এতো চাই তোকে পর্ব ১২

#এতো_চাই_তোকে
#পার্ট_১২
#Mst_Liza

বিছানার উপরে অনেকগুলো ড্রেস এলোমেলো করে রেখেছি।আয়নার সামনে দাড়িয়ে একটা একটা করে তুলছি আর ভাবছি কোনটায় আমাকে ভালো লাগবে।কোনটা পড়বো আজ বুঝতে পারছি না আমি।এদিকে মা এসে সকাল সকাল আমার রুমের অবস্থা দেখে শুরু করে দিয়েছে তার বকুনি।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম আটটা বাজতে চললো।হৃদ নির্ঘাত আমাকে এবার ফেলে রেখে চলে যাবে।তাড়াহুড়ো করে আমি এক ছুটে ওয়াশরুমে চলে আসলাম।খুব দ্রুত ভাবে সাওয়ার নিলাম।পরক্ষণে মনে পরলো ড্রেস আনতে ভুলে গেছি।রুমে মা বসে রয়েছে। মাকে বললাম,

—“মা।বিছানার উপর থেকে যেই ড্রেসটা তোমার ভালো লাগে সেইটা আমাকে দাও।”

মায়ের কোনো সাড়া শব্দ নেই।আমি ওয়াশরুমের দরজাটা হালকা একটু খুলে মুখ বের করে দেখলাম হৃদ দাড়িয়ে আছে। হাতে একটা লাল ড্রেস।ও চোখের ইশারায় পুরো রুমটা দেখিয়ে বলল আমায়,

—“কি করেছিস রুমের অবস্থা?”

হাতে থাকা ড্রেসটা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

—“লাল রংটা তোকে পরলে ভালো লাগবে।”

আমি খুশি খুশি ড্রেসটা হাতে নিলাম অমনি মায়ের কন্ঠ কানে এলো।মা আমার রুমের দিকেই আসছে।বলছে,

—“আমাকে ডেকেছিস ফুল?”

আমি একটানে হৃদকে ওয়াশরুমের মধ্যে নিয়ে আসলাম।মা রুমে আসলে বলে উঠলাম,

—“ভুলে গেছি কেন ডেকেছিলাম।তুমি যাও মা।আবার ডাকলে এসো।”

মা বলল,

—“আমি এখানে বসেছি তুই বের হ।যদি আবার দরকার পরে।তোকে গুছিয়ে দিয়ে তারপর যাবো।”

কথাটা বলে বিছানার উপরে পরে থাকা এলোমেলো কাপড়গুলো গুছাতে লাগলো মা। হৃদের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আমি বুঝতে পারছি আমার জন্য ওর দেরি হচ্ছে। তার উপর ভিজেও গিয়েছে।আবার চোখের চাহনি দেখে ভয়ও লাগছে আমার।তখন যদি ওকে ভেতরে না আনতাম মা ওকে আমার রুমে দেখলে সমস্যা হয়ে যেতো।কিভাবো বোঝাবো ওকে এটা? মুখটা এগিয়ে কানের কাছে এনে ফিসফিসিয়ে বললাম,

—“হৃদ তোমার কি রাগ হচ্ছে আমার উপর? রাগ না হলে বলো আমার ভয় করছে।দেখও আমি তো প্রতিদিন লেট করি।তুমি একদিন লেট করলে তেমন একটা সমস্যা হবে না তোমার।”

কথাটা শেষ না হতে হৃদ আমার মাথাটা দু’হাতে শক্ত করে চেপে ধরলো।আমি ভয় পেয়ে কিছু বলে উঠতে লাগলাম তখনি হৃদ আমার ঠোঁট দুটো নিজের ঠোঁট দিয়ে বন্ধ করে দিলো।আমি কিছু বলতেও পারছি না।সেটা দেখে হৃদ আমাকে ছেড়ে দিলো।ঠোঁটে আঙুল রেখে ফিসফিসিয়ে বলল,

—“কথা বলিস না।”

আমি হৃদের আঙুলটা ঠোঁটের উপর থেকে সরিয়ে দিয়ে শার্টের কলারটা খামচে ধরে মুড়িয়ে বললাম,

—“তুমি আমার উপর রাগ করো নি তাহলে?”

হৃদ মাথা নাড়ালো।আমাকে ঘুরিয়ে নিয়ে পেছনের থেকে ভেজা চুলগুলো সরিয়ে দিলো।পেটে হাত রেখে কাছে টেনে নিয়ে আমার পিঠের সাথে নিজের বুকটা মিশালো।আমার কাঁধে নাক ঘেঁষতে লাগলো।আমি রুমের দরজায় শব্দ পেয়ে বুঝতে পারলাম মা বেড়িয়ে গেছে।হৃদকে সরিয়ে দিয়ে ঘুরে তাকালাম। সাওয়ার বন্ধ করে বললাম,

—“এখন তুমি যাও।মা রুমে নেই আবার আসার আগে পালাও।”

হৃদ মাথা নাড়িয়ে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।আমি ভেজা ড্রেসটা বদলে হৃদের দেওয়া ড্রেসটা পরলাম। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলাম কাকিমণি আর হৃদ দাড়িয়ে আছে।রুমের দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ।হৃদ ভেজা শরীরে এখনো দাড়িয়ে আছে আমার রুমে।কাকিমণি আমাকে দেখে বলে উঠলো,

—“তোরা কি শুধরাবি না? কি শুরু করেছিস এটা? আমার জায়গায় যদি তোর মা চলে আসতো তাহলে? তোদের এসব দেখে কতোটা কস্ট পেতো তোর মা বুঝতে পারছিস? একটু ধৈর্য নেই তোদের মধ্যে?”

আমি আর হৃদ মাথাটা নিচু করে আছি।কাকিমণি আবার বলল,

—“আমি আজই তোর মায়ের সাথে তোদের কথাটা বলবো।অনেকবার বলতে চেয়েও বলবো বলবো করে আর বলা হয়ে ওঠে নি।তবে আজ অবশ্যই বলবো।”

কাকিমণি হৃদকে উদ্দেশ্য করে বলল,

—“রুমে গিয়ে কাপড়টা বদলে নাও।নইতো ঠান্ডা লেগে যাবে।”

হৃদ কোনো কথা না বলে চলে গেলো।কাকিমণি এগিয়ে এসে আমাকে বলল,

—“তুই তো জানিস তোর মায়ের মনে কতোটা কস্ট।তোর বাবা জীবিত থেকেও নেই।তোর মাকে ছেড়ে চলে গেছে বারো বছর হয়েছে।তারপরও কিভাবে তোদের দুই বোনকে মানুষ করেছে তা আমি জানি।তোদের বাবার স্বপ্ন ছিলো তোদেরকে ডাক্তার করবার।এখন তোর বাবা না থাকলেও সেটার জন্য নিজের গহনা, বাবার দেওয়া সম্পত্তি সব বিক্রি করে দিয়েছে তোর মা।আজ তোরা যা সব তোদের মায়ের জন্য।তোর মা তোর বাবাকে এখনো খুব ভালোবাসে ফুল।জানিস, এক বছর আগে হৃদের বাবা যখন মারা যায় তখন তোর মাই আমাকে সামলেছিলো।এমন কিছু করিস না যেন তোর মা কস্ট পাই।আমি আজ তোদের ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলবো কিন্তু তোরা বাড়ির মধ্যে আজ আর এমন কোনো পাগলামি করিস না।হৃদ ছেলে মানুষ ও বুঝবে না।তাই তোকে বললাম।”

কথাগুলো বলে কাকিমণি বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে।

ব্রেকফাস্ট টেবিলে হৃদ এসে বসলে আমি উঠে দাড়ালাম। ডগডগ করে সরবত টুকু খেয়ে দেরি হচ্ছে বলে বেড়িয়ে আসলাম। হৃদের গাড়িতে বসে অপেক্ষা করছি।হৃদ এসে গাড়ির দরজা খুলে অবাক হলো।আমাকে দেখে বলল,

—“বাবাহ এমন ভাব নিয়ে বের হলি তখন মনে তো হচ্ছিল ক্লাস ছুটে যাচ্ছে।”

আমি বললাম,

—“ফাস্ট ক্লাসটাই তো তোমার।ছুটলেও বা কি।তুমি তো আমার সামনে।”

হৃদ হেসে উঠে গাড়িতে এসে বসলো।আমি সিট বেল খুলে হৃদের দিকে এগিয়ে এসে ওর কাঁধে মাথা রাখলাম। হৃদ এক ধমক দিয়ে বলল,

—“রাস্তাঘাটের পথ।দূর্ঘটনা হয়ে যেতে পারে।সিট বেল বাঁধ।”

আমি মাথা নাড়িয়ে সরে এসে সিট বেল বেঁধে নিয়ে বসলাম।

আজ সবগুলো ক্লাস করেছি।প্রিয়া শাকচুন্নিটা আজ আসে নি।খুব আনন্দ লাগছে।আসল আনন্দ হচ্ছে কাকিমণি মায়ের সাথে কথা বলবে এইজন্য।সব ওয়ার্ডে যেয়ে পেশেন্টদের সাথে গল্প করছি, খোঁজ খবর নিচ্ছি।লাঞ্চ টাইম হতেই হৃদের কথা মনে পরলো।আমি ছুটে হৃদের কেবিনে আসলাম।দেখলাম হৃদ বেড়িয়ে যাচ্ছে। আমি বললাম তোমার সাথে লাঞ্চ করবো ও বলল কাকিমণি কিছু গহনা বানাতে যাবে আমাদের বিয়ের জন্য তাই কাকিমণিকে নিয়ে জুয়েলারির শপে যাচ্ছে। আমাকেও যেতে বলল আমি বললাম জাবো না।এখানে আনন্দই হচ্ছে তুমি যাও।আজ আমি ভরপুর আনন্দ করবো।হৃদ বলল,

—“ঠিক আছে আনন্দ কর।রাতে মা কাকিমার সাথে আমাদের কথাটা বলবে।তারপর ধুমধাম করে আমরা আবার বিয়ে করবো।”

হৃদের মুখে বিয়ের কথাটা শুনে মনে পরলো মিনি, নিশিকে এখনো বলা হয় নি।হৃদকে বিদায় জানিয়ে মিনি, নিশির কাছে এলাম। ক্যান্টিনে একটা টেবিলে বসে মিনি আর নিশিকে বলতে লাগলাম হৃদ কতোটা রোমান্টিক। ওরা আমার মুখের দিকে হা হয়ে শুধু শুনছে।তৎক্ষনাৎ নূর আপুর চিৎকার শুনতে পেলাম। চিৎকার করে পুরো হসপিটালের সকলকে ডাকছে।সকলে ছুটে গেলাম। দেখলাম আপু কাঁদছে। আপুকে বসিয়ে শান্ত হতে বললাম। আপুর কান্না যেন থামছে না।আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে।আর বলছে,

—“ফুল হৃদ আর কাকিমণির গাড়িটা এ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে।”

কথাটা শুনে আমি যেন বড়সড় একটা ধাক্কা খেলাম। কিছুতেই যেন বিশ্বাস করতে পারছি না।আপু আবার বলল,

—“কাকিমণি আমাকে কিছু একটা বলার জন্য ফোন করেছিলো।শোনার আগেই কলটা কেটে যায়।কিছুক্ষণ পর অন্য একজন ফোন করে বলে গাড়িটা এ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে।আর দুজনের অবস্থায় গুরুতর। আমার নাম্বারটা কল লিস্টের প্রথমে ছিলো তাই আমাকে জানিয়েছে।”

আপুর কথার শেষে এ্যাম্বুলেন্স এসে গেছে বলল একজন ওয়ার্ড বয়।আমি শুনে যেন সহ্য করতে পারছি না এ্যাক্সিডেন্টের কথাটা।মাথার মধ্যে পুরো দুনিয়াটা ঘুরছে।কি হচ্ছে বুঝতে পারছি না কিছু।শুধুই হৃদের নামটা মুখে আসলো।হৃদ বলে একটা চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।যখন জ্ঞান ফিরলো।কেবিনে আমার বেডের পাশে মাকে দেখতে পেলাম। আমাকে চোখ খুলতে দেখে মা এগিয়ে এসে কেঁদে উঠে বললো,

—“তোর কাকিমণি আর নেই ফুল।হৃদের অবস্থাও তেমন ভালো না।কিছুদিন পরেই ছেলেটার বিয়ে হবার কথা ছিলো।না জানি প্রিয়া মেয়েটার কি হবে? অপারেশন থিয়েটারের সামনে যেভাবে পাগলামো করছে।হৃদের কিছু হলে মনে হয় ডাক্তারদেরই মেরে ফেলবে।”

মায়ের আর কোনো কথা শোনার মতো পরিস্থিতি আমার নেই।আমার চোখদুটো আবার বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো।পাশেই নূর আপু ছিলো।মনে হলো আমাকে ইনজেকশন দিয়েছে।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here