আমার_পূর্ণতা #রেদশী_ইসলাম পর্বঃ ১৭

#আমার_পূর্ণতা
#রেদশী_ইসলাম
পর্বঃ ১৭

” ভুল না ঠিকই বুঝেছি ”

” দেখ আমি বলতে চেয়েছিলাম ওনাকে ইভেন আমি ওনার ঘরেও গিয়েছিলাম বলার জন্য। কিন্তু যখনই বলতে যাবো সেই মুহুর্তে বড় মা চলে এসেছিলো ঘরে তাই আর বলতে পারি নি।”

” আচ্ছা এক মিনিট আমি যে তাফসির ভাইকে মেসেজ দিয়েছি এটা তুই কি করে জানলি? আমি তো একবার ও বলি নি তোকে। তাহলে?”

” তাফসির ভাই বলেছে ”

” তাফসির ভাই? ”

” হ্যাঁ। সকালে দেখা হয়েছিলো ওনার সাথে। তখনই জানালো। আর বললো যেনো ওনাকে আর ডিস্টার্ব না করিস। ওনার গার্লফ্রেন্ড আছে ”

” কি বললি? সত্যি ওনার গার্লফ্রেন্ড আছে? ”

” হ্যাঁ ”

প্রাচুর্যের এক লাইন বানানো কথা বিশ্বাস করে নিলো প্রিয়তি। মুখ টা কাঁদো কাঁদো করে বললো—

” দোস্ত এই নিয়ে দ্বিতীয় বার আমার মন টা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো। এই কষ্ট আমি কোথায় রাখবো?”

” নর্দমায় ”

” কি বললি তুই? ”

প্রাচুর্য প্রিয়তির পাশে বসে কাঁধে হাত বুলাতে বুলাতে কথা ঘুরিয়ে শান্তনা দিয়ে বললো—

” থাক দোস্ত কান্না করিস না রে। আমি তোর জন্য শাহরুখ খানের মতো কাউকে এনে দেবো। একবারে বিয়ে করে নিস।”

” আমি ছ্যাকা খেলাম আর মজা নিচ্ছিস তুই?”

” একদম না। আমি কি তোর সাথে মজা নিতে পারি বল?”

” মজা নিয়ে বলছিস মজা নিতে পারিস না। একদিন আমার ও সময় আসবে দেখিস ”
.
.
.
.
দেখতে দেখতে তাফসিরের বাংলাদেশ আসার একমাস পূর্ণ হলো। এবার চলে যাওয়ার পালা। তিনদিন পর অর্থাৎ সোমবার তার ফ্লাইট। বাড়ির কারোরই তেমন মন মেজাজ ভালো না শুধু ইশতিয়াক চৌধুরী বাদে। তার অভিব্যক্তি বোঝা যাচ্ছে না। তবে কেউ না জানলেও সে তো জানে তার মনের চাপা কষ্ট। এইযে একমাসে মাত্র ছেলের সাথে মিনিট দুয়েক কথা হয়েছে তাও এতো গুলো বছর পর। তিনি প্রকাশ করতে পারছেন না তার অভিব্যক্তি। ছেলেও তাকে দেখলে পুরোপুরি এড়িয়ে চলেছে। সে ভেবেছিলো তাফসির হয়তো সব অভিমান ভুলে তার কাছে ক্ষমা চাইতে আসবে কিন্তু না তার কিছুই হয় নি। অন্যদিকে মিসেস ফারাহর অবস্থা শোচনীয়। তিনি কান্না কাটি করে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছেন যখন শুনেছেন তাফসির আবার চলে যাবে কানাডা। তিনি বার বার করে ইশতিয়াক চৌধুরীকে বলছেন যাতে ছেলেকে আটকায়। কিন্তু এখানে ইশতিয়াক চৌধুরীর ই বা কি করার। এক পর্যায়ে তিনি বিরক্ত হয়ে স্ত্রীকে ধমক লাগিয়ে বললেন—

” আহ চুপ করো তো। কানের ধারে এতো ফ্যাচফ্যাচ করো না। এখানে আমার কিছুই করার নেই।”

” তুমি তবুও একটু চেষ্টা করে দেখো না। যদি কোনোভাবে ওকে আটকানো যায়। এতো গুলো বছর পর ছেলেটা বাড়িতে আসলো। আর ছাড়তে ইচ্ছা করছে না গো। মেয়েটা ও তো শশুর বাড়ি চলো গেলো। আমার যে সবদিক একদম খালি হয়ে যাবে। ”

” তাহলে যাও না। নিজে যেয়ে বলো। আমাকে টানছো কেনো? তোমার ছেলে তো কথায় বলে না আমার সাথে। ”

” আমার ছেলের দোষ দিচ্ছো কেনো? তুমি মনে হয় অনেক কথা বলো? সেই কবে কি না কি হয়েছে তা নিয়ে এখনো পরে আছো ”

” ওর তো উচিত ছিলো আমার কাছে এসে ক্ষমা চাওয়ার। কিন্তু ও এসেছে একবার ও? নিজের ইগো নিয়েই আছে।”

” তুমি তোমার ইগো নিয়ে নেই? তুমি তো পারতে ওকে ভালোবেসে বুকে টেনে নিতে। আমার ছেলে তো ফেরাতে পারতো না। সে না বললেও আমি তো জানি আমার ছেলে কতোটা কষ্ট পাই। কানাডাতে ও অসুস্থ হলেও সেবা যত্ন করার সুযোগ টুকু পাই না আমি ”

” তাহলে বলো ছেলেকে থেকে যেতে। বাকিটা আমি দেখছি ”

মিসেস ফারাহ কান্না থামিয়ে কিছু একটা ভাবলেন তারপর ইশতিয়াক চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললেন—

” আচ্ছা ওর বিয়ে দিই? তাহলে যদি বউয়ের টানে আসে একটু ”

” কিসব উলটা পালটা কথা বলছো? বাবা-মায়ের টানেই আসে না আর বউয়ের টানে আসবে। হুহ কথা খুঁজে পেলে না আর। এসব চিন্তা মাথা থেকে বের করো ”

” আরে আসবে আসবে। দেখবে তুমি? শুধু আসবেই না বরং পার্মানেন্টলি এখানেই চলে আসবে আর আমাদের বিজনেসে জয়েন্ট ও করবে। এমন বুদ্ধি করেছি না, না এসে উপায় ই নেই ”

” আচ্ছা বুঝলাম। কিন্তু বিয়ে তো আর হাতের মোয়া না যে চাইলেই হয়ে যাবে। মেয়ে ও তো খুঁজতে হবে নাকি। আর তিনদিন পরেই যাচ্ছে ও চলে তাহলে কখন খুঁজবে আর কখনই বা বিয়ে দিবে?”

” মেয়ে খোঁজা লাগবে না। আমার সিলেক্ট করায় আছে”

” কি বলছো? কে সে? ”

” আমাদের প্রাচুর্য ”

” মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোমার? তাছাড়া ও এখনো রিয়ার বিয়ে হয় নি তার আগে প্রাচুর্যের কিভাবে বিয়ে দি? আর তোমার ছেলে জীবনেও মানবে না এ বিয়ে ”

” আমার মাথা খারাপ হয় নি। ঠিকই আছে। আর আমার ছেলে মানবে না বলছো? এই কথা বললে দেখবা খুশিতে উলটো ও পাগল ই হয়ে যাবে ”

” মানে? ”

” মানে তাফসির প্রাচুর্যকে ভালোবাসে ”

” কি বলছো তুমি? এট্যাক ফ্যাটাক করিয়ে দিবে দেখছি। এতো কথা কেমনে জানো তুমি? বিবিসি নাকি?”

ইশতিয়াক চৌধুরীর কথায় মিসেস ফারাহ শব্দ করে হেঁসে বললেন—

” আরে না। তোমার ছেলেই বলেছে আমাকে। যে সে প্রাচুর্যকে ভালোবাসে। নাহলে আমার এতো সাহস আছে নাকি এমন কথা বলার ”

———————————————

রাত ১০ টা বেজে ৩০ মিনিট। প্রাচুর্য মাত্রই পড়ার টেবিল থেকে উঠলো। এতোক্ষণ এক টানা বসার দরুন কোমরে ব্যাথা করছে তার। তাই বিছানায় যেয়ে শুয়ে ফোন হাতে নিলো। ফোনের স্ক্রিন অন করতেই দেখলো মিনিট পাঁচেক আগের মেসেজ। মেসেজটি পাঠিয়েছে তাফসির। লিখেছে—

” একটা কাজ দিয়েছিলাম করেছিস?”

” হ্যাঁ ”

” কি বলেছিস? আচ্ছা থাক এখানে বলতে হবে না। আমার রুমে আয় ”

তাফসিরের কথায় প্রাচুর্য উঠে দারালো। যদিও তার এক পা ও হাটতে ইচ্ছা করছে না তবুও তাফসির ডেকেছে যখন যেতে তো হবেই। তাই আর কিছু না বলে তাফসিরের রুমের সামনে আসলো। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই দেখলো সোফায় বসে ফোন টিপছে সে। প্রাচুর্যকে দেখতেই ইশারায় পাশে বসতে বললো। প্রাচুর্য যেয়ে বসতেই তাফসির পুনরায় আগের প্রশ্ন টা জিজ্ঞেস করলো। প্রাচুর্য সোফায় আসন গোড়া দিয়ে বসে বললো—

” বলেছি আপনাকে যেনো আর ডিস্টার্ব না করে। তাছাড়া ও আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে। ”

প্রাচুর্যের কথায় তাফসির ঠোঁট কামড়ে হেঁসে বললো—

” বাহ দিন দিন দেখছি তোর মাথায় বুদ্ধি হচ্ছে। গুড ভেরি গুড। কি সুন্দর বানিয়ে বানিয়ে বলে দিলি আমার গার্লফ্রেন্ড আছে। আই’ম ইমপ্রেসড। ”

” বানিয়ে বানিয়ে বললেও কথা তো সত্যি। আপনার তো গার্লফ্রেন্ড আছেই। তাও দুইটা। ”

” দুইটা?”

প্রাচুর্যের কথায় তাফসিরের মনে পরলো আগেরদিনের কথা। সেদিন ও প্রাচুর্য একই কথায় বলেছিলো। তবে সেদিন তাফসিরের রাগ হলেও আজকে কেনো জানি হচ্ছে না। প্রচুর হাসি পাচ্ছে তার। তাফসির হাসি চেপে বললো—

” আচ্ছা আজ তোকে ক্লিয়ার করছি সব। শোন তুই যাকে দেখেছিলি যে মেসেজে আই লাভ ইউ লিখেছে। সে মোটেও আমার গার্লফ্রেন্ড নয়। সে আমার কলিগ। পছন্দ করে আমাকে। তবে আমি করি না। সেদিন প্রপোজ করেছিলো আমাকে। যদিও আমি ডাইরেক্টলি নিষেধ করে দিয়েছিলাম। তবে তুই শুধু আই লাভ ইউ টুকু দেখেই আমাদের নিয়ে এতো কিছু ভেবে ফেলেছিস।”

” আর দ্বিতীয় জন? যার সাথে চট্টগ্রামে কথা বলছিলেন সে?”

” ওর নাম ইনশায়া। আমরা পূর্ব পরিচিত। আমার এক বন্ধুর গার্লফ্রেন্ড ছিলো। তবে কোনো কারন বসত ওদের ব্রেকআপ হয়ে যায়। আর ওর বাড়ি যে ওখানে সেটাও আমি জানতাম না। ওইদিন সকালে জগিং করতে বের হয়েছিলাম। তখন হঠাৎ করেই ওর সাথে দেখা। আমরা একই স্কুলের ছিলাম। তবে এসএসসির পর ও চট্টগ্রাম শিফট হয়ে যায়। তখন থেকেই ওখানে ”

তারপর তাফসির একটু থেমে আবার বলতে শুরু করলো—

” অনেকদিন পর দেখা হয়েছে বলে বিভিন্ন বিষয়ে গল্প করছিলাম। আর ছোট মা সেটা দেখেই ভুল বুঝেছে আমাদের। ভেবেছে আমরা রিলেশন করি। ”

” মায়ের কথা জানলেন কিভাবে? ”

” রিয়ার কাছে শুনেছি। পরে ও সবই বলেছিলো আমাকে। আর আমিও ছোট মা কে বুঝিয়ে বলেছিলাম সব। এবার বল তুই বুঝেছিস কিনা ”

তাফসিরের কথায় প্রাচুর্য উপর নিচ মাথা নাড়লো। যার অর্থ হ্যাঁ বুঝেছে সে। তা দেখে তাফসির বিরবির করে বললো— ” বলদ ”

কিন্তু কথাটা তাফসির বিরবির করে বললেও পাশে বসে থাকার দরুন প্রাচুর্য স্পষ্টই শুনলো কিন্তু তবুও কিছু বললো না। কারন আজকে প্রাচুর্য আজকে রিয়েলাইজ করলো যে সে আসলেই বলদ। নাহলে অর্ধেক কাহিনী জেনে কাউকে এমন ব্লেম দিতো না।
.
.
.
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করছিলো বিভিন্ন বিষয়ে। এটা তাদের প্রতিদিনের ই কাজ। বাড়ির তিন কর্তা সহ বাড়ির কর্তী সবাই-ই শামিল হয় এ গল্পে। সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে এই সময় টুকুই পান তারা গল্প করার জন্য। এটাকে ফ্যামিলি আড্ডা ও বলা যেতে পারে। এক সময় মিসেস ফারাহ স্বামী ইশতিয়াক চৌধুরীকে কেনু দিয়ে গুতা দিলেন। ইশতিয়াক চৌধুরী চশমা উপরে ঠেলে গলা ঝেরে সবার মনোযোগ কারলেন। প্রাচুর্য ও তাফসিরের দিকে এক পলক তাকালেন। সাথে সাথে ইনসাফ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললেন—

” ইনসাফ? আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই। জানি না কথাটা তুমি কিভাবে গ্রহণ করবে। তবে না বলে আর থাকতে পারলাম না। বলতে পারো নিজের স্বার্থের জন্যই বললাম”

ইনসাফ চৌধুরী চিন্তিত মুখে বললেন—

” কি বলবেন ভাইজান বলুন না। এতো সঙ্কোচ করবেন না”

” তোমার কাছে আমি কিছু চাইবো। দেবে?”

” অবশ্যই ভাইজান। আপনি আমার কাছে কিছু চাইবেন আর আমি দেবো না তা তো হতেই পারে না। আমার সাধ্যের মধ্যে থাকলে দেবো ইনশাআল্লাহ। এবার বলুন তো”

” আমি তোমার মেয়েটা কে চাই। আমার ছেলের বউ করে”

#চলবে

[ মতামত জানাবেন ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here