তাসের ঘর পর্ব -০৭

#তাসের_ঘর
#নীরা_আক্তার
#পর্ব-৭
“রূপ আমি আবারও বলছি তনুর সাথে আমি তোমার বিয়ে দেবো না।বার বার একই কথা বলে আমাকে বাধ্য করোনা কঠিন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে”

এতোটুকু কথা বলেই আন্জুআড়া বানু বসার ঘর থেকে উঠে নিজের ঘরে চলে যান।
রূপ আর সাফায়েত সাহেব সেখানেই বসে আছেন।

তনু আর রূপের বিয়েটা ইন্ডাইরেক্টলি সাফায়েত সাহেবের উদ্দ্যেগেই হয়েছিলো।
সেদিন মামনীর আর তনুর কথোপকথনের পর রূপ বাড়ি থেকে বার হয়ে তার ছোট চাচা সাফায়েত সাহেবকে কল করেন।সবটা জানান তাকে।সাফায়েত সাহেব সেদিন রূপকে শুধু বলেছিলো
“যেকোনো কিছুর বিনিময়েই হোক, নিজের ভালো থাকাকে কখনো বিসর্যন দিস না।ভালোবাসার মাঝেই তো ভালোথাকা”

আজই সাফায়েত সাহেব ফিরে যাবেন তার কর্ম স্থলে।
যাবার আগে ভেবেছিলেন রূপ আর তনুর ব্যাপ্যারটা বড়আপাকে জানিয়ে দেবেন।কিন্তু আন্জুআড়া বানুর অসুস্থতা আর বিষন্ন মুখ দেখে তিনি বলতে চেয়েও কিছু বলতে পারেন না।হাজার হোক বড় আপা তো মায়ের মতো।আরেকটু সময়ই নিয়েই না হয় তনু রূপের ব্যপ্যারটা মেটানো যাবে।

কিছুদিন যাবদ আন্জুআড়া বানুর শরীর মন কোনোটাই ভালো চলছে না।আজকাল তার অতীতের কথা বড্ড বেশী মনে পড়ে।মনে পড়ে অতীতে কাটানো ভালো সময়গুলোর কথা।
তন্ময় তাকে বড্ড ভালোবাসতো।

*****
বাড়ি থেকে পালানোর পড় আন্জুআড়া বানুর পরিবার আন্জুআড়া বানুর মুখ দেখতে নারাজ ছিলো।
তবে তন্ময় সবসময় তাকে খুশি রাখা চেষ্টা করতো।
সব কিছু যেন স্বপ্নের মতো ছিলো।কোথাও ভালোবাসার কমতি ছিলো না।
বিয়ের বছর পার হতে না হতেই আন্জুআড়া বানু জানান তিনি মা হতে চলেছেন।
খবর টা পেয়ে তন্ময় আন্জুআড়া যতোটা না খুশি হয়েছিলো তার চেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলো আন্জুআড়া বানুর বাবা আর ভাই।

সব রাগ অভিমান ভুলে তারা ছুটে এসেছিলো তাদের প্রিয় আন্জুর কাছে।একমাত্র মেয়ে নিজের মাঝে লালন করছে ছোট্ট একটা প্রান এর চেয়ে খুশির আর কি হতে পারে।
তবে সবটা গল্পের মতো হলেও মাঝে ঘন কালো মেঘ বাসা বাঁধে।

আন্জুআড়া বানুর তখন সাত মাস চলছিলো।সেদিন বাহিরে খুব বৃষ্টি হচ্ছিলো।তিনি অবশ্য তখন বাপের বাড়িতেই ছিলেন।
তন্ময় অফিসে।বাহিরে বৃষ্টি দেখে হটাৎ করেই তার সাধ জাগে বৃষ্টিতে ভেজার।তন্ময় ফোনের ওপার থেকে এক নাগাড়ে বারণ করেই যাচ্ছিলো তাকে।এই সময় একদম ঠান্ডা লাগানো যাবে না।
না মানে না।
তন্ময় বেশ রাগারাগি ও করছে।
কিন্তু আন্জুআড়া তো প্রথম থেকে একরোখাজিদ্দি। কে শুনে কার কথা। আস্তে ধীরে পা টিপে টিপে হাটা দেয় ছাদের দিকে।রূপ তখন চর বছরের বাচ্চা।ফুপ্পী কে ছাদে যেতে দেখে সেও ছুট লাগায় পিছু পিছু দুজন স্বাদ মতো ভিজে নেয় আষাঢ়ের প্রথম বর্ষনে।

এবার বেশ শীত করছে।আবার বাহিরে ঝড় ও শুরু হয়ে গেছে বৃষ্টির বেগ যেন বেড়েই চলেছে।

এখন নিচে নামার পালা।দুজন ধরা ধরি করে নামার সময় হুট করেই পা স্লিপ করে আন্জুআড়া বানুর দুম করে সিড়ি বেয়ে নিচে পড়তে থাকে। ছোট্ট রূপ সেখানেই ভয় পেয়ে কান্না করতে থাকে।
বাহিরে প্রচুন্ড ঝড় চলছে।আর আন্জুআরা বানু নিচে পড়ে ছট পট করছে।
তাদের চিৎকারে এক এক করে বেরিয়ে আসতে থাকে বাড়ির লোকজন।
তন্ময়কেও সাথে সাথে ফোন করা হয়
*****

আজ সকাল থেকে আন্জুআড়া বানুর কেন যেন বার বার নিজের মায়ের কথা মনে পড়ছে।সে সাফায়েতের কাছে যায়।বায়না ধরে গ্রামের বাড়ি যাবার জন্য।সেখানে তাদের বাবা মায়ের কবর আছে।
একবার জিয়ারত করে আসবে।কাছ থেকে দেখে আসবে এতেই হয়তো মন একটু শান্ত হবে।

যদিও আজ সাফায়েত সাহেবের বিদেশ ফিরে যাবার কথা ছিলো তবুও বড় আপার আবদার রাখার জন্য রাজি হয়ে যায়।কাল সকাল সকাল বেড়িয়ে যাবে সবাই।
কিন্তু তনুর কি হবে। তনুর তো ফাইনাল এক্সাম চলছে।সে তো যেতে পারবে না।

তনু মা কে জানিয়ে দেয় একটা দিন সে বন্ধুর বাড়িতে থাকবে।তাতে তার কোনো অসুবিধা হবে না।

তনু ছাড়া বাড়ির সবাই যাবে তাদের গ্রামের বাড়িতে।

বেশ সকাল সকাল সবাই তৈরী হয়ে নেয়।উদ্দেশ্য গ্রামের বাড়িতে।তনু মা মামীদের বিদায় দিয়ে রওনা হয় কলেজে। বেরুনোর আগে তৈরী হয় নতুন সমস্যা।রূপের নাকি কি একটা কাজ পড় গেছে।এখন সেও নাকি যেতে পারবি না।

রূপের মা বার কয়েক রূপ কে বলে,
-কোনো ভাবেই কি কাজটা পরে করা যায় না?একটা দিনেরই তো ব্যাপ্যার।কাল বিকেলেই ফিরে আসবো
রূপ একটু অসহায় ভঙ্গীতে উওর দেয়
-না মা সম্ভবনা।তেমন হলে আমি নিজেই চলে যেতাম।কিন্তু সম্ভব না

আন্জুআড়া বানু কিছু বলে না।চোখ মুখ শক্ত করে দাড়িয়ে আছেন তিনি।

রূপ মামনীর দিকে তাকি ছোট্ট করে বলে
“সরি মামনী”

সবাই বেরিয়ে যায় বাড়ির উদ্দেশ্যে।

প্রায় ৩টা নাগাত তনুর এক্সাম শেষ হয়।তনু ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে আছে,সঙ্গে তার বান্ধবীও।উদ্দেশ্য একটা সি এনজি পেলে সেটা নিয়ে রওনা হবে ফ্রেন্ডের বাসায়।রাতটা সেখানেই থাকবে।

হটাৎ তাদের সামনে এসে দাড়ায় একটা কালো গাড়ি।
রূপ গাড়ি থেকে নেমে আসে।তনু তো অবাক
-যাও নি?
-হুম গেছিতো
-তাহলে?
-রূপ গ্রামে গেছে আর আমি রূপের ভুত
-কি সব বলো
-দেখতোই তো পাচ্ছিস তোর সামনে দাড়িয়ে।
-গেলেনা কেন?
রূপ শান্ত স্বরে জবাব দেয়,
-তোর জন্য
পাশে তনুর বান্ধবী হেসে উঠে।
সে রূপ তনুর ব্যাপ্যারে সবই জানে।বিয়েতে সাক্ষী ও ছিলো
রূপ তনুর ফ্রেন্ডকে বাসায় নামিয়ে দেয়।তনুও যেতে চাইলে তনুর হাত চেপে ধরে
-কোই যাস?
-কেন নিশুর বাড়ি
-কেন?
-ওমা আজ না ওর সাথ থাকার কথা!বাড়িতে তো কেউ নেই কোই থাকবো!
-কেন এই যে আমি আছি,আমার সাথে থাকবি।।

তনু আর কিছু বলে না।অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রূপের দিকে।
তারা দুপুরের খাবারটা একসাথে বাহিরেই খেয়ে নায়।
তনু বাড়ি ফিরে, গোসল শেষ করে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।ভীষন ক্লান্ত।
শোয়া মাত্র সে ঘুমিয়ে পড়ে।
রূপ বার কয়েক তনুকে দেখে যায়।সে এখনো ঘুমিয়েই আছে।প্রায় সন্ধ্যে নাগাত তনুর ঘুম ভাঙ্গে। কিচেনে গিয়ে কফি বানিয়ে হাটা দেয় রূপের ঘরে। গোটা বাড়িতে এখন শুধু তারা দুজনই আছে।
রূপ বিছানায় বসে ফোন চাপছে।
তনুকে দেখেও সে মাথা তুলছে না তনু রূপের কাছে গিয়ে বসে।
-নাও কফি বানিয়েছি
-দরকার নেই।যা ঘুমা।রাত হইছে
-মানে কি
-কিছু না।

তনু বুঝে গেছে রূপ রেগে আছে।তনু মুখ কাচুমাচু করে উওর দেয়
-একটু টায়ার্ড ছিলাম তো।
-ঠিক আছে
-রাতে কি খাবে?কি রান্না করবো?নাকি বাহিরে থেকে কিছু অর্ডার করবো
রূপ একটু নড়েচড়ে বসে তনুর মুখের দিকে তাকিয়ে উওর দেয়
-তনু বাহিরে যাবি ডিনার করতে?ক্যান্ডেল নাইট ডিনার!

তনু হাসে।হেসে উওর দেয় চলো যায়।
দুজন রেডি হয়।তনু প্রথমে রেগুলার একটা ড্রেস পড়লেও পরে রূপের জোড়াজুড়ি তে একটা শাড়ি পড়ে নেয়।দুজনে বেশ কাপ্যাল কাপ্যাল লাগছে আজ।

রাত খাবার শেষে করতে তনু বাড়ি যেতে চায়।
বেশ রাত হয়ে গেছে।রূপ ভ্রু কুচকে তনুকে বলে উঠে,
-বাড়ি যাবো কেন?আজ রাতে আমরা এখানেই থাকবো।
তনু অবাক হয়ে বলে
-এখানেই থাকবো?
-হুম্ম এখানেই।

তনু একবার নিজের দিকে তাকায় একবার রূপের দিকে তাকায়,তারপর প্রশ্ন করে
-আর জামা কাপড়? এইসব পড়েই থাকবো নাকি?
রূপ একটু বিরক্ত হয়ে উওর দেয়
-দরকার নাই

খাবার শেষ করে রূপ আর তনু হাটা দেয় রূমের দিকে।তনু ঘরে ঢুকতেই অবাক হয়ে যায়।কি সুন্দর ঘরটা।চারদিক কি সুন্দর করে সাজানো।চারদিকটা কাচা ফুলের গন্ধে মো মো করছে।
কিন্তু এক মিনিট…
তনু কিছু একটা মনে পড়তেই রূপের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়।রূপ লজ্জায় মাথ নিচে করে দাড়িয়ে আছে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here