তাসের ঘর পর্ব -০৬

#তাসের_ঘর
#নীরা_আক্তার
#পর্ব-৬
বারান্দার রেলিং ধরে দাড়িয়েছিলেন একটি মেয়ে,লাফ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি।ঠিক যখন লাফ দিতে যাবেন তখনই কেউ যেন তার হাতটা টেনে ধরে।
তিনি বেশ বিরক্ত নিয়ে পেছন ফিরে তাকান,
একটা লম্বা,শ্যম বর্নের ছেলে তার হাত ধরে আছে।
তিনি বেশ বিরক্তের সাথে বলে উঠেন,
-আপনি? কি চাই?ছাড়ুন।আমি লাফ দিবো
***
জীবনের প্রথম চাকরির ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য বসে আছে,তন্ময়।
গ্রামের সহজ সরল সাদা মাটা ছেলে তন্ময়।কলেজের এক পরিচিত টিচারের রেফারেন্সে এতোদূর আসা, চাকরিটা তার প্রয়োজন!!
তন্ময় ওয়েটিং রুমে বসে বসে অপেক্ষা করছিলো তার ডাক পরার।এমন সময় হটাৎ করেই একটা মেয়ে ছুটে এসে দুম করেই তাকে প্রশ্ন করে বসে
-আচ্ছা শুনুন ৫ তলা থেকে লাফ দিয়ে কি মরে যাওয়া যায়?
তন্ময় মেয়েটার দিকে তাকায় পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলায়
মেয়েটা কান্নাকাটি করে নাক মুখ লাল করে ফেলেছে। দৌড়িয়ে আসার জন্য এখনো হাপাচ্ছিলো মেয়েটি।তিনি একটু মাথা চুলকিয়ে উওর দেয়,
-হ্যা যায় তো?৫ তালা কেন ৩ তালা থেকেও লাফিয়ে পড়লেও মারা যাওয়া সম্ভব যদি হায়াত না থাকে তো।
মেয়েটা একটা ঢোক গিলে আবারও প্রশ্ন করে
-কোনো ভাবে বেঁচে যাবো না তো?ধরু একটা হাত ভেঙ্গে বেঁচে গেলাম বা পা ভেঙ্গে বেঁচে গেলাম
তন্ময় একটু বিরক্ত হয়।মেয়েটা আবারও নিজে থেকেই বলে উঠে
-আসলে আমি মরতে চাইছি।আপাতোতো ঐ যে ঞ বারান্দা থেকে লাফানোটাই সহজ বলে মনে হচ্ছে।

কথাটা বলেই তিনি খোলা বারান্দার দিকে চলে যান।তন্ময় প্রথমে মজা হিসেবে নিলেও মেয়েটির কর্মকান্ড তার ভালো ঠেকছে না।
মেয়েটি যখন লাফ দেবে তার আগেই তন্ময় তার হাত চেপে ধরে।

মেয়েটা ছিলো আন্জুআড়া বানু তনুর মা।আর তন্ময় তনুর বাবা।

এটাই ছিলো তনুর বাবা মায়ের প্রথম পরিচয়!!

তন্ময় আন্জুআড়া বানুকে ধরে নিয়ে বসায় একটা চেয়ারে।একটু সংকোচের সাথে প্রশ্ন করে
-আপনি মরতে চান কেন?
তিনি একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে বলে উঠে..
-প্রেমে ছ্যাক্যা খেয়েছেন কখনো?খেলে বুঝতেন কেমন লাগে
-মানে
-আজকে আমার বাবার সাথে আমার প্রেমিকের পরিচয় করানোর কথা ছিলো।কতো কি করে বাবাকে রাজি করিয়েছিলাম।অথচ একটু আগে খোজ নিয়ে জানতে পারি সে আজকেই একটা বিয়ে করছে!এবার বলুন আমার কি বেঁচে থাকা উচিত?আহ্ কি লজ্জা।বাবার কাছে মুখ দেখাবো কিভাবে!

তন্ময় বেশ জোড়ে জোড়ে হেসে উঠে
-ওহ এই জন্য মরতে চান?
-হো তা নয় তে কি।আমি বাবাকে এই মুখ কি করে দেখাবো!!
-দেখাতে হবে না মাস্ক পড়ে নিন তহলেই তো হয়।
আন্জুআড়া বোকার মতো তাকিয়ে থাকে।
-আমি ব্যর্থ
-না আপনি অনেক লাকি।তাই তো এমন একজন মানুষের হাত থেকে বেঁচে গেলেন।
-তাই নাকি?
-হুম।যান বাড়ি চলে যান।এইসব চিন্তা বাদ দিয়ে।
আন্জুআড়া বানু উঠে দাড়ান।এমনি তেও তার সুইসাইড করার মতো সাহস ছিলো না।তারপর ফ্রি তে মোটিভেশান পেয়ে বেশ ভালো লাগছে।

আন্জুআড়া উঠে দাড়ায়,তন্ময় কে উদ্দেশ্য করে বলে
-আপনি কে?এখানে কি করছেন?(হাতের ফাইলটা লক্ষ্য করে নিজে থেকেই বলে উঠে)
চাকরি করতে এসেছেন?
-হু,এখন আপনি বাড়ি চলে যান
আন্জুআড়া তন্ময়ের হাত থেকে ফাইলটা নিজের কাছে নিয়ে নেয়।
তারপর তন্ময়কে উদ্দেশ্য করে বলে।
-আপনি আমায় হেল্প করেছেন আমিও আপনায় হেল্প করবো।
কথাটা বলে তন্ময়ের হাতে একটা ফোন নম্বর দিয়ে ছুট লাগায়।

তন্ময় এদিক সেদিক দেখেও আর মেয়েটিকে খুজে পায় না।

তন্ময় বেশ ঘাবড়ে যায়।ফাইলটাতে তার সব সার্টিফিকেটগুলো আছে।একজন মানুষের সারা জীবনের সম্বল।

তন্ময় এদিক সেদিক খোঁজাখুজি করে।বেশ অনেক্ক্ষণ খোঁজা খুজির পরও মেয়েটির দেখা পায়না।
হুট করেই তার মনে পড়ে মেয়েটি তো তাকে একটা নাম্বার দিয়েছিলো।
তন্ময় পকেট থেকে ফোন বার করে নাম্বারটা ডায়াল করে।নাহ্ ফোনটা তুলছে না।

তন্ময়ের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।চিন্তায় সে ঘামতে শুরু করেছে।না জানি কোন ফাদে পড়লো সে!

এই সব ছাই পাশ চিন্তা করতেই হাতের ফোনটা বেজে উঠে,
সেই নাম্বার থেকে ফোন এসেছে।
তন্ময় ফোনটা রিসিভ করে বেশ রাগা রাগি করতে থাকলে
অপর পাশ থেকে আন্জুআড়া বানু তন্ময় কে শান্ত হতে বলে।ইন্টারভিউ রুমে ডেকে পাঠায়!

তন্ময় সেখানে গিয়ে তো অবাক,
মেয়েটি সেখানেও।
ইন্টারভিউ রুমে গিয়েই তন্ময় প্রথম পরিচিত হয় আন্জুআড়া বানুর সাথে।সে ছিল এই অফিসের মালিকের একমাত্র মেয়ে।

পরিচয় পালা আস্তে ধীরে বাড়তে থাকে।একটু একটু করে দুজনই তলিয়ে যায় ভালোবাসার সমুদ্রে।
আন্জুআড়া আর তন্ময়ের সম্পর্ক টা প্রথমে কেউ মানতে না চাইলেও পড়ে সবাই মেনে নেয়।
গড়ে উঠে তাদের একটা সুখের সংসার।
****
এইসব এতো শত কথা ভাবতে ভাবতে আন্জুআড়া বানুর চোখ জল চলে আসে
সুখ তো আর সবার কপালে সহ্য হয় না।তার কপালেও সহ্য হয় নি….

সকাল সকাল তনুর ডাক পড়ে ছোট মামার ঘরে সাফায়েত সাহেবের ডাক পেয়ে তনু ছুট লাগায়।
সাফায়েত সাহেবের সাথে তনুর খুব কম কথা হয়েছে।তিনি তো জীবনের বেশি ভাগ সময়ই একা একা কাটিয়েছেন।

তনু মামার ঘরে যেতেই তিনি তনুকে নিজের কাছে বসিয়ে দেন।
তনুর হাতে একটা প্যাকেট আর কিছু চকোলেট দিয়ে বলেন এটা আমার ভাগ্নীর জন্য।তনু বেশ খুশি খুশি মনে সেটা হাতে নিয়ে উঠতে নিলে তিনি তনুর হাতে একটা সোনার চেইন ধরিয়ে দিয়ে বলে এটা এই বাড়ির একমাত্র বউয়ের জন্য

তনু এবার বেশ বড় সড় রকম ধাক্কা খায়।
একটা ছোট্ট ঢোক গিলে প্রশ্ন করে
-বউ মানে?
-বউ মানে আমাদের রূপের বউ।

তনুর মনের মধ্যে লজ্জা আর ভয় দুটোই কাজ করছে।তিনি তনুকে শান্ত করে বলেন
“আমি সব জানি ভয় পাস না।আমি শুধু চাই তোরা সুখে থাক। যে আগুনে আমি পুড়ছি সেই আগুন যেন তাদের কে ছুঁতেও না পাড়ে।তোর মাকে রাজি করানোর দায়িত্ব আমার।
তনু চুপ চাপ মামার কথা শুনছিলো।মনে মনে খুশিও হচ্ছিলো।।।

সাফায়াত সাহেব তার খুশিতে ফোঁড়ন কেটে বলে
-যাও রূপকে ডেকে দাও
-কেন ওকেও গিফট দেবেন?
তিনি হেসে উওর দেয়
-হুম্ম দেবো,যাও ডেকে দাও

****
অন্তর বার বার রূপ কে ফোন করছে।বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে তাকে।
রূপ ফোনটা রিসিভ করতেই ও পাশ থেকে অন্তর বেশ উত্তেজিত হয়ে রূপকে বলে উঠে
-রিপোর্ট তো চলে এসেছে।তারা বলেছ শুধু, ২৮% ম্যাচ করেছে যার অর্থ নেগেটিভ।

রূপ একটা বড় নিঃশ্বাস নেয়।

এরইমাঝে তনু আসে রূপের ঘরে।তনুকে দেখে রূপ ফোনটা কান থেকে নামিয়ে রাখে
তনু একটু সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায় রূপের দিকে।
-কার সাথে কথা বলছো শুনি
-তোর সতীনের সাথে!কি বলবি বল?
-উম,ছোট মামা ডাকছে, চলে এসে!!

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here