এবং স্ত্রী পর্ব – ২৮+২৯

#এবং_স্ত্রী
#পর্ব_২৮
#Jannatul_Ferdos

ড্রয়িংরুমে সকলে বসে নয়ন রহমান ও তার পরিবারের জন্য অপেক্ষা করছেন।উৎসের কানে নিরুপমার বলা কিছুক্ষণ আগের কথা বাজছে।নিজের কানকে সে বিশ্বাস করতে পারছিল না।নিরুপমার কথার সত্যতা যাচাই করতেই সে নয়ন রহমানকে আসতে বলে। যদিও মিসেস ডালিয়া তা জানেন না।নিরুপমার মধ্যে কোনো হেলদুল দেখতে পাচ্ছে না উৎস।সে নিজের মতে মুসকানের সাথে খেলছে।উৎস কিঞ্চিৎ বিরক্ত হলো। এতো বড় একটা সত্যি সে লুকিয়ে রেখেছিল আর আজ যখন উৎসকে বলল তার ভিতর কোনো ভাবান্তর নেই কেমন জানি কিছুই ঘটে নি?মনে একটু ভয় ও দেখতে পাচ্ছে না উৎস তারমানে কি নিরুপমা সত্য কথা বলছে?কিছুক্ষণের মধ্যে নয়ন রহমান হাজির হয়। নয়ন রহমানকে দেখে মিসেস ডালিয়া অবাক হয়।তার উপস্থিতিতে মিসেস ডালিয়া অবাক হলে ও খুশি হলেন না। নয়ন রহমান একবার তার দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন।সে ও এমন কিছু হবে বলে আশা করেন নাই। নয়ন রহমান সকলের সাথে কুশল বিনোময় করলেন। ঝুমু আর লতিফ নিরুপমাকে গিয়ে জড়িয়ে ধোরে তারপর মুসকানকে আদর করে। পারুল বেগম মিসেস ডালিয়াকে দেখে একটা মুখ ঝামটা মেরে অন্যদিকে গিয়ে বসে।
“নিরুপমা এবার তোমার বলা কথা গুলো তুমি এই সকল মানুষের সামনে বলতে পারবে?…উৎস ফিসফিস গলায় জিজ্ঞেস করে
নিরুপমা নির্দ্বিধায় উত্তর দেয়…” পারব
“ঠিক আছে বলো?
নিরুপমা কিছুটা সময় নেয় এই সময়ের মধ্যে সে বিভিন্ন গল্প জুড়ে নেয়। তারপর কথার মাঝে জিজ্ঞেস করে উঠে…
” বাবা তোমার না একটা বোন ছিল?কি যেন নাম?
নয়ন রহমান মিসেস ডালিয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন
“শারমিন রাহমান ডালিয়া।সকলে ডালিয়া বলেই ডাকত।
” এখন কোথায় সে বাবা?
“সে এখন কোটিপতি শারমিন রাহমান ডালিয়া থেকে মিসেস ডালিয়া।
মিসেস ডালিয়া এবার বিষম খান।এমন কিছু হবে তিনি স্বপ্নে ও ভাবতে পারে নাই।
উৎস এবার জিজ্ঞেস করে ….
” সেই ফুফি কোথায় বাবা?
“এইতো আমার সামনে বসে আছে।তোমার শ্বাশুড়ি মা।
উৎসের চোখ এবার ছানাবড়া হয়ে যায়। নয়ন রহমান ও বলছে তার বোন মিসেস ডালিয়া?
” আম্মু আপনি নিরুপমার ফুফি?কিন্তু আপনাদের ব্যবহারে তো কখনো এমন কিছু খুঁজে পাই নাই।আপনি যদি ওর ফুফু হোন তাহলে কেন নিরুপমার সাথে এরকম ব্যবহার করেন?
“আরে না না পাগল নাকি। এনাদের কোথায় ভুল হচ্ছে আমি কেন ওনার বোন হতে যাবো?আমি যদি ওনার বোন হতাম তুমি জানতে না?বা এখন কি কথা না বলে দুইজন চুপ করে থাকতাম?
” মিথ্যা কেন বলছিস আপা?
“আমি কেন মিথ্যা বলব?
” জীবনে তো পাপ কম করিস নাই আপা আর কত করবি?এখন নিজের ভাইকে ও পরিচয় দিতে লজ্জা করে?কিসের এতো অহংকার? যে টাকা পয়সার এতো অহংকার তোর সে টাকা পয়সা তো তোর না।সবকিছুর ভাগিদার নিরুপমা ছিল।তুই ওর হোক নষ্ট করছিস।
মিসেস ডালিয়া যেন কিছু বলতে চেয়ে ও পারল না।উৎস ও উৎসের পরিবারের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে সব।কিছুই বুঝতে পারছে না
“কি হচ্ছে উৎস এসব? মানে কি বলছে এসব আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।ভাই আমাকে একটু খুলে বলবেন প্লিজ আসলে কি হয়েছে?…প্রবীর খান উত্তেজিত হয়ে বললেন।
” বাবা শান্ত হোন সব খুলে বলছি।যদি ও আমি সবটা জানি না কারন আমি তখন ছোট ছিলাম বাবার মুখে যতোটা শুনে বড় হয়েছে।আজ বাবা সব বলবে।
“বাবা আপনি সব খুলে বলুন। আমি ও জানতে চাই অরিত্রার আম্মুর সাথে আপনাদের এমন কি হয়েছিল?কেন তিনি আপনাকে পরিচয় দিতে অস্বীকার করছে, কেন আপনি এবং নিরুপমা তাকে খারাপ মানুষ বলছেন?আর আম্মু আপনিই বা কেন বাবাকে ভাই বলে পরিচয় দিচ্ছেন না?….উৎস উৎকন্ঠা হয়ে জিজ্ঞেস করে
মিসেস ডালিয়া কোনো উত্তর দেয় না।
” সে কোনো উত্তর দিতে পারবে না উৎস।আজ তাহলে আমি বলি তোমরা শুনো….
সকলে নয়ন রহমানের কথা শোনার জন্য তীব্র আগ্রহ নিয়ে বসে আছে।নয়ন রহমান এবার অতীতে ডুব দেন। কথা শুরু করার আগেই তার চোখে পানিতে ভরে যায়।তিনি চশমাটা খুলে গ্লাস গুলো মুছে চোখে দেন আবার চশমা।তারপর তিনি তার অতীতের সেই ঘটনা গুলো বলতে শুরু করেন।
“বাবা মায়ের ২ জন সন্তান ছিল।আমি আর ডালিয়া আপা।কিন্তু ছোট থেকে ডালিয়া আপা ভিন্ন প্রকৃতির ছিল।নিজের স্বার্থ ছাড়া দুনিয়ার আর কিছু বুঝত না।আমি যে ওর ভাই ও আমাকে নিয়ে ও হিংসা করত।আল্লাহ হয়তো এজন্যই আমার স্থানে কোনো মেয়ে দেন নাই।আপার যখন ৫ বছর বয়স তখন আমার জন্ম হয়।কিন্তু আপা আমাকে ভালোভাবে নিতে পারে নাই তখন।কারন গত ৫ বছর ধোরে সবকিছু সে একা ভোগ করেছে।আমি আসাতে তার ভাগ কমে গেল।এই ধারনা নিয়ে সে ছিল।বাবা মা যখন বুঝতে পারল যে আপা আমাকে ভালো ভাবে নেয় না তারা আমাকে হোস্টেলে পাঠিয়ে দেন।কিন্তু ওর জন্য আমি পড়াশোনাটা ও ঠিক মতো করতে পারি নাই জানো।ও ভাবত আমি যদি ভালো করে পড়াশোনা করি জীবনে বড় কিছু করতে পারব কিন্তু ও সেটা চাইত না।কান্না কাটি করে আমাকে হোস্টেল থেকে নিয়ে আসে।ওর চিন্তায় বাবা দিন দিন অসুস্থ হয়ে যায়। কারোর সাথে মিশতে পারত না।অহংকারে মাটিতে পা পরতো না।এর মধ্যেই ব্যবসায় লস হয়।আমাদের পথে বসে যাওয়ার মতো অবস্থা।কিন্তু বাবার কিছু সম্পত্তি ছিল যেগুলো অনেক আগেই আমার নামে করে রেখেছিল কিন্তু আমি বা আপা কেউ জানতাম না।পথে বসার ওই মূহুর্তে ও বাবা সেই সম্পত্তি ব্যবহার করে নাই।কারন বাবা জানত ওইটাই আমার ভবিষ্যত।
” তারপর তারপর কি হলো?
উৎস উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলো…
“তারপর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে গেল আমার।আমি আপাকে অনেক ভালোবাসতাম।তখন আমি ক্লাস এইটে পড়ি।আপা কলেজে শেষ করবে। আমি চাই নি ওর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাক।বাবার সাথে আমি ও কারখানায় কাজ করি।বাবা আমাকে পড়াতে চেয়েছিল আমিই আর পড়ি নাই।এভাবেই কেটে গেল কয়েক বছর।হঠাৎ একদিন বাবা অনেক অসুস্থ পরে।অবস্থার বেগতিক দেখে হাসপাতালে ভর্তি করি।তখন বাবা আমাকে সেই সম্পত্তির কথা জানায়।আপা তো শুনেই আকাশ থেকে পরে।পারলে তখনই আমাকে গলা টিপে মেরে ফেলে।কিন্তু ওর মনে যে তখন এমন শয়তানি বুদ্ধি আসবে কে জানত?বাবার মৃত্যুর আগ মূহুর্তে কান্না কাটি করে বাবার কাছে ক্ষমা চায়।আমাকে আপন করে নেয়।আমি ও ভাবি হয়তো আপা তার ভুল বুঝতে পেরেছে।তখন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী আমি।দিন যেতে লাগল।আপার ও বয়স বাড়তে লাগল সাথে আমার ও।আমরা তখন বাবার রেখে যাওয়া বাড়িতে থাকি।সাথে একটা ছোট বিজনেস ছিল আমি সেটাই দেখা শোনা করতাম।পায়ের ঘাম মাটিতে ফেলে বিজনেস দাঁড় করানোর চেষ্টা করতেছিলাম।এরমধ্যে আপার বিয়ে হয়।কিন্তু আপার তো নজর এই সম্পত্তির দিকে।দুলাভাই ও একজন মধ্যবিত্ত। এরপর আপা তার ননোদ এর সাথে আমার বিয়ে দিতে চাইলো।ওর ইচ্ছা ছিল যেকোনো ভাবে সম্পত্তি ওর লাগবে।কিন্তু আমি কোনোভাবেই ওর ননোদকে বিয়ে করতে রাজি না।আমি নিরুপমার মাকে বিয়ে করি।তাকে আমার খুব পছন্দ ছিল।এর মধ্যে আমি ভালো টাকাওয়ালা ও হয়ে গেলাম।আপা ততোদিনে ও চুপ।কোল আলো করে আসল নিরুপমা।অরিত্রার তখন ২ বছর বয়স।কখনো নিরুপমার কাছে আসতে দেয় নি অরিত্রাকে।অরিত্রা হয়তো জানতো ও না কোনোদিন যে নিরুপমা ওর আপন মামাতো বোন।এই এতো গুলো বছরে আমি আপাকে খুব বেশি বিশ্বাস করে ফেলি।কারন আমার প্রতি একটু ও অবহেলা দেখায় নি সে।কিন্তু এরপর যে আমার নিজের বোনের থেকেই এরকম কিছু হবে আমি ভাবতে পারি নাই।আমার নিরুপমা ৪ বছর বয়সে তার মাকে হারাবে আমি ভাবতে পারি নাই।সেদিন সবকিছু কেড়ে নিল আমার থেকে এই মানুষটা সবকিছু আমাকে নিঃস্ব করে ছেড়ে দিল এই মহিলা।
নয়ন রহমান এবার হুহু করে কেঁদে উঠলেন।মিসেস ডালিয়ার ভিতরে অনুতপ্তবোধের কানাকড়িও পরিলক্ষিত হলো না কিন্তু তিনি যে রাগে ফোসফোস করছে তা তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল।
#এবং_স্ত্রী
#পর্ব_২৯
#Jannatul_Ferdos

নয়ন রহমান নিজের কান্না আটকে রাখতে পারছেন না।হয়তো তার অতীত তাকে এতো তীব্র যন্ত্রণা দিচ্ছে।তিনি দুহাত দিয়ে চোখের পানি মুছে বলতে শুরু করলেন…
“নিরুপমার মা দ্বিতীয় সন্তান সম্ভাবনা হয় ৮ মাস রানিং ছিল।আমরা সকলে খুব খুশি ছিলাম।কিন্তু আপা কখনোই নিরুপমার মাকে ভালো নজরে দেখতে পারত না।অনেক সময় অনেক কথা শুনিয়েছে কিন্তু সে কখনো আমাকে জানায় নি।এরপর একদিন আপা আমার উপরে প্রেসার দিতে থাকল সম্পত্তি নিয়ে।আমাকে ক্রমাগত হুমকি দিতে থাকে।বাবা তার প্রতি অবিচার করেছে।হ্যা এটা আমি ও মানি।আমি আপাকে সম্পত্তি দিতে রাজি ছিলাম কিন্তু আমি তাকে বলেছিলাম নিরুপমা এবং আমার অনাগত সন্তানের জন্য অর্ধেক আমি রেখে বাকি অর্ধেক দিয়ে দিব।সে তাতে রাজি হয় না।তার পুরো সম্পত্তিই লাগবে।এই নিয়ে আমাদের দুজনের খুব ঝামেলা শুরু হয়। নিরুপমার বয়স তখন ৪।ও খুব ভয় পেয়ে যায় এমন ঘটনায়।নিরুপমার মা তাকে অন্য রুমে রেখে আসে। আমাদের কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আপা আমাকে মারতে আসলে নিরুপমার মা হাত ধোরে ফেলে এবং বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে।হায় আল্লাহ আমি যদি জানতাম এই সামান্য সম্পত্তির জন্য আমি আমার স্ত্রী, অনাগত সন্তানকে হারাবো কখনোই আমি কথা বাড়াতাম না।নির্দ্বিধায় সম্পত্তি দিয়ে দিতাম।নিরুপমার মা যখন আপাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে সে নিরুপমা মাকে জোরে ধাক্কা দেয়।সে গিয়ে সোজা টেবিলের সাথে পেট বরাবর গুতা খেয়ে মাটিয়ে লুটিয়ে পরে।আমার চোখের সামনে সে পেটে হাত দিয়ে বিষাদময় চিৎকার করে উঠে।
নয়ন রহমান এবার বাধ ভাঙ্গা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।নিরুপমাকে জড়িয়ে ধোরে কাঁদতে থাকেন।তারপর আবার বলা শুরু করেন….
“আমি দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। নিরুপমার মায়ের সেদিনের বাঁচতে চাওয়ার ইচ্ছা আমি পূরণ করতে পারি নাই।ডাক্তার তাকে অটিতে নিয়ে যায়।আমি নিরুপমাকে বুকে জড়িয়ে কাঁদি।ডাক্তার এসে জানায় আমার স্ত্রীকে তারা বাঁচাতে পারে নি।চলে গেল নিরুপমার মা আমাকে ছেড়ে।এর কিছুদিনের মধ্যেই আপা আমাকে বলে সে অর্ধেক সম্পত্তি নিতেই রাজি।আমাকে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলে সাইন করতে। ওই মূহুর্তে আমার মনে ছিল আমার স্ত্রী আর অনাগত সন্তান হারানোর বেদনা।আমি না পড়েই সাইন করে দেই।আর তারপর আমার বোন আমার আপন বোন আমার ৪ বছরের মেয়েসহ বাড়ি থেকে বের করে দেয়।কোথায় যাবো এই ছোট মেয়েটাকে নিয়ে ভেবে পাচ্ছিলাম না।তখন দেখা হয় আমার ঝুমুরের মামা মানে আলি ভাইয়ের সাথে।সে আমাকে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়, কাজের ব্যবস্থা করে দেয়।আমি নিরুপমাকে নিয়ে সেখানে থাকতে শুরু করি।এর মধ্যেই আলি ভাই একদিন আমাকে হাত ধোরে বলে পারুলকে বিয়ে করতে।তাহলে নিরুপমা ও একজন মা পাবে আর ঝুমুর ও একজন বাবা পাবে।আমি তাই ভেবে বিয়ে করি।নিরুপমা মায়ের সাথে ঝুমুরকে খেলার সাথী হিসাবে পাবে কিন্তু কথায় আছে একজন নারী চাইলে খুব সহজে কিছু গড়তে পারতে আবার একজন নারী চাইলে খুব সহজে তা ভাঙ্গতে পারে।তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ মিসেস ডালিয়া আর এই পারুল।
“এই এই কি কইলা তুমি?…পারুল বেগম তীব্র রাগ নিয়ে নয়ন রহমানকে বলে
” তুমি চুপ করে থাকো।আজ আমাকে বলতে দাও।
“আম্মু আপনি একটু শান্ত হয়ে বসুন।বাবাকে বলতে দেন।বাবা আপনি বলেন…..উৎস পারুল বেগমকে বললেন
“আমি বাবা হিসাবে অকর্ম।আমি মা মরা এই মেয়েটাকে ভালোবেসে বড় করতে পারি নাই।পারুল আমাকে যেভাবে বলেছে সেভাবে করেছি।সে বার বার আমাকে মনে করিয়ে দিত আমি তার ভাইয়ের দয়ায় বেঁচে আছি।পুরুষ হিসাবে নিজেকে কাপুরুষের মতো লাগত।কাজের সততায় আমি প্রোমোশন পাই চাইলে ও হয়তো আমি ভালো বেতনের একটা চাকরি পেতাম না।তাই নিজের আত্মসম্মানবোধ মাটিয়ে মিশিয়ে আলি ভাইয়ের দেওয়া চাকরিটা করি।কিন্তু আমি বাবা হিসাবে অক্ষম।আমাকে তুই ক্ষমা করে দিস নিরু।আমি পারুলের কথা শুনে অনেক অন্যায় করেছি তোর সাথে।
নয়ন রহমান নিরুপমার দুহাত ধোরে কাঁদতে লাগলেন। নিরুপমার ও কাঁদে।তারপর নিরুপমা বলে…
“আপনারা হয়তো ভাবছেন যে মুসকান অরিত্রা আপুর মেয়ে এজন্য আমি মুসকানকে এতো বেশি ভালোবাসি।তাকে আপন করে নিয়েছি। কিন্তু না আমার যখন বিয়ে হয় আমি জানতাম না যে মুসকান অরিত্রা আপুর মেয়ে ইভেন আমি এটাও জানতাম না যে উৎসের সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে।উৎস আর অরিত্রা আপুর কথা আমি জানতাম।কিন্তু বিয়ে হওয়ার আগে অব্দি আমি জানতাম না আমি আমার নিজের ফুফাতো বোনের সংসারে এসেছি।তার ফেলে রাখা সংসার পূন্য করতে।কিন্তু কখনো এটা মাথায় আসে নাই যে মুসকান আমার বোনের মেয়ে তাই তাকে ভালোবাসব।আমার মাথায় এটা ছিল আমি প্রথম মুসকানকে যেভাবে তার পরিচয় না জেনেই বুকে টেনে নিয়েছি সেভাবেই মুসকানকে আমার বুকে রাখব।সে মুসকান আমার বোনের মেয়ে হোক বা না হোক।ফুফি যখন জানতে পারে আপনার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে তখন থেকে ফুফি আপনাকে এটা বুঝিয়ে আসে যে সৎ মা কখনো মা হতে পারে না।ওনাকে জিজ্ঞেস করেন তো সে কখনো অরিত্রা আপুর গর্ভধারিণী মা হয়ে ও মা হতে পেরেছিল কিনা?আজ তো তার নাম -জোস, খ্যাতি, টাকা- পয়সা, ব্যাংক-ব্যালেন্স সব আছে কিন্তু অরিত্রা আছেকি?আছে কি সেই মেয়েটা যে মায়ের একটু ভালোবাসা খুঁজত?মায়ের কোলের একটু ঘুমাতে চাইতো?
নয়ন রহমানের অতীতের কথা শুনে সকলের চোখে পানি এসে ভিড় করেছিল।কিন্তু মিসেস ডালিয়ার মধ্যে অনুতপ্ত দেখা না গেলে ও নিরুপমার শেষ কথায় তিনি মাথা নত করে ফেলেন।আসলেই তিনি কখনো অরিত্রার মা হয়ে উঠতে পারেননি।মা থাকতে ও অরিত্রা মা ছাড়া থেকেছে।মিসেস ডালিয়া তার বিলাসিতা নিয়ে ব্যস্ত ছিল।কখনো তো পার্লার কখনো শপিং কখনো ঘুরাঘুরি কখনো ডিস্কে।তার বিলাসিতার জন্য কখনোই অরিত্রাকে সময় দিতে পারে নি।দিতে পারে নি বললে ভুল দেয় নি।তবু ও অরিত্রা মিসেস ডালিয়াকে অনেক বেশি ভালোবাসত।তার কথা মতো চলত।আজ তার ভিতরে মাতৃত্ব জেগে উঠেছে।মেয়েকে হারানোর পরে ও এই আফসোস তার ভিতরে ছিল না কিন্তু নিরুপমার একটা ছোট্ট কথায় তার হৃদয়ের ভিতরে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে।অনেক বছর আগে করা পাপের ফল অরিত্রার মৃত্যুর মাধ্যমে আল্লাহ তাকে দিয়েছে।কিন্তু সে বুঝতে দেরি করেছে।অনেক সময় আছে মানুষকে হাজারটা কথা বললে ও তার ভিতরে অনুশোচনা বোধ কাজ করে না কিন্তু ছোট্ট একটা কথা তীরের ফলার মতো কাজ করে।মিসেস ডালিয়া নয়ন রহমানের পা জড়িয়ে ধোরে হাউমাউ করে কেঁদে দেন।
“আমাকে তুই মাফ করে দে ভাই।আমি জীবনে অনেক বড় পাপ করেছি ভুল করেছি।আমি তোর জীবনটাকে নরক করে ফেলেছিলাম ভাই।আমাকে মাফ করে দে।
” আপা পা ছাড়।আমি তোকে ক্ষমা করে দিয়েছি আগেই।বড় বোন হয়ে পা ধরিস না।
“নিরু মা আমাকে মাফ করে দে।আমি তোর সাথে সবচেয়ে বড় অন্যায় করেছি।৪ বছর বয়সে তোকে মা হারা করেছি। আমাকে মাফ করে দে।তোরা সবাই আমাকে মাফ করে দে…নিরুপমার হাত জড়িয়ে ধোরে কান্নারত অবস্থায় বলে মিসেস ডালিয়া
” ফুফি কথায় আছে “সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশফোঁড়”।তুমি কি মনে করেছো তুমি ক্ষমা চাইলেই কি ক্ষমা করা আদৌ সম্ভব?সম্ভব না।কিন্তু আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব কেন জানো?কারন আল্লাহ ক্ষমাশীলদের পছন্দ করেন।তোমাকে ক্ষমা করে দিব আর ওই উপরের আল্লাহর কাছে বিচার দিব।আল্লাহ যেন তোমার বিচার করেন।আর প্রকৃতির প্রতিশোধ বলে তো একটা কথা আছে তাই না?তোমাকে আমি ক্ষমা করে দিলাম ফুফি কিন্তু তোমার করুণ দশার জন্য তুমি প্রস্তুত থেকো।আল্লাহ তোমার বিচার করবেন।আমার প্রতি তুমি যতো অন্যায় করেছো তার প্রতিটার বিচার আল্লাহর কাছে দিলাম।সময়ের কথা সময়ে বুঝলে না ফুফি..।

চলবে!!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here