অশ্রুসিক্ত নয়নে তুমিই আছো পর্ব ২

#অশ্রুসিক্ত_নয়নে_তুমিই_আছো
#সুবহী_ইসলাম_প্রভা
#পর্ব – ২

তখনই মিস্টার সাফোয়াত আরফান সায়েদকে ধমক দিয়ে বলে,,,

-“কি আসলে তোমার রাগ উঠতেই পারে তাই বলে তুমি ঘরের এই অবস্থা করবে। মনে রেখো এটা একটা ভদ্র বাড়ি।”

সায়েদ মাথা নিচু করে মিনমিনিয়ে গলায় বলে,,,,,

-“সর‍্যি,ড্যাড।”

-“নেক্সট টাইম এই রকম অসভ্যতামি যেন আর না দেখি।”

-“ওকে ড্যাড”

এরপর সাফোয়াত আরফান মিসেস.আরফানকে বলে,,,,,

-“পারভীন তুমি একটু বাহিরে যাও। আমার সায়েদের সাথে কথা আছে।”

স্বামীর এমন গম্ভীর গলার স্বরেই মিসেস.পারভীন আরফান বিনা বাক্য চলে যায়। এরপর সাফোয়াত আরফান সায়েদকে বলে,,,,,

-“সায়েদ আমি সোজাসাপ্টা কথা বলতে পছন্দ করি। আমি তোমার বিয়ে ঠিক করেছি।”

সায়েদের অবাকের চরম সীমায় গিয়ে বলে,,,,,

-“হোয়াট ড্যাড।আর ইউ কিডিং উইথ মি?”

-“নো মাই সন্।আই এম সিরিয়াস।”

-“বাট ড্যাড। আমি এখনো বিয়ের জন্য প্রস্তুত নই।”

-“কিন্তু আমি তোমার বিয়ে দিতে চাই আর এটাই শেষ কথা এর অন্যথা হবে না। আর এক সপ্তাহের মধ্যে তোমার বিয়ে। বিয়ের জন্য প্রস্তুত হও।”

-“ড্যাড আমি বিয়ে করবো না আর এটা আমার ফাইনাল ডিসিসন।”

-“তুমি বিয়ে না করলে আমি তোমাকে আমার সম্পতি থেকে বহিস্কার করবো।আমি জানবো আমার কোন ছেলে নেই।”

সায়েদ অবাক হয়ে বলে,,, “ড্যাড”

-“এবার তোমার সিদ্ধান্ত বিয়ে করবে নাকি এই বাড়ি ছেড়ে চিরতরে চলে যাবে। ”

এইবলেই মিস্টার সাফোয়াত আরফান সায়েদের রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। সায়েদ রাগে,কষ্টে বিছানা বসে ফোপাঁতে থাকে। দুহাত দিয়ে মাথার চুল টেনে ধরে বলে,,,,,

-“একদিকে আজ সকালে ওই মেয়েটার সাথে ঝামেলা হলো আর এখন ড্যাড আমার বিয়ে নিয়ে পড়েছে।সব হয়েছে ওই মেয়েটার জন্য। যদি কোন দিন ওই মেয়েটার সাথে দেখা হয়, আই সয়ার আই কিল দিস্ গার্ল।”

রাগে কথাগুলো বলল সায়েদ।

সকালে সায়েদ গিয়ে তার বাবাকে জানিয়ে দেয় সে বিয়েতে রাজি।

~~~~~~~~~~~~

বিয়ের আমোজে সব মেতে উঠেছে। আজ ইসরার বিয়ে।ইসরার কেমন জেনো একটা ভয় হচ্ছে। ছেলেটা কেমন হবে?ওই পরিবারে কি ইসরা মেনে নিতে পারবে?সব থেকে বড় কথা ছেলেটা কি ইসরাকে মেনে নিতে পারবে।হে কেন পারবে না?ইসরার মধ্যে কি এমন কম আসে যে ওকে মেনে নিতে পারবে না? আচ্ছা ছেলেটা দেখতে কেমন? ইসরা এখনো ছেলের ছবি দেখে নি তাকে দেওয়াই হয় নি অবশ্য এটা নিয়ে ইসরার মনে এখন প্রশ্ন জাগছে।শুনেছে ছেলে নাকি খুব বড় বিজনেসম্যান। এর মধ্যেই নিথু ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়।নিথুর ডাকে ইসরার ঘোর কাটে।

-“হে রে ইসরা তুই এই বিয়েতে খুশি তো?”

ইসরা ছোট করে হেসে বলে,,,,

-“সবাই খুশি থাকলে আমিও খুশি।”

নিথু আর কিছু বলতে পারল না। কাজী সাহেব চলে এসেছে। তিন কবুলের মাধ্যমে ইসরা এখন মিসেস আরফান হয়ে গেল। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে ইসরা সবার কাছে বিদায় নেয়। মিসেস.পারভীন তার ঘরের বউকে আজই নিয়ে আসবে।

সাধারণত বর বউ এক গাড়িতে যায়। কিন্তু ইসরা গাড়িতে উঠার আগেই শুনে বর নাকি কবুল বলেই চলে গেছে। ইসরাকে কেন জানি এ কথাটা ভাবালো। বর কি বিয়েতে রাজি ছিলো না?মিসেস আরফান হয়তো বুঝেছে ইসরার ব্যাপারটা। তাই তিনি ইসরাকে বলে,,,,,

-“সায়েদ খুব ব্যস্ত তো তাই আগে আগে চলে গেছে। তুমি বরং আমার সাথে আসো।”

ইসরা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল।

~~~~~~~~~~~~~

বাসর ঘরে ইসরা বসে আসে।মনের ভিতরে এক অজানা অনুভুতি কাজ করছে। একেই সে যাকে বিয়ে করেছে তাকে চিনে না জানে না এমনকি তার ছবিও দেখেনি। ইসরা যেন একটা ভাবনায় চলে যাচ্ছে। এমন সময় দরজা আটকানোর শব্দে ইসরা সামনে তাকিয়ে দেখে তার বর নামক প্রানী দাঁড়িয়ে আসে। ইসরা উঠে সালাম করার আগেই সায়েদ এসে হেচকা টানে ইসরাকে খাট থেকে ফেলে দিল।যার ফলে ইসরার ঘোমটা সরে গেছে।

ইসরা তেজে গিয়ে বলে,,,,

-“আরে আপনি আমাকে এভাবে ঠেলে ফেলে দিলেন কেন?”

সায়েদ পিছনে ফেরা ছিল। পিছন থেকেই কথা বলতে বলতে বলে,,,,,

-“তোর সাহস…….তুই?”

সায়েদ পুরাই অবাক হয় এই সেই মেয়ে যে রাস্তায় সকলের সামনে তাকে অপমান করেছিল।ইসরার তো চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসবে।ভেবেছিল তার স্বপ্নের রাজকুমারের সাথে তার বলেন য়ে হবে কিন্তু এ তো ভিলেন বের হলো।

-“আপনি এখানে?”

-“ওহ তাহলে তুই হলিস সে যে আমাকে বিয়ে করার জন্য ডেং ডেং করে নাচতে চলে এসেছে।”

ইসরা রেগে গিয়ে বলে,,,,,

-“জ্বি না আমি ডেং ডেং করে নাচতে পারি না সেটা তো আপনার কাজ বাঁদরের মতো ডেং ডেং করে নাঁচা”

এবার ইসরার উপর রাগ করে সায়েদ ওর হাত ধরে বলে,,,,,,

-“মুখে খুব বুলি তাই না তোর? আমার বাবা-মাকে প্রথম দেখাই হাত করে নিয়েছিস যে আমি বিয়ে না করলে তারা আমাকে তেজ্য করবে। আর রাস্তায় তো আমাকে অপমান করা তাই না?তোর এই বুলি কিভাবে কমাতে হয় তা আমার জানা আসে। ”

ইসরা হাতে কাচের চুড়ি পড়ে ছিল।সায়েদ হাত চেপে ধরায় কয়েকটা চুড়ি ভেঙে হাতের ভিতরে ঢুকছে। ইসরা ব্যথায় কুকড়িয়ে উঠছে।

-“সায়েদ আমার লাগছে ছাড়ুন।”

-“এটা তো কিছুই না আসল লাগা কাকে বলে সেটা সময় হলেই তুই দেখতে পারবি?”

এই বলেই সায়েদ ইসরার হাত ছেড়ে দিল আর বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল।

অতীত থেকে বেরিয়ে এসে,,,

ইসরা সোফায় এগুলো ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে।

সকালে,,,,,

হটাৎ মুখের উপর কিছু পরায় ইসরার ঘুম ভাঙে। ইসরা চোখ খুলে দেখে মুখের উপর কেউ তোয়ালে দিয়েছে। তোয়ালে সরিয়ে দেখে ড্রেসিং টেবিলের সামনে সায়েদ নিজের চুল ঠিক করছে।

-“এটা কি হলো আপনি আমার মুখে তোয়ালে কেন ফিক্কা দিলেন?”

-“সকাল হয়েছে সেদিকে তোর হুস নেই। তাই তোয়ালে দিয়ে জাগালাম। আর আমি বেশ করেছি তোয়ালে ফিক্কা দিয়েছি।”

-“তাই বলে ভিজা তোয়ালে?কেন আমাকে ডাকলেই তো হতো।”

-“এতো কষ্ট করার আমার কোন ইচ্ছে নেই।”

ইসরা বিড়বিড় করে বলে,,,, “আলসুটে”

-“কিছু বললি? ”

-“কই না তো।”

বলেই লাগেজ থেকে একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে গেল।ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে সায়েদকে দেখতে পেয়ে অবাক হলো।তারপরই কি একটা মনে করে না দেখার ভান করে তোয়ালেটা সায়েদের দিকে ছুড়ে মারল যা গিয়ে সায়েদের মুখ বরাবর লাগলো।

-“এটা কি হলো?”

-“কিই?”

-“এই যে আমার মুখে এটা ছুড়ে মারলে?”

ইসরা এবার এমন ভাব করে বলে যেন সে দেখতেই পায় নি।

-“ওহ সর‍্যি আসলে আপনাকে দেখতে পাই নি।”

-“কিইই তুমি কি কানা যে দেখতে পাও নি?”

-“সেইম প্রশ্ন আপনার জন্য ব্রো আপনি কি কানা যে ভিজে তোয়ালে দিয়ে আমার ঘুম ভাঙিয়েছিলেন?”

-“কিইই আমি তোমার ব্রো?”

ইসরা এবার নিজের জিব্বায় নিজেই কামড় দিলো। সে ভুলেই গেছে যে তার বিয়ে হয়েছে আর সামনে যে দাঁড়িয়ে আসে সে তার বর নামক প্রানী।

-“না মানে ওই আর কি?আপনি তো ছেলেই?আর হিসেবে আমরা ভাই-বোন কারণ আমাদের আদি মাতা হাওয়া(আঃ) আর আদি পিতা আদম (আঃ) সেই সুবাদে আপনি আমার ব্রো।”

নিজের দোষ ঢাকতে ইসরা যে কি বলতে কি বলে ফেলছে তার নিজেরও কোন হুস নেই। এদিকে সায়েদ তো ইসরা লজিক শুনে মুখ অটোমেটিক হা হয়ে গেছে। তার ইচ্ছে করছে এখন ইসরাকে বোন হওয়ার শখ ঘু্চাঁতে।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here