#তুমি আমার প্রাণ
#পর্বঃ১৯
#Mitu-মিতু
“তোর বোনের জামাই হিসেবে আমাকে কেমন লাগবে তানি? সবার পছন্দ হবে তো?”
রায়হানের প্রশ্নে তানিয়া অবাক। এ ছেলে বলে কি?
“কি বলছিস তুই? বোন,,জামাই?
” তোর ফুপির মেয়ের সাথে আমায় কেমন মানাবে?”
তানিয়া অবাকের শীর্ষচূড়ায়
“তোর হয়েছে টা কি?
” প্রেমে পড়েছি আমি।তোদের পুতুলের আর আমার মায়াকন্যার।”
________________
হলুদের দিন দুপুর ২ঃ৩০__
গ্রামাঞ্চলে বউ সাজানোর জন্য পার্লারের সুবিধা না থাকায় একটু অসুবিধা হলো বিয়ে বাড়িতে। তবে এই সমস্যার একটু সমাধান হলো তানিয়ার বান্ধবীদের দ্বারা। তাদের সাথে করে আনা মেকআপ কিট দিয়েই একে একে সবাই হলুদ সন্ধ্যার জন্য তৈরি হতে লাগলো। তানিয়ার মামাতো বোনদের থেকে শুরু হলো সাজানো পর্ব। তানিয়ার ঘরে সে একটু বিশ্রাম নিচ্ছে তাই সাজানোর কাজটা হচ্ছে রিশার ঘরে। একে একে প্রায় সবার সাজ কমপ্লিট হলো তানিয়া,,রিশা আর নুপুর বাদে। মূলত সাজানোর কাজটা নুপুর পরিচালনা করছে। বিয়ে বাড়ির সব যুবতী মেয়েরা লাল পাড়ের হলুদ শাড়ি পরেছে বাঙ্গালী স্টাইলে। শাড়ি পড়ানোর কাজটা করেছে সুমি আর রিশা। সবার সাজ শেষে সুমি,,নুপুর গেলো তানিয়ার ঘরে। অনেকক্ষণ হলো তারা ব্যস্ততায় সময় পার করেছে।এবার একটু রেষ্ট নিয়ে আবার বউয়ের সাজ শুরু হবে। রিশা নিচ তলায় যাচ্ছে সাহেরা বানুর কাছে। সকাল থেকে এতক্ষণ পর্যন্ত মায়ের সান্নিধ্য সে পায়নি। বিয়ের দিন রান্নার জন্য লোক ভাড়া করা হয়েছে আর এ কদিন বাড়ির মহিলারা রান্নার কাজটা সামলাবে।সবার ব্যস্ততার শেষ নেই। রিশা সিড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় রায়হানের সম্মুখীন হয়। একটা প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে তার প্রতি অন্যের নজর কেমন তা ঠিক অনুধাবন করতে পারে। রায়হান রিশাকে সালোয়ার কামিজে দেখে বললো
“তুমি এখনো তৈরি হওনি? হলুদের সময় তো হয়ে এলো।”
“আমার একটু দেরী হবে। ”
রায়হানের পাশ কাটিয়ে রিশা কোনোদিকে না তাকিয়ে সে সোজা রান্নাঘরে চলে গেলো। সাহেরা বানু সেখানে বসে মুরগী কাটছিলেন।রিশা পেছন থেকে জরিয়ে ধরে ঘারে মাথা রাখলো।
“একি পুতুল তুই এখানে? এখনো রেডি হোসনি কেনো? সময় কি তোর জন্য বসে আছে? ”
মামীর কথায় রিশা টু শব্দ করলো না।ছোট বাচ্চাদের মতো তারও মায়ের সান্নিধ্য ভালো লাগে। মায়ের মুখটা সে এতক্ষণ খুব মিস করছিলো।
“উফ মামী। কেবল সবার সাজুগুজু শেষ হলো।আমরা আর একটু পর সাজবো।আমি এখন আমার মায়ের কাছে থাকবো একটু।
মেয়ের কথায় সাহেরা বানু হাসলেন।রিশার দিকে তাকিয়ে বললেন
” পুতুল মা আমার! তুমি এখন যাও।আগুনের কাছে থাকতে হবে না। তুমি যাও আমি একটু পর তোমার ঘরে আসছি।”
“আচ্ছা ”
রিশা আবার দোতলায় নিজের ঘরে আসলো। ওয়াশরুমে গেলো ফ্রেশ হতে।একঘেয়েমি চলে এসেছে তার মধ্যে। অবেলায় ঘুম পাচ্ছে।
__________
“আম্মা!আমি এক মায়াকন্যার সাক্ষাৎ পেয়েছি। জানেন শুধু তাকিয়েই থাকতে মন চায় তার দিকে।”
“আমার বাচ্চা তাহলে প্রেমে পরলো বুঝি? ”
“আম্মা আমাকে বাচ্চা বলবেন না তো। এবার আপনি আমার বাচ্চার মুখ দেখার জন্য অপেক্ষা করেন। আমার এই মায়াকন্যাকে লাগবে আম্মা। আপনার দায়িত্ব ওকে আমার জীবনে এনে দেওয়া।”
” তোমার আব্বুকে বলে দেখি আগে। কেবল তো ভালো লাগলো।এই ভালো লাগার পেছনে একটু সময় দাও,,দেখো এই ভালো লাগা থাকে নাকি কেটে যায়। ”
“আম্মা! আমি কিন্তু আর ছোট নেই। কোনটা আমার প্রয়োজন তা আমি ঠিক বুজতে পারি।আর মায়াকন্যা আমার ভালো লাগা না। আমার ভালোবাসা।”
চেয়ারম্যান বাড়ির ছাদে হলুদ সন্ধ্যার জন্য ডেকোরেশন করা হয়েছে। ছাদেরই একপাশে দাঁড়িয়ে থেকে এতক্ষণ রায়হান তার মায়ের সাথে কথা বলছিলো। বাবা নিজের ব্যবসায় ডুবে থাকায় তার মা ই তার বন্ধু হয়ে দাড়িয়েছে। তার সবকিছু সে সর্বপ্রথম তার মায়ের সাথে শেয়ার করে। মাস্টার্স পড়ুয়া রায়হান রসুলপুরে এসে তার মায়াকন্যার মায়ায় ডুবেছে।
_____________
নুপুর তানিয়াকে হলুদ সাজে সাজিয়ে রিশাকে সাজাতে গেলে সে বলে
“আমি মায়ের কাছে থেকে শাড়ি পড়ি আপু।আর মেকআপ আমার তেমন পছন্দ না। এবার তুমি শাড়ি টা পড়ে নেও। ”
মেয়ে জাতির কাছে সবচেয়ে বড় উপহার হলো কন্যা সন্তান। প্রত্যেক টা মেয়েই কন্যা সন্তানের স্বপ্ন দেখে,, ভেবে রাখে কিভাবে তাকে পালন করবে। রিশা সাহেরা বানুর বড় আদরের। ছোটকালে আলাদা থাকায় নিজের ইচ্ছে মতো সাজানোর সুযোগ হয়নি কখনো তার। মেয়েকে সাজানোর সুযোগ পেয়ে তিনি আর বিলম্ব না করে খুশিমনে মেয়েকে শাড়ি পড়াতে লাগলেন।
“মা! ভালো করে পড়িয়ে দেও।পেট যেনো বের না হয়ে থাকে।”
সাহেরা বানু শাড়ি পরানো সম্পন্ন করলেন।
“চুলটা খোপা করে গাজরা লাগিয়ে দিলে আমার পুতুলকে আরোও ভালো লাগবে। ”
“কিন্তু আমার গাজরা নেই তো মা।”
একটা কথা মনে পড়ায় সে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। সাহেরা বানুকে বললো
“তুমি বসে থাকো এখানে। আমি আসছি।”
সাজ বিহীন শুধু শাড়ি পরে রিশা ছুটলো তাসরিফের ঘরের দিকে।তাসরিফ না থাকায় সে ঘরে তেমন যাওয়া আসা না করলেও বারান্দায় যে বেলীফুলের গাছ আছে তা রিশার জানা। অনেক দিন হলো গাছটা আনা,,এতোদিনে নিশ্চয় ফুল ফুটেছে। ফুল না ফুটলে তো আর রাতের দিকে গন্ধ পাওয়া যেতো না। বাড়ি ভর্তি আত্নীয় থাকায় সব ঘর এখন খোলা থাকে। যদিও তাসরিফ বাড়ি না থাকলে শুধু পরিষ্কার করার জন্য ঐ ঘর খোলা হয় তবে এবার তাসরিফের মামা-মামী ঐ ঘরে জায়গা নিয়েছে। বাইরে থেকে দরজা আটকানো দেখে রিশা দরজার লক খুলে সোজা বারান্দায় গেলো।বিকেল হওয়ায় কিছু ফুল ফুটেছে। গাছের সবগুলো ফুল রিশার শাড়ীর আচলে জায়গা পেলো কিছু সময়ের মধ্যে। ফুল নিয়ে সোজা সে নিজের ঘরে ফেরত গেলো।
“তুই ফুল কোথায় পেলি পুতুল?”
“ভাইয়ার বারান্দার গাছে ফুটেছে মা।”
সাহেরা বানু আর কিছু বললেন না। সুই-সুতার ব্যবস্থা করে তিনি ঝটপট মালা গেথে ফেললেন। রিশার চুলে খোপা করে বেলীফুলের মালা পেচিয়ে দিলেন খোপায়।রিশা মুখে কিছু দিতে না চাইলেও সাহেরা বানু চোখে কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক লাগিয়ে দিলেন।
“কি সুন্দর লাগছে আমার মেয়েকে।কারো নজর না লাগুক।”
__________
জমকালো আয়োজনের সাথে হলুদ সন্ধ্যা পালন করা হচ্ছে রসুলপুর চেয়ারম্যান বাড়িতে। মুরব্বিরা হলুদ লাগানো শেষে নিচে নেমে যাচ্ছেন আর কিশোর -কিশোরীরা ছাদেই অবস্থান করছে। আত্নীয় স্বজনরা একে একে সবাই হলুদ ছোঁয়াচ্ছে। অভ্যাস না থাকার কারনে এমন সাজে রিশা সবার সামনে যেতে একটু লজ্জা পাচ্ছিলো। আর যখন খেয়াল করলো রায়হান এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে তখন সে আর একমুহূর্ত ছাদে না থেকে নিচে নেমে এসেছে। নিজের ঘরে ফোনের রিংটোন শুনে ফোন হাতে নিলো।
“শাড়ি পড়েছিস?”
“হ্যা ”
“ফোনের নেট অন কর।আমি ভিডিও কল দিচ্ছি। ”
মিনিটের মধ্যে ফোন কেটে আবার ভিডিও কল আসলো।রিশা বিছানার ওপর বসে ফোন রিসিভ করে। তবে তাসরিফের ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকা দেখে এবার সে বেশ লজ্জা পেলো।
“মনোহারিণী!”
রিশার মুখে লজ্জামিশ্রিত হাসি ফুটে উঠলো
চলবে……