#ইতিপূর্বে [০১]
“দেশের সবচেয়ে বড় আন্ডারগ্রাউন্ড ফিমেল মাফিয়া গ্যাং এর লিডার ইতি,কেমন লাগছে আমার মেহমানদারি? কোনো অসুবিধা হচ্ছে না তো?”
কথাটা শোনা মাত্রই ইতি রক্তচক্ষু নিয়ে তাকায় পূর্বের দিকে।
“তুমি নিজেকে খুব চালাক মনে কতো ইতি, রাইট?অবশ্য তা মনে করাও স্বাভাবিক।এখন পর্যন্ত এই গ্যাং এর কোনো মেম্বার এর পরিচয় খুজে পাওয়া যায় নি। যদিওবা কেউ তাদের ভুল করে দেখেও ফেলেছে তবে সে জীবিত অবস্থায় বেড়োতে পারেনি।কি সঠিক ইনফরমেশন দিলাম তো?”
ইতি এবার বেশ খানিকটা বিষ্ময় নিয়ে তাকায় পূর্বের দিকে।এতদিন ধরে এই বিষয়টা দেশের সবার থেকে আড়াল করে রেখেছে।কোনো নামি দামি ব্যাক্তিও জানতে পারিনি এই বিষয়ে।তাহলে পূর্ব কি করে জানলো?
পূর্ব:আরে আরে এতো ঘামছো কেনো ইতি?এটুকু তেই এতো অবাক হওয়ার তো কিছু নেই।এখনো তো অনেককক কিছুই জানার বাকি।
ইতি:কি জানো তুমি আমার ব্যাপারে?
পূর্ব:সেটা তোমার না জানলেও চলবে।কিন্তু হ্যা, তোমার সাহস আছে বলতে হবে।
ইতি:হা হা হা,আমার সাহসের কি ই বা দেখলে মিঃ এফ আর পূর্ব!আমার সাহসের চুল পরিমাণ ধারণাও তোমার নেই।
পূর্ব:ওহহোওও তাই তো!কিছু তো দেখলাম ই না। বাট ডোন্ট ওয়ারি।এই রুমে বন্দি থেকে তুমি যত খুশি সাহসিকতার পরিচয় দেও।কেমন?কারণ আমি না চাওয়া পর্যন্ত তুমি এখান থেকে বেরোতে পারবে না।
ইতি:হাহ,তুমি আমার ব্যাপারে এই জানো?তবে তোমায় জানিয়ে দেই,আমাকে আটকে রাখার চেষ্টাও করো না।কারণ ইতিকে আটকে রাখা কারোর পক্ষে সম্ভব নয়।
পূর্ব:তা নাহয় মেনে নিলাম।তবে আমি কিন্তু এখনো তোমার মুখটা দেখিনি।এতবড় সুযোগ কি হাতছারা করা যায়?
(ইতির মুখে মাস্ক পড়া ছিলো)
ইতি:খবরদার পূর্ব!এই দুঃসাহস ভুলেও দেখিও না,বাকিদের মতো তুমিও মরবে।
পূর্ব:পূর্ব কে মারা আর মরুভূমিতে বৃষ্টি নামানো সমান ব্যাপার।
ইতি:এতো কনফিডেন্স! গুড,আই লাইক ইট।
পূর্ব:জেনে রেখো মিস ইতি,তুমি যদি ডালে ডালে চলো তবে আমিও চলি পাতায় পাতায়।
ইতি:আর তুমি যদি পাতায় পাতায় চলো তবে আমিও চলি শিরায় শিরায়।
কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গেই রশি দিয়ে বাধা বাধন থেকে নিজের হাত খুব সতর্কতার সঙ্গে ছাড়িয়ে নেয়।মুহূর্তের মাঝেই ঘাড়ের পিছন থেকে রিভলভার বের করে তাক করে পূর্বের দিকে। হঠাত করে এমন কিছু হওয়ায় পূর্ব অনেকটা ভরকে যায়।পাশ থেকে কেউ আসতে গেলে ইতি হুট করে সেখানে সতর্কতার সঙ্গে গুলি চালায়।গুলিটাও ঠিক ইতির নিশানা অনুযায়ী লোকটার হাতের পাশ চিড়ে বেড়িয়ে যায়।হাত থেকে গলগল করে রক্ত বেরোতে থাকে তার।তা দেখে বাকিরা প্রাণের ভয়ে পিছিয়ে যায়।
ইতি তা দেখে বাকা হাসি দেয়।
ইতি: এবার বলুন মিঃপূর্ব!কি যেনো বলছিলে?আমি এখান থেকে বেরোতে পারবোনা তাই তো? ইশশ,তোমার সব আশায় জল ঢেলে দিলাম। আগেই বলেছি,আমার সঙ্গে যুদ্ধে নামার চেষ্টাও করবে না।ফল টা তোমার জন্যই খারাপ হবে। ইচ্ছে তো করছে তোমায় এখনি ফুসস,হা হা হা। কিন্তু না,এতো সাহসি একজন মানুষকে এতো সহজে মারি কি করে!তবে হ্যা,ফিরে আসবো আমি,কোনো একদিন হুট করে।তৈরি থেকো মিঃ এফ আর পি।
কথাটা বলে এক মিনিট ও দাড়ালো না ইতি।বেড়িয়ে গেলো সেখান থেকে।মুহূর্তের মাঝে কোথায় চলে গেলো কেউ খুজেও পেলো না।
একটি ছেলে: ভাই এই মেয়েকে তো খুজেই পেলাম না।
পূর্ব: আর পাবেও না। (দাতে দাত চেপে বলে কথাটা) ওকে একবার চোখের আড়াল করলে আর কেউ খুজে পাবেনা।
কথাটা বলেই সজোরে পাশে থাকা চেয়ারে লাথি মারে।
পূর্ব: ইউ পেইড ফর দিস ইতি।ফারহাদ রাফসান পূর্বের থেকে এতো সহজে পালাতে পারবেনা তুমি।
_________🍂
অরন্য:ড্যাড আমি এই মেয়েটার সাথে কোনো মতেই এই ভুতুড়ে বাড়িতে থাকতে পারবো না।
নিধি:এহহহ,এমনভাবে বলছে যেনো আমি হাত পা ধরছি থাকার জন্য।আঙ্কেল,ওকে বলে দাও না থাকতে চাইলে কোনো দরকার নেই।
অরন্যের বাবা:আহা নিধি মা রাগ করছো কেনো? জানোই তো আমার ছেলেটা কেমন,ওর কথায় কিছু মনে করোনা তুমি।দেখো তোমার বাবা আমায় দায়িত্ব দিয়ে গেছে তোমাদের দেখে রাখার। আমার ও জরুরি কাজে জেতে হচ্ছে তাই অরন্য এখানেই থাকবে দুটো দিন।আর তুই কি বলছিস এটা ভুতুরে বাড়ি!শহরের থেকে সামান্য ই তো দূড়,আর এই রাজপ্রসাদ এর মতো বাড়ি ভুতুড়ে কি করে হয়?
অরন্য:এতো বড় বাড়ি।সেখানে মাত্র তিনচারজন থাকলে তো ভুতুড়েই মনে হবে তাই না।
অরন্যের কথা শেষ হওয়ার মাঝেই বাইক নিয়ে ছায়াবিথী নিবাস এ প্রবেশ করলো একটি মেয়ে। বাড়ির পাশেই বিশাল ফাকা যায়গায় এসে বাইক পার্ক করে নেমে এলো সে।
তাকে দেখা মাত্রই সকলের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
নিধি:আরে ঐতো আপু চলে এসেছে।
অরন্যের বাবা:কি ব্যাপার নিলা মা?এতো দেড়ি হলো যে?তোমার জন্যই তো অপেক্ষা করছিলাম।
নিলাঞ্জনা:(সবার মাঝে এসে) সরি আঙ্কেল একটু দেড়ি হয়ে গেলো।
কিহ?কিছু বুঝতে পারছেন না তাইতো?ঠিক আছে পরিচয় করিয়ে দেই।
নিলাঞ্জনা মাহতাব।বাবা মায়ের খুব আদরের মেয়ে এবং জমিদার বাড়ির রাজকুমারি। যদিও আগের মতো রাজত্ব নেই তবুও এলাকার সবাই অনেক সম্মান করেন জমিদার বাড়ির সকলকে।
প্রায় ২০০ বছর আগে থেকে তাদের জমিদারি চলে আসছে।
নিলাঞ্জনা কে সবাই ভালোবেসে নিলা বা নিলু বলেই ডাকে।এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ার এর ছাত্রী সে।গায়ের রঙ ধবধবে ফরসা নয়,উজ্জ্বল শ্যামবর্নের বললেই চলে।
নিধিশিখা মাহতাব।নিলাঞ্জনার একমাত্র ফুফাতো বোন।তবে বাবা মা খুব ছোটবেলায় এক এক্সিডেন্ট এ মারা যাওয়ায় নিলার বাবা মা ওকে নিজের মেয়ের চোখেই দেখে।
অরন্য চৌধুরী,বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে হওয়ায় অনেকটা আদরে বাদর তৈরি হয়েছে সে।তার দুই চোখের শত্রু হলো নিধি,নিধির ও একই অবস্থা।
অরন্যের বাবা নিলার বাবার খুব ভালো বন্ধু+বিজনেস পার্টনার।নিলার বাবা কিছুদিনের জন্য ব্যাবসার কাজে দেশের বাইরে গেছে আর মা তার প্রিয় বান্ধুবির বিয়েতে।তাই নিলাঞ্জনার বাবা মেয়েদের এবং অসুস্থ বাবার দায়িত্ব অরন্যের বাবাকেই দিয়ে গেছে দু দিনের জন্য।
অনেক কিছু জানা হয়ছে এবার আসল ঘটনায় ফেরা যাক।
অরন্য:ভালোই হলো তুই অন্তত চলে এলি।এই মেয়ের সঙ্গে থাকা ইম্পসিবল।
নিধি:ইউ জাস্ট শাট আপ।তোমাকে কে থাকতে বলেছে হ্যা?
নিলাঞ্জনা:স্টপ ইট।নিধি তুই আগে বল দাদাভাই এর কি অবস্থা?আমার খোজ করেছিলো?
নিধি:আপু দাদাভাই তোকে ডেকেছিলো কয়েকবার আমি বলেছি তুই বাগানে।তাড়াতারি যা এখন।
নিলাঞ্জনা:ওহ শিট!চশমা টা দে।ড্রেস… যা আছে চলবে।
নিধি:এই নে অলরেডি রেখে দিয়েছি হাতে। (চশমা টা দিয়ে।)
নিলাঞ্জনা এবার চশমা টা চোখে দিয়ে গলায় পেঁচিয়ে রাখা ওড়নাটা মাথায় দিয়ে নেয়ে।
উঁচু খোপা করে রাখা চুলগুলো খুলে নেয়।কোনোরকম হাত দিয়ে টেনে সোজা সিতি কেটে নেয় এবং নিচু করে ঢিলেঢালা খোপা করে পা বাড়ায় রঞ্জন মাহতাব এর ঘড়ের উদ্দেশ্যে।তখনি নিধি পিছন থেকে ডেকে বলে,
নিধি:আর কতোদিন এভাবে এক্টিং করবি আপু?
নিলাঞ্জনা:যতদিন দাদাভাই বেচে আছে ততদিন। কারণ আমার পক্ষে দাদাভাই এর পছন্দের মতো হওয়া সম্ভব নয়।
গম্ভির মুখশ্রি ধারণ করে কথাটা বলে চলে যায় নিলাঞ্জনা।
কিন্তু রঞ্জন মাহতাব এর রুমে এসে যা দেখলো তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলো না…
#চলবে
#