ভালোবাসার বহুরূপ পর্ব শেষ

#ভালোবাসার_বহুরূপ
পর্ব:০৫(শেষ)
লেখনীতে: Farhana Alam Fimu

ছেলেটা পকেট থেকে মোবাইল বের করে কিছু কনভার্সেশন দেখালো।যেখানে আমার নাম এবং ছবি দিয়ে আইডি ওপেন করা।এবং প্রণয় জাতীয় কথাবার্তা লেখা।আমি অবাক হলাম।আমার ফেসবুক আইডি আছে,তবে আমি লগইন করিনা অনেকদিন।লগইন করলেই অনেকে অনেক কথা জিজ্ঞেস করে।আমার অসহ্য লাগে এসব।তাই লগইন ই করিনা।আর আমি নাকি ফেসবুকে একটা ছেলের সাথে প্রেমও করে ফেলেছি!
এসব ভাবতে না ভাবতেই তানিম আমাকে সজোরে থাপ্পড় দিলো।
-আমি দোষী ছিলাম।সব দোষ স্বীকার করে তোমার পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে তোমাকে কত তোষামোদ করে এ বাড়িতে আনলাম।আর তুমি সব কিছুর এই মূল্য দিলে?আমি তো পাপী।আমি কো খারাপ।তুমি তো তলে তলে আরও খারাপ!
-তানিম বিশ্বাস করো….
-চুপ!!তোর মুখে বিশ্বাস শব্দটাই শুনতে চাইনা আমি।তুই বিশ্বাসঘাতক।চরম বিশ্বাসঘাতক তুই।
তানফি এগিয়ে এসে বলল,
-ছিঃ ভাবি!আমার হাজব্যান্ডের সামনে আমার মানসম্মানও রাখলেনা।ও জেনে গেছে আমার ভাবী এরকম!!
মা এসে বললেন,
-একদিন তো খুব বড় বড় কথা বললে,আমি ইলিনাকে কি শিক্ষা দিচ্ছি তা নিয়ে কথা বললে।নিজেই তো ঠিক নাই তুমি।এখন ইলিনা কি শিখছে?
আমার সব স্বপ্ন মনে হচ্ছিলো!সেদিনই বাবা মাকে খবর দেয়া হলো।সেই ছেলেটা সব প্রমাণ দিয়ে চলে যায়।তার নাকি আমার মতো মেয়ের দরকার নাই!সে নাকি জানতো না আমি বিবাহিতা!!
ডিভোর্সের দিনও আমি ভাবছিলাম,তানিম তো জানে আমি কেমন।এতোকিছুর পরও আমি তাকে গ্রহণ করেছি আর সে ভুল বুঝে কোনোভাবেই ডিভোর্স দিবেনা আমাকে।কিন্তু না,তানিম সব রেডি করতে থাকে। নিজের উপর ঘৃণা হচ্ছিলো তানিমের প্রতি এখনো ভালোবাসা কাজ করায়।
ইলিনাকে কোর্ট জিজ্ঞেস করেছে সে কার কাছে থাকতে চায়।ইলিনা বলেছে বাবার কাছে!
আমাকে একাই আসতে হলো বাবার বাড়িতে এক ডিভোর্সি মেয়ে হয়ে।
কিন্তু আমি জানি,ইলিনা আমার কাছে আসবে।কারণ,এটা তো মোহ।এক ধরণের মোহে জড়িয়ে গেছে ইলিনা।আমার অভাব বুঝবে প্রতিটা পদে পদে।আর অবশ্যই আসবে আমার কাছে।কিন্তু তানিম?সে তো আসবেনা!আমি যেমন তাকে সুযোগ দিয়েছি সে তো দিবেনা।দোষ না করা সত্ত্বেও সে দোষ দিচ্ছ আমাকে তাহলে তার থেকে আর কি আশা করবো আমি?
এরপর আমি আবার পড়ালেখা শুরু করতে চাই।কিন্তু কিছুতেই মন বসাতে পারিনি।পরে কিছু হাতের কাজ শিখে নিজের হাত খরচ চালানোর মতো টাকা রোজগার করি।বাবার ঘাড়ে বসে কতদিন খাবো!

তার মধ্যে একদিন সন্ধ্যায় বাসায় সেই ছেলেটা আসে।এসেই আমার পায়ে ধরে।
-আপু আমাকে মাফ করে দেন।সেদিন আমাকে নাটক করতে বলেছে তানিম ভাই।আমি উনার ভার্সিটির জুনিয়র ছিলাম।আমার টাকার খুব দরকার ছিলো তাই এসব করতে বাধ্য হয়েছি।আমাকে টাকা দিবে বলেছে।টাকা দিয়েছেও।আমার মায়ের ওপেন হার্ট সার্জারির জন্য টাকা নিয়েছি।কিন্তু এই হারাম টাকায় আমার মায়ের চিকিৎসা হলেও মাকে বাঁচাতে পারিনি।
আবারও মুচকি হাসলাম।প্রকৃতি প্রতিশোধ নেয়!

আমি সেদিন পারলে চরিত্রহীনা ট্যাগটা উঠাতে পারতাম।কিন্তু আমি তানিমের মুখোমুখি হতে চাইনি আর।
আমার ডিভোর্সের প্রায় নয়মাস পর একদিন তানফি আসে ইলিনাকে নিয়ে।কেমন জানি বিধ্বস্ত লাগছিলো ওকে।
ও এসে যা বলল তারপর আমি আবার মুচকি হেসে ভাবলাম,প্রকৃতি প্রতিশোধ নেয়!

যেদিন তানিম আমাকে আর ইলিনাকে নিতে এসেছিলো তার এক সপ্তাহ আগে সে জানতে পারে আমার শ্বশুর ইলিনা হওয়ার পর ইলিনার নামে ৫লাখ টাকা রাখেন।সেই টাকা ছিলো উনার জমি বিক্রির টাকা।এটা আমি জানতাম।বাবা আমাকে সবাইকে বলতে না করেছিলেন।এরা এই ৫লাখ টাকার লোভেই এসেছিলো আমাদেরকে নিতে।আস্তে আস্তে ইলিনাকে ওদের বশে করে নেয় প্রথমে।তারপর আমাকে ডিভোর্স দিতে নাটক সাজায়।

আসলে রুমা চলে যাওয়ার পর তানিমের সম্পর্ক হয় ওর কলিগের সাথে।এটা যেনো তার নেশা!আমার মনে হচ্ছিলো,রুমা নিজে চলে না গেলে তানিমই ওকে ছেড়ে আরেকজনের কাছে যেতো!স্বভাবই তো এরকম!
তানিম তার কলিগকে কথা দিয়ে রেখেছে যে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে সে ওকে বিয়ে করবে।সেই মেয়ে আবার ডিভোর্সি ছিলো।বনিবনা হয়নি তার হাজবেন্ডের সাথে তাই ডিভোর্স হয়ে গেছে।
এদিকে তানিম আমাকে ডিভোর্স দিতে অনেক দেরি করে ফেলে।আর সেই মেয়ে অন্য রিলেশনে জড়িয়ে যায় যা তানিম জানতো না।মেয়েটা তানিমের সাথেও রিলেশন কন্টিনিউ করছিলো।আমাকে ডিভোর্স দেয়ার পর তানিম অন্তুকে (সেই কলিগ) বিয়ের জন্য বলে।কিন্তু অন্তু এই সেই অজুহাত দেয়।অন্তু আবার ওই ছেলেকে বিয়ে করে এর মধ্যে।এদিকে তানিমও অন্তুকে খুব চাপ দিচ্ছিলো।হয়তো সে অন্তুকে নিয়েই বাকি জীবনটা কাটানোর প্ল্যান করেছিলো।অন্তু প্রতিদিন তানিমের দ্বারা ডিস্টার্বড হচ্ছিলো।পরে সে তার বর্তমান হাজবেন্ডকে সব জানায়।তানিম যদি অন্তুর বিয়ের কথা জেনে যায় তাহলে কোনো অঘটন ঘটাবে বলে অন্তুর ধারণা হয়।

একদিন তানিমকে পুলিশ এসে এরেস্ট করে।তানিমের বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা দেয় এক মেয়ে।কোর্টে সাক্ষী দেয় মেয়ের দুই বান্ধবী।অথচ তানিমের একই কথা,তানিম মেয়েগুলোকে চিনেনা।
এবং তানিমের থেকে মুক্তি পেতে এসব অন্তুর চাল যে এটা বুঝতে আমার অসুবিধে হয়নি।আবার হয়তোবা ঘটনা সত্যিও!তানিমের তো কোনো বিশ্বাস নেই।
তানিম আজ ২মাস জেলে।তানফির হাজবেন্ড এসব জানার পর তানফিকে প্রচন্ড সন্দেহ করতে লাগে।যার ফলাফল হয় ডিভোর্স!!
এসব টেনশন সহ্য করতে না পেরে মা স্ট্রোক করে প্যারালাইজড!!
তানফি এসেছে ইলিনাকে দিয়ে যেতে।আমি যেনো মেয়েটাকে তাদের পরিচয় না দিই।সে যেনো না জানে তার বাবা কেমন ছিলো!
আমি শুধু বলেছি,
-কি অদ্ভুত!তুমি,তানিম আর আমি তিনজনই বিনাদোষে দোষী হলাম!
তানফি চোখ নামিয়ে হাঁটা শুরু করে।
আমি বসতেও বলিনি তাকে।এদের জন্য আর কোনো জায়গা নেই আমার।আমি সিঙ্গেল মাদার হবো।আমার ইলিনার গায়ে এসবের কোনো আঁচও আসতে দিবো না।
সেদিন আমি ফেসবুক লগইন করে ম্যারিড স্ট্যাটাসকে সিঙ্গেল করে দিলাম।
সবার খোঁচা দেয়া মেসেজের উচিত জবাব দিলাম। সবশেষে এটাই বলবো,
বিশ্বাস করে আমি ভুল করিনি, বরং বিশ্বাসঘাতকতা করে তুমি ভুল করেছো!
আর বিশ্বাসঘাতক কখনোই ভালো থাকেনা।

সমাপ্ত🖤

(আপনাদের মনের মতো ইন্ডিং দিতে পেরেছি কিনা জানিনা,তবে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।আর কেমন লেগেছে জানাতে ভুলবেন না।
আবারও আসবো নতুন গল্প নিয়ে।)

(।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here