আমার মনকাননে ভ্রমর তুমি পর্ব -০৮

#আমার_মনকাননে_ভ্রমর_তুমি
#পর্বঃ০৮
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

নিজের দলের কিছু ছেলেদের অমানুষের মতো নি’যা’র্তন করছে প্রণয় শিকদার।

” শা’লা জা’নোয়া’র, অকর্মের ঢেকি। তোদের আমি এতোগুলা টাকা কি এমনি এমনি দিয়ে থাকি? এতোগুলা টাকা দি যেন ম’রে হলেও আমার কাজ তোরা করিস কিন্তু তোদের জন্য আরো একটা হসপিটাল সবার সামনে প্রকাশিত হয়ে গেলো। আমার কতগুলো টাকা নষ্ট হলো কোন ধারণা আছে তোদের? তোদের বিক্রি করেও একভাগ টাকা আমি পাবেনা।”

প্রণয় শিকদারের মাথা কাজ করছেনা এখন। সে পারছেনা সবকিছু জ্বা’লিয়ে দিতে।

” প্রণয় শান্ত হও। এতোটা অস্থির হলে আবারো বিপদ হবে। আমার একটা অসাবধানতার জন্য আমি ভোটের প্রার্থী থেকে বাতিল হয়ে গিয়েছিলাম। সামনে ভোট এখন তোমাকে অনেক অনেক সর্তক থাকতে হবে। একটা ভুল আমাদের এতোবছরের প্রতিক্ষাকে নিমেষেই শেষ করে দিতে পারে।”

” বাবা আমি পারছিনা শান্ত হতে। আরো একটা হসপিটালের কথা ফাঁস হয়ে গিয়েছে, আবারো কতগুলো টাকা লস হয়েছে। এই নিয়ে চারটা হসপিটাল ধরা পড়ে গিয়েছে। এখন কেউ যদি জানতে পেরে যাই এসবের পেছনে আমি আছি তাহলে…..”

” চুপ করো প্রণয়। একদম বা’জে কথা বলবেনা। তোমাকে এসবে মনোযোগ দেওয়ার প্রয়োজন নেই, তুমি এখন শুধু এবং শুধু মাত্র ভোটে মনোযোগ দাও। এই ব্যপারটা আমি দেখছি। এসব থেকে আপাতত তুমি দূরে থাকো।”

প্রিতম শিকাদের কথায় প্রণয় কিছুটা শান্ত হলো। সে নিজের দলবলকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। প্রিতম শিকদার ভাবতে লাগলেন তিনি কি করবেন।
.
.

” দাদামশাই আমার কেন যাওয়া প্রয়োজন? খুব কি দরকার যাও? তোমাকে যেতে বলেছে তুমি যাও আর হিমাল তো যাচ্ছে তোমার সাথে।”

” তুমি কেন যেতে চাইছোনা হেমসিনী? এমন তো না যে অনেক দূরে, কাছেই তো। তাহলে যেতে সমস্যা কোথায়?”

” হেমসিনী দাদামশাই যখন এতো করে বলছেন তাহলে যাও। কাছে আছে, কিছুসময়ের মধ্যে তো চলেই আসবে।”

” কিন্তু মা…..”

” হেমসিনী আমি একবার বলেছি তোমাকে। যাও তৈরি হয়ে না, বাবা তোমার জন্য অপেক্ষা করছেন।” বেশ রাগী কন্ঠে বললেন প্রীতি আহমেদ। ইচ্ছে না থাকা স্বত্বেও হেমসিনী তৈরি হয়ে নিলো।

দাদার হাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে হিমাল। হরেক রকমের কথার ঝুলি নিয়ে সে বেরিয়েছে। নাতির কথায় আকবর আহমেদ বিরক্ত হচ্ছেন না উল্টো আরো উৎসাহ প্রদান করছে।

তবে এসবে হেমসিনীর মনোযোগ নেই। তার ইচ্ছে করছে পেছন থেকেই টুপ করে পালিয়ে যেতে কিন্তু সেই উপায় নেই। অবশেষে হাজারো ভাবনা চিন্তা করতে করতে তারা সুবিশাল একটা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো। সাদা রঙের বাড়িটিকে দেখে সবসময়ের মতো হেমসিনীর হৃদয়স্পন্দন বেড়ে গেলো।

তারা গেটের সামনে আসতেই গার্ড তাদের গেট খুলে দিলো। সদর দরজায় আগে থেকেই শান্ত হোসেন দাঁড়িয়ে ছিলেন। মূলত তিনি তাদেরই প্রতিক্ষায় ছিলেন। আকবর আহমেদকে দেখে তিনি প্রথমে সালাম করলেন।

” কেমন আছেন স্যার? অনেকদিন পর আবারো আপনাকে দেখার সৌভাগ্য হলো আমার।”

আকবর আহমেদ শান্ত হোসেনের মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে বললেন,

” আমি ভালো আছি শান্ত। তুমি এবং তোমার পরিবার কেমন আছে? তোমার রাজনীতি কেমন চলছে?”

” সবাই ভালো আছে স্যার। আপনারা আসুন, ভেতরে বসে কথা বলি।”

হেমসিনীর দাদু আকবর আহমেদ একজন শিক্ষক ছিলেন এবং শান্ত হোসেন ছিলেন ওনার ছাত্র। পড়াশোনার পাঠ শেষ করার পরেও শান্ত হোসেন ওনার গৃহশিক্ষকে এখনো সম্মান করেন। আকবর আহমেদের সাথে শান্ত হোসনের বাবাও বেশ ভালো একটা সুসম্পর্ক ছিলো।

তাদের তিনজনকে ভেতরে নিয়ে বসিয়ে শান্ত হোসেন ছুটলেন রান্নাঘরের দিকে। কিছুসময় পরেই তিনি সুমাইয়া নাসরিনকে নিয়ে এলেন। সুমাইয়া নাসরিন মাথায় ঘোমটা নিয়ে ওনাকে ইশারায় সালাম দিলেন।

” কেমন আছো বউমা? তোমার শরীর ভালো আছে তো?”

” জ্বি চাচা আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?”

” বুড়ো বয়সে আর কতই ভালো থাকি বলো। তবে তোমাকে দেখে যা অসুখ ছিলো তাও সরে গিয়ে।”

আকবর আহমেদের কথা শুনে সুমাইয়া নাসরিন হালকা হেসে হেমসিনীর পাশে গিয়ে বসলো।

মাহাতিবের বাড়িতে হেমসিনী দুই কি তিনবার এসেছিলো, সে চাইনা এই বাড়িতে এসে মায়া আরো বাড়িয়ে দিতে।

” কেমন আছো মা? এতোদিন পর আবারো এলে আমাদের বাড়িতে। তুমি আসোনা কেন আমাদের বাড়িতে? এতো এতো গার্ড দেখে ভয়ে আসেনা নাকি অন্য কোন ব্যপার?” ইশারা বললেন তিনি। সুমাইয়া নাসরিনের কথা শুনে হেমসিনী একটু ঘাবড়ে গেলো তবে পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিলো।

” না না আন্টি সেরকম কিছু না। এমনিতেই আসা হয়না, আমার কারো বাসায় যেতে খুব একটা ভালো লাগেনা।”

নাসরিন বেগম আবারো কিছু বলবেন তখনই উপর থেকে কারো কন্ঠস্বর শুনে বসার ঘরে থাকা প্রতিটি মানুষ চুপ হয়ে গেলো।

ঘুম ঘুম চোখে, এলোমেলো চুল নিয়ে নিচে নেমে এসেছে মাহাতিব। দেখেই বোঝা যাচ্ছে বিছানা থেকে সোজা নিচে চলে এসেছে। মাহাতিব এখনো লক্ষ্য করেনি তার মানে কে বসে আছে তবে হেমসিনীর অপলক দৃষ্টিতে মাহাতিবকে দেখে চলেছে।

” মাহাতিব এদিকে এসো। দেখো আকবর স্যার এসেছেন।”

বাবার কথা শুনে মাহাতিবের চোখ থেকে সব ঘুম উবে গেলো। চট করে চোখ খুলে সামনে তাকালো। ঘুম থেকে উঠেই অপ্রত্যাশিত কিছু দেখবে তা মাহাতিব তখনই কল্পনা করতে পারেনি। সে এতোটাই অবাক হয়েছে যে তার কিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখানো প্রয়োজন তাই সে ভুলে গিয়েছে। মাহাতিবকে এভাবে তাকিয়ে তাকাতে দেখে হেমসিনী দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো।

” মাহাতিব এদিকে এসো। স্যারের সাথে কথা বলো।”

মাহাতিব একদম হেমসিনীর সামনাসামনি এসে বসলো৷ আকবর আহমেদের সাথে কুশল বিনিময় করে অন্য কথা বলতে লাগলো তারা। তবে মাহাতিব কথা বললেও তার চোখ এবং মনোযোগ সম্পূর্ণ হেমসিনীর দিকে এবং বিষয়টি হেমসিনীও বুঝতে পারছে। মাহাতিবকে নিজের সামনে বসা দেখে উসখুস করছে হেমসিনী, অদ্ভুত অনূভুতি হচ্ছে তার।

একা বসে থেকে থেকে এবার বড্ড বিরক্ত রাখছে হিমালের। সে আস্তে করে হেমসিনীর পাশে ঘেঁসে বসলো।

” আপু আমার ভালো লাগছেনা। আমি চলে যাই?”

হিমালের কথা মুখে হেমসিনী খুশি হয়ে গেলো।

” চলে যাবি?”

” হুম। বড়রা সবাই নিজেরা কথা বলছে, আমার একা একা ভালো লাগছেনা।”

হেমসিনী তার দাদুকে চলে যাওয়ার কথা বলবে কিন্তু তার আগেই মাহাতিব হিমালকে উদ্দেশ্য করে বললো,

” হিমাল তোমার ভালো লাগছেনা? একা লাগছে?”

” হুম।” মাথা নাড়িয়ে বোঝালো সে।

” চলো তাহলে তোমাকে বাগান থেকে ঘুরিয়ে আনি, ওখানে দোলনা আছে। বড়রা কথা বলুক, তুমি না হয় দোলনায় চড়লে।”

হিমাল দ্রুত গতিতে সোফা থেকে লাফিয়ে নেমে পড়লো।

” হেমসিনী আপনি একা কি করবেন? চলুন আপনিও।”

” না আমি ঠিক আছি।”

” হেমসিনী যাও ভালো লাগবে।”

শান্ত হোসেনের কথার উপর হেমসিনী কিছু বলতে পারলোনা বিদায় চুপচাপ সেও চলে গেলো। বাচ্চারা চলে যাওয়ার পর সুমাইয়া নাসরিন রান্নাঘরে চলে গেলেন।

” তাহলে ছেলেকেও এই পথে নামালে শান্ত। সব ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত নিয়েছো তো?”

” জ্বি স্যার। আমি সবদিক চিন্তা করে তবেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

” যাইহোক তোমাদের পারিবারিক ব্যপার। তবে শিক্ষক হিসেবে আমি বলবো চাইলে আরেকবার ভেবে দেখতে পারো। ভোটের এখনো কিছুদিন বাকি আছে। এরপর মাহাতিব একেবারে এই পথে পা বাড়িয়ে ফেলবে তখন চাইলেও কিছু করা সম্ভব হবেনা। তুমিও জানো এবং আমিও জানি রাজনীতি কতটা বিষাক্ত৷ আমি চাইনা আমি যা হারি’য়ে’ছি তুমিও তাই হারাও।”

আকবর সাহেবের কথা শুনে শান্ত হোসেনের মুখশ্রীতে থাকা খুশি ভাবটা মূহুর্তে উবে গেলো।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here