আমি গোপনে ভালোবেসেছি পর্ব -০১

” আপনি আমাকে বিয়ে করে ফেলতে পারেন মিস, ফিয়ানা। খুবই ভদ্র ছেলে আমি।একদম আপনার লেখা চরিত্রের মত।”

লাইব্রেরি তে বড় ভাইয়া আর আমার ফ্রেন্ডের সামনে এভাবে বলায় অবাক হয়ে তাকালাম কথা বলা ব্যাক্তির দিকে। উনি আবারও ঠাট্টা করে বললো।

“একটা হ্যান্ডসাম পাত্রের খোজ ছিলো আপনার তাই না?আর আমি তো সেই ক্ষেত্রে একদম পার্ফেক্ট কি বলেন?

বলেই আবার হাল্কা দাত বের করে এবং বাদামি রঙের লেন্স ওয়ালা চোখ বন্ধ করে হাসলো।সাথে হেসে উঠলো উনার সাথে থাকা দুইটা ছেলে।

লজ্জায় রাগে মাথাটা পুরো বিগড়ে গেলো।আর সাথে তাও বুঝতে কষ্ট হলো না যে কাল লাস্ট যেই বইটা পরে রাখলাম তার ভিতিরেই নিশ্চিত আমার লেখা নোট টাও ভুলে রেখে গিয়েছিলাম।যা দেখে নিজের মতো সাজিয়ে আমার মজা উরাচ্ছে উনি অর্থাৎ রুদ্ধ আহমেদ।

অপরিচিত কেউ নন উনি বরং খুব ভালো করেই চিনি এই রুদ্ধ নামক পুরুষ কে।দেখতে তো মাশাল্লাহ সাথে ভদ্র ফেস।কিন্তু উনার কিছু কিছু বিহেভ দেখে মাঝেমধ্যে আস্ত একটা অসভ্য মনে হয়। সম্পর্কে আমার বাবার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুর ছেলে।অবশ্য উনার সাথে আমার বেশি হলে দু তিনবার দেখা হয়েছে।তাও পারিবারিক ভাবে।কিন্তু আজ এভাবে বলায় বিস্মিত হলাম।

আমি চোখমুখে ভীষণ ভাবে বিরক্তিভাব এনে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম

” আপনি আর হ্যান্ডসাম। হাসি পেলো খুব শুনে।”

আমার কথায় উনি আবারও হাসি হাসি মুখ করে বলল

“যাক যেমনই হই বিয়ে করার জন্য মেয়েরা লাইন ধরে থাকে।আপনার মত নোট লিখে বইয়ের ভিতরে রেখে যাই না। ”

উনি যে ইচ্ছে করে আমাকে এভাবে অপমান করছে খুব ভালো করেই বুঝলাম।আর উনার সাথে এভাবে তর্ক করলে যে আমার জন্য তা মঙ্গলজনক হবে না বরং ইজ্জতেই ফালুদা হবে তাও হাড়ে হাড়ে টের পেয়ে আর কথা না বাড়িয়ে বসা থেকে উঠে লাইব্রেরির বাহিরে হাটা ধরলাম।

সাথে আমার ক্লাসমেট জিয়া ও পিছু পিছু এসেই আমাকে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো।

“কিরে ফিয়ানা রুদ্ধ ভাইয়া কি সত্যি বলছিলো। তুই বিয়ের জন্য পাত্রের খোজ করে বেরাচ্ছসি নাকি?

জিয়ার কথা শুনে বড় বড় চোখ করে তাকালাম ওর দিকে।কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে জোড়সে এক ধমক দিয়ে বললাম

” কি আবোলতাবোল কথা বলিস তাও উনার মত মানুষের কথা শুনে।কি সাংঘাতিক ব্যাপার।

আমার কথা শুনে ও দৌড়ে আমার সামনে এসে পথ আটকে বলল

“উনার মত মানুষ মানে কি বলতে চাইছিস?রুদ্ধ ভাইয়ার মত মানুষ হয় নাকি!”

মাথাফাটা রোদ।শীতের শেষে গরম পড়েছে সবেমাত্র।রোদের তীব্রিতায় গলা শুকিয়ে কাঠ তার উপর মুখের অবস্থা বেহাল।উজ্জ্বল মুখটা যেনো রোদ্রতাপে কালটে ভাব পড়ে যাচ্ছে।

ডান হাতের বই গুলো মুখের উপর দিয়ে রোদের তাপ থেকে কিছুটা রেহাই পাওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে আরেক হাত দিয়ে জিয়া কে সামনে থেকে সরালাম এই বিষয়ে কোনোরকম কথা বলতে চাইছি না একদমই আমি।বাড়িতে ফিরতে হবে।

“দেখ আরেকদিন তোকে বিস্তারিত জানাবোনে এখন আমাকে যেতে দে।”

আমার কথায় আর উক্তি বারালো না জিয়া মন খারাপ করে বলল।

“তোদের বিল্ডিং এর পড়েই তো আমাদের বিল্ডিং ।একসাথেই যাই আর জাস্ট একটু কাজ আছে সামনের দোকানটাতে চল না আমার সাথে প্লিজ। ”

ওর অনুরোধ মাখা মুখ উপেক্ষা করলাম।তারাহুরো করে পা ফেলে মৃদু কন্ঠে বললাম।

“সরি বাট আমি আসতে পারবো না।তুই একা যা।

বলেই রিকশায় উঠে পরলাম।পিছন থেকে জিয়ার কন্ঠে আমার নাম শুনে রিকশা থেকে মাথা বের করে পিছনে তাকালাম। ফর্মাল লুক অর্থাৎ সাদা শার্ট কালো প্যান্ট সাথে গলায় টাই ঝুলানো দেখতে একদম পার্ফেক্ট জেন্টালম্যান লাগছে রুদ্ধ সাহেবকে।
পরমুহূর্তেই লাইব্রেরির কথা মনে পরতেই মুখে একরাশ তেতো মেঘ জমাট বাধলো।মুখ ফিরিয়ে নিলাম।

~~~~

বাড়িতে পৌছেই আম্মুর মুখোমুখি হতে হলো।আম্মুকে না বলে বের হওয়ার শাস্তি হিসেবে কি করতে হবে একদমই আন্দাজ করতে পারলাম না।ভেতরের ভয় টা সারা শরীর জুরে বহমান স্রোতের মত ভাসতে লাগলো।আম্মুকে ভয় পাই যতটুকু পাওয়া প্রয়োজন।
মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আম্মু গমগমে গলায় বলল

” না বলে সকাল সকাল কোথাও যাওয়া হলো?”

আম্মুর কথার পরিবর্তে আমি কি বলবো ভাবতে লাগলাম।আসলে ব্যাপার ততোটা জটিল না কিন্তু আমার ফেমিলিতে তা খুবই জটিল।
আমি খুবই পড়ুয়া না হলেও ততোটাও খারাপ ছাত্র না।নিজ উদ্যোগ এ কিছু করা নিজ পায়ে দাঁড়ানো আমার স্বপ্ন কিন্তু মিডাল ক্লাস ফেমিল তে যা হয় আরকি ২০ বছর পাড় হলেই বিয়ের চাপ মাথা পেড়িয়ে পুরো শরীরে সঞ্চারিত হতে থাকে তাও একদম কাটার মতো।
আমার আম্মুও সেই শ্রেণির মহিলা।আমি যে লাইব্রেরি তে যাই বাড়ির সব কাজ কার্বার রেখে একটা জবের পিছে পড়ে আছি তা আমার আম্মুর চাওয়ার বিপক্ষে।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে আম্মুর দিকে তাকালাম। উনার দৃষ্টি খুবই দৃঢ় এবং কঠিন। আমু মৃদু কন্ঠে বললাম

“একটা কাজ ছিলো আম্মু।তাই যেতে হয়েছিলো।”

আমার কথা শুনে আম্মু হুংকার দিয়ে বলল

“ফাইজলামি নাকি।আমার কথার বিপক্ষে কেনো তুমি যাও। আমি বলেছি তুমি ঘরের দায়িত্ব রেখে বাহিরে গিয়ে কাজের পিছু ছুটে বেরাও। তোমার বাবা কি মরে গেছে।আর তোমার বাবা বেচে থাকা পর্যন্ত তোমার এইসব ভাবতে হবে না।নিজের সংসার পাতার কথা ভাবো আর কত।পড়া লেখা তো বাদ দিতে বলছিনা।তাই না!”

বলে নিজ দায়িত্বে মন খারাপ করে চলে গেল।আমিও রুমে গেলাম।

~

মাগরিবের আযান কানে যেতেই শোয়া থেকে উঠে বসলাম।মাত্র চোখটা লেগেছিলো আর আযান দিয়ে দিলো।ঘুমুঘুমু চোখ নিয়ে বারান্দায় গিয়ে দারাতেই বারান্দায় রাখা ডাস্টবিন চোখ গেলো মুহুর্তেই মাথা বিগড়ে গেলো।দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে চিৎকার করতে লাগলাম।

“ফায়াজ,,,,,,কোথায় গেলি সামনে আয় নাহলে,,,,”

রেগে কান্না চলে আসছে। আমার চিৎকারে আম্মু ছুটে এসে ধমক দিয়ে বলল

“কি হলো এভাবে চিৎকার করছো কেনো। ফায়াজ তো বাহিরে।

রাগে চোটে চোখ দিয়ে একফোঁটা জল গরিয়ে পড়লো।রেগে দাতে দাত চেএ আম্মুকে উদ্দেশ্য করে বললাম।

” আমার সব আর্ট ডাস্টবিন এ কি করে গেলো।ওকে কতবার বলেছি আনার জিনিসপত্রে হাত দিতে না।তবুও কেনো ধরে।উফফ!”

আমার কথায় আম্মু থামিয়ে কিছুটা নিরব হয়ে বলল

“আচ্ছা বুঝলাম।ও আসলে আমি বকবো কিন্তু এতো দামি কিছু তো না কান্না করার মত তাই না।এভাবে চিৎকার চেচামেচি না করে রাগ নিয়ন্ত্রণ কর।

বলে আম্মু রান্নাঘরে দিকে পা বারালো।আমিও রেগে রুমে গিয়ে ধড়াস করে দরজা অফ করতে বাহির থেকে আম্মুর কন্ঠ ভেসে আসে।
কিন্তু সেই সবে কান দিলাম না।আর্ট করা আমার শখ।পড়ালেখার পাশাপাশি খুব সুন্দর আর্ট ও করি আমি।কিন্তু ওই আরকি ছোট ভাইবোন থাকলে যা হয় আরকি।

রাগ নিয়ন্ত্রণ করে বইখাতা নিয়ে বসলাম।সামনে পরীক্ষা। মধ্যবিত্ত হওয়ায় চারপাচটা টিউটর রেখে তো আর পরতে পারিনা যাও একটা ছিলো সেও অন্য কোথায় জব পেয়ে চলে গেছে তাই একাই পড়ি।

অনেক্ষন পড়ে ঘুমিয়ে পরলাম।কালকেও লাইব্রেরি তে যেতে হবে।
পরীক্ষায় একটা ভালো জিপিএ পাওয়াটা খবই জরুরি আমার দীর্ঘ পথের জন্য।নাহলে জীবন অকল্পনীয় বোঝা হয়ে দাঁড়াবে আমার কাছে।

চলবে,,,,,

#আমি_গোপনে_ভালোবেসেছি
#পর্বঃ ১
#writer: Mishmi Muntaha Moon

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here