আমি গোপনে ভালোবেসেছি পর্ব -৪+৫

#আমি_গোপনে_ভালোবেসেছি
#পর্বঃ৪
#writer: Mishmi Muntaha Moon

রুদ্ধ সাহেবের অস্থির কন্ঠ শুনে চোখ ছোট ছোট করে উনার দৃষ্টির পানে তাকালাম।
কি বলতে চাইছে সঠিকভাবে বোঝার জন্য।আমাকে উদ্দেশ্যহীনভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি আবারও আদেশের সুরে বললেন

” কি হলো শুনতে পাচ্ছেন না? তারাতারি রিকশায় উঠে বসুন তৃতীয় বার বলবো না।”

উনার কথা শুনে শূন্য রাস্তায় তাকালাম।অল্পকিছু গাড়ি দেখা যাচ্ছে তাও দ্রুততম। এতোক্ষণে আমি ভিজে টইটম্বুর। পুরো জামা আমার ভীজে গেছে।তবুও উনাকে সোজা মানা করে দিলাম।

” প্রয়োজন পড়বে না আমি চলে যাবো আপনিও চলে যান।”

জামা যখন ভিজে গেছে আর কিসের তাড়া দেখাবো।আস্তে ধীরে পৌছানো যাবে বাড়িতে।ভেবে হাটা ধরবো ভাবলাম।মাথার ওড়নাটা আরেকটু ভালোভাবে টেনে নিতেই উনি আবারও বললেন

” কি এক ঝামেলা বাবা!সমস্যা কি উঠে বসতে বললাম না, রিকশায় আমার পাশে বসতে হবে বলে না করছেন?”

কথাটা শুনে উনার মুখের দিকে তাকালাম।বিরক্ত চোখে মুখে ফুটে উঠেছে দেখা যাচ্ছে।চোখ গুলো ছোট ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।চুলের অবস্থাও ভালো না।কপালে লেপ্টে থাকা চুল থেকে পানি বেয়ে পড়ছে।সেই পানি চোখের পাতায় পড়তেই বিরক্ত হয়ে হাত দিয়ে সরিয়ে দিলো।

আমি কি বলবো খুজে পেলাম না।সত্যি বলতে ঠিকই উনার পাশে বসতে হবে ভেবেই আনকাম্ফার্ট ফিল হচ্ছে।কিন্তু মুখে তো আর বলা যায় না সরাসরি।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে উনি জোরে নিঃশ্বাস ফেললেন।আওয়াজ টা মৃদু আমার কান পর্যন্ত পৌছালো।
সাথেসাথেই উনি রিকশা থেকে নেমে আমাকে উঠতে বললেন।আমি তারাতারি মাথা দুই পাশে নেড়ে বললাম

” নাহ দেখুন প্রয়োজন নেই আপনি চলে যান আমি সামনেই রিকশা পেয়ে যাবো।”

“উঠুন তারাতারি নাহলে ভালো হবে না বলে দিলাম। রাস্তায় ধাক্কা দিয়ে কাদায় ফেলে দেবো”

উনার কথা শুনে এক ব্রু অবাকে উপরে তুলে ফেললাম।আহা!কত শখ কাদায় ফেলার।
আমিও আর কথা বাড়ালাম উনার ইচ্ছা বৃষ্টিতে ভিজার ভিজুক আমি চলে যাই।আমি রিকশায় উঠতেই উনি রিকশা চালক চাচা কে আমার ঠিকানা বলে যেতে বললেন।রিকশা পাকা রাস্তায় উঠে নিজ বেগে ছুটতেই বৃষ্টির ফোটা গুলো বাকা হয়ে দ্রুত ঝাপ্টায় আমার উপর বর্ষাতে লাগলো।
হাত দিয়ে সেই বর্ষন থামানো প্রানপণ চেষ্টা করে হঠাৎ কিছু মনে করে পিছে মাথা তাক করলাম।পিছে তাকাতেই উনার সাথে চোখাচোখি হলো।বৃষ্টি কে জাস্ট পাত্তাই না দিয়ে আমার যাওয়ার পানেই তাকিয়ে ছিলো পকেটে হাত ঢুকিয়ে।আমিও কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সামনে ফিরে সুন্দর ভাবে বসলাম।

~~~~~~~

বাড়িতে ফিরতেই আম্মুর বকাবকি তো আছেই তারউপর আজ ভিজে এসেছি।
কোনোরকম ছাড়াছাড়ি নেই।তারউপর বাবা এসে গম্ভীর মুখে বললেন

” আজ একদম ঠিক করো নি ফিয়ানা। এই বৃষ্টিতে ভিজা একদমই ভালো না।বছরের প্রথম বৃষ্টি। এখন তারাতারি কাপড় বদলে নাও”

বাবার কথায় আটকে রাখা নিঃশ্বাস টুকু অনায়াসে ফেলে রুমে পা বারালাম।
কাধের থেকে ব্যাগ পড়ার টেবিলে রেখে কাপড় পালটে নিলাম।উফ ঠান্ডা লাগছে।বাহিরে এখনো বৃষ্টি পড়ছে কোনো থামাথামি নেই।রুমে বৃষ্টির ছিটা আসছে দেখে বারান্দার দরজা টা অফ করে দিলাম।বৃষ্টির সাথে ফ্রি ভাবে বাতাস ও আসছে যার ফলে বারান্দার উইন্ডচাইম টা ঝুমঝাম করে দোল খাচ্ছে আর আওয়াজ তুলছে।ভালো লাগছে শুনতে।

সব জানালা অফ করে দিয়ে লাইট জালিয়ে পড়তে বসলাম।পরীক্ষা যত নিকটে আসছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে ভয় বাড়ছে।

~~~~~~

” ওহ হ্যালো! কেমন আছো?”

ছাদে বসে বইয়ে মুখ গুজে থাকার মাঝেই পুরুষ কন্ঠ শুনে মাথা তুললাম।

এতোদিনে উনার পড়ায় অনেকটা উন্নতি হয়েছে আমার।পড়ার পাশাপাশি উনি অনেক ইন্সপায়ার দেয় পড়া নিয়ে।সেল্ফ কনফিডেন্স এর ইম্পর্টেন্টও বুঝিয়েছে।
ভালো লাগে শুনতে অনেকটা ইন্সপায়ার পাওয়া যায় এইসব কথায়।পুরো লেকচারার মনে হয় তখন উনাকে।

” শুনতে পাচ্ছো না নাকি?”

সামনে নেহাল ভাইয়াকে দেখে ভ্রু কুচকালাম।এইটা সেই ছেলে যার জন্য আমি হাতে ব্যাথা পেয়েছিলাম গতবার ছাদে ধাক্কা খেয়ে।তারপরে নিচে আরেকবার দেখতে পেয়ে ফায়াজকে জিজ্ঞাসা করলাম কে এই ছেলে ও তো এক দেখায় বলে দিলো এইটা হলো আমাদের বাড়িওয়ালার ছোট ছেলে নেহাল ভাইয়া।

ও যেহেতু ভাইয়া বলল তাই আমিও ভাইয়া বলে চিহ্নিত করলাম।কিন্তু আমার সাথে হাই হ্যালো করার তো কোনো কারন নেই
উনি আমাকেই উদ্দেশ্য করে বলেছে কিনা বুঝার জন্য বই দুই পায়ের ভাজে রেখে উনার দিকে তাকালাম।উনি ছাদের ডান পাশের কর্নার থেকে ব্যাট হাতে নিয়ে আমার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাতেই আমি হুট করে বললাম

“আমাকে জিজ্ঞাস করলেন?”

আমার কথায় উনি হাল্কা হেসে বললেন

“আর কেউ আছে ছাদে?”

উনার কথায় আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে মুচকি হেসে বললাম

” আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি”

আমার কথা শেষ হতেই উনি উপর নিচ মাথা দোলালেন।কিছুক্ষন চুপ থেকে আবার বললেন

” তোমাদের তো এক্সাম কিছুদিনের মধ্যেই তাইনা?প্রিপারেশন কেমন?”

উনার কথা শুনে মনে মনে ভাবলাম” আমি কোন ক্লাসে পড়ি তাও জানে নাকি!”
কিন্তু কিছু না বলে উত্তরে ছোট করে বললাম

“জ্বী ভালোই।”

উনি আর কথা বাড়ালেন না ব্যাট নিয়ে নিচে নেমে পড়লেন।আমি আরও কিছুক্ষন পড়ে নিচে নামার প্রস্তুতি নিতেই আমাদের বিল্ডিং এর পাশের মাঠে চোখ পড়লো।
নেহাল ভাইয়া উনার ফ্রেন্ডদের সাথে হয়তো ক্রিকেট খেলছে।ওখান থেকেই তাহলে হৈ-হুল্লোড় শুনা যাচ্ছিল।

কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে দেখে নিচে নেমে পড়লাম।

~~~~~~~

শুক্রবার আজ তবুও উনার কাছে পড়তে গেলাম।

কাল রাতে কল করেছিলো নাম্বার কোথা থেকে পেলো এই প্রশ্ন অবশ্য জেগেছিল কিন্তু পাত্তা দেই নি আমার নাম্বার বের করা অবশ্য কোনো ব্যাপার না উনার জন্য।
কল দিয়েছিলো রাত সাড়ে ১১ টার দিকে।এতো রাতে আননোন নাম্বারে কল আসায় খানিকটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।তাই প্রথমবার তুলি নি,আমাকে কল না তুলতে দেখে মেসেজ দেয়
❝আমি রুদ্ধ।কল করছি ধরো❞

কল আসতেই কিছুক্ষন ভেবে ধরলাম।কল ধরতেই উনাকে কিচ্ছুটি বলতে না দেখে আমিই বললাম

” হ্যালো ”

ওই পাশ থেকে প্রায় ২ মিনিট পর কন্ঠ শুনতে পেলাম।

“কাল পড়তে আসবে।আজ যেহেতু পড়ালাম না কাল আমি ফ্রি আছি। বুঝলা?”

এতোক্ষণে খেয়াল করলাম উনি মেসেজেও আমাকে ‘ আপনি’ করে সম্বোধন না করে তুমি করে বলছে এবং এখনো ‘ তুমি’ বলে কথা বলছে।

কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালাম না এই বিষয় নিয়ে।আমি যেহেতু উনার থেকে ছোট তুমি বলাটাই মানানসই ।আমি কিছুক্ষন ভাবলাম কালকে আমি ফ্রি আছি কিনা তখন মনে আসলো আমি তো সারাদিনই ফ্রি থাকি হাহা!

“জ্বী ঠিক আছে এসে পড়বো টাইম মতো।”

বলতেই উনি কল কেটে দেন।

লাইব্রেরি তে ঢুকতে নিবো তখন উনাকে চোখে পড়লো কিছুটা দূর থেকে আসছে হয়তো নামাজ পড়ে, সামনেই একটা মসজিদ আছে।মাথায় তার টুপি গায়ে সাদা পাঞ্জাবি,পায়জামা।
দেখতে মাশাল্লাহ খুব ভালো লাগছে।ভেবে সাথে সাথে অপ্রিতীকরভাবে চোখ ফিরালাম।এতোক্ষণে উনি দ্রুততম হেটে লাইব্রেরীর কাছে এসে পড়ছে দেখে আমি তারাতারি ভিতরে প্রবেশ করলাম।

বেঞ্চে বসে কাধ থেকে ব্যাগ নামাতেই উনি লাইব্রেরির ভিতর প্রবেশ করলেন।এখন আর মাথায় টুপি নেই।চুল গুলো এলোমেলো ভাবে একপাশ হয়ে আছে।
বেঞ্চে বসতেই জানালার ফাক দিয়ে রোদ এসে উনার মুখে পড়তেই উনি চোখ ছোট ছোট করে বাহিরে তাকালেন। উনার বাদামি রঙের চোখের মনিটা তখন তীব্র ভাবে ধরা দিলো আমার চোখে।
মাথাটা দুপাশে নাড়িয়ে নিচে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।উনি ততক্ষণে আমার ব্যাগ থেকে বই বের করে দেখতে শুরু করেছেন।
আমার খাতা টাতা চেক করে আমার দিকে তাকিয়ে সুন্দর করে একটা হাসি দিতেই আমি কিছুটা থতমত খেয়ে গেলাম।উনি আমার অবস্থা থেকে বাকা হেসে বললেন

” নাইস। কালকে তো দেখছি ভালোই পড়াশুনা করেছো।উন্নতি হয়েছে বেশ তোমার।আমার কাছে পড়ে।”

উনি শেষের কথাটা কিছুটা এটিটিউড নিয়ে বললেন দেখে আমিও সাইডে তাকিয়ে মৃদু মুখ ভেংচি কাটলাম।

_

পড়া শেষ করে বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি রিকশার জন্য। তখনই উনি পাশে এসে দারলেন আমি কোনো সাড়াশব্দ করলাম না।
একটা রিকশা থামতেই উঠে বসতেই উনিও পাশে এসে বসলেন।দেখে অবাক হয়ে কিছু বলতে নেবো তখনি উনি রিকশাওয়ালা চাচা কে একটা ঠিকানা বলে ওখানে যেতে বলে সাথে সাথেই রিকশা চলতে শুরু করে।

” আপনি বসলেন কেনো এই রিকশায় আর কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?”

কোনো জবাব না দিয়ে হুট তোলা রিক্সার হুট খুলে দিলেন। তীব্র বাতাস টা তখন গায়ে লাগলো।আকাশে তাকাতেই দেখতে পেলাম মেঘের আনাগোনা। দূর দূরান্তের আকাশে কালো মেঘ ভেসে কাছে আসছে ধীরে ধীরে নিজের ভর হাল্কা করতে।

নির্জন একটা রাস্তার ধারে মিস্টার রুদ্ধ সাহেব রিকশা থামাতে বললেন।
বিশাল পাকা রাস্তা দুই পাশে গাছের বাহার সাথে ঝড়ো হাওয়া।
ভালো লাগার কথা, আমার অনেক গুলো ইচ্ছের মধ্যে এইটা একটা বলা যায়।কতশত স্বপ্ন আমার, ঘর থেকে না বেরানোর ফল এই স্বপ্ন গুলো।
কিন্তু উনার ইন্টেনশন বুঝতে পারছি না কেনো আমাকে এইখানে আনলো।

রিকশার ভাড়া মিটাতেই রিকশা ওয়ালা যেই পথ ধরে এসেছিলো সেই পথ ধরেই চলে গেলো খালি রিকশা নিয়ে।

এতোক্ষনে উনি আমার দিকে তাকালেন।আমি ঠোঁট কামড়ে উনার দিকেই তাকিয়ে ছিলাম।আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি বাকা হেসে আমার ব্যাগের উপরে হ্যান্ডেলে টেনে ধরে হাটা দিতেই আমি অপ্রস্তুত ভাবে পড়ে যেতে নিতেই নিজেকে সামলে নিয়ে উনার বেগে হাটতে লাগলাম।

“উফ! করছেন কি ছাড়ুন আমার ব্যাগ আহা!”

আমার কথা ছেড়ে দিলো উনি আমার ব্যাগ।তারপর পাঞ্জাবির পকেটে দুই হাত রেখে ডান হাতে কিছু বের করে আমার চুলে ঢুকিয়ে দিতেই দ্রুত হাতে তা হাতে নিলাম দেখার জন্য।

আমার ডায়েরির ভাজে রাখা ময়ূরের পালক দেখে চোখ বড় হয়ে গেলো সাথে মুখ হা।
সামনে তাকিয়ে দেখি উনি অনেকটা দূরে হাটছে আমার থেকে দৌড়ে উনার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম

” এইটা আমার ময়ুরের পালক না? আপনি কোথা থেকে পেলেন?”

উনি দূর পথে চোখ রেখে মৃদু হাসি রেখেই বললেন

“যেখানে রেখেছিলে সেখান থেকেই পেয়েছি।আকাশ থেকে টপকায় নি অফকোর্স। ”

আরেকদফা অবাক হলাম।আমার ডায়েরি কি তাহলে উনার কাছে।তারাতারি কাধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে দ্রুত আমার ডায়েরি খুজতে লাগলাম কিন্তু নাহ কোথাও পেলাম না।
কন্ঠ শক্ত করে তাৎক্ষনাৎ উনার উদ্দেশ্যে বললাম

“আমার ডায়েরি আপনি নিয়েছেন কেনো এক্ষুনি ফেরত দিন।অন্যের জিনিসে হাত কিভাবে লাগান আপনি?”

আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে উনি সামনে একটা মাঝারি সাইজের কৃষ্ণচূড়া গাছ দেখে হাটতে হাটতে বললেন

” কৃষ্ণচূড়া গাছ। তোমার তো ফেভারিট কৃষ্ণচূড়া ফুল তাই না?”

উনার কথা শুনে আবারও মেজাজ চটে গেলো আমার ফেভারিট ফুল সম্পর্কে কি করে জানলো এর মানে উনি আমার ডায়েরি পরেও ফেলেছে।নিজেকে শান্ত করার জন্য দীর্ঘ নিঃশ্বাস নিলাম।

তারপর উল্টো পথে হাটতে লাগলাম উনাকে কিছু না বলে। তখনি বৃষ্টি নামলো সাথে ঝড়ো বাতাস।সম্ভবত ছোট খাটো ঝড় শুরু হয়ে গেলো। এভাবে জোরে বৃষ্টি দেখে আৎকে গেলাম।পিছে ফিরে উনাকে খুজতে লাগলাম কিন্তু পিছে কোথাও নাই দেখে বুকটা ছেৎ করে উঠলো। উনি কি চলে গেলো আমাকে রেখে এখন আমি একলা একটা মেয়ে কোথায় যাবো চিনিও তো না কিচ্ছু। দম বন্ধ করে সামনে তাকাতে উনাকে চোখে পরে।বৃষ্টিতে ভিজে সাদা পাঞ্জাবি একদম দেহে লেপ্টে গেছে ভিতরে সাদা স্লিভলেস গেঞ্জিটা দেখা যাচ্ছে।হাতে তার কৃষ্ণচূড়া ফুল।
আমি চুল গুলো কোনোরকম হাত দিয়ে ঠিক করে ঘোমটা টানলাম।

উনি আমার কাছে এসে হাতে কৃষ্ণচূড়া ফুলটা ধরিয়ে দিয়ে হাত ধরে দ্রুত পায়ে হাটতে লাগলেন।
একদম নির্জন রাস্তা।ঝুম বৃষ্টি সাথের বাতাসটা যেনো শরীর ছুয়ে দিচ্ছে। কালো মেঘে অন্ধকার আকাশ।বাতাসের দাপটে গাছের ডালপালা সতেজতার আনন্দে একে অপরের সাথে বারি খাওয়ার আওয়াজ আসছে তীব্র।তারসাথে একটা ছেলের হাতের স্পর্শ।
সেইতো এক অন্যরকম রোমাঞ্চকর অনুভূতি!

চলবে,,,,

(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই ❤️❤️)#আমি_গোপনে_ভালোবেসেছি
#পর্বঃ৫
#writer: Mishmi Muntaha Moon

নিজের রুমে শুয়ে আছি।একটু আগে আমাকে আদার কড়া রংচা দিয়ে গেলো আম্মু।সর্দি লেগে গেলো সাথে খুক খুক কাশি তো ফ্রি।

আম্মুর বকা থেকে রেহায় পাবো তাও বৃষ্টি তে ভিজে তা অকল্পনীয়। কিন্তু আম্মুও কত আর বকবে শেষ পর্যন্ত চিন্তায় পড়ে গেলো আমার অসুস্থতা নিয়ে।তারাতারি রুমে পাঠায় জামা পাল্টাতে।
আর এখন চা নিয়ে এসেছে আমার কাশির আওয়াজ শুনে।চিন্তা করে জানি আর তাই তো এভাবে বকে।

রুদ্ধ সাহেব আমাকে পুরো বাড়ি পর্যন্ত দিয়ে গেছে।রিকশা থেকে আমি নামতেই উনি তাড়া দিয়ে আমাকে বাড়িতে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করতে বলে আর কিছু না বলে রিকশা নিয়ে চলে যায়।

হাতে তখনও আমার উনার দেওয়া কৃষ্ণচূড়া ফুল।হুটহাট টাইমে হাতে ধরিয়ে দিলো।আম্মুর থেকে লুকিয়ে রুমে এনে বারান্দায় থাকা একটা ভেস এ রেখে দিয়েছি।

~~~~~~~

পরীক্ষার আর ১০ দিন বাকি ভাবনা টা মাথায় যতভার আসছে ততবারই মাথাটা যেনো ঠিক থাকছে না চিন্তায় টেনশনে।

উনি এখন ১ ঘন্টার পরিবর্তে ২ ঘন্টা সময় করে পড়াচ্ছে।কিন্তু আমার ভয় টা কোনোমতেই কমছে না।কোচিং এ যেতে হয় কিছুদিন হলো।
আমার মাথায় তো এইটা ঢুকে না যে এই লাস্ট দিকে কলেজের স্যাররা কোচিং করে কি উল্টিয়ে ফেলতে চাইছে।মাথাটা গরম হয়ে যায়।

কোচিং এ যেতেই আজ অনেক দিন বাদে জিয়ার সাথে দেখা হলো।স্যার নিজের মতো পড়িয়ে যাচ্ছে আর জিয়া নিজের মতো গল্প করে যাচ্ছে অবশ্য আমার কাছ থেকে কোনো জবাব পাচ্ছে না তবুও ওর এতোদিনের কাহিনি একরকম জোর করে শোনাচ্ছে আমাকে।
৩০ মিনিট এর মতো ক্লাস করিয়ে স্যার চলে গেলো আরও থাকে ৩০ মিনিট যার কোনো খবর নেই স্যারের।

বিরক্ত হয়ে উঠে বেরিয়ে গেলাম ক্লাস থেকে।রাস্তায় যেতেই জিয়াও দৌড়ে এসে আমার পাশে দাড়ালো।
আমি বিভিন্ন গাড়ির দিকে চোখ বুলিয়ে যাচ্ছি।কোনো গাড়ি খালি পাওয়া যায় কিনা!
তার মধ্যেই দূর থেকে একটা বাইক দেখে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম। আমি যাকে দেখতে পাচ্ছি আসলেই সেই কিনা!

বাইক টা আমাদের থেকে একটু দূরে পার্ক করে নেহাল ভাইয়া আমাদের সামনে এসে দারাতেই জিয়ার কন্ঠ শুনে ওর দিকে তাকালাম।

“আরেহ নেহাল ভাইয়া নাকি!”

ওর কথায় এক ব্রু কুচকে ঘার বাকা করলাম।মানে পৃথিবীর সব ছেলেকেই এই মেয়ে চিনে নাকি।

” ওহহো জিয়া সুন্দরী! তুমি এই কলেজে পরো নাকি?”

” অবশ্যই, কেনো আপনি জানতেন না নাকি!”

” কে জানে মাথায় নেই তো!মাথায় সারাদিন কতো কিছু ঢুকে মাথায় তার মধ্যে তোমার কলজের কথা টা ভুলে গিয়েছিলাম হাহা”

উনার হাসির সাথে জিয়াও হাসলো।ওদের হাসি দেখে অবাক হলাম।এতো ছোটখাটো বিষয়ে হাসতে হয় নাকি।
আমি চাপা স্বরে জিয়াকে বললাম

“কিরে জিয়া! এমন ছেলেকি আদৌ আছে যাকে তুই চিনিস না?”

আমার কথায় জিয়া হাসির রেখা টেনেই আমার হাতে চাপড় দিয়ে বলল

” ধুর কি যে বলিস। নেহাল ভাইয়া তো তোদের বাড়িওয়ালার ছেলে।আমি চিনবো না তাহলে এক এলাকায়ই তো থাকি।”

ওর কথা চোখ ঘিরিয়ে অন্যদিকে চাইলাম।তখনই নেহাল ভাইয়া আমার উদ্দেশ্যে বলল

” আরে ফিয়ানা না।তুমিও এই কলেজে পড়ো?হুম আন্টি তো বলল ওইদিন তোমার একটু খেয়াল রাখতে।অনেক টেনশন করে তোমাকে নিয়ে উনি।”

উনার কথায় আরেকটু অবাক হয়ে ব্রু কুচকালাম।কি বলে আম্মুর সাথে উনার এতোই সখ্যতা নাকি যে আমাকে দেখে শুনে রাখতে বলবে।অবশ্য আম্মুর সাথে বাড়িওয়ালা আন্টির খুবই সখ্যতা দেখলাম।হয়তো বলেছে।

আমাকে কিছু বলতে না দেখে উনি আবারও বললেন

” আমি তো বাড়িতেই যাচ্ছি। চলো তোমাকেও নিয়ে যাই।”

মুহূর্তেই দম আটকে গেলো।বলে কি এই ছেলে আমি যাবো উনার সাথে তাও আবার বাইক এ করে কক্ষনও না।

” নাহ ভাইয়া।আমি চলে যাবো জিয়ার সাথে আপনি চলে যান।”

আমার কথা শেষ হতে না হতেই জিয়া বলল

” নারে ফিয়ানা আমি তো বাড়িতে না আমার আপুর বাড়িতে যাবো।কাল পরশু কোচিং এও আসবো না।তুই বরং নেহাল ভাইয়ার সাথেই চলে যা।”

ওর কথায় চোখ রাঙিয়ে তাকালাম ওর দিকে।এখন ওর বলার কি প্রয়োজন ছিলো।রাগ লাগলো কিছুটা এখন কি বলবো আমি।

” হুম তুমি আমার সাথেই চলো রাস্তায় এখন রিকশা পাবা না।”

মাথাটা নিচু করে দীর্ঘশ্বাস নিলাম।নেহাল ভাইয়া চুল হাত দিয়ে বেকব্রাশ করতে করতে বাইক এর দিকে এগুচ্ছে।পড়নে তার সাদা শার্টের সাথে জলপাই রঙের জ্যাকেট।

উনার পথ অনুযায়ী পা বাড়াতেই নেহাল ভাইয়ার পা থেমে যেতে দেখে আমি নিচ থেকে মাথা তুলে তাকাতেই রুদ্ধ সাহেবকে দেখে চমকে তাকাই।

” আরেহ রুদ্ধ ভাই। কেমন আছেন ভাই?”

আরেকদফা চমক খেলাম নেহাল ভাইয়া কে উনাকে ভাই বলতে শুনে।উনাকে চিনে আগে থেকেই।

নেহাল ভাইয়ার কথার জবাব না দিয়ে ঘাড় বাকিয়ে উনি আমার দিকে একপলক তাকালেন তারপর আবারও নেহাল ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে গম্ভীরমুখে বললেন

” ভালো আছি। তুমি ভালো আছো?”

” জ্বী ভাই।আপনি এইখানে কোনো কাজ ছিলো নাকি?”

” নাহ।তোমার কি কাজ এইখানে”

উনি ডান ব্রু উচিয়ে প্রশ্ন করলেন। জবাবে নেহাল ভাইয়া বললেন

” এইভাবেই আরকি এসেছিলাম।এখন একটু ফিয়ানা আমাদের বিল্ডিং এই থাকে মেয়েটা ওকে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিলাম।”

নেহাল ভাইয়ার জবাবে উনি কিছুক্ষন চুপ থেকে আমার দিকে পা বারালেন।আমার পাশে এসে উনার বা হাতে আমার ডান হাতের কবজি চেপে ধরে নেহাল ভাইয়ার উদ্দেশ্যে বললেন

” আই নো।ওর সাথে আমার কিছু কাজ আছে।তুমি একাই চলে যাও”

বলেই মুচকি হেসে নেহাল ভাইয়ার বিপরীত রাস্তা ধরে হাটতে লাগলো।আমিও কি আর বলবো নেহাল ভাইয়ার সাথে বাইকে যাওয়ার থেকে উনার সাথে যাওয়াটা উত্তম আমার কাছে।

কিছুদূর যেতেই উনি আমার ধরা হাতটা ছেড়ে দিয়ে আমার থেকে একপা আগে হাটতে লাগলেন।আমিও পিছে পিছে হাটছি কিন্তু উনি যে কোন পথ দিয়ে যাচ্ছে সেইটার খেয়াল নেই আমার আমি উনার পায়ের দিকে তাকিয়ে হাটছি।

কিছুক্ষন হেটে হঠাৎ থেমে যাওয়ায় উনার হাতের সাথে হাল্কা ধাক্কা খেয়ে থেমে গিয়ে উনার দিকে তাকাই।সামনে একটা রক্তজবা গাছ।অতিরিক্ত পরিমানে ফুল হয়ে আছে গাছটায়। দেখে আমি অপলক দৃষ্টিতে হেটে গাছের সামনে গিয়ে দারালাম।
পা বাড়িয়েও একটা ফুলও নিতে না পেরে মুখ গোমড়া করে শ্বাস ফেললাম।

” ফুল চাই?”

তখনই উনার মৃদু কন্ঠস্বরে উনার দিকে তাকালাম।সাদা টি শার্টের উপর ক্রিম কালার শার্ট স্লিভ গুলো গুটানো কনুইয়ের একটু নিচ পর্যন্ত সাথে সাদা জিন্স।
উনাকে পর্যবেক্ষণ করলাম কিন্তু কোনো জবাব দিলাম না।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে ব্রু দুটো সামান্য কুচকে আমাকে পাশ কাটিয়ে হাত উচিয়ে দুটো রক্তজবা ছিড়ে আমার দিকে বারিয়ে দিতেই আমি একপলক উনার চোখে তাকালাম
উফ উনার চোখটা একটু বেশি সুন্দর তাকালে তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে হয় তারউপর মনিটা একদম হৃদয়স্পর্শী।

মুচকি হেসে উনার বারিয়ে দেওয়া হাত থেকে জবা দুইটা নিয়ে দেখতে লাগলাম।

_
আজও উনি আমায় বাড়িতে পৌছে দিলেন।আমিও উনাকে বিদায় জানিয়ে গেট দিয়ে ঢুকে পরলাম।

রুমে ঢুকে ক্লান্ত পায়ে বারান্দায় গিয়ে দারালাম।কর্নারের ভেসে কৃষ্ণচূড়া ফুলটা নেতিয়ে পরেছে।তার থেকে কয়েকটা পাপড়ি ছিড়ে নিলাম আর হাতের একটা জবা ভেস এ কৃষ্ণচূড়া ফুলের পাশে রেখে আরেকটা ফুল হাতে নিয়ে রুমে ঢুকলাম।

ছেলেদের হাত ধরার অনুভূতি আমি কখনো পাই নি সত্যি বলতে। ভাই ব্রাদারের সাথে ততোটা ধরাধরির সম্পর্ক আমার না। তবুও হয়তো ধরা হয়েছে সেই ব্যাপার আলাদা। কিন্তু ভাইদের ছাড়া বাহিরের পুরুষ ব্যাক্তির সংস্পর্শে কখনো যাওয়া হয়নি।উনিই হয়তো প্রথম।

পড়ার টেবিল থেকে নতুন একটা ডায়েরি বের করে পাতার ভাজে কৃষ্ণচুড়ার পাপড়ি আর একটা আস্ত জবা রেখে দিয়ে ডায়েরি বন্ধ করে ড্রয়ারে রেখে দিলাম।
উনার দেওয়া দ্বিতীয় ফুল জবা,,,,,।

~~~~~

সারাদিন পাড় হয়ে অন্ধকার ঘনিয়ে রাত পাড়ি জমালো।বারান্দায় দারিয়ে আছি নিঃস্থব্দ পরিবেশ।বাতাসের সাথে হাসনাহেনা ফুলের সুগন্ধ ভেসে আসছে যার জন্য আমি জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি আর সুগন্ধ নিচ্ছি ভালো লাগছে।

আজ কলজে যাই নি রুদ্ধ সাহেবের কাছে পড়তেও যাই নি।আজ বাড়িতে থেকে যাওয়ায় আম্মু আব্বু আর ফায়াজ বড় ফুপ্পিদের বাড়ি গেছে রাতেই এসে পরবে। বেশি দূর না ৩০ মিনিটের রাস্তা।
আমার পরীক্ষার সুবাদে আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় নি।আমার যেতেও ভালো লাগে না ফুপ্পিদের বাসায় গেলেই আমার বিয়ের কথা।অবশ্য আম্মুরা একলা গেলে যে করবে না তা না।কে জানে আবার কি করে ফুপ্পি।
উনাদের ভাবনা বাদ দিয়ে সামনের বড় কদম গাছটায় নজর দিলাম রাস্তার বাম পাশটা গাছটা নিজ দাপটে দাঁড়িয়ে আছে।
ফুল ফোটা শুরু হয়েছে গ্রীষ্মের শেষ দিক বর্ষার শুরু তো।অনেক ফুল চোখে পরছে।আহা!কি সুন্দরই না লাগছে দেখতে।
প্রত্যেকবার খালি তাকিয়ে দেখি কিন্তু নিতে পারিনা কারণ গাছ টা অনেক বড়। ফুল নিতে হলে গাছে উঠতে হবে।আর কে দেবে আমাকে গাছে কষ্ট করে উঠে কদম ফুল পেরে।আমার ভাইটাও গাছে উঠতে পারে না।দুঃখ!

ভাবনার মাঝেই একটা রিকশা দেখলাম আমাদের বিল্ডিং এর পাশে দারালো। আমাদের ফ্ল্যাট টা তৃতীয় তলায়।
প্রথম ভাবলাম আম্মুরা এসে পরেছে কিন্তু পরমুহূর্তেই অন্ধকারে একটা পুরুষের প্রতিচ্ছবি দেখে নিশ্চিত হলাম আম্মুরা না।

অনেক ক্ষন হলো কিন্তু ছেলেটা আমাদের দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে বিল্ডিংয়ের দিকে মুখ করে।হঠাৎ মনে হলো আমার বারান্দায় তাকিয়ে আছে।
ব্রু কুচকে বারান্দার লাইটটা অফ করে দিলাম।যদিও আমাকে দেখে তাহলে আর দেখা যাবেনা।

চলবে,,,,

(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই ❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here