরী সাহেব!!!ভালোবাসা সর্বদা বর্তমান!!যেদিন ভালোবাসা অতীত রূপ নেবে বুঝে নিতে হবে তা কোনোদিন ভালোবাসা ছিল না!!!আপনি যদি মা কে ভালোইবাসতেন তাহলে মা এর একাকীত্ব কেন ছিল??মা এতোদিনের চক্রান্তে পা দিল তা আপনি টের পেলেন না!!!
মা চলে গিয়েছে বলে কি আপনার দায়িত্ব ছিল না তার খোঁজ নেওয়া???
আজ নিজেকে বাবা বলছেন অথচ ২ দিন আগেও আমার অস্তিত্ব জানা ছিল না আপনার!!
সায়ানের দোষ বলছেন!!হাজার হলেও সে আমাকে মাতৃ গর্ভে মেরে ফেলেনি!!নিজের নাম দিয়েছে!!! কোলকাতার নামী স্কুলে পড়িয়েছে!!বিদেশে স্টাডি করার সুযোগ করেছে!!আজ আমি যা কিছু বলতে গেলে পুরোটাই ওই সায়ান নামক বাবার জন্য!!! হাজার অন্যায় করলেও সে পালিত বাবার দায়িত্ব পালনে পিছ পা হয়নি চৌধুরী সাহেব!!! জন্ম দিলেই বাবার দাবিদার কেউ হবে না!!
আপনার যখন এতই ভালোবাসা আমার মায়ের জন্য তাহলে মা যেতে না যেতেই ৭ মাসের মাথাতে বিয়ে করেছিলেন কোন জ্ঞানে????
স্পর্শের করা প্রশ্নবাণে হতবাক অভ্র!!!আসলেই তো সে তো নিজে নাশিতার খোঁজ কখনো নেয় নি!!সবার থেকে শুনে ধারণা করে নিয়েছে!!
স্পর্শ আবারো বলল—কখনো এটলিস্ট আমার থেকে বাবা ডাক শুনতে চাইবেন না!!!আমার এ বাড়িতে আসা শুধু একজন মানুষের জন্য!! সে হলো নিদ্রিতা!!ওর অধিকার ওর পরিবারের সাথে দেখা করা!!!আর আমি ওকে ভালোবাসি!!! ওর প্রত্যেক অধিকার পূরণের দায়িত্ব ও তাই আমার!!!
আমার ভালোবাসা আপনার মতো না কিনা!!!!
অভ্র হতবাকের মতো সোফাতে বসে পড়েছে!!
আর স্পর্শ কথা গুলো বলে রুম থেকে বেরিয়ে গিয়েছে!!!
স্পর্শ নিচে নামতেই সবাই তাকে দেখে উঠে দাঁড়াল!!
স্পর্শ তার নানুকে উদ্দেশ্য করে বলল–নানু,, আজ আমরা তাহলে আসি!!
নানু–সে কি,!!!তোমরা এখানে থাকবে না??
স্পর্শ –না নানু!!আমার ফ্লাটেই থাকবো!!
নানু–অন্তত ডিনার টা করে যাও!!
স্পর্শ –আজ খুবই টায়ার্ড!! জার্নি হয়েছে অনেক!!তার ওপর বিকেলে তোমরা যা আয়োজন করেছিলে!!অনেক রাতে ছাড়া আর ডিনার পসিবল না!!তাই এখন বাড়ি ফিরে রেস্ট নিবো এটাই বেস্ট!!!
নানু–ঠিক আছে!!মুণি খাবার প্যাক করে দিচ্ছে!! রাতে খেয়ে নিও!!আর কাল চলে এসো!!তোমার কাজ থাকলে নিদু কে নামিয়ে দিও!!ও বাড়িতে একা করবে কি!!
স্পর্শ –আচ্ছা!!
মুণি খাবার দিলে স্পর্শ আর নিদ্রিতা তা নিয়ে বাড়ি ফিরে আসে!!!গাড়িতে নিদ্রিতা অনেক কথা বললেও স্পর্শ হু হা ছাড়া তেমন রেসপন্স করে নি!!!
বাড়ি এসে তারা ফ্রেস হয়ে নিল!!!
নিদ্রিতাকে রেস্ট নিতে বলে স্পর্শ একটু বেড়িয়েছে!!
নিদ্রিতা স্পর্শের কথাবার্তা তে ভালোই বুঝেছে যে স্পর্শের মুড অফ!!!
নিদ্রিতা বারান্দার কাচের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে!!!
বাইরে বেশ বাতাস বইছে!!! নিদ্রিতার মন বলছে বৃষ্টি হবে!!
এসব ভাবনার মাঝেই একজোড়া হাত নিদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরে মুখ গুজল নিদ্রিতার গলাতে!!
নিদ্রিতা নাক মুখ কুঁচকে বলল–তুমি সিগারেট কতগুলো টেনে এলে বলোতো??
স্পর্শ হালকা হেসে বলল–৩ টে!!!
নিদ্রিতা–কি বিচ্ছিরি গন্ধ!! কি মজা পাও বলোতো!!!
স্পর্শ–পারফিউম দিয়ে এলাম তাও কেমনে স্মেল পাও বুঝলাম না!!!
নিদ্রিতা তাও চোখ মুখ কুঁচকে আছে!!!
স্পর্শ –আচ্ছা,, আমি চেন্জ করে আসছি!!!
স্পর্শ চেন্জ করতে গেল!!খানিকপর চেন্জ করে স্পর্শ এসে আবারো দাঁড়িয়ে থাকা নিদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরল!!
নিদ্রিতা–ডিনার করবে না??
স্পর্শ –আমার তো ইচ্ছে নেই!!পেট ভরা লাগছে!!তুমি করে নেও ডিনার!!
নিদ্রিতা–আমারও খেতে ইচ্ছে করছে না!!!চলো মুভি দেখি!!
স্পর্শ –এখন রোমান্স করা বাদ দিয়ে মুভি দেখা একবারেই সম্ভব না!!!
নিদ্রিতা স্পর্শের দিকে ঘুরে চোখ মুখ কুঁচকে বলল–বেহায়া লোক একটা!!
স্পর্শ নিদ্রিতাকে আরো কাছে টেনে বলল–যা ভাবো তাই!!!
তারপর নিদ্রিতাকে নিজের আরো কাছে টেনে নিল!!আবদ্ধ হলো একে অপরের মাঝে!!
কিছুসময় পর,,,
স্পর্শের ফোন বেজে ওঠাতে স্পর্শ একপ্রকার বিরক্ত হয়ে নিদ্রিতাকে ছেড়ে ফোন রিসিভ করল!!!ফোনের কথা টুকু শুনে জবাব ছাড়াই ফোন কেটে বলল–আজব মানুষ!!!আমার রোমান্সের সময়ই বিরক্ত করতে হয়!!!নিদ্রিতা তো হেসে কুটিকুটি হচ্ছে!!!
স্পর্শ নিদ্রিতাকে কাছে টেনে কোলে বসিয়ে বলল–হেসো না তো!!!ভিষণ বিরক্ত আমি!!!
নিদ্রিতা কোনোমতে হাসি থামিয়ে বলল–আহারে স্বামী আমার!!!
স্পর্শ আবারো নিদ্রিতার গলাতে মুখ ডুবিয়ে দিল!!
পরদিন সকালে,,,
স্পর্শ রেডি হচ্ছে!! আর নিদ্রিতা আলমারিতে হেলান দিয়ে তা বেশ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছে!!
স্পর্শ ব্যাপারটা দেখে ঘড়ি পড়তে পড়তে বলে–ব্যাপার কি মিসেস??এমনিতে তো স্বামীর দিকে ঘুরেও তাকান না আজ এভাবে তাকাচ্ছেন যে??
নিদ্রিতা–বাজে কথা বলবে না!!আমি সব সময় তোমায় দেখি!!!বরং তুমি আমাকে দেখো না!!
স্পর্শ –আমি তোমাকে দেখি না!!সিরিয়াসলি???
নিদ্রিতা মুখ ফুলিয়ে –তা নয়তো কি!!!!
স্পর্শ এবার নিদ্রিতার গালে চুমু দিয়ে বলল–আমার মতো করে পৃথিবীতে কেউ তোমায় দেখে না!!নিদু বেবি!!!
নিদ্রিতা এবার স্পর্শের কাছে এসে গলা জড়িয়ে ধরে আদুরে কন্ঠে বলল–এখানকার এই গরম আবহাওয়া আমার ভালো লাগছে না!!!দার্জিলিং এ কত দারুণ আবহাওয়া!! একদম ঠান্ডা!!!
স্পর্শ–কিন্তুু জান!!এখন তোমার শ্বশুরবাড়ি তো এখানে!!তাই এখানেই থাকতে হবে তোমাকে!!
নিদ্রিতা মুখ ফুলিয়ে আছে!!
স্পর্শ হালকা হেসে বলল–সায়ানের খবর পেয়েছি!! মা কে পেয়ে গেলে তারপর তোমাকে নিয়ে দার্জিলিং যাব!!
নিদ্রিতা উৎসুক চোখে বলল–কখন পেলে??
স্পর্শ –কাল রাতে ফোন এলো!! তখনই!!
নিদ্রিতা–ওই লোকটা তো খু্ব খারাপ আবার তোমার কিছু করবে না তো!!
এবার নিদ্রিতা কেঁদে ওঠে!!!
তারপর বলে–তোমার কিছু হলে আমি আর বাঁচবো না!!
স্পর্শ –চোখের পানি ফেলবে না একদম নিদু!!!আর কিচ্ছু হবে না আমার!!!ডোন্ট ওয়ারি!!!
নিদ্রিতা তাও ফুপাচ্ছে!!
তাই স্পর্শ তাকে জড়িয়ে ধরল!!তারপর বলল –কিছু হবে না আমার!!!তুমি এতো চিন্তা করো না!!!
তারপর নিদ্রিতাকে শান্ত করে স্পর্শ বেরিয়ে গেল!!!কিন্তুু নিদ্রিতার মন মানছে না কিছুতেই!!!
কোনো কাজেও মন দিতে পারছে না!!!
তাই স্পর্শ বের হওয়ার ৫ ঘন্টা হতেই টেনশনে থাকতে না পেরে নিদ্রিতা ফোন দিল স্পর্শকে!!!কিন্তুু নম্বর বন্ধ!!!
এবার নিদ্রিতার হাত পা কাঁপতে শুরু করল!!এসির মধ্যে ও নিদ্রিতা ঘামছে!!!তার একটাই চিন্তা –স্পর্শ ঠিক আছে তো???
#অভিমানে_তুমি (সিজন ২)
#ফারিয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ১৮
রাত ১.৩০ টা পার হয়েছে,,
নিদ্রিতা চিন্তাতে অস্হির,,স্পর্শের ফোন এখনো বন্ধ!!!
নিদ্রিতা তার ওপর কোনো কিছুই চেনে না যে একটু খোঁজ নিবে!!
ভয়ে নিদ্রিতার হাত পা কাঁপছে!!!বাইরে গার্ডদের বলেছে স্পর্শের খোঁজ নিতে!!২ গিয়েছে কিন্তুু তারা এখনো ফেরেনি!!!
অজানা এক ভয়ে কু ডাকছে নিদ্রিতার মন!!!
নিদ্রিতা বারান্দাতে দাঁড়িয়ে আছে,যেন স্পর্শ আসলেই দেখা যায়!!কিন্তুু না!!স্পর্শ ফিরছে না!!!
রুমে এসে বিছানাতে বসে ফুপিয়ে ওঠে নিদ্রিতা তারপর বলে–কোথায় তুমি স্পর্শ?? প্লিজ তাড়াতাড়ি আসো আমার কাছে!!!
রাত কেটে ভোরের আলো ফোটে,,,
কিন্তুুু স্পর্শ এখনো ফেরেনি!!!কেউ তার কোনো খবর জানে না!!!নিদ্রিতার টেনশনে পাগলপ্রায় অবস্থা!!!
চৌধুরী বাড়িতে খবর দেওয়া মাত্র ছুটে এসেছে সবাই!!!
অভ্রর মনে ও ভয়!!এতো বছর পরে ছেলেকে পেয়েছে!! হারাতে চায় না সে!!যতই স্পর্শ অভিমান করুক তার ওপরে!! তাও স্পর্শ তার ছেলে তা কখনো অস্বীকার করে নি!!!
কিন্তুু স্পর্শ ফিরছে না,, কেউ জানে না সে কোথায় গিয়েছে!!!
নিদ্রিতা তাদের বেডরুমে সেই বড় ফ্রেমের ছবির দিকে তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে!! চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে গিয়েছে।। কান্নার কারণে!!!
নিদ্রিতা কাঁপা কাঁপা হাতে ছবির স্পর্শের মুখে হাত দিচ্ছে!!!
কেটে যায় ১মাস,,
স্পর্শের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি ১ মাসে!!অভ্র বহু চেষ্টা চালাচ্ছে খোঁজার।।কিন্তুু ফলাফল ব্যর্থ!!!!নিদ্রিতার পাগল প্রায় অবস্থা!!!
হাজার চেষ্টা করেও নিদ্রিতাকে কেউ চৌধুরী বাড়িতে নিয়ে যেতে পারে নি!!
তাই নানু,দাদী,তামান্না আর অভ্র স্পর্শের ফ্লাটেই থাকছে!!
নিদ্রিতা এই ১ মাসে ৬ বার সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে!!প্রতিবারই কোনো ভাবে বেঁচে গিয়েছে!!!
আজকাল অভ্র ও স্পর্শকে খোঁজার হাল ছেড়ে দিয়েছে!!
বর্তমানে,,,
নিদ্রিতার ঘরে বসে আছেন সবাই,,বিছানাতে সেন্সলেস অবস্থা তে পড়ে আছে নিদ্রিতা!!হাতে ক্যানোলা লাগানো!!!
হাতের কজ্বিতে সাদা ব্যান্ডেজ!!চেহারাটা একেবারে মলিন হয়ে আছে!!!চোখের নিচে কালি পড়ে আছে!!
তামান্না মেয়ের মাথাতে হাত বুলাচ্ছে!! আর মাঝে মাঝে কাঁদছে!!
নীরবতা ভেঙে নানু বললেন–এভাবে আর কতোদিন অভ্র???মেয়েটা আজও নিজের হাত কেটে ফেলতে গিয়েছিল!!!আর পারছি না মেনে নিতে!!!
অভ্র–আমিও বা কি করতে পারি বলো তো আম্মা??খুঁজে খুঁজে হয়রান আমি!!!আচমকা আমার ছেলেটা গায়েব হয়ে গেলো!!আমার মেয়ের এই অবস্থা আর মানতে পারছি না!!!
প্রায় মাঝরাতে,,
নিদ্রিতার সেন্স আছে,,ধীর পায়ে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়!!
ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে পানি দিয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে বলে–তুমি আমায় একদম ভালোবাসো না স্পর্শ!!! ভালোবাসলে হারিয়ে যেতে না!!!ভিষণ পঁচা তুমি!!!আর ক্ষমা করবো না তোমায়!!!
তামান্নার ঘুম ভেঙে যাওয়াতে মেয়েকে হাতড়ে না পেয়ে দ্রুত ঘরের আলো জ্বেলে দেন তারপর ওয়াশরুমের দরজাতে নক করতে থাকেন!!!
নিদ্রিতা মুখ মুছে ধীর গতিতে বেরিয়ে এলো!!
তামান্না মেয়েকে দেখে স্বস্তির শ্বাস নিলেন!!!
নিদ্রিতা তামান্নাকে পাশ কাটিয়ে বারান্দাতে রাখা চেয়ারে গা এলিয়ে দিল।।
চোখ ২ টো স্হির রইলো আকাশের দিকে!!!চোখের কার্নিশে পানি টলমল করছে!!
তামান্না এসে মেয়ের সামনে বসল!!
নিদ্রিতা–আচ্ছা,, মা,,আমার সাথেই কেন এমন হয় বলোতো???কি দোষ আমার??কেন আমি ২ দিন ও হাসি খুশি থাকতে পারি না!!!!কেন সবাই আমাকে ছেড়ে একা রেখে চলে যায়???
তামান্না মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে–সব ঠিক হবে একদিন দেখিস!!!
নিদ্রিতা হালকা হাসি দিয়ে বলে–তোমার আর স্পর্শের সেই এক কথা!!! সব ঠিক হবে!!!আমারও মনে হয় সব ঠিক হবে আমি মরে যাওয়ার পর!!
তামান্না আঁতকে উঠে বলে–কি সব বলছিস নিদু!!!!
নিদ্রিতা–তাছাড়া কি বলবো!!!সব ঠিক করার আশা দিয়ে বেইমানের মতো আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে স্পর্শ!!! একে একে সবাই হারিয়ে যাবে!!আমি একদম একা হয়ে যাবো!!!
আবারো ফুপিয়ে উঠল নিদ্রিতা!!!
তামান্না আর কিছু বলার ভাষা পেল না!!!তাই চুপ করে মেয়ের পাশে বসে রইল!!!
নিদ্রিতা এখনো বসে আছে আকাশের দিকে তাকিয়ে!!!
তামান্না তার পাশেই ঘুমিয়ে পড়েছে!!
নিদ্রিতা মনে মনে ভাবছে —-কোথায় তুমি স্পর্শ?? তুমি বলতে তুমি আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না তাহলে এতগুলো দিন আছো কিভাবে???তাহলে কি তুমি মিথ্যা বলতে???হুমম!!তুমি মিথ্যা বলতে!!খুব খারাপ তুমি!!সবসময় আমাকে বাজে পরিস্থিতিতে ফেলে হারিয়ে যাও!!!
ফজরের আযানের আওয়াজে তামান্নার ঘুম ভাঙে!!!উঠে নিদ্রিতাকে পাশে না পেয়ে আবারও ভয় ঘিরে ধরে তাকে!!
দ্রুত ঘরে এসে দেখে নিদ্রিতা দাঁড়িয়ে আছে!!!
নিদ্রিতা–ভয় পেওনা মা!!ঠিক আছি আমি!!
তামান্না এসে নিদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরে!!!
বিকাল ৪.০৬,,
সবাই ড্রইংরুমে বসে আছে,,নিদ্রিতা নিজেও বসে আছে!!মূলত তার ভিষণ বিরক্ত লাগছে এভাবে সবাই মিলে বসে থাকার ব্যাপারটা!!
নিশান আর নয়না ও এসেছে!!নীরবতা ভেঙে অভ্র জিজ্ঞেস করল–ব্যাপার কি নিশান??সবাইকে এভাবে ডাকলে কেন??
নিশান চশমাটা ঠিক করে বলল–আসলে মামু,,আমি একটা প্রস্তাব নিয়ে এসেছি!!
অভ্র ভ্রু কুঁচকে বলল–কি প্রস্তাব??
নিশান ঠোঁট চেপে বলল–আমি নিদ্রিতাকে বিয়ে করতে চাই!!!
পুরো ড্রইংরুম নিস্তব্ধ!!!
নিদ্রিতা কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে!!!
অভ্র ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল–নেশা করেছ নাকি??নিদ্রিতা যে তোমার সম্পর্কে ভাবি হয় তা ভুলে গিয়েছ??
নিশান–নাহ মামু!!স্পর্শ ভাইয়ের তো খোঁজ নেই কোনো!!নিদ্রিতার বয়স বা কি যে এভাবে জীবন কাটাবে!!আর এতোদিন তো আমার মনে স্পর্শ ভাই বেঁচে ও নেই!!
এবার নিদ্রিতা হাতের কাছে থাকা ফুলদানি টা তুলে আছাড় মারলো!!তারপর চিল্লিয়ে বলল–বেঁচে আছে স্পর্শ!!! আমি শুধু ওর বউ!!
এটুকু বলেই ড্রইংরুমে থাকা আরও কিছু শো পিস ধরে আছাড় মারলো!!তামান্না ধরতে গেলেই নিদ্রিতা একটা কাচের টুকরা ধরে বলে–কেউ আসবে না!!!
তারপর নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়!!
নানু গিয়ে নিশানকে এক থাপ্পড় দিয়ে বলে–উল্টা পাল্টা চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো!!আর যা মেয়েটা একটু সুস্থ হয়েছিল দিলে তো আরো বিগড়ে!!!
সবাই চলে যেতেই নয়না নিশানকে উদ্দেশ্য করে বলল–বলেছিলাম তো কেউ মানবে না!!শুধু শুধু ঝামেলা হলো!!!
অন্যদিকে,,,
সুইজারল্যান্ডের একটা বেশ বিলাসবহুল ফ্লাটের ২৩ তলার একটা কাচ ঢাকা বারান্দতে দাঁড়িয়ে আছে বেশ সুঠামদেহী একজন পুরুষ।। পরনে কালো শার্ট আর কালো ট্রাউজার!!হাতে কফির কাপ!!কাচের বাইরে বরফ ঢাকা সুইজারল্যান্ডের দৃশ্য দেখতে ব্যস্ত তার দু চোখ!!!আচমকা ফোন বেজে ওঠাতে সে ঘুরে ফোন রিসিভ করে!!!
ফোনের অপরপাশের ব্যক্তির কথা শুনে মুখে বাকা হাসি ফুটিয়ে বলে–সময় চলে এসেছে তার কাছে যাওয়ার!!!
তারপর ফোন কেটে, কফির কাপ রেখে রুম থেকে বেরিয়ে যায়!!!
অপরদিকে,,
নিশান নিজের ঘরে পায়চারি করছে!!আর বলছে–১ম দেখেই নিদ্রিতাকে পছন্দ হয় আমার!!!কিন্তুু যখন জানলাম ওর সাথে স্পর্শ ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে তখন কিছুটা পিছপা হয়েছিলাম!!!কিন্তুু এখন তো আর স্পর্শ ভাই নেই তাহলে!!আমি নিদ্রিতাকে বিয়ে করবোই!!সে যাই হোক না কেন!!!আই লাভ হার!!!
অন্যদিকে,,
নিদ্রিতা হাঁটুতে মুখ গুজে বসে আছে!!পাশে একটা নম্বরে ডায়াল করা আছে!!স্পর্শের নাম্বার!!
নাম্বারটা বারবার বন্ধ বলছে!!
নিদ্রিতা –তুমি কেন এভাবে গায়েব হয়ে গেলে??? হারিয়ে গেলে তো আমাকে নিয়ে যেতে!!!খুব পঁচা তুমি!!!আর কথা বলবো না তোমার সাথে!!!
আর তামান্না দরজা ধাক্কা দিচ্ছে বারবার!!!
নিদ্রিতা এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে চিল্লিয়ে বলে–ঠিক আছি আমি!!!যাও তোমরা!!
দরজার বাইরে সবাই একটু স্বস্তির শ্বাস ফেলে!!
নিদ্রিতা উঠে দাঁড়িয়ে স্পর্শের ছবির সামনে এসে মনে মনে বলে– তুমি কি নিজেই গা ঢাকা দিয়েছো???
আমি জানি তুমি যেখানেই থাকোনা কেন আমার ওপর ঠিক নজর রাখছো!!!তাই আমাকে এমন কিছু করতে হবে যাতে তুমি আমার সামনে আসতে বাধ্য হও!!!কিন্তুু তোমার কোনো উপস্থিতি তো টের পাইনা আমি!!গল্পে যেমন পড়েছি হিরো রাতে নাইকার কাছে আসে নাইকা যখন ঘুমায়!!
আমিতো ঘুমের ভান করে পড়ে থাকি কই তুমি তো আসো না!!!আমার কপালে চুমু দাও না!!!তুমি কি আমায় ভুলে গিয়েছো স্পর্শ???
#চলবে