এবং স্ত্রী পর্ব – ১৪

#এবং_স্ত্রী
#পর্ব_১৪
#Jannatul_Ferdos

উৎস উৎকণ্ঠা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিরুপমার উত্তর পাওয়ার আশায়।নিরুপমা উৎসের পা থেকে মাথা অব্দি তাকিয়ে ভাবছে..
“উম ভুল করে অনুতপ্ত হলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত। উম তোমাকে আমি সুযোগ দিব কিন্তু একটু নাকে দড়ি দিয়ে ঘুড়িয়ে।উহু এতো সহজে তো তোমাকে আমি ক্ষমা করেছি বলব না।একটু ঘুরাই দেখি তুমি ও কিভাবে ঘুরো।
” নিরুপমা?
নিরুপমা কথা গুলো মনে মনে ভাবছিল। উৎসের কথা শুনে সে হুশে ফিরে..
“হ্যা আপনি।আচ্ছা শুনেন আমি কাল বিকালে জানাবো আমাকে একটু ভাবতে হবে
” বন্ধুত্ব করতে ও ভাবতে হবে?
“হ্যা আমার ভাবতে হবে।আপনার মতো মানুষকে বন্ধু বানাবো কিনা
” আমি অনুতপ্ত নিরুপমা… উৎস এবার অসহায় ভঙ্গিতে বলল
“হু কাল বিকালে বলমুনে এখন আসি। মুসকানকে খাইয়ে প্রেমার কাছে দিয়ে একটু গিটার নিয়ে বসব।দেখি দেন গিটারটা দেন।
নিরুপমা গিটারটা নিয়ে চলে যায়। উৎস তার যাওয়ার পথ পানে তাকিয়ে আছে।মেয়েটা বড্ড ফাজিল।

নিরুপমা প্রেমার রুমে এসে দম ফাটিয়ে হাসি। প্রেমা ভুত দেখার মতো তাকিয়ে আছে।বেশি অবাক হচ্ছে গিটার দেখে।
” ভাবি পাগল হয়ে গেলে নাকি গো?এমন পাগলের মতো হাসছো কেন?
“হাসছি কি স্বাদে গো ননোদিনী।তোমার ভাইয়ের কাজে হাসছি।
” কেন ভাইয়া আবার কি করলো?
নিরুপমা এবার আরেক দফা হাসে।তারপর উৎসের কান্ড কাহিনী বলে।প্রেমা ও এবার হাসতে শুরু করে।
“ওকে ঘুরানোই উচিত ভাবি।কিন্তু বিকাল অব্দি কম হয়ে যায়
” হুহ কে বলছে বিকালে উত্তর দেব?তখন আরো সময় চেয়ে নিব।একটু নাকানিচুবানি না দিলে কি হয় গো ননোদিনী
এবার প্রেমা আরো জোরে শব্দ করে হাসে।তার ভাইকে এবার টাইট দিতে পারবে নিরুপমা। ওর একটু শিক্ষা হওয়ার দরকার না হলে ও শুধরেবে না।
নিরুপমা মুসকানকে খাইয়ে দিয়ে প্রেমার কাছে দেয়।তারপর সে তার গিটার নিয়ে বারান্দার দোলনায় বসে।গিটারে টুংটাং আওয়াজ করছে সে।নিরুপমার কলেজে সিনিয়র ভাইবোনরা একটা গ্রুপ করেছিল যারা ভালো গান গাইতে পারে তাদের নিয়ে।নিরুপমার কাছের বান্ধুবি ছিল মাবিহা সেই নিরুপমাকে সেই গ্রুপে নিয়ে যায়।সবাই নিরুপমার গানের গলা শুন মুগ্ধ হয়ে।সেখান থেকেই তার গিটার বাজানো শেখা।আজ কতোদিন পর সে গিটার ছুঁয়েছে।অতীতের কথা গুলো মনে পড়তেই মাবিহার কথা মনে পড়ে তার।অনেকদিন কথা হয় না তার সাথে।সামনে ভার্সিটির এক্সাম এজন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে সে তাই নিরুপমা বেশি ফোন দেয় না।তনিমা বেগম এবং প্রবীর খান চেয়েছিল নিরুপমা পড়াশোনা করুক কিন্তু নিরুপমাই না বলে দিয়েছে।তাহলে সে মুসকানকে সময় দিতে পারবে না।মুসকানের জন্য কিসের এতো টান তার?সে জানে না।সে মুসকানের মা এটাই তার বড় পরিচয়। উৎস তখন হঠাৎ করেই এসে নিরুপমাকরা একটা কাগজ ধরিয়ে দেয়।
নিরুপমা গিটার রেখে উৎসকে প্রশ্ন করে..
“কিসের কাগজ?
” তোমার ডিটেইলস লিখ এই কাগজে।ফুল নাম জন্মসাল তারিখ যেগুলো জন্ম নিবন্ধন এ দেওয়া।বাবা মায়ের নাম।আরো যা যা আছেন।
“এগুলা দিয়ে আপনি কি করবেন?
” তোমার ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার জন্য এগুলা লাগবে
নিরুপমা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মানুষটার দিকে।
“কি হলো কি দেখছো?পূরণ করো?
” আমি আর পড়বো না উৎস…ছল ছল নয়নে উৎসকে বলল নিরুপমা
“কিন্তু কেন?
” আমি তাহলে মুসকানকে সময় দিতে পারব না।
“পড়ালেখার পাশাপাশি মুসকানকে সময় দেবে আর প্রেমা তো আছেই।প্রতিদিন ও তো ক্লাস করতে যাওয়া লাগবে না তোমার।এতো কথা বলো না তো।এতো বেশি বুঝো কেন তুমি?
নিরুপমা এবার উৎসকে জড়িয়ে ধোরে কেঁদেই দিল।উৎসের শার্ট খামছি দিয়ে ধোরে কাঁদছে সে।উৎস তাকে নিজে তাকিয়ে ছাড়িয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল…
” কাঁদতে হবে না।পড়ালেখায় আর সংসার দুইটাতেই মন দাও।মেয়েরা ঘরে ও যেমন পারে বাইরে ও তেমন পারে।কথা আছে যে রাঁধে সে চুল ও বাঁধে।
উৎসের এমন ব্যবহারে নিরুপমা খুবই অবাক হচ্ছে।মানুষটা এতোটা বদলে গেল কিভাবে?
পরেরদিন সকাল হতে না হতেই নিরুপমা মাবিহাকে কল দেয়..
“ওই বান্দরনি আমি না হয় পড়ার জন্য সুযোগ পাই না কল দিতে তুই কেন দিস না?
” আরে তুই পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকিস এজন্য
“তো কি হয়েছে?
” আরে তুই শোননা
“কি বল
” আমি ও ভার্সিটিতে ভর্তি হবো
“কিহহহহ সত্যি?কিন্তু কিভাবে কি তুই না পড়তে চেয়েছিলি না
” হুম কিন্তু কাল উৎস এসে আমাকে বলেছে পড়তে হবে।আমাকে ঘর সংসার দুটোই সামলাতে হবে।মানুষটা চেঞ্জ হয়ে গেছেরে মাহু
“ওয়াও ভাইয়া বোধ হয় তোকে ভালোবেসে ফেলেছে
” নারে ও এখনো ভালোবাসতে পারে নি বন্ধু হতে চেয়েছে।কিন্তু এটাই আমার কাছে অনেক।
“প্রথমে বন্ধুত্ব তারপরে ভালোবাসা।একে বলে এরেঞ্জ লাভ বুঝলি?
” উহু বুঝলাম না।
“দিমু কানের উপরে একটা
নিরুপমা শব্দ করে হাসে।আর কিছুক্ষণ কথা বলে কথা শেষ করে।

সারাদিনে নিরুপমা মুসকানকে খাইয়ে দেয় বাকি সময় প্রেমার কাছে দিয়ে পড়তে বসে।বিকালের দিকে নিরুপমা ছাদে গিয়ে ফুলগাছ গুলোতে পানি দেয়।তখন উৎস কই থেকে যেন উদয় হয়…
” নিরুপমা
“হু বলেন
” কি ভাবলে?
“কি ভাববো?
” তোমার না আজ বিকালে জানানোর কথা ছিল?
“কি জানানোর কথা ছিল?
উৎস এবার দাঁত চেপে চেপে বলে…
” আমাদের বন্ধুত্বের ব্যাপারটা
নিরুপমা মনে মনে হাসে….
“ভাবার আর সময় পেলাম কই?রাতে ভাবছি যে ভাববো কিন্তু ভার্সিটিতে ভর্তির কথা শুনে সেটা নিয়ে আর ভাবা হয় নাই।সারাদিন কাজ কর্ম পড়াশোনা আর মুসকানকে সামলানো সব মিলায়ে সময় হয় নাই। কালকে জানামুনে।
উৎস বিস্ফোরিত হঅচ্ছ রাগে।মুখ চেপে হাসে নিরুপমা।
” কাল কিন্তু অবশ্যই জানাবে কেমন?
“হু
উৎস নিজের কপালকে গালি দিতে দিতে ছাদ থেকে নেমে হাসে।নিরুপমা এবার জোরে হাসে। উৎসের মুখটা দেখার মতো ছিল।
কিছুক্ষণ পর উৎস আবার ফিরে আসে।
” নিরুপমা
“হুম বলেন… গাছে পানি দিতে দিতে উত্তর দেয় নিরুপমা
” আসো আজ তোমাকে আমার ছাদের গল্প বলি
“নিরুপমা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না কি বলল উৎস।
এইযে ছাদটা এতো সুন্দর করে সাজানো দেখেছো?এগুলা সব অরিত্রা সাজিয়েছিল।আমি ছাদটাকে ওর মন মতো সাজিয়েছিলাম।ওর কথাতেই আমি ছাদে দলনায় দেই।ও চলে যাওয়ার পর আমার ছাদে আসা হয় না আর তেমন। সারাদিন মুসকানকে নিয়ে রুমের মধ্যে থাকতাম। যদি ও মুসকান প্রেমার কাছে বেশি থাকত।তোমার সাথে বিয়ের হওয়ার পর ও আমি তেমন ছাদে আসি না।ছাদটা কেমন জীর্ন হয়ে গিয়েছিল।কিছুদিন আগে একদিন ছাদে এসে দেখি ছাদটা আবার আগের মতো হয়ে গিয়েছে।কি সুন্দর সুন্দর গাছ লাগানো হয়েছে।পুরানো মরা গাছ গুলো ফেলে।আমার তখন আর বুঝতে বাকি নেই এটা তুমি করেছো। ধন্যবাদ তোমাকে।
নিরুপমা ছোট করে উত্তর দেয়..
” হুম
“নিরুপমা তুমি কাউকে কখনো ভালোবাসো নি?
নিরুপমা এবার একটু ভিত চোখে তাকায়।তার জীবনে ভালোবাসার কোনো ছোঁয়া ছিল না।কিন্তু হুট করেই একদিন ভালোবাসার প্রজাপতি তার মনে রংধনু একে দেয়।সেই ভালোবাসা সে কাউকে জানাতে চায় না।একান্ত নিজের সেই ভালোবাসা।তাই সে নিজেকে একটু সামলে বলল..
” আমার জীবনে আর ভালোবাসা কই থেকে আসবে?যদি আসতো আমি একটা বাচ্চাসহ আপনাকে বিয়ে করতাম? নাকি আপনার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য এমন মরিয়া হয়ে উঠতাম?ভালোবাসা কাঙালিরা সারাজীবন ভালোবাসা ভিক্ষে করেই বেড়ায় কিন্তু ভালোবাসা আর পায় না।যদি কখনো আপনার ভালোবাসা পাই তখন আর নিজেকে কাঙালি বলে দাবি করবো না।
নিরুপমা আর কিছু না বলে চল আসে।উৎস দাঁড়িয়ে আছে তার দিকে তাকিয়ে। মেয়েটা এতো দুঃখি?নিজেকে একজন ভালোবাসার ভিখারিনী বলছে?

চলবে!!

ব্যস্ততার জন্য গল্প দেওয়া হই নাই।আগামিকাল অর্থাৎ ঈদেরদিন ও তার পরের দিন গল্প দেওয়া বন্ধ থাকবে।গঠনমূলক মন্তব্য করবেন।সবাইকে ঈদ মোবারক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here