#আমি_গোপনে_ভালোবেসেছি
#পর্বঃ৬
#writer: Mishmi_muntaha_moon
কেমন যেনো ভয় ভয় করছে তারউপর ভুতুরে ভাবে ফোনের রিং বেজে উঠলো।আর বারান্দায় দারালাম না রুমে গিয়ে ফোন খুজতে লাগলাম।খাটের উপর পরে থাকতে দেখে ফোন হাতে নিতেই আবারও বাজতে লাগলো। নাম্বারটা সেভ করা না কিন্তু চেনা চেনা লাগছে।ধরতেই ওইপাশ থেকে কঠিন গলায় বলে উঠলো
” মিস ফিয়ানা, নিচে আসো”
মিস ফিয়ানা সম্বোধন শুনেই বুঝে গেলাম কে।
” মানে আপনি কি নিচে?কেনো?”
আমার প্রতিউত্তরে তারাতারি নিচে আসার তাড়া দিয়ে কল কাটলো।
কিন্তু আমার মনে একটা প্রশ্ন ঘুরছে উনার কি ভয় নেই নাকি উনি জানতো আমার আম্মু আব্বু বা কেউ বাড়িতে নেই।
আর কিছু ভাবলাম না।ওরনা দিয়ে মাথা ঢেকে মোবাইল রেখেই দরজা তালা দিয়ে সিরিতে বেয়ে নিচে নামতে লাগলাম।
নিচে নেমে মেইন গেটের বাহিরে যেতেই ল্যাম্পপোস্টের হলদে ঘোলাটে আলোয় উনার মুখ দেখতে পেলাম।
কালো শার্ট গায়ে।আমাকে দেখে আমার দিকে এগিয়ে এলো।উনাকে দেখে আমি চাপা কন্ঠে বললাম
” আপনি এইখানে কেনো এতো রাত্র?কেউ দেখলে কি ভাববে!”
উনি আমাকে এভাবে চাপা স্বরে কথা বলতে দেখে চোখ বাকা করে গম্ভীর কন্ঠে বলল
” এমন চোরের মতো করে কথা বলছো কেনো?আর আমি তো তোমার বয়ফ্রেন্ড না মিস ফিয়ানা যে তোমার বাড়ির প্রাচীর পাড় হতে ভয় পাবো”
উনার উত্তরে অবাক হলাম।মাথায় কি করে আসে এমন উত্তর।উত্তরে কিছু বলার মতো না।আমি প্রষঙ্গ পালটে বললাম
” বাড়িতে কেউ নেই জানতেন আপনে?”
আমার কথা শুনে উনি চোখ কিঞ্চিৎ ছোট করে অবাক হয়ে বললেন
” বাড়িতে তুমি একা ওয়েট সিরিয়াসলি তুমি কি বলতে চাইছো।”
উনার কথায় আমি দ্রুত মাথা দুই পাশে হেলালাম।কি মুখ দিয়ে বের হয়ে গেলো উফফ!উনি কি বুঝলেন আমি কি বললাম সবই অস্বাভাবিক। নিজেই বোকা বনে গেলাম।
আমি চুপ থাকার মাঝেই উনি কিছু ভাবলেন তারপর একটা রিকশা থামিয়ে আমাকে উঠতে বললে আমি তারাহুরো করে বললাম
” কেনো?নাহ আমি আপনার সাথে যাবো না সোজা কথা”
আমার কথা শুনে ঠোঁট কামড়ে ধরে আমার দিকে পা বারাতে নিতেই আমি বড় একটা ঘোমটা টেনে ভালো করে মাথার পাশাপাশি মুখটাও একটু ঢাকলাম।আমাকে এভাবে ঢাকাঢাকি করতে দেখে উনি পকেট থেকে একটা মাস্ক বের করে হাতে ধরিয়ে দিতেই পরে নিলাম।আমি উঠতেই উনিও পাশে বসলেন।
চলতে লাগলো সব দোকান,মানুষ আলো পেরিয়ে অন্ধকারের বুকে।প্রচন্ড বাতাসে ঘোমটা পরে গিয়ে সামনের গুড়া চুল আপনগতিতে উড়তে লাগলো।আমি নিজের যথাসাধ্য চেষ্টায় ওড়না মাথায় আটকে রাখলাম।
_
রাত তখন ৮ঃ২৩। খালি ব্রিজে রিকশা থামলে আমি আশেপাশে চোখ বুলাতে বুলাতে রিকশা থেকে নামি।বুক ধুকপুক করছে।এভাবে রাত্রে বের হওয়া হয় নি কখনো তাও আম্মুকে না বলে।
উনি রিকশা ওয়ালা কে বিদায় করে ব্রিজের রেলিং এ ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকায়।আমিও ধীর পায়ে উনার সামনে গিয়ে দাড়াই।বেশি মানুষ নেই বলতে দুই একজন লোক হেটে যাচ্ছে।আর মাঝেমধ্যে দু এক রিকশা আর অটো।
নিচে একটা নদী বয়ে যাচ্ছে। নামটা বলতে পারলাম না।
” আজকে পরতে আসলে না কেনো?”
উনার কথায় উনার দিকে তাকালাম। বাতাসে চুল গুলো দোল খাচ্ছে উনার।গলার স্বর শূন্যে নামিয়ে বললাম
” আম্মু আব্বু ফুপ্পির বাড়িতে গেছে আমি একা ছিলাম বাড়িতে তাই,,,, আর যাই নি।”
আমার কথায় উনি ভ্রু কুচকালেন কিনা বোঝা গেলো না কারণ অন্ধকার ছিলো সারা ব্রিজ জুরে।
” তো!কলেজেও তো যাওনি।”
উনার কথায় কিচ্ছু বললাম না। জিয়া যায়নি বলে আমিও যাইনি শুনলে প্রতিক্রিয়া কি হবে জানি না তাই আর রিস্ক নিলাম না।
কিছুসময় নিঃস্তব্ধতায় কাটার পর উনি পকেট থেকে কিছু একটা বের করে আমার দিকে এগিয়ে দিতেই আমি অবাক চাহনিতে তাকাই একবার উনার দিকে তো একবার উনার বাড়িয়ে দেওয়া চকলেট এর দিকে।
আমাকে ওমনভাবে তাকাতে দেখে উনি থমথমে কন্ঠে বললেন
” একজন দিয়েছে আমি খাই না তাই তোমায় দিচ্ছি”
উনার কথা শুনে ভাবলাম কে দিয়েছে কোনো মেয়ে হবে। মেয়েই হবে ছেলে কোন দুঃখে উনাকে চকলেট দিতে যাবে।
ভেবেই বিরক্ত নিয়ে চোখের দৃষ্টি নিচের বহমান নদীতে আটকালাম।
” আমি চকলেট খাই না,,,।”
আমার কথা শুনে আমার ডান হাত টেনে হাতে ধরিয়ে দিলো তারপর নিজের দুই হাত পকেটে গুজে স্ট্রেইট হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
কিছুক্ষন পাড় হতেই উনি মৃদু কন্ঠে বলল
” প্রতিদিন অনিয়ম করে দেখা করা যায় না”
কি বললে বুঝতে না পেরে আবার জিজ্ঞেস করলাম।
“কি বললেন?”
উনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে অন্যমনস্ক হয়ে বললেন
” কিছুনা।সময়ের অপেক্ষা তারপর নাহয় তুমিও জানলে মনের কথা”
কেমন যেনো আলাদা লাগলো উনার কথাবার্তা সাথে উনাকেও। আমি আর কিছু শুনার অপেক্ষা করলাম না হুট করে বললাম
” আম্মু আব্বু ফিরে আসবে।বাড়িতে ফিরবো।”
আমার কথায় উনি রাস্তার কিছুদূর হেটে রিকশা থামিয়ে আমাকে বসতে বলে উনিও উঠে পড়লেন।
_
বাড়িতে ফিরলাম ৯ টার দিকে। মনে মনে একটাই দোয়া করছি আম্মু আব্বুরা যেনো এখনো না আসে।আর যদি এসে পরে কি বলবো কোনো রেহাই নেই।
দোয়া পরে বুকে ফু দিয়ে গেটের ভিতরে পা রাখতে নিবো তখনই পিছ থেকে উনার ডাক শুনে থেমে পিছে তাকাই।
উনি রিকশা থেকে নেমে আমার দিকে একটা ব্যাগ এগিয়ে দিলে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাই ব্যাগ টা না নিয়ে।
” নোটস, বাকি পরীক্ষার আগে আর কোচিং যাওয়ার দরকার পড়বে না।”
উনার কথা শুনে চকিতে উনার দিকে তাকাই। যাক কিছু তো সুবিধা হলো।
উনার হাত থেকে নোটস এর ব্যাগ টা নিয়ে মুচকি হাসি উপহার হিসেবে দিয়ে সিড়ির দিকে পা বারাই।
চোখ বন্ধ করে আমাদের ফ্ল্যাট এর দরজার সামনে এসে চোখ বন্ধ করে আরও একবার দোয়া দুরুদ আওরালাম।
চোখ খুলতেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো। নাহ বাবা বাচা গেলো আম্মু আব্বু এখনো আসে নি।
আচলের কিনারার গিট থেকে চাবি নিয়ে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে রুমে গিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।আম্মুকে কল করতে হবে উনারা আসবে কিনা আজকে জানতে হবে তো।
কল করে জেনে নিলাম উনারা আজকে আসবে না কাল সকালেই এসে পড়বে।আমি যেনো ভালো করে দরজায় তালা দিয়ে ঘুমাই এই ব্যাপারে স্ট্রিক্টলি বলে দিলো আর যেনো ভয় না পাই কোনো কিছু ঘাপলা লাগলে যেনো কল দেই উনাদের।
আমিও উনাদের কথায় মত প্রকাশ করলে কল কাটল
রাত ১১ টা বাজে।কোনোরকম নুডুলস রেধে খেয়ে নিলাম।ঘুমানোর প্রস্তুতি নেওয়ার আগে উনার দেওয়া নোটস খুলে বসলাম।একবার দেখা যাক কি আছে ভিতরে।
খুলতে নজরে এলো প্রথম কয়েকটা পাতা কলেজের থেকে কালেক্টেড, কোনো একটা স্যার থেকে হয়তো কালেক্ট করেছে।কিন্তু পরের কয়েকটা পাতা উনি নিজের মতো করে ইম্পর্ট্যান্ট বিষয় নোট করে দিয়েছে।
কিছুক্ষণ পাতা উল্টিয়ে দেখে রেখে দিলাম।দরজা জানালা আরও একবার চেক দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
~~~~~~~
কেয়ার জিনিসটা উপলব্ধি করা যায়।কেউ যদি আপনার কেয়ার করে আপনার ভেতরের সত্তা সেইটা নিশ্চিত হয়ে আপনার কাছে ধরা দেওয়াবে।
ভেতরের খবর হয়তো জানা মুশকিল একটা ব্যাপার কিন্তু এই কেয়ারিং ব্যাপার টা হয়তো ভেতরের থেকে আসলেও প্রকাশ্য।
ভালো লাগার একটা স্রোত বহমান হয় যখন নিজের জন্য কেয়ার দেখতে পাওয়া যায় অন্যের চোখে মুখে এবং প্রাত্যহিক আচরণে। এই একটা সামান্য জিনিসই অন্যের প্রতি উইক ফিল করায়।
কাল আমার পরীক্ষা। এতোদিন নিয়মিত উনার কাছে পড়তে গিয়েছি।অকল্পনীয় ভাবে এখন উনার আচরনে আমার জন্য কেয়ারটা প্রকাশ পায়।আমি ভীষণ ভাবে তা অনুভব করি।কিন্তু তার থেকে বেশি কিছু আছে কিনা উনার মনে তার ব্যাপারে শিউর হয়ে বলা যাচ্ছে না কিন্তু আমার মনে যে উনার জন্য অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে তাতে কোনো ডাউট নেই।
আমার জন্য এইকয়েক দিন যতবার পড়তে গিয়েছি উনি আমার দিকে একটা করে চকলেট বাড়িয়ে দিতো আমিও কোনো বাক্য প্রকাশ ছাড়া নিতাম। এ যেনো এক অপ্রকাশ্য কল্পনা।
আমার প্রিপারেশন এখন খুবই ভালো আমার মতে।সিলেবাস কভার হয়ে গেছে অলরেডি।সবই রুদ্ধ সাহেবের সহায়তায়।
কাল তো সামনে বসিয়ে ৩০ মিনিট পড়িয়ে ৩০ মিনিট একটানা উনার লেকচার।
“ভয় জিনিসটা কি!একদমই কিচ্ছু না।যা হবে ভালো হবে ট্রাস্ট ইউরসেল্ফ।ইউ কেন ডু ইট।ওকে?”
উনার এই হাইলাইটেড কথাটা আমার মাথার ভেতর একদম ভালো করে চেপে বসেছে।অনেকটা রিলিভ ফিল হচ্ছে।
রাতে কাল যেই পরীক্ষা সেই সাবজেক্ট নিয়ে রিভাইস করতে লাগলাম।তখনই আব্বুর আগমন সুন্দর করে আমাকে বুঝালেন যেনো ভালো করে পরীক্ষা দেই অন্য কিছু না ভাবি।
কিছুক্ষন কথা বলার মধ্যেই আম্মু রুমে প্রবেশ করলো।কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে আব্বুর কথা শুনলো উনার কথায় মত প্রকাশ করলো কিন্তু মাঝেই এক অপ্রয়োজনীয় কথা বলে দিলো যা আমার একদমই পছন্দ হলো না বলতে হবে।
” হুম তোমার আব্বু একদম ঠিক বলছে। আর ভালো রেজাল্ট না করলে কি এমনে এমনেই কোনো ইঞ্জিনিয়ার তোমাকে তো নিবে না তাই না!”
আম্মুর কথায় অবাক হয়ে তাকাই।
“আম্মু তুমি কিন্তু তোমার কথা থেকে একদমই পিছু হটবে না বলে দিলাম।মনে আছে তো?”
“ওইটা দেখা যাবে আগে তোমার রেজাল্ট দেখি।কি করো! ”
বলে আম্মু চলে যায়।আব্বুও কথা না বাড়িয়ে রুম ত্যাগ করে।
আমিও আম্মুর কথা আর ভাবলাম না।ভালাও রেজাল্ট করলে তখন জোর খাটিয়ে কিছু একটা বলতে পারবো না হলে আর মুখ ফুটে কিছু বলা যাবে না।
~~~~~~~~~
আজ এক্সাম শুরু হবে ১১ টায়।তাই রেডি হয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে ১০ টায় বেরিয়ে পড়ি।সাধারণত আমাদের বিল্ডিংয়ের মোড়ে কোনোমতে রিকশা পাওয়া যায় না সহজে তাই কিছু না ভেবে হাটতে লাগলাম। কিছুক্ষন হাটলেই মেইন রাস্তা।সেখানে অনায়াসে রিকশা,সিএনজি, বাস সব পাওয়া যায়।কিন্তু আমার আপাতত রিকশা প্রয়োজন।
অসহ্য গরমের পর বর্ষার আগমন একটু একটু করে দেখা দিচ্ছে।রোদ একটু কম লাগছে।মেইন রাস্তায় দারাতেই একটা রিকশায় চোখ আটকে যায়।
ব্লাক শার্ট-প্যান্ট সাথে গলায় টাই ঝুলানো রুদ্ধ সাহেবকে চোখে পড়তে আপনা আপনি মুখ থেকে বেড়িয়ে গেলো
” মিস্টার রুদ্ধ সাহেব ”
আমার কন্ঠ এতোটাও জোরে ছিলো সামান্য জোরে ছিলো।তা কি করে কানে ঢুকলো উনার আল্লাহ মালুম।রিকশা বেক করে আমার সামনে এসে থামতেই উনি আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে টাই ঠিক করে পকেটে হাত গুজে বললেন
” মিস ফিয়ানা,,,,। তুমি এখানে কি করছো। তোমাকে পিক করতেই তো যাচ্ছিলাম।উঠো রিকশায়।”
উনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে রিকশায় উঠে পড়লাম।উনিও আমার পাশে বসতেই রিকশা ছুট লাগালো রাস্তার ভাজে।
উনাকে আড়চোখে দেখছি। চুল গুলো জেল দিয়ে সেট করা আবার গলায়ও টাই, উনিকি কাজে যাচ্ছিলো?আহা কি সুন্দর লাগে উনাকে ফর্মাল গেটাপ এ।অবশ্য উনাকে তো সব কিছুতেই কিউট লাগে।
চোখ চলন্ত রিকশা থেকে পরিবেশে নিবদ্ধ করলাম।প্রত্যেক টা গাছ যেনো দৌড়ে পালাচ্ছে।
আশেপাশে দেখতে দেখতেই আমি মৃদু কন্ঠে উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম
” আচ্ছা আপনি কি কাজে যাচ্ছিলেন নাকি?কি কাজ করেন আপনি?”
আমার কথায় উনি চোখ ছোট করে আমার দিকে একনজর তাকিয়ে সামনে তাকায়।
” উম,,,, তুমি জেনে কি করবে আমি কি করি?”
“প্লিজ বলুন না এমন করেন কেনো আজব তো আমি জানলে কি আপনাকে কাজ থেকে বের দিবে নাকি আপনার হেড”
আমার কথা শুনে ঠোঁট কামড়ে কিছু ভেবে বললেন
” আমার কোচিং সেন্টার আছে।সেইটার কাজ সামলাই আপাতত। ”
উনার কথা শুনে আমি অবিশ্বাস্য হয়ে বললাম
” আপনার নাকি আংকেলের দেওয়া?”
আমার কথা শুনে উনি রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমার দিকে তারপর দৃষ্টি ফিরিয়ে বলে
” আমার নিজের যোগ্যতায় গড়ে তোলা কোচিং। সো বাবার না সেইটা একমাত্রই আমার।আর বাবা দিলে আমায় উনার বিজনেস দিতো কোচিং সেন্টার দিতো না।”
উনার কথায় অবাক হলাম আমার কথাটা উনি সিরিয়াসলি নিয়ে নিলো আমি তো এভাবেই বললাম আরকি।
এক্সামের নির্দিষ্ট হলে পৌছাতেই হাজার হাজার মানুষের আনাগোনা চোখে পড়ার মতো।সবাই ব্যস্ত পায়ে হেটে কলেজের ভিতরে ঢুকছে।
আমিও নেমে উনাকে কিছু না বলেই ভিতরে ঢুকতে নিতেই উনি পিছন থেকে ডাক দিলেন।
” মিস ফিয়ানা,,।”
উনার কথায় ঘাড় পিছে বাকিয়ে তাকালাম।উনি হাতের আঙুল তুলে কাছে আসতে বলতেই আমি ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম।
উনি কোনো কথা না বলে আবারও একটা বড় ডেইরি মিল্ক চকলেট এগিয়ে দিয়ে বলল
” গুড লাক।কোনো ভয় নেই।”
আমি একনজর রিকশাচালক মামার দিকে তাকালাম তারপর আবার উনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চকলেট হাতে নিয়ে বললাম
” হুম,থেংক ইউ।চললাম।”
বলেই এক্সাম হলের ভিতর ঢুকে গেলাম।পিছে ফিরলাম না একটি বারের মতও।
চলবে,,,,
( ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই ❤️❤️)#আমি_গোপনে_ভালোবেসেছি
#পর্বঃ৭
#writer: Mishmi Muntaha Moon
শেষ পরীক্ষা ছিলো আজ।এক্সাম শেষে হাসি মুখে হল থেকে বের হলাম।পরীক্ষাটা অনেক ভালো হয়েছে বলতে হবে।বের হতেই ভেবেছিলাম রুদ্ধ সাহেবকে দেখবো কিন্তু নাহ উনাকে দেখলাম না।উনাকে দেখতে না পেয়ে মনটা খারাপ হলো কিছুটা।
সোজা রিকশা নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রোওনা দিলাম।বাড়িতে পৌছে জানতে পারলাম তরু আপু উনার প্রেমিকের সাথে ভেগে গেছে।আমারই ফুফাতো বোন যেই ফুপ্পিদের বাড়িতে আম্মুরা গিয়েছিলো।
শুনেই আচমকা আমার মুখ দিয়েই হাসি বের হয়ে গেলো। কারণ আমার এই ফুপ্পি এক নাম্বারের চুসকা টাইপ মহিলা।সকলে খবর নিয়ে ঘাটাঘাটি করে কার মেয়ে কার সাথে পালালো এই সকল বিষয় আলোচনা করায় পটু।কিছু মাস আগে আমাকে নিয়েও অযথাই কথা রটিয়েছিলো আম্মুর কানে।
আমার হাসি দেখে আম্মু রাগী চোখে আমার দিকে তাকালেই আমি গম্ভীর হয়ে বসলাম।
ফুপ্পি ফুপা মিলে মেয়েকে ধরে এনেছে এখন দুই পরিবারের সম্মতিতে ছোট অনুষ্ঠান করে বিদায় দেবে মেয়েকে।আমাদের ওইখানে যেতে হবে।
পরশুদিন যাবে তিনদিন ওইখানেই কাটিয়ে তারপর বাড়িতে ফিরবো।
মন খারাপ হলো আমার।ওইখানে গেলে তো উনার সাথে আর দেখা হবে না।আর এমনেতেও তো উনার সাথে আর দেখা হওয়ার কথা না কারণ পড়ার জন্যই তো দেখা হতো যেহেতু এক্সাম শেষ তাহলে আর পড়াও নেই।
ক্লান্তি নিয়ে হেটে রুমে গিয়ে গোসল করে নিলাম।তারপর একটু ঘুমিয়ে নিলাম।
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ লাগছে।চুলগুলো কাটা দিয়ে বেধে বিছানা থেকে উঠে দাড়াতেই ফোন বেজে উঠে। স্ক্রিনে ‘ রুদ্ধ সাহেব’ নামটা ভেসে উঠেছে। কিছুক্ষন নামটার দিকে তাকিয়ে থেকে রিসিভ করে সালাম দিলাম।উনিও উত্তর নিয়ে গমগমে কন্ঠে বললেন
” কোথায় ছিলে?”
“কোথায় থাকবো আবার বাড়িতেই আছি।কেনো?”
কিছুক্ষন নিঃস্তব্ধতায় ছেয়ে থাকার পর উনি বললেন
” পাঁচবার কল করলাম।যাইহোক নিচে আসো।”
উনার কথা শুনে অবাক হয়ে বললাম
“কেনো আপনি কি নিচে?”
বলেই বারান্দায় গেলাম।তারপর কল কেটে একদৌড়ে আম্মুর কাছে গেলাম।
” আম্মু একটু জিয়ার সাথে দেখা করতে যেতাম। যাই?”
আমার কিথা শুনে আম্মু থালাবাসন ধোয়া বন্ধ করে আমার দিকে তাকালেন।
” কি জন্যে? ”
” ওই একটু এক্সামের ব্যাপারে কথা ছিলো।ওর সাথে তো দেখা হয় নি কারণ ওর অন্য ক্লাসরুম এ সিট পরেছে।”
আমার কথা শুনে আম্মু কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আবারও থালাবাসন ধোয়ায় মনোযোগ দিতেই আমি বলে উঠলাম
” যাই?”
“তারতারি ফিরবে।নাহলে একদম ভালো হবে না।”
আম্মুর কথা শুনে রুম থেকে ওরনা নিয়ে ঘোমটা টেনে গেট খুলে বেরিয়ে পরলাম।
নিচে যেতেই চোখে পড়লো কাঙ্ক্ষিত সেই ব্যাক্তিকে।
ধূসর রঙের পাঞ্জাবী গায়ে তার আজ।বা হাতে কালো রঙের ঘড়ি।চুল গুলো সাধারণ ভাবে একপাশে সুন্দর ভাবে সেটিং করা।উনি শুধু কাজে গেলেই চুল গুলো জেল দিয়ে সেটিং করে এছাড়া লাগায় না জেল।
দূর থেকে উনাকে দেখার মাঝেই উনি ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে কিছুটা জোরে বললেন
“ওখানে দাঁড়িয়ে কি দেখছো এইখানে আসো মিস ফিয়ানা”
উনার কথা শুনে উনার সামনে এসে দাড়ালাম।
” এক্সাম কেমন হয়েছে?”
উনার কথা প্রসন্নময়ী হাসি দিয়ে বললাম
“অন্নেক ভালো।”
আমার কথা শুনে উনি মুচকি হাসলেন।তারপর রাস্তায় তাকিয়ে আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়লেন
” আন্টিকে কি বলে এসেছো?”
” জিয়ার সাথে দেখা করতে যাবো বলে এসেছি”
আমার দিকে একপলক তাকালেন আমার কথা শুনে তারপর হাসি দিয়ে একটা রিকশা ডাকলেন।
~~~~~~~
কোথায় নিয়ে এলো জানিনা।কিন্তু খুবই সুন্দর একটা জায়গা সামনে নদী দেখা যাচ্ছে। গাড়ো নীল আকাশের প্রতিবিম্ব অনায়াসে বিশাল নদীর পরিষ্কার পানিতে দেখা যাচ্ছে।রোদ নেই নীল আকাশের মাঝে কিছু সাদা মেঘ জমাট হয়ে উড়ে বেরাচ্ছে।
হাটতে হাটতে আরেকটু সামনে বাড়তেই ঘাসের আবরনে পা রাখলাম। সবুজ কচি ঘাস আমি উনাকে রেখেই নদীর আরেকটু কাছে গিয়ে জুতো খুলে পরিষ্কার ঘাসে বসে পড়লাম।
উনিও আমার পাশে বসলেন।
মনটা একদম প্রফুল্লতায় ভরে উঠলো।আনন্দ নিয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে উনার দিকে দৃষ্টি পড়তেই দেখলাম উনি হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে।আমিও কিছুক্ষন উনার দৃষ্টি তে তাকিয়ে থেকে চোখ নদীতে রেখে বললাম
” আপনার চোখ গুলো সুন্দর কিন্তু খুব।বাদামি লেন্স”
আমার কথায় উনি মাথা নিচু করে হাসলেন।উনার হাসি দেখে আমি এক ভ্রু উচিয়ে উনার দিকে তাকালাম।প্রশংসা শুনে হাসলো নাকি!
উনার হাসিকে পাত্তা না দিয়ে আমি বললাম
” পরশু আমার ফুপাতো বোনের ঘরোয়াভাবে বিয়ে।সেইখানে তিনদিন থাকা পড়বে।”
আমার কথা শুনে অনুভূতি শূন্য দৃষ্টিতে আকাশে তাকিয়ে জবাব দিলেন
“ওহ।”
উনার কোনোরকম রিয়েক্ট না দেখে ভালো লাগলো না আমার।উনার দৃষ্টি অনুসরণ করে আমিও খোলা নীল আকাশে তাকালাম।
উনিও চুপ আমিও চুপ।হঠাৎ উনি মৃদু কন্ঠে বললেন
” মিস ফিয়ানা,,,”
উনার কন্ঠটা শুনে বুক ধুকপুক বাড়লো।উফফ উনার মুখে মিস ফিয়ানা টা যে এতো কেনো ভালো লাগে একদম অন্যরকম। কন্ঠটাও কেমন যেনো কোমল শুনালো একদম হৃদয় ছোয়ার মতো।
” জ্বী বলুন”
আমার উত্তরে উনি আমার দিকে তাকিয়ে প্রসারিত হাসি নিয়ে আকাশে তাকিয়ে বলল
” মেঘ তার আকাশকে অনেক ভালোবাসে জানো তো”
” কে মেঘ আর এই আকশটাই বা কে?”
উনার কথায় অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করতেই উনি শব্দ করে হেসে উঠলো।তারপর আমার দিকে হাসিমাখা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন
” মিস ফিয়ানা কেমন বোকা কথা বললা।আমি উপরের আকাশের কথা বলছি আর ভেসে যাওয়া মেঘের কথা বলেছি কোনো ব্যাক্তি নয়”
উনার কথা কিছুটা ভ্রু কুচকে আকাশে তাকালাম তারপর বললাম
” আপনি কি করে জানলেন? ”
উনার চাওয়া অনুযায়ী প্রশ্ন করতে উনি হাসি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
” ভালোবাসে বলেই তো প্রতিদিন নিয়ম করে দেখা দেয় আর এভাবে আগলে রাখে।”
উনার কথা শুনে আকাশের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে উনার দিকে তাকালাম।উনি অপলক ভাবে আমার দিকেই তাকিয়ে ছিলো তখনও।
আবছা অন্ধকার হয়ে আসছে দেখে আমি চিন্তিত হয়ে উঠে দাড়ালাম।তারপর উনার দিকে তাকিয়ে বললাম
“অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে।আম্মু বলেছিলো তারাতারি ফিরতে”
আমার কথায় উনিও বসা থেকে উঠলেন।তারপর আমার আগেই হাটতে লাগলে আমিও তার পিছু পিছু হাটি।
রাস্তায় একটা রিকশা আগে থেকেই ছিলো হয়তো উনি দাড় করিয়ে রেখেছিলেন।
উনি রিকশার পাশে দাঁড়িয়ে আমাকে বললেন
“মিস ফিয়ানা। এই রিকশাটাতে উঠে পরো।”
রিকশায় উঠে উনার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালাম।উনি কি উঠবে না? প্রশ্নটা মাথাউ উকি দিলো কিন্তু কিছু জিজ্ঞাসা করলাম না।
রিকশায় বসতেই উনি রিকশাচালক মামাকে আমাদের ঠিকানা বলে আমার দিকে তাকিয়ে পিছনের হাত থেকে একগুচ্ছ কদম ফুল আর সাথে একটা ছোট হ্যান্ডব্যাগ এগিয়ে দেয়।
আমি না নিয়ে উনার দিকে তাকাতেই উনি চোখ দিয়ে ইশারা করে নিতে বললে আমি উনার হাত থেকে নিতেই উনি রিকশাওয়ালা মামাকে রিকশা ছাড়তে বলেন।
রিকশা চলতে লাগে।চুলগুলো কানে গুজে রিকশা থেকে উকি দিয়ে পিছে তাকাতেই উনাকে চোখে পরে।পাঞ্জাবী তে অনেক নেশাক্ত লাগে উনাকে একদম কিউটের ডিব্বা।
প্রথম দিনের রুদ্ধ সাহেবকে মনে পড়তেই হাসি ফোটে ঠোঁটের কোনে।
কতটা অভদ্র ভেবেছিলাম কিন্তু আসলে তো উনি অনেক ভদ্র কিউট আর ভালো একজন মানুষ।
আস্তে আস্তে করে রাস্তার ভাজে মিলিয়ে গেলেন উনি আর দেখতে না পেয়ে মাথাটা সোজা করে বসলাম।
আমার কাছে উনি আস্ত একটা অনুভূতি। সেই অনুভূতি টা কি? ভাবতেই আপনমনেই বলে উঠলাম ‘ ভালোবাসা’
কোলের উপরে থাকা কদম ফুলে নজর যেতেই হাসি প্রসারিত হয়।উফ আমার এতোদিনের চাওয়া পূরণ হলো।কদম মানেই একরাশ ভালোবাসা।
ছোট ব্যাগটিতে হাত ঢুকাতেই অনেকগুলো চকলেট দেখতে পেলাম।সাথে একটা চিরকুট দেখে তারাতারি বের করলাম।
আস্তে আস্তে করে চিরকুট টা খুলে চোখের সামনে ধরতেই ভেসে উঠে কয়েকটা লাইন সুন্দর করে লিখা।সম্ভবত গানের কিছু অংশ,
❝অবুঝ মনের ঠিকানা তুমি কি হবে
মুগ্ধ আমার প্রেমে জুরিয়ে রবে
মুখে বলো না কে তোমার অনুভবে❞
পড়ে আনমনে মুখে হাসি ফুটে উঠলো।মনে মনে আমিও পরের কিছু লাইন আওড়ালাম।
❝আমার চোখের মাঝে তুমি যে কালো
স্বপ্ন ভুবন জুরে তোমারই আলো
আমি তোমাকে বেসেছি কত ভালো
ও প্রিয়❞
বাড়িতে পৌছে উনার দেওয়া কদমের পাপড়ি গুলো ছিড়ে ডায়েরির ভাজে রাখলাম কারণ আস্ত কদম রাখা তো সম্ভব না ডায়েরি তে।
ডায়েরিটা ড্রয়ারে রেখে বাকি কদম গুলো বুকে জরালাম।
উনার দেওয়া তৃতীয় ফুল কদম।
চলবে,,,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই ❤️❤️)#আমি_গোপনে_ভালোবেসেছি
#পর্বঃ৮
#Writer:Mishmi_muntaha_moon
ফুপ্পিদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছি।জামাকাপড় প্যাকিং করা শেষ।
গাড়ো গোলাপি রঙের একটা নরমাল গাউন পরেছি আজ।কিছুটা সাজলাম অবশ্য মাস্ক তো পড়বোই দেখা যাবে না কিছুই তবুও মনের শান্তি। কানে একটা ঝুমকা পড়ে ওড়নাটা ঘোমটা দিয়ে গলায় একবার ঘুড়িয়ে সামনে টেনে নিলাম।
যেহেতু ফুপ্পিদের বাড়ি অনেকটা দূর না কিন্তু সেখানে তো মেহোমান এসেছে নিশ্চিত তাই একটু ভালো ভাবেই তো যেতে হবে।
রেডি হয়ে ফোন টা হাতে নিয়ে দেখলাম কোনো মেসেজ অথবা কল এসেছি কিনা কিন্তু না কোনো কিছুই আসে নি।মাঝে একদিন পেরুলো কিন্তু উনার সাথে কোনো কথা হয় নি।ওইদিন তো বললাম আজ ফুপ্পিদের বাড়িতে যাবো কিন্তু পরিবর্তে উনিতো কিছুই বলল না।
আম্মু তাড়া দিতেই কাধের ঝুলানো হ্যান্ডব্যাগে মোবাইল ঢুকিয়ে বাহিরে গেলাম।
আম্মু গেটে তালা লাগিয়ে নিচে এসে রিকশা থামলে আম্মু আমি আর ফায়াজ রিকশায় উঠে পড়ি।
~~~~~~~~~
ফুপ্পিদের বাড়িতে যেতেই কোলাহল পূর্ন পরিবেশ নজরে এলো।
আমার আব্বুরা দুই ভাই দুই বোন। বড় বোনের ফরিদপুরে বিয়ে হয়েছে সেইখানেই থাকে।আর ছোট ভাই ঢাকায় থাকে কেরানীগঞ্জ এর দিকে। তো বড় ফুপ্পি আর ছোট চাচাকে ছোট ফুপ্পি আরও আগেই হয়তো বলেছিলো। তাই আমরা গিয়েই উনাদের সাথে সাক্ষাৎ করলাম।
ছোট ফুপ্পির একটি মাত্র ছেলে জুবায়ের আর চাচা এক ছেলে এক মেয়ে এক ছেলে তুষার আর তিশা।
তিশা আমার থেকে ৩ বছরে ছোট কিন্তু আমার সাথেই অলওয়েজ চলাচল করে তাই আমাকে দেখেই একটা রুমে নিয়ে গেলো সেই রুমে জুবায়ের ভাই,তুষার ভাই তিশা আর তরু আপু বসে ছিলো।
উনাদের দেখে কুশল বিনিময় করে সাথেই বসলাম।
তুষার আর তিশা দুই ভাই বোন মিলে তরু আপুর মজা নিচ্ছিলো।
” কিরে তরু তোর গালটা কেমন লাল হইয়া আছে ফুপ্পি তোরে ধামাধাম ধুয়ে দিছে না?”
তুষার ভাইয়ার কথা শুনে হাসি পেলো খুব।ওর সাথে তাল মিলয়ে তিশাও বলছে
” আরেহ ওইটা বাদ দাও ভাইয়াকেও পিটা করেছে নাকি ফুপ্পি তো যেই”
বলে হাসতে লাগলো।ওরা দুই ভাই বোন এমনই দুটোই এক নাম্বারের দুষ্টু। তুষার ভাই কিছু বললে ও সাথে মিলে আরো পচাতে থাকে।
ওদের কথার মাঝে আমি বলে উঠলাম
” আহা ভাইয়া আর তিশা তোমরা পারো ও।আচ্ছা তরু আপু ওদের কথা বাদ দাও আমার কথা শোনো। ভাইয়ার নাম কি? আর ছবি আছে তোমার কাছে দেখবো আমি।
আমার কথা শুনে তরু আপু বলল
” উনার নাম ইমতিয়াজ”
বলে মোবাইল বের করে উনার আর ভাইয়ার একসাথে কয়েকটা সেল্ফি দেখালো।
ছবি দেখে আমি উত্তেজিত হয়ে তরু আপুকে আবারও বললাম
” ওয়াও ভাইয়া তো খুবই হ্যান্ডসাম।আচ্ছা তোমাদের লাভ স্টোরি শুনাও না”
আমার কথার পরিবর্তে আপু কিছু বলবে তার আগেই তুষার ভাইয়া এক ধমক দিয়ে বলল
” ধুর! কি আবালগো প্রেম কাহিনি শুনবি তুই।আমার প্রেম কাহিনি শুন ”
তুষার ভাইয়ার কথা শুনে তিশা আর আমি একে অপরের দিয়ে চাওয়াচাওয়ি করে তিশা বলল
” না ভাইয়া ”
আমিও ভাইয়ার দিকে ভ্রু কুচকে বললাম
“থাক ভাইয়া দরকার নেই আমাদের উপর দয়া করো”
তুষার ভাইয়া হলো একটা চিস।উনার এই প্রেম কাহিনি যে আমাদের কতবার শুনিয়েছে তার কোনো হিসেব নেই।যখনই দেখা হবে উনার প্রেম কাহিনি একবার হলেও শুনতে হবে।তাও ছোট থেকে উনার সব প্রেমিকদের কাহিনি কে কেমন ছিলো কিভাবে নিজের পিছে ঘুরিয়েছে তার কাহানি শুনিয়েই ছাড়ে।
” আরেহ ধুর আমার ইনট্রেস্টেড প্রেম কাহানি শুনতে চাইতাসোস না তাইলে এই তরুন লতার বোরিং প্রেম কাহানি কেমনে শুনবি।ধুর তোগো লোগে কোনো মজাই নাই।ওই জুবায়ের তুই কি করোস ওই চিপায় বইয়া?”
তুষার ভাইয়ের কথা শুনে জুবায়ের ভাই কর্নারে বসা থেকে উঠে তুষার ভাইয়ের পাশে বসলো।
” আর বলিস না।এই লবনের গুষ্টিটায় জীবনটা তেজপাতা কইরা ফালাইতাসে”
জুবায়ের কথা শুনে তুষার ভাইয়া বলল
” আহা! বেবি বেবি কইরা চেটিং তো ভালোই করো আবার এহোন কটা লাগে নি লবনের মতোন?”
তুষার ভাইয়ের কথা শুনে জুবায়ের ভাই বালিশ দিয়ে তুষার ভাইয়ের মুখে বারি দিলো।
আমি আর তিশা তো অবাক উনাদের কথাবার্তা শুনে।অবাক হয়ে আমি বললাম
” বাব্বাহ জুবায়ের ভাই তুমি তো ভালোই। গার্লফ্রেন্ড ও আছে তোমার।আর সবার সামনে সাধু হইয়া থাকো।”
আমার কথা শুনে আমার মাথায় চাটি মেরে বলল
” চুপ কর!বড় ভাই দের সাথে পাকনামি।আর শুন এইগুলো ভিতরের কথা বুঝলি সো মুখ অফ।”
ভাইয়ার কথা শুনে মুখ ভেংচি কেটে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালাম।
~~~~~~~~~~
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠিয়ে দিলো ছোট ফুপ্পি এসে।আজ নাকি আরও কিছু মেহোমান আসবে।তাই তারাতারি রুম পরিষ্কার করে খাবারের কাজ সেড়ে নিতে।
তিশা,আমি আর তরু আপু এক রুমে ঘুমিয়েছিলাম।ফুপ্পির ধমকানো ডাকে সবাই উঠে পরি।
একে একে হাত মুখ ধুয়ে খেয়ে দেয়ে নেই।আজকে সিম্পল ভাবে মেহেদি অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হবে।এই আরকি তরু আপুকে পার্লারের দুটো মেয়ে এসে মেহেদি লাগিয়ে দিবে।আমরা কয়েকটা মেয়েও আপুর সাথে মেহেদি দিবে তারপর পার্লারের মেয়েদুটো চলে যাবে আর বাদ বাকি যারা লাগাবে আমরাই লাগিয়ে দিবো।
আমিও মোটামুটি মেহেদি লাগাতে পারি আর তিশা তো খুব সুন্দর করেই লাগাতে পারে তো ঝামেলা হবে না।মেয়ে বলতে আমরা দুটো মেয়েই আছি আর তরু আপুর একটা বড় ভাই আছে তমাল ভাই উনি ইটালি থাকায় বিয়েতে থাকিতে পারবে না।
দুপুর একটা বাজতেই একে একে সবাই গোসল সেরে নিলাম।সবার লাস্ট গোসল করলাম আমি।
গোসল করে বেরিয়ে দেখি ৩ টা বেজে গেছে।তরু আপুর রুম ছাড়া সব রুম ভরাট আই মিন বড়রা উনাদের আড্ডা নিয়ে বসেছে।
তরু আপুর রুমে যেতেই দেখলাম তরু আপুকে তিশা সাজিয়ে দিচ্ছে নরমাল ভাবেই।শেষ হতেই ও নিজেও একটু সেজে নিলো।
আমিও আজ একটা কলাপাতা রঙের সিম্পল গাউনই শুধু গলা,হাতা আর নিচের ঘেরটাতে স্টোনের কিছু কাজ আছে।
ড্রেস পড়ে চোখে আইলাইনারের রেখা টানলাম আর ঠোঁটে লিপ্সটিক লাগালাম।মাশকারা তো মাস্ট কারণ এইটা আমার ফেভারিট সবথেকে।
সাজতে গুজতেই ৫টা বেজে গেলো।সেজেগুজে বাহিরে হাটছি আমি আর তিশা।জুবায়ের ভাই আর তুষার ভাই বিকাল হতেই বেরিয়ে গেছে।মেহেদি টেহেদি তো আর লাগাবে না তো মহিলাদের ভিতরে বসে থাকা উনাদের কর্ম না তুষার ভাইয়ের কথা।
” ফিয়ানা আপু। ফুপ্পি না বলল কোন মেহোমান আসবো কিন্তু কারো আসার তো নাম গন্ধ ও নেই”
তিশার কথা শুনে আমি বললাম
” কি জানি!হয়তো আমাদের জাগানোর জন্যই বলেছে।”
আমার কথায় তিশাও সায় দিলো।
_
তরু আপুর মেহেদি লাগাতে লাগাতেই ১ ঘন্টা পেরিয়ে গেলো।দুই হাতে ভরে ভরে লাগিয়েছে।
তারপরে আমার আর তিশার পালা আসলো।একটা মেয়ের কাছে আমি বসেছি আরেকটার কাছে তিশা।
৭ টা ৪৬ বাজে।এখন মাত্র এক হাত দেওয়া হলো আরেক হাতেরটাও অর্ধেক হয়েছে।
তারমাঝেই বেল বেজে উঠলো।আর ফুপ্পি দরজা খুলতেই মুখে হাসি ফুটিয়ে বলতে লাগলো।
” আরে এসেছেন আপনারা এতোক্ষণে? এহসান ভাই কোথায় এখানে আসো উনারা এসে পড়েছে”
কে এসেছে বুঝলাম না কিন্তু ফুপ্পির এতো আমোদিত হওয়ার কারণ কি!হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কোনো ব্যাক্তির আগমন।
আবার আব্বুকেও ডাকলো।
ফুপ্পির ডাকে আব্বুও গিয়ে কুশল বিনিময় করতে লাগলো।
আমার নজর তখনও দরজার দিকে।এক পলকও ফেলছি না। আমিও দেখি এসেছে টা কে?
আব্বু কুশল বিনিময় করে উনাদের ঘরে ঢুকতে বলল।
তিনজন ব্যাক্তি ঘরে প্রবেশ করতে আমি অবাক হয়ে চোখ বড় বড় করে তাকাই আর বিরবির করে বললাম
” উনি!”
চলবে,,,