#আমার_আকাশ_জুড়ে_তুমি(৯)
#জেরিন_আক্তার_নিপা
সা’দ আড়চোখে আতিয়াকে দেখে ভাবছে,
-ঘুমিয়ে গেল নাকি মেয়েটা? একদিনেই চেহারার কী হাল হয়েছে। মুখ শুকিয়ে চোখ গর্তে গিয়ে ঢুকেছে। সারাদিনে হয়তো খাওয়া দাওয়া হয়নি।’
সা’দ গলা খাঁকারি দিল। আতিয়া মাথা তুলে সা’দের দিকে দেখে বলল,
“-ধন্যবাদ। আপনি না এলে এতক্ষণে আমার কাম তামাম হয়ে যেত।’
আতিয়ার এই সহজ সরল কথা শুনে সা’দ মনে মনে হাসলো। এমন সময়ে এই ধরণের কথা বলা এই মেয়ের পক্ষেই সম্ভব। আতিয়া আবার জিজ্ঞেস করল,
“-আপনি তখন কোথায় যাচ্ছিলেন?’
নড়ে বসে সা’দ বলল,
“-কাজ ছিল। ‘
শব্দ করে দম ছেড়ে আতিয়া বলল,
“-ওহ। তাহলে তো আমার জন্য আপনার কাজ আটকে গেল।’
তারপর আতিয়া নিজে নিজেই বলতে থাকল।
“-আমিও একটা গবেট। মোটেও মানুষ চিনি না। আগের সিএনজি ড্রাইভারটা কত ভালো ছিল। আমাকে নিজের বোনের মত করে খেয়াল রেখেছিল। আর এই ড্রাইভারটা একটা আস্ত অমানুষ ছিল। ওই লোকও ড্রাইভার ছিল। আর এই লোকও। কিন্তু ওই লোকটা প্রকৃত মানুষ ছিল। আর এই লোক, মানুষরূপী জানোয়ার ছিল। বাইরে থেকে দু’জনকেই মানুষ মনে হলেও দু’জনের ভেতরে কতটা পার্থক্য।’
সা’দ লক্ষ করল মেয়েটার চোখ দু’টো যেন জ্বলে উঠেছে। আতিয়া সীট থেকে মাথা তুলে সোজা হয়ে বসে বলল,
“-জানোয়ার গুলোকে একেবারে মেরে ফেলা উচিত ছিল। নইলে এরা জেল থেকে বের হয়ে আবার অন্য কোনো মেয়ের সাথে একই কাজ করবে। এরা কখনও ভালো হবে না। আপনি কেন ওদের হাত পা ভেঙে দিলেন না? একটু আধটু মেরে ওভাবে ছেড়ে দিলেন? ‘
আতিয়ার কন্ঠে রাগ, অভিমান, ক্ষোভ, কষ্ট সবই প্রকাশ পাচ্ছে। সা’দ যেন মুহূর্তে এই মেয়েটাকে চিনতে পারছে না। কত রূপ এর! একটু আগেও বেশ স্বাভাবিকভাবেই নিচ্ছিল সবকিছু। এখন কেমন গম্ভীর হয়ে গেছে। অপরাধীর মত করে সা’দ বলল,
“-ছেড়ে দিলাম কই? পুলিশে দিয়েছি তো। ওরাই…
ঝাঁঝিয়ে উঠে আতিয়া বলল,
“-আরে দূর! রাখেন আপনার পুলিশ। এদেশে পুলিশ কিচ্ছু করে না। করতে পারলেও করে না। মাথামোটা গবেট পুলিশ গুলো আজ পর্যন্ত কোন জায়গায় ঠিক টাইমে পৌঁছুতে পেরেছে? দেখেছেন কখনও? আজও পৌঁছুতে পারত না। আপনি না এলে আজ আমার অবস্থা কী হতো ভেবে দেখেছেন একবার? ‘
আতিয়ার গলা ভার হয়ে আসছে। পাপার কথা, হামিদ চাচার কথা ভীষণ মনে পড়ছে। পাপা দুনিয়ার খবর রাখে। তাই তার সাথে বডিগার্ড দিয়েছিল। হামিদ চাচাও বাইরের জগত সম্পর্কে জানে। তাই সব সময় বলে, ‘মা, কারো উপর চট কইরা বিশ্বাস কউরা ফেইলো না। সবাই তোমার মত না। এই দুনিয়ায় অনেক রকমের মানুষ আছে, মা। তুমি অত সব বুঝবা না’। আতিয়া সত্যিই বুঝেনি। তাইতো একটা দুর্ঘটনা ঘটতে ঘটতে বেঁচে গেল। লোকটা না এলে কী হতো তার সাথে! ভাবতেই আতিয়ার শরীরে কাটা দিয়ে উঠছে। সা’দও ভেবেছে। ভেবে ভেবে সে-ও ভেতরে ভেতরে অস্থির হয়ে উঠেছে। মেয়েটার সম্পর্কে বাজে কিছু কল্পনাও করতে পারছে না সে। কিন্তু লোক গুলো ওকে পেলে কখনোই ছাড়ত না। আতিয়া মাথা নিচু করে রেখেছে। সা’দ তার দিকে দেখে হঠাৎ করেই কেমন হয়ে গেল। ডান হাত স্টিয়ারিং এ রেখে বাঁ হাতে আতিয়ার একটা হাত ধরলো। ওকে আশ্বস্ত করে বলল,
“-এখন আর আপনার কিচ্ছু হবে না। আমি আছি তো আপনার সঙ্গে।’
কথাটা বলে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেল। না জানি মেয়েটা তার সম্পর্কে কী ভাবছে। আতিয়া তেমন কিছু মনে করলো না। দুই বছর বিদেশে কাটিয়েছে সে। এই সামান্য হাত ধরা তার কাছে এতো বড় কোনো ব্যাপার না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে আতিয়া বলল,
“-আপনিই বা কী করতেন? তিনটা লোকের সাথে একা পেরে উঠছিলেন না তো। আমি ভেবেছিলাম আপনি হয়তো শাহরুখ, সালমানের মত একা একাই ভিলেনকে সাইজ করে ফেলবেন। কিন্তু আপনি তো নাক ফাটিয়ে বসে আছেন। তবুও খারাপ ফাইট করেন নি। বেশ ভালোই মেরেছেন। কিন্তু মুভির ওই হিরো গুলোর মত না।’
আতিয়ার কথা শুনে হেসে ফেলল সা’দ। একটু আগে মেয়েটা কাঁদো কাঁদো স্যাড মুডে ছিল। আর এখন হঠাৎ করে ফানি মুডে চলে গেল কিভাবে? কোথায় মুভি আর কোথায় বাস্তব জীবন। শাহরুখ, সালমানের সাথে তার তুলনা দিচ্ছে। ওরা কেউ হিরোইন এর জন্য সত্যিকারে ফাইট করে নাক ফাটায় নাকি? ফাটালে বুঝতে পারতো, কত ব্যথা!
আর মেয়েটা কত সুন্দর করে ওর মুখের উপর এসব বলে যাচ্ছে। মায়াদয়া কিছু নেই নাকি?
সা’দকে হাসতে দেখে আতিয়া আবারও বলতে লাগল,
“-আপনি অ্যাকশন মুভি গুলো দেখেন? ‘
“-না। ‘
“-দেখেন না!’
“-না। আমি না দেখলেও আমার ছোট ভাই দেখে। রোমান্টিক, অ্যাকশন,কমেডি, হরর, থ্রিলার সব দেখে। সে এসবের জন্য পাগল।’
“-বাহ! আপনার ভাই বেশ তো। আমিও প্রচুর মুভি দেখি। হামিদ চাচা কি বলে জানেন? বলে, ‘মা জননী এইসব আজাইরা জিনিস দেইখা তোমার মাথাডা যাইতাছে। তুমি যে সুন্দর সুন্দর পোলাগো ছবি দেহো। বাস্তবে কিন্তু অত সুন্দর পোলা নাই’।
আতিয়া হেসে গড়িয়ে পড়ছে।
“-হামিদ চাচাকে যদি দেখাতে পারতাম বাস্তবেও ছবির মত সুন্দর পোলা আছে। শুধু আছে না, আমার পাশেই বসে আছে।’
আতিয়া অবলীলায় সা’দের সামনেই তার কথা বলে যাচ্ছে। সা’দ নিজেই হালকা লজ্জা পাচ্ছে। কিন্তু মেয়েটার মধ্যে লজ্জা পাবার কোন লক্ষণই দেখল না। আশ্চর্য হচ্ছে সাদ! এই মেয়ের মুখে যা আসে তাই বলে দেয়। চক্ষুলজ্জা বলতেও কিছু নেই। সত্যিই এই মেয়ে সব মেয়েদের থেকে আলাদা।
হোটেলের সামনে এসে সা’দ গাড়ি থামাল। এখনও সে আতিয়ার হাতটা ধরে রেখেছে। গাড়ি থেকে নামার সময় বুঝতে পারল পুরো পথ সে এভাবেই মেয়েটার হাত ধরে এসেছে। ইশ বুঝতেই পারেনি। একটু অপ্রস্তুত হয়ে আতিয়ার হাত ছেড়ে দিয়ে সা’দ বলল,
“-সরি!’ কিন্তু আতিয়া সে কথা শুনলে তো। গাড়ি দাঁড় হতেই সে হুড়মুড়িয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেছে। আজও গতকালের সেই রুমটাতেই উঠেছে ওরা। রফিক সাহেব আজও সা’দকে এই ম্যামের সাথে দেখে মনে মনে অবাক হলেও বাইরে প্রকাশ করলো না। সা’দ রুমের চাবি নিয়ে আতিয়াকে নিয়ে এগিয়ে গেছে। পেছন থেকে লোকটা ওদের দু’জনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“-কাল পর্যন্ত স্যার ম্যাডামকে চিনেই না। রুম শেয়ার করতেও রাজি হচ্ছিল না। কত রিকোয়েস্ট করে রাজি করালাম। আজ সকাল সকাল স্যার চলে গেলেন। ম্যাম ছিলেন। উনার অনেক পরে ম্যাম বেরিয়ে গেলেন। এখন সারাদিন পরে স্যার ম্যাম একসাথে ফিরে এসে আবার ওই রুমই নিলেন! মানে, ব্যাপারটা কিছুই তো বুঝলাম না।’
লোকটা মাথা চুলকাতে চুলকাতে নিজের জায়গায় বসে পড়লেন।
আতিয়া রুমে এসেই ওয়াশরুমে চলে গেল। প্রায় এক ঘন্টা লাগিয়ে শাওয়ার নিয়ে বের হলো। সা’দ এতক্ষণ রুমেই বসে ছিল। আতিয়া টাওয়েল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে সা’দকে দেখে বলল,
“-আপনি যাননি? ‘
“-হ্যাঁ? ‘
“-না মানে, আজও কি আপনি এখানে থাকবেন? ‘
সা’দ উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“-না।’
“-আমিও সেটাই ভেবেছিলাম। তাইতো ধারণা করে নিয়েছিলাম, আপনি হয়তো চলে গেছেন।’
“-আপনি কোথায় গিয়েছিলেন? ‘
আতিয়া টাওয়েল রাখছিল বলে কথাটা তেমন শুনতে পায়নি।
“-হ্যাঁ? ‘
“-বলছি আপনি আজ কোথায় গিয়েছিলেন? ‘
“-অহ। আমার আম্মুর ফ্রেন্ড অনি আন্টিকে খুঁজতে।’
সা’দ কিছু ভাবলো। তারপর বলল,
“-কিন্তু আপনি তো বলেছিলেন আপনার চাচার কাছে যাবেন।’
আতিয়া জিভ কাটলো। মনে মনে বলল,
“- হায়!হায়! এর কাছে সত্য বলে দিয়েছি! মনেই ছিল না আমি ব্যাটাকে বলদ বানিয়েছি। কথাটা ঘোরাতে হবে। এর কাছে ধরা পড়া যাবে না।’
মুখে হাসি টেনে আতিয়া বলল,
“-প্রথমে চাচার কাছেই তো গিয়েছিলাম। কিন্তু চাচারা ওখানে নেই। মনে হয় চাচার বড় ছেলের কাছে গেছেন। সেখান থেকে ফিরে আসার সময় আম্মুর ফ্রেন্ডের কথা মনে পড়লো। আমার কাছে উনার ঠিকানা ছিল। তাই ভেবেছিলাম আন্টির…
আতিয়ার কথার মাঝখানে সা’দের ফোন বেজে উঠলো। সা’দ ফোন হাতে নিয়ে দেখে বলল,
“-এক্সকিউজ মি!’
রুম থেকে বেরিয়ে ফোন রিসিভ করল সা’দ। ওপাশ থেকে নাহিল বলল,
“-ভাই, কোথায় তুমি? আমাকে বারোটার আগে ফিরতে বলে নিজে কোথায় রয়ে গেলে? বুড়ো তোমার চিন্তায় অস্থির হয়ে, পুরো হল জুড়ে পায়চারি করছে। তুমি দশ মিনিটের মধ্যে ফিরে না এলে বুড়ো হার্ট এ্যাটাক করবে। আর সাথে আমার ভর্তা বানাবে। জলদি এসো ভাই। বুড়ো আমার মাথা খাচ্ছে। আর তোমার ফোন অফ আসছিল কেন? ঠিক আছো তো তুমি? ‘
“-হ্যাঁ, হ্যাঁ। আমি ঠিক আছি। তুমি দাদাজানকে বলো আমাকে নিয়ে টেনশন না করতে। আমি দশ মিনিটের ভেতরেই আসছি।’
“-কোথায় তুমি সেটা তো বলো!’
“-ফিরে এসে বলব। এখন রাখছি।’
“-ভাই শোন…
নাহিলের পুরো কথা না শুনেই সা’দ কল কেটে দিল। ফোন পকেটে রেখে রুমে গিয়ে দেখে আতিয়া হাত পা ছড়িয়ে বিছানায় পড়ে আছে। তার চোখ বন্ধ। সা’দ ভাবল, মেয়েটা ঘুমিয়ে গেল নাকি? ডাকলো সে,
“-শুনুন…! ‘
আতিয়া চোখ খুলে উঠে বসলো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ঘুমে টলছে সে।
“-আপনি এখনও যাননি?’
“-যাব। আচ্ছা আপনার আম্মুর ফ্রেন্ডের বাসা কোথায়? ‘
“-আপনাদের এই শহরেই।’
“-তাহলে কাল আমি আপনাকে ওখানে নিয়ে যাব। ততক্ষণ আপনি এখানেই থাকুন। আমি আবার সকালে আসব।’
ব্যাটা বিদায় হলে আতিয়া ঘুমাবে। তার কাছে ঘুমের থেকে বড় আর কিছু না। সে তাড়াহুড়ো করে বলে দিল।
“-আচ্ছা। আচ্ছা। আপনি তাহলে এখন যান। আমি দরজা লক করে শোব। অনেক ঘুম পেয়েছে। ‘
আতিয়ার এমন ব্যবহারে সা’দ থতমত খেয়ে পরমুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে চলে গেল। আতিয়া রাতে না খেয়েই দরজা লক করে রুম অন্ধকার করে শুয়ে পড়ল।
গাড়িতে এসে সা’দ ঘড়ি দেখল। বারোটা আটচল্লিশ। এত রাতে সে মেয়েটার উপকার করলো। বদমাশ লোকগুলোর হাত থেকে বাঁচিয়ে হোটেলে নিয়ে এলো। আর এই মেয়ে কী না তার সাথে এই ব্যবহার করলো! একটা ধন্যবাদ তো দিলোই না। উল্টো দূর দূর করে তাড়িয়ে দিল। মেয়েটা সত্যিই স্বার্থপর। সা’দ হেসে ফেলল।
“-এই মেয়ের পক্ষেই এমন করা সম্ভব। অন্য কোনো মেয়ে হলে এতক্ষণে কৃতজ্ঞতায় আমার গলায় ঝুলে যেতে চাইত। আর এই মেয়ে ঘুম পেয়েছে বলে আমাকে রুম থেকে বের করে দিল! যেখানে মেয়েরা আমার কাছে এলে, আমিই ওদের থেকে দুরত্ব বজায় রাখি। আর আজ এতকিছুর পর এই মেয়ে আমার কাছে আসবে তো দূর। আমার প্রতি একটু দুর্বলও হলো না। ব্যাটা সা’দ, তুই আগের মত হ্যান্ডসাম নেই নাকি? নাকি তোর চেহারায় বয়সের ছাপ পড়তে শুরু করে দিয়েছে! দাদাজান ঠিকই বলেন, ‘বয়স তো আর কম হলো না। এবার একটা বিয়ে টিয়ে কর।’
একা একাই শব্দ করে হাসলো সে। গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলল,
“-আমার কেমন বউ চাই তা আমি জেনে গেছি। দাদাজানকে আর বেশি কষ্ট করতে হবে না।’
#আমার_আকাশ_জুড়ে_তুমি(১০)
#জেরিন_আক্তার_নিপা
আশরাফ চৌধুরীর রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। মেয়েটা আগেও অনেক বার বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। কিন্তু কোনো বারই এমনটা হয়নি। অন্য বার এক দু’দিন গেলেই আতিয়া ফিরে আসতো। ফিরে না এলেও ফোনে যোগাযোগ করতো। কিন্তু এবার পুরো তিনটা দিন পার হয়ে গেল। আতিয়া ফিরেও আসছে না। যোগাযোগও করছে না। আজ রাতে আশরাফ চৌধুরী আতিয়াকে নিয়ে ভয়ঙ্কর একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছেন। স্বপ্নটা দেখার পর থেকে তিনি ভুলেও চোখের পাতা এক করতে পারেন নি। মেয়ের উপর যতই রাগ হোক। বাবার মন মেয়ের জন্য কাঁদবেই। একেতো মেয়ের কোনো খোঁজ খবর পাওয়া যাচ্ছে না। তার উপর ওসব স্বপ্ন দেখলে কিভাবে ঠিক থাকবেন তিনি। ঘুম হয়নি বলে উনার চোখ লাল হয়ে ফোলে আছে। ইজি চেয়ারে চোখ বন্ধ করে চুপ করে পড়ে আছেন তিনি। হামিদ ঘরে এলেন। পেছনে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,
“-ভাইজান, কিছু খাইবেন। নিচে চলেন।’
গমগমে গলায় আশরাফ চৌধুরী বললেন,
“-আমার খেতে ইচ্ছে করছে না হামিদ। তোমরা খেয়ে নাও। আমি এখন কিছু খাব না।’
“-ইচ্ছা না করলেও খাইতে হবে ভাইজান। না খাইয়া থাকলে কি মা’রে পাইবেন? ‘
আশরাফ চৌধুরী চোখ খুলে হামিদের দিকে তাকালেন।
“-বললাম তো হামিদ। বিরক্ত করো না তো।’
হামিদ কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলেন। আশরাফ চৌধুরী এবার নিজেই বললেন,
“-মেয়েটার সাথে আমি অন্যায় করেছি। ওর অনুমতি না নিয়ে বিয়ের ব্যাপারটা এগিয়ে নেওয়া উচিত হয়নি।’
হামিদ মনে মনে বললেন,
-তা তো আপনি করছেনই। নিজের মেয়ের সব কথাই রাখেন। এই কথা রাখলেন না ক্যান? বিয়া নিয়া কেন জোড়াজুড়ি করলেন? তাও আবার ওই নালায়েক ভাগিনার জন্য।’
“-বুঝলে হামিদ, আমার মেয়েটা মায়ের ভালোবাসা খুব কমই পেয়েছে। ওর মা বেঁচে থাকলে আতিয়া এতটা জেদি হতো না। আমি ওকে ঠিকঠাক মানুষ করতে পারিনি। তখন আমার উপরও কত কাজের চাপ ছিল। মেয়েটাকে পাঠিয়ে দিলাম ফুপুর কাছে। নিজের থেকে অনেক দূরে। আমার দোষেই আতিয়ার এই অবস্থা হয়েছে। আমি ওকে নিজের কাছে রাখলে…
হামিদ মৃদু স্বরে বললেন,
“-অন্যায় নিয়েন না ভাইজান। এখনও কিন্তু আপনি সেই একই ভুল করতেছেন। মা জননীরে আবার আমগোর থেইকা দূরে পাঠাইতে চাইতাছে।’
“-মেয়ের বিয়ে দিব না?’
“-দিবেন। কিন্তু ওই পোলার সাথে ক্যান? আমগোর দেশে কি পোলা নাই? আপনার বোন তো ওরে নিয়া আবার বিদেশ চলে যাইব।’
“-বিশাল ভালো ছেলে। তাছাড়া নাসরিন আতিয়াকে মায়ের মত খেয়াল রাখবে। আপন ফুপুর থেকে অন্য কেউ ভালো শাশুড়ি হতে পারবে? তোমার মনে হয়?’
বিরবির করে হামিদ বললেন,
-আপন ফুপু না ছাই! মায়ের মত খেয়াল রাখলে মা আমার উনার কাছ থেইকা চলে আসত না। ওই কালনাগিনী কোনোদিনও ভালো শাশুড়ি হতে পারবে না। আর উনার বজ্জাত, নালায়েক পোলা বিশাল। ওই বদমাশ যদি ভালো হয়,তাইলে পৃথিবীর সব কয়টা ভালো ছেলে গলায় দড়ি দিয়া মরে যাবে।’
“-কিছু বলছো হামিদ? ‘
“-না ভাইজান। আপনি আমার সাথে আসেন। বেলা হইছে খাইবেন চলেন।’
আশরাফ চৌধুরী উঠে দাঁড়ালেন।
“-তুমি এতো সহজে মানবে না। চলো দেখি। মেয়েটার তো কোনো খোঁজ পেলাম না। কোথায় আছে, কি করছে আল্লাহ জানেন। আমার মেয়েটা ভালো থাকলেই হলো হামিদ। উপরওয়ালার কাছে আর কিছু চাই না আমি। আতিয়া যেন কোনো খারাপ লোকের হাতে না পড়ে। অবুঝ মেয়ে। দুনিয়া সম্পর্কে তেমন জ্ঞান রাখে না।’
ভাইজানের দিকে তাকিয়ে হামিদের এবার সত্যি সত্যিই মায়া হচ্ছে। লোকটা মেয়েকে অনেক ভালোবাসে। সব সময় মেয়ের ভালো চায়। কিন্তু এবার মেয়ের ভালো করতে যেয়ে, নিজের অজান্তেই খারাপ করে ফেলছে। বোনের চক্রান্ত বুঝতে পারছেন না।
নাহিল ঘুমঘুম চোখে, চোখ কচলাতে কচলাতে সা’দের ঘরে এসে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়াল। হাই তুলতে তুলতে বলল,
“-কাল রাতে তুমি কোথায় গিয়েছিলে ভাই? ‘
সা’দ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করছিল। তার পরনে কালো ট্রাউজার আর ধূসর রঙের টিশার্ট। চুল আঁচড়ানো শেষে চিরুনিটা রেখে নাহিলের দিকে ফিরে দাঁড়াল সা’দ।
নাহিল ততক্ষণে বেডে গিয়ে শুয়ে পড়েছে। সা’দকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে আবার বলল,
“-সক্কাল সক্কাল কোথায় বেরুচ্ছ? ‘
“-কাজ আছে।’
“-কী কাজ তোমার? কাল রাতেও ফিরতে এতো দেরি করলে। এখন আবার ঘুম থেকে উঠেই বেরিয়ে যাচ্ছ!’
সা’দ ভ্রু কুঁচকে বলল,
“-তুমি আমার বউয়ের রুল প্লে করছ নাকি?’
উঠে বসল নাহিল। মাথা চুলকে বলল,
“-নাহ। ভাই হিসেবে জিজ্ঞেস করতেই পারি।’
“-তা পারো। কিন্তু তুমি যেভাবে জেরা করছিলে, আমার ভয় লাগছিল। ভাবছিলাম ঘুম থেকে উঠে মাথা এলোমেলো হয়ে গেল নাকি।’
“-বলো না ভাই, সকাল সকাল এতো সাজগোজ করে কোথায় যাওয়া হচ্ছে?’ হঠাৎ কিছু মনে পড়ে গেল এমন ভাবে লাফিয়ে উঠে নাহিল বলল,
“-ভাবির খোঁজ পেয়েছ তাই না? এখন ওর সাথেই দেখা করতে যাচ্ছ।’
ওয়ালেট আর গাড়ির চাবি নিয়ে সা’দ বলল,
“-ফালতু বকো না।’ বলতে বলতে সা’দ বেরিয়ে গেল। নাহিলও পেছন পেছন আসছে।
“-ভাই, দাদাজান ব্রেকফাস্ট টেবিলে তোমাকে না পেলে আমার মাথা খাবে।’
“-খেতে দিও।’
“-তুমি সব সময় এমন করো। আর তখন আমাকে তোমার বউয়ের ভূমিকা নেভাতে হয়। ভাল্লাগে না। কাল রাতেও বুড়ো আমার পিণ্ডি চটকাচ্ছিল। সব দোষ যেন আমার। উনার বড় নাতি তো ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানেন না।’
নাহিলের বকবকানিতে ধ্যান না দিয়ে সা’দ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল। নাহিল দীর্ঘশ্বাস ফেলে ঘরে এসে আবার শুয়ে পড়লো। ঘুমটা ভালো হয়নি।
সা’দ অবাক হলো। হোটেলে এসেও যখন দেখল এই মেয়ের এখনও ঘুমই ভাঙেনি। আর সে কী-না সারারাত ঘুমাতে পারেনি। ছটফট করে রাত পার করে সকাল সকাল চলে এসেছে। এখানে এসে দেখছে,যার জন্য তার রাতের ঘুম হারাম হয়েছে, সে-ই নিশ্চিন্তে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।
অনেকক্ষণ ডাকার পর আতিয়া ঘুমে টলতে টলতে এসে দরজা খুলে দিল। ঘুম জড়ানো মেয়েটার দিকে সা’দ কয়েক সেকেন্ড একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। অস্পষ্ট ভাবে আতিয়া বলল,
“-কয়টা বাজে? সকাল হয়ে গেছে? ‘
সা’দ মনে মনে হাসলো। ঘড়ি দেখে বলল,
“-সকাল অনেক আগেই হয়েছে। এখন সাড়ে আটটা বাজে।’
মুখে হাত চেপে হাই তুলে আতিয়া বলল,
“-আপনি ভেতরে এসে বসুন। আমি দুই মিনিটে ফ্রেশ হয়ে আসছি।’
দুমিনিটের কথা বলে আতিয়া সেই যে গেল। এখনও তার দুমিনিট আর শেষ হচ্ছে না। সা’দ ঘড়ি দেখল। ন’টা দশ। মেয়েটা সাড়ে আটটায় ওয়াশরুমে ঢুকেছে। ঠিক চল্লিশ মিনিট লাগিয়ে কী করছে ভেতরে? ঘুমিয়ে গেছে নাকি আবার? নিজের উপর হাসি পেল তার। কখনও ভাবে নি জীবনে এমন দিনও আসবে! ভদ্রতা দেখিয়ে ডাকতেও পারছে না। ওয়াশরুমের দরজার শব্দ হলো। সা’দ ঘাড় ফিরিয়ে আতিয়ার দিকে তাকাল। গোসল করেনি। শুধু হাত মুখ ধুয়েছে আর চেঞ্জ করেছে। এতেই চল্লিশ মিনিট লাগল! আতিয়া এসে সা’দের সামনে দাঁড়াল। সা’দ এখনও বেহায়ার মতো আতিয়াকে দেখে যাচ্ছে। ইচ্ছে করেও চোখ সরাতে পারছে না। আতিয়া নীল রঙের থ্রি পিস পরেছে। ওড়না ঠিক করতে করতে আতিয়া বলল,
“-চলুন এবার।’
হুঁশ ফিরল সা’দের। নিজের এই বেহায়া পানার জন্য লজ্জা পেল। ফোন দেখতে দেখতে বলল,
“-চলুন।’
গাড়িতে বসতে গিয়ে সা’দ বলল,
“-বাইরে কোথাও থেকে কিছু খেয়ে নেওয়া যাবে।’
“-হুম। ‘
দু’জন একসাথে সকালের খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়াল। আতিয়া সা’দকে পুরো টাকা দিতে দিল না। মেয়েটার এই আচরণে সা’দ মনে মনে রাগ করলেও মুখে প্রকাশ করলো না। সত্যিই তো সম্পূর্ণ অচেনা কারো টাকায় কেন খাবে সে?
ফিরে গিয়ে গাড়িতে বসে সা’দ জিজ্ঞেস করল,
“-আপনার আন্টির অ্যাড্রেসটা…
সা’দ কথা শেষ করার আগেই আতিয়া হাত ব্যাগ থেকে ঠিকানা লেখা কাগজটা বের করে দিল। সা’দ সেটা দেখে বলল,
“-এখানে পৌঁছুতে এক ঘন্টা লাগবে।’
আতিয়ার মুখে আনন্দের ছায়া ফুটে উঠেছে। খুশি সামলাতে না পেরে বলে উঠল,
“-অ্যাড্রেসটা আপনি চিনেন? ‘
“-হুম।’
“-তাহলে তাড়াতাড়ি নিয়ে যান প্লিজ।’
আতিয়ার খুশি দেখে সা’দের কেনই যেন ভালো লাগছে না। ওর আন্টির বাসায় চলে গেলে আর কোনোদিন হয়তো মেয়েটার সাথে দেখা হবে না। এটা ভাবতেই অস্থির লাগতে শুরু করলো। ওরা অনি আন্টির বাসার উদেশ্যে রওনা দিয়েছে ঠিক দশটা বিশে। আতিয়া জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। সা’দ একমনে ড্রাইভ করছে। কেউই কোনো কথা বলছে না।
নাসরিন বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে ডাকলেন,
“-ভাইজান! ভাইজান! ‘
আশরাফ চৌধুরী বসার ঘরের সোফায় বসে ছিলেন। কপাল থেকে হাত নামিয়ে বললেন,
“-আয় নাসরিন।’
নাসরিন এসে উনার পাশে বসলেন। উনার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করে বললেন,
“-তোমার শরীর ঠিক আছে তো ভাইজান?’
“-হ্যাঁ। শরীরের আবার কী হবে? ‘
“-না। তোমাকে কেমন দেখাচ্ছে। আচ্ছা আসল কথায় আসি। আতিয়ার কোনো খোঁজ পেয়েছ?’
“-না।’
“-না মানে! তোমাদের দেশের পুলিশ গুলো ঘাস খায় নাকি? তিন দিন হয়ে গেল একটা মেয়েকে খুঁজে বের করতে পারছে না। কী করছেন উনারা?’
ক্লান্ত কন্ঠে আশরাফ চৌধুরী বললেন,
“-কেউ হারিয়ে গেলে, চেষ্টা করলে তাকে খুঁজে বের করা যায়। কিন্তু কেউ নিজে থেকে লুকিয়ে থাকলে তাকে খুঁজে বের করা যায় না। আতিয়া নিজেই ধরা দিতে চাইছে না। পুলিশেরা আর কী করবে! ‘
“-সব দোষ তোমার ভাইজান। তুমি মেয়েটাকে আদরে আদরে বিগড়ে দিয়েছ। আমার কাছে থাকার সময় আতিয়া এমন ছিল না।’
হামিদ দূর থেকে দাঁড়িয়ে উনাদের সব কথা শুনছেন। তিনি মনে মনে বললেন,
“-আপনার অযথা শাসনের কারণেই মা আপনার কাছ থেকে চলে আসছে। এখন আবার আপনি আসছেন মা’রে নিজের কাছে নিয়া যাইতে।’
আশরাফ চৌধুরী চুপ করে আছেন দেখে নাসরিন গলার স্বর একধাপ নামিয়ে বললেন,
“-আমার হয়েছে জ্বালা বুঝলে ভাইজান। বিশাল তো ফিরতেই চাইছে না। তার এক কথা সে আতিয়াকে বিয়ে করে, ওকে সাথে নিয়ে তবেই ফিরবে। নইলে যতদিন আতিয়াকে পাওয়া না যায় ততদিন এখানেই থাকবে। দরকার পরলে নাকি কখনও ফিরে যাবে না। বলো তো ভাইজান, এই পাগল ছেলেকে নিয়ে আমি কী করি?’
আশরাফ চৌধুরীর ফোন বেজে উঠলে তিনি ফোন হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। দুপুরে কী রান্না হবে হামিদ সেটার তদারকি করছিলেন। নাসরিনের কথা শুনে মনে মনে হেসে বললেন,
“-ছেলে যাবে ক্যান? ওই নালায়েক বজ্জাত আমার মায়ের মত মেয়ে পাবে নাকি? আর ছেলে গেলেও তো আপনি যাইবেন না। চইলা গেলে তো ভাইয়ের সব সম্পত্তি হাতছাড়া। আমি আপনারে চিনি না মনে করছেন? আপনার রক্তে রক্তে শয়তানিতে ভরা। ভাইজান উনার সব সম্পত্তি আতিয়ার নামে লেখে দিছে, সেটা আপনি খুব ভালো করেই জানেন। নিজের এতকিছু থাকার পরেও লোভ কমে না।’
সা’দ গাড়ি থামালে আতিয়া নেমে দাঁড়াল। পেছন পেছন সা’দও নামলো। বাড়িটা বেশ বড়। আহ! ফাইনালি অনি আন্টির খোঁজ পেয়েছে আতিয়া। এখন তার আর কোনো টেনশন নেই। অনেকক্ষণ গেটে ধাক্কানোর পর বুড়ো মত একটা লোক গেট খুলে মাথা বের করলো। লোকটা হয়তো দারোয়ান। নইলে বাড়ির চাকরবাকর টাইপের কেউ। আতিয়া মিষ্টি করে হেসে বলল,
“-অনি…অনিতা আন্টি আছে?’
“-আপনি কে?’
“-আমি অনিতা আন্টির বান্ধবীর মেয়ে। উনাকে আমার নাম বললেই চিনবে। আতিয়া এসেছে,এই খবরটা একটু উনাকে দিতে পারবেন? ‘
“-কিন্তু ম্যাম সাহেব তো বাসায় নাই?’
“-হ্যাঁ? বাসায় নেই?’
“-না। উনারা কক্সবাজার বেড়াতে গেছেন। গতকাল রাতেই গেছেন।’
আতিয়া চুল টেনে ধরে বিরবির করে বলল,
“-কপাল! আমার কপাল কত ভালো! যেখানেই যাই সেখানেই কিছু না কিছু একটা হবেই। আন্টি ঘুরতে যাওয়ার আর সময় পেল না।’
সা’দ পাশে দাঁড়িয়ে সবকিছুই শুনেছে। আতিয়াকে টেনশন করতে দেখে সা’দ এগিয়ে এসে বলল,
“-ওনারা কবে ফিরবেন? ‘
“-তা তো সপ্তাহ দু’য়েক লাগবেই।’
কথাটা শুনে সা’দ মনে মনে খুশি হলো। যাক মেয়েটাকে একেবারে জন্য হারাতে হচ্ছে না। অন্তত সামনে দুই সপ্তাহ সে মেয়েটাকে দেখতে পাবে। আতিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এবার তার বাড়ি থেকে পালানো উচিতই হয়নি। নইলে এভাবে একটার পর একটা ঝামেলা আসছে কেন? সা’দ আতিয়াকে জিজ্ঞেস করল,
“-এবার তাহলে কী করবেন? ‘
আনমনে আতিয়া বলে ফেলল,
“-বাসায় ফিরে যাব।’
বাসায় ফিরে যাব কথাটা শুনে মুহূর্তে সা’দের মুখ কালো হয়ে গেল। ফিরে যাওয়া ছাড়া আতিয়া আর কিছু ভেবেও পাচ্ছে না। অনি আন্টি বাসায় নেই। দুই সপ্তাহ সে হোটেলে থাকবে নাকি? অসম্ভব। সা’দ আবার বলল,
“-আপনি কি সত্যিই ফিরে যাবেন? ‘
“-তাছাড়া আর উপায় কি?’
গাড়িতে গিয়ে বসল ওরা। সা’দ নিঃশব্দে সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভ করছে। তার মনের ভেতর যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে তা শুধু সে-ই জানে। পাশে বসে থাকা মেয়েটা সেই ঝড়ের কোনো আভাস পাচ্ছে না। পাবেও না। অনেকক্ষণ পর আতিয়া বলল,
“- ধন্যবাদ। আমার জন্য এতকিছু করছেন আপনি। অচেনা অজানা একটা মেয়ের জন্য কেউ হয়তো এতটা করত না। অনেক ভুগিয়েছি আপনাকে।’
আতিয়ার কথার প্রতিউত্তরে সা’দ জোর করে হাসলো একটু।
চলবে…
গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।
চলবে…