একটি নির্জন প্রহর চাই পর্ব -০১

#একটি_নির্জন_প্রহর_চাই
#মৌসুমী_আক্তার

সূচনা পর্ব:

বাসর ঘরে নিজের বরের রূপে একাউন্টিং এর প্রফেসর
রোশান সিদ্দিকী কে দেখে ভড়কে গেলাম আমি। না মানে এটাই কি হওয়ার ছিলো।জীবনে কি এমন পাপ করেছিলাম যে এই হিংস্র দা’ন’ব টার সাথে বিয়ে হলো আমার।তাও আবার আমার ই টিচার।ছিঃ ভাবতেই শরীর রিরি করে উঠছে। সারাজীবন স্কুল কলেজে যারা প্রাইভেট টিচার দের সাথে রিলেশন করে তাদের নিয়ে কটুক্তি করে এসেছি আর আজ আমার সাথেই তাই ঘটলো।ছিঃ ভাবা যায় যে ওনার সাথে আমার কোনদিন রোমান্স টোমান্স কিচ্ছু হবে।এটলিস্ট একটা চুমু সেটাও আশা করা যায় না।
কলেজের সব থেকে রাগী,গম্ভীর, থমথমে, হিংস্র স্যার ওনি।তবে খুব হ্যান্ডসাম,গায়ের রং কিছুটা চাপা, কালো ও নন তবে দেখতে ভয়ানক রকমের সুন্দর ওনার মুখের অদল।কলেজের প্রায় মেয়েরাই উনার প্রতি ফিদা, উনার মুড আর এটিটিউড এ নাকি মেয়েদের হার্টবিট বেড়ে যায়। উনি যখন ক্লাসে প্রবেশ করেন খুব গম্ভীর আর থমথমে মুডে প্রবেশ করেন।প্রয়োজনের বেশী কথা ও বলেন না।রুলস এর ব্যাপারে ভীষণ সিরিয়াস উনি।একাউন্টিং ডিপার্টমেন্ট এর রং বদলে গিয়েছে উনি কলেজে আসার পর থেকে।ডিপার্টমেন্ট হেড উনি।আগে টেস্ট বা ইনকোর্স পরীক্ষা না দিয়ে টাকা দিয়ে দিলেও হতো কিন্তু এখন সে সুযোগ আর নেই।ইনকোর্স পরীক্ষা না দিলে উনি ফেল করিয়ে দিচ্ছেন।এক প্রকার আতঙ্কের নাম রোশান সিদ্দিকী।আমার কুক্ষণে উনার সাথে পরিচয় হয়েছিলো।সেদিন থেকে উনি মানেই আমার কাছে এক আতঙ্কের নাম,তাও ভয়ানক আতঙ্ক।উনার সাথে অামার কলেজে খুব বাজে একটা ঘটনা ঘটেছিলো সেখান থেকেই ঘটনার শুরু আর উনি আমাকে আড় নজরে দ্যাখেন।দু’মাস আগের ঘটনা। রোশান স্যার কিছু ম্যাথ করতে দিয়েছিলেন।আমি ফোনে ছবি তুলে নিয়ে গিয়েছিলাম আর লাস্ট বেঞ্চে বসে ব্যাগের ভেতর ফোন রেখে দেখে দেখে খাতায় তুলছিলাম।ক্লাসে উপস্হিত ১৫০ জনের মাঝে উনার চোখ আমার দিকেই পড়েছিলো। রোশান স্যারের পরণে ছিলো ফরমাল পোশাক।ব্ল্যাকবোর্ড এর সামনে থেকে সোজা উনার দৃষ্টি আমার দিকে নিক্ষেপ করেছিলেন।দৃষ্টি স্হির রেখে এগিয়ে এসছিলেন আমার দিকে।উনি কাছে আসাতেই আমি তড়িঘড়ি করে ব্যাগের ভেতর ফোন রেখে খাতায় লেখায় মনোযোগ স্হির করলাম।স্যার আমার সামনে এসে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে গম্ভীর মুডে বলেছিলেন,
‘ফোন দাও তোমার?’
কথাটা শুনেই হৃদপিন্ড কেঁপে উঠল আমার।স্যার বুঝে গিয়েছেন আমার কাছে ফোন আছে।আমি ভ’য় ভ’য় চোখে স্যারের দিকে তাকালাম।স্যার এবার বললেন,
‘স্ট্যান্ড আপ।’
স্যারের দিকে তাকিয়েই ভ’য়ে ভ’য়ে উঠে দাঁড়ালাম।স্যার তখন ও গম্ভীর মুডেই তাকিয়ে আছেন আর এমন ভাবে তাকিয়ে আছেন কথা না বলে বোঝাচ্ছেন যে ফোন দাও তোমার।উনি স্টীল তাকিয়েই আছেন আমার দিকে।ফোন দিলে তো ধরা খেয়ে যাবো। ফোন ব্যাগ থেকে উঠিয়ে টিপাটিপি করে গ্যালারি থেকে বেরোনোর চেষ্টা করতেই স্যার আমার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে ডেস্কের সামনে চলে গেলেন।স্যার যেতে যেতে ফোন আবার লক হয়ে গিয়েছে।ক্লাস শেষ হলে সবাই বেরিয়ে গেলে আমি স্যারের কাছে গেলাম ফোন আনতে।স্যার আমাকে বললেন,
‘পিন টা বলো।’
খুব অস্বস্ত্বিতে পড়ে গেলাম।তাছাড়া যে পিন দেওয়া স্যার কে কিভাবে বলি।কথায় আছে যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত পোহায়।স্যার ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।এর মানে পিন টা কি?
আমি মিহি কন্ঠে বললাম, ‘স্যার আমার কাছে দিন খুলে দিচ্ছি।’
‘তুমি মুখে বলো আমি খুলে নিচ্ছি।’
”K’U’T’T’A’R B’A’S’S’A”
স্যার মুহুর্তের মাঝে অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে উচ্চারণ করলেণ,
‘হোয়াট।’
‘সরি স্যার এটা আপনাকে বলিনি।আমার ফোনের পাসওয়ার্ড।’
‘আই নো তুমি আমাকে বলোনি,বাট এটা কোনো সুস্থ মানুষের ফোনের পাসওয়ার্ড।’
‘ছোট বোন যেনো গেইস করতে না পারে তাই এই উপায় স্যার।’
স্যার আমার দিক থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে ফোনের পিন খুললেন।তখন ই আমার আরেক টেনশন ছিলো।কারণ ফোনের ওয়াল পেপারে স্যারের ছবি দেওয়া।এটা গতকাল ই বন্ধুরা ডেয়ার দিয়েছিলো।৪৮ ঘন্টা রাখতে হবে।স্যার ফোনের ওয়াল পেপার দেখে আড়চোখে তাকালেন আমার দিকে।লজ্জায় আমার কি অবস্থা হয়ে যাচ্ছে তা আমি ছাড়া আর কেউ জানেনা।এইদিকে ফোনের নেট ও অন করা ছিলো।বন্ধুদের নিয়ে করা আড্ডা প্যানেলে কত অসভ্য কথা বলাবলি করেছি, এখানে রোশান স্যার কে নিয়েও অনেক কথা হয়েছে।ঠিক তখন ই আড্ডা প্যানেলে মেসেজ এসছে ছোঁয়া মেসেজ দিয়েছে,
‘ সারাহর সাথে কি স্যার প্রেম করছে ক্লাস রুমে দাঁড়িয়ে।’
তন্ময় মেসেজ করেছে,
‘ এমনি সারাহ স্যার কে দেখে ফিট হয় আজ কাছাকাছি দাঁড়িয়ে শুভ দৃষ্টি বোধহয় হয়েই যাচ্ছে।’
দ্বীপ মেসেজ করেছে,’ এমনিতেই সারাহ বলে রোশান স্যার মানেই হট,আর এই হট টমেটো সস এখন সারাহর সাথে একান্তে সময় কাটাচ্ছে। বাণীতে সারা।’
স্যার প্যানেলে প্রবেশ করলেন।যাবতীয় মেসেজ দেখে স্যার এর রাগ আকাশ এ উঠেছে।উপরেই আমার করা মেসেজ আছে ‘রোশান হলো হট টমেটো সস।ওয়াও কি লুকিং, কি জোস,উনি শুধু আমার।একবার কলেজ থেকে বের হই স্যার এর সাথে ফেইক আইডি দিয়ে প্রেম করব,দেন বলব স্যার আমি।’
স্যার অদ্ভুত এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন।তার জীবনে বোধহয় এমন অভিজ্ঞতা আগে হয় নি।এর আগে কোনো স্টুডেন্ট এর থেকে এমন কিছু হয়ত পায়নি।স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘তোমার ফোনের ডিসপ্লেতে কার ছবি?’
‘জি স্যার আপনার।’
স্যার ভ্রু কুচকালেন আর বিরক্তিমিশ্রিত কন্ঠে বললেন,
‘বাট হুয়াই?’
‘স্যার ফ্রেন্ড রা ডেয়ার গেম দিয়েছিলো আর বলেছিলো আপনার ছবি ফোনের ডিস্পেলে তে দিয়ে স্ক্রিনশট দেওয়ার জন্য।’
‘স্যার রা কি গেম খেলার পারসন।’
‘না সার ভুল হয়ে গিয়েছে,আর হবেনা।’
‘অন্যায় কয়েক ধাপে করেছো তুমি,এক ফোনে পিকচার তুলে এনে নকল করে ধরা খেয়েছো,দুই টিচার দের নিয়ে বন্ধুদের সাথে কটুক্তি করেছো।আমার পারমিশন ছাড়া আমার ফেসবুক প্রফাইল থেকে ছবি নিয়েছো ক্যানো?কলেজে কি এসব করতে আসো।আর আড্ডা প্যানেলে তোমরা যা বলাবলি করো আর যেসব ভিডিও আদান প্রদান করো, টিচার দের নিয়ে মিমস তৈরি করো তোমাদের কলেজ থেকে বহিঃষ্কার করা উচিত।’
‘স্যার আর এমন হবেনা।’
‘এসো অধ্যাক্ষ স্যারের রুমে এসো।’
রোশান স্যার অধ্যক্ষ স্যার কে কি বলেছেন জানিনা।অধ্যক্ষ স্যার বাড়িতে ফোন করে নালিশ দিলেন, সাথে আমাকে ওয়ার্নিং ও দিয়ে দিলেন।’
রোশান স্যার থমথমে মুডে আমাকে বললেন, ‘তুমি আমার নজরে থাকবে এখন থেকে।’

আমার নাম সারা আনাম।মা-বাবার ছোট মেয়ে।অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি বিবিএ অনার্স।আমার ফ্যামিলি আর পাঁচ টা ফ্যামিলির মতো নয়।আমার দাদু পুরণো রিতী আজ ও ধরে রেখেছেন।আর এ ব্যাপারে সে ভীষণ স্ট্রং।আগেকার দিনের মতো বিয়ের আগে ছেলে মেয়ে দেখাশুনা তিনি পছন্দ করেন না।তাছাড়া আমার বাবার প্রতি আমার অগাধ আস্হা আছে।বাবা এসে আমাকে বললেন, ‘ছেলে দেখতে শুনতে খুব ভালো মা।আমার পছন্দ হয়েছে।’
বাবার পছন্দ মানেই আমার পছন্দ।তাছাড়া বিয়ের দুই দিন আগে কথাবার্তা হয়ে হুট করেই বিয়ে তাই আর দেখার ও সুযোগ হয়নি।
আজ থেকে যে জীবন টা যে জা-হা-ন্না-মে পরিণত হতে চলেছে তার আর বুঝতে বাকি নেই আমার।

উনি ঘরে প্রবেশ করেই দরজার সিটকিনী লাগিয়ে দিলেন তাতে খট করে শব্দ হয়ে উঠল।সেই শব্দে কেঁপে উঠল আমার অন্তরআত্মা।ঘরে প্রবেশ করে আমার দিকে আড়চোখে একবার তাকালেন আর বললেন,

‘আপনি শাড়িটা চেঞ্জ করে নিন
ওয়াশরুমে গিয়ে।আমি বুঝতে পারছি আপনার অস্বস্তি হচ্ছে।বিকজ এইভাবে অচেনা অজানা একটা মানুষের সাথে বিয়ে হয়েছে আপনার হঠাত করে।খারাপ লাগা বা অস্বস্তি ফিল হওয়াটাই স্বাভাবিক।কি করব আমার দাদুও আপনার দাদুর মতোই সেই সেকালের নিয়ম ধরে রেখেছেন।বাট আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম যার সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে সে কি এইভাবে আমাকে মেনে নিতে পারবে।আপনার আপু জানিয়েছেন যে আপনার কোনো আপত্তি নেই।যায় হোক আমার দ্বারা আপনার কোনো অস্বস্তি ফিল হয় এমন কিছুই পাবেন না।’

ইয়া মাবুদ উনি তো আমার মুখ না দেখেই সুন্দর করে কথা বলছেন।মুখ দেখার পর কি বলবেন আল্লাহ ভাল জানেন।কতক্ষণ ই বা মুখ ঢেকে রাখতে পারব।সারা রে তুই ফেঁসে গেছিস।এ জন্মের মতো ফেঁসে গেছিস।রোশান স্যার যতক্ষণ না মুখ দেখেন ততক্ষণ ই শান্তি তোর।

এর ই মাঝে পাশের রুম থেকে মাগো মরলাম বলে কেউ চিৎকার দিয়ে উঠল।কন্ঠটা একটা মেয়ের।আমার কানে ভেষে আসছে পুরুষালি কন্ঠ দাঁত কিড়মিড় করে বলছে, ‘বা’ ন্দী’র বা-চ্চা আজ তোকে মে’রে’ই ফে’ল’ব।বেশী সাহস বেড়েছে তাইনা তোর।আমার সব কিছুতে তোর বাড়াবাড়ি।’
বলেই কারো গায়ে আঘাত করছে।আর সেই আঘাতে চিৎকার করে উঠছে মেয়েটি।

রোশান স্যার দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।আমিও বিছানা ছেড়ে দরজায় এসে উঁকি দিয়ে দেখলাম বারান্দায় একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে।মেয়েটির নাম তরী।শুনেছি আমার জা হয়।রোশান স্যার এর ছোট ভাই এর বউ।উনার ছোট ভাই নাকি আগে বিয়ে করেছিলেন।যদিও ছোট ভাই কে আমি এখনো দেখিনি।এরই মাঝে রোশান স্যার এর ছোট ভাই বেরিয়ে এলেন রুম থেকে।উনার ছোট ভাইকে দেখে আমার মাথায় যেনো বজ্রপাত হলো।ওহ নো! এটা তো ওশান।দ্যাটস মিনস ওশান ম্যারেড।

চলবে?..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here