কি ছিলে আমার পর্ব -০৫

#কি_ছিলে_আমার
-রূবাইবা মেহউইশ
পর্ব-৫

বাইরে আজ চড়া রোদ নেই, নেই শীতল বাতাস। আজকের আবহাওয়া একদম বাংলাদেশের সঠিক জলবায়ু বলেই মনে হচ্ছে ইরশাদের তবুও যে এই মেয়েটা কেন এমন ঘামছে আবার তার হাত দেখে মনে হচ্ছে একটু কাঁপছেও। এত অপ্রস্তুত হওয়ার মত কি কিছু ঘটেছে এখানে! মৈত্রীর অবস্থা দেখে গলা খাঁকড়ি দিলো ইরশাদ।

“তুমি কি অ-সুস্থ বোধ করছো?”

অকস্মাৎ প্রশ্ন শুনে মৈত্রী তৎক্ষনাৎ কোন জবাব দিতে পারলো না অথচ ইরশাদ তাকিয়ে আছে তার মুখের দিকে৷ সে বুঝতে পারলো লোকটা তার জবাবের অপেক্ষা করছে তাই জড়তা ভেঙে জবাব দিলো, “আমি ঠিক আছি।”

“আরও কোন বই নেবে?”

মৈত্রী তৎক্ষনাৎ জবাব দিলো, “না।”

“ওহ তবে বাড়ি ফেরা যাক!”

এ কথা বলেই ইরশাদ লাইব্রেরি থেকে বের হওয়ার জন্য পা বাড়ালো। মৈত্রী চমকে তাকিয়ে আছে ইরশাদের যাওয়ার পথে। লোকটা কি তার সাথে যাবে! এতক্ষণের অস্থিরতা এবার পশমের গোঁড়ায় এসে শিউরে উঠলো। এখান থেকে রিকশা করে বাড়ি ফিরবে সে লোকটা যদি তার সাথে রিকশায় উঠে ছিঃ ছিঃ পরিচিত কেউ দেখলে কি ভাববে! আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে ধীর পায়ে বেরিয়ে গেল লাইব্রেরি থেকে। তাকে আরও এক ধাপ বিষ্মিত করে ইরশাদ রিকশা দাঁড় করিয়ে তাকে বলল, “উঠো।”

“জ্বী!”

“রিকশায় উঠো।”

মৈত্রী এবার একপলক তাকালো ইরশাদের দিকে। পরনে সাদা শার্ট ইন করা কালো প্যান্টে। মাথার চুলগুলো ওই বাঁদ-রটার মত কোঁকড়া কিংবা ঝাঁকড়া নয়। একদম সোজা আর ঝলমলে তার চুল, নাকটা সরু এবং খাঁড়া অনেকটা পাকিস্তানিদের মত৷ গালে দু একদিনের বেড়ে ওঠা দাঁড়ি, ভ্রু দুটো ঘন আর চোখ… ঠিক এখানেই আর ভাবনা চলে না মৈত্রীর। চোখদুটোর সেই ফেনিল র-হস্যম-য়ী দৃষ্টি তাকে ঠিক প্রথম দিন থেকেই আচ্ছন্ন করেছে। কিশোরী বয়সেও কারো প্রতি দূর্বল না হওয়া মনটা আচমকাই এই আগুন্তকের আগমনে কেমন টলে গেল অজান্তেই! ইরশাদের মনে হলো এই মেয়েটি একটু অস্বাভাবিক, একটু ভিন্ন৷ সে আবারও রিকশায় উঠার করতে বলতে যাচ্ছিলো কি মৈত্রী চুপচাপ উঠে বসল। সে রিকশায় উঠেই একপাশে চেপে বসতে বসতে ইরশাদের দিকে তাকাতেই আরও একবার বিষ্মিত হলো। লোকটা রিকশাওয়ালাকে ‘যান’ বলেই অন্য একটা রিকশা ডেকে তাতে উঠে গেল। মৈত্রীর চোখেমুখে কোন প্র-তিক্রিয়ার আভাস না থাকলেও ভেতরে ভেতরে সে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে অদৃশ্য সেই প্রতিক্রিয়া। তার ধারণার সম্পূর্ণ বিপরীত এই লোকটা। রিকশা চলছে দুজনেরই পাশাপাশি মৈত্রী আঁড়চোখে তাই দেখতে চেষ্টা করলো। নাহ সুযোগ নেই লোকটার মুখে তাকানোর। চলন্ত রিকশাটাতে আজ মৈত্রীর মনে হলো গোটা শহরটাই চলছে তার সাথে। রোদের নিস্তেজ রূপ তাকে উজ্জ্বলতায় কেমন ঘিরে ধরছে আজ এইক্ষণে। মন কি তার বদলে যাচ্ছে কোনভাবে! কেন? কলেজের সেই নয়ন কিংবা ইউনিভার্সিটির সকল মেয়ের ক্রাশ রাহি ভাইয়ার আশপাশে থাকলে তো তার এমন লাগে না কখনো। রিকশা থেমেছে বাড়ির সামনে প্রথমে মৈত্রীরটা পরে ইরশাদেরটা। মৈত্রী ব্যাগ থেকে টাকা বের করতে ব্যাগে হাত দিতেই রিকশাওয়ালা বলল, “ওই ভাই আগেই দিয়া দিছে।”

মৈত্রী ফিরে ইরশাদের দিকে তাকাতেই সে ঠোঁট টেনে একটু হেসে বলল, “দিয়ে ফেলেছি তুমি যাও।”

ময়ূখ আজ একটু মার্কেটে গিয়েছিল এখনো ফেরেনি৷ ইরশাদ ঘরে ঢুকে গোসল সেরে মাকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন, “ওর বাবা ফোন করে ওকে ঢাকায় যেতে বলেছে।”

ইরশাদ শুনলো কিন্তু কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না তার এই নিয়ে। সে মাকে বলল, “ভাত বেড়ে দাও আম্মু খিদে পেয়েছে।”

ইরিন বুঝতে পারলেন ময়ূখের ঢাকায় যাওয়ার কথা শুনে ছেলে রা-গ করেছে। তাই নিজে ভাত নিয়ে খাচ্ছে না। তিনি খাবার বেড়ে দিতে দিতে একবার ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন, “এভাবে রাগ করলে চলবে! যার ছেলে সে চাইবে না নিজের কাছে নিয়ে যেতে? তুই তো আমার ম্যাচিউর বাচ্চা এভাবে তোর রা-গ মানায়?”

“আমি তোমার ম্যাচিউর বাচ্চা আর ময়ূখ তো তেমন নয় আম্মু। সারাটা জীবন বুকে আগলে বড় করছি আমরা কি তাকে একসময় ওই শূণ্য ঘরে যেতে দেওয়ার জন্য! ”

ইরিন বেগম লম্বা একটা শ্বাস টেনে নিয়ে দু চোখের পাতা বুঁজে নিলেন। চোখের জল গড়িয়ে পড়ল নিঃশব্দে গাল বেয়ে। তিনি নিজেও চাননা ছেলেটা ঢাকায় যাক। এতে তাঁর নিজের বুকটাই খাঁ খাঁ করবে যে। কিন্তু কিছু তো করারও নেই৷ ময়ূখ তার বাবার একমাত্র ছেলে আর বাবার ব্যবসা, সম্পত্তি সব তো একা মেয়েকে দিবেন না ছেলের ভাগ ছেলেকেই দিবেন৷ সেসবের জন্য হলেও ময়ূখকে একটা সময় ইরিনের আঁচল ছেড়ে চলে যেতে হবে। ইরশাদ ভাত মুখে পুরে পকেট থেকে ফোন বের করল। ময়ূখকে ফোন করে বলল বাড়ি ফিরে আসতে জলদি কথা আছে। ইরিন বেগমের ভালো লাগলো না ছেলের এই আচরণ। তিনি আর কোন কথা না বলে ছেলের সামনে থেকে সরে গেলেন।

রাজশাহীর সবচেয়ে বড় শপিংমলটাতে এসেও ময়ূখ কিছু পছন্দ করতে পারল না তার বোনের জন্য। মেহের যা পছন্দ করবে তা বুঝি পুরো শহরটা খুঁজলেও পাবে না। মেহেরের পছন্দ তো ইরশাদের জিনিসগুলো এ কথা মনে হলেই গায়ে কাঁ-টা দেয়। যেখানে ময়ূখ ইরশাদকে আপন ভাই মেনে বড় হয়েছে সেখানে মেহেরটা কিছুতেই তা মানে না। মেহের যে বড় হয়ে গেছে তার মনের ভেতর এখন অনুভূতিদের ভিন্নতা তৈরি হয়েছে তাতো ময়ূখ জানে কিন্তু তবুও ইরশাদ ভাইকে নিয়ে তার অনুভূতি কিছুতেই স্বাভাবিক মনে হবে না। আর ভাইও তো মেহেরকে তার মতই আপন বোন ভাবে তারওপর ওই পুচকির বয়সটাইবা কদ্দুর! বোনকে নিয়ে ভাবতে ভাবতেই পুরো শপিংমল চষে বেড়ালো। কিছুই পছন্দ করতে পারলো না বোনটার জন্য; শুধু মন বলছে ভাইয়ের থেকে দুটো পাখি কিংবা একটা ফুলের টব নিলেই কোটি টাকা মূল্যের আনন্দ পাবে পুঁচকিটা। এমনিতে তো ঢাকায় যাওয়ার ইচ্ছে তার একদমই নেই কিন্তু অনেক দিন হলো মেহেরকে দেখে না আর বিসিএসের জন্য তো তাকে আগামী সপ্তাহেই যেতে হতো! এমনিতে যেটুকু মলের ভেতর ঘুরে বেড়াচ্ছিলো ইরশাদের ফোন পেয়ে সেটুকুও আর হলো না। তাই দু বক্স চকলেট আর ফেরার পথে নার্সারি থেকে একটা গোলাপ চারা নিয়ে বাড়ি ফিরল ময়ূখ। বেলা গড়িয়ে বিকেল নেমেছে উঠোন জুড়ে৷ আজকে ক্রিকেট কিংবা ফুটবল ম্যাচ কোনটাই হবে না বুঝতে পেরে মিশু ইরশাদদের কলিংবেল টিপলো। ময়ূখ সবে বাড়ি ফিরে গোসলে ঢুকেছে। ইরিনও হাতে কাজ না থাকায় নিজের ঘরের বেলকোনিতে বসে কাঁথা সেলাই করছিলেন তাই হয়ত বেল বাজার আওয়াজটা খেয়াল করেননি। ইরশাদ একটু আগেই আসর নামাজ পড়ে ঘরে ফিরেছিল তাই ডোর বেলটা তার সজাগ কানেই ঢুকল৷ বসার ঘরে দু দিকে নজর ফেলে কাউকে না পেয়ে নিজেই গিয়ে দরজা খুলল সে।

“আরে চ্যাম্পিয়ন যে এসো ভেতরে এসো।”
হাসিমুখে বলল ইরশাদ। কিন্তু মিশু তার দিকে না তাকিয়েই ঘরের ভেতর নজর বুলাচ্ছে। ইরশাদ তার নজরের ভাবার্থ বুঝতে পেরে বলল, বস তো গোসলে ঢুকেছে। তুমি একটু বসো।

“ইরশাদ ভাইয়া আপনি কি চশমা পরেন?”

ইরশাদ টেবিলের ওপর রাখা ফলের ঝুড়িটা থেকে দুটো কলা নিয়ে একটা মিশুর দিকে ধরল। মিশু কপাল কুঁ-চকে সেদিকে তাকাতেই বলল, “বসে এটা খাও ততক্ষণে তোমার বস গোসল সেরে বের হবে।”
ইরশাদ নিজেও একটা কলা খোসা ছাড়িয়ে খেতে খেতে সোফায় গিয়ে বসল। তাকে অনুসরণ করে মিশুও বসে কলায় কামড় বসালো কিন্তু নিজের করা প্রশ্নের উত্তরটা না পাওয়ায় সে এখনও তাকিয়ে আছে ইরশাদের মুখের দিকে। আরও কয়েক সেকেন্ড ধৈর্য্য দেখিয়ে পরে বিরক্তি ঝাড়লো, “আপনি এত চুপ করে থাকেন কেন? বলেন না চশমা পড়েন কিনা?”

“হু”

“তাহলে এখন চশমা নেই কেন সাথে?”

“এখন লাগবে না তাই।”

“আপনার চোখে কি আধা সমস্যা?”

মিশু বড় কৌতূহলী দৃষ্টি ফেলে এবারের প্রশ্নটা করলো। কিন্তু ইরশাদ উল্টো প্রশ্ন করল, আধা সমস্যা আবার কি!

“ওমা! আপনি জানেন না এটা?”

“নাতো!”

” এইটুকু কথা জানেন না তাহলে কলেজের শিক্ষক কি করে হলেন?”

মিশুর কথায় এবার মজা পাচ্ছে ইরশাদ তাই হেসে ফেলল। কিন্তু সেই হাসিতেই উচ্চশব্দ নেই, ঝংকার নেই। অথচ তার জায়গায় এখন ময়ূখ হলে তীব্র ঝংকার তুলতো তার মন খোলা হাসি দিয়ে ৷ মৈত্রীর ভাষায় দাঁতখোলা হাসি। আর মিশুর এ কারণেই ইরশাদের চেয়ে ময়ূখকে বেশি ভালোলাগে। মিশু আবার বলল, “আপনি যে চশমা পরেন সে কথা বাড়িতে শুধু আমি জানি আর আমার আপু জানে।”

“তোমরা দুজন কি করে জানলে!” অবাক হলো ইরশাদ। কারণ চশমা সে শুধু ফোন আর ল্যাপটপের কাজেই ব্যবহার করে সেই সুবাদে ঘরের বাইরে কখনও পরা হয় না। তার নিজেদের বাড়ির লোকেরা জানলেও এ বাড়িতে নতুন আসায় কারো জানার কথা নয়৷ কারণ সে এখানে আসার পর আজ অবধি একবারও চশমা পরে বাইরে যায়নি।

তাদের দুজনের কথার ফাঁকেই ময়ূখ বেরিয়ে এলো গোসল সেরে। মিশুকে দেখে জোর আওয়াজে ডেকে উঠলো, “ওই মিশরী কি খবর মিয়া?”

“ময়ূখ ভাইয়া তুমি আবার আমাকে মিশরী বলছো আমি কিন্তু আমার আপুকে বলে দেব।”

মিশুর কথা শুনে ময়ূখ আবার হেসে উঠলো সেই ডা-কা-তিয়া দাঁত কেলানো হাসি৷ মিশুর মতই সেও বলে উঠলো, “তোমার বইনরে কইলে কি হইবো মিয়া সে নিজেই এক পেঁচামুখী।”

ময়ূখ ফাজলামো জারি রাখার চেষ্টায় মিশুকে উ-ত্তে-জিত করতে চাইলো। এ বাড়িতে আসার প্রায় কিছুদিন পর থেকেই সকলের কাছে চাউর হয়ে গেছে এই ছেলেটা মৈত্রীকে পেঁচামুখী বলে সম্মোধন করে। অথচ এই সম্মোধন শুধু দূর থেকেই৷ তাদের সামনা-সামনি যে ক’বার দেখা হয়েছে ময়ূখ প্রতিবার হাস্যকর কোন না কোন ঘটনা ঘটিয়েছে। আর তখন এমন কোন কথা না বলে শুধু বেকুবের মত হি হি হা হা করেই সরে এসেছে। ইরশাদ অবশ্য তাকে অনেকবার বলেছে এভাবে কিছু বলিস না মেয়েটা মন খা-রা-প করতে পারে। ময়ূখ সে কথায় পাত্তা দেয়নি৷ মিশু আরও কিছুক্ষণ বসলো ইরশাদ, ময়ূখের সাথে কিন্তু কোনমতেই খেলার জন্য কাউকে বলতে পারলো না৷ ময়ূখ খাবার খেয়ে ফ্রী হতে হতেই মাগরিবের আজান পড়েছে। ইরশাদ নামাজের জন্য চলে গেছে, ফখরুল সাহেব তখনও অফিস থেকে ফেরেননি আর ময়ূখ বসেছে তার ব্যাগ নিয়ে। কয়েকটা কাপড়চোপড় নিতে হবে সাথে করে৷ কিছু কাগজপত্রও আছে প্রয়োজনীয় আর ল্যাপটপটাও নিবে। ব্যস, এতেই তার গোছগাছ শেষ এদিকে মন খারাপ করে বসে আছে ইরিন৷ ময়ূখকে একা ঢাকায় পাঠাতে গেলেই তার কলিজা মো-চ-ড় দেয়। এই বুঝি ছেলেটা আর ফিরবে না, এই বুঝি সে আর আগের মত আগলে নিতে পারবে না তার সোনার মানিককে। দিন শেষে যদিও ময়ূখকে তার ছেড়ে দিতেই হবে তার ভবিষ্যতের জন্য তবুও মায়ের মন৷ মা হয়ে দু হাতে আগলে নিয়েছিলো সে দু বছরের ময়ূখকে আজ পঁচিশ বছরের ছেলেটাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবতেই বুকে ঘা লাগে।ময়ূখ ব্যাগ গুছিয়ে এক পাশে রেখে বসা থেকে উঠতেই দেখলো আম্মার গাল ভেজা। বুঝতে বাকি নেই কেন এই সিক্ততা তবে সেতো জানে তার আম্মার ভাবনা ভুল। সে কোনদিনও বাবা, আম্মা আর ভাইকে ছেড়ে দূরে যাবে না। তার বসত, তার জনম সব এই আম্মায় পায়েই হবে৷ এইযে বিসিএস দেওয়ার কথা ভাবছে সেটাও আম্মার কথা ভেবে, ভাইয়ের পূরণ না হওয়া স্বপ্নটাকে ভেবেই তো দিচ্ছে। গুছিয়ে রাখা ব্যাগটাকে সরিয়ে আম্মার পাশে বসলো ময়ূখ। দু হাতে গাল মুছিয়ে দিয়ে মাথায় আলতো চুমু খেয়ে বলল, “তুমি এমন করে কা-ন্নাকা-টি করলে আমার লজ্জা লাগে আম্মা৷ মনে হয় আমি বুঝি তোমার মেয়ে আর আমাকে বিয়ে দিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠাচ্ছো।”
ইরিন বেগম ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন কিন্তু ছেলের কথা শুনে কান্না অবস্থাতেই হো হো করে হেসে দিলেন৷ এই ছেলেটা তাকে এমন করে পা-গ-ল বানিয়ে দিচ্ছে৷ তিনি গাল থেকে ময়ূখের হাত দুটো সরিয়ে তার কান চে-পে ধরলেন এবার।

“ওরে রা-মছাগল তুই যে এসব কি বলিস না! তুই মেয়ে হলেই ভালো হতো রে! তখন না হয় মনকে বুঝ দিতে পারতাম।”

আজ রাতের আকাশে তারার চিহ্ন নেই, নেই চাঁদের অস্তিত্ব। শীত শীত আমেজ পড়ছে প্রকৃতিতে তবুও আকাশ জুড়ে কালো মেঘের আনাগোনা৷ আজকের আবহাওয়া সন্ধ্যা থেকেই জানান দিচ্ছে শীতের আমেজে বৃষ্টি হবে একদফা। প্রকৃতি ভিজবে শীতল হয়ে জমে যাওয়ার ভয় নিয়ে। মৈত্রীর আজ বইগুলো পড়তে ইচ্ছে করছে না৷ তাই রাতের খাওয়া শেষ হতেই ছাঁদের চাবি নিয়ে চলে এসেছে সে ছাঁদে। রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থেকে দেখছিল নিচের রাস্তা, বাড়ির গেইট আর বাড়ির আঙিনা। চারপাশ জুড়ে আঁধার নেমেছে সেই আঁধার জমেছে গাছের ফাঁকে, ছাঁদের কার্নিশ আর মৈত্রীর মনেও৷ একাকীত্বের গল্প তার জন্ম থেকেই গাঁথা। অথচ এই একাকীত্বকে সে অনুভব করছে জীবনের একুশটি বছর পার করে৷ জীবনে রঙ বেরঙের সময় আসে, গল্প জমে অথচ জীবন ডায়েরির পৃষ্ঠাগুলোয় তেমন কিছুই ছিলো না এতদিন৷ হুট করেই এখন সেসব পাতায় দা-গ টানতে ইচ্ছে করছে কোথাও কালো, কোথাও লাল কিংবা কোথাও হলুদ। এত এই পরিবর্তন তাকে বদলে দিতে চাইছে যেন জো-র করেই। ছাঁদের রেলিংয়ে দু হাত ফেলে ভর দিয়ে নিচের পথে চেয়ে থেকে তার কপাল কুঁচকে গেল। বাড়ির উঠোনে ব্যাগ কাঁধে কে দাঁড়িয়ে আছে? উঠোনের বাতির আলোয় যেটুকু দেখা যাচ্ছে লোকটার মাথাভর্তি ঝাঁকড়া চুল৷ তারমানে ওই বাঁদর ছেলেটা যাচ্ছে কোথাও কিন্তু এই রাতের বেলা! তারপরই চোখে পড়লো পাশেই দাঁড়ানো সেই লম্বা মতন বিড়ালচোখা লোকটা। লোকটার পরনে ট্রাউজার আর টি শার্ট তারমানে যাচ্ছে শুধু ওই বাঁদরটাই৷ মৈত্রী খেয়াল করলো ময়ূখের পরনে আজ টি-শার্ট কিংবা থ্রী কোয়ার্টার প্যান্ট নেই বরং জিন্স, শার্ট আবার হাতের কব্জিতে চিকচিক করছে কিছু একটা ব্রেসলেট কিংবা প্লাটিনামের সিলভার ঘড়ি। আজ এই প্রথম মৈত্রী খেয়াল করল এই লেকটাকেও ভদ্র সাজে ভালো দেখায়। তবে ওই বিড়ালচোখা লোকটার সাথে খুব একটা মিল নেই হোক তা স্বভাবে কিংবা দেহের গড়নে। নিজের অজান্তেই সে দুজনের মধ্যে তুলনা করতে লাগলো যেন৷ মিনিট কয়েকের মধ্যে দু ভাই গেইটের বাইরে গেলেও ফিরে এলো ইরশাদ একা৷ মৈত্রী তখনো সেদিকেই তাকিয়ে আছে৷ ইরশাদ গেইট দিয়ে ঢুকে উঠোন পেরিয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকতে গিয়েও ফিরে এলো আবার। উঠোনের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে ছাঁদের দিকে তাকাতেই মনে হলো মেয়েটা বুঝি তাকে দেখতেই ওখানে দাঁড়িয়ে আছে৷ নিজের ভাবনাটাতে অবাক হয়ে নিজেকেই ধ-ম-কে উঠলো সে, এ কেমন বে-হু-দা ভাবনা তোর!

চলবে
(সম্পর্কের রহস্য নিয়ে অধৈর্য্য না হওয়ার অনুরোধ রইলো৷ এ গল্পে একটুখানি জ-টিলতা আছে সম্পর্কের তবে সময়ের সাথে সবটাই খোলাসা করা হবে।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here