তুমি আমার প্রাণ পর্ব -১৮

#তুমি আমার প্রাণ
#পর্বঃ১৮
#Mitu-মিতু

“বিয়েতে পরার জন্য জামাকাপড় নিয়েছিস?”

“হ্যা! তানিয়া আপু এনেছে।”

“কি করছিস এখন? ”

“বারান্দায় বসে আছি। ”

পৃথিবীতে নেমে এসেছে রাত। চেয়ারম্যান বাড়ির ঝিকিমিকি আলোয় আলোকিত চারিপাশ। বাড়ির ছেলে-মেয়েরা ছাদে আড্ডা দেওয়ার প্ল্যান করেছে। প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়ে তারা ছাদে যাচ্ছে রাতের আড্ডার আয়োজন করতে। রিশা নিজের ঘরেই ছিলো। সে এতো লোকজনের সামনে স্বস্তি পাচ্ছে না। তানিয়া সহ ওর সকল বন্ধু -বান্ধবীই রিশার থেকে অনেক বড়।তারা সবাই নিজেদেরকে নিয়েই ব্যস্ত তবে রিশার সাথে তাদের কথা হয়েছে। সবাই রিশাকে ছোট বোনের মতো ট্রিট করছে। বান্ধবীর বিয়েতে সবাই নিজেদের মতো কাটানোর চেষ্টায় আছে। রিশার এখন তেমন কোনো কাজ নেই।বারান্দায় বসে রাত্রি বিলাশ করছিলো সে। ফোনে কল আসায় রিসিভ করে কানে ধরে। কয়েকদিন হলো তার একটা অভ্যাস হয়েছে তা হলো রাতে একবার করে তাসরিফের সাথে বলা।রোজ তাসরিফ ফোন দিয়ে নিজের মতো কথা বলে আর ছোট ছোট প্রশ্ন করলে রিশা উত্তর দেয়।

“আমার অনুভূতি তুই উপলব্ধি করতে পারিস পুতুল…?”

“আমি এই বিষয়ে কথা বলতে চাই না ভাইয়া! আমি তোমাকে ভাই বলে জানি।তুমি প্লিজ এই ভাবনা থেকে সরে যাও। মামা-মামী,, মা,,বাবা কেউ মানবে না এটা।”

“সংসার আমি তোর সাথে করবো পুতুল!তোর মামা-মামী বা ফুপি করছে না। আমি আমার ভালো লাগাকে সবার উর্ধ্বে রাখি সবসময়।আমি আলোকিত হতে চাই তোর ভালোবাসায়। আর তুই আমার জীবনের আলো। পুতুল আমি তোকে জোর করতে চাই না শুধু চাই তুই আমাকে আমার মতো করে বোঝ।”

রিশা উত্তর দেওয়ার মতো কথা খুজে পায় না।নিজের মধ্যে সে ব্যাকুলতা উপলব্ধি করে। তবে সে তার ব্যাকুলতাকে প্রাধান্য দিতে চায় না।ছোট থেকে ওদেরকে সবাই ভাই-বোন বলেই জানে।আর সেখানে প্রনয় কেমন হয়? লোকে কি বলবে?রিশার চুপ থাকায় তাসরিফ অস্থির হয়।সে কিভাবে তার প্রাণকে পাবে নিজের করে। শুধু প্রাণকে না প্রাণের ভালোবাসাও তার চাই। স্বাভাবিক ভাবেই আমরা কাওকে ভালোবাসলে শুধু ভালোবাসা দিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারি না।ভালোবাসার বিনিময়ে ভালোবাসা চাই।

“আমি আগামী পরশু আসছি।তোর জন্য কি আনবো?”

“আমার কিছু লাগবে না ভাইয়া।আপু সেদিন অনেক কিছু এনেছে আবার মামী,,মা যেদিন গেলো মার্কেটে সেদিনও এনেছে। ”

“তাদের সাথে আমার কোনো সাথ নেই পুতুল। আমি যা আনবো তাই তোকে পরতে হবে।এবার থেকে আমার রঙ্গে নিজেকে রাঙ্গাতে প্রস্তুত হ। ছোট বলে নিজেকে কখনো তোর কাছে মেলে ধরিনি তবে এখন তুই যথেষ্ট পরিমাণ বুঝদার হয়েছিস।অন্যের অনুভূতি উপলব্ধি করার ক্ষমতা হয়েছে তোর। ”

রিশা কি বলবে সে ভেবে পায় না।

“ভাইয়া!এতোদিন স্বপ্ন দেখতাম তোমার বিয়ে নিয়ে। বউ পছন্দ করতে যাবো,,বিয়ের দিন তোমার সাথে বরযাত্রী যাবো। তানিয়া আপুর তো বিয়ে হয়ে যাচ্ছে এবার তুমি করো।আমরা আমাদের স্বপ্ন পূরন করি।”

“তুই রাজি হ।তাহলেই তো হয়। আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে দেখে বউ পছন্দ করবি। আর বরযাত্রী যাওয়া লাগবেনা।আমি তোর কাছেই আসবো।”

“এখন রাখি।ছাদে সবাই আড্ডা দেওয়ার আয়োজন করছে।আমি না গেলে আপু রেগে যাবে।”

“তানিয়ার পাশে বসবি। শোন পুতুল,,তোকে আবার মনে করিয়ে দিই সবসময় তুই এটা মনে রাখবি কেউ তোকে খুব করে চায়।অন্যের সাগরে কখনো ডুব দিতে যাস না তুই। ”

_____________

মুর্শিদা,,সাহেরা বানু,,তানিয়ার নানা বাড়ির আত্নীয় সবাই মিলে নিচতলায় বসে গল্প করছে। তাদের প্রত্যেকের ব্যবহার অমায়িক। মতিন সাহেবকে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে দেখে মুর্শিদা উঠে দাড়ালো এবং মতিন সাহেবের পেছন পেছন ঘরে গেলো।

“বুবু!রিশা তো বিয়ের উপযোগী হয়ে গেছে। বিয়ে দিবেন না? ”

তানিয়ার মামীর কথায় সাহেরা বানু মুখ তুলে তার দিকে তাকালেন।

“জন্ম,, মৃত্যু,, বিয়ে উপর ওয়ালার হাতে আপা।বিয়ের সময় হোক,,উপর ওয়ালার আদেশ আসুক।আর তাছাড়া তানিয়া,, তাসরিফের কত ছোট পুতুল। তানিয়ার তো হয়ে যাচ্ছে। তাসরিফের হোক তারপর না হয় পুতুল। ”

“কিছু মনে করবেন না বুবু।আসলে আপনার মেয়েটাকে আমার খুব ভালো লাগে।কি মিষ্টি একটা মেয়ে। আমার বোনের এক ছেলে আছে ইন্জিনিয়ার।বিয়ের জন্য মেয়ে খুজছে। আপু বললো চেনা -জানা কোনো ভালো মেয়ে আছে নাকি। রিশার কথা মাথায় আসলো তাই আগে আপনাকে বললাম।”

“এটা তো আর আশির দশক না আপা।এখন মেয়ে বা ছেলেদের নিজের একটা পছন্দ থাকে। বিয়ের ক্ষেত্রে তাদের মতামত টা আগে নেওয়া লাগে। এখন পুতুলের বিয়ে নিয়ে ভাবিছি না আপা।কিছু মনে করবেন না।

________________

সাধারণ একটা ঘটনা হলো আমরা যখন আড্ডা -মজা করি তখন সময় চোখের পলকে টিকটিক করে চলে যায়। দুচোখের ঘুম হয় উধাও।হাসি-আনন্দের সীমা থাকে না। চেয়ারম্যান বাড়ির ছাদে একযোগ হয়েছে প্রায় ত্রিশ জনের মতো ছেলে-মেয়ে।সবাই সবার পরিচিত। পূর্ব পরিচিত না হলেও একে-অপরকে তারা আপন করে নিচ্ছে খুব সহজে। রিশা তানিয়ার সাথে এতক্ষণ ঘাপটি মেরে বসে ছিলো। হবু বরের ফোন আসায় তানিয়া উঠে ছাদের এককোনায় দাঁড়িয়ে কথা বলতে লাগলো।তানিয়ার বান্ধবী সুমি,,নুপুর,, ঝিলিক,,তাঈবা,,ফাবিয়া,,প্রিয়া আরো যারা আছে সবাইকে রিশা আপু বলে ডাকে।সবার মধ্যে নুপুর কে তার একটু বেশিই পছন্দ হয়েছে। রায়হান ছাদে আসার পর থেকে রিশাকে লক্ষ করছে। তার মনে হয় এই মেয়েটা তাকে আকর্ষণ করে। রিফাত রায়হানের কানের কাছে এসে বললো

” তানিয়ার বোনটাকে কেমন লাগে তোর? আমার মনে হয় আবার ঘন্টি বাজলো। দেখলেই কেমন প্রেম প্রেম পায়।”

তাদের দুইমাথায় সাথে আরেক মাথা ছিলো চুপিচুপি। পেছন থেকে অয়ন বলে উঠলো

“কি বলছিস রিফাত! তোর তো অলরেডি পাঁচটা গার্লফ্রেন্ড চলমান তাও তোর অন্য কে দেখলে প্রেম পায়?”

“আরে ওগুলো সব অতীত এখন তানিয়ার পুতুল আমার বর্তমান। ”

তাসরিফ কারো কিছু বুঝে ওঠার আগেই রিফাতের ডান গালে থাপ্পড় বসিয়ে বললো

“অতীত নিয়েই তুই থাক!অন্যের বর্তমান নিয়ে তুই টানাটানি করিস না।”

উঠে দাঁড়ালো রায়হান। ফোন নিয়ে চলে গেলো ছাদের অন্য পাশে।

“ও আমায় মারলো কেনো অয়ন?”

“আমার মনে হয় তুই ভুল জায়গায় হাত দিয়েছিস। সামথিং ইজ রং।”

এতক্ষণ ঘটে যাওয়া কোনো কিছু ছাদে উপস্থিত কারো মাথায় ঢুকেনি।হঠাৎ করে থাপ্পড় আবার কানে কানে কথা।সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।

“হে গাইজ। চুপ না থেকে আবার শুরু হোক আড্ডা। ওই বলদদের দিকে নজর না দিলেও হবে।ওরা কখন কি করে তারা নিজেরাও জানেনা।”

নুপুরের কথায় সবাই আবার একজোট হলো।কি করবে কি করবে ভেবে তারা সিদ্ধান্ত নিলো লুডু খেলা যাক। রিশাকে নিচে পাঠিয়ে লুডু আনা হলো। চার দলে ভাগ হলো সবাই আর যারা খেলছে না তারা দর্শক হয়ে নিজেদের দলকে সাপোর্ট দিচ্ছে। তানিয়া,, রায়হান ছাদের দুইপ্রান্তে দুজন। ওরা বাদে সবাই লুডুতে ব্যস্ত।

“তোর বোনের জামাই হিসেবে আমাকে কেমন লাগবে তানি? সবার পছন্দ হবে তো?”

রায়হানের প্রশ্নে তানিয়া অবাক। এ ছেলে বলে কি?

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here