চন্দ্ররঙা_প্রেম_২ পর্ব ১০

#চন্দ্ররঙা_প্রেম_২
#পর্বঃ১০
#আর্শিয়া_সেহের

শানদের গেস্ট রুমটাতে তনিমের আর পিহুর বাসর ঘর সাজাচ্ছে জেরিন আর সিন্থিয়া। সাহায্যকারী হিসেবে রয়েছে সাঁঝ, মাহিম,সিনিম আর জেরিনের মেয়ে পায়েল। প্রান্ত বিয়ে বাড়িতে এসে আপাতত শান্তকে পড়ানোর দায়িত্ব পালন করছে। আগামীকাল শান্তর ম্যাথ পরীক্ষা। পাঁচ-সাত বছর আগের ম্যাথ প্রেমি শান্ত এখন ম্যাথে দূর্বল। ম্যাথ নাকি তার মাথার উপর দিয়ে যায়। শান আজ ব্যাস্ত থাকায় প্রান্ত তাকে ম্যাথ করাচ্ছে।

বেলা প্রায় এগারোটা বেজে গেছে। শানদের গার্ডেনে ছোট করে তনিমের গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে। সবাই সেখানে উপস্থিত থাকলেও রুশান নেই। রুশান এখনো এটা মানতে পারছে না যে তনিম রাফিনের ভাই। একই মায়ের পেটের আপন ভাই। ওদিকে তনিম বলেছে রুশান না গেলে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান শুরু করতে দিবে না। অগত্যা রাফিন শানদের গেস্ট রুমের দিকে হাঁটা ধরলো রুশানকে ডাকর উদ্দেশ্যে।

রাফিন মিনিট দুয়েক দাঁড়িয়ে তারপর রুশানকে ডাকলো। স্যারের ডাককে অগ্রাহ্য করতে পারলো না রুশান। ডাকা মাত্রই উঠে এলো। দরজা খুলে মুখ ফুলিয়ে মাথা নিচু করে বললো,
-“সবটা না জেনে আমি এই রুম থেকে বের হবো না। কোথাও যাবোও না।”
রাফিন হেঁসে ফেললো রুশানের বাচ্চামি রাগ দেখে। রুশানের কাঁধে হাত রেখে বললো,
-“আচ্ছা বলো কি জানতে চাও?”
রুশান আড়চোখে রাফিনের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“তনিম আপনার ভাই হয়েও কেন আমার এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করছে এবং আপনি ওর ভাই সেটা কেন জানায়নি আমাকে?”

রাফিন রুশানের কাঁধে হাত রেখেই রুমের ভেতরে গেলো। রুশানকে বিছানায় বসিয়ে নিজেও পাশে বসলো। তারপর বললো,
-“তুমি তোমার বোনের জন্য কত বছর বয়সে লড়েছিলে তোমার মনে আছে রুশান?”
রুশান ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“আছে তো। তখন আমি সতেরোর শেষের দিকে ছিলাম। আঠারো ছুঁই ছুঁই।”

রাফিন দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে বললো,
-“তখন তনিম ষোল পেরিয়ে সতেরোতে পরেছে। বলতে গেলে প্রায় সমবয়সী তোমরা। আরমানের কেস ক্লোজ করে আমি গ্রামে মায়ের কাছে গিয়েছিলাম। আমি বাড়িতে গেলে তনিম সবসময় আমার কাছেই থাকতো। সেবারও আমার কাছে ছিলো। ওর মধ্যেও তোমার মতোই কিউরিসিটি ছিলো সবকিছু জানার কিন্তু ও তোমার মতো সাহসী ছিলো না।
সেবার বাড়িতে গিয়ে আমি খাওয়ার সময় মায়ের কাছে তোমার গল্প বলছিলাম। একটা কিশোর ছেলে কিভাবে তার বোনের ঢাল হয়েছিলো সেই গল্প। কিন্তু তখনও বুঝিনি আমার পাশে বসা ছোট ভাইটার মনের মধ্যে সেই কিশোর ছেলেটি খুব গভীরভাবে গেঁথে গেছে। ছেলেটির সাহস, সহ্য ক্ষমতা, বুদ্ধিমত্তা সবকিছু সেদিন তনিমকে মুগ্ধ করলো। তখন থেকেই আমাকে বলতো ও তোমার মতো হতে চায়, তোমার সাথে থাকতে চায়।
আমার কেন জানি মনে হয়েছিলো তুমি পুলিশ অথবা গোয়েন্দা হতে ইচ্ছুক বা এই সেক্টরে আসতে চাও। তাই আমি তনিমকেও সেভাবেই সামনে এগোতে বললাম। তুমি পুলিশে যে বছর জয়েন করলে তার পরের বছরই তনিম জয়েন করেছিলো।
তনিম আমার ভাই এটা জানার পর তুমি ওকে পার্সোনালি ট্রিট করতে পারবে না বা আমার দিকটা ভেবে ওকে সবকিছুতে ছাড় দিবা এরকম শঙ্কা ছিলো ওর মনে। তাই তনিম নিজেই আমাকে বারণ করেছিলো তোমাকে ওর ব্যাপারে জানাতে। হঠাৎ একদিন তোমার সামনে সবটা আনবে এবং তোমাকে চমকে দেবে এমনটাই ভেবে রেখেছিলো পাগলটা।”

কথা শেষ করে উঠে দাঁড়ালো রাফিন। রুশান মেঝের দিকে তাকিয়ে আছে। রাফিন বেরিয়ে যেতে যেতে বললো,
-“তনিম তোমাকে খুব ভালোবাসে আর সম্মানও করে। কখনো প্রয়োজন হলে ও তোমার জন্য জীবন দিতেও পিছুপা হবে না। তোমার নামটা ওর জীবনে অনুপ্রেরণা স্বরুপ এসেছিলো। তোমার থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে আজকের সাহসী তনিম হয়েছে ও। আমার ভাইটাকে দেখে রেখো।”

রাফিন চলে গেলো। রুশান এখনো সেভাবে বসে আছে । রুশান জানে তনিম ওকে ভালোবাসে, সম্মান করে কিন্তু সেটা এতো দিন ধরে এবং এতোটা গভীর সেটা রুশান জানতো না। রুশানের চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। কারোর এত ভালোবাসা পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার আর সেই ভাগ্য তার হয়েছে।
রুশান চোখ মুছে উঠে দাঁড়ালো। তনিমকে হলুদ ছোঁয়াতে হবে। দেরি করা যাবে না। গায়ের টিশার্ট টা খুলে একটা পাঞ্জাবি পড়ে বেরিয়ে গেলো রুশান।

রুশানকে আসতে দেখে তনিম মুচকি হাসলো। রুশান তনিমের সেই হাসিটা দূর থেকেও দেখলো। আহা! ছেলেটার হাঁসি যেন আজ অদ্ভুত রকমের সুন্দর লাগছে। রুশান তনিমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,
-“আমি না এলে গায়ে হলুদ ছোঁয়াবে না বলেছো?”
তনিম উপর নীচ মাথা ঝাঁকালো। মানে সে বলেছে।
-“আমি না গেলে বিয়ে করবে না?”
তনিম না বোধক মাথা নাড়লো। রুশান একটু এগিয়ে বললো,
-“আমি না গেলে বাসরও করবে না?”

তনিম ঝোঁকের বশে মাথা নাড়িয়ে ফেললো। কিন্তু রুশানের কথার অর্থ যেই মাত্র বুঝতে পারলো সাথে সাথেই লজ্জাতে মাথা একদম ঝুঁকিয়ে নিলো। শান, রাফিন আর মেহেদী একটু পাশে থাকায় তারাও শুনতে পেলো। শান জোরে জোরে হেঁসে বললো,
-“আমার শালাটা বেশ পেকেছে বুঝলি রাফিন?”
রুশান ঘাড় ঘুরিয়ে বললো,
-“আপনার মতো দুলাভাই যার আছে সে আর কতদিন কাঁচা থাকবে?”
রাফিন আর মেহেদী হাহা করে হেঁসে উঠলো। রুমঝুম হলুদ নিয়ে আসার সময় রুশানের শেষ কথাটা শুনতে পেলো। সেও শব্দ করে হেঁসে ফেললো।‌ হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাওয়ার মতো অবস্থা। ওদেরকে এভাবে হাসতে দেখে বাড়ির সবাই আস্তে আস্তে গার্ডেনে জড়ো হলো। শান সবার সামনে মানইজ্জত হারাতে চায় না বলে খুব চেষ্টা করছে ওদের হাঁসি থামানোর।

রাফিন আর মেহেদী থেমে গেলেও রুমঝুমের হাঁসি থামছে না। শান বেচারার অবস্থা বুঝতে পেরে রাফিন বললো,
-“আচ্ছা সবাই মনে হয় চলে এসেছে। এবার হলুদ ছোঁয়ানো শুরু করো। ”
রুশান প্রথম হলুদ ছোঁয়ালো। তনিমের দুই গালে হলুদ ছুঁইয়ে বললো,
-“সবসময় হাসিখুশি থেকো। আর বিয়ের পরেও একটু মনে রেখো।”
তনিয় হাসলো। মনে মনে বললো, ‘ আমি না চাইলেও আপনি সবসময় আমার মনের মধ্যে থাকবেন‌‌ স্যার। আর বিয়ের পরের কথা বলছেন? যাকে বিয়ে করে আনতে যাচ্ছি সে নিজেই প্রতিনিয়ত আপনার কথা মনে করাবে আমাকে। আপনাকে ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই জিরোর কোঠায়।’

বেলা সাড়ে বারোটার মধ্যে গায়ে হলুদের পর্ব শেষ হলো। পিহুকেও এলাকার মহিলারা মিলে গায়ে হলুদ দিয়েছে ছোটখাটো অনুষ্ঠানের মতো করে। এই‌ বিয়েতে সব থেকে খুশি পুনম। সে তো কাঁদাপানির মধ্যেই নাচানাচি করছে।
পিহু এখনো একটা ঘোরের মধ্যে আছে। এই বিয়েটা এখনো তার কাছে অস্বাভাবিক। সে কাঠের পুতুলের মতো চুপচাপ যে যা করতে বলছে তাই করছে। তার কোনো অনুভূতি কাজ করছে না এখন। অনুভুতি শূন্য এক মানবীতে পরিনত হয়েছে পিহু।

বেলা দুইটার মধ্যে ছেলেরা যোহরের নামাজ আদায় করে বাড়িতে ফিরলো। মেয়েরা সবাই সেজেগুজে রেডি হয়ে বসে আছে।ছেলেরা সবাই বাড়িতে এলে তারা বরযাত্রী যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলো। তনিমের মা আর শাফিয়া বেগম বাদে সবাই বরযাত্রী হয়ে বেরিয়ে পড়লো।

আধঘন্টার মধ্যে পিউদের বাড়িতে উপস্থিত হলো সবাই। গেট ধরলো পুনম আর এলাকার কয়েকটা মেয়ে। পনেরো হাজার টাকা না দিলে গেট ছাড়বে না তারা। পুনম তো রিতীমতো ঝগড়া শুরু করে দিয়েছে। তনিম ভালো করেই পুনমের ঝগড়ুটে রুপের কথা জানে । তাই রাফিনকে বললো চুপচাপ পনেরো হাজার টাকা দিয়ে দিতে।
রুশান তনিমের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো। পুনমের সাথে চোখাচোখি হতেই চোখ টিপে দিলো। ব্যাস! পুনমের ঝগড়া উবে গেলো। সে লজ্জাতে আর মাথা তুলতে পারলো না।

রুশান মেয়েদের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“দশ হাজার নিবেন ? নিলে নেন না নিলে সরে দাঁড়ান।”
মেয়েগুলো সবাই পুনমকে ধাক্কানো শুরু করলো। পুনমকে ধাক্কিয়ে বললো,
-“এই কিছু বলিস না কেন? ওরা কম দিয়ে পার পেয়ে যেতে চায়। কিছু বল। ”
পুনম মাথা নিচু করেই বললো,
-“যা দিচ্ছে তাই নে। নিয়ে গেট ছাড়।”
মনে মনে বললো,’এই ছেলে সামনে থেকে সরলে বাঁচি।’

অগত্যা দশ হাজার টাকাতেই গেট ছাড়তে হলো মেয়েদের। বরযাত্রীরা ভেতরে ঢুকে গেলো। পুনম হালকা মাথা ঘুরিয়ে রুশানের দিকে তাকালো। রুশানও একই সময়ে পেছনে তাকালো। পুনমের সাথে চোখাচোখি হয়ে গেলো আবারও। রুশান দাঁত বের করে হেঁসে দিলো। পুনম ভেঙচি দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।

পাঁচটার মধ্যে বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেলো। এবার বিদায়ের পালা। বাইরে স্টেজ করা হয়েছে বিধায় সবাই বাইরে ছিলো। এতো মানুষের মধ্যে প্রিয়া অস্বস্তি বোধ করে। তাই সে বাড়ির মধ্যে রয়েছে। পিহু কাঁদতে কাঁদতে প্রিয়ার খোঁজ করলে পুনম বাড়ির ভেতরে গেলো প্রিয়াকে আনার জন্য।
রুশান আশেপাশে উঁকি ঝুঁকি দিয়ে কোথাও জিহাদকে দেখতে পেলো না। সে ও সকলের চোখের আড়াল দিয়ে লুকিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়লো। রুশান ভেতরে গিয়ে দেখলো পুনম প্রিয়ার দরজার বাইরে দেয়ালের সাথে লেপ্টে আছে। মাথাটা প্রিয়ার ঘরের দরজার দিকে বাঁকিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । মনে হচ্ছে কিছু শোনার চেষ্টা করছে।

রুশান এগিয়ে এলো। যতো এগোচ্ছে ততই একটা চাপা কান্না স্পষ্ট হচ্ছে। রুশান গিয়ে পুনমের পেছনে দাঁড়ালো। পুনম পেছনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে লাফিয়ে উঠে সরে গেলো। রুশান পুনমকে চুপ করতে বলে দরজার কাছে এগিয়ে গেলো। পুনমও রুশানের পিছনে দাঁড়িয়ে পড়লো। এবার ভেতরের মানুষটার কথা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

ভেতরে কেউ আর্তনাদ করে বলছে
-“আমি বুঝতে পারি নি রে আপু। আমি সত্যিই ভাবিনি তোর জীবনটা এভাবে নষ্ট হয়ে যাবে। আমি জানলে কখনো তোর ছেলেটার দিকে হাত বাড়াতাম না। আমি তো ভেবেছিলাম তুই শোক সামলে উঠতে পারবি। আরেকটা বাচ্চা হলে সব ভুলে যাবি কিন্তু তুই এমন পাগল‌ হয়ে যাবি আমি ভাবতেই পারি নি আপু। আমাকে মাফ করে দে না রে আপু। তোকে চোখের সামনে এভাবে দেখলে আমি বাঁচার ইচ্ছেটা হারিয়ে ফেলি। তুই ঠিক হয়ে যা আপু। ঠিক হয়ে যা।”

পুনম কাঁপা কন্ঠে রুশানের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,
-“এটা জিহাদ ভাইয়ার কন্ঠ।”
রুশান দরজা ধাক্কা দিলো। দরজাটা চাপানো ছিলো শুধু।‌ রুশান আর পুনম ভেতরে ঢুকে দেখলো জিহাদ প্রিয়ার পায়ের কাছে উপুড় হয়ে বসে আছে।
হঠাৎ দরজা খোলায় জিহাদ ধড়পড়িয়ে উঠে বসলো।‌ রুশানকে আর পুনমকে দেখে মাথা ঘুরিয়ে চোখের পানি মুছে নিলো। রুশান পুনমের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“প্রিয়া আপুকে ঘুম থেকে তুলে নিয়ে যাও।”
পুনম কান্নাভেজা চোখে জিহাদের দিকে তাকিয়ে প্রিয়ার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। জিহাদ পুনমের চাহনিতেই বুঝে গেছে ওরা সব শুনে ফেলেছে।

রুশান প্রিয়ার ওঠার আগেই জিহাদের হাত ধরে বাইরে বেরিয়ে এলো। জিহাদকে আলাদা একটা ফাঁকা জায়গায় নিয়ে দাঁড় করিয়ে বললো,
-“নিজের বোনের ছেলে ছাড়া আর কত বাচ্চাকে কিডন্যাপ করেছো?”
জিহাদ চোখ বন্ধ করছ ফেললো। চোখের কার্নিশ বেয়ে একফোঁটা জল নেমে গেলো। ক্ষীণ কন্ঠে বললো,
-“শুধু প্রিয়া আপুর ছেলেকেই কিডন্যাপ করেছিলাম। তাও নিজের জীবন বাঁচাতে। একটা বাচ্চা না দিলে ওরা আমাকে মেরে ফেলতো।”

রুশান হাত ঘড়ির দিকে তাকালো। তাদের চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। আবার একটা ইম্পর্ট্যান্ট ক্লু ও বোধহয় সে পেয়েছে। রুশান জিহাদের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
-“তুমি কি আমাকে পুরো ঘটনাটা খুলে বলবে? আমার খুব উপকার হতো তাহলে।”
জিহাদ জ্বলজ্বল চোখে তাকিয়ে বললো,
-“তুমি পুলিশের লোক?”
রুশান হেঁসে বললো,
-“কেন পুলিশ ছাড়া কাউকে বলবে না?”
জিহাদ সাথে সাথেই উত্তর দিলো,
-“না।‌ সবাইকে বলবো শুধু পুলিশদের বলবো না। ওই দলে পুলিশরাও যুক্ত আছে।”
রুশান সতর্ক হয়ে গেলো।‌ তার মানে সে সত্যিই অনেক দরকারি কিছু তথ্য পেতে যাচ্ছে। সে এগিয়ে এসে জিহাদকে বললো,
-“আমাকে বিশ্বাস করতে পারো। কারো ভালো না করতে পারলেও খারাপ করবো না। এখন বলো তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে?”

জিহাদ রুশানকে এক মূহুর্তেই বিশ্বাস করে নিলো। রুশানকে আশ্বস্ত করে বললো,
-“অবশ্যই বলবো।”
রুশান‌ তড়িঘড়ি করে হাঁটা ধরলো। রুমঝুম কল‌ করেছে। নিশ্চয়ই খোঁজাখুঁজি করছে তাকে। বেরিয়ে যেতে যেতে জিহাদকে বললো ,
-“আগামীকাল সকাল দশটায় কফিশপে দেখা করো। এখন আমাকে যেতে হবে। আসি।”
রুশান চলে গেলো। জিহাদের আজ বেশ হালকা লাগছে। এতোদিন নিজের মধ্যে লুকানো কথাগুলো শেয়ার করার একটা মানুষ পাওয়া গেলো।

রুশান আসতে আসতে সব বরযাত্রী গাড়িতে বসে গেছে। রুমঝুম রুশানকে দেখে রাগী চোখে চেয়ে বললো,
-“কোথায় ছিলি রে তুই? এদিকের হুঁশ জ্ঞান হারাইছিস নাকি? পেছনের গাড়িতে ওঠ।”
রুশান আশেপাশে তাকিয়ে পুনমকে একবার খোঁজার চেষ্টা করলো। কিন্তু এতো মানুষের ভীড়ে পুনমের মুখটা দেখা গেলো না। হয়তো জিহাদের কথা গুলো ভাবছে কোথাও একা বসে। আচ্ছা পুনম আবার এটা নিয়ে গড়বড় করে ফেলবে না তো? রুশান দ্রুত পায়ে গাড়িতে বসেই ফোন বের করলো। পুনমকে জিহাদের ব্যাপারে যা শুনেছে সবটা লুকিয়ে রাখতে বলে এসএমএস করলো দুইটা।

পিহুকে গাড়িতে তুলে দিয়ে পুনম প্রিয়ার সাথে ঘরে চলে এসেছিলো। প্রিয়াকে রুমে রেখে আবার বেরিয়ে গেলো। পিহুর সাথে যেতে হবে তাকে। বাবা-মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে পিহুর একপাশে উঠে বসলো। তনিম পিহুর অন্য পাশে বসা।
পুনমকে পিহুর পাশে দেখে হঠাৎ করেই তনিমের মাথায় এলো এরা আপন বোন আর দু’জনেই রুশানকে ভালোবাসে। এই ব্যাপারটা তনিমের মাথাতে একদমই ছিলো না এতক্ষণ। পিহু যখন জানবে তার একতরফা ভালোবাসার মানুষটা তার বোনের প্রেমিক তখন কেমন রিয়েক্ট করবে এটা ভেবেই তনিমের বুক কেঁপে উঠলো। পিহু কিভাবে তার বোনের সাথে তার না পাওয়া ভালোবাসাকে সহ্য করবে? তনিম ভাবতে ভাবতে পিহুর দিকে তাকালো। মেয়েটা পুনমের ঘাড়ে মাথা এলিয়ে চোখ বুজে শুয়ে আছে। নিজের সাথে যুদ্ধ করে ক্লান্ত সে। তনিম একটা শ্বাস ফেলে বাইরে তাকালো।

পুনম জানালার সাথে মাথা লাগিয়ে বসে আছে। জিহাদের কথাগুলো মাথা থেকে যাচ্ছেই না। সে ভাই হয়ে বোনের এতোবড় সর্বনাশ কিভাবে করলো? তার বোনের জীবনটা নরক করে দিলো এক নিমিষেই।
পুনমের ভাবনার মাঝেই তার ফোনে এসএমএস এলো। ফোনটা কোলের উপর রাখা ব্যাগ থেকে বের করে এসএমএস অন করলো। রুশানের পাঠানো এসএমএস দু’টো দেখে কিঞ্চিত অবাক হলো পুনম।‌ সে বুঝতে পারলো না রুশান লুকিয়ে কেন রাখতে বলছে ব্যাপারটা?

বরযাত্রী বেরিয়ে গেলেই পুনমের মামা পুনমের মায়ের কাছে এলেন। হাঁসি মুখে বললেন,
-“মেজো মেয়ের‌ বিয়ে তো হলো। এবার ছোটটার পালা। ওর জন্য আমার ছেলে দেখা আছে । দেখবি তুই? দাঁড়া। একদম সুপুত্র সেই ছেলে।”
বলতে বলতে পুনমের মামা একটা ছবি বের করে দেখালেন। রাফিয়া বেগম ছেলেটিকে দেখে বললেন,
-“সব তো ঠিক আছে ভাইয়া কিন্তু মেয়েটার মতামত নেওয়া উচিৎ না একবার?”
পুনমের মামা রেগে বললেন,
-“এটা কিন্তু কথা ছিলো না। তুই আমাকে কথা দিয়েছিলি আমার পছন্দ মতো ছেলের সাথেই তোর ছোট মেয়ের বিয়ে দিবি।”
রাফিয়া বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এক অভাবে পড়ে তার মেয়েগুলোর জীবনের মোড় টাই পাল্টে গেলো। না পারলো বড়টাকে ডাক্তার দেখাতে,না পারলো‌ মেজো মেয়েটাকে সুন্দর একটা জীবন দিতে আর না পারছে ছোট মেয়েটাকে আগলে রাগতে। মা হিসেবে আজ সে পুরোপুরি ব্যর্থ।

শানদের বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা নেমে গেলো।‌ আশেপাশের কয়েকজন মানুষ বাড়িতে এসেছে বউ দেখতে। পিহুর গায়ে মোটেও শক্তি নেই। পুনমের উপর পুরোপুরি ভর ছেড়ে দিয়েছে সে। পুনম এক হাতে বোনকে ধরে তনিমকে ডেকে বললো ,
-“ভাইয়া ,আপু বোধহয় হাঁটতে পারবে না। একদম নিস্তেজ হয়ে আছে।”
তনিম প্রায় সাথে সাথেই পিহুর দিকে এগিয়ে এলো। পিহুকে নিজের বুকে টেনে নিলো। পিহু চোখ বন্ধ করে অস্পষ্ট ভাবে বিরবির করছে। তনিম শানকে ডাকলো। শান ড্রাইভারের সাথে কথা বলছিলো। তনিমের ডাকে এগিয়ে এলো। পিহুকে এভাবে দেখে বললো,
-“তুমি ওকে পাঁজাকোলা করে তুলে ঘরে নিয়ে যাও। আমি ডাক্তার ডাকছি।”

পুনম গাড়ি থেকে বের হতেই রুশানের সামনে পড়লো।‌ রুশান পুনমকে দেখে বললো,
-“তুমি এই গাড়িতে ছিলে? অথচ আমি তোমাকে তোমাদের বাড়িতে খুঁজছিলাম‌।”
পুনম রুশানকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
-“এর আগে বলো তুমি জিহাদের কথা বলতে বারন করেছো কেন?”
রুশান আশেপাশে তাকিয়ে বললো,
-“কারন আছে। সময়মতো জানতে পারবে।এখন বলো তোমার আপুর কি হয়েছে? তনিম ওভাবে নিয়ে গেলো কেন?”
পুনম ভেতরের দিকে একবার তাকিয়ে বললো,
-“শরীর খারাপ করেছে আপুর। অল্প সেন্স আছে। চোখ মেলছে না। এজন্য ওভাবে নিয়ে গেছে।”
রুশান উদাস গলায় বললো,
-“এমন ধকল গেলে একটা মেয়ে ঠিক থাকভে কিভাবে? যার উপর দিয়ে যায় শুধু সেই বোঝে কেমন লাগে।”

পুনম আরো কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু রুমঝুমের ডাক আসায় বলতে পারলো না। সে বাড়ির মধ্যে চলে গেলো। রুশান পুনমের চলে যাওয়ার দিকে একবার তাকিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। তার এখনও অনেক কাজ বাকি। এই সুস্থ সমাজ থেকে অসুস্থ কীটদের দূর করতে হবে । তার আগে সেই কীটদের খুঁজে বের করতে হবে। এটাই আপাতত তার জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ।

চলবে…….

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্পে এখনো অনেক টুইস্ট বাকি আছে জনগন।আগেই বলেছি সিজন-১ এর সবাই আসবে। অপেক্ষা করেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here