গল্পঃ ডাক্তার বর
.
– সরি, আব্বু এখন বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব না ।
– সম্ভব না মানে??
” অফিসে যাওয়ার আগেই মেয়ের সাথে বসে নাস্তা করতে বসেছিলো। যদিও তিন ছেলে মেয়ে তবে এখন মেয়ে বাড়িতে আছে। আর মেয়েকে ছাড়া কখনোই একা খান না। নাস্তা করতে করতে মেয়েকে বিয়ের কথা বললো।
” বর্ষা তাঁর বাবার মুখে বিয়ের কথা শুনে নাস্তা না করেই বললো;
– বাবা, এখনো আমার পড়াশোনা শেষ হয়নি। আর বিয়ে বয়স তো পেরিয়ে যায় নি?
– এখনো কি তোমার বিয়ের বয়স হয়নি?
– আব্বু,প্লিজ তুমি বুঝতে চেষ্টা করো। বিয়ে মানে দায়িত্ব। আমি পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। এখন বিয়ে করে ওইসব ঝামেলায় পড়তে চাই না।
– বর্ষা,মামুনি তুমি…….
– সরি মামুনি, এই মুহূর্তে বিয়ে করা অসম্ভব।
” বর্ষা তাঁর মা-বাবার মুখের উপর কথা গুলো বলেই উঠে চলে গেলো। দুই ছেলের মাঝে বর্ষা একমাত্র আদরের মেয়ে। এতোদিন যা বলেছে তাই করেছে। এখন বিয়ের বয়স হয়েছে ভালো পাত্র পাওয়াতে রাজি হয়ে যায় বাবা। আর মেয়েকে বলতেই রেগে ওঠে চলে গেলো।
” মেয়ে উঠে যেতেই ভয়ে ভয়ে স্বামীর দিকে তাকালেন। মানুষটি মোটেও খারাপ না তবে যখন খুব রেগে যান তখন একদম চুপ হয়ে যায়। আজও তাঁর ব্যাতিক্রম হয়নি। টেবিলের খাবার গুলো শুধু হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করে যাচ্ছে। তবু স্বামীর মতিগতি বুঝে নরম সুরে বললো;
– আমি বলছি কি………
– একটা কথা বলবা না। এতোদিন তোমার কথা শুনেই মেয়েকে এতো আদর দিয়ে মাথায় তুলেছি। তোমাদের যা ইচ্ছে তাই করো। এই ব্যাপারে আমাকে আর কিছু বলবে না।
” মিসেস খান কে কথা গুলো বলেই খাবার রেখেই উঠে চলে যায়। স্বামীর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না। যখন শান্ত হবে তখন না হয় বুঝিয়ে বলবেন। সবকিছুই রেখে হাত দিয়ে মেয়ের রুমের দিকে পা বাড়ালো। মেয়েকে উঁকি দিয়ে একনজর দেখে নিলো।
” বিছানায় শুয়ে আছে বই নিয়ে। বড্ড পাগলী মেয়ে,একমাত্র মেয়ে পাগলী গুলো বড্ড বেশি ভালবাসে। সারাটি বাড়ি মাতিয়ে রাখে, মেয়েকে হাত ছাড়া করতে চাই না। তাই বিয়ে তে মত দিতে চাই না। তবে কি করবে? মেয়ে হয়ে জন্মেছে যখন পরের ঘরে যেতেই হবে।
মেয়ের দিকে তাকিয়ে আড়ালের চোখের পানি গুলো মুছে বললো;
– মামুনি,আসতে পারি?
” বর্ষা ডাক শুনেই পিছনে তাকিয়ে দেখে তাঁর আম্মু আর একমাত্র সবচেয়ে ভালো বন্ধু দরজায় হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। বর্ষা তার আম্মুকে দেখেই বললো;
– মামুনি,তুমি আমার রুমে আসবে তাও অনুমতি নিতে হবে?
” মেয়ের কথা শুনেই হাসি মুখে রুমে এসে পাশে বসে বললো;
– বাহ রে। আমার মেয়েটি বুঝি বড় হয়নি সেই খুকিই রয়ে গেলো?
– হুম, এই জন্য বুঝি বিয়ে দিয়ে তাড়িয়ে দিতে চাচ্ছো?
” মিসেস খান মেয়ের অভিমানী কথা শুনে হাসতে হাসতে বুকের মাঝে নিয়ে বললো;
– না রে। তুই আমাদের কাছে সবসময়ই সেই ছোট্ট খুকি হয়েই থাকবি। তবে মেয়ে হয়ে যখন জন্ম নিয়েছিস পরের ঘরের একদিন না একদিন যেতেই হবে।
– তাই বলে এতো তাড়াতাড়ি…….
” মেয়ের কথা শুনেই আগলে নিয়ে বললো;
– কে বললো এতো তাড়াতাড়ি? দেখলেই কি বিয়ে হয়ে যাবে? তুই দেখা করে আসতি পারিস। তবে বাবার সাথে এমন ব্যবহার করা একদম ঠিক হয়নি।
” মায়ের কথা শুনেই জড়িয়ে ধরলো হাসি মুখে বর্ষা। মায়ের মনের খবর ঠিক বুঝতে পারে। বর্ষার জন্য কি করতে চাচ্ছেন। তাই মাকে জড়িয়ে ধরেই বললো;
– সরি, মামুনি। তুমি আব্বুকে বলে দাও কালই দেখা করবো আব্বুর কথা মতো।
– এই তো লক্ষী মেয়ের কথা। তুমি পড় আমি যাই।
– মামুনি……
” বর্ষাকে আদর করেই রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। বর্ষা এই বার বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করে। দেখতে অনেক সুন্দর বিধায় অনেকেই তাঁর পিছু পিছু ঘুরঘুর করে। তবে কাউকে তেমন কোনো সুযোগ দেয় নি। সবাই জানে বড্ড বদমেজাজি আর রাগী। একবার এক ছেলে বলেছিলো বান্ধবীদের নিয়ে তো ইচ্ছে মতো ধুলায় দিলো। সেই থেকে ভয়ে কোনো ছেলে কাছে আসতে সাহস পায় না।
” এই বিয়ে টাও ভাঙতে হবে, বর্ষা নিজেই নিজেকে মনে মনে বললো। এই জন্য অবশ্য বর্ষা খুব দক্ষ্য কেনো না এর আগে তাঁর বান্ধবীর বিয়ে টা সে ও তাঁর বান্ধবীরা ভেঙে দিয়েছিলো।
” বর্ষার বান্ধবী রাইসা একদিন মন খারাপ করে ক্লাসে আসে। বর্ষা কারণ জানতে চাইলে হু হু করে কান্না শুরু করে দেয়। বর্ষা তখনি রেগে গিয়ে বললো;
– এমন বাচ্চাদের মতো ভ্যা ভ্যা না করে কি হয়েছে সেটা বল?
” বর্ষার ধমক শুনে অনেক কষ্টে কান্না থামিয়ে বললো;
– বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। বরও ঠিক করে রেখেছে। আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না।
” রাইসার কথা শুনেই বর্ষা সহ তাঁর বান্ধবীরা হো হো করে হেসে উঠলো। বর্ষা হাসি থামিয়ে বললো;-
– এই কথা। আমি ভেবে ছিলাম না জানি কি? আচ্ছা তুই কাল তোর হবু বর কে বল দেখা করতে বাকি টা আমরা বুঝবো। কি রে তোরা কি বলিস?
” বর্ষার কথা শুনেই সবাই সায় দিলো। পরের দিন বর্ষার কথা মতো রাইসার হবু বরের সাথে সবাই দেখা করতে চলে গেলো। আগে থেকেই প্ল্যান করা ছিলো। সেই মোতাবেক রাইসার হবু বর আসতেই সবাই একসাথে কাছে গিয়ে বসতে চাইলো। এই দেখে বেচারা ঘাবড়ে গেলো। একজন এটা খাবে অন্য জন আরেকটা শুরু করে। বেচারা বার বার শুধু চেয়ে দেখছে। রাইসা প্ল্যান মোতাবেক বাধা দিলেও কে কার কথা শুনে। হবু ঝিঝু বলে কথা।
” তবে রাইসার হবু বর যে টাকলা ছিলো কে জানতো। পরচুলা লাগিয়ে এসেছিলো। যেই না বর্ষা মাথায় হাত দিলো চুল হাতে চুলে আসলো। তা দেখে সবাই হাসতে হাসতে শেষ। বেচারা আর একমুহূর্তেও বসে থাকেনি। ডেবিট কার্ড,ফোন গাড়ির চাবি রেখে কোনো রকমে পালিয়ে মানস্মান বাঁচালো। আর বাকি কাজ টুকু করতে পারে নি। এই নিয়ে অবশ্য অনেক রাগিয়ে ছিলো রাইসা কে।
” সেদিনের কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই ফোন দিলো তাঁর বান্ধবী রিয়াকে। রিয়া ফোন ধরতেই সবকিছুই খোলে বললো। রিয়াও হাসি মুখে সবাইকে ঝবর খবর পৌঁছে দিতে কাজে লেগে গেলো।
” সেই সকাল থেকে বর্ষা একা একা বসে আছে। অনেক রাগ হচ্ছে এই দিকে তাঁর হবু বর মানে যার সাথে বিয়ের কথা ডাক্তার সাহেব এখনো আসার খবর নেই অন্য দিকে তাঁর বান্ধবীদেরও আসার খবর নেই।
– হ্যালো..আপনি কি বর্ষা?
“বর্ষা বিরক্ত হয়ে রিয়াকে ফোন করতে যাবে তখনি বর্ষাকে কথা গুলো বললো। বর্ষা নিজের নাম শুনেই পিছনে ফিরে দেখে তাঁর স্বপ্নের রাজকুমার যেনো দাঁড়িয়ে আছে।
” চোখে চশমা,বেশ লম্বা আর দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে নীল শার্ট পড়ায়। বর্ষা একনজর দেখেই কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে। কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না। বর্ষা যে মাঝে মাঝেই এমন কাউকে স্বপ্নের মাঝে দেখতো তাঁর জন্য ঘোড়া ছুটিয়ে আসছে। বর্ষাকে ঘোড়ায় নিয়ে আবার কোথায় যেনো হারিয়ে যাচ্ছে।
– এই যে আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন?
-হ্যা…
” বর্ষাকে আবার ডাক দিতেই বাস্তবে ফিরে আসলো কল্পনার জগত থেকে। তবে কথা বলার খেই যেনো হারিয়ে ফেললো। কি বলবে বুঝতে পারছে না শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো।
“বর্ষার কথা শুনেই বললো;
– যাক অবশেষে তাহলে পেলাম। সরি দেওয়ার হওয়ার জন্য।
– হে ওকে….
– আমি রুদ্র….. আপনি তো বর্ষা চৌধুরী।
– হুম….
” তারপর একে একে কথা বলে যাচ্ছে দুজনে। দুজন বললে ভুল হবে রুদ্র সব কথা বলে যাচ্ছে। বর্ষা শুধু মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে যাচ্ছে। কি অসম্ভব ভাবে সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারে। বর্ষা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো। চোখ ফেরাতে পারছে না।চোখ দুটি যেনো অসম্ভব মায়াবী,বর্ষাকে কাছে টানছে।
” এর মাঝেই বর্ষার বান্ধবীরা এসে হাজির। বর্ষা রাগ করলেও রুদ্র মানিয়ে নিলো। সবার সাথেই পরিচিত হয়ে গেলো। বর্ষার মুখে কোনো কথা আসছে না। একসময় কথার খই ফুটলেও এখন কোনো কথা নেই।
“রুদ্র সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যাওয়ার সময়ই হঠাৎ বলে উঠলো;
– রিয়া,আপু এই দিকে শুনে যান।
” রিয়া বর্ষার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে উঠে চলে গেলো। কিছুক্ষণ গোমড়া মুখে ফিরে আসলো। সবাই ঘিরে ধরলো কি হয়েছে জানার জন্য। রিয়া বর্ষার দিকে কালো মুখে তাকিয়ে বললো;
– বর্ষা, তোকে পছন্দ হয়নি। তাই বিয়ে করতে পারবে না। তাই আংকেল আন্টির মন খারাপ করতে না চাওয়ার জন্য বলেছে তুই যেনো গিয়ে বলিস।
– কি? আমাকে পছন্দ হয়নি মানে? যেখানে প্রত্যকে টি ছেলে আমার জন্য পাগল আর এতো বড় কথা…..
” রিয়ার কথা শুনেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। বর্ষার কাটা গায়ে যেনো বান্ধবীরা নুন লাগাতে লাগলো। অনেক কথা বলতে লাগলো। তুই তো কোনো পাত্তাই পেলি নাহ।
” বর্ষা রাগে গজগজ করে চলে আসে। বাসায় এসে অনেক চিৎকার চেচামেচি করে। আমাকে পছন্দ হয়নি এতো বড় কথা। এর শেষ দেখে ছাড়বো…..বর্ষার চিৎকার শুনে কেউ কোনো কথা বলেনি। দু’দিন হয়ে গেলোও বাসা থেকে কি রুম থেকে বের হয়নি। কারো সাথে কথা বলেনি এতো বড় অপমান মেনে নিতে পারছে না। শেষমেশ ফন্দি আটলো। এই ছেলেকেই চাই,এই ডাক্তার কেই তাঁর বর করবে। যেমন করেই হোক ডাক্তার বর চাই।
“- বর্ষা বস্তার মুখ কি খোলবো?
– হ্যা খোল…..শালার ব্যাটা কে……………..
( চলবে)