আমি গোপনে ভালোবেসেছি পর্ব -২+৩

#আমি_গোপনে_ভালোবেসেছি
#পর্বঃ২
#writer: Mishmi_muntaha_moon

সকালে উঠেই মাথা টা খারাপ হয়ে গেলো।মুখ কালো করে খোলা বইয়ের পাতায় তাকালাম।সবই নতুন কিচ্ছুটি পড়া হলো না বরং ঘুমালাম পড়ে পড়ে।

ক্ষুদায় পেট মুচড়ে উঠতেই মনে পড়লো কালকে রাত্রে কিছু খাওয়া হয় নি।ফ্রেশ হয়ে বাহিরে যেতেই সোফায় আমার ছোট ভাই ফায়াজকে চোখে পড়লো খাচ্ছে বসে।তীক্ষ্ণ দৃষ্টির ঝলকানি দিয়ে রান্নাঘরে পা ফেললাম।আম্মু আমাকে দেখে হাতে রুটির থাল ধরিয়ে দিলো। রুটি নিয়ে সোফায় গিয়ে বসে খাওয়া দাওয়া শেষ করে উঠে দারাতেই আম্মু বলল

“তোমার বাবা আসছে আজকে। আজকে কোথাও যাবা না বলে দিলাম।”

আম্মুর কথায় বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে বললাম

“আমার এক্সাম সামনে। বাহিরে তো যেতেই হবে আমার লাইব্রেরি তে যেতে হবে কিছু বইয়ের জন্য। আমি এখনি বের হবো।”

মার চাহনি দেখে আবারও বললাম

“জিয়া যাবে আমার সাথে”

আম্মু যেমো কিছুটা ভরসা পেলো। টিভির দিকে নজর রেখে বলল

“তারাতাড়ি ফিরবে।

আম্মুর কথা শুনে মন কিছুটা ভালো হলো।রুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে একটা স্কাই ব্লু রঙের গাউন পরে নিলাম সাথে ওড়না দিয়ে ঘোমটা টেনে ব্যাগ নিয়ে বাহিরে পা ফেললাম।

নিচে যেতেই রাস্তার ধারে জিয়াকে দেখে মুচকি হেসে ওর দিকে পা বারালাম।কাছে গিয়ে দারাতেই মুখ বাকিয়ে বলল

” আমার কাজের সময় ধারে কাছেও পাওয়া যায় না।নিজেরটার সময় ঠিকই কল করে ডাকা। ”

ওর কথা শুনে কিছুটা মন খারাপ হলো কিন্তু ঠিকই বলেছে মেয়েটা আমার প্রতিটি কাজে সবার আগে হেল্পিং হেন্ড হিসেবে ওই এগিয়ে আসে।

আমি ওর দিকে ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে বললাম

“হেল্প করে খোটা দেয়া একদমই ভালো কথা নয়।”

আমার কথায় মুখ ভেংচি কেটে হাত দুটো বুকে বেধে দারালো।ওর মুখ দেখে মুচকি হেসে রিকশা থামাতে ব্যস্ত হয়ে পরলাম।

~~~~

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েছে।কিন্তু এখনো বাড়ি ফিরা হয় নি।আম্মুর রাগান্বিত মুখ মুখে ভেসে উঠতেই বইয়ের উপর মাথা রেখে সামনের বড় জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালাম।
দেড় মাস এর মত আছে পরীক্ষার কিন্তু আমার প্রিপারেশন তেমন ভালো না।
আম্মুর কথা মাথায় আসতেই বুক ধক করে উঠলো।উনি সোজা কথা আমার সামনে রেখেছেন।
জিপিএ ভালো না আসলে পড়ালেখা আর এগানো হবে না।উনাদের কথ্যমত পাত্রকে বিয়ে কিরে সংসার পাতানোর দায়িত্ব সম্পূর্ণ আমার।

চোখ বন্ধ করতেই টেবিলে কিছু বই রাখার শব্দে চোখ খুলে মাথা উঠালাম।সামনে উনাকে অর্থাৎ মহাশয় রুদ্ধ সাহেব কে দেখে অনুভূতি শুন্য দৃষ্টিতে তাকালাম।

আমাকে দেখে উনি গভীর দৃষ্টি ফেললো আমার দিকে।এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে চোখ ফিরিয়ে বইয়ের পাতায় দৃষ্টি নিবদ্ধ করলাম।
মাথাটা ধরে গেছে।কিন্তু কিছুই মাথায় ঢুকছে না তার উপর উনি সামনে এসে বসাতে আরও অসস্তি লাগছে।
কিছুক্ষনেই জিয়া ও বাহির থেকে এসে আমার পাশে বসতে কিছুটা স্বাভাবিক লাগলো।

“আরে ভাইয়া আপনি।”

জিয়ার কথা শুনে অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম।ওর এমন খুশি খুশি কন্ঠের কারন খুজে পেলাম না।
জিয়ার কথা শুনে উনার দিকে তাকালাম।উনিও বইয়ের থেকে চোখ সরিয়ে জিয়ার দিকে তাকিয়ে মুখটাকে হাস্যজ্বল করে মিষ্টি করে জবাব দিলো।

“আরেহ জিয়া নাকি।ভালো আছো?”

“হুম ভালো আছি আপনি ভালো আছেন”

“অবশ্যই ভালো একদিনের ব্যবধানে কি হতে পারে”

উনার কথা শুনে জিয়া আর কিছু না বলে আমার দিকে নজর দিলো।তারপর চিন্তিত কন্ঠে বলল

“কিরে ফিয়ানা তুই টিউটর ছাড়া কিভাবে পড়বি বল তো। সামনে পরীক্ষা।আমি তোকে বলেছিলাম আমির স্যারকে বল। এইকয়দিন উনার কাছেই পড়তে পারতি।

জিয়ার কথায় বাম হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরে মৃদুস্বরে বললাম

” নাহ উনার কাছে পড়বোনা।তুই চিন্তা করিস না আমি সামলে নিবো।”

বল্লামতো ঠিকই কিন্তু চিন্তিত আমিও বেশ।আমার কথা শেষ হতেই উনি গম্ভীর কন্ঠে বলল

“আপনি একা পড়ছেন টিচার ছাড়া মিস ফিয়ানা?প্রিপেরেশন তো ভালো মনে হচ্ছে না আপনার মুখ দেখে।”

উনার কথা শুনে মুখ ফুলিয়ে তাকালাম উনার দিকে।তারপর আবার দৃষ্টি বইয়ের দিকে রেখে বললাম

“এখন কি করার আমারই সব সামলাতে হবে আর এখন নতুন কোনো টিচারের কাছ থেকে তো শুরু করার সময় নেই।কি যে করবো পরীক্ষায় আল্লাহ মালুম।এইবার নিশ্চিত বিয়েটা হয়েই যাবে।”

লাস্ট কথাটা বিরবির করে বললাম।আমার কথার প্রতিউত্তরে উনি কিছুক্ষন চুপ থেকে উনার সামনে থাকা বইটা অফ করে বললেন

“আপনি চাইলে আমি আপনাকে পড়ায় হেল্প করতে পারি।এভাবে তো আমি কাউকে পড়াইনা অনেকে পড়তে চায় কিন্তু এই গল্ডেন অফার শুধু আপনার জন্য। ”

উনার কথা শুনে অবাক হলাম।এতো ভালো কথা উনার মুখ দিয়ে শুনে অবাক লাগছে।অবশ্য এইটা আমি জানি উনি পড়ায় অনেক ভালো।আম্মু অলওয়েজ পড়ালেখার ব্যাপারে একজন ব্রাইট স্টুডেন্ট এর এক্সাম্পাল দিলে উনার কথাই বলবে।

কিন্তু কালকের বিষয়টার পর ভিতর থেকে ইগো নামক ফিলিংসটা জেগে উঠলো।শক্ত কন্ঠে বললাম

“প্রয়োজন নেই।আমি সামলে নিতে পারবো।”

আমার কথা শুনে উনি এক ব্রু উঁচু করে আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালেন।তারপর বললেন।

“এস ইউর উইশ।”

বলে আর কিচ্ছু বললেন না সামনে থাকা অনেক গুলো বই থেকে কোনো একটা বই খুজতে লাগলো।

না তো বললাম কিন্তু এখনও সিলেবাসের সব যে আয়ত্তে আনতে পারি তা মাথায় আসতেই মাথায় চিন্তার দানা বাধলো।নিজের ইগোর জন্য যে এতোবড় একটা সুযোগ পা দিয়ে ঠেলে দেওয়া ঠিক হয় তাও বুঝলাম।আমার ভাবনার মাঝেই জিয়া ওর কনুই দিয়ে আমার হাতের উপর পাশটায় ধাক্কাদিয়ে কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলল

“কি করলি তুই পাগল্ কোথাকার এত্তোবড় একটা চান্স কি করে ভেস্তে যেতে দিতে পারিস।তুই পড়লে আমিও পড়তে পারতাম রুদ্ধ ভাইয়ার কাছে আহা,,,,!কেনো না বললি”

ওর কথা শুনে বাকা চোখে তাকালাম ওর দিকে তারপর আবার সামনে বসে থাকা মানুষটির দিকে তাকালাম উনি উনার কাঙ্ক্ষিত বইটি খুজে এতেই উঠে দাড়ালেন।আমার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকাতেই আমি চোখ নামিয়ে নিলাম।উনি বাহিরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই জিয়া আমাকে আরেকদফা বুঝাতে লাগলো

“দেখ তুই কিন্তু সুযোগ এর সৎ ব্যবহার করছিস না।আর মনে আছে তো এই পরীক্ষা তোর জন্য কত ইম্পর্ট্যান্ট। তুই এখন নিজের ভালোটা ভেবে নে।নিজের ভালো তো ছাগলও বোঝেরে”

ওর কথায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে গলা ঝাড়লাম।উনাকে ডাকতে একদম ইচ্ছে করছে না উনার হেল্প নেওয়ার ইচ্ছে তো আরও আগে নেই কিন্তু নিজের স্বার্থ টা কে না বোঝে।
সাত পাচ না ভেবে গলা উচিয়ে ডাকলাম।

“রুদ্ধ সাহেব!”

বলে নিজেই বোকা বলে গেলাম নিজের জিহবা দাত দিয়ে কাটলাম।
উনার সাথে বেশি একটা কথা বলতে হয় নি আমার আর বললে উনি এই যে বলে সম্বোধন করেছি। মনে মনে অবশ্য আমি রুদ্ধ সাহেবই বলতাম কিন্তু উনাকে কখনো বলি নি।

“জ্বী।আমাকে ডাকলেন?”

উনার কথায় সামনে তাকালাম।ঠোটের কোনে এক চিলতে হাসি।কি বলবো মুহূর্তেই গুলিয়ে ফেললাম। আমতা আমতা করতেই পাশ থেকে জিয়া বলল

“আমি বলছি ভাইয়া ও আপনার অফারটা এক্সেপ্ট করতে চাইছিলো আরকি।”

ওর কথা শুনে চোখ মুখ কুচকে ওর দিকে তাকালাম।আস্ত এক্টার বিরক্ত এই মেয়েটা আমার ইজ্জতের ফালুদা বানাতে এক মিনিট সময় ও নিলো না।আমাকে গুছিয়ে বলতেও দিলো না।

ভাবনার মাঝেই সামনে থেকে মৃদু হাসির রেখা ভেসে আসতেই উনার দিকে তাকালাম।উনি আগের জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকেই বলল

” আসলে কেউ হেল্প চাইলে আবার আমি না করতে পারি না।কাল সাড়ে ৪ টায় লাইব্রেরিতে আমার অপেক্ষা করুন আমি এখানেই আপনার সাথে দেখা করবো আই মিন ফর স্টাডি।”

বলে সামনের চুল গুলো পিছের দিকে ঠেলে দিকে ধপাধপ পা ফেলে চলে গেলো।
আর আমি উনার যাওয়ার পথে তাকিয়ে রইলাম।দেখা যাক কালকে কি হয়! উনার কাছে পরতে হবে ভাবলে কেমন যেনো আজব লাগে।কিন্তু কি করার একবার উনার কাছেও পড়ে দেখি।

~~~~~
যেইটার ভয় ছিলো ওইটাই হলো। বাড়িতে ফিরতে ফিরতে মাগরিবের আযান দিয়ে দিলো। রিকশার ভাড়া মিটিয়ে বাড়িতে ঢুকলাম।
দরজার কড়া নাড়তেই আম্মু এসে দরজা খুলে দিয়ে গম্ভীর মুখে চাইলেন।উনার চাহনি দেখেই মাথা নিচু করলাম।
কিন্তু অবাক করার বিষয় আম্মু কিছুই বলল না।ঘরে ঢুকে আব্বুর কন্ঠ পেয়ে উনার রুমে গিয়ে সালাম দিয়ে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে রুমে গিয়ে বসলাম।
আর ঘর শান্ত থাকার পিছনে যে আব্বুর হাত এইটাও বুঝলাম।
প্রশান্তির শ্বাস ফেলে বিছানায় গা এলাতেই আম্মু রুমে খাবার নিয়ে আসতেই আমি আমতা আমতা করে বললাম

“না মা খাবো না খেয়েছিলাম আমি বাইরে”

মিথ্যা বললাম আম্মুর বকার ভয়ে।নাহলে আবার কিচ্ছু খাই নি সারাদিন, এইটা নিয়েও বকাঝকা। আমার কথার পরিবর্তে আম্মু শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল

“ঢং করতে হবে না খেয়ে নাও তারাতারি।খেয়ে প্লেট পরিষ্কার করে রাখবে।”

বলে চলে গেলো।ক্ষিদে আমারও অনেক লেগেছিলো।কিছু খেয়ে নিতাম বাহির থেকে কিন্তু আমার কাছে বেশি টাকা ছিলো না। জিয়া খাওয়াতে চেয়েছে কিন্তু আমিই খাই নি অসস্তি লাগে অন্যের টাকা ব্যবহার করতে এই অভ্যাসের জন্যই পেটে কিছুই পড়ে নি।

খাবার খেয়ে নিতেই চোখ রাজ্যের ঘুম এসে ধরা দিলো।কিন্তু ঘুমালাম না রুমের বাহির থেকে একটা চক্কর দিয়ে এসে কিছুক্ষন পড়ার পর ঘুমালাম।
পরীক্ষার আগে কলেজ বন্ধ এই ব্যাপারটা আমার একদমই পছন্দ হয় নি।পরীক্ষার আগে স্ট্রিক্টলি কলেজ চলবে একদিন ও কলেজে বন্ধ যেনো না দেয় স্টুডেন্ট রা, সেই বিষয়ে বিশেষ খেয়াল দেয়া জরুরি কিন্তু তার পরিবর্তে উনারা কলেজে অফ করে রেখেছে।
ভাবতে ভাবতেই চোখ বন্ধ করলাম।

~~~~

ছাদে বসে আছি।কানে হেডফোন গুজা।গোসল সেরে ছাদে এলাম।রোদ নেই মেঘলা আকাশ।কিছুটা দূরের বড় ব্রিজটা দিয়ে সাই সাই করে একের পর এক গাড়ি চলছে বড় বড় বাস ও চোখ পড়ছে কিছুক্ষন পর পর।
অলসতাই ঘেরা শরীর টা কিছুটা মুচড়ে দোলনায় উঠিয়ে রাখা পা দুটি নিচে ঝুলিয়ে মোবাইলের স্ক্রিন অন করে টাইম দেখলাম।
৪ টা বাজে।কানের হেডফোন খুলে মোবাইকের স্ক্রিন অফ করে ওড়না ঠিক করে ধীড় পায়ে ছাদের গেটের দিকে পা বাড়াতে নিতেই সামনে থেকে দ্রুতগামী একটি ব্যাক্তির সাথে ধাক্কা লাগতেই স্টিলের গেটটিতে থাকা খসখসে কিছুর সাথে হাত লেগে হাত ছিলে গেলো।
মৃদু স্বরে আর্তনাদ করে কনুই চেপে ধরব দুপা পিছিয়ে গেলাম।
রাগে মাথাটা ধপ করে উঠলো। রিরি ভাব পাশে ফেলে গাল ফুলিয়ে সামনে তাকাতেই লম্বা করে একটা সুদর্শন যুবক নজরে এলো।

“ওপস সরি! ব্যাথা পেয়েছেন?

কথাটা কানে যেতেই মুখ ফিরালাম।এতো জোরে গেটের সাথে ধাক্কা খেলে যে কেউ ব্যাথা পাবে আমি তো সেখানে ছোটখাটোএকটা মেয়ে ব্যাথা পাবো স্বাভাবিক। কিন্তু উপরে কিছু বললাম না। বিরক্তি ভাব টা পাশে ফেলে মাথা নিচু করে বললাম।

” নাহ! ঠিক আছি আমি।”

আমার কথা শুনে উনি মৃদু হেসে বললেন

“ওহ তাহলে তো ভালোই।”

ছেলেটার কথা শুনে চোখ তুলে তাকালাম।গায়ে নেভিব্লু রঙের একটা শার্ট সাথে কালো ট্রাউজার।একঝাক চুল এলোমেলো হয়ে আছে।

আমার তাকিয়ে থাকার মাঝেই উনার কন্ঠস্বর ভেসে আসে।

” এক্সকিউজ মি!আপনার কিছু না হলে একটু সাইড দিন ছাদে যাবো।”

উনার কথা শুনে তারাহুরো করে চেপে দারালাম। উনি গেট পেরিয়ে ছাদে যেতেই দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। মনে মনে উনাকে নির্দয়ের সার্টিফিকেট দিয়ে নিচে যাওয়ার জন্য পা বারালাম।
#আমি_গোপনে_ভালোবেসেছি
#পর্বঃ৩
#writer: Mishmi Muntaha Moon

ঘর থেকে বেরোতে প্রায় ৪ টা ২০ বেজে গেলো।আর লাইব্রেরিতে পৌছালাম প্রায় ৪টা ৩৫ এ।
মাথার ঘুমটা টা আরেকবার টেনে ঠিক করে নিলাম। জিয়া বলল ও একটু পর আসবে তাই আর দেরি না করে একলাই চলে এলাম।
লাইব্রেরি তে প্রবেশ করে পুরো রুমে চোখ বুলাতেই কর্নারের একটা বেঞ্চে এক পায়ের উপর আরেকপা তুলে পিছে হেলাম দিয়ে আরামসে বসে থাকা ব্যাক্তি রুদ্ধ সাহেবকে নজরে পরলো।
আমি ধীর পায়ে গিয়ে উনার সামনের বেঞ্চে বসে ব্যাগ টেবিলে রাখতেই উনি হাতে থাকা মোটা বইটার থেকে চোখ সরিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আমার দিকে নিবদ্ধ করে গম্ভীর কন্ঠে বলল

” টাইমিং ইস দা ফার্স্ট প্রায়োরিটি মিস ফিয়ানা।”

উনার কথা শুনে চোখ ঘুরালাম।এই টাইমের লেকচার আমার একদমই ভালো লাগে না। আর একটু লেট হলে সমস্যাটা কোথায় জরুরি কাজ পড়ে যেতেই পারে যার জন্য টাইমের হেরফের হওয়া বড় কথা।ইটস নরমাল।
কিন্তু মুখ খুলে কিছুই বললাম না।
আমাকে চুপ থাকতে দেখে উনি কিছুক্ষন চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থেকে বললেন।

” সো যেই সাবজেক্ট আপনার কাছে বেশি কঠিন মনে হয় সেইটা থেকেই শুরু করবো। ফাস্ট।”

উনার কথা শুনে ভাবতে লাগলাম কোন সাবজেক্ট আমার কাছে বেশি কঠিন লাগে ভাবতেই মাথায় ম্যাথ বই ভেসে উঠলো।
ম্যাথ সাবজেক্ট এর বই বের করে সামনে রাখতেই উনি ব্রু কুচকালেন।অবাক কন্ঠে বললেন

” ম্যাথ! সিরিয়াসলি এইটা তো খুব সহজ একটা সাবজেক্ট। আচ্ছা আপনার প্রব্লেম গুলো দেখান আর কোন পর্যন্ত শেষ করেছে তাও দেখান।”

উনার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনলাম।ম্যাথ কে সহজ বলল শুনে নাক সিটকালাম।যাদের মাথাটা প্যাচগোচ উনাদেরই একমাত্র ম্যাথ সাবজেক্ট ভালো লাগে।
আমার মত সহজ সরল মাথায় ম্যাথের মত কঠিন সাবজেক্ট কমই ঢুকে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে উনার কথা মত দেখালাম আমার কতটুকু শেষ হয়েছে এবং প্রবলেম কি।
আমার সব দেখানো শেষ হতেই উনি ব্রু কুচকে চিন্তিত কন্ঠে বলল

“মিস ফিয়ানা আপনি তো দেখছি একেবারেই পিছিয়ে।অনেক হার্ডওয়ার্ক করতে হবে।একদম ভালো প্রিপারেশন না পরীক্ষার।”

উনার কথায় কিছুটা লো ফিল করলাম।সত্যি বলতে আগে যেই ম্যাথ টিচার এর কাছে পড়তাম উনার পড়াটা ততোটা মাথায় ঢুকতো না তবুও উনার কাছেই পড়েছি আর তাই এই দুর্গতি।

উনি আর কিছু না বলে সোজা অংক করাতে লাগলো এবং নিজের মত করে যতটা সম্ভব শুরু থেকে পড়াতে লাগলো।আমিও মনোযোগ দিয়া বুঝতে লাগলাম।

~~~~~

বাড়িতে ফিরতে ফিরতে প্রায় ৭ টা বেযে গেলো।
বাড়িতে ফিরে ড্রেস চেঞ্জ করে বিছানায় বসতেই আম্মু এলো ফায়াজকে সাথে নিয়ে।উনাদের আগমনে হাতে থাকা মোবাইল টা পাশে রেখে আম্মুর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেও উনি কঠিন গলায় বলল

” তোমাকে এতো পড়াশুনা করিয়ে কি লাভটা হচ্ছে যদি ছোট ভাইকেই না পড়াতে পারো।তুমি কি ৭ এর পড়া পরাতে পারবে না।ওর সামনে পরীক্ষা পড়ায় একটু হেল্প করতেই তো পারো। ”

আম্মুর কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। রেগে গিয়ে বললাম

” আমার পরীক্ষা সামনে আমি নিজের পড়া না পড়ে ওকে পড়াতে যাবো কেনো আর ও তো প্রাইভেট পড়ছেই তাহলে আবার এক্সট্রা আমার পরানোর প্রয়োজন আছে নাকি?”

” কেনো নেই।তোমার মত একটা বোন থাকলে তো প্রাইভেট পড়ারই প্রয়োজন পরে না তার পরেও তুমি একটু বাড়িতে সামান্য পড়াতে পারবে না।”

আবার এক কথা শুনে বিরক্ত হয়ে বললাম

” তোমার ছেলে আমার কথা শুনে উল্টো তর্ক করে আমার সাথে তুমি প্লিজ এখন আমার মাথা খারাপ করো না আমার সামনে পরীক্ষা পড়তে বসতে হবে তুমি পড়াও তোমার ছেলেকে।”

আমার কথার পরিবর্তে আর কিছু না বলে চলে গেল আম্মু।উনি চলে যেতেই ফায়াজ ও পা বাড়াতে নিতেই আমি গম্ভীর মুখে বললাম

” কোনো সমস্যা হলে আমাকে দেখাবি। এখন একা একা পড় নিজের রুমে গিয়ে।”

আমার কথা শুনে ও মুখ ভেংচি কেটে চলে গেলো।উফ আস্ত একটা হারামি ছেলেটা।
ওরা যেতেই মোবাইল বেজে উঠলো।স্ক্রিনে তাকাতেই জিয়া নামটা ভেসে উঠলো।রিসিভ করে কানে দিতেই উত্তেজিত হয়ে বলল

“কিরে রুদ্ধ ভাইয়া পড়িয়েছে তোকে? ”

ওর এমন কথায় বিরক্ত হলাম।

” তোর কেনো মনে হচ্ছে পড়াবে বলেও উনি আমাকে পড়াবে না। আর তুই আসবি বলেও এলি না কেনো।”.

“আরে বলিস না আর আমার স্যার টাইম পরিবর্তন করে এখন ৫টার দিকে পড়াতে আসে।তাহলে সাড়ে ৪ টার দিকে আমি তো তোর সাথে থাকতে পারবো না রে সরি”

ওর কথা শুনে কোনো রকম প্রতিক্রিয়া এলো না স্বাভাবিক ভাবেই বললাম

” ওহ আচ্ছা!”

আরও কিছুক্ষন ও আজাইরা কথাবার্তা বলে ফোন কাটতেই বিশাল এক হাম এসে জানান দিলো কতটা ঘুম চোখে হানা দিচ্ছে। ইদানীং প্রচুর ঘুম পায় আমার জাগতে বসতে ঘুম পায়।

খোলা চুল গুলো হাত খোপা করে রুম থেকে বেরোতেই আব্বুকে নজরে পরলে টিভির রুমে রাতের খবর দেখছে আর রুটি খাচ্ছে।আমাকে দেখে খেতে ডাক দিলো।আব্বু রাত্রে রুটি খায় উনার অলওয়েজ রুটিং।
আমিও গিয়ে আব্বুর সাথে কিছুটা খেয়ে রুমে চলে গেলাম।গিয়ে বিছানায় গুছাতেই মনে পরলো রুদ্ধ সাহেবে কথা।

” ইশ উনি যে পড়া দিয়েছিলো ভুলেই গিয়েছিলাম।উফফ!’

ফস করে নিঃশ্বাস ফেলে বই খাতা নিয়ে বসলাম।
উনার পড়ানোর ধরন টা না চাইতেও বলতে হবে খুবই ভালো।আর বোঝানোর টেলেন্ট টা তো আরো বেশ।একদিনেই উনার পড়ায় মুগ্ধতা প্রকাশ পেলো।একেবারে ঘিলুতে ঢুকিয়ে পড়ায়।

~~~~~~~

পরেরদিন আর রিস্ক নিলাম না একদমই ৪ টা বাজতেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরলাম বাড়ি থেকে। সবুজ রঙের ফুল হাতার একটা লীলেনের গাউন এর ওরনাটা দিয়ে একদম ভালো করে চুল গুলো ঢেকে নিলাম।বাহিরে অনেক ধুলাবালি রিকশা দিয়ে যাওয়ার ফলে চুল একদম বিগড়ে দেয় এই ধুলাবালি গুলো।

লাইব্রেরি তে প্রবেশ করে আজকে আর উনাকে দেখলাম না। মোবাইল বের করে দেখলাম ৪ টা ২৫ বাজে।
সবসময়ের মত কর্নারের বেঞ্চে সুষ্ঠ ভাবে বসতেই ক্লান্তপায়ে হেটে আসা কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিকে চোখে পড়লো।

এসেই পাশে থাকা চেয়ারে গা এলিয়ে প্রব্লেম গুলো দেখায় তাড়না দিতে আমি দেখালাম সব।
উনার দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেই উনি হাতের কলম দিয়ে ব্রু স্লাইড করতে করতে বললেন

” মিস ফিয়ানা আপনি কি বই নিয়ে বসেছিলেন আদৌ? ”

উনার কথা শুনে শুকনো গলা ভিজিয়ে নিয়ে দৃষ্টি ফেরালাম।তারপর মৃদু কন্ঠে বললাম

” অবশ্যই বই নিয়ে বসেছিলাম”

আমি কথা শেষ করার সাথে সাথেই উনি টেবিলে হাত দিয়ে একটা বাড়ি দিয়ে কঠোর গলায় বলল

” মিথ্যা কথা একদমই পছন্দ না আমার।আমি আপনাকে কয়টা করতে বলেছিলাম।শুধু পড়তে বসলেই তো হবে না।সব কমপ্লিট করতে হবে। আজকে মাফ করলাম। তারপর থেকে যেনো না হয়।

উনার কথায় সায় জানিয়ে মাথা নাড়ালাম।

পড়ার মধ্যে আর কোথাও নজর যায় নাই।কিন্তু মিস্টার রুদ্ধ সাহেব পুরো দেড় ঘন্টা পড়ানোর পর উনার কাছে পড়া শেষ হতেই বাহিরে তাকালাম সাথে সাথেই ভ্রু কুচকে গেলো।

লাইব্রেরি তে আসার আগেও যেই পরিবেশ পরিষ্কার ছিলো এখন মোটেও পরিবেশ পরিষ্কার না।আকাশ কালো মেঘে ঝড়াঝড়ি।
হাল্কা দমকা বাতাসে বৃষ্টির আভাস দিচ্ছে।মনে মনে ভাবলাম গ্রীষ্মের প্রথম বৃষ্টি শুরু হবে হয়তো। ঝড়ের পূর্বাভাস নিয়ে।

বাহির থেকে নজর সড়িয়ে সামনে তাকালাম। উনি মোবাইল হাতে আমার দিকেই তাকিয়ে ছিলো দেখে কিছুক্ষন আগের ভ্রু কুচকানো ভাব আরেকটু দৃঢ় হলো।
উনার সাথে চোখাচোখি হতেই উনি উঠে দাঁড়িয়ে মোবাইল পকেটে ঢুকায়।

কফি রঙের শার্টের স্লিভ গুটিয়ে চুল গুলো হাত দিয়ে বেকব্রাশ করে বাহিরের দিকে পা বাড়ায়।

উনার চলে যাওয়া দেখে তারাতারি ব্যাগ গুছিয়ে আমিও বেড়িয়ে পড়ি।
বাহিরের দমকা হাওয়া ওড়না স্বাভাবিক থাকছে না। ওড়নাটা এক হাত দিয়ে খাবলে ধরে সামনে তাকালাম ওপর পাড়ে রুদ্ধ সাহেব একটা রিকশা থামিয়ে দাঁড়িয়ে কারো সাথে কথা বলছে মোবাইল৩।
উনার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে চটজলদি বিশাল রাস্তায় তাকালাম নিজের জন্য একটা খালি রিকশা খোজার উদ্দেশ্যে।
ব্যস্ত পথে আমার অবলা দৃষ্টিতে কোনো রিকশা চোখে পরার আগেই পৃথিবীর বুকে এক পশলা বৃষ্টি ঝাপিয়ে পড়লো প্রবল ফোটার আকারে।

হুটহাট বৃষ্টির আগমনে মুখ হা হয়ে গেলো।মুখে অবাকের রেশ না কাটতেও হাত দিয়ে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টায় অস্থির হলাম।
অস্থির হয়ে চটজলদি পিছে ঘুরে লাইব্রেরির দিকে পা বাড়াতেই সামনে একটা রিকশা এসে থামলো।তারসাথেই অস্থির গলা ভেসে এলো

” মিস ফিয়ানা।তারতারি রিকশায় উঠে বসুন ফাস্ট।”

চলবে,,,

(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই ❤️❤️🖤🖤)
চলবে,,,,,

(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই ❤️❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here