আমার আকাশ জুড়ে তুমি পর্ব ১১+১২

#আমার_আকাশ_জুড়ে_তুমি(১১)
#জেরিন_আক্তার_নিপা

-আপনি যাবেন না। আপনি চলে গেলে আমার দিন কীভাবে কাটবে? আপনি বুঝেন না,আপনি আমার আশেপাশে থাকলে আমার কত ভালো লাগে।’
সা’দ চাইলেও কথাগুলো আতিয়াকে বলতে পারবে না। কেন বলবে সে? মেয়েটা হয়তো তার সম্পর্কে এমন কিছুই ভাবে না। সে কেন শুধু শুধু তার অনুভূতি প্রকাশ করবে? মেয়েটা কি তার অনুভূতি দাম দিবে? তার ভালোবাসার মান রাখবে? ভালোবাসা! এই একটু সময়ে কি কেউ কাউকে ভালোবাসতে পারে? ভালোবাসতে হলে ওকে জানতে হবে, বুঝতে হবে। তারপর না ভালোবাসা হবে। মেয়েটার প্রতি তার এই অনুভূতিকে সা’দ ভালোবাসার নাম দিতে চায় না।গাড়ির স্পিড বাড়িয়ে দিল সে। আতিয়া এতক্ষণ বসে বসে বাড়ির কথা ভেবেছে। এখন বাড়ি ফিরে যাওয়া ঠিক হবে কি? গেলেই তো ওই কালনাগিন তার ছেলেকে ওর গলায় ঝুলানোর জন্য উঠেপড়ে লাগবে। পাপাও তো সেই দলেরই একজন। হামিদ চাচার সাথে কথা বলা দরকার ছিল। কালনাগিনটা চলে গেল? নাকি আরো থাকবে। আতিয়া সা’দের দিকে ফিরে সহজ স্বাভাবিক গলায় বলল,
“-আপনার ফোনটা দিবেন? ‘
আজ আর সা’দ কিছু জিজ্ঞেস করলো না। কোনো আপত্তি না করে ফোন এগিয়ে দিল। আতিয়া হামিদ চাচাকে কল করলো। না। হামিদ চাচা কল তুলছে না। আতিয়া ফোন ফিরিয়ে দিয়ে বলল,
“-হোটেলে গিয়ে একবার চেষ্টা করে দেখতে হবে। এখন ফোন তুলছে না।’
আতিয়া কার কাছে ফোন করল? কেন করল? সা’দ কিছুই জিজ্ঞেস করেনি।
হোটেলে এসে আতিয়া ব্যাগ গোছাচ্ছে। সা’দ ঘরে এলে আবার ফোন চেয়ে নিল। হামিদ চাচা ফোন তুললে রেগে গিয়ে বলল,
“-কী করছিলে তুমি? না,আমার কথা সবাই ভুলে গেছ নাকি? কী চাইছো তোমরা? বাড়ি থেকে চলে এসেছি বলে আমার সাথে কথাও বলবে না! আশ্চর্য। ‘
আতিয়ার রাগ বুঝতে পেরে উনি বললেন,
“-অসুস্থ ছেলেটারে মা এমন ভাবে বকতেছে!’
আতিয়ার বুক কেঁপে উঠল,
“-কী হয়েছে তোমার? শরীর বেশি খারাপ করেছে নাকি? ‘
উনি হেসে বললেন,
“-তেমন কিছু হয় নাই। একটু সর্দি কাশি।’
“-একটু? তুমি অনেক মিথ্যা বলো। পাপা কেমন আছে? নাকি তোমার সাথে সাথে উনিও বিছানায় পড়ে আছে?’
“-তোমার বাবা ঠিক আছে। শুধু তোমার জন্য চিন্তা করে। ‘
“-করতে দাও। এটা উনার শাস্তি। আচ্ছা ওই নাগিন আর তার ছেলের খবর বলো। চলে গেছে? নাকি নির্লজ্জের মত এখনও পড়ে আছে? ‘
“-খুঁটি গাইড়া বইছে। আজ তো ভাইজানের কাছে আসছিল। বলতে শুনলাম, তোমারে বিয়ে না করে নাকি বিশাল বিদেশ যাবে না। তোমার জন্য অপেক্ষা করে এখানেই থাকবে।’
“-বাব্বাহ! কত ভালোবাসা! ভালোবাসা দেখছি উথলে পড়ছে। আমি মরে গেলেও ওই বান্দরটাকে বিয়ে করব না। বলে দিলাম তোমাকে।’
“-আমারে বললে লাভ কী মা? তোমার বাবারে কও।’
“-উনাকেও বলব। আমি বাড়ি ফিরছি।’
“-বাড়ি ফিরবা? তুমি এহন বাড়ি ফিরলে তোমার ফুপু জোর করে তোমার বিয়ে দিয়ে ছাড়বে।’
আতিয়া তেতে উঠে বলল,
“-জোর করবে মানে? মগের মুল্লুক পেয়েছে নাকি? আমার বাপের উপর ওই নাগিন মাতাব্বরি করবে কেন? ‘
“-সেইজন্যেই তো বলাতছি। আর কয়দিন পরে আসো। তোমার চিন্তায় ভাইজান অস্থির হইয়া উঠতাছে। আর কয়দিন তোমারে না দেখলে তোমার সব কথা মেনে নিব। তখন তোমার ফুপু কিছু করতে পারবে না।’
“-আচ্ছা তাহলে আসব না।’
“-তুমি তোমার ওই আন্টির বাড়িতে গেছিলা?’
আতিয়া সত্য বলে চাচাকে টেনশন দিতে চায় না। তাই সে মিথ্যার আশ্রয় নিল। বলল,
“-যাইনি। কাল যাব। তুমি চিন্তা করো না।’
আতিয়া সা’দকে ফোন ফেরত দিয়ে চিন্তিত মুখে বলল,
“-আমার জন্য তো আপনি অনেক কিছু করেছেন। লাস্ট আরেকটা হেল্প করতে পারবেন?’
সা’দ প্রশ্নবোধক চোখে তাকাল। আতিয়া বলল,
“-আমাকে একটা বাসা খুঁজে দিতে পারবেন?’
“-আপনি যাবেন না?’
“-না।’ উদাস কন্ঠে বলল আতিয়া। কথাটা শুনে সা’দ যে কতটা খুশি হয়েছে তা সে বলে বুঝাতে পারবে না। মনের মধ্যে খুশি চেপে রেখে স্বাভাবিক গলা বজায় রেখে বলল,
“-চেষ্টা করে দেখতে পারি।’

আতিয়া সা’দের পাশে বসে আছে। তাকে এতক্ষণ চিন্তিত মনে হলেও এখন তেমন চিন্তিত লাগছে না। হঠাৎ আতিয়া বলল,
“-আপনি তো এখানকারই লোক, তাই না?’
“-হুম। ‘
“-আপনার বাসায় কে কে আছে? ‘
“-দাদাজান, ছোট ভাই আর আমি।’
আতিয়া চোখ মুখ কেমন করে সা’দের দিকে ফিরে বসল। সা’দ বুঝতে পেরে নিজেই বলল,
“-আমাদের বাসায় কোনো মেয়ে বা মহিলা নেই।’
কথাটা শুনে আতিয়া এমন মুখ করলো যেন সে এমন কথা এই প্রথম শুনছে।
“-কেউ নেই? মানে দাদী,মা,চাচী,ফুপু, বোন…কোন মেয়েই নেই!’
“-না।’
আতিয়া বেশ অবাক হলেও আর কিছু জিজ্ঞেস করল না। সা’দের আরও বলতে ইচ্ছে করলেও মেয়েটা তো আর শুনতে চাইছে না।

সা’দ নাহিলকে কল করলো। সাথে সাথেই নাহিল কল তুললো।
“-হ্যাঁ, ভাই। কোথায় তুমি? ভাবিকে পেয়েছ?’
সা’দ নাহিলের কোনো কথা যেন শুনেই নি।
“-কোথায় তুমি? ‘
“-ক্যাম্পাসে। কেন? ‘
“-তোমার ফ্ল্যাটে যাচ্ছি। দশ মিনিটের মধ্যে চলে এসো।’
নাহিল হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠে বলল,
“-হ্যাঁ? কেন? আমার ফ্ল্যাটে তোমার কী কাজ?’
সা’দ সন্দেহের সুরে বলল,
“-কে আছে ফ্ল্যাটে?’
নাহিল আমতা আমতা করতে করতে বলল,
“-ইয়ে মানে ভাই… আসলে হয়েছে কি…আমার এক ফ্রেন্ড ভাগিয়ে বিয়ে করে খুব ঝামেলায় পড়েছিল। থাকার জায়গা পাচ্ছিল না। তার উপর মেয়ের ফ্যামিলি থেকে পুলিশ, এটা ওটা নানান চাপ আসছিল। তাই ওদেরকে কয়েক দিনের জন্য থাকতে দিয়েছি।’
সা’দ রাগ করতে যেয়েও পারলো না। তার ভাই তো অসহায় দু’জন প্রেমিক প্রেমিকাকে সাহায্য করেছে। ভুল কিছু তো করেনি। সে নিজেও তো অসহায় একটা মেয়েকে সাহায্য করছে। তবুও সা’দ রাগ করার ভান করে বলল,
“-তোমাকে বলেছিলাম এসব থেকে দূরে থাকতে?’
অপরাধী কন্ঠে নাহিল বলল,
“-সরি ভাই। আর কখনো হবে না প্রমিজ।’
“-হুম। এখন তোমার ফ্রেন্ডের ওয়াইফের ফ্যামিলি যদি এসবে তোমাকেও ফাঁসায় তখন? কে বাঁচাবে তোমাকে? দাদাজানের কাছের কী জবাব দেবে? ‘
“-বলেছি তো ভাই। এমন ভুল আর হবে না। ওরা পালিয়ে বিয়ে করে জাহান্নামে যাক। তাতে আমার কি? আমি কেন ওদের জন্য নিজের নাম,নিজের ভাই, দাদার নাম বদনাম করব? এর পর থেকে মুখের উপর সবাইকে না করে দিব। আর কাউকে সাহায্য করব না।’
“-হয়েছে। হয়েছে। অতটাও সেন্টি খেতে বলিনি। সাহায্য করো সমস্যা নেই। শুধু দাদাজানের যেন দুর্নাম না হয়।’
“-আচ্ছা। এখন বলো তো, তুমি আমার ফ্ল্যাটে গিয়ে কী করবে? ‘
“-দরকার ছিল।’
“-কী দরকার? ‘
“-তোমার ফ্ল্যাট দুই সপ্তাহের জন্য আমার লাগত। কিন্তু এখন তো আর উপায় নেই।’
“-হুম। কিন্তু তোমার নিজের একটা ফ্ল্যাট থাকতে আমার ফ্ল্যাট কেন লাগবে? ‘
“-দাদাজান আমার ফ্ল্যাটে কী করছেন, তা তিনিই জানেন। এক মাস আগে আমাকে ওই ফ্ল্যাটে যেতে নিষেধ করেছেন।’
“-হুহ! যত আদর আহ্লাদ বড় নাতির জন্য। ছোট নাতির বেলায় ফোঁস। আচ্ছা তুমি এখন ফাঁকা ফ্ল্যাট দিয়ে কী করবে? মানে আমার মত তো তুমি কখনও ছিলে না। হঠাৎ এই পরিবর্তন! কী ব্যাপার হ্যাঁ।’ নাহিল রসিকতা করছে। সা’দ ধমক দিয়ে বলল,
“-তুমি ভুলে যাচ্ছ আমি তোমার বড় ভাই। বড় ভাইয়ের সাথে এভাবে কথা বলে?’
“-অহ ভাই! তুমি একটা আন রোমান্টিক বোরিং পার্সন। তোমার যদি খুব দরকার হয় তাহলে আমি অন্য কোনো ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। কিন্তু আসল ব্যাপারটা কি বলো না প্লিজ। ‘
সা’দ ঠোঁট কামড়ে একবার ভাবলো এই মুখ পাতলা বাচাল ছেলেকে বলা ঠিক হবে কি? আর তাছাড়া ছোট ভাইয়ের কাছে এসব কথা বলতে লজ্জাও লাগবে। সা’দ বলল,
“-তেমন কোন ব্যাপার ঘটলে আমি তোমাকে নিশ্চয়ই জানাতাম।’
“-হু জানাতে! তুমি যা চাপা স্বভাবের। ছোট থেকে দেখছি তো তোমাকে। সময় আছে এখনও বলে দাও। ভাবি ঘটিত কোন ব্যাপার হলে বন্ধুর পাছায় লাত্থি দিয়ে ফ্ল্যাট খালি করিয়ে দিব। নিজের ভাবির থেকে বন্ধুর বউ ভাবি বড় না।’
শেষের কথাটা বলে ফোনের ওপাশ থেকে হাসছে নাহিল। সা’দ নাহিলের সেই বিখ্যাত হাসি চোখের সামনে স্পষ্ট দেখতে পারছে। এই ছেলে কখনও শুধরাবে না। এর সাথে সিরিয়াস কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলাই বৃথা।
“-তোমার সাথে কথা বলাই বৃথা।’
ফোন রেখে দিল সে। ফোন রেখে সা’দও ভাবনায় পড়ে গেল। মেয়েটাকে এখন কোথায় জায়গা দিবে সে। এক দিনে ভাড়া ফ্ল্যাট খুঁজে পাওয়া সত্যিই মুশকিল হবে।

আতিয়াকে আজকের রাতটা হোটেলে থাকতে বলে সা’দ চলে এলো। কাল এসে সে কোনো না কোনো ব্যবস্থা করে দিবে। বাসায় আসার সময়ও সা’দের মন কেমন করছিল। মেয়েটাকে একা রেখে আসতে ভালো লাগছিল না। আবার সাথে নিয়ে আসারও তো কোন উপায় নেই। বাড়ি ঢুকতেই সা’দ দেখল দাদাজান রহমান সাহেবের সাথে বসে গল্প করছেন। ভ্রু কোঁচকাল সা’দ। এই লোক এখানে কেন? নিশ্চয়ই উনি একা আসেন নি। সাথে করে মেয়েকে নিয়ে এসেছে। দাদাজান কখনও শোধরাবেন না। সা’দ আশেপাশে তাকিয়ে দেখে নিল মেয়েটা কোথায় আছে। যা গায়ে পড়া স্বভাবের মেয়ে। দেখলেই দৌঁড়ে এসে আঠার মত লেগে যাবে। সা’দ নিজের বাড়িতেই চোরের মত লুকিয়ে ঢুকছে। দাদাজান হলরুমে ওপাশ ফিরে বসে আছেন। দেখবেন না ওকে। সিঁড়ির কাছে যেতেই পেছন থেকে নাহিলের গলা পেয়ে সা’দ দাঁড়িয়ে গেল।
“-আরে ভাই তুমি! কখন এলে?’
সা’দ কিড়মিড় করে ওর দিকে ফিরে তাকাল। আর সাথে সাথেই ফারিহা দৌঁড়ে এসে এমন ভাবে ওর গলা আঁকড়ে ধরল,সা’দ পড়ে যেতে যেতে সামলে নিল।
“-সা’দ! কত মিস করেছি তোমাকে। আজকাল তুমি কোথায় থাকো? আমাদের বাসায় যাও না কেন? তুমি জানো আমি কতবার তোমার খুঁজে এসেছি? দাদাজানকে জিজ্ঞেস করো তুমি।’
সা’দ জোর করে হাসার চেষ্টা করে। গলা থেকে ফারিহার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। সে যতই চেষ্টা করছে ফারিহা ততই আঁকড়ে ধরছে। সা’দ আগুন চোখে নাহিলের দিকে চাইল। নাহিল ইচ্ছে করে এমন করেছে। যেন ফারিহা সা’দকে উপরে যেতে দেখতে পারে। নাহিল ভাইয়ের অবস্থা দেখে মিটমিট করে হাসছে। সা’দের ইচ্ছে করছে এক্ষুনি এক ঘুসি দিয়ে ওর হাসি হাসি মুখ কাঁদো কাঁদো করে ফেলতে।
“-তুমি এমন কেন সা’দ? তোমার সাথে কিন্তু আমি রাগ করেছি। ‘
নাহিল এগিয়ে এসে ফারিহার কন্ঠ নকল করে বলল,
“-সা’দ তুমি অনেক পঁচা। অনেক।’ সা’দের কাছে গিয়ে নাক উঁচিয়ে ঘ্রাণ নেওয়ার মত করে মুখ বাকিয়ে নিল। বলল,
“-ইশ! পঁচে গিয়ে গা থেকে গন্ধ আসছে।’
সা’দ দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
“-নাহিল!’
ফারিহা নাহিলের কথায় কান না দিয়ে আবার বলতে লাগল,
“-জানো আজ বাপি কেন তোমাদের বাসায় এসেছে? আমাদের বিয়ের কথা বলতে এসেছে। দাদাজান আমাদের বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলেছেন। তুমি আমাদের বিয়েতে খুশি হওনি?’
সা’দ হতভম্ব হয়ে গেল। দাদাজান তাকে জিজ্ঞেস না করে এটা কী করেছে? বিয়ের কথা ফাইনাল করার আগে অন্তত একটা বার তাকে জিজ্ঞেস করে নিত। তার মতামত জানতে চাইত। না। দাদাজান এটা মোটেও ঠিক করেননি। সা’দ কিছুতেই ফারিহাকে বিয়ে করতে পারবে না। এই মেয়েকে বৌ করা তো দূর, একে তো দুমিনিট সহ্য করার কথা ভাবলেই মাথা ব্যথা শুরু হয়ে যায়। সা’দ ফারিহার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে থমথমে গলায় বলল,
“-দাদাজান ঠিক করলেই তো হবে না ফারিহা। বিয়েটা আমি করব। সুতরাং এখানে আমার ডিসিশনই সব।’
ফারিহার মুখের সমস্ত হাসি উবে গেল। সে ভয় ভয় কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
“-তুমি আমাকে বিয়ে করবে না?’
“-আমি তোমাকে কখনও ওইভাবে দেখিনি ফারিহা। সব সময় তোমাকে ফ্রেন্ড ভেবেছি। ব্যস এটুকুই। এর থেকে বেশি কিছু না। লাইফ পার্টনার হিসেবে তো না-ই। দাদাজানের হয়ে আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমাকে না জানিয়ে এতদূর এগিয়ে যাওয়া উনার ঠিক হয়নি।’
নাহিল আজ ভাইয়ের সাহস দেখে মনে মনে বাহবা দিচ্ছে। আগে কখনও ভাই কারো মুখের উপর এমন ভাবে কথা বলেনি। দাদাজানের কথার বাইরেও যায়নি। সব সময় বাধ্য ছেলে হয়ে থেকেছে। এমনটা আজই প্রথম হলো। তার মানে ভাইয়ের মনে…
নাহিল নিজের ভাবনা শেষ করতে পারলো না। তার আগেই ফারিহা কাঁদতে কাঁদতে দৌঁড়ে বেরিয়ে গেল। সা’দ নির্বিকার পকেটে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। যেন কিছুই হয়নি। বা এটাই হওয়ার ছিল। এমন ভাব নিয়ে নাহিলের মুখের দিকে তাকাল সা’দ।
মেয়ে বেরিয়ে যেতে ওকে ডাকতে ডাকতে রহমান সাহেবও পেছন পেছন বেরিয়ে গেলেন। দাদাজান ওদের সামনে এসে গর্জন করে বললেন,
“-কী হয়েছে এখানে? মেয়েটা এভাবে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে গেল কেন? কী বলেছ তোমরা ওকে? ‘
নাহিল তাড়াহুড়ো করে বলে উঠল,
“-আমি কিছু বলিনি দাদাজান। যা বলার তা ভাইয়া একাই বলেছে। আমি শুধু চুপ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনছিলাম।’
দাদাজানের চোখ পাকানো দেখে নাহিল চুপ হয়ে গেল। উনি সা’দকে বললেন,
“-কী বলেছ তুমি ওকে?’
“-আমি ওকে বিয়ে করতে পারব না। এই সহজ কথাটাই সোজাভাবে ওকে বলে দিয়েছি। আর এটা শুনেই ও চলে গেছে।’
“-কি বলেছ তুমি ওকে! ওকে তুমি বিয়ে করতে পারবে না! কিন্তু কেন? কেন তুমি বিয়ে করতে চাও না? আজ আমাকে আসল কারণ বলবে। এতো মেয়ে দেখানোর পরেও কেন তোমার কোনো মেয়েকে পছন্দ হয় না? আমি মেয়ে পছন্দ করলে তুমি তাকেও বিয়ে করবে না। নিজের পছন্দও আমাকে জানাবে না। কী চাও তুমি?’
কথা বলতে বলতে উত্তেজিত হয়ে দাদাজান বুকে হাত দিয়ে বসে পড়লেন। সা’দ নাহিল এগিয়ে এসে দাদাজানকে ধরলে, উনি রেগে গিয়ে হাত ঝাড়া মেরে বললেন,
“-আমাকে ছুঁবে না তুমি। আমাকে হাত লাগানোর অধিকার তোমাদের দুই ভাইয়ের নেই। আমার কথাই যখন তোমরা শুনবে না। তাহলে আমার প্রতি মিথ্যে ভালোবাসাও দেখাতে হবে না। আমার চোখের সামনে থেকে দূর হয়ে যাও তোমরা।’
#আমার_আকাশ_জুড়ে_তুমি(১২)
#জেরিন_আক্তার_নিপা

দাদাজান নিজের ঘরে বিছানায় শুয়ে আছেন। ডাক্তার উনাকে দেখছেন। পাশেই সা’দ গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে আছে। একটু দূরে দাঁড়িয়ে নাহিল বুড়োর কাণ্ড কাহিনী দেখছে। এই বুড়ো বড় বড় অভিনেতাকেও হার মানাবে। কত সুন্দর করে হার্ট এ্যাটাকের নাটক করলো। নাহিল দাঁত দিয়ে নখ কাটছে। সে লক্ষ করল দাদাজান ডাক্তারকে চোখে চোখে ইশারা করে কিছু বলল। উনাদের দু’জনের চোখে চোখে এই আলাপ নাহিল দেখলেও সা’দ দেখল না। নাহিল মনে মনে বলল,
“-ওরেব্বাস! বুড়ো তো ড্রামা ট্রামা করে ভাইকে হাতের মুঠোয় নিয়ে নিচ্ছে। আমার এই গাধা ভাই চোখের সামনে থাকা সত্য দেখবে না। বুড়োর সব কথা মেনে নিয়ে নাচতে নাচতে ফারিহাকে বিয়ে করে নিবে। এই বুড়ো শয়তান তো ডাক্তারকে নিয়ে আটঘাট বেঁধে নেমেছে একেবারে। এবার ভাইকে আমাকেই বাঁচাতে হবে। বেচারার জন্য কিছু করতে হবে।’
দাদাজান এমন ভাবে কাতড়াচ্ছেন যেন, উনার বুকে অসহ্য ব্যথা হচ্ছে। ডাক্তার কোনো কথা না বলে দাদাজানকে পরীক্ষা করে সা’দের দিকে ফিরে বললেন,
“-তুমি তো তোমার দাদার অবস্থা জানো সা’দ। কেন উনার কথা মেনে নিচ্ছ না৷ কেন উনাকে উত্তেজিত করছো? এতে উনার ক্ষতি হবে।’
সা’দ ব্যথিত কন্ঠে বলল,
“-আমি দাদাজানের খেয়াল রাখব।’
“-হুম। নাতি হিসেবে তোমার কর্তব্য দাদার কথা শোনা। উনি তো বেশিকিছু চাইছেন না। বিয়ে তো একদিন না একদিন করতেই হবে। উনি তোমার উপর জোর করছেন না। তুমি বুদ্ধিমান ছেলে।’
দাদাজান রেগে গিয়ে বললেন,
“-কার কাছে কী বলছো তুমি ডাক্তার! ওরা আমার কেউ না। কাউকে আমার কথা শুনতে হবে না। আমার খেয়ালও রাখতে হবে না।’
সা’দ কাতর গলায় বলল,
“-দাদাজান! ‘
মুখ ফিরিয়ে নিয়ে দাদাজান বললেন,
“-মরে গেছে তোমার দাদাজান। ‘
নাহিল খুব কষ্টে হাসি চেপে রেখে দাদার অ্যাক্টিং দেখে যাচ্ছে। ফিসফিস করে বলছে,
“-এই বুড়োকে তো অ্যাওয়ার্ড দেওয়া দরকার। চিন্তা কোরো না বুড়ো। আমি তোমাকে বেস্ট অ্যাক্টার এর অ্যাওয়ার্ড পাইয়ে দিব। তুমি সাঙ্ঘাতিক অভিনয় করো গো।’
ডাক্তার সা’দকে আড়ালে ডেকে নিয়ে কিছু কথা বলে চলে গেলেন। সা’দ ফিরে এসে দাদার পাশে বসলো। উনার হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল,
“-দাদাজান, আপনি যা বলবেন আমি তাই করব। ফারিহাকে আপনার পছন্দ হলে আমি ওকেই বিয়ে করব। আপনি খুশি থাকলেই আমি খুশি। আমি কখনও আপনার অবাধ্য হবো না দাদাজান।’
নাহিল ঝট করে এগিয়ে এসে বলল,
“-ফারিহাকে বিয়ে করবে মানে? তুমি তো ওকে পছন্দ করো না। দাদাজান তোমার ভালো চান। তাই তোমাকে বিয়ের জন্য জোর করছেন। তুমি উনাকে তোমার পছন্দের কথা বলতে পারো। আমাদের দাদাজান হিটলার নয় নিশ্চয়ই। উনি তোমার সব কথা শুনবে। তোমার পছন্দের মেয়েকে উনি রিজেক্ট করবেন না।’
সা’দ চোখ পাকিয়ে নাহিলের দিকে তাকাল। এই ছেলে বলে কী? তার পছন্দের কথা মানে? সা’দ তো নাহিলকে তার পছন্দের কথা জানায়নি। তাহলে সে জানে কিভাবে? এখন আবার দাদাজানকে জানানোর কথা বলছে। নাহিলের কথা শুনে দাদাজান উৎসুক হয়ে উঠে বসতে চাইলেন। উনার বড় নাতিরও তাহলে পছন্দের কেউ আছে! সা’দ উনাকে উঠে বসতে সাহায্য করল। নাহিলের মুখের দিকে তাকিয়ে উনি বললেন,
“-সা’দ কাকে পছন্দ করে? ওর পছন্দের কেউ আছে? ‘
“-হ্যাঁ আছে তো। আমার যেটুকু বলার তা বলে দিয়েছি। বাকিটা তুমি ভাইয়ের থেকে জেনে নাও।’
“-বলো সা’দ তুমি কাকে পছন্দ করো?’
সা’দ কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। ইতস্তত করছে সে। মেয়েটাকে সে পছন্দ করে ঠিক। কিন্তু মেয়েটার মনের কথা তো জানে না। এখন কিভাবে ওই মেয়ের কথা দাদাজানকে বলবে?
সা’দকে লজ্জা পেতে দেখে দাদাজান অধৈর্য হয়ে বললেন,
“-আহ! আমার সামনে কেমন লজ্জা পাওয়া ভাই? আমি তোমাদের দাদা। তোমাদের বন্ধু। আমাকে তোমার পছন্দের কথা আগে জানালে,আমি ফারিহার বাবাকে কথা দিতাম না। যাক,কথা দিয়েছি তাতে তেমন কিছু হয়নি। উনার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিব। আমার নাতির পছন্দই বড় কথা। যে মেয়েকে আমার নাতি পছন্দ করবে। আমি তাকেই এবাড়ির বৌ করে আনব।’
সা’দ কখনও ভাবেনি দাদাজান এতো সহজে মেনে নিবে। দাদাজানকে দেখে বাইরে থেকে শক্ত মনে হলেও মনের দিক থেকে উনি নরম তা সা’দ জানত। কিন্তু নাতিদের ক্ষেত্রে যে উনি এতটা নরম যা সা’দ জানত না। সা’দ দাদাজানকে আতিয়ার কথা জানিয়ে দিল। এটা জানালো না মেয়েটা অন্য একজনের সাথে পালিয়ে এসেছিল। এই কথাটা ছাড়া ওর বাড়ির কথা,বাবা, মা,ভাই,বোনের কথা যা জানত সব বলেছে।
“-বাহ! ভালোই তো। তুমি ওই মেয়ের বাড়ির ঠিকানা দাও। আমি নিজে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাব।’
সা’দ নিজের মিথ্যায় নিজেই ফেঁসে যাচ্ছে। দাদাজান যেভাবে ওর পেছনে লেগেছে। এখন কী বলবে সে? নাহিল সা’দের মুখ দেখে হয়তো মনের কথা বুঝতে পেরেছে। সে বলল,
“-দাদাজান এখন তো অনেক রাত। তার উপর আপনি অসুস্থ। এখন আপনি ঘুমিয়ে যান। কাল সকালে আপনার সাথে আমিও যাব। ভাইয়ের বিয়ে পাকা করে তবেই বাড়ি ফিরব।’
সা’দও নাহিলের কথায় হ্যাঁ মেলাল।
“-হ্যাঁ, দাদাজান আপনি শুয়ে পড়ুন।’

সা’দ দুই হাতে মাথার চুল মুঠো করে ধরে বেডের এক পাশে বসে আছে। অন্য পাশে নাহিল পায়ের উপর পা তুলে শুয়ে আছে। সে গুনগুন করে গান গাইছে। মাঝে মাঝে পা নাচাচ্ছে। উঁকি দিয়ে সা’দকে দেখছে। অনেকক্ষণ পর নাহিল বলল,
“-চিল ভাই! এতো প্যারা নিতেছ ক্যান? দাদাজানের কাছে নাহয় দু’একটা মিথ্যে বলেছ। তাই বলে অপরাধবোধে মারা যাবে নাকি? ‘
“-তুমি বুঝতে পারছ না নাহিল। আমরা নিজেদের মিথ্যায় ফাঁসতে চলেছি।’
“-আমরা না। বলো তুমি। তুমি ফাঁসবে। কারণ তুমি আমার কাছে এতদিন মিথ্যে বলে এসেছ। আমাকে যদি আগেই বলতে তাহলে আমি দাদাজানকে কোনো ভাবে ম্যানেজ করে নিতাম। ফারিহার সাথে বিয়ের কথা এতদূর এগোতে দিতাম না।’
“-আগে তোমাকে কী জানাতাম? একটা মেয়ে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে। তার বয়ফ্রেন্ড তাকে ধোঁকা দিয়েছে। সে তখন আমার কাছে সাহায্য চায়। আমি তাকে সাহায্য করেছিও। আর সাহায্য করতে করতে আমি মেয়েটার প্রতি দুর্বল হয়ে গেছি। ভালোবেসে ফেলেছি ওকে। এসব জানাতাম?’
নাহিল উঠে এসে সা’দের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“-রেগে যাচ্ছ ক্যান? মেয়েটা ছ্যাকা খেয়েছে তো সমস্যা কি? আমার ভাইয়ের ওকে পছন্দ হয়েছে। ব্যস। আমরা আর কিছু দেখতে যাব কেন? ‘
“-কিন্তু নাহিল। আমি যে দাদাজানের কাছে আমার পছন্দের কথা জানিয়ে দিলাম। মেয়েটা তো আমাকে ভালোবাসে না। সে অলরেডি একজনকে ভালোবেসে ঠকেছে। সে কেন আবার আরেকজনকে ভালোবাসতে যাবে, যাকে সে চিনেই না।’
“-ওহ এই ব্যাপার। তুমি ভয় পাচ্ছ মেয়েটা যেন না করে না দেয়। এই তো?’
“-হুম।’
“-ওকে। দিবে না।’
“-কেন দিবে না? আমি তাকে পছন্দ করি বলে কি তারও আমাকে পছন্দ করতে হবে? তুমি তাকে জোর করবে? ‘
“-নাহ। জোর করতে যাব কেন? আর তাছাড়া জোর করে আর যা-ই হোক ভালোবাসা হয় না। তাই আমরা তাকে জোর করব না। ছলেবলে কৌশলে আমরা তাকে বাধ্য করব।’
চোখ কপালে তুলে সা’দ বলল,
“-মানে? ‘
“-মানে অনেক সোজা। ‘ নাহিল হাই তুলল।
“-এতকিছু এখন বলতে পারব না। যা করার কাল সকালে করব। তুমি শুধু কাল আমাকে ভাবির কাছে নিয়ে যেও কেমন। ‘
নাহিল চলে যাচ্ছে। পেছন থেকে সা’দ ডাকছে,
“-শোন… নাহিল…
নাহিল হাই তুলে গুনগুন করতে করতে বেরিয়ে গেল। সা’দের মাথায় কিছুই ঢুকছে না। কী করবে এই ছেলে? এর মাথায় কী চলছে?

হোটেলে ঢোকার আগে নাহিল বলল,
“-ওখানে যাওয়ার পর তোমার কাজ শেষ। তারপর আমার কাজ শুরু হবে। আমি বলবো তুমি শুধু চুপ করে শুনবে। মাঝখানে কিছু বলতে পারবে না।’
“-হুম।’
“-হু না। একটা কথাও বলবে না তুমি। যখন আমি ইশারা করব তখন ‘হ্যাঁ’ ‘না’ তে মাথা নাড়বে।’
আতিয়ার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে সা’দ নার্ভাস ফিল করলেও নাহিল দিব্যি আছে। হাত দিয়ে চুল ঠিক করছে। শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বলল,
“-হ্যান্ডসাম লাগছি?’
“-হ্যাঁ? ‘
“-আরে হ্যান্ডসাম লাগছি নাকি তা জিজ্ঞেস করেছি। আচ্ছা বাদ দাও। তোমার বলতে হবে না। আমি জানি,আমি তোমার থেকেও হ্যান্ডসাম। গুড লুকিংও। সেজন্যেই তোমার থেকে আমার গার্লফ্রেন্ডের সংখ্যা বেশি। ‘
আতিয়া দরজা খুলে দিয়ে সামনে অচেনা একজনকে দেখে কর্কশ গলায় জিজ্ঞেস করল,
“-কী চাই? ‘
এতো সুন্দর সুইট একটা মেয়ের মুখে এমন ঝাঁঝালো কথা শুনে নাহিল বলল,
“- ভেতরে আসতে পারি ম্যাম?’
আতিয়া প্রথমে সা’দকে না দেখলেও পরে দেখেছে। সা’দকে দেখেই সে বলেছে,
“-আসুন।’
অনেকক্ষণ বসে থাকার পর আতিয়া নিজেই জিজ্ঞেস করল,
“-আপনার সাথে এই লোকটা কে?’
সা’দ নাহিলকে ধাক্কা দিল। নাহিল হা করে আতিয়াকে দেখে যাচ্ছিল। ধাক্কা খেয়ে সে বলল,
“-আমার কথা বলছেন? ‘ সা’দকে দেখিয়ে নাহিল বলল,
“-আমি এই ভদ্রলোকের একমাত্র ছোট ভাই।’
“-ভাই!’ মনে করার চেষ্টা করল আতিয়া। তারপর বলল,
“-ওঃ। আপনার কথা উনি বলেছিলেন। আপনি খুব মুভি দেখেন তাই না? ‘
ভাইয়ের দিকে ফিরে দাঁত বের করে হেসে নাহিল বলল,
“-আমার কথাও বলেছে দেখছি।’
“-হুম। ‘
সা’দ নাহিলকে এখানে এনে এখন পস্তাচ্ছে। নাহিলের জন্য না জানি আজ লজ্জা পেতে হয়।
বেশ কিছুক্ষণ অর্থহীন এমন অনেক কথা বলার পর নাহিল আসল কথায় আসলো। আমতা আমতা করে বলল,
“-আপনার কাছে আমরা একটা সাহায্য চাইতে এসেছি। আপনি আমাদেরকে সাহায্য করবেন? ‘
“-কেমন সাহায্য? ‘
“-আগে বলুন আপনি রাজি হবেন। ‘
নাহিল এতক্ষণে আতিয়ার সাথে ভালো খাতির জমিয়ে ফেলেছে। আতিয়া হেসে বলল,
“-আপনার ভাই আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। পারলে আমিও আপনাদেরকে সাহায্য করব।’
নাহিল তার ড্রামা শুরু করল।
“-আমাদের দাদাজান। একটা মাত্র দাদাই আমাদের। তার উপর উনি আবার হার্টের রোগী। ডাক্তার বলেছেন যেকোনো সময় উনার চিঠি এসে যেতে পারে। দাদাজানের শেষ ইচ্ছা ভাইয়ের বিয়ে করানো। ওর বৌ দেখে যাওয়া। এই নিয়ে দাদাজান হাজারের উপর মেয়ে দেখিয়েছে। কিন্তু আমার ভাইয়ের কাউকেই পছন্দ হয়নি। আল্লাহ ওকে এমন একটা মন আর দু’টো চোখ দিয়েছে যে,এই মনে কোনো মেয়ে জায়গা করে নিতে পারে না। এই চোখে কাউকে ভালো লাগে না। কিন্তু দাদাজানও নাছোড়বান্দা। উনিও প্রতিজ্ঞা করেছেন যেভাবেই হোক ভাইয়ের বিয়ে করাবেনই করাবেন। কাল রাতে ফারিহার বাবাকে বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলে দিয়েছেন। ফারিহা আবার ভাইকে ভার্সিটি লাইফ থেকে ভালোবাসে। ভাই ওকে ভালোবাসবে তো দূর সহ্যই করতে পারে না। ভাই ফারিহাকে বিয়েতে না করে দেওয়ায় দাদাজানের আবার দিলে চোট লাগে। তখন দাদাজান অসুস্থ হয়ে পড়েন।’
এক নিঃশ্বাসে সবগুলো কথা বলে নাহিল দম নিল। আতিয়া আর সা’দকে দেখে নিয়ে আবার শুরু করল,
“-আসল কথায় আসি এখন। ভাই কাল দাদাকে বলেছ ওর পছন্দের এক মেয়ে আছে। এখন কথা হচ্ছে, আমাদের এখন ভাইয়ের পছন্দের মেয়ে লাগবে। যে মেয়ে দাদাজানের সামনে ভাইয়ের বৌ হয়ে যাবে। তাই আমাদের তোমাকে চাই আতিয়া।’
আতিয়া ড্যাব ড্যাব চোখে দুই ভাইকে দেখে যাচ্ছে।
“-তুমি বয়সে আমার চার, পাঁচ বছরের ছোট হবে। তাই তুমি করে বললাম। এখন তুমি কি আমার ভাবি হবে? আমার ভাইয়ের বৌ হবে আতিয়া?’
“-অ্যাঁ!’
“-সত্যি কারের বৌ না। নাটক করতে হবে।’
আতিয়া যেন স্বপ্নের ঘোরে আছে। এভাবে কেউ ভাবি হবার জন্য প্রপোজ করে? সে একবার সা’দের দিকে তাকাল। লোকটার মুখ এমন লাল হয়ে যাচ্ছে কেন? ভাই তো কত সহজে কথাগুলো বলে দিল। নিজেকে সামলে নিয়ে আতিয়া বলল,
“-আমি! কিন্তু কিভাবে? ‘
“-তুমিই পারবে। তোমার ইনোসেন্ট মার্কা ফেস আর হাসি দেখে দাদাজান তোমাকে সন্দেহ করতেই পারবে না।’
“-হুম। কিন্তু…
“-কোন কিন্তু না। তুমি রাজি। এর বেশি আমি কিছু জানি না।’
সা’দ অবাক হয়ে তার ভাইকে দেখছে। প্রথম দিনের দেখাতেই কেমন তুমি তুমি করে বলে অধিকার জমাচ্ছে। আর সে? সে তো এক সপ্তাহের মত সাথে থেকে নামটাও জানতে পারেনি। তুমি করে ডাকা তো অনেক দূরের ব্যাপার। নাহিলের এই মিশুক স্বভাবের জন্যই হয়তো ওর এতগুলো গার্লফ্রেন্ড। যেকোনো মেয়েকে দুমিনিটে কথায় পটিয়ে ফেলতে পারবে। আতিয়া সরাসরি সা’দকে দেখে বলল,
“-বুঝলাম সমস্যাটা নিতান্তই আপনার। আমার একটা প্রশ্ন। আপনি বিয়ে কেন করতে চাইছেন না? বিয়ে করলে তো আর দাদার সামনে মিথ্যে অভিনয় করতে হবে না।’
সা’দ এবার চোখ নামিয়ে নিল না। আতিয়ার চোখে চোখে চেয়েই বলল,
“-মনের মত কাউকে পেলে নিশ্চয়ই বিয়ে করব।’
“-তার মানে আপনি এখনও মনের মত কাউকে পাননি? ‘
“-পেলে আপনার সাহায্য নিতে হতো না।’
সা’দের কথা শুনে আতিয়া মনে মনে খুশি হলো। কেন হলো সে নিজেও জানে না।
“-আমার সাহায্য পাবেন এটা ভাবলেন কী করে?’
মানে আমার কাছে কী মনে করে সাহায্য চাইতে এসেছিলেন? আমি তো না-ও করে দিতে পারতাম। এখনও পারি।’
নাহিল মাঝ থেকে বলে উঠল,
“-তাহলে আমার চোখে তুমি স্বার্থপর হয়ে যাবে। কারণ আমার ভাই তোমাকে সাহায্য করেছে। আর ভাইকে সাহায্য করার বেলায় তুমি পিছিয়ে যাচ্ছ।’
আতিয়া হেসে ফেলে বলল,
“-আমি স্বার্থপর নই। আমি আপনার ভাইকে সাহায্য করব। উনার বউ হতে আমার কোনো আপত্তি নেই। মানে বউয়ের অভিনয় করতে আরকি।’
কথাটা বলে আতিয়া চোখ নামিয়ে নিল। নাহিল ভাইকে চোখে ইশারা করে ঠোঁট নাড়িয়ে বলল,
“-কী বুঝলে? ‘
সা’দ কিছু না বলে হাসলো শুধু। যা বোঝার সে বুঝে নিয়েছে।

চলবে….
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here