ইতিপূর্বে পর্ব ২

#ইতিপূর্বে [০২]
“বাচ্চাটা অ্যাবরশন করিয়ে ফেলো সমৃধা।যেহেতু আমি তোমায় ডিভোর্স দিচ্ছি তাই এই বাচ্চাকে নিজের পরিচয় দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তোমার কতো টাকা চাই বলো আমি দিয়ে দিচ্ছি।”

সমৃধা:এসব তুমি কি বলছো রুদ্ধ!ও তোমার সন্তান।আর তুমি ওকে পৃথিবীর আলো দেখার আগেই মেরে ফেলতে চাইছো?এতোটা পাষাণ হয়ে গেছো তুমি?বলো না তোমার কি হয়েছে,তুমি তো এমন ছিলে না।কেনো করছো আমার সঙ্গে এমন!কি দোষ করেছি আমি? (কাদতে কাদতে বললো)

রুদ্ধ:এই বাচ্চা যে আসলেই আমার,তার প্রমাণ আছে তোমার কাছে?

সমৃধা:রুদ্ধ!…

রুদ্ধ:তোমার সঙ্গে কোনো খারাপ ব্যাবহার করার ইচ্ছে আমার নেই।ভালোভাবে বলছি ডিভোর্স পেপার এ সাইন করে দাও।তুমি চাইলে কিছুদিন এ বাড়িতে থাকতেই পারো নিজের অন্য কোনো থাকার ব্যাবস্থা করার জন্য।আর তুমি চাইলে আমি..

সমৃধা:ব্যাস…অনেক বলেছো রুদ্ধ।তোমার ডিভোর্স চাই তাইনা?দিয়ে দিচ্ছি ডিভোর্স। তবে আমি আমার বাচ্চাকে রাখবো কি রাখবো না সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার তোমার কোনো অধিকার নেই। তোমার নিজের সন্তানের প্রতি মায়া নাই থাকতে পারে,কারণ তুমি একজন বাবা নামের কলঙ্ক। তবে আমি তো মা,আমার নিজের সন্তানের প্রতি যথেষ্ট মায়া আছে।আমি নিজের জীবন দিয়ে হলেও ওকে এই পৃথিবীর আলো দেখাবো। আর বাকি রইলো টাকা!আমি ফুটপাত এ ভিক্ষে করে খাবো তবুও তোমার মতো জঘন্য মানুষের থেকে এক কানা কড়ি ও নেবোনা।

কথাটা বলেই রুদ্ধর হাত থেকে ডিভোর্স পেপার টা নিয়ে কাপা কাপা হাতে সই করে দিলো সমৃধা।
ছলোছলো নয়নে তাকালো তার দিকে। রুদ্ধ তখনও চুপ করে আছে।কি ই বা বলবে?বলার কোনো মুখ রেখেছি কি!

সমৃধা এবার সোজা নিজের ঘড়ে চলে গেলো। না, নিজের ঘড় বললে ভুল হবে।গত দুই মিনিট আগে পর্যন্ত এই ঘড় তার ছিলো তবে এখন আর নেই।
সারা ঘড়ে চোখ বুলিয়ে নেয় একবার।গত দুই বছর ধরে এই ঘড়টাকে নিজের মতো করে সাজিয়েছে আর মুহূর্তের মাঝেই সবটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো।
আলমারি থেকে নিজের দু তেনটা জামাকাপড় বের করে ব্যাগে ঢুকিয়ে নিলো।একবার পেটে হাত দিয়ে বললো,
সমৃধা:আমি তোর কোনো ক্ষতি করবনা সোনা।তুই একদম চিন্তা করিসনা।আমরা অনেক দূড়ে চলে যাবো।অনেক দূড়ে..
কথাটা বলেই রুম থেকে বেড়িয়ে আসে সমৃধা। রুদ্ধর সামনে থেকে এগিয়ে গিয়ে সদর দড়জা খুলে বেড়িয়ে যায় বাড়ি যায়।রুদ্ধ মুখ ফুটে কিচ্ছুটি বললো না।বরং মনে হলো সে খুশি হয়েছে,আপদ বিদায় হয়েছে বাড়ি থেকে।

বাড়ি থেকে তো বেড়িয়ে গেলো কিন্তু এখন যাবে কোথায়?না আছে বাবা মা আর না আছে কোনো আত্মীয় স্বজন।
এক হাত পেটে রেখে দুফোটা অশ্রু বিসর্জন দেয় সমৃধা।নাহ,আর যাই হয়ে যাক না কেনো এই বাড়িতে সে ঢুকবে না।ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে রাস্তায়।কিন্তু কিছুদুর যেতেই প্রচুর মাথা ঘুড়তে লাগে তার।হঠাত খেয়াল হয় সামনে থেকে একটি গাড়ি আসছে।কিন্তু সরে যাওয়ার ক্ষমতা টাও নেই।

–আম্মুউউউ

ছেলের ডাকে হুশ ফিরলো সমৃধার।চটজলদি হাতে থাকা ছবিটি নিজের শাড়ির আড়ালে লুকিয়ে নেয়।তখনি রুমে ঢোকে আরাধ্য।

আরাধ্য:আম্মু আমি বেড়োচ্ছি।ফিরতে চার থেকে পাচ দিন সময় লাগবে।শহর থেকে সামান্য দূড়েই থাকবো।কোনো দড়কার হলে ফোন দিও।আর কাকিমা তো আছেই।

সমৃধা আরাধ্যের যাওয়ার কথা শুনেই অমবরত মাথা নাড়িয়ে না বলতে থাকে।তা দেখে আরাধ্য ওর কাছে এসে হুইল চেয়ার এর সামনে হাটু গেড়ে বসে।

আরাধ্য:আম্মু,আম্মু রিল্যাক্স।কিচ্ছু হবে না আমার।আর আমি তো তোমার সঙ্গে ভিডিও কল এ কথা বলবোই।এভাবে হাইপার হওয়ার কিছু নেই।ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড,তুমি অসুস্থ হয়ে পরবে।

সমৃধা এবার কিছুটা শান্ত হয়।কাপা কাপা হাত ছেলের মাথায় বুলিয়ে দেয়।

আরাধ্য:আমি তাহলে যাই আম্মু

সমৃধা মাথা নাড়িয়ে হাতের ইশারায় কিছু বোঝায়।

আরাধ্য:ওকে ওকে।আমি আসি?

সমৃধা এবার আলতো মাথা নাড়িয়ে মুচকি হেসে হ্যা জানায়।আরাধ্য আলতো হেসে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে।সদর দড়জা থেকে বেড়িয়েই চোখের চশমা টা খুলে ফেলে।বাকা হেসে গাড়িতে উঠে বসে।

সমৃদ্ধ আরিয়ান আরাধ্য।তবে সে নিজেকে সবজায়গা এ শুধু আরিয়ান আরাধ্য বলেই পরিচয় দেয়।এমৃধ্য নামটা মূলত সমৃধা তার এবং রুদ্ধের নাম মিলিয়ে রেখেছিলো।কিন্তু সেই লোকটার চিহ্ন তার জীবনে রাখতে চায় না আরাধ্য।
আরাধ্য বাংলাদেত এর অন্যতম ব্যাবসায়ীদের মধ্যে একজন,তার পাশাপাশি একজন পেইন্টার ও বলা চলে।যেকোনো মেয়ে প্রথম দেখায় ক্রাশ খেতে বাধ্য।চুলগুলো ভীষন পরিমানে সিল্কি হওয়ায় কিছুটা কপালে পরে থাকে।ঠোটজোড়া একদম গোলাপি বর্ণের,গালে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, তার সঙ্গে ছোট ছোট দুটি চোখ।
আরাধ্য কিছুদুর গিয়ে গাড়ি থামায়।তারপর একজনকে কল দিয়ে কিছু একটা বলে।তারপর আবারো চোখে চশমা দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়।

_____🌿
নিলাঞ্জনা:দাদাভাই..

নিলার ডাক শোনা মাত্রই রঞ্জন মাহতাব পিছন ঘুড়ে তাকায়।ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটিয়ে কাছে ডাকে নিলাঞ্জনা কে।

রঞ্জন:কোথায় ছিলিস দাদুভাই?আমি তো কতো আগে ডেকেছিলাম।

নিলাঞ্জনা:আব ঐ মানে দাদাভাই আমি একটু বাগানে গাছগুলোতে পানি দিচ্ছিলাম আরকি।

রঞ্জন:ওহ আচ্ছা।তাহলে শোন,আজ একজন অতিথি আসবে বাড়িতে।

নিলাঞ্জনা:অতিথি?কিন্তু কে?

রঞ্জন:তোর বাবার ব্যাবসায়ীক অংশিদার।এই এলাকায় কিছু কাজ আছে তার।তাই কয়েকটা দিন আমাদের বাড়িতেই থাকবে।আর তার আপ্যায়ন এর দায়িত্ব তোকেই নিতে হবে।

নিলাঞ্জনা:ঠিক আছে দাদাভাই।আমি তাহলে যাই?

রঞ্জন:হুম যাহ।

নিলাঞ্জনা এবার দম ছেড়ে দৌড়ে ড্রইং রুম এ চলে যায়।মাথা থেকে ওড়না সরিয়ে টেবিল এর সামনে চেয়ার সরিয়ে বসে পড়ে।

নিলাঞ্জনা:অরন্য্য্য্য…

সেকেন্ড এর মাঝে অরন্য সামনে হাজির হয়।

নিলাঞ্জনা:আজকের নোট টা আমায় দিস।

অরন্য:আরে বইন এতো নোট নিয়া কি করবি। এমনিতেও তো ফার্স্ট তুই ই হবি।

নিলাঞ্জনা:দিতে বলছি দিবি ব্যাস। নিধিইইই…

সেকেন্ড এর মাঝে এবার নিধি সামনে হাজির হয়।

নিলাঞ্জনা:শোন,আজ বাড়িতে গেস্ট আসবে।

নিধিশিখা:গেস্ট?কিসের গেস্ট? ছেলে নাকি মেয়ে?বয়স কতো রে?ছেলে হলে হ্যান্ডসাম তো? তুই ছবি দেখেছিস?হায়,কতোদিন হলো কারোর উপর ক্রাশ খাই না…

নিলাঞ্জনা:থাপড়াইয়া তাওর দাত ফেলায় দিবো। আমি কি তোরে ক্রাশ খাওয়ার জন্য বলছি? দাদাভাই তার আপ্যায়ন এর দায়িত্ব আমাকে দিছে।তাই সেই ব্যাপারে বলছিলাম।

তখনি রানু(বাড়ির কাজের লোক) রান্নাঘর থেকে আসছিলো।

নিলাঞ্জনা:রানু শোন..

রানু:(সামনে এসে) কি কইলেন আফামনি? ভানু? কেডা ভানু?ওও আমনে কি ভানুমতীর খেল দেখবেন নি?তয় আমি যতদূর জানি হেইডা তো আরো আগেই শেষ হইয়া গেছে।অহন আমনে দেখবেন কেমনে!

নিধিশিখা:আরে ভানু না রানু রানু মানে তোকে ডেকেছে।

রানু:কিতায়ায়া?পানু?হ হ আমি চিনি পানুরে।

অরন্য:কিসের পানু!

রানু:আরে ঐ টিভিতে একখাম সিরিয়াল হয় না। যেইডায় বউ স্বামীরে বরণ কইরা বাড়তে আনে আবার স্বামী বউরে বরণ কইরা বিয়া দিতে লইয়া যায়।পরে আবার বিয়া জামাই এর লগেই হয়। হ হ,মনে পরছে বরণ সিরিয়াল ডার নাম।হেই সিরিয়াল এ একখান পুরোহিত আছে না?ঐ বেডার নাম ই তো পানু।

অরন্য:তুই এই সিরিয়াল ও দেখিস?

রানু:দেখমুনা কিল্লাই!আমি আর আমার জামাই তো একলগেই দেহি..

অরন্য আর নিধি হতভম্ব হয়ে একে অপরের দিকে তাকায়।তারপর একসঙ্গে নিলাঞ্জনার দিকে তাকিয়ে দু হাতে কান চেপে ধরে বিড়বির করে বলে,
ওয়ান..টু..থ্রি..

নিলাঞ্জনা:স্টপপপপপপ…..

নিলাঞ্জনা এবার উঠে গিয়ে রানুর কাছে গিয়ে ওর কানে মেশিন টা ঢুকিয়ে দেয়।তারপর কানের কাছে গিয়ে জোরে জোরে বলে,

নিলাঞ্জনা: রানুউউউউউউ,আজ বাড়িতেএএএ গেস্ট আসবেএএএ।ভালোমন্দ কিছুউউউউ রান্নায়ায়ায়ায়া করিইইইইস..

রানু:আরে এই ব্যাপার।হেইডা তো কইলেই হয়।এমনে চিল্লাইনার কি আছে!আমি এহনি যাইয়া রান্দন চাপাইতাছি…
বলেই বেক্কল মার্কা হাসি দিয়ে রান্নাঘর এ চলে যায়।নিধি আর অরন্য এবার শব্দ করে হেসে দেয়। নিলাঞ্জনা ও মুচকি হেসে নিজের রুমে যেতে নেয়।

নিধিশিখা:এবার হবে রূপ বদল।
নিলাঞ্জনা ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে রুমে চলে যায়।কিছুক্ষন পর একটা খিমার বোরখা পড়ে বেরিয়ে আসে।নাক পর্যন্ত ঢাকা,শুধু চোখদুটো দেখা যাচ্ছে তাতে চশমা পরা।চশমা টা যেই খুলতে যাবে তখনি নিধি বলে ওঠে,

নিধিশিখা:আপু আপু চশমা টা খুলিস না প্লিজ।

নিলাঞ্জনা:কেনো? (ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে)

নিধিশিখা:হায় মেরি বেহনা।(বুকে হাত দিয়ে)তোর এই হরিণি চোখ দেখে যে যেকোনো ছেলে হার্টএট্যাক করতে বাধ্য..

নিলাঞ্জনা:(বিরক্তিকর মুখ করে চশমা টা খুলে ফেলে)
আসলেই ওর চোখদুটো মারাত্মক সুন্দর। বড় বড় দুটি চোখ তার সঙ্গে কালো মিচমিচে ঘন পাপড়ি। আর তার সাথে ঘন ভ্রুযুগল তো আছেই।
নিলাঞ্জনা আর কাউকে পাত্তা না দিয়ে যেই বাইক এ উঠতে যাবে তখন ই নিধি এসে আটকে দেয়।

নিধিশিখা:আপু তুই কি পাগল!বোরখা পড়ে বাইক চালাবি।আর সেটাও নাহয় মানলাম কিন্তু এই এলাকার সবাই জানে এটা রাজকুমারি নিলাঞ্জনার বাইক।

নিলাঞ্জনা:রাজকুমারি মাই ফুট!বাট কথাটা ভুল বলিসনি,সবাই চিনে ফেলবে।তার চেয়ে বরং রিক্সায় ই যাই।পাচ মিনিটের ই তো রাস্তা।
নিলাঞ্জনা এবার বাইক রেখেই বেড়িয়ে যায়।কিছুদুর গিয়েই রিক্সায় উঠে পড়ে।
,,
এদিকে আরাধ্য প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে ঠিক তখনি ওর ফোন এ কল আসে।কল রিসিভ করতে যা শোনে তাতে ওর পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়।

#চলবে

#লেখনীতে_সাদিয়া

[সবার কাছে একটি প্রশ্ন।গল্পটি কি ককনটিনিউ করবো?]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here