চিত্তদাহ লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা পর্ব ৫১

#চিত্তদাহ
লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা
পর্ব ৫১

🍂🍂🍂

সামনা সামনি বসে আছে শুভ্রতা আর চন্দ্র। মাঝে বিশাল পর্দা। চন্দ্রর ঠোঁট থেকে হাঁসি যেনো সরছেই নাই। অন্যদিকে লজ্জায় মাথা নামিয়ে বসে আছে শুভ্রতা। পাশে বসে রিদিতা, উপমা, রুপা, তিলোত্তমা একে অপরকে খোঁচাখুচি করছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই কাজী বিয়ে পড়ানো শুরু করলো। শুভ্রতাকে কবুল বলতে বললেই শুভ্রতা থম মেরে বসে রইলো। তার চোখের সামনে ভেসে এলো তার পূর্ণাঙ্গ অতীত। বাবা মায়ের সাথে কাটানো সব সুন্দর মুহূর্ত। শুভ্রতা মাথা তুলে অশ্রুসিক্ত দৃষ্টিতে মামা, মামী আর দুই ভাইয়ের দিকে তাকালো। অর্ণব আর অরণ্য চোখের ইশারায় আশ্বস্থ করতেই শুভ্রতা কবুল বললো। অন্যদিকে চন্দ্রকে কবুল বলতে বলার সাথে সাথেই চন্দ্র কবুল বললো। কাজীর বলতে দেরি হলেও তার বলতে দেরি হলো না। সে তো এই অপেক্ষায় ই ছিলো এতো বছর ধরে। অবশেষে সে তার চন্দ্রাবতীকে পেয়েছে। চন্দ্র কবুল বলতেই সকলে একসাথে চিল্লিয়ে উঠলো। জমিদার বাড়িতে আনন্দের জোয়ার এসেছে। চার বান্ধবী বেশ খুশি হয়ে শুভ্রতাকে জড়িয়ে ধরলো। শুভ্রতাকে ধরে এক প্রকার দুলতে লাগলো বান্ধবীরা। শুভ্রতা এতক্ষণ লজ্জায় মাথা নত করে থাকলেও এখন ওদের জড়িয়ে ধরায় খিলখিল করে হেসে যাচ্ছে। ওর হাসির আওয়াজ কর্ণপাত হতেই চন্দ্রের মন শীতল হয়ে এলো। কতদিন পর এই ঝংকারপূর্ণ হাসির আওয়াজ শুনছে সে। এই হাসিই তো এতদিন মিস করছিল সে। শুভ্রতার হাসতে হাসতে চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। বান্ধবীরা এখনও জড়িয়ে ধরে ওর হাস্যরত মুখের পানে চেয়ে। সকলে হাসি হাসি চোখে শুভ্রতার দিকে চেয়ে। মেয়েটার মনের ওপর দিয়ে কি গেছে এটা কারোরই অজানা নয়। এতদিন পর ওকে হাসতে দেখে সকলেই খুশি হলেন। তরী ফোন বের করে ফটাফট কয়েকটা ছবি তুললো শুভ্রতার। এর পর পাঠিয়ে দিলো চন্দ্রের ফোনে। পর্দা থাকার কারণে শুভ্রতাকে দেখতে পাচ্ছে না। চন্দ্র বোনের কাজে বেশ খুশি হলো। দ্রুত আঙ্গুল চালিয়ে টাইপ করলো,
~একদিনের জন্য আমার ক্রেডিট কার্ড তোর।

মেসেজ পড়তেই খুশিতে লাফিয়ে উঠলো তরী। চোখ চিকচিক করে চাইলো বড় ভাইয়ের দিকে।
___________________________________

ইশারায় কথা বলছে উপমা, রিদিতা, শুভ্রতা আর রুপা। শুভ্রতা হুট করে দাড়িয়ে চোখ দিয়ে ইশারা করতেই ওরা এক সাথে ধরে তিলোত্তমাকে শুভ্রতার জায়গায় বসিয়ে দিলো। আচমকা আক্রমণে হকচকালো তিলোত্তমা। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চেয়ে রইলো শুভ্রতার দিকে।
~উঠে দাঁড়ালি কেনো? (তিলোত্তমা)
~তোকে বসানোর জন্য। (শুভ্রতা)
~মানে?(তিলোত্তমা)
~তোর বিয়ে আজ। (রিদিতা)
~এ্যা? (তিলোত্তমা)

উপমা হেসে ইশারা করলো,
~এ্যা নয় হ্যা। ঐদিকে তাকা।

তিলোত্তমা তাকিয়ে দেখলো পর্দার ওপাশে চন্দ্রের স্থানে এখন মাহতাবের অবয়ব দেখা যাচ্ছে। তন্ময় আর তমা মেয়ের দুপাশে বসলেন। তমা মেয়ের মাথা পরম স্নেহে হাত বুলিয়ে বললেন,
~মাহতাবকে পছন্দ এটা বলতে এতো দ্বিধা কেনো?
~পছন্দের জিনিস হোক বা মানুষ, হাত ছাড়া করতে নাই। তা না হলে আফসোস থেকে যায়।

বাবার কথায় ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো তিলোত্তমা। ঠোঁট ফুলিয়ে ডাকলো,
~বাবা..

তন্ময় হাসলেন। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
~বিয়েতে রাজি না হলে বল। বিয়ে ক্যান্সেল করে দেই।

তিলোত্তমা ফট করে বাবার বুক থেকে মাথা তুলে চোখ পিটপিট করে চাইলো। ওর এই চাহনীতে শব্দ করে হেসে উঠলেন তন্ময়। মাহবুব এর উদ্দেশ্যে বলেন,
~তা ভাই সাহেব, বিয়ে শুরু করা যাক?

আশহাব মাহবুব হেসে সায় দিতেই বিয়ে পড়ানো শুরু করলেন কাজী। মাহতাবকে কবুল বলতে বললে মাহতাব চন্দ্রের মতোই সময় নিলো না। তবে তিলোত্তমাকে কবুল বলতে বলায় সে কেঁদে বুক ভাসিয়ে দিতে লাগলো। বিরক্ত হলো রিদিতা। বিড়বিড় করে বললো,
~ অদ্ভুত! ভালোবাসার মানুষকে বিয়ে করতে এতো কান্না করা লাগছে কেনো? মাহাদ ভাই হলে না বুঝতাম যে এন্টি রোমান্টিক রোবটকে বিয়ে করতে হচ্ছে বলে কাঁদছে। কিন্তু এ তো মাহতাব ভাইকে বিয়ে করছে। তাহলে এমন গঙ্গা যমুনা বানাচ্ছে কেনো? হুহ? কিরে উপ তোর গায়ের সেন্ট এর ঘ্রাণ এতো সুন্দর হলো কি করে?

বলেই নাক কুঁচকে ঘ্রাণ টেনে পাশ ফিরলো রিদিতা। মাহাদ বুকে হাত গুজে, কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ ফেলে তার দিকেই চেয়ে। রিদিতা ভেবেছিলো সে উপমাকে বলছে। পাশে যে মাহাদ স্বয়ং দাড়িয়ে তা খেয়ালই করেনি সে। রিদিতা কাঁদো কাঁদো মুখ করে এদিক ওদিক চেয়ে উপমাকে খুঁজলো। উপমাকে শুভ্রতার সাথে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতেই সে আড়চোখে মাহাদ এর দিকে তাকালো। মাহাদকে আগের মত রাগী ভঙ্গিতে তার দিকে চেয়ে থাকতে দেখে রিদিতা ঠোঁট উল্টালো। এর পর ভ্যা ভ্যা করে কাঁদতে কাঁদতে শুভ্রতার কাছে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো। আচমকা এমন জড়িয়ে ধরায় শুভ্রতা “ভূত!ভূত!” বলে ভয়ে দু কদম পিছিয়ে গেলো। নাক টানতে টানতে তার দিকে তাকালো রিদিতা। পিট পিট করে তার দিকে একবার চেয়ে পুনরায় দু হাত মেলে দিয়ে রুপাকে জড়িয়ে ধরলো। এক হাতে শুভ্রতাকে দেখিয়ে অভিযোগের সুরে বলল,
~মীরজাফর! মীরজাফর! বিয়ের এখনো আধ ঘন্টাও হয়নি, আর এই মেয়ে আমাকে এখনি জড়িয়ে ধরতে দিচ্ছে না। এ্যা!!!!!!

রিদিতার এমন কাজে নাক কুচকে তাকালো শুভ্রতা। উপমা আস্তে করে বলল,
~এরে আবার কোন ভূতে ধরলো?

শুভ্রতা দু হাত ছড়িয়ে কাঁধ বাঁকাতেই রুপা চেঁচিয়ে উঠলো,
~এ রে বইন গরম লাগতাছে ছাড় আমারে! ছাআআড়!!!!

ওদের কান্ড দেখে ফিক করে হেসে দিলো মাহাদ। পরক্ষনেই গলা খাকারি দিয়ে নিজেকে গম্ভীর রূপে ফিরিয়ে আনলো। ডানে বামে চেয়ে দেখলো তাকে কেউ হাসতে দেখেছে কিনা।
_________________________________

ফুলে সজ্জিত ঘরে বসে আছে শুভ্রতা। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘরে প্রবেশ করলো চন্দ্র। বেশ খুশি মনে গান গাইতে গাইতে। শুভ্রতা সালাম দিতেই সেও গলা খাকারি দিয়ে সালাম এর জবাব দিলো। এর পর কিছুক্ষণ চুপ থেকে ধপ করে খাটে উঠে শুভ্রতার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো। হটাৎ এমন করায় বেশ চমকালো শুভ্রতা। কিছুটা পিছিয়ে যেতে চাইলেও আর যাওয়া হলো না। চন্দ্র কোলে মাথা রেখে ঘোমটার নিচ দিয়ে শুভ্রতার মুখ পানে চেয়ে বললো,
~মাশাহ’আল্লাহ!

শুভ্রতা লজ্জামিশ্রিত এক হাসি দিলে চন্দ্র বুকে হাত চেপে বললো,
~হায়! এভাবে হেসো না তো বউ! আমার বুকের হার্টবিট বেড়ে যায়।

একটু চুপ থেকে আবারো বললো,
~ফ্রেশ হয়ে এসো নামাজ পড়বো।

নামাজ শেষে চন্দ্র একটা বক্স আর একটা ব্যাগ এনে আরাম করে শুভ্রতার পাশে বসলো। শুভ্রতা তাকাতেই চন্দ্র ভ্রু নাঁচালো। শুভ্রতা ভ্রু নাঁচাতেই চন্দ্র ব্যাগটা শুভ্রতার হাতে দিয়ে বললো,
~এটা তোমার মোহরানা।

শুভ্রতা ব্যাগটা চন্দ্রের দিকে দিয়ে বললো,
~এত টাকা দিয়ে আমি কি করবো? আপনার কাছেই রেখে দিন।

চন্দ্র ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
~মোহরানা বর বউকে দেয়। বউ বরকে না। তোমার টাকা তুমি জানো। এটা তোমার হক, তাই দিচ্ছি।

শুভ্রতা ঠোঁট বাঁকালো। চন্দ্র এবার বক্সটা হাতে দিয়ে বলল,
~এটা তোমার বিয়ের উপহার।

শুভ্রতা বক্সটা খুলেই দেখতে পেলো একটা কোরআন শরীফ, একটা জায়নামাজ, একটা তসবিহ। শুভ্রতা কোরআন শরীফে হাত বুলাতেই চন্দ্র বললো,
~পছন্দ হয়েছে।
~পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর উপহার।

চন্দ্র মিষ্টি হাসলো। একটু চুপ থেকে ছটফটে গলায় বললো,
~এবার আমার গিফট দাও।
~আপনার গিফট?
~অবশ্যই। আমি তোমাকে গিফট দিলাম। তুমি দিবে না? বাসর কি তোমার একার নাকি? আমার গিফট দাও!

গাল ফুলালো চন্দ্র। নারী পুরুষের সমান অধিকার তবে উপহার সে একা দিচ্ছে কেনো? বউয়ের থেকে তারও তো উপহার পাওয়া উচিত। শুভ্রতা বেকুবের ন্যায় কিছুক্ষণ বসে থেকে হুট করে চন্দ্রের গলা জড়িয়ে ধরলো। চন্দ্রের গালে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিয়ে নাকে নাক ঘষে বললো,
~এই যে আমি, আমিই তো আপনার উপহার। আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমাকে স্বযত্নে রাখবেন।

চন্দ্র মাথা ঝাকিয়ে হাসলো। ভালো জব্দ করেছে তার বউ তাকে। সে দু হাতে শুভ্রতাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
~আমার জীবনের সেরা উপহার তুমি। সারাজীবন যত্নে রাখবো।

হুট করেই চন্দ্র বলে উঠলো,
~এ্যাই বউ ঘুরতে যাবা?

শুভ্রতা চোখ পিটপিট করে বললো,
~এখন?

চন্দ্র মাথা ঝাঁকালো। বললো,
~সারপ্রাইজ আছে। চলো।

বলেই শুভ্রতাকে কোলে নিয়ে হাটা ধরলো। শুভ্রতা ভয় পেয়ে চন্দ্রের গলা জড়িয়ে ধরে বললো,
~কি করছেন কি? পড়ে যাবো তো! নামান আমাকে! কেউ দেখলে কি ভাববে?

চন্দ্র নামালো না। তাকে কোলে নিয়ে নির্দ্বিধায় হেঁটে দরজার কাছে যেতে যেতে বলল,
~চন্দ্রের কোল থেকে তার বউ পড়ে যাবে? হোয়াট আ জোক! এত ফিট থেকে লাভ কি যদি তোমার মত পিচ্চিকেই কোলে নিতে না পারি? আর কে কি ভাববে? নিজের বউকেই তো কোলে নিয়েছি। দেখি, দরজাটা খোলো।
_______________________________

মাহতাবের জন্য নির্ধারিত ঘরে খাটের ঠিক মাঝখানটায় বসে আছে তিলোত্তমা। মনে এক রাশ ভয় আর লজ্জা নিয়ে। শুভ্রতাদের বাসরঘর সে নিজ হাতে ফুল দিয়ে সাজিয়েছে। অথচ তার ঘরে ফুলের ছিটে ফোটাও নেই। সারাঘর মোমবাতি আর বিভিন্ন আর্টিফিসিয়াল জিনিস দিয়ে সাজানো। দুই জনের বাসরঘর দুই রকম দেখে বেশ অবাকই হলো তিলোত্তমা। তরী তিলোত্তমার শাড়ির কুচি সুন্দর করে সাজিয়ে দিতে দিতে বলল,
~কিছু মনে করো না ছোট ভাবী। আহনাফ ভাইয়ের বাসর ঘরের মতো তোমাদের ঘরে ফুল নেই বলে মন খারাপ করো না। তোমার বরের গোলাপ ফুলে অ্যালার্জি আছে বুঝলে! তার ওপর তার আবার ফুল পছন্দ না। জিদ ধরে কোনো মতে আর্টিফিসিয়াল জিনিস দিয়ে ঘর সাজিয়েছি। তুমি বললে ফুল দিয়ে সাজিয়ে দিতে পারি। ভাইয়াকে একটা অ্যালার্জির ওষুধ ধরিয়ে বলবো সকালে খেয়ে নিতে। বলবো?

তিলোত্তমা ফট করে জবাব দিলো,
~একদমই না। তার কোনো প্রয়োজন নেই।

তরী দাঁত কেলিয়ে হাসলো। তিলোত্তমার মাথার ঘোমটা টেনে দিয়ে বললো,
~ভাইয়া যেকোনো সময় আসবে। আমি যাই গেট ধরি গিয়ে। টেক কেয়ার, অল দ্যা বেস্ট।

চঞ্চল পায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো তরী। তরীর যাওয়া দেখে তিলোত্তমা আলতো হাসলো। মনে মনে আওড়াল,
~অর্ণব ভাইয়ের কপালে জুটবেও একটা প্রজাপতি। সারাদিন ছোটাছুটি, উড়াউড়ি। বাপ দাদা ১৪ গুষ্টির নাম মনে করিয়ে ছাড়বে।

দরজার বাহির থেকে তরীর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। দর কষাকষি চলে সকলের সাথে মাহতাবের। মাহতাব ওদের হাতে টাকা ধরিয়ে ঘরে প্রবেশ করলো। মাহতাব আসতেই নড়েচড়ে বসলো তিলোত্তমা। সালাম আদান প্রদান করে মাহতাব গায়ের শেরওয়ানি খুলতে খুলতে তিলোত্তমার উদ্দেশ্যে বললো,
~ফ্রেশ হয়ে এসো, একসাথে নামাজ পড়ি।

তিলোত্তমা তরীর রেখে যাওয়া শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। সেদিকে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মাহতাব। নামাজ শেষে চন্দ্রের মতোই মোহরানা আর কোরআন শরীফ উপহার দিলো মাহতাব। দু ভাই বসে বসে ঠিক করেছে বাসর ঘরে বউকে কি উপহার দেওয়া যায় যেটা অপছন্দ হওয়ার কোনো উপায়ই নেই। অবশেষে ঠিক করলো কোরআন শরীফ দিবে। এর থেকে সুন্দর উপহার পৃথিবীতে আর একটা হয় না। তিলোত্তমা আলমারিতে কোরআন শরীফ রেখে এসে মাহতাবের সামনে বসলো। সে মুখ কাঁচুমাচু করে বললো,
~আমার মত আপনিও নিশ্চয় জানতেন না এই বিয়ের কথা? আমি দুঃখিত। মা-বাবা এমন হুট করে বিয়ের সব আয়োজন করে ফেলবে আমার জানা ছিলো না। আমার পছন্দই তাদের কাছে সবার আগে তাই হয়তো আগে পিছে কিছুই ভাবেনি। আমিও তখন কি মনে করে রাজি হয়ে গেছি। আপনি প্লীজ রাগ করবেন না। আপনি চাইলে আপনি আমাকে ছে…

হুট করেই তিলোত্তমার ওষ্ঠে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলো মাহতাব। হটাৎ এমন হওয়ায় বরফের ন্যায় জমে গেলো তিলোত্তমা। চোখ বড় বড় করে চেয়ে রইল মাহতাবের দিকে। মাহতাব চোখ রাঙিয়ে বললো,
~আমার ইচ্ছা না থাকলে এতক্ষণে আমার বউ হয়ে বসে থাকা দূর এই ঘরেও পা রাখতে পারতে না তুমি। ফার্দার যেনো এমন কথা না শুনি যাতে আমার মেজাজ বিগড়ে যায়। উল্টা পাল্টা কথা বলে রাগ উঠালে খবর আছে। বিয়ের প্রথম রাতেই উনি আসছেন ছাড়াছাড়ির কথা বলতে। সাহস কত বড়! চাপড়ে দাঁত ফেলে দিতে ইচ্ছা করছে। বউ মানুষ, মারতেও বুক কাঁপবে। এই জন্য এখন থেকে এভাবেই মুখ বন্ধ করাবো। চলবে?
______________________________

চন্দ্র শুভ্রতাকে সোজা জমিদার বাড়ির পেছনের পুকুর ঘাটের সামনে নামালো। আশেপাশে জোনাকির আলোড়ন, আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ, বিশাল পুকুরে অসংখ্য ফুটন্ত পদ্ম। ঘাটেই একটামাত্র নৌকা ভিড়িয়ে রাখা। নৌকায় একটা গিটার আর একটা হারিকেন রাখা। হারিকেনে নিভু নিভু এলো জ্বলছে। দু হাতে চন্দ্রের বাম হাত চেপে চারদিক উৎফুল্ল চোখে দেখতে লাগলো শুভ্রতা। প্রকৃতি কন্যা ব্যস্ত প্রকৃতি দেখতে আর প্রেমিক পুরুষ ব্যস্ত তার প্রেয়সীর হাসিমাখা মুখ দেখতে। প্রকৃতির এমন মনোহর দৃশ্য দেখে উল্লাসিত চোখে চন্দ্রের দিকে তাকাতেই চন্দ্র প্রশ্ন করলো,
~নৌকায় চড়বে?

শুভ্রতা উৎসুক হয়ে দ্রুত মাথা ঝাঁকালো। শুভ্রতাকে নৌকার ঠিক মাঝখানটায় বসিয়ে নিজেই নৌকা চালাতে লাগলো চন্দ্র। নৌকায় একটা হারিকেন আর একটা গিটার রাখা। শুভ্রতা হাত বাড়িয়ে পদ্ম ফুল ছুয়ে দিতে লাগলো। পুকুরের মাঝামাঝি এসে নৌকা থামলো চন্দ্র। কয়েকটা পদ্ম তুলে শুভ্রতার সামনে ধরলো। শুভ্রতা ফুল নিতেই চন্দ্র শুভ্রতার সামনে বসলো।

~আপনি গান গাইতে পারেন, তাই না? একটা গান গেয়ে শুনাবেন?

দু হাতে গিটারটা চন্দ্রের দিকে এগিয়ে দিলে চন্দ্র দেরি না করেই গিটারে সুর তুলে গান ধরলো। চাহনি তার প্রেয়সীর দিকে। বিয়ের পর তার প্রথম আবদার। না মানার উপায় নেই।

Muskurane ki wajah tum ho
Gungunane ki wajah tum ho
Jiya jaaye na, jaaye na, jaaye na
O re piya re
Jiya jaaye na, jaaye na, jaaye na
O re piya re

O re lamhe tu kahin mat jaa
Ho sake toh umr bhar tham jaa
Jiya jaaye na, jaaye na, jaaye naa
O re piya re
Jiya jaaye na, jaaye na, jaaye naa
O re piya re.. piyaa re….

সম্পূর্ণ গান শেষ করতেই হাত তালি দিলো শুভ্রতা। ঠোঁটে অমায়িক হাসি। চন্দ্র মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে দেখলো সে হাসি। মন বললো সময় এখানেই থেমে যাক। এই রাত এর শেষ না আসুক। সে প্রাণ খুলে উপভোগ করুক প্রতিটা মুহূর্ত। শুভ্রতার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পর মুহূর্তে কি হয় বলা যায় না।
___________________________________

🍂পরদিন বিকেলে🍂

চিত্রার সাথে রান্না ঘরে বসে আছে তিলোত্তমা আর শুভ্রতা। সে আর নাফিসা বেশ কয়েকবার বলেছে ওদের এখানে বসে না থেকে রূপাদের কাছে যেতে। ওরা যায়নি। ঠাঁয় বসে রয়েছে চিত্রাদের সাথে।

~ভাবী, ভাবী, রিদিতা আপা বেহুঁশ হয়ে গেছে জলদি এসো।
~~~
চলবে~

(আহা! চন্দ্র শুভ্রতার সাথে সাথে তিলোত্তমা আর মাহতাবেরও বিয়ে হয়ে গেলো। কিন্তু আপনাদের পোস্ট পড়ে কমেন্ট না করার অভ্যাস গেলো না😒 আমি বুঝবো কি করে আপনাদের ভালো লাগছে কিনা? এমন করলে লেখার আগ্রহ অনেকটাই কমে যায়। তারপর আপনারাই বলেন আমি দেরি করে গল্প কেনো দেই। কিপটামো না করে কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন গল্পটা কেমন লাগছে। হ্যাপি রিডিং~)