#আমার_মনকাননে_ভ্রমর_তুমি
#পর্বঃ০৫
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
( আমি একটু স’ম’স্যায় আছি, তাই রি-চেক করা হয়নি। ভুল ক্রটি ক্ষমা করবেন।)
এই কনকনে শীতে মানুষের অবস্থা নাজেহাল। তাই মাহাতিব সবার একটু একটু সহোযোগিতায় অনেক শীতবস্ত্র একত্রিত করেছে। আজ গিয়েছিলো ভিন্ন জায়গায় দরিদ্র মানুষের মাঝে তা বিলিয়ে দিতে। কিন্তু তার মাঝেই আচমকা কেউ তাদের উপর আ’ক্র’মণ করে বসে। ফলে মাহাতিব সহ তার দলের আরো কিছু ছেলে আ’হ’ত হয়েছে।
আঘাত পাওয়া স্থানে মলম লাগিয়ে দিতে দিতে নিরবে কান্না করছেন সুমাইয়া নাসরিন। মাহাতিব চোখ বন্ধ করে সোফায় হেলাম দিয়ে আছে। ব্যান্ডেজ করা শেষ করে সুমাইয়া নাসরিন ছেলেকে হালকা ধাক্কা দিলেন। মাহাতিব শুধু চোখ জোড়া খুলে সেই অবস্থায় বসে রইলো।
” ব্যথা বেশি লাগছে?” ইশারায় জিজ্ঞেস করলেন তিনি।
” না মা, আমি ঠিক আছি। খুব বেশি চোট লাগেনি তো। সরে যাবে কিছুদিনের মধ্যে। আমি একটু বিশ্রাম নিতে যাচ্ছি, তুমি চিন্তা করোনা।”
ক্লান্ত শরীরটা নিয়ে মাহাতিব ধীরে সুস্থে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
ছেলের অবস্থা দেখে সুমাইয়া নাসরিনের যেমন কষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে প্রুচর রাগ হচ্ছে। সেই রাগটা শুধু এবং শুধুমাত্র মাহাতিবের পিতা শান্ত হোসেনের উপর হচ্ছে। তিনি গম্ভীরভাবে সোফা বসে শান্ত হোসনের ফেরার অপেক্ষা করছেন।
.
.
” কি গো বিবিজান, গোমড়া মুখ করে বসে আছো যে? মাহাতিবের জন্য চিন্তা হচ্ছে বুঝি? আরে এতো চিন্তা করোনা। রাজনীতিতে এসব একটু আধটু হয়ে থাকে। এসব বড় কোন ব্যপার না।” ঘড়ি খুলে টেবিলে রেখে বললেন শান্ত হোসেন।
স্বামীর গা-ছাড়া কথা শুনে সুমাইয়া নাসরিন আরো রেগে গেলেন। অবশেষে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে টেবিলে থাকা সিরামিকের মগটা ছুঁড়ে মারলেন। মূহুর্তেই সেটি কয়েক খন্ডের বিভক্ত হয়ে গেলো।
” তুমি এতোটা পা’ষ’ণ কি করে হলে? ছেলেটাকে কি তুমি মেরে ফেলবে? নিজে তো এই পথে পা বাড়িয়েছো আমি কিছু করতে পারিনি। এখন আমার ছেলেটাকেও কেন এই বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছো? এতোটা পাষণ কেন তুমি? ছেলের জন্য কি একটুও মায়াদয়া হয় না তোমার? আমার ছেলেটাকে ওরা কিভাবে আঘাত করেছে, সেখানে তুমি বাবা নিয়ে কি করে এতোটা শান্ত থাকতে পারছো?”
ইশারায় নিজের কথা ব্যক্ত করলেন সুমাইয়া নাসরিন। নিজেকে আজ আরো বেশি অসহায় লাগছে। আজ যদি তিনি কথা বলতে পারতেন তাহলে চিৎকার করে বলতেন, ” আমার ছেলেকে এসবে জড়িও না তুমি। দোহাই লাগি তোমার।” কিন্তু মাতৃভাষায় নিজ কন্ঠে যেভাবে মনের কথাগুলো ব্যক্ত করার সম্ভব, ইশারায় কি আধো তা শতভাগ সম্ভব? সুমাইয়া নাসরিনের তা মনে হয়না।
তবে তিনি মুখে না বললেও শান্ত হোসেন ঠিকই বুঝতে পেরেছেন। তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। সাবধানে স্ত্রীকে নিয়ে বিছানা বসলেন, মাথা নিজের বুকের রাখলেন।
” সুমাইয়া তুমি মনে করছো আমার কষ্ট হচ্ছে না? তুমি সবসময় আমাকে ভুল বুঝে গেলে সুমাইয়া। মাহাতিব আমারো সন্তান, তার জন্য আমারো কষ্ট হয়। কিন্তু মাহাতিব যদি রাজনীতিতে যোগদান না করে তাহলে তার ভবিষ্যত জীবন কষ্ট হয়ে যাবে। আমার শক্রর অভাব নেই, কিন্তু পাওয়ার থাকার কারণে তারা বেশি কিছু করার সাহস পাইনা। আমি যখন থাকবোনা তখন তারা তোমাদের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে এটি অজানা নয়৷ তাই এই ক্ষমতা আমাদের ধরে রাখতে হবে, না হলে ভবিষ্যতে অনেক বড় বিপদ হতে পারে।”
স্বামীর যুক্তি মোটেও সুমাইয়া নাসরিন মানলেন না। তিনি মনে করছেন এটা শুধু একটা বাহানা। ছেলের ভবিষ্যত চিন্তা করে ঢুকরে কেঁদে উঠলেন তিনি।
.
.
বেশ কয়েকদিন রাতের বেলা ঘুমোতে পারছেনা হেমসিনী। তাই বাধ্য হয়ে আজ ঘুমের ঔষধ খেয়েছে সে। গভীর ঘুমে আচ্ছন হয়ে আছে সে। অন্যদিকে বেশ অনেক্ক্ষণ যাবৎ তার ফোনটা বেজে চলেছে। তবে অতিরিক্ত ঘুমের কারণে তার ফোন তুলতে ইচ্ছে করছেনা।
প্রায় রাত বারোটার দিকে মাহাতিবের ঘুম ভেঙেছে। ফ্রেশ হয়ে সে সর্বপ্রথম হেমসিনীকে ফোন দিলো। তবে টানা অনেক্ক্ষণ ফোন দেওয়ার পরেও যখন হেমসিনী ফোন রিসিভ করলোনা তখন তার খানিকটা টেনশন হলো। কারণ হেমসিনী কখনোই এরকম করেনা। দ্রুত গায়ে চাদরটা পেঁচিয়ে নিলো সে। গাড়ির চাবি নিতে গিয়ে তার খেয়াল হলো ঘরে কোথাও চাবির গুচ্ছটা নেই। পুরো ঘর খুঁজেও সে গাড়ি কিংবা বাইকের চাবি পেলোনা।
নিঃশব্দে ড্রইংরুমে একস্ট্রা লুকিয়ে থাকা চাবিটা নিতে গিয়ে দেখতে পেলো সেখানেও চাবিটা নেই। এবার মাহাতিবের রাগ হতে লাগলো।
” কি হচ্ছে এগুলো? একটা চাবিও নিজের স্থানে নেই? কোথায় গেলো সব চাবি?” নিচুস্বরে নিজেকে বললো মাহাতিব। আচমকা টেবিলে কড়াঘাতের শব্দ পেয়ে পেছন ফিরে তাকালো সে। গায়ে চাদর পেঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন সুমাইয়া নাসরিন।
” এতো রাতে এখানে কি? খিদে পেয়েছে?” ইশারায় প্রশ্ন করলেন তিনি।
” আমার গাড়ির চাবিগুলো কোথায় জানো? খুঁজে পাচ্ছিনা।”
” কেন? চাবি দিয়ে কি করবে?”
” কাজ আছে আম্মু। তুমি জানো কোথায়? প্লিজ জেনে থাকলে তাড়াতাড়ি দাও।”
” চাবি আমার কাছে। এখন আমি চাবি ফেরত দেবোনা। এতোরাতে এই অসুস্থ শরীর নিয়ে বাইরে যেতে পারবেনা তুমি। চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো।”
” আম্মু প্লিজ দাও। আমি জলদি ফিরে আসবো।”
” মাহাতিব ঘুমাতে যাও। আর কোন কথা আমি শুনতে চাইনা।”
সুমাইয়া নাসরিন চলে গেলেন। মাহাতিব চাবি না পেয়ে হতাশ হলো, পরমুহূর্তে ভাবলো হেঁটে হেমসিনীর বাড়িতে চলে যাবে। কিন্তু তার সে ভাবনাও বিফলে গেলো। বের হতে গিয়ে সে বুঝতে পারলো সদর দরজাও তার মা লক করে রেখেছে। চরম হতাশ হয়ে না চাইতেও মাহাতিব ঘরে ফিরে এলো। পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার ফোন করেও কেন লাভ নেই।
” হেমসিনী আপনি ঠিক আছেন তো? আজ তো আন্টিও বাড়িতে আছে, কোন সমস্যা হলে তো এতোক্ষণে জানতে পেরে যেতাম। তাহলে কি আপনি ইচ্ছে করে আমার ফোন ধরছেন না? হেমসিনী যদি এরকমটাই হয়ে থাকে তাহলে পরবর্তীতে কিন্তু মোটেও ভালো হবেনা।”
.
.
বাড়ি থেকে বের হতেই মাহাতিবকে দেখে চমকে গেলো হেমসিনী। সে আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিলো। স্বাভাবিকভাবে পথযাত্রী মানুষরা একপলক মাহাতিবকে দেখতে ভুলছেন না। হেমসিনী মাহাতিবকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যেতে চাইলো। তবে মাহাতিব কি আর তা হতে দেবে? সে দ্রুত হেমসিনীর সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো। তাকে দেখে হেমসিনী হাঁফসাঁফ করছে।
” আমার দিকে তাকান হেমসিনী।” স্বাভাবিকভাবে বললো সে। হেমসিনী একটা একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে মাহাতিবের দিকে তাকালো।
” আপনি আমার বাড়ির সামনে কেন এসেছেন মাহাতিব? কাল নাকি আপনার উপর হামলা করা হয়েছে। আপনার তো এখন বিশ্রাম নেওয়া উচিত।”
” কাল রাতে কোথায় ছিলেন?”
” বাড়িতেই ছিলাম।”
” তাহলে আমার ফোন রিসিভ করেননি কেন? এমনকি সকালেও কল ব্যাক করেননি। এরকম করার কারণটা কি জানতে পারি?”
” আমি ঘুমিয়ে ছিলাম।”
” সকালেও খেয়াল করেননি? আমি আপনাকে ৪৭ টা কল করেছিলাম, তার মধ্যে একটাও কি আপনি শুনতো পাননি? নাকি শুনেও না শোনার ভান করেছিলেন? আর যাইহোক অন্তত ফোন করে রিসিভ করে এতটুকু বলতেন আপনি ঘুমাচ্ছেন কিংবা আপনার কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা কিংবা একটা ছোট মেসেজ। আমি কি এতোটাই অপদার্থ যে একটা ছোট মেসেও আপনার থেকে পেতে পারিনা? জানেন আপনি আমি কতটা চিন্তায় ছিলাম? কোন ধারণা আছে আপনার? আম্মুর জন্য না হলে আমি কাল রাতেই আপনার বাসায় চলে আসতাম।”
মাহাতিবের শেষোক্ত কথাটি শুনে হেমসিনীর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। সে মনে মনে মাহাতিবের মা অসংখ্য ধন্যবাদ জানালো।
” আমি কালকে ঘুমের ঔষধ খেয়েছিলাম, তাই শুনতে পাইনি। আর পেলেও শক্তিটা আমার ছিলোনা।”
মাহাতিবের মুখশ্রীতে এতোটা সময় থাকা গম্ভীর্যতা নিমেষেই উবে গেলো এবং দুঃশ্চিন্তা এসে ভর করলো।
” ঘুমের ঔষধ! আমি ঠিক আছেন তো হেমসিনী? আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে? আপনাকে কোথাও যেতে হবেনা। বাড়িতে যান, নোট’স আমি সংগ্রহ করে দেবো।”
” শান্ত হোন মাহাতিব। আমি ঠিক আছে। এখন আমাকে যেতে হবে, না হলে ম্যাম বকা দেবেন। আপনি বাড়ি ফিরে যান, আপনার শরীর অসুস্থ।”
মাহাতিব চেয়েও হেমসিনীকে আটকাতে পারলোনা। মাহাতিবের মাথায় এখন শুধু একটাই জিনিস ঘুরপাক খাচ্ছে “ঘুমের ঔষধ”।
চলবে…..