চন্দ্ররঙা_প্রেম_২ পর্ব ৯

#চন্দ্ররঙা_প্রেম_২
#পর্বঃ৯
#আর্শিয়া_সেহের

আরিয়ান যতই অপরাধ করুক তাতে তাকে বেঁধে কেনো রেখেছে এটা নিয়ে আরাফাত চিল্লাচিল্লি শুরু করে দিয়েছে। পিহুদের বাড়ির আশেপাশের কয়েকজন মানুষ আবারও সেই চিল্লাপাল্লা শুনে উপস্থিত হয়েছেন। এলাকার ছেলেরা রেগে আগুন হয়ে উঠেছে ইতোমধ্যে। একে তো তাদের এলাকার মেয়েকে নিয়ে নোংরা প্ল্যান করেছিলো এখন আবার তাকে নিয়ে বড় গলায় কথা বলতে এসেছে।

আরিয়ানের বাবার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। তার অর্জিত মানসম্মান তার দুই ছেলেই শেষ করে দিচ্ছে। অমানুষ জন্ম দিয়েছেন দু’টো। আরিয়ানের বাবা-মা দু’জন মিলেও তাদের দুই ছেলেকে থামাতে পারছেন না। এলাকাবাসীদের সাথে তর্কবিতর্কের এক পর্যায়ে তারা ক্ষেপে গিয়ে আরাফাত আর আরিয়ানকে দুই চার ঘা বসিয়ে দেয়। রুশান আর তনিম বহু কষ্টে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকাবাসী কে কোনোমতে বুঝিয়ে আরাফাত আর আরিয়ানকে তাদের বাবা-মায়ের সাথে পাঠিয়ে দেয়।

যাওয়ার আগে আরিয়ানের বাবা রুশানের দুই হাত ধরে কেঁদে ফেললেন। অপরাধী সুরে বললেন,
-“আমাকে ক্ষমা করে দিও, ইয়াং ম্যান। বাবা হয়ে ছেলেদের সামলে রাখতে পারি নি। সুশিক্ষা দিতে পারিনি। এরই প্রেক্ষিতে আজ তোমাকে এভাবে অপদস্থ হতে হয়েছে।আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।”

রুশান একটু হাসার চেষ্টা করে বললো,
-“সমস্যা নেই আঙ্কেল। তবে ভবিষ্যতে যেন এমন না হয় সেদিকে একটু খেয়াল রাখবেন।”
ভদ্রলোক মাথা নাড়িয়ে যেতে যেতে বললো,
-“অবশ্যই অবশ্যই। ভালো থেকো তুমি।”

তনিম পেছন থেকে এসে বললো,
-“লোকটা কতো ভালো আর তার ছেলে দুইটা হয়েছে আস্ত বদমাইশ।”
রুশান হেঁসে বললো,
-“বাপ ভালো হলে দুইটা ছেলের একটা অন্তত ভালো হতো।”
তনিম রুশানের কথা কিছু বুঝতে পারলো না। প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-“বুঝলাম না, স্যার। আপনি বলতে চাইছেন এই ভদ্রলোক…”
তনিমের কথা কেড়ে নিয়ে রুশান বললো,
-“অভদ্রলোক বলো। আস্ত একটা অভদ্র উনি। এখানে যেটা করলেন তা শুধুমাত্র সবার সামনে নিজেকে ভালো রাখার জন্য। ওই লোকটা সব রকমের খারাপ কাজের সাথে জড়িত।”
তনিম মাথা চুলকে বললো,
-“একেই বোধহয় বলে, ‘মুখে মধু আর অন্তরে বিষ।”

রুশান মুচকি হেঁসে তনিমের কাঁধে হাত রেখে ভেতরে ঢুকে গেলো। প্রতিবেশীরাও যে যার বাড়িতে চলে গেছে ইতিমধ্যে।
শান বারান্দার একপাশে বসে আগামীকালকের এ্যারেন্জমেন্টের জন্য একটা হিসাবের ছক করছে। রুমঝুম আর রুশান পাশে বসে বসে প্রয়োজনীয় জিনিসের নাম বলছে। তনিম বারান্দার অপরপাশ থেকে এগুলো দেখে হাসলো। আত্মীয় হওয়ার জন্য রক্তের সম্পর্ক থাকাটা দরকারি না, দরকারি হলো আত্মার সম্পর্ক থাকা। যেটা তার সাথে এই মানুষগুলোর আছে।

প্রিয়া কয়েকবার এসে সবাইকে দেখে আবার ঘরে ঢুকে গেছে।‌ প্রিয়ার সাথে সাঁঝের বেশ ভাব হয়েছে। সে প্রিয়ার সাথে গল্প করতে করতে তার ঘরেই ঘুমিয়ে পড়েছে। মানসিক ভারসাম্যহীন প্রিয়াও যেন তার নিজের বাচ্চাকে ফিরে পেয়েছে। পরম আদরে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে সাঁঝকে।
পিহু আর রাফিয়া বেগম রাতের রান্নার আয়োজন করছে। রুমঝুম কয়েকবার বারন করলেও তারা শোনেননি। অতিথিদের তো আর যা তা খেতে দেওয়া যায় না।

রুশান মাথা উঁচু করে তনিমের দিকে তাকালো। তনিম তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। রুশান একটু গলা উঁচিয়ে বললো,
-“তনিম ,তোমার রুমেল ভাই,মেঘা ভাবিকে একটু দাওয়াত দিয়ে দাও। ওদের কথা তো ভুলেই গেছি।”

তনিম ভ্যাবলার মতো তাকালো রুশানের দিকে। রুমঝুমও আড়চোখে রুশানের দিকে তাকালো। রুশানের পেটে আস্তে ঘুসি মেরে বললো,
-“ওর বিয়ের দাওয়াত ও নিজে দিবে তাই না? তোর মতো নির্লজ্জ নাকি ও?”
তনিম দাঁত দিয়ে জিভ কামড়ে বললো,
-“ওপপস সরি। আচ্ছা আমি বলতেছি। কিন্তু ওর পাতানো বোনকে তো ও দাওয়াত দিতেই পারে তাই না?”
শান হেঁসে বললো,
-“তা পারে বৈকি। তনিম তাহলে পুনমকে দাওয়াত দিয়ে ফেলো।”

বিয়ে সম্পর্কিত কথা হলেই তনিম কেমন যেন লজ্জা পাচ্ছে। সে দ্রুত রুশানদের চোখের সামনে থেকে সরে এলো। সবাই মিলে তাকে লজ্জায় ফেলছে।
আবডালে এসে তনিম পুনমের নাম্বারে কল করলো। পুনম ব্যাগপত্র গোছাচ্ছিলো তখন। এতো রাতে তনিমের নাম্বার থেকে কল আসায় সে কিছুটা ঘাবড়ে গেছে। তাছাড়া রুশানও তো আজ চট্টগ্রাম গেছে।
পুনম হাতের জামাটা বিছানায় ফেলে তড়িঘড়ি করে ফোন রিসিভ করলো।
-“হ্যালো,তনিম ভাই। সব ঠিক আছে? রুশান ভালো আছে? কি হয়েছে তনিম ভাই? এতো রাতে কল করলেন যে।”

পুনমের এতো উত্তেজিত হওয়া দেখে তনিম মুচকি হাসলো। ভালোবাসা তো এমনি হওয়া উচিত। যেখানে অপরপক্ষকে হারানোর ভয়টা সারাক্ষণ থাকবে। তনিম হাঁসি মুখেই বললো,
-“সব ঠিক আছে রে বইন। আসলে হয়েছে কি ,হুট করেই আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আগামীকালই বিয়ে। তোমাকে আসতেই হবে। ”
তনিমের বিয়ের কথা শুনে পুনম ভীষণ খুশি হলো। কিন্তু পরক্ষণেই মুখ ভার করে বললো,
-“কনগ্রাচুলেশন তবে আমি তো আসতে পারবো না তনিম ভাই।”
-“কেনো? আরে আমাদের চট্টগ্রামেই বিয়ে করতেছি আমি। মামাকে বাড়ি আসার কথা বলে চলে আসো।”
পুনম পায়ের নখ মেঝেতে ঘসতে ঘসতে বললো,
-“ব্যাপারটা তেমন না তনিম ভাই। আগামীকাল আমার মেজো বোনের বিয়ে। সেখানে যেতে হবে।”
-“ওহ আচ্ছা।”
পুনম আহ্লাদিত হয়ে বললো,
-“বিয়েতে যেতে পারছি না তো কি হয়েছে? তোমার বউ দেখতে অবশ্যই যাবো। সেদিন ট্রিট দিবা কিন্তু।”
তনিম হেঁসে বললো,
-“অবশ্যই দিবো। আমার একমাত্র পাতানো বোন বলে কথা।”
পুনম হেঁসে বললো,
-“উইশ ইউ হ্যাপি ম্যারিড লাইফ,তনিম ভাই ।”
-“হা হা।‌ ধন্যবাদ মাই ডিয়ার সিস্টার।”

তনিম কল কেটে আবার বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। রুশান তনিমের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“কি হলো? দাওয়াত দিয়েছো? সে কি বললো?”
তনিম শুকনো মুখে বললো,
-“আসতে পারবে না। তার বোনের বিয়ে আগামীকাল।”
রুশান ভ্রু কুঁচকে তাকালো তনিমের দিকে। তার কেন জানি মনে হচ্ছে পুনমের সাথে এই বাড়ির কোনো একটা সম্পর্ক আছে। তবে এ ব্যাপারে কালকের আগে নিশ্চিত হতে পারবে না সে।

ভোর হতে হতে সবাই উঠে পড়েছে বাড়ি সাজানোর জন্য। রুশান ডেকোরেশনের লোকজন খবর দিয়েছে। তারা নয়টার মধ্যে চলে আসবে। রুমেল আর মেঘা তাহমিদকে অনেক ভোরে রওনা দিয়েছে আসার জন্য। ওরা পৌঁছুতে প্রায় বারোটা বেজে যাবে। মেহেদী আর সিন্থিয়াও তাদের ছেলেদের নয়টা-দশটার মধ্যে চলে আসবে বলেছে।

তনিমের মা এলেই তনিমকে শানদের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে। শানদের বাড়ি থেকেই বরযাত্রীর মতো করে আসবে সবাই এ বাড়িতে। শান সকালে উঠেই ওর বাড়িতে চলে গেছে। শান্তর এসএসসি পরীক্ষা চলছে তাই ও বাড়িতে খুব বেশি চেঁচামেচি করা যাবে না। ওখানে সাদামাটা আয়োজন করবে। এজন্যই পিহুদের বাড়িটা বেশি সুন্দর করে সাজানো হবে।

রুশান একমনে স্টেজের জায়গাটা দেখছে। আরিয়ানকে যে গাছের সাথে বেঁধেছিলো তার পাশেই স্টেজ বানানো হবে। তনিম ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে দাঁড়িয়ে রুশানের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। রুশান একপলক তনিমের দিকে তাকিয়ে তাকে হাসতে দেখে বললো,
-“কি ব্যাপার তনিম? এভাবে হাসছো কেন?”
তনিম মুখ চেপে মাথা ঝাঁকিয়ে বললো,
-“এমনিই স্যার।‌ কিছু হয়নি। ”
বলেই উল্টোদিকে ঘুরে তাকালো। একটু পরে রুশান একটা সারপ্রাইজ পাবে এবং সেটা দেখার পর তার রিঅ্যাকশন কেমন হবে ভেবেই তনিমের হাঁসি পাচ্ছে। তনিম প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পিহুদের গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।

পিহুর মামারা গতকাল রাতেই রওনা দিয়েছে। এতোক্ষণে তো তাদের পৌঁছে যাবার কথা। পিহুর মামাতো ভাইদের কাছে সবকিছু বুঝে দিয়ে রুশান রুমঝুম ,তনিম আর সাঁঝকে নিয়ে ও বাড়িতে চলে যাবে।
প্রায় মিনিট দশেক পর একটা গাড়ি পিহুদের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো। গাড়ি থেকে একে একে একজন মধ্যবয়স্ক পুরুষ, একজন মধ্যবয়স্কা নারী, দু’জন টগবগে যুবক এবং একজন সুন্দরী রমণী বের হলেন। সুন্দরী বোধহয় দুই যুবকের যে কোনো একজনের স্ত্রী। তনিম তাদের দেখেই দ্রুত পায়ে হেঁটে রুশানের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। তারা সবাই বাড়ির ভেতরে যাওয়ার সময় রুশান আর তনিমের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো।

সবার পেছনে লাফাতে লাফাতে একটা মেয়ে ঢুকলো। মেয়েটিকে দেখে রুশান আর তনিম দু’জনই হা হয়ে গেলো। তনিম বড় বড় চোখ মেলে তাকিয়ে বললো,
-“পুনম তুমি এখানে?”
পুনম চোখ ডলতে ডলতে তনিমের দিকে এগিয়ে গেলো। তনিমের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
-“তনিম ভাই, রুশাষন? তোমরা এখানে কেন? এটা তো আমাদের বাড়ি।”
রুশান এগিয়ে এসে বললো,
-“পিহু তোমার বোন?”
পুনম উপর নীচ মাথা ঝাঁকালো।‌‌ রুশান হেঁসে দিয়ে বললো,
-“তাহলে আমি ঠিক ধরেছিলাম। তোমার সাথে তোমার মায়ের অনেক মিল।”
পুনম ভেবে পাচ্ছে না সে কি করবে। রুশানকে তাদের বাড়িতে দেখে তার হার্টবিট বেড়ে গেছে। এখন এই ছেলের সামনে সে ঢ্যাং ঢ্যাং করে মজা করবে কিভাবে? আবার তনিম তার দুলাভাই হচ্ছে ভেবে লুঙ্গি ড্যান্স দিতে ইচ্ছে করছে তার। খুব কষ্টে নিজেকে আটকে রেখেছে সে।

পুনম রুশান আর তনিমের দিকে আরেকবার তাকিয়ে বাড়ির মধ্যে চলে গেলো। তনিম শব্দ করে হেঁসে বললো,
-“বেচারি মাইনকার চিপায় ফাসছে স্যার। আমারে দেখে নাচতে মন চাইলেও আপনারে দেখে নড়তে পারতেছে না।”
রুশান হেঁসে ফেললো তনিমের কথা শুনে। তনিম আসলেই মিথ্যে বলেনি।

সকাল প্রায় সাড়ে সাতটা বেজে গেছে। তনিমের মা কাছাকাছি চলে এসেছে। রুমঝুম আর সাঁঝ রেডি হয়ে বসে বসে পুনমের সাথে গল্প করছে। এবাড়িতে হঠাৎ করে পুনমের আগমন চমকে দিয়েছে তাদের প্রত্যেককেই। পিহু আর পুনম দুই বোন সেটা রুমঝুম এখনো মানতে পারছে না। সাঁঝ বারবার দৌড়ে প্রিয়ার কাছে যাচ্ছে। প্রিয়াও সাঁঝকে পেয়ে বেশ সুস্থ হয়ে উঠেছে যেন। রুশান সাঁঝের পিছু পিছু গেলো প্রিয়ার ঘরের দিকে। পুনমের মামাতো ভাইদেরকে সব বুঝিয়ে দেওয়া হয়ে গেছে তার । এখন তনিমের মা এসে পিহুর মা-বাবা আর মামার সাথে একটু কথা বলার পরই তারা শানদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হবে।

রুশান প্রিয়ার ঘরের কাছে যেতেই দেখলো পুনমের মামার ছোট ছেলে প্রিয়ার ঘরের সামনে দাঁড়ানো। ভেতর থেকে প্রিয়া আর সাঁঝের কন্ঠ ভেসে আসছে। ছেলেটা একদৃষ্টিতে ভেতরে তাকিয়ে আছে। রুশান একটু আড়ালে চলে গেলো। সে সবকিছুতেই যেন রহস্যের গন্ধ পায়। প্রায় পাঁচ মিনিট পর রুমঝুম সাঁঝ আর রুশানকে ডাকলো। সাঁঝ একদৌড়ে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। ছেলৈটা একটু সাইডে সরে গেলো সাঁঝ বের হওয়ার সময়। তারপর আবারও দরজার সামনে আগের মতো দাঁড়ালো।

ভারী পুরুষালি কন্ঠে ছেলেটিকে কেউ ‘জিহাদ’ বলে ডেকে উঠতেই ছেলেটা পেছন ফিরলো। গলা উঁচিয়ে বললো,
-“আসছি বাবা।’
রুশান স্পষ্ট দেখলো ছেলেটার চোখে পানি। চোখেমুখে অনুতাপের ছাপ স্পষ্ট। রুশানের মাথায় ভাবনারা এসে জড়ো হলো। তবে আরো কিছু ভাবার আগেই রুমঝুম তাকে দ্বিতীয় বারের মতো ডাকলো।

রুশান বাইরে এসে রাফিনকে দেখে চমকে উঠলো। আজকে একের পর এক চমক পাচ্ছে সে। পিহুদের বাড়ির সবাই এখানে উপস্থিত। তনিমের মা আর রাফিন সবার সাথে কথা বলছে। তনিম এগিয়ে এসে রুশানের পেছনে দাঁড়ালো। রুশানের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,
-“কি স্যার,চমকালেন?”
রুশান আড়চোখে চেয়ে বললো,
-“স্যার এখানে কেন?”
তধিম হেঁসে বললো,
-“হী ইজ মাই ওয়ানলি ওয়ান ব্রাদার। রাফিন শেখ।”
রুশান বিষ্ময়ে নির্বাক হয়ে আছে। তনিম রাফিন স্যারের ভাই? এটা কিভাবে বিশ্বাস করবে সে? স্যারের ভাই হয়ে তার এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কেন কাজ করছে? রুশান হ্যাং হয়ে গেছে এসব ভাবতে গিয়ে।

রাফিন সবার মধ্যে থেকে উঠে এলো রুশানের কাছে। রুশান ভাবনার জগতে থাকায় সেটা খেয়াল করেনি। রুশানের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
-“হেই রুশান। কেমন আছো তুমি?”
রুশান কয়েকবার চোখের পাতা ফেলে নড়েচড়ে বললো,
-“ভ..ভালো স্যার। হ্যালো স্যার। আপনি কেমন আছেন?”
রাফিন আর তনিম শব্দ করে হাসলো রুশানের অবস্থা দেখে। রাফিন রুশানের কাঁধে হাত রেখে বললো,
-“আমি জানি তুমি এখন কি ভাবছো। তনিম আমার ভাই হয়ে তোমার এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করছে কেন তাইতো?”
রুশান রাফিনের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লো মানে সে এটাই ভাবছে। রাফিন হেঁসে বললো,
-“আচ্ছা জানাবো তোমাকে। এটাও একটা কাহিনী। এখন শানের বাড়িতে চলো।আমার ছোট ভাইয়ের বিয়ে বলে কথা। এখনো অনেক কাজ।”

রুশান রাফিনকে পিছু ডেকে বললো,
-“আচ্ছা স্যার একটা প্রশ্নের উত্তর তো দিয়ে যান।”
রাফিন পেছনে ফিরে বললো,
-“হ্যাঁ প্রশ্ন করো।”
রুশান এগিয়ে এসে বললো,
-“দুলাভাই কি জানে তনিম আপনার ভাই?”
রাফিন হেঁসে বললো,
-“ছোট থেকেই জানে। এখন এসো। ওদিকে যেতে হবে।”

শান আগে থেকেই জানে? রুশানকে কেন জানালো না? অদ্ভুত তো। কি কাহিনী আছে এখানে আবার?
পুনমের উপস্থিতি রুশানকে এসব আর ভাবতে দিলো না। পুনম ঠোঁটে মৃদু হাসি ঝুলিয়ে রুশানের দিকে তাকিয়ে আছে। রুশান পুনমের দিকে তাকাতেই তার চোখ পড়লো পুনমের পেছনে। পুনমের মামাতো ভাই জিহাদ আগের মতোই প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।

রুশান পুনমের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
-“তোমার মামার ছোট ছেলের বিয়ে হয়নি এখনো?”
পুনম কিঞ্চিত অবাক হলেও স্বাভাবিক ভাবে বললো,
-“না হয়নি। তবে খুব তাড়াতাড়ি হবে। ওর গার্লফ্রেন্ড আছে। পাঁচ বছরের সম্পর্ক ওদের। সামনের বছরই বিয়ে করে নিবে।”

রুশানের ভাবনা এবার আরো গভীর হলো। যেহেতু জিহাদের গার্লফ্রেন্ড আছে সেহেতু প্রিয়ার সাথে প্রেমের কোনো সম্পর্ক তার ছিলো না। তাহলে প্রিয়ার প্রতি সে এতো অনুতপ্ত কেন? কোথাও প্রিয়ার এমন অবস্থার জন্য সে দায়ী না তো? প্রিয়ার বাচ্চা হারানো,তার মানসিক ভারসাম্য হারানো, সংসার জীবন থেকে বিতাড়িত হওয়ার সাথে জিহাদের অনুতপ্ত হওয়ার কোনো কানেকশন নেই তো?

চলবে…….

(রি-চেক দেইনি। মাত্রই লেখা শেষ করলাম। ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আশুরার রোজা ছিলাম তাই বিকেলের দিকে লেখার মতো অবস্থায় ছিলাম না। দেরি হওয়ায় জন্য দুঃখিত।
আগামীকাল তনিম-পিহুর বিয়ে। সবার দাওয়াত রইলো।‌ দাওয়াত না দিলে তো আবার আমার বাড়িঘর ভাঙচুর করতে চলে আসো দল বেঁধে 😒)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here