এখানে আকাশটা ভালোবাসার পর্ব ৮

#এখানে_আকাশটা_ভালবাসার
#লেখিকাঃ নয়নতারা নাতাশা
#পর্বঃ ০৮
.
আজ মুখরিত হয়ে আছে সাহরাফ রহমানের বাড়িটি। আলোয় ঝলমল করছে চারিদিক। আত্মীয় স্বজনে ভরে আছে সারা বাড়ি।
“আপু তোকে ভীষণ সুন্দর লাগছে, ভীষণ সুন্দর, আমি সিউর আজ ভাইয়া তো পুরাই শেষ!”
“যাহ!” নওশির কথাতে লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে নিশিকা।
বধূসাজে নিশিকা আজ এ বাড়ি থেকে চলে যাবে, তার চিরচেনা বাড়ি, বাবা মা ভাইয়ারা, নওশি, রোশনি।
সব ভাবনার মাঝেও নিশিকার মনে জায়গা করে নিয়েছে সেই মেসেজগুলো, কে জানে ছেলেটা হয়তো জানেনা তার বিয়ের কথা, জানলে ঠিকই পরিচয় দিয়ে বিয়ে করতে চাইত।
আচ্ছা তখন কি সেই ছেলেটাকে বিয়ে করতে রাজি হতো সে? হতো মনে হয়!
যাহ কি সব ভাবছে সে! সে আজ অন্য কারোর বউ হতে যাচ্ছে!..
আপন মনে নিজেকেই ধমক দেয় নিশিকা।
কাজের চাপে নিশিকার পাশে এসে বসতে পারেনি সায়ান রায়ান। দূর থেকে মাঝে মাঝেই দেখছে বোনকে। কোথায় কি যেন একটা হারিয়ে যাচ্ছে তাদের।
আবার বোনের নতুন জীবনের জন্য আনন্দ হচ্ছে।
“আপু…”
“রায়ানের ডাকে মুখ তুলে নিশিকা।
আপু আমাদের ভুলে যাবি না তো অস্ট্রেলিয়াতে গিয়ে?”
“কি পাগলের মতো বকছিস রে বোকা, ভাইবোনকে কেউ ভোলে, আর তুই আমার আদরের একমাত্র ছোট ভাই, তুই আমায় ভুলে যাবি না ভাই?”
“আপু….” কান্নাজড়ানো কন্ঠে ডেকে ওঠে রায়ান।
“কি রে সোনা ভাই?”
“তোকে খুব সুন্দর লাগছে রে আপু, ভাইয়ার সাথে তোকে দারুন মানাবে”
বলেই উঠে আসে রায়ান।
বরাবরই কারোর সামনে নিজের খারাপ লাগা প্রকাশ করতে পারে না সে, আজ ভালো লাগা খারাপ লাগা দুই রকম অনুভূতি হচ্ছে তার, বোন তাদের মাঝে আগের মতো থাকবে না এটা ভাবতেই চোখ দুটো ভিজে যাচ্ছে তার।
“ছোট ভাইয়া তোকে মা ডাকছে”
রোশনির কথা শুনে মায়ের কাছে যাওয়ার জন্য পা বাড়াল রায়ান।
বরপক্ষের লোকজন এখনো আসেনি, বাবার চেয়ারের পাশে বসে বাবার কোলে মাথা দিয়ে বসে আসে নিশিকা, আরেকটা হাত মায়ের কোলে। ভিতরটা যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে তার, শুধু মনে হচ্ছে সে চলে যাবে! সেই ছোট্ট মেয়েটা আজ কত বড়, মেয়েটা কেমন থাকবে শ্বশুরবাড়িতে! ভালো তো!
মেয়েটা আর বাবা বাবা করে চোখের সামনে সবসময় ডাকবে না। মা বলে বারবার ডাকবে না। একই ভাবনা নিশিকার বাবা মায়ের মনে।
জাহরা এতদিন কখনো খেয়াল করেননি তার মেয়ে এত রূপবতী হয়ে উঠেছে, আজ নিজের মেয়েকে দেখে তার অবাক লাগছে, এটাই কি সেই নিশিকা!
এরই মাঝে সায়ান, নওশি আর রোশনি এসে বসে তাদের পাশে।
“কি নিশিকা বুড়ি, তাকা তো দেখি আমার দিকে”
“উফ তোকে যা লাগছে না আপু! পুরাই স্বর্গের পরীদের মতো” রোশনী কথা শুনে লজ্জায় লাল হয়ে যায় নিশিকা।
এভাবেই ভালো লাগা আর খারাপ লাগার একরাশ অনুভূতিরা ঘোরাফেরা করতে থাকে তাদের সবার মনে।
.
নিশিকা চলে গেছে একটু আগে, বাবা মায়ের পাশে বসে আছে নওশি আর রায়ান, সায়ান সামলাচ্ছে রোশনিকে। বড় আপু বড় আপু করে বাড়ি মাথায় করে তুলছে রোশনি।
বাবা মায়ের পাশে এসে চুপচাপ বসে আছে রায়ান নওশি, কেউ কিছু বলছে না। তাদের নীরবতা বলে দিচ্ছে কতটা কষ্ট হচ্ছে তাদের। পারিবারিক বন্ধন গুলো এমনই হয়৷ জগতের বাঁধাধরা নিয়ম মানতে হয় সবাইকেই।
সবার অলক্ষ্যে এসে চোখের পানি আটকাতে পারেনা নওশি। উফ কেন আপুটা চলে গেল! কেন!
সবার মনে এক বিষন্ন ছায়া, নিশিকার অনুপস্থিতি জানান দিচ্ছে সবার চোখ মুখে।
.
বাসরঘরে বসে আছে নিশিকা, জয় আসেনি এখনো, পুরো রাস্তা টা কাঁদতে কাঁদতে একাকার করেছে নিশিকা। জয় মাঝে মাঝে থামানোর চেষ্টা করেছে, ফলাফল হয়েছে আরো উলটো! কান্না আরো বেড়ে গেছে ওর!
নওশিটার দিকে তাকাতেই পারেনি সে। বোন টা একা হয়ে গেল, রোশনি, আদরের রায়ান, ভাইয়া, প্রাণপ্রিয় বাবা মা সব আজ ও বাড়িতে।
কি জানি সবাই এখন কি করছে!
হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠল নিশিকার…
সেই মেসেজ!!!
“রাতপরী তুমি কি ঘুমিয়ে গেছ? তুমি কি জানো ঘুমালে তুমি রূপবতীদের রানি হয়ে যাও?
রাতপরী তুমি আমাকে তোমার ঘুম দেখার সঙ্গী হতে দেবে?”
নিশিকার সামনে এখন আকাশের তারা গুলো এসে লাফালাফি করলেও নিশিকা এতটা অবাক হতো কিনা সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
কাঁপা কাঁপা হাতে মোবাইলের দিকে একমনে চেয়ে আছে সে!
“কে আপনি বলুন তো!!”
মেসেজ টা টাইপ করেও সেন্ড করে না নিশিকা, আজ সে অন্য কারোর বউ, শুধু শুধু মেসেজের রিপ্লাই দিয়ে কি হবে!
মোবাইল টা বন্ধ করে দেয় ও।
রুমে আসার শব্দেই নিশিকা তাকিয়ে পড়ে জয়ের দিকে পরমূহুর্তেই মাথা নিচু করে ফেলে। জয় ভাবতেই পারেনি নিশিকা এতটা সুন্দর! সে যেমন কল্পনা করেছিল তার থেকেও সুন্দর!
“তোকে খুব সুন্দর লাগছে নিশিকা, ওপ্স সরি তোমাকে…. আসলে তুই করে ডেকে অভ্যাস হয়ে গেছে তো”
জয়ের কৈফিয়তের ভঙ্গি দেখে হাসি পায় নিশিকার।
“আচ্ছা শোন, এখন তুমি আমার দিকে একটু তাকাও তো? তোমাকে একবারো ভালো করে দেখতে পারিনি আমি”
জয়ের কথা শুনে মাথা আরো নিচু করে নিশিকা।
“একি তুমি আরো মাথা নিচু করছ যে!!!”
নিজের হাতে নিশিকার মুখটা উঁচু করে ধরে জয়। অজান্তেই মুখ থেকে বের হয়ে যায় “মাশাআল্লাহ!”
জয়ের কান্ড দেখে নিশিকার লজ্জায় যেন আরো লাল হয়ে যাচ্ছে৷ কিছুতেই কোনো শব্দ বের করতে পারছে না গলা দিয়ে।
“আচ্ছা শুনো যাও শাড়িটা চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে নাও”
“ঠিক আছে” এই প্রথম কথা বলল নিশিকা।
“হাহাহাহাহা কথা বললে এবারে! পাগলী! যাও, ভারী শাড়িতে কষ্ট হচ্ছে। একেবারে ওজু করে এসো”
জয়ের কথা মতো নিশিকা বের হলে জয় ফ্রেশ হয়ে ওজু করে আসে। তারপর দুজনে সালাত আদায় আল্লাহর কাছে পরবর্তী জীবনের জন্য দোয়া করে।
জয় নিশিকার পাশে এসে বসে হাতের উপর হাত রাখল, চমকে উঠল নিশিকা। নিশিকার কেঁপে ওঠা নজর এড়ায়নি জয়ের।
কেঁপে ওঠা হাতটা আরো চেপে ধরল জয়!
“রাতপরী!” মায়াবি স্বরে ডাক দেয় জয়।
“মা..মানে? তু..তুমি সেই…?!!!!”
একরাশ বিস্ময় নিশিকার চোখে!
“একি তুমি অবাক হয়ে তোতলাও নাকি??” নিশিকার অবস্থা দেখে হেসে ওঠে জয়। তারপর বলে,
“হবে আমার চায়ের কাপের আয়েশী চুমুক দেওয়া সঙ্গী?”
এখনো বিস্ময়ের ঘোর কাটেনি নিশিকার।
“এই নিশিকা! তুমি কি আমায় ভালবাসতে পারবে না??”
মুচকি হেসে জয়ের দিকে তাকায় নিশিকা।
সব উত্তর পেয়ে গেছে জয়। সব উত্তর দিতে মুখের বাক্যগুলো ব্যবহার করতে হয় না। কিছু উত্তর দিয়ে দেয় মুখের হাসি, চোখের ভাষা!
জয়ের হাত ধরে নিশিকা।
“আজ আমি আমার রাতপরীকে পেয়ে গেছি নিশিকা! আমার নিশিকা! আমার রাতপরী” জয় আনন্দে জড়িয়ে ধরে নিশিকাকে।
শুরু হয় নতুন এক ভালবাসার অধ্যায়ের শুভসূচনা।
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here