চিত্তদাহ লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা পর্ব ৪৪

0
464

#চিত্তদাহ
লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা
পর্ব ৪৪

🍂🍂🍂

খুব ভোরে ঘুম ভাঙলো শুভ্রতার। ঘুম ভাঙতেই ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো। লম্বা লম্বা শ্বাস নিয়ে সারা ঘরে চোখ বুলালো। ঘরে কেউ নেই। সারা ঘর অন্ধকার। জানালার দিকে চেয়ে বুঝতে পারলো ভোরের আলো ফুটেনি এখনো। ফজরের নামাজ পড়ে নিঃশব্দে মায়ের ঘরে গিয়ে বসলো। ঘর আর ঘরের জিনিস আগের জায়গায় থাকলেও ঘরের মালিকটা আর বেঁচে নেই ভাবতেই বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো। কি এক অসহ্য যন্ত্রণা। নিজের মৃত্যুর থেকেও বেশি কষ্টদায়ক মায়ের মৃত্যু। মনে পড়লেই হৃদয়টা ছারখার হয়ে যায়। উমা খাটের যে পাশটায় ঘুমাতো। শুভ্রতা ঠিক সে পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো। চোখের কোণ গড়িয়ে পড়তে লাগলো অশ্রু। সাজানো গুছানো সংসারটা কেমন শেষ হয়ে গেলো। আনন্দে পরিপূর্ণ বাড়িটা কেমন গভীর বিষাদে ঢাকা পড়লো। বাবার কথা মনে পড়তেই ডুকরে কেঁদে উঠলো শুভ্রতা। কান্নার বেগ বাড়লো। একে একে মনে পড়তে শুরু হলো সব অতীত। তিক্ততায় ভরে উঠলো সারা মন।
______________________________________

মাথায় ঠান্ডা কিছুর ছোঁয়া টের পেতেই ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকালো শুভ্রতা। অনিকা মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছে। শুভ্রতা উঠে বসার চেষ্টা করতেই অনিকা বাঁধা দিলো।

~শুয়ে থাক। জ্বর কমলেও আপাতত দুর্বল তুই।

তার জ্বর এসেছিল আর তার মনেই নেই। কি অদ্ভুত ব্যাপার। শুভ্রতা জোর করে উঠে বসলো।

~আমার ঘরে একটু পানি নিয়ে এসো তো রেনু আপা।
~ও ঘরে কেনো? ওই ঘরে গিয়ে লাভ কি? দিনভর তো এই ঘরেই থাকিস। রাতে গেলেও আবার ভোর হলে এই ঘরেই ফিরে আসিস। তাহলে ওই ঘরে গিয়ে কি লাভ?

শুভ্রতা প্রত্যুত্তর করলো না। নিজের ঘরে ফিরে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো। আয়নার সামনে দাঁড়াতেই নজরে এলো তার নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে। সে হকচকালো না। টিস্যু দিয়ে নাক মুছে তা ফ্ল্যাশ করে দিলো। নাক দিয়ে এমন হুটহাট রক্ত পড়ার কারণ তার জানতে ইচ্ছে করে না। এ যেনো খুবই স্বাভাবিক বিষয়। শুভ্রতা ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখলো চন্দ্র বিছানায় বসে তার জন্য অপেক্ষা করছে। শুভ্রতাকে ইশারা করতেই সে চন্দ্রের পাশে গিয়ে বসলো। চন্দ্র হাত বাড়িয়ে শুভ্রতার কপাল ছুঁলো।

~জ্বর নেই। খাবার খেয়ে ওষুধটা খেয়ে নিবে।
~চন্দ্র জানেন আজ স্বপ্নে মা আর বাবাকে দেখেছি। মা বাবার সাথে কতো খুশি ছিল জানেন।
~না বললে কি করে জানবো?

শুভ্রতা উৎফুল্ল কণ্ঠে নিজের স্বপ্ন বর্ণনা করতে লাগলো। আর চন্দ্র শুভ্রতাকে খাবার খাইয়ে দিতে দিতে মনোযোগ দিয়ে শুনলো সব কথা।

~আমাকে একটু মায়ের কবরের কাছে নিয়ে যাবেন চন্দ্র? অরণ্য ভাইয়া নিয়ে যেতে চায় না।
~যাবো।
~সত্যি?

চন্দ্র মুচকি হেসে আশ্বাস দিলো। বললো,

~অরণ্য বললো তোমাকে একবার হাসপাতালে নিতে হবে। কিছু পরীক্ষা বাকি আছে। কাল তো আম্মুর চল্লিশার মিলাদ। আজ যাবে হাসপাতালে?
~এসব পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। আমি সুস্থ আছি। তাই আমি যাচ্ছি না।
~সন্ধ্যায় নিতে আসবো, রেডী হয়ে থেকো।

শুভ্রতা মুখ ফুলালো। মানুষটা ইদানিং তার কথার পাত্তাই দেয় না। নিজের মন মতো চলতেও দেয় না। সারাদিন পেছনে কাউকে না কাউকে লাগিয়ে রাখে তার খেয়াল রাখার জন্য। কখনো অনিকা, কখনো চিত্রা, কখনো রাত্রি তো কখনো তিলোত্তমা। পাশাপাশি আবার রেনু তো আছেই। সবার আদরে অতিষ্ট হয়ে উঠছে সে।

চন্দ্র নিজের কথা মতো ঠিক সন্ধ্যায় শুভ্রতার বাড়ির নিচে হাজির হলো। শুভ্রতা আসতে না চাইলেও তাকে জোর করে ঠেলে পাঠালো রেনু। শুভ্রতা ধীর কণ্ঠে রেনুকে চাপা হুমকি দিলো,

~বাড়ি আসতে দাও রেনু আপা। তার পর ধরছি তোমাকে, চন্দ্রের চামচি!

রেনু ঠোঁট বাঁকালো। শুভ্রতার কথা তার মনে ভয়ের সৃষ্টি করলো না। সে পাল্টা হুমকি দিয়ে বললো,

~আপনে এহন না গেলে দুলাভাই আপনেরে ধরবো। তারপর দেহুম নে আমারে কেমনে ধরেন।

শুভ্রতা সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো রেনুর দিকে। গাড়িতে বসেও চোখ ছোট ছোট করে দু আঙ্গুল দিয়ে বার কয়েক নিজের চোখ আর রেনুর চোখের দিকে ইশারা করে বললো,

~আই উইল সি ইউ ঘসেটি খালা! থুড়ি! আপা, আপা!
~ক্যান? এহন কি আমারে দেহা যায় না?
~তোমাকে তো!

চন্দ্র শব্দ করে হেসে গাড়ি স্টার্ট করলো। শুভ্রতা জানালা দিয়ে মাথা বের করে আগের ন্যায় নিজের চোখ আর রেনুর চোখ ইশারা করতে লাগলো। রেনু খিলখিল করে হেসে উঠলো। আকাশ পানে চেয়ে দোয়া করলো তার আপামনি যেনো দীর্ঘজীবী হয়।
_____________________________________

~গাড়ি থামান! গাড়ি থামান! চন্দ্র, গাড়ি থামান!

শুভ্রতার আকস্মিক চিৎকারে অরণ্য আঁতকে উঠলো। চন্দ্র গাড়ির ব্রেক কষতেই শুভ্রতা উৎফুল্ল মনে গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো। গাড়ির জানালা দিয়ে উকি মেরে বললো,

~অপেক্ষা করুন, আসছি আমি।

অরণ্য হাক ছাড়লো,
~কোথায় যাস?

শুভ্রতা জবাব দিলো না। অরণ্য চোখ পিটপিট করে চন্দ্রকে প্রশ্ন ছুড়লো,

~ও আবার কোথায় গেলো?
~আমি কি করে জানবো? তোর মতো আমাকেও তো অপেক্ষা করতেই বলে গেলো।

চন্দ্র ফোন ঘাঁটতে লাগলো। গাড়িতে পিনপতন নিরবতা। আকাশে ঘোর কালো অন্ধকার। যেকোনো সময় বৃষ্টি নামবে।

~বৃষ্টি নামবে মনে হচ্ছে। মেয়েটা ছাতা নিয়েও যায়নি। গেলো কোথায়?

চন্দ্র সিট বেল্ট খুলে গাড়ির দরজা খুলে উদ্যত হতেই অরণ্য বললো,

~আমিও আসছি।
~বস তুই, আজকে পেশেন্ট বেশি ছিল জানি আমি। রেস্ট নে। প্রয়োজন হলে আমি ডাকবো।

অরণ্য মেনে নিয়ে গাড়ির সিটে গা এলিয়ে দিলো। চন্দ্র গাড়ি থেকে বের হতেই ঝুম বৃষ্টি নামলো। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ছাতা খুলে একটু হেটে যেতেই দেখা মিললো শুভ্রতার। বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে অথচ এই মেয়ের ঠোঁটে হাসি। চন্দ্র শুভ্রতার কাছে গেলো কিছুটা রাগ নিয়েই। দাম্ভিক কণ্ঠে প্রশ্ন ছুড়লো,

~কোথায় গিয়েছিলে তুমি? বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছো সেই খেয়াল আছে!

চন্দ্র বেশ যত্নে শুভ্রতার কাঁধ টেনে তাকে ছাতার নিচে আনলো। শুভ্রতা আস্তে করে নিজের হাত থেকে ওড়না সরালো। চন্দ্র অবাক ভঙ্গিতে শুভ্রতার কোলের দিকে তাকালো। গলা তার শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। সরে দাঁড়াবে যে সেই শক্তিও যেনো তার মধ্যে নেই। অন্যদিকে শুভ্রতার ঠোঁটে বিস্তর হাসি।

~এটার জন্য গাড়ি থামিয়েছো?
~সুন্দর না? না জানি কোন অমানুষ একে এমন রাস্তার মাঝে ছেড়ে দিয়ে গেছে। আমি ওকে বাড়ি নিয়ে যেতে চাইছি।

চন্দ্র লম্বা শ্বাস নিলো। বার কয়েক শুকনো ঢোক গিললো। এমন ঠান্ডা মৌসুমেও সে ঘেমে একাকার। ঠোঁটে টানলো জোরপূর্বক হাসি। বিড়ালে তার ভীষণ ভয়। ভয় বলতে গা ঘিন ঘিন করে তার। এই যে শুভ্রতা তার সামনে বিড়াল ছানা কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে তা দেখেই তার গা গুলিয়ে আসছে। বহু কষ্টে সে ঠোঁটে হাসি রেখে বললো,

~এত প্রাণী থাকতে ওকেই পালবে?

শুভ্রতার যেনো চন্দ্রের কথাটা পছন্দ হলো না। ভ্রুদ্বয় কুচকে চাইলো সামনে দাড়িয়ে থাকা মানবটির দিকে। দৃঢ় কন্ঠে প্রশ্ন ছুড়লো,

~ওকে পালতে কি সমস্যা?

চন্দ্র জবাব দিলো না। মুখটা বাংলার পাঁচের মত করে দাড়িয়ে রইলো। শুভ্রতা অগ্নিশর্মা চোখে চেয়ে রইলো চন্দ্রের মুখ পানে। ওড়নার আঁচল দিয়ে বিড়ালটির শরীর পেঁচাতে পেঁচাতে বললো,

~আপনি কি ওর গায়ের রঙের জন্য এই কথা বললেন চন্দ্র?

চন্দ্র নির্মল চোখে চাইলো বিড়ালটির দিকে। সে খেয়ালই করেনি বিড়ালটির গায়ের রং। সে শুধু এক পলকে ধারণা করেছে শুভ্রতার কোলে বিড়াল। সে কালো নাকি সাদা সে তেমন খেয়াল করেনি। শুভ্রতার কথায় সে সূক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো বিড়ালটির দিকে। সারা গা শুভ্রতার ওড়নায় আবৃত, শুধু মাথা খানা দেখা যাচ্ছে। মাথা দেখেই চন্দ্র ধারণা করলো বিড়ালটা কুচকুচে কালো বর্ণের।

~কালো বর্ণকে মানুষ অশুভ বলে। বিড়ালের রং কালো বলে কিছু মানুষ অশুভ ভেবে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে। ভুলে যায় এদেরও প্রাণ আছে। তবে সমাজের অনেক মানুষই এদের দেখলেই তাড়িয়ে দেয়। অশুভ বলে… এমনটা করা কি উচিত? ওদেরও তো কষ্ট হয়।

শুভ্রতা একটু থামলো। পরম স্নেহে বিড়ালটির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,

~ওর সামনে দাড়াতেই পাশের বাড়ির দারোয়ান আঙ্কেল বললো ওকে নাকি দুদিন আগে কেউ একজন এখানে ফেলে দিয়ে গেছে। আন্দাজ করে যা বুঝলাম ওকে ফেলে দেওয়ার কারণ ওর গায়ের রং। বেশিরভাগ মানুষ কালোকে প্রিয় রং বলে অথচ কালো কোনো প্রাণী এদের পছন্দ হয় না। কি অদ্ভুত! এইটুকু বাচ্চা বিড়ালকেও ফেলার আগে এদের রুহ কাপলো না! এই যে বৃষ্টি হচ্ছে। যদি অসুস্থ হয়ে মারা যেতো?

শুভ্রতার চোখ টলমল করে উঠলো। চন্দ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে পুনরায় শুভ্রতার কাঁধ জড়িয়ে ধরলো। গাড়ির কাছে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,

~কালো আমার ভীষণ প্রিয়। হোক সেটা কোনো বস্তু বা কোনো প্রাণী। তবে ওকে একটু আমার থেকে দূরে রেখো।

~কেনো?

চন্দ্র জবাব দিলো না। মুখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললো,

~কি করে বলবো, আমার বিড়াল ভয় লাগে।
_________________________________________

জানালার ধারে বসে পত্রিকা পড়ছে আবসার। পত্রিকা পড়ছে কম, আকাশের দিকেই তাকাচ্ছে বেশি। সকাল থেকেই মন তার ভার হয়ে আছে।

~তোমার চা।

কিছুটা তেজ মিশ্রিত গলায় বললো ইতি। আবসার পত্রিকা থেকে চোখ সরিয়ে ইতির দিকে তাকালো। চা নেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই ইতি চায়ের কাপ বিছানায় রেখে তার সামনা সামনি বসলো। চোখে তার ভীষণ ক্রোধ। আবসার তা গায়ে মাখালো না। চায়ের কাপ নিয়ে চায়ে এক চুমুক দিতেই ইতি বলে উঠলো,

~আর কতদিন এভাবে বসে বসে খাবেন? ঘরে যা সঞ্চয় ছিলো সব শেষ। আপনাকে বিয়ে করে আমার এত ভালো বেতনের চাকরিটাও হাত ছাড়া হলোই, সাথে আপনিও ব্যবসা বাণিজ্য ছেড়ে বাড়ি বসেছেন।
~ওটা আমার ব্যবসা না ইতি। শুভ্রতার মায়ের। এখন তা শুভ্রতার। আমার কোনো হক নেই ওসবে।

ইতি তেতে উঠলো,
~তো এইসব আপনি আমাকে আগে বলেননি কেনো? অযথা আমার জীবনটা নষ্ট হলো।

আবসার শীতল দৃষ্টিতে চাইলো। ইতি একটু ভয় পেলো তাতে। নড়েচড়ে বসে স্বামীর হাত ধরলো। শীতল কণ্ঠে বললো,

~আপনি আমাকে একটু শুভ্রতার সাথে দেখা করতে নিয়ে যাবেন? মেয়েটার জন্য আমার মনটা কত কাঁদে। মা মরা মেয়ে আমার। আমি পাশে থাকলে মেয়েটার মায়ের কষ্ট কম হবে তাই না? আর ও একা এইসব ব্যবসা বাণিজ্য সামলাতে পারবে নাকি! আপনি গিয়ে সাহায্য করলেও পারতেন।

আবসার হাত সরিয়ে নিলো। চায়ে চুমুক দিয়ে দৃষ্টি স্থির করলো আকাশের দিকে। মনে পড়লো আজ উমার মৃত্যুর চল্লিশ দিন। মনে পড়তেই বুকটা তার হুহু করে উঠলো। যতই দিন যাচ্ছে ততই তার আফসোসের মাত্রা বাড়ছে। প্রতিক্ষণে নিজেকে প্রশ্ন করে, কোন ভুলে সে ওদের ছেড়ে এসেছিলো তাও ইতির মতো এমন এক মেয়ের কাছে।
______________________________________

বারান্দায় গালে হাত ঠেকিয়ে বসে আছে শুভ্রতা। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি। সামনেই তার বিড়াল রোজ বসে খাবার খাচ্ছে। রোজকে দেখলেই তার মন ভালো হয়ে যায়। গতকাল থেকে সে ওকে নিয়েই পড়ে আছে। মনোযোগ দিয়ে বিড়ালটির কার্যকলাপ দেখে সে, আর ক্ষণে ক্ষণেই খিলখিল করে হেসে উঠে। রোজ খাবার শেষ করে তার গা ঘেঁষে আরাম করে বসলো। শুভ্রতা তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে রোজের মাথায় ছুঁয়ে দিতেই সে দু হাতে শুভ্রতার আঙ্গুল ধরে এক কামড় বসালো। শুভ্রতা শব্দ করে হেসে উঠলো। হাপাতে হাপাতে তার পাশে বসলো রিদিতা। ফোন চেপে কিছু একটা টাইপ করে মাথা রাখলো শুভ্রতার কোলে। শ্বাস নিচ্ছে ঘন ঘন। যেনো অনেকটা দৌড়াদৌড়ি করে এসেছে। শুভ্রতা এক নজর তার দিকে চেয়ে পুনরায় রোজের সাথে খেলতে লাগলো। মিনিট পাঁচেক এর মাথায় ঘরে এলো তিলোত্তমা আর উপমা। ঘরে এসেই মাটিতে গা ছড়িয়ে শুয়ে পড়লো দুজনে। রিদিতার মতো তারাও হাপাচ্ছে।

~শালা! ফোন কই তোর? সারা বাড়ি খুঁজতে খুঁজতে জান শেষ! (রিদিতা)
~এখানেই তো ছিলাম। যেখানে আছি সেই স্থান বাদে সারা বাড়ি খুঁজলে তো আমাকে পাবিই না, স্বাভাবিক। (শুভ্রতা)

তিলোত্তমাকে বললো,

~রেনু আপা কে বল খাবার নিয়ে আসতে। নিচে আর যাবো না। একা ৪ প্লেট আনতে পারবে না। তোদের মধ্যে একজন যা।
~তোকে কে বললো, আমরা এখনো খাইনি। (উপমা)
~চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে।

তিলোত্তমা রেনুর কাছে যেতেই রিদিতা কিছু বলতে চাইলো। উপমা ইশারায় মানা করছে। সেসব খেয়াল হতেই শুভ্রতা ধীর স্বরে বললো,
~কি হয়েছে?

~ঝাড়বাতি আর ভার্সিটি আসবে না। জানিস?

রিদিতার উদ্বিগ্ন জবাব। বিস্মিত হয়ে তাকালো শুভ্রতা। ব্যাথাতুর কণ্ঠে বললো,

~না। কেনো আসবে না? আমার জন্য?
~ও নিজের জন্য গেছে। পাগল হয়ে গেছে ও। অনর্থ সব দোষ নিজের ওপর নিস না। রাগ কমলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

শুভ্রতা কথা বললো না। তীব্র আক্ষেপে বুক ভার হয়ে গেলো। মস্তিষ্ক যেনো বোধ শক্তি হারাচ্ছে। সব কিছু ঠিক করার অবকাশটুকু তাকে দেওয়া হচ্ছে না। সম্পর্ক যেনো হাতের মুঠোয় ধরে রাখা বালুর মত উড়ে যাচ্ছে, ধরা ছোঁয়ার বাইরে। শুভ্রতার চোখ জ্বলে উঠলো। বুকের বা পাশে অসহ্য এক ব্যাথা অনুভব হলো। বন্ধুত্বের শেষ পরিণতি কি তবে এটাই?
~~~
চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here