তাসের ঘর পর্ব -০৫

#তাসের_ঘর
#নীরা_আক্তার
#পর্ব-৫
রূপ পকেট থেকে ফোন বার করে অন্তরকে ফোন দেয়…
দুইবার রিং হওয়ার পর অন্তর কল রিসিভ করে
রূপকে একনাগাড়ে কয়েকটা গালি দিয়ে নেয়।
তারপর শান্ত হয়ে প্রশ্ন করে
-এবার বল কি চাই তোর?
-গালি দেওয়া শেষ
-কি চাই তাই বল।ক্রাশ তো ভাগিয়ে নিলি
-দেখা করতে চাই।
-কি দরকার?
-হেল্প লাগবে তোর
-পারবো না
-ভার্সিটি ক্যাম্পাসে আয় দেখা করি।
-পারবো না
-তুই না আমার বন্ধু,
*****
অন্তর আর রূপ সামনা সামনি বসে আছে কফি নিয়ে।অন্তর বেশ কড়া গলায় বলে
-সাত দিনের মধ্যে আমার জন্য মেয়ে খুজে না দিলে তুই আমার বন্ধু না।পরে আর বন্ধুত্বের দোহাই দিতে পারবি না
রূপ দাঁত কেলিয়ে জবাব দেয়
-মেয়ে দিয়ে কি করবি?
-প্রেম করব বিয়ে করবো,ভেবেছিলান তনুকে নিয়ে সুইডেন যাবো হানিমুনে,শা*লা তুই সব আশাই পানি ঢেলে দিলি।
-কল্পনাও করিস না। তাহলে শুধু পানি না কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দিবো।
-ওকে করসি না।অলরেডি বুকে যে আগুল লাগিয়েছিস সেটা আগে নেভানো ব্যবস্থা কর
-হু,
-এবার মেয়ে খুজে দে বিয়ে করবো।
রূপ পকেট থেকে ফোন বার করে একটা মেয়ের ছবি আর নাম্বার ধরিয়ে দেয়।
-মামনী দেখতে বলেছিলো।পটিয়ে ফেল আমি পৌছানোর আগেই বিয়ে করে নে….নয়তো দেখাগেলো তুই চিরকুমারই থেকে গেলি

কথাটা বলেই রূপ হাসতে শুরু করে
অন্তর দাঁত কটমট করতে করতে বলে
-এই জন্য ডেকেছিস,
-আরেনা মজা করছিলাম।আচ্ছা অন্তু তোদের ভার্সিটিতে সাইন্সল্যাব আছে না?আমার কিছু দরকার ছিলো।হেল্প করতে পারবি।
-আরে গোভেট আমি কি সাইন্সের টিচার নাকি?সাইন্সের স ও জানি না।কি হেল্প করবো?
-তাতে কি টিচার তো। আমার হেল্প চাই চাই মানে চাই কেমনে কি করবি তা তুই জানিস
-কিন্তু হেল্পটা কি?
রূপের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝড়ছে।
**
কলেজ ক্যান্টিন থেকে বার হতেই রূপ আর অন্তর মুখামুখি হয় তনুর
তনু এক বন্ধুর সাথে ক্যান্টিনে ঢুকছে
রূপকে দেখে তনুর মুখটা যতোটা ঝলমলে হয়ে উঠেছিলো অন্তর কে দেখে ততোটাই মলিন হয়ে উঠে!
লজ্জায় মাথা নিচু করে নেয়…..অন্তর ব্যপ্যারটা বুঝতে পেরে নিজেও লজ্জা পায় সেখান থেকে চলে যায়।

অন্তর চলে যাওয়ার পর তনু রূপের কাছে আছে
-আমার বর কি আমাকে চোখে হারাচ্ছে?
-না তো আমি তো আজকাল বউ ছাড়া পৃথিবীর সব কিছু চোখে দেখি।
-তো কি চায় এখানে? (মুখ ভেংচিয়ে)
-আমার জমজ বাচ্চা চায়
-ছিহ্ কি নোংরা!
-জমজ কমলালেবু খেলে তো আর জমজ বাচ্চা হয় না বাচ্চার জন্য আগে বাচ্চার বাবাকে লাগে।
-ছিহ্ কি নোংরা!

তনু রূপকে মুখ ভেঁচি দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়।

রূপ চলে যায় অন্তরের পেছন পেছন।
কাজটা খুব জরুরি

***
সন্ধ্যায় আন্জুআড়া বানু একা একা ঘরে বসে আছে।আজ ঘরের আলোটাও জ্বালায় নি।তনু ঘরে এসে অন্ধকার হাতরে লাইটা জ্বালিয়ে দেয়।
-তুমি ঘর এমন অন্ধকার করে রেখেছো কেন মা?
-ভালো লাগছে না।
-তোমার কি মন খারাপ মা?
-কি চাই তোর?
-চা করেছি তোমার জন্য।খাবে না?আদা দিয়ে মশলা চা বানিয়েছি।নাও

তিনি আর কিছু বলেন না।তনু মায়ের পাশে বেড সাইড টেবিলটাতে চায়ের কাপ রেখে দেয়।
তনু চলে যেতে নিলে তিনি তনুকে পেছন থেকে ডাক দেয়…
-তনু এখানে বস
মার হটাৎ এমন আদুরে কন্ঠ শুনে তনু বেশ খুশি হয়।একরকম ছুটে গিয়ে মায়ের পাশে গিয়ে বসে
-তনু জানিস আজকে তোর বাবার জন্মদিন। তোর বাবা বেঁচে থাকলে আজকে আমাকে বাহিরে নিয়ে যেতো ফুচকা খেতে।
তনু হাত দিয়ে মাথা চুলকায়।
-কোই জানি না তো।তুমিও তো কখনো বলো নি বাবার জন্মদিন!
-দিনটা খুব স্পেশাল ছিলো একটা সময়
-এখন নেই?
তিনি তনুর দিকে তাকান

-তুই দেখতে বাবার মতো হলেও স্বভাবগুলো একদম মায়ের মতো হয়েছে।চন্ঞ্চল,জেদ্দী,একগুয়ে সঙ্গে কৌতুহলী
তনু অবাক হয়ে বলে
-কোই মা তুমি তো শান্ত ভীষন শান্ত
আন্জুআড়া বানু নিজেকে সামলে নেন।
-তোর বাবা একটা সময় আমাকে খুব ভালোবাসতো।তোর বাবা এখানে এসেছিলো তোর নানা ভাইয়ের কাছে।তোর নানা ভাইয়ের অফিসে চাকরি করতো।তারপর ভালো লাগা, ভালোবাসা আমাদের বিয়ে…!!বড় ভাইজান অবশ্য বিয়েটার একেবারে বিপক্ষে ছিলো।আমি তোর মতই জিদ্দী ছিলাম।সবার বিপক্ষে গিয়ে তোর বাবাকে বিয়ে করেছিলাম।

তনু মুচকি হেসে উওর দেয়
-তারপর আমি…আমাকে পেয়ে বড় মামাও হয়তো খুশি হয়ে যায়।
-উহু,তারপর তুই নস!তারপর আমার ব্যার্থতা
-আমি কেন নই?গল্পে তো এমনটাই হয়
-জীবন গল্প নয়।পৃথিবীর সবচাইতে কষ্টের মুহূর্ত গুলো হলো ভালোবাসার মানুষের কাছে হওয়া অবহেলার সময়গুলো।।আর সেই সময়টাই তো তুই!!!

আন্জুআড়া বানু তনুকে চলে যেতে বলেন।
তনু আলো নিভিয়ে নিচে চলে আসে।

আজ সকাল থেকেই বাড়িতে ভালোমন্দ রান্না চলছে।আজ তনুর ছোট মামা দেশে ফিরবে।
রান্নার করছে আন্জুআড়া বানু আর শেফালী বেগম।তনুর ছোট মামী সারাদিন ঘর থেকে বার হয় নি। তিনি বাপের বাড়ি চলে যেতে চান তবে কেউ তাকে যেতে দেয় নি।

তনু আজ অব্দি ছোট মামা আর ছোট মামীর সম্পর্কটা বুঝে উঠতে পারে না।স্বাভাবিক স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক তো মনে হয় না।

সন্ধ্যে নাগাত তিনি বাড়ি ফিরে আসেন।রূপের ছোট চাচা সাফায়েত স্বভাবত বেশ শান্ত খুব কম কথা বলেন।
বাড়ির সবাই তার আসাতে বেশ খুশি।
তিনি সবার জন্য কিছু না কিছু হাতে করে নিয়ে এসেছেন
রাতের খাবার শেষে তিনি বেশ দ্বীধা দন্দের সাথে নিজের ঘরে যান।এই গোটা সময়টুকুতে তিনি একবারও নিজের স্ত্রীর মুখ দেখেন নি!

ঘরে তার স্ত্রী মানে রূপের চাচী বসে আছেন।

সাফায়েত সাহেব ঘরে যেতেই রূপের চাচী বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়
বালিস কাথা নিয়ে রওনা হয় স্টাডি রুমের দিকে
সাফায়েত সাহেব বাধা দেন,
-যেতে হবে না।
-হবে
-বললাম তো হবে না।
-হবে
-এতো অভিমান করতে নেই নীলু,
-ভালো তো বাসেন না মান অভিমানের পরোয়া করছেন কেন?দরকার নেই
-দরকার আছে, আমার দায়িত্ব তুমি
-শুধু দায়িত্ব বিয়ের ৮ বছর হতে চললো,সংসার কি জিনিস বুঝলাম না।না পেলাম স্বামীকে না পেলাম সন্তান সুখ!এমন জীবন কোন মেয়ে চায় শুনি!
-আমি আমার অতীতটাকে ভালোবাসি
-আর আমাকে?আমি তো বর্তমান।সরুন আমি চলে যাবো ঘর থেকে।
সাফায়েত তার স্ত্রী নীলুকে বিছানায় টেনে বসিয়ে দেন।
-মাত্র দুদিনের জন্য এসেছি। একটু কষ্ট করো।তারপর আবার চলে যাবো।আমার ঘর সংসার সবই তো তোমার
-সবই আমার শুধু আপনি ছাড়া।
-নীলু!

তিনি নাক ফুলিয়ে উওর দেন
-এমন তাসের ঘর গড়বো বলেই কি এসেছিলাম? চাই না এমন জীবন

সাফায়েত আর কিছু বলেন না।এতোদিনে নীলুর মনে অভিমানের পাহার জমে গিয়েছে

***
রাতে সবাই শুয়ে পরার পর তনু গুটি গুটি পায়ে ছাদের দিকে হাটা দেয়।
সে জানে রূপ এখন ছাদে তার জন্য অপেক্ষা করছে।এটা যেন তাদের রোজকার ডিউটি।ঘুমনোর আগে নিজেদের মতো একটা ছোট্ট জগৎ তৈরী করা।তারপর সেই জগৎটাতে একটু সময়ের জন্য বেঁচে থাকা।

তনু ছাদে গিয়ে এদিক ওদিক তাকায়ে দেখে কোই কোথাও তো রূপ নেই।
এপাশ ওপাশ খোঁজা খুজি করে।অন্ধকারের মাঝে দেখতে পাচ্ছে না ঠিক মতো তাই আলো জ্বালাতে যাবে বলে পোছন ফিরতেই রূপ তনুকে জড়িয়ে ধরে।
তনু বেশ ভয় পেয়ে যায়
-ভয় পেলি তনয়া?
-নাহ্ শুধু বুক ধরফর করছে
-কোথায় দেখি
-না দেখতে হবে না।
-ওকে দেখলাম না
-কি ঢং,ঠিক ছোট মামার মতো
-এখানে চাচ্চু এলো কোথা থেকে?
-কেন দেখো না ছোট মামা কেমন করে ছোট মামীকে! মামী খুব কষ্ট পায়।
-ছোট চাচ্চু কাওকে একটা ভালোবাসতো বাড়ির সবাই তাকে জোড় করে ছোট মেম্মীর সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়।চাচ্চুর সেখানে একটু প্রবলেন।হয়তো মানিয়ে নেবে
-আর কবে মানবে শুনি
-বুড়ো হলে
কথাটা বলেই রূপ হেসে উঠে
-আচ্ছা রূপ মা যদি তোমায় অন্য কারো সাথে বিয়ে দিয়ে দিতো তুমিও কি এমন করতে?আমার শোকে পাথর হয়ে যেতে?নতুন বউকে ভালো বাসতে না!
-পাগল নাকি বিয়ের পরদিনই বউয়ের সাথে ঠিক করতাম কয়টা বাচ্চা নেবো।আর বিয়ের দিন ঠিক করতাম হানিমুনে কোথায় যাওয়া যায়!
তোকে তো আমার মনেও পড়তো না
-রূপের বাচ্চা
-বাচ্চা হয় নি তো এখনো হবে!
-ধ্যাৎ
-তনু
-হু
-আমি কিন্তু আজকে স্মোক করিনি তুই চাইলে আমাকে চুমু খেতে পারিস।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here