এতো চাই তোকে পর্ব ১১

#এতো_চাই_তোকে
#পার্ট_১১
#Mst_Liza

হৃদ ভাইয়াকে নিয়ে চুপিচুপি বাড়িতে ঢুকলাম আমি।কাকিমণি তখন বাড়ির ডুবলিকেট চাবিটা দিয়েছিলো আমায়।এইজন্য তেমন অসুবিধা হয় নি।এতো রাতে বাড়ির সকলেই ঘুম।কোন রকম শব্দ না করে হৃদ ভাইয়াকে তার রুমে নিয়ে আসলাম।বিছানার উপরে বসিয়ে পা থেকে জুতা খুললাম।হৃদ ভাইয়াকে বললাম,

—“তুমি একটু বসো।আমি তোমার জন্য লেবুর সরবত নিয়ে আসছি।”

কথাটা বলে চলে যেতে লাগলে আমার শাড়ির আঁচলটা টেনে ধরে চোখ মুখ ছোট্ট করে বলল হৃদ ভাইয়া,

—“ফুল তুই শাড়ি পরেছিস?”

আমি এগিয়ে এসে হৃদ ভাইয়ার পাশে বসলাম। মুখের কাছে একটু ঝুঁকে বললাম,

—“হুমমম।কেমন লাগছে আমায়? কাকিমণি নিজের হাতে আমাকে আজ সাজিয়ে দিয়েছে।শুধু তোমার জন্য। যেন তোমার চোখ অন্য কোনো মেয়ের উপর না যায়।”

হৃদ ভাইয়া আলতো হাতে আমার মুখে নিজের আঙুল বুলাচ্ছে।আমাকে বিরবির করে বলছে,

—“তোকে তো পরীর মতো লাগছে ফুল।”

কথাটা বলে আমার ঠোঁটে একটা চিমটি কাটলো।আমি আহ্ করে উঠলাম।উঠে দাড়িয়ে বললাম,

—“তুমি বসো।আমি তোমার জন্য লেবুর সরবত আনছি।”

কথাটা বলে হৃদ ভাইয়াকে রুমে রেখে রান্নাঘরে আসলাম।হৃদ ভাইয়ার জন্য লেবুর সরবত করে রুমে এসে দেখি সে ঘুম।মাথার কাছে গ্লাসটা রেখে পাশে বসলাম আমি।হৃদ ভাইয়ার চুলের ভাজে হাত রেখে বললাম,

—“কাল সকালে তুমি ঘুম থেকে উঠে দেখবে সব ঠিক হয়ে গেছে।তোমার আমার মধ্যে আর কেউ আসবে না হৃদ।কখনো কস্ট পেতে দেবো না তোমাকে আমি।আপু যে ভুল করেছে সেটা আমি করবো না।”

হৃদ মিটমিট করে চাইলো।দু’হাতে আমার মুখটা ধরে ফিসফিসিয়ে বলল আমায়,

—“ফুল তোকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।”

আমি হেসে উঠলাম। হৃদের নাকটা টেনে ধরে বললাম,

—“ঘুমাও নি এখনো? ওঠো, লেবুর সরবত টুকু খেয়ে নাও।নেশা কেটে যাবে।”

হৃদ উঠে বসলো। আমার কোমর টেনে ধরে ঘারে নাক ডুবিয়ে বলল,

—“তোর নেশা আমি কাটাতেও চাই না কখনো।”

আমার পেটে হাত রেখে অনেকক্ষণ ধরে শক্ত করে জড়িয়ে আছে হৃদ।আমার পিঠে বুক মিশিয়ে কানের কাছে আস্তে করে বলছে,

—“তোকে আমি খুব ভালোবাসি ফুল।তুই নিজেও জানিস না আমি তোকে কতোটা চাই।”

আমি মুখটা ঘুরিয়ে বসে হৃদের শার্টের কলারটা টেনে ধরে বললাম,

—“এতো ভালোবাসো তাহলে প্রিয়ার কাছে কেন গিয়েছিলে?”

একটু মুখটা এগিয়ে নিয়ে এসে বললাম,

—“মদও খেয়েছো।গন্ধ বের হচ্ছে তোমার মুখ থেকে।”

লেবুর সরবতটা নিয়ে হৃদের হাতে দিয়ে বললাম খেতে।হৃদ ডগডগ করে পুরো সরবতটা খেয়ে নিলো।আমি বললাম এখন তুমি ঘুমাও।আমি রুমে যাচ্ছি। হৃদ ঘুরিয়ে আমাকে বিছানায় নিয়ে আসলো।আমি বললাম,

—“আমাকে রুমে যেতে দাও হৃদ।এখানে ঘুমাতে পারবো না আমি।সকালে আমাকে রুমে না পেলে মা অনেক ঝামেলা করবে।”

কে শোনে কার কথা।হৃদকে কতোবার বাঁধা দেওয়ার চেস্টা করলাম আজ।কিন্তু ও নাছরবান্দা।একটা কথাও শোনে না।পাগলের মতো সারা গালে কিস করে যাচ্ছে।শাড়ির আঁচলটা সরিয়ে ব্লাউজের হুকগুলোও খুলে ফেলেছে। এখন আর ওকে বাঁধা দিতে ইচ্ছে করছে না আমার।তাই সমার্পন করে দিলাম নিজেকে ওর মাঝে।

সকালে ঘুম ভাঙলে হৃদকে নিজের বাহুডোরে মুখ গুজে শুয়ে আছে দেখতে পেলাম। হৃদের পিঠে হাতটা চেপে ধরে ওকে ঘুরিয়ে শুইয়ে দিলাম বালিশে। বুকের উপরে শুয়ে থুতনিতে ঠোঁটের আলতো পরস দিয়ে চলেছি আমি।এমন সময় হৃদের ঘুম ভাঙলো। মাথাটা চেপে ধরে আস্তে করে চোখ মেলে তাকালো আমার মুখের দিকে।আর মুহূর্তের মধ্যেই এক ধাক্কায় আমাকে খানিকটা দূরে সরিয়ে দিলো।কেন এমনটা করলো কিছুই বুঝতে পারলাম না।হৃদ আমার হাতটা টেনে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বললো,

—“তুই আবার কাল রাতে আমার রুমে এসেছিস? তোকে আমি বলেছি না আমার কাছে না আসতে?”

হৃদের কথা শুনে আমি থমকে আছি।হৃদকে বললাম আমি,

—“এসব কি বলছো তুমি হৃদ।তুমিই তো কাল আমাকে যেতে দিলে না।তোমার কি কাল রাতের কোনো কথাও মনে নেই?”

হৃদ এবার রাগি দৃস্টিতে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

—“কি মনে রাখবো আমি? তোর নস্টামিগুলোর কথা? সায়ানের সাথে পার্টিতে না গিয়ে কোথায় গিয়েছিলি কাল রাতে তুই? নাকি সায়ানের কাছ থেকে রাতের চাহিদাটুকু মেটাতে পারিস নি বলে আমার কাছে এসেছিস? তোকে ভালোবাসাটাই আমার জীবনের মস্ত বড় একটা ভুল।তোর চেয়ে তো প্রিয়া মেয়েটা শতগুণে ভালো।”

আমি হৃদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।প্রচন্ড রাগ পাচ্ছে আমার।হৃদ আমাকে দরজার দিকে ইশারা করে চলে যেতে বললে আমি ওর বুকের পশমে খুব জোরে একটা টান দিয়ে বললাম,

—“ইয়ারকি পেয়েছো? রাতে ভালোবেসে সকালে বলবে সব ভুলে গেছো? প্রিয়ার সাথে আমার তুলনা করছো? প্রিয়ার কথায় পার্টিতে গিয়েছো আমি আছি কিনা দেখতে।অথচ একটাবার বাড়িতে এসে দেখও নি আমি আছি কিনা।আবার আমাকে নস্টা মেয়ে বলো।তুমি নিজে কি? কি করছিলে প্রিয়ার রুমের মধ্যে দরজা বন্ধ করে? তখন আমি না গেলে…”

—“একদম মিথ্যা বলবি না।নিজেকে ঠিক প্রমাণ করতে একদম প্রিয়াকে জড়িয়ে কিছু বলবি না আমায়।”

—“ও তাই? আমি বললে দোষ? আর তুমি যা ইচ্ছা তাই বলে যাবে? তোমার বিচার তো আমি কাকিমণির কাছে দেবো।”

—“তোর যা ইচ্ছা কর।শুধু আমার সামনে থেকে এখন চলে যা।কিছু মনে করতে পারছি না আমি।যা এখান থেকে।”

আমি হৃদকে ধাক্কা দিয়ে বিছানার সাথে দুই কাঁধে শক্ত করে চেপে ধরে ওর পেটের উপরে উঠে বসলাম।তারপর বললাম,

—“কোথাও যাবো না আমি।তোমাকে মনে করতেই হবে কাল রাতের কথা।”

হৃদ মুখটা এক সাইটে ঘুরিয়ে নিয়ে বললো,

—“কিছু মনে পরছে না আমার।সর ফুল।”

—“কি সরবো? বলো আমার সাথে ভালো ভাবে কথা বলবে তারপর সরবো।আজ আমিও দেখবো তুমি কিভাবে আমায় ইগনোর করো।কাল সারাদিন জ্বরে বিছানায় পরে ছিলাম।একটুও আসো নি দেখতে।তারপরও ভেবেছি তোমার রাগ কিভাবে ভাঙাবো।আর তুমি ভেবেছো আমি পার্টিতে গিয়েছি।”

—“তুই পার্টিতে যাস নি?”

—“না।আমাকে তো মিনি ফোন করে জানিয়েছিলো তুমি প্রিয়ার সাথে ড্যান্স করছো।সেটা শুনেই তো গেলাম।”

—“তাহলে সায়ান? ও কেন আসে নি পার্টিতে?”

—“সায়ান পার্টিতে যাবে? ওর মতো একটা ছেলে পার্টিতে যেতে পারে বলে তোমার মনে হয়? আর ও গেলেও আমার কি? তুমি জানো না আমি তোমায় ভালোবাসি?”

—“ভালোবাসিস? আমাকে? তাহলে হসপিটালে সকলের সামনে যে বললি সায়ানকে ভালোবাসিস?”

—“ওটা সত্যি না।ভুল করেছি আমি আর কতোবার বলবো?”

হৃদ উঠে বসলো।আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

—“ছরি ফুল।”

—“সব মনে পরেছে তোমার?”

—“না।তবে তুই আমায় ভালোবাসিস এটা জেনে আমার আর কোনো রাগ নেই।আমি তোকে আবার বিয়ে করবো সকলকে জানিয়ে।”

—“আচ্ছা হয়েছে।আমি এখন রুমে যাবো।আজ আবার মা আমাকে রুমে না পেলে ঝামেলা হয়ে যাবে একটা।”

হৃদ আমাকে ছেড়ে দিলো।আর রেডি হয়ে থাকতে বললো।আজ আমাকে সাথে করে হসপিটালে নিয়ে যাবে বলে।

চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here