এবং স্ত্রী পর্ব – ১৩

এবং_স্ত্রী
#পর্ব_১৩
#Jannatul_Ferdos

তনিমা বেগম আর প্রেমা নিরুপমাকে নিয়ে তার রুমে যায়।উৎস ঘুমিয়ে ছিল।নিরুপমার কান্নার আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গে তার।এতোক্ষণ গভীর ঘুমে থাকায় এতোকিছু হয়ে গেছে উৎস জানতে ও পারে নি। নিরুপমাকে কাঁদতে দেখে একটু ভরকে যায় উৎস।উঠে বসে সে।নিরুপমা তনিমা বেগমকে জড়িয়ে ধোরে কাঁদছে।প্রেমা তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
“কি হইছে আম্মু নিরুপমা কান্না করতেছে কেন?
” পারুল বেগমের সাথে একটু ঝগড়া হয়েছে
“কি নিয়ে?….উৎসুক সুরে জিজ্ঞেস করলো উৎস
” তোর এতো জানতে হবে না।তুই জেনে কি করবি?তোর জন্যই তো মেয়েটাকে সবাই এতো কথা শুনায়।আমি যদি আগে জানতাম যে তুই ওকে ভালোবাসতে না পারলে ও সম্মান করতে পারবি না আমি কখনোই মেয়েটার কপাল এভাবে পুড়াইতাম না।নিরুপমা এমন একটা মেয়ে ও সবাইকে ভালো রাখতে জানে ছোট থেকেই চিনি।আমি ভেবেছিলাম থাকতে থাকতে তুই ওকে ভালোবাসতে পারবি।যতদিন না ভালোবাসতে পারিস ওর থেকে সময় নিবি।তোর এমন ব্যবহারে ওর মন কতদিন ভালো থাকবে বলতো?একদিন না একদিন ওর কি মুসকানের প্রতি অনিহা আসবে না?তুই যে এতোটা বিবেকহীন মানুষ আমি জানতাম না।সৎ মা বলতেই কি সবাই এক?
উৎস মাথা নিচু করে চুপ করে আছে।এইখানে কিছু বলার নেই।সে সত্যিই অপরাধ করেছে।এর মধ্যে মুসকান কেঁদে উঠে।নিরুপমা তনিমা বেগমকে ছেড়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে মুসকানকে নিয়ে বাইরে যায়।
“দেখলি তুই?তোর মেয়েটা কাঁদছে দেখে ও নিজের কথা চিন্তা করলো না।ওর ও যে একটা মন আছে সেটা মেয়েটা ভুলেই গেছে।তোর মেয়ের জন্য নিজের সুখ দুঃখ বিসর্জন দিচ্ছে।
” শোন ভাইয়া অরিত্রা ভাবিকে তুই ভালোবাসি ঠিক আছে।কিন্তু তুই যদি আজীবন ভালোবাসিস তাতে কি ভাবি ফিরে আসবে?যদি ফিরে আসে বল আমরা সবাই ভাবিকে আরো বেশি করে ভালোবাসি তার জন্য কান্না করি।তোকে দেখলে আমার আফসোস ছাড়া কিছু হয় না। হায় তুই যদি বুঝতি।
তনিমা বেগম আর প্রেমা উৎসের রুম থেকে চলে আসে। উৎসকে আজ সবাই কথা শুনাচ্ছে।কিন্তু কারোর কথায় কোনো ভুল নাই। সে অরিত্রার ছবির সামনে দাঁড়িয়ে কান্না করতে থাকে।
“তুমি খুশি তো অরি?আমি এভাবে কাঁদছি জেনে তুমি খুশিতো?তোমাকে আমি বার বার বলেছিলাম আমাদের এখন বাচ্চার দরকার নেই তুমি জোর করেছিলা।তুমি বলেছিলা তোমার একটা পরির মতো মেয়ে চাই।তুমি তার সাথে খেলতে চাও,তাকে সাজিয়ে দিতে চাও,দুপাশে দুটো ঝুটি বেধে দিতে চাও,পুরো ডল এর মতো লাগবে তখন এরপর হাত ধোরে স্কুলে নিয়ে যেতে চাও।কিন্তু কই কি হলো?সেই মেয়েই তো হলো কিন্তু তুমি কই?স্বার্থপরের মতো করে একা চলে গেলে। তুমি একজন স্বার্থপর মহিলা।এখন আমাকে বলে দাও আমি কি করবো??????
” আপনার কিছুই করা লাগবে না..উৎসের কথা মাঝে নিরুপমা উপস্থিত হয়..
উৎস কিছু বলে না…নিরুপমা আবার বলা শুরু করে…
“আপনাকে কিছুই করতে হবে না।এই ভালোবাসার কাঙালি কখনোই আপনার কাছে ভালোবাসা চাইতে আসবে না। আপনার স্ত্রী হতে আসবে না।আমি মুসকানের মা এবং ওর মা হয়ে থাকতে চাই।বাবা, মা, বড় আপু, প্রেমা, মুসকান এরা আমাকে যতোটা ভালোবাসা দিয়েছে তাতেই আমার চলবে।আমি যখন বুঝতে শিখেছি যে আমার বাবা আমার আগের বাবা নেই,এই মা আমাকে ভালোবাসে না সেদিন থেকেই বুঝেছি স্বামীর সুখ আমার কপালে নেই কারন মা যে আমাকে কোনো ভালো মানুষের সাথে বিয়ে দিত না তা আমি আন্দাজ করতে পেরেছিলাম।এরপর তো বেপারির সাথে বিয়ের কথাতে আমি সম্পূর্ণ ভাবে ধোরেই নিয়েছিলাম স্বামীর সুখ কপালা নেই।তাই এটা নিয়ে আমি ভাবি না।আমি আপনার আর অরিত্রা আপুর মধ্যে কখনোই আসব না।মুসকানকে নিজের সন্তান ভেবে সন্তান সুখ নেব।গর্ভে ধরিনি তো কি হয়েছে?গর্ভধারণ না করে ও মা হওয়া যায় আর আমি মুসকানের বেস্ট মা হয়ে দেখিয়ে দেব।

নিরুপমাকে উৎসকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে মুসকানকে শুয়ে দিয়ে চলে আসে। মুসকানের এখন সাড়ে ৪ মাস বয়স।আগের থেকে একটু কম ঘুমায়।মাঝে মধ্যে চোখ খুলে চারদিকে দেখে।কেউ ওর সাথে কথা বললে এমন ভাবে হাসে যেন সব বুঝতে পারছে।ওর মুখের দিকে তাকালে যে কারোর ওর প্রতি মায়া হবে। এতো মায়াবী হয়েছে মেয়েটা বলার বাইরে।

এভাবে কেটে যায় আরো একটা সপ্তাহের মতো। আজ শুক্রবার কিন্তু উৎস সেই সকালে বের হয়েছে।নিরুপমা ও ঘেটে দেখে নি কই গেছে কি দরকার তার অধিকার ফলানোর?সে যেমন আছে থাক না অন্তত অপমানটা কম হবে।বিকালের দিকে উৎস বাড়িতে আসে।নিরুপমা তখন রান্না ঘরে প্রবীর খান আর তনিমা বেগমের জন্য চা বানাচ্ছিল।উৎসের ডাক পেয়ে সে জানালো চা দিয়ে আসছে।চা দিয়ে এসে রুমে যখন প্রবেশ করলো পুরো রুম অন্ধকার ছিল।
“উৎস কই আপনি?রুম অন্ধকার কেন?
পিছন থেকে উৎস নিরুপমার চোখ বেধে দিল।এরপর নিরুপমার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
” এইবার তুমি চোখের বাঁধন খুলো।
নিরুপমা চোখের বাঁধন খুলে চোখ মিলতেই দেখতে পায় উৎস নিরুপমার জন্য একটা গিটার এনেছে।নিরুপমা দেখে অবাক না হয়ে পারল না।উৎস তার জন্য গিটার নিয়ে এসেছে?
“গিটার?আমার জন্য?
” হুম
“কিন্তু হঠাৎ গিটার আনলেন যে?
” তুমি খুব সুন্দর গান করো নিরুপমা সেজন্য গিটার এনে দিয়েছি।যখন মন চাইবে গিটার নিয়ে গান গাইবে।
“আমি গিটার বাজাইতে পারি আপনি কিভাবে জানলেন?
” তোমাদের বাসায় আমি একটা ভাঙ্গা গিটার দেখেছিলাম।তখন কিউরিওসিটি জাগে কার গিটার হতে পারে?তখন লতিফের থেকে জানি তোমার গিটার।
“হুম টিউশনের টাকা বাঁচিয়ে কিনেছিলাম কিন্তু বাড়িতে আনার সাথে সাথেই মা ভেঙ্গে ফেলে।কিন্তু আপনি আমার জন্য গিটার কেন আনলেন?না মানে আপনি তো আমাকে মানুষ বলেই গন্য করেন না অথচ আমার ভালো লাগাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন….নিরুপমা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে…
” নিরুপমা আমাকে কি মাফ করা যায় না?আমি জানি আমি অনেক ভুল করেছি। তোমাকে অনেক অপমান করেছি।আমি চাইলেই তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করতে পারতাম। অরিত্রাকে এতো বেশি ভালোবাসতাম যে আমি অন্য কোনো মেয়েকে ওর স্থানে দেখতে পাচ্ছিলাম না। আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারব কিনা জানি না তবে আমি চেষ্টা করব।আপ্রাণ চেষ্টা করবো।ততোদিন আমরা বন্ধু হয়ে থাকব।প্লিজ একটা সুযোগ দাও আমি অনুতপ্ত নিরুপমা ।

নিরুপমা ভাবছে তার এখন কি করা উচিত সব ভুলে উৎসকে একটা সুযোগ দেবে নাকি তার ভুলের শাস্ত হিসাবে এই প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করবে???

চলবে!!

গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here