চরিত্রহীনা ২ পর্ব ৬

‘চরিত্রহীনা২’ পর্ব-৬
.
লেখক : Mahian Khan
.

(৮)
.
ইরার সামনে তিন্নি সহসা কখনো কাঁদে না। কেননা ইরা তাকে পচা বলবে আর এটা তার সহ্যের বাইরে। একটা কৃত্রিম হাসির মাঝে লুকিয়ে রাখে সকল অনুভূতি। এই কৃত্রিম হাসিটা শুধু ইরার জন্য। ইরা হয়ত মায়ের মুখের হাসির মাঝেই নিজের আনন্দকে লুকিয়ে রাখে। হয়ত ইরার আনন্দের জন্যই তিন্নি এভাবে অভিনয় করে তবে এই অভিনয়ে সে মোটেও বিরক্ত না কেননা ইরার আনন্দের জন্য তিন্নি এই পৃথিবীর কঠিন থেকে কঠিন কাজ করতে প্রস্তুত।
.
মায়ের সাথে শুয়ে শুয়ে টিভিতে একটা সিনেমা দেখতে দেখতে ইরা স্বপ্নের দুনিয়ায় চলে গিয়েছে। দুচোখ সারাদিন দুষ্টুমি আর পড়ালেখার পর নিভে গিয়েছে। ধীরে করে ইরাকে কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয় তিন্নি। ইরার কপালে একটা গভীর চুমু দিয়ে ইরার গালে হালকা আদর করে জানালাটা খুলে এক দৃষ্টিতে রাতের নীরব রাস্তার দিকে তাকিয়ে থাকে। অদ্ভুত রকমের শীতল বাতাস তিন্নির দেহকে ছুয়ে যায়।
.
– আহ! যদি বৃষ্টি হত! তাহলে ভিজতাম। নিচতলার গেট তো আটকানো! তাতে কি? বারান্দায় গিয়ে বসে থাকতাম। বারান্দায় গ্রিলের সাথে বৃষ্টির পানি সংঘর্ষ হয়ে আমার দেহে ছিটে আসত। সেটাই আমার জন্য যথেষ্ট ছিল। কোনো অজানা জলের উৎস থেকে সামান্য ফোটা ফোটা বাষ্প হয়ে যাওয়া জল, একত্রিত হয়ে কত শক্তিশালী হয়ে যায়। মানুষ, রাস্তাঘাট সব কিছুকে ওরা দখল করে ফেলে। ওরা একত্রে থাকে বলেই এতটা শক্তিশালী, মানুষের উপর নিজের কতৃত্ব চালাতে পারে। ওরা মানুষের মত একে অপরকে ঘৃনা করে না। প্রতি ফোটা পানি যখন বাষ্প হয়ে যায় তখন সেটা নিজের সাথে নিয়ে যায় একগাদা ইতিহাস। কত মানুষের আচরণকে সে দেখেছে, কত মানুষের পাগলামি সে দেখেছে! এগুলো দেখতে দেখতে সে চলে যায় উপরে অনেক উপরে, আকাশের মাঝে। সাথে নিয়ে যায় হরেকরকম মানুষকে দেখার অভিজ্ঞতা। সেই অভিজ্ঞতা নিয়েই আবার পৃথিবীতে ফিরে আসে। যখন বৃষ্টির ফোটাগুলো আমাদের দেহ ছুয়ে যায়, ও তো মূলত ওর জীবনের অভিজ্ঞতা আমাদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে যায়। এজন্য বৃষ্টি আমার বড্ড প্রিয়! কারণ বৃষ্টির প্রতিটি ফোটা আমাকে দেয় নতুন অভিজ্ঞতা। যদিও আমি জানিনা সে আমাকে কি বলতে চায় তবুও তার স্পর্শে আমি নতুনভাবে নিজেকে খুঁজে পাই। কিন্তু এই বৃষ্টির ফোটার মাঝে তো আমারও ইতিহাস লুকিয়ে আছে, তাই না? প্রতিবছর বৃষ্টি হয় আর বৃষ্টির ফোটাগুলো এভাবেই আমায় প্রতিবছর দেখে। ওরা দেখেছিল একসময় আমি ছোট একটা মেয়ে ছিলাম, সেখান থেকে কিশোরী, সেখান থেকে তরুণী, ওরা দেখেছে আমাকে মা হতে। ওরা দেখেছে, আমি কিভাবে রেগে গিয়ে, কষ্ট পেয়ে,মাঝে মাঝে আনন্দে ওদের মাঝে দাড়িয়ে ভিজতাম! ওরা আমার ইরাকেও তো দেখে! আচ্ছা ওরা কি আমায় ভালো মা বলে? কে জানে! ওরা যখন আবার বাষ্প হয়ে আকাশে চলে যায় তখন আকাশের কাছে কি আমায় নিয়ে ওরা আলোচনা করে? হে আল্লাহ, এত সুন্দর বাতাস, তবে বৃষ্টি দাও না কেনো? বৃষ্টিগুলো হয়ত আমার মনের ব্যাথাগুলোকে ধুয়ে দিতে পারত।
.
একা একা কথাগুলো বলতে বলতে তিন্নির কালো চোখ দুটো থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। এটা ক্ষুদ্র বৃষ্টি তবুও এটাও একধরনের বৃষ্টি। এটা মিঠাপানির বৃষ্টি নয় লোনা পানির বৃষ্টি। যেই বৃষ্টি মানুষের অনুভূতিগুলোকে তরলে পরিনত করে মানুষের দুচোখ থেকে বেরিয়ে আসে। চোখের পানিগুলোকে হাত দিয়ে হালকা পরিষ্কার করে, মোবাইলটা হাতে নেয়। আজকে সারাদিনে জাভেদ কোনো ম্যাসেজ দেয়নি। জাভেদের ম্যাসেজগুলো পড়তেও তিন্নির প্রচুর কষ্ট হয় তবুও অন্তত জাভেদের কন্ঠকে সে অনুভব করতে পারে। যেই কন্ঠ তার বিপদের সময় পাশে ছিল, যেই কন্ঠ তার জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ সময় তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। এই কন্ঠের সাথে কোনো একসময় রাতের পর রাত জেগে সে আড্ডা দিত। আজ সেই কন্ঠকে তিন্নি শুনতে পায় শুধু শব্দের খাচায় বন্দি অবস্থায়। কন্ঠটা খাচা খুলে দেওয়ার জন্য কি ভয়াবহ আর্তনাদ করে তিন্নির কাছে! আজকে প্রায় ৩ বছর। জাভেদকে সে কষ্ট দিতে চায় না তাই জাভেদের প্রতিবার আর্তনাদ তিন্নির দেহে যে ভয়াবহ আঘাত চালাতে থাকে তা তিন্নি শুষে নেয় নিজের মাঝে। মোবাইলের ইন্টারনেট কানেকশন অন করে, মেসেঞ্জারে গিয়ে মেসেজ রিকোয়েস্ট চেক করে। তিন্নি প্রচুর পরিমানে ম্যাসেজ পায়, প্রায় প্রতি ঘন্টায়। অবশ্য প্রায় ৫০-৬০,০০০ ফলোয়ার থাকলে এটা অসম্ভব কিছু না। তবুও এই শতশত ম্যাসেজের ভিড়েও জাভেদের ম্যাসেজগুলোকে সে খুজে বেড়ায়।
.
টানা অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজি করেও জাভেদের কোনো ম্যাসেজ তিন্নি খুঁজে পায় না। বিষয়টা তিন্নির প্রায় অসম্ভব মনেহয়। এতগুলো দিন, কোনোভাবে জাভেদ ভুল করেও প্রতিদিন ৩ টা করে ম্যাসেজ দিতে ভুলেনি। তো আজকে কিভাবে ভুলতে পারে!? জাভেদ সিরিয়াস অসুস্থ অথবা জাভেদ কোনো ধরনের সমস্যায় আছে সেই বিষয়ে তিন্নি প্রায় সুনিশ্চিত। প্রচন্ড অস্থিরতায় আবার একবার ভালোভাবে মেসেজ রিকোয়েস্ট গুলো চেক করে শুরু করল। এই ফাঁকে ২-১ জনের ম্যাসেজও চেক করল। জাভেদ আবার নতুন কোনো ফেইক আইডি খুলেছে নাকি সেটা দেখতে। মোটেও অধৈর্য না হয়ে বরং ধৈর্য সহকারেই মেসেজগুলো দেখতে থাকে। হঠাৎ একটা ম্যাসেজে হালকা চোখ বুলাতে গিয়ে দেখে,Shovon Khan নামের কেউ জাভেদকে নিয়ে কিছু লিখেছে। তিন্নি ম্যাসেজটা প্রচন্ড মনযোগ দিয়ে পড়তে থাকে । পড়তে পড়তে শেষ পর্যন্ত গিয়ে, তিন্নির শ্বাস প্রশ্বাসের গতি প্রায় ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে যায়। ঘামিয়ে যায় তিন্নির সমগ্র দেহ, বৃদ্ধি পেয়ে যায় তিন্নির চোখের আয়তন। এখনো দুচোখে বিশ্বাস হচ্ছে না, সে কি পড়ল! জাভেদ এরকম কাজ কখনো করতে পারে না, কখনো না। এটা তিন্নির কঠিন বিশ্বাস। জাভেদ কোনদিন আত্মহত্যার মত কাজ করতে পারে না। তিন্নি আবার ম্যাসেজটা ভালোভাবে পড়ে নেয়। সেই অজ্ঞাত ব্যক্তির পাঠানো জাভেদের মৃত ছবি দুটো এবং সুইসাইড নোটটা ভালোভাবে দেখে নেয়। বিষয়টা এখনো তিন্নির বিশ্বাসের বাহিরে। কিন্তু ছবি তিনটাতেও খুত ধরার কোনো জায়গা নেই। সুইসাইড নোটের হাতের লেখাটাও জাভেদের। বাধ্য হয়েই সেই লোকের ম্যাসেজ রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করে। লোকটাকে উদ্দেশ্য করে ম্যাসেজ লেখা শুরু করে,
.
” হ্যালো আপনি সিরিয়াসলি বলুন, জাভেদের কি হয়েছে? আপনি জাভেদের কি হন? প্লিজ, আমার জানা অনেক জরুরী। ”
.
অস্থিরতায় তিন্নি প্রায় উম্মাদ হয়ে যায়। বিগত ৩ বছরে এতটা অস্থির সে কখনো হয়নি। মোবাইলের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে, সেই শোভন নামক লোকের রিপ্লাইয়ের জন্য অপেক্ষা করতে করতে মোবাইল ছুড়ে মারতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আজকে আর সেই তিন্নি নেই যে,মুহূর্তে রেগে যেত। তবুও প্রতিটা মুহূর্ত তিন্নির ব্যাথাগুলোকে তীব্র থেকে তীব্রতর করতে থাকে। চোখের পানিগুলো বিনা অনুমতিতেই ঝড়তে থাকে। যেই ব্যক্তি তিন্নিকে আজ এজায়গা দাড় করিয়েছে, যে ব্যক্তি তিন্নিকে সকল ধরনের বিপদ, প্রতিকূলতার সাথে লড়াই শিখিয়েছে, সে কিভাবে এমনটা করতে পারে? এই প্রশ্নটা খেয়ে ফেলছে তিন্নির মস্তিষ্ক।
.
– তবে যেই একজন ব্যক্তি আমায় চরিত্রহীনা বলেনি। সে নিজেই হেরে গেলো? আর সে যদি হেরে যায় আমার কারণে তবে আমি তো পরিনত হব, ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্ট নারীতে।
.
(৯)
.
বাথরুম থেকে বেরিয়ে চোখ থেকে ঘুম প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে শোভনের। তবুও যে চোখে হালকা ঘুম নেই তা মোটেও না। চোখে এখনো হালকা ঘুম আছে। বিছানায় বসে বালিশটা টেনে আবার মাথাটা বালিশের সাথে লাগাতে যাবে ঠিক তখন একবার মোবাইলটা চেক করার ইচ্ছে জাগল, শোভনের। মোবাইলটা হাতে নিয়ে ইন্টারনেট কানেকশন অন করা মাত্রই মেসেঞ্জারটা বেজে উঠল। মেসেঞ্জারে ঢুকতেই দুচোখ দাড়িয়ে গেল। এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না, জাভেদের বুদ্ধিটা কাজ করেছে। আর তিন্নিও চ্যাটে। কোনো সময় নষ্ট না করেই তিন্নিকে ম্যাসেজ দিল,
.
” হ্যা, আমি সিরিয়াস। ওর ডায়েরিটা আমার কাছে। আপনাকে পাঠাতে চাই। কিভাবে পাঠাবো? ”
.
সাথে সাথে জাভেদের সাথে পুরানো কিছু ছবি তিন্নিকে পাঠিয়ে দেয়।
.
মুহূর্তেই তিন্নি রিপ্লে দেয়,
.
– ভাইয়্যা, আবারো জিজ্ঞেস করছি, আপনি সিরিয়াস?
.
– বললাম তো হ্যা।
.
– আমার বিশ্বাস হয় না। জাভেদ কিভাবে এরকম করতে পারে?
.
– আমিও বুঝতে পারছি না। তবে আপনার জন্য প্রায় উম্মাদ ছিল। সারাদিন আপনাকে নিয়েই কথা বলত। প্রায় সময় এমন পাগলামি করতে নিষেধ করতাম কিন্তু ও সম্পুর্ন মানসিক রোগী হয়ে গিয়েছিল।
.
– আচ্ছা,উনি কি একা থাকতেন?
.
– হ্যা,একাই থাকত। কিন্তু কেনো? যাহোক ওর ডায়েরিটা আপনাকে পাঠাতে ইচ্ছুক। কিভাবে পাঠাবো? ডায়েরির লেখাগুলো পড়ে আসলে প্রায় কান্না এসে গিয়েছে আমার। সত্যি কথা বলতে আমার আপনার উপর একটু রাগ হয়েছে, প্লিজ মাইন্ড করবেন না।
.
– না মাইন্ড করার কিছু নেই। দোষ প্রায় সম্পুর্ন আমার, অস্বীকার করব কেন? আমি একটা মানুষকে সাইকোলজিক্যাল প্রেসার দিয়েছি দিনের পর দিন।
.
– আচ্ছা ডায়েরিটা?
.
– প্লিজ ওটা আমার এড্রেসে একটু কুরিয়ার করে দিতে পারবেন?
.
– জ্বী পারব।
.
– আচ্ছা, ২৬৫,****, আলভি ভিলা, ঢাকা।
.
– আচ্ছা আমি কালকে পাঠিয়ে দিব।
.
– আচ্ছা অনেক অনেক ধন্যবাদ।
.
– না ধন্যবাদের কিছু নেই।
.
– আচ্ছা, আল্লাহ হাফেজ আমার মন আর শরীর দুটো খারাপ আর কথা বলতে পারছি না।
.
– আচ্ছা, আল্লাহ হাফেজ।
.
মোবাইলটা রেখে শোভন প্রায় আনন্দে নাচা শুরু করল।
.
– আমার তো অস্কার পাওয়া উচিত এক্টিংয়ে।
.
সাথে সাথেই মোবাইলটা নিয়ে জাভেদকে ফোন করল। মুহূর্তেই জাভেদ কল রিসিভ করল। এই রাতেও কল রিসিভ করতে জাভেদের সামান্য দেরি হয়নি। কলটার জন্য যে কতটা আগ্রহে ছিল জাভেদ তা বোঝা খুব একটা কঠিন না।
.
– হ্যালো শোভন, কি খবর?
.
– আরে ব্যাটা ২০০০ টাকার নিচে দিলে, ঠ্যাঙ ভাইঙ্গা দিমু। এড্রেস লেখ শালা।
.
– মানে তুই পারসো?
.
– এইটা কোনো প্রশ্ন হইল, অস্কার পাওয়া অভিনেতারে এসব কি জিগাও?
.
– মানে পারসো?
.
– হুম,অবশ্যই পারসি। পারব না ক্যান? এবার ঠিকানা লেখ।
.
– অনেক, অনেক ধন্যবাদ ভাই।
.
– ধন্যবাদে হইবে না। ২ হাজার টাকা লাগবে।
.
– ভাই আগে ঠিকানাটা বল।
.
– ঠিক আছে লেখ।
.
মুহূর্তের মধ্যে জাভেদ ঠিকানাটা লিখে ফেলল। এতটা আনন্দ বিগত ৩ বছরে কখনো অনুভব হয়নি।
.
– অনেক ধন্যবাদ ভাই। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
.
– যাক বাদ দে। সেই মেয়েটার কথা শুনে মনেহয়, তোকে খুউব ভালোবাসে তবে লুকিয়ে রাখে।
.
– ওর কথাবার্তা শুনলে যেকোনো কেউ ওরকম মনে করবে। কিন্তু আসলে ও একটা চরম রহস্যময়ী মেয়ে।
.
– বুঝলাম তো এখন রাখি। ঘুম আসতেছে। এখন ঢাকা গিয়া মনমত প্রেম কর।
.
– ও তো অন্য কাউকে ভালোবাসে। আমি ওর সাথে প্রেম-ভালোবাসার জন্য দেখা করতে চাই না, এমনি শুধু একবার দেখার জন্য এত বছর ওকে খুঁজেছি। যাক, এখন ঘুম দে, আল্লাহ হাফেজ।
.
– ভাই তোর দার্শনিক কথাবার্তা আমার মাথায় খেলে না। যাক এখন রাখলাম, আল্লাহ হাফেজ।
.
৩ বছরে জাভেদের কখনো এতটা আনন্দবোধ হয়নি। কোনোভাবে আর সহ্য হয় না। প্রতিটা মুহূর্ত কয়েকঘন্টা মনেহচ্ছে। কোনোভাবে সকাল হলেই বাসে করে সোজা ঢাকা,সোজা তিন্নির কাছে।
.
– আচ্ছা, তিন্নি কি আমাকে দেখলে প্রচুর রাগ হবে না আশ্চর্য হবে? ইরা কি অনেক বড় হয়ে গিয়েছে? ইরা কি আবার আমার কাধে উঠবে? কে জানে! সকাল কখন হবে? এটাই নি:সন্দেহে আমার জীবনে শ্রেষ্ঠ ভ্রমণ হবে। এ জার্নি বাই বাস টু তিন্নি। হাই বিউটিফুল!
.
(৯)
.
– জাভেদের সেই কন্ঠটা তবে কি শব্দের মাঝেই চির বন্দি হয়ে রইল? কন্ঠটার আর্তনাদ কি আর শোনা যাবে না? কন্ঠটা কি আমার সাথে প্রচুর অভিমান করল? এমন অভিমান যে সে রাগ করে চিরকালের জন্য আমার সাথে কথা বন্ধ করে দিল? আচ্ছা জাভেদের সাথে আমি আর দেখা করতে পারব না? একটা সময় ছিল যখন হাতে মশা কামড় দিলেও এই মশাকে কেন্দ্র করে জাভেদের সাথে একগাদা আলোচনা করতাম। আমার এত বকবক সে সবসময় সহ্য করে গিয়েছে, কখনো বিরক্ত হত না। আর আমি তাকে এত বড় শাস্তি দিলাম? আমার শত, হাজার রাগ, অভিমান সহ্যের জন্য আজ কেউ নেই? কেউ আর আমার বৃষ্টিতে ভেজা দেখবে না? কেউ আর আমার বৃষ্টিতে ভেজার সঙ্গি হবে না? আচ্ছা এভাবে তো একদিন আমি জাভেদের কথা ভুলে যাবো তাই না? নিজের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাব আর জাভেদ হয়ে যাবে কঙ্কাল। একটা রক্ত মাংসে মানুষ একদিন কঙ্কালে পরিনত হয়ে যায়, একদিন পোকা মাকড় তার দেহে বাসা বাধে, একদিন সে দুর্গন্ধে পরিনত হয়। নিজের অতীত, ভবিষৎ, বর্তমান থেকে চিরমুক্তি পেয়ে সে চলে যায় তার স্রষ্টার কাছে। সবাই একদিন ভুলে যায় তাকে, এমন একটা সময় আসে যখন তার নামও কারো মনে থাকে না। এভাবেই মাটির নিচে চলে যায় একটা আস্তা ইতিহাসের বই তাই না?
.
বৃষ্টির বেগ আরো বৃদ্ধি পেতে থাকে, বারান্দার গ্রিলের সাথে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে সর্বোচ্চ বেগ নিয়ে বৃষ্টি তিন্নির দেহকে ছুয়ে যায়। ইচ্ছে হয় নিচে গিয়ে ভিজতে তবে সেই শক্তি নেই তিন্নির মাঝে। চোখের লোনাজল আর বৃষ্টির পানি একত্রিত হয়ে হয়ত অদ্ভুত এক নতুন ধরনের তরল সৃষ্টি করছে। মেঘলা আকাশের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তিন্নি।
.
– আরেকবার আমার সাথে কথা বলুন না জাভেদ। আরেকবার আমরা দুজন কি এই বৃষ্টিতে বারান্দায় দাড়িয়ে দু কাপ কফি খেতে পারি না? বলুন, পারি না?
.
চোখের পানিগুলোকে পরিষ্কার করার সামান্য ইচ্ছে নেই তিন্নির মাঝে। তিন্নি কাঁদতে চায়, আরো কাঁদতে চায়। যাতে চোখের পানিগুলো বাষ্প হয়ে জাভেদের কাছে চলে যায়। চোখের পানিগুলো যেন জাভেদের দেহকে ছুয়ে যায়। এই আশাতেই চোখের পানিগুলোকে পরিষ্কার না করে জমিয়ে রাখছে।
.
হঠাৎ বেলটা বেজে ওঠে। তিন্নির ইচ্ছে নেই দরজা খুলে এখন কারো সাথে কথা বলার। তবুও ভদ্রতার খাতিরেই দরজাটা খুলতে হবে। চোখের পানিগুলোকে তবু পরিষ্কার করে না। চোখ এবং দেহ ভেজা এই অদ্ভুত অবস্থাতেই তিন্নি দরজা খুলতে যায়।
.
– এই দুপুরবেলা তাও আবার এই বৃষ্টির মধ্যে কে আসবে? কে জানে!
.
(চলবে….)
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here