তুমি আমার প্রিয়তমা পর্ব ৫+৬

#তুমি_আমার_প্রিয়তমা
#লেখিকা_Amaya_Nafshiyat
#পর্ব_০৫

পরেরদিন,,
সকাল থেকেই সবাই বিজি।আজকে আবিরের হবু বউ সারা’দের বাসায় সবাই দাওয়াত খেতে যাবে।সকালের নাশতা করলো সবাই একসাথে।

প্রিয়তা,জুই,ডলি ও তানিয়া সবাই সকালের দিকে লেনে হাঁটতে গিয়েছিলো।হাউজিং এস্টেট এরিয়ার লেনগুলো হাঁটার জন্য একদম পারফেক্ট প্লেস।মানুষ যেমন কম থাকে রাস্তায়,তেমনি গাড়িও খুব কম চলাচল করে।সব রাস্তা অলয়েজ ফ্রি থাকে।কোনো গ্যান্জাম নেই।প্রিয়তার শীতের সকালে হাঁটতে খুব ভালো লাগে।প্রিয়তার এই এরিয়ার বিলাশবহুল বাসা গুলোও দেখতে ভীষণ ভালো লাগে।তার ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা যে তার নিজেরও এরকম একটা বিলাশবহুল বাসা হবে।

দুদিন ধরে সৌরভ সকালে হাঁটতে যেতে পারে না।নয়তো সে প্রত্যেকদিনই কাজে যাওয়ার আগে সাত সকালে হাঁটতে বেরোতো।এত বছর পর দেশে এসেছে,বাংলাদেশের সময়ের সাথে খাপ খাওয়াতে একটু তো সময় লাগবে।

সৌরভ একদম পুরোপুরি রূপে তৈরী হয়ে নিচে নেমে এলো।আজকে সে একটা গাঢ় বেগুনি রঙের শার্ট এবং কালো রঙের ব্লেজার পড়েছে।সাথে আছে ডার্ক ব্লু জিন্স প্যান্ট ও পায়ে ব্ল্যাক কেডস। হাতে এপল ব্রান্ডের ওয়াচ।চুল জেল দিয়ে ব্যাকব্রাশ করা।চোখে ব্ল্যাক ফ্রেমের পাওয়ারহীন চশমা।মুখে কালো মাস্ক।সবকিছু মিলিয়ে দেখতে ভীষণ হ্যান্ডসাম লাগছে তাকে।সৌরভকে দেখে জুই ও প্রিয়তা দুজনেই মারাত্মক ক্রাশ খেলো।জুই হা করে নির্লজ্জের মতো তাকিয়ে আছে তার দিকে।প্রিয়তা লজ্জায় তাকাতে পারছে না,পাছে যদি সৌরভ বুঝে ফেলে যে প্রিয়তা তাকে দেখে ক্রাশ খেয়েছে!

প্রিয়তাকে দেখে সৌরভ চোখ ফেরাতে ভুলে গেছে যেন।সাদা কালো চেক ডিজাইনার একটা ঢোলা গাউন পড়েছে সে আজ,সাথে প্লাজু,ওড়না মাথার ওপর মার্জিত ভাবে ফেলে রাখা।মুখে কালো মাস্ক।এতেই তাকে অনেক আকর্ষণীয় লাগছে।সৌরভ মুচকি হাসলো আনমনে।কাউকে ভালো লাগলে বুঝি ফিলিংসটাই এমন অদ্ভুত হয়!

ডলি আর তানিয়া সৌরভের ভয়ে প্রিয়তার মতো লং ঢোলা গাউন ও হিজাব পড়েছে।সৌরভ না থাকলে তাদের কাপড় হিসেবে জিন্স,লেগিংস,টপস এসবই মুখ্য থাকতো।ওরা মোটেও পর্দাশীল টাইপের নয়।সৌরভ কানাডা চলে যাওয়ার পর থেকে তাদেরও চলাফেরায় পরিবর্তন এসেছিলো।তাদের অন্য ভাইয়েরা আবার এসবের প্রতি তেমন একটা দৃষ্টি দেয় না।কিন্তু সৌরভ একটু কঠিন ধাঁচের।

সে বোনদের বেপর্দা করার পারমিশন দিয়ে দাইয়ুস উপাধি গ্রহণ করতে চায় না।তাই ছোটবেলা থেকেই আদরের সময় আদর ও শাসনের সময় শাসন বজায় রাখতো।এখন দেশে এসে গেছে তারমানে আবারও সেই আদেশ জারি হয়েছে।সেটা ডলি,তানিয়া থেকে শুরু করে বাসার প্রত্যেকটা মেয়ে মানুষ বুঝতে পেরেছে।বাসার প্রত্যেকেই সৌরভের কথা মান্য করে।সম্মানিত একজন সদস্য বলে কথা।

ভাতিজা জিহানকে কোলে নিয়ে বাইরে হাঁটছে সৌরভ।কয়েকজন সদস্যের তৈরি হতে এখনো বাকি তাই বাইরে ভাতিজা ভাতিজিকে নিয়ে সময় কাটাচ্ছে সে।তার সাথে তূর্য,আকিল আর আবিরও আছে।

প্রিয়তা ড্রয়িং রুমের বড় জানালাটার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সৌরভকে একমনে প্রত্যক্ষ করে যাচ্ছে।সে বুঝতে পারছে না একটা মানুষ এতটা সুন্দর মনের ও সৌন্দর্যের অধিকারী কীভাবে হয়?এরকম একটা মানুষকেই তো নিজের লাইফ পার্টনার হিসেবে সবসময় চাইতো প্রিয়তা।এমনকি এখনও চায়।তাহলে কী সত্যি সত্যিই নিজের মনের মতো একজন মানুষকে পেয়ে গেছে সে?কথাটা ভাবতেই লজ্জায় লাল হয়ে গেল প্রিয়তা।

সবাই রেডি হয়ে বেরোলে বাসার সদর দরজা তালা মারা হলো।অবশ্য গেইট ও পুরো বাসা পাহারায় সিকিউরিটি গার্ড একজন আছে।কোনো সমস্যা না।তাদের নিজস্ব হাইয়েস গাড়িতে প্রায় সবাই ওঠে বসলো।শুধু সৌরভ,তুর্য,হৃদয়,জুই,আকিল আর প্রিয়তা সবার লাস্টে ছিলো।পরে দেখা যায় গাড়িতে আর জায়গা নেই।তখন মিসেস মিনা বলে উঠেন;

মিসেস মিনা:-ওমা ওরা এবার কীসে করে যাবে তাহলে?

সৌরভ আর হৃদয় মিলে একটা ছক কষলো।কয়েক মিনিট আলোচনার পর ঠিক হলো প্রিয়তা সৌরভের সাথে,জুই তূর্যের সাথে ও আকিল হৃদয়ের সাথে বাইকে করে যাবে।তাদের এক্সট্রা কার না থাকলেও প্রত্যেক ছেলেরই বাইক আছে।সৌরভ তার নিজের বাইক চালাবে,তূর্য চালাবে আবিরেরটা ও হৃদয় চালাবে তার নিজেরটা।আলোচনা শেষে প্রিয়তার সৌরভের সাথে যাওয়ার কথা শুনে জুই বলে উঠে;

জুই:-সৌরভ ভাইয়া,প্রিয়তা তূর্য ভাইয়ার সাথে চলে যাক।আমি বরং তোমার বাইকে করে তোমার সাথে আসি।

সৌরভ একবার প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে ডিরেক্ট নাকচ করে দেয় প্রস্তাবটা।

সৌরভ:-নাহ,তুমি বরং তোমার ভাইয়ার সাথে যাও।প্রিয়কে নিয়ে আসছি আমি।

জুইয়ের চেহারায় মেঘের ঘনঘটা নেমে এলো কথাটা শুনে।বেচারি এই একটা কথাতেই ছ্যাকা খেয়ে ব্যাঁকা হয়ে গেছে।সৌরভ বাবার কাছ থেকে চাবি নিয়ে বাসার ভেতর প্রবেশ করে গিয়ে বাইকের চাবি ও হেলমেটগুলো গিয়ে আনলো।গ্যারেজ থেকে এক্সট্রা একটা হেলমেটও আনলো।তারপর সবার হেলমেট ও চাবি গছিয়ে দিয়ে নিজে একটা হেলমেট পড়ে প্রিয়তাকে নিজ হাতে একটা হেলমেট পড়িয়ে দিতে লাগে।প্রিয়তা মুগ্ধ দৃষ্টিতে সৌরভের টানা টানা চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।মন যে প্রেমে পড়ে যাচ্ছে একজনের সে খবর কী আছে তার!

সৌরভ হেলমেট লাগানো শেষে বাইকে চড়ে বসে প্রিয়তাকে লক্ষ্য করে বললো;

সৌরভ:-বাইকে ওঠে বসে আমাকে শক্ত করে ধরে রাখবে।নয়তো উল্টে পড়ে যেতে পারো।

প্রিয়তা:-হুম।

সৌরভের পিছনে ওঠে বসলো প্রিয়তা।ঠিকঠাক হয়ে বসে সৌরভের দিকে তাকালো।সংকোচ হচ্ছে তার সৌরভকে ধরে বসতে।কেমন জানি লজ্জা লজ্জা লাগছে।সৌরভ বুঝলো সেটা।তাই সে নিজেই প্রিয়তার একহাত টেনে নিয়ে নিজের পেটের ওপর রাখলো।প্রিয়তা ড্যাবড্যাব দৃষ্টিতে সৌরভের দিকে একপলক তাকালো।সৌরভ যে মিটমিট করে হাসছে তা ধরতে পারলো না প্রিয়তা।

সৌরভ:-এতটুকুতে লজ্জা পেতে হবে না।তুমি কম্ফোর্ট ফিল করবে না দেখে তূর্য বা বড়ভাইয়া ওদের সাথে তোমাকে যেতে দিই নি।এখানে কোনো প্রবলেম হলে তুমি নিঃসংকোচে আমাকে বলতে পারো।বাই দ্যা ওয়ে,ভালো করে ধরে বসো।আমি বাইক স্টার্ট দিবো।

সৌরভের কথা শুনে প্রিয়তার সংকোচ আস্তে ধীরে কমে গেল।সৌরভকে সে এই কদিনে যত দেখছে তত মুগ্ধ হচ্ছে।এত ভালো কেন ছেলেটা জানে না সে।এই ছেলের কাছে শুধু সে নয় সবমেয়েরাই নিরাপদ থাকতে পারবে।চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করার মতো একজন ব্যক্তি।এমন ছেলে এই দুনিয়ায় খুঁজলে হয়তো হাতে গোনা দুয়েকজন পাওয়া যাবে।

হাইয়েস গাড়িটা আগেই চলে গেছে।হৃদয়ের বাইকও পেছন পেছন চলে গেছে।এখন তূর্য আর সৌরভ একই সাথে বাইক স্টার্ট দিলো।ফ্রি রোড পেয়ে তূর্য অনেক স্পিডে বাইক নিয়ে সৌরভের আগেই এগিয়ে গেছে।সৌরভ পারফেক্ট স্পিডে বাইক চালাচ্ছে।প্রিয়তা বাইকের আয়নায় আরচোখে বারবার সৌরভকে লক্ষ্য করছে,যদিও সৌরভ বুঝতে পারছে না তা।

প্রিয়তাকে একটা প্রশ্ন বারবার খোঁচাচ্ছিল এতক্ষণ ধরে।তাই কৌতুহল দমাতে না পেরে আমতা আমতা করে শেষে জিজ্ঞেসই করে ফেললো সৌরভকে;

প্রিয়তা:-আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি,যদি কিছু মনে না করেন!

সৌরভ:-হুম করো,কিছু মনে করবো না।

প্রিয়তা:-আপনি তো এই ৬ বছর কানাডাতে ছিলেন।এসেছেন মাত্র ২ কী ৩ দিন হলো।তাহলে বাইক চালানো আয়ত্ত করলেন কবে?

সৌরভ:-আমি যখন ক্লাস টেনে পড়তাম তখন বাইক চালানো শিখেছিলাম আমার এক বন্ধুর ভাইয়ের কাছ থেকে তুমি হয়তো জানো না।কারণ তখন আমার বাইক ছিলোও না।বড়ভাইয়ার বাইক চুরি করে চালাতাম।এজন্য বকাও খেয়েছি অনেক।

প্রিয়তা:-তা নাহয় বুঝলাম কিন্তু এতদিন তো চালান নি।নাকি কানাডায় বাইক ছিলো আপনার?

সৌরভ:-নাহ।কানাডায় বাইক ছিলো না।বাট কার ড্রাইভ করেছি অনেক।ইচ্ছা করেই এসব কিছু কিনি নি।কজ আমার সেটেল হওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না।

প্রিয়তা:-তাহলে এখন বাইক চালাতে আপনার জড়তা কাজ করছে না?মানে অনেকদিন পর চালাচ্ছেন তো!হিমশিম খেতে হচ্ছে না চালাতে গিয়ে?

সৌরভ মাস্কের আড়ালে হাসলো প্রিয়তার বাচ্চাদের মতো করা এলোমেলো প্রশ্ন শুনে।বেচারি সংকোচের কারণে ঠিকমতো প্রশ্নও করতে পারছে না।সৌরভ মৃদুহাসিযুক্ত জবাব দিলো;

সৌরভ:-নাহ কোনো জড়তা কাজ করছে না।আমি এত সহজে কিছু ভুলি না।আর যেদিন বাইক কিনেছি সেদিনই কয়েকদফা প্র্যাক্টিস করে নিয়েছি।তাই এখন আর চালাতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।

প্রিয়তা:-ওহহ।

প্রিয়তার প্রশ্ন ভান্ডার ফুরিয়ে এলো।আর কিছু খুঁজে পাচ্ছে না বলার মতো।সৌরভ চুপচাপ বাইক চালাচ্ছে।দুজনের মধ্যে আর কোনো কথা হলো না।অবশেষে সারা’দের বাসায় পৌঁছে গেলো ওরা দুজন।তাদের যাওয়ার কিছুক্ষণ আগেই বাকিরা পৌঁছে গেছে।

অন্যান্য গাড়ির পাশে সৌরভ বাইক পার্ক করলো।তারপর চাবি নিয়ে সোজা হাঁটা দিলো বাসার সদরদরজার দিকে।সৌরভের পিছু পিছু প্রিয়তাও ছুটলো।অতঃপর দুজনেই বাসার ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করলো।

সৌরভকে দেখেই হাঁ হাঁ করে ছুটে এলেন সারার বাবা।এসেই সৌরভকে বুকে জড়িয়ে নিলেন।সৌরভও আন্তরিক কন্ঠে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলো।প্রিয়তাকে দেখে সারার ছোট বোন জারা ছুটে আসে।প্রিয়তার সাথে তার খুব ভালো বন্ডিং আছে।সমবয়সী বলে কথা।এসেই প্রিয়তাকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো।

প্রিয়তা:-কেমন আছিস জারুবেবি?

জারা:-ওফফ,এতক্ষণ তোর অপেক্ষাই করছিলাম।আমি অনেক ভালো আছি।তুই কেমন আছিস?

প্রিয়তা হাসিমুখে জবাব দিলো;

প্রিয়তা:-হ্যা আমিও খুব ভালো আছি।

জারা:-চল আমার রুমে যাই।গল্প করবো অনেক।

প্রিয়তা হেসে বললো;

প্রিয়তা:-আচ্ছা ঠিক আছে চল।

দুজনে ভেতরের রুমে চলে গেল।সৌরভ সোফায় গিয়ে বসলো।সবাই বিভিন্ন আলাপ আলোচনায় মেতে উঠলেন।সাথে চললো হরেক রকমের নাস্তা পানীয় খাওয়া।

প্রিয়তা,জুই,সারা,ডলি,তানিয়া ও জারা একসাথে সবাই মিলে সারার রুমে বসে আড্ডা দিতে লাগলো।প্রিয়তার চঞ্চলতা কেন জানি একটু গুটিয়ে গেছে সৌরভ আসার পর থেকে।তার মনে হয় সৌরভ এত দুষ্টামি পছন্দ করে না তাই সেও দুষ্টামি করা কমিয়ে দিয়েছে।কেন যে সে সৌরভের কথা এত চিন্তা করে তা সে নিজেও জানে না।যে মেয়েটা একদম ডোন্ট কেয়ার টাইপের ছিলো সে আজ অন্য কারও পছন্দ অপছন্দ মেনে চলে।নিজেই অবাক হয়ে যায় নিজের এমন পরিবর্তন দেখে।

আযান দিতেই মসজিদে নামাজ আদায় করতে গেল সৌরভ মামার তার সাথে।আর কেউ নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে আসে নি।এরকম বেশিরভাগ মানুষই করে থাকে।সৌরভের পরিবারও তার ব্যতিক্রম নয়।নামাজের প্রতি উদাসীন।

ওরা দুজন মসজিদ থেকে আসার পর দুপুরের খাবার সবাই একসাথে খেলো।সৌরভকে আরও তীব্রভাবে আপ্যায়ন করতে ব্যস্ত হয়ে গেছে তার মামা মামী।

আবির আর সারা দুজন ছাদে গিয়ে সময় কাটাচ্ছে।সৌরভের সামনের সোফায় বসে আছে প্রিয়তা।সবাই আবারও আড্ডায় মশগুল হয়ে গেছে।প্রিয়তা সবার মাঝখানে বসে আছে।যত বেলা গড়াচ্ছে তত ঠান্ডা লাগছে।এদিকে প্রিয়তা সোয়েটার আনে নি।ওরও শীত লাগছে খুব।মিসেস শিলা এক্সট্রা একটা শাল নিয়ে এসেছিলেন।কারণ তিনি জানেন প্রিয়তা শীতের কাপড় কিছু আনবে না।তিনি ভারী শালটা প্রিয়তার গায়ে জড়িয়ে দিতেই প্রিয়তা তা শরীরের আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিলো।

প্রিয়তা সৌরভকে বারবার আরচোখে দেখছে।এ দেখার যেন শেষ নেই।হৃদয় কী একটা হাসির কথা বলতেই সৌরভ খিলখিল করে হেসে উঠলো।সৌরভের হাসি দেখেই প্রিয়তা পুরোপুরি ফিদা হয়ে গেছে।এমনসময় আকিলের ফোনে রিংটোন বেজে ওঠলো,

ইক মোলাকাত মে
বাত হি বাত মে,
উনকা ইউ মুসকোরানা
গাজাব হগায়া…

আকিল বাইরে গেল ফোন রিসিভ করতে।গানটা যেন প্রিয়তার মনের কথা বলে গেল।উফফ,অন্যরকম এক ফিলিংসের সৃষ্টি হয়েছে মনে,যা কাউকে ভাষায় বোঝানো যাবে না।প্রিয়তা হারিয়ে গেছে সৌরভের ওই নজরকাঁড়া হাসিতে।কোনো ছেলে এত সুন্দর হাসতে পারে জানা ছিল না তার।সৌরভ খেয়াল করলো প্রিয়তা যে তার দিকে ড্যাবড্যাব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।সৌরভ ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো,”কী”!সৌরভের এমন ইশারা পেয়ে হকচকিয়ে গেল যেন প্রিয়তা।তারপর সম্বিৎ ফিরে পেতেই দ্রুত মাথা নেড়ে না বোঝালো।সৌরভ আর কিছু জিজ্ঞেস করল না।বাকিদের সাথে বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলতে লাগলো।

সন্ধ্যার একটু পর অর্থাৎ মাগরিবের নামাজ আদায় শেষে বাসায় যাওয়ার তোরজোর শুরু হলো।সারা আর আবিরের বিয়ের আর মাত্র ৭ দিন বাকি আছে।ধীরে ধীরে দুপক্ষের বাসায়ই মেহমান আসা শুরু হবে।বিয়ের অনেক অনেক কাজ বাকি আছে এখনো।কেনাকাটাও বাকি আছে বেশ।কিছু আত্মীয়দের দাওয়াত দেয়াও বাকি।সবকাজ সুন্দর ভাবে কমপ্লিট করতে হবে নয়তো ঝামেলা হবে পরে।

ওনাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সবাই গাড়িতে উঠলো।সৌরভ বাইক বের করে আবারও প্রিয়তার মাথায় হেলমেট পড়িয়ে দিলো।তারপর নিজে পড়ে নিয়ে বাইকে ওঠে ইগনিশনে চাবি ঢুকিয়ে মোচর মেরে স্টার্ট দিলো।জারা ও সারা দুজনেই তাদের বিদায়কালে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো।প্রিয়তা তাদের উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে টাটা দেয়।ওরাও একই কাজ করে।তারপর গেইট দিয়ে বাইক চালিয়ে বেরিয়ে এলো সৌরভ।প্রিয়তা সৌরভের পেট একহাত দিয়ে শক্ত করে প্যাচিয়ে জড়িয়ে ধরে বসে আছে চুপচাপ।দুজনের মধ্যেই নিরবতা বিরাজ করছে।তবে মুহূর্তটা দুজনেই ফিল করছে।প্রিয়তা ভাবছে,সময়টা যদি এখানেই থমকে যেত তাহলে কতই না ভালো হতো।সৌরভও সেইম কথা মনে মনে ভাবছে।#তুমি_আমার_প্রিয়তমা
#লেখিকা_Amaya_Nafshiyat
#পর্ব_০৬

বাসায় পৌঁছাতে প্রায় রাত সাড়ে সাতটা বেজে গেছে।প্রিয়তার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে।সেই সাতসকালে ঘুম থেকে ওঠেছিলো।আর সারাদিনের এত হাউকাউ করায় ক্লান্তি যেন শরীরে জেঁকে বসেছে।

রাতের খাবার রান্না করাই ছিলো।তাই একটু রেস্ট নিয়ে সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে সোজা যে যার রুমেই চলে গেছে।কারণ ডিসেম্বরের এই সময়টায় শীত থাকে প্রচুর।প্রিয়তা তো কম্বল মুড়ি দিয়ে সেই কখন ঘুমিয়ে কাঁদা হয়ে গেছে।

সৌরভ এশার নামাজ আদায় করার পর বিছানায় গিয়ে কমফোর্টার গায়ে জড়িয়ে শুয়ে পড়েছে।তারপর ফোনে কানাডার বন্ধু কয়েকজনের সাথে গ্রুপ চ্যাটিংয়ে বিজি হয়ে গেল।এই কদিন ব্যস্ত ছিলো তাই তাদের সাথে আর যোগাযোগ করা হয়ে ওঠে নি।আজ ডেভিড আর লুইস যেচেই ইনস্টাগ্রামে নক করেছে তাকে।তাই আরকি এক চান্সে আলাপ করে নিচ্ছে।পরে আবিরের বিয়ের জন্য আরও ব্যস্ত হয়ে যাবে।তখন সময় নাও মিলতে পারে।

রাত প্রায় দেড়টা পর্যন্ত অডিও কনফারেন্সে কথা চললো তাদের মধ্যে।তারপর বাই বলে ফোন রেখে ঘুমিয়ে গেল সৌরভ।

সকাল প্রায় আটটা বাজে।প্রিয়তা আজকে কী মনে করে রান্নাঘরে পা ফেললো।ইচ্ছা আজকে সবার জন্য কিছু একটা বানাবে।প্রিয়তা কাজকর্ম করতে একদমই যে পারে না এমন নয়।সে ঠেকায় পড়লে সব করতে পারে নয়তো মেরেও কেউ তাকে দিয়ে কিছু করাতে পারে না।নবাবের মতো বিন্দাস চলাফেরা করতে তার ভীষণ ভালো লাগে।

প্রিয়তাকে রান্নাঘরে দেখে ইশার চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেছে।এশাও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।ওরা কখনো টেনেও প্রিয়তাকে রান্নাঘরে আনতে পারে না।আজ কী মনে হতে ওনার পদধূলি এখানে পড়লো বুঝতে পারছে না এশা আর ইশা।ওদের এভাবে হতবাক দৃষ্টিতে তাকাতে দেখে প্রিয়তা হোমড়াচোমরা ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল;

প্রিয়তা:-কী হলো ভাবী?তোমরা এভাবে ভুত দেখার মতো তাকিয়ে আছো কেন আমার দিকে?কী হয়েছে?

ইশা:-এশা আজকে কী সূর্য ওঠেছে?ওঠলে কোনদিকে ওঠেছে বলতো একটু?

এশা:-নাহ আপু,সূর্য আজকে মেয়াদ উত্তীর্ণ গাঞ্জা খেয়ে সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে।তাই আর ওঠে নি।

প্রিয়তা:-কী অদ্ভুত কথা বার্তা বলছো তোমরা ভাবী?পাগল হলে নাকি?

ইশা:-নাহ পাগল হইনি গো।তবে যে মানুষটাকে রান্নাঘরে জীবনে টেনেও আনতে পারি না সেই মানুষটা কীনা আজ স্ব ইচ্ছায় রান্নাঘরে পা রেখেছে তা দেখে একটু অবাক হলাম বৈকি।তা ননদীনি কোনো দরকার পড়েছে তোমার?কিছু লাগবে?

প্রিয়তা:-আমি আজকে সবার জন্য কিছু একটা বানাতে চাই বড়ভাবী!আমাকে একটু হেল্প করবে প্লিজ।

এশা:-হঠাৎ এরকম ভুত মাথায় ওঠলো কেন?

প্রিয়তা এবার লজ্জায় লাল নীল হয়ে আমতা আমতা করে বললো;

প্রিয়তা:-ইয়ে মানে ভাবী,সবারই তো বিয়ে শাদী হয়ে যাচ্ছে,আমিও বা বাদ যাই কেন?একদিন দেখবে আমারও বিয়ে হয়ে গেছে।এখন যদি রান্না বান্নার প্র্যাকটিস না করি তখন বিয়ের পর আমার বরকে রান্না করে কী খাওয়াবো বলো?শ্বশুর বাড়ির লোকজন তখন আমাকে কথায় কথায় লজ্জা দিবে কিছু পারি না বলে।তাই এখন থেকেই এসব শিখে রাখা ভালো।আমি আবার এত আনাড়ি নয় কিন্তু।কিছু দেখলে সাথে সাথে শিখে ফেলার মতো টেলেন্টেড মেয়ে আমি।হুম!

এশা আর ইশা হেসে ফেললো।পিছন থেকে মিসেস শিলা এসে কান টেনে ধরলেন প্রিয়তার।প্রিয়তা আহ বলে চেঁচিয়ে উঠলো।মিসেস শিলা এতক্ষণ প্রিয়তার বলা সব কথা শুনেছেন।

প্রিয়তা:-আহ,ফুপ্পি!লাগছে ছাড়ো!

মিসেস শিলা:-লাগুক,লাগার জন্যই তো ধরেছি।এতটুকুন মেয়ে কী পাকা পাকা কথা বলে!আমার তানু আর ডলিও এত পাকা কথা কখনো বলে নি।এখনো নাক টিপলে দুধ বেরোয় আর মেয়ে বর,বিয়ে ও শ্বশুর বাড়ির কথা বলে।বুঝেছি তোর বাবাকে আর মাকে জানাতে হবে।তাদের মেয়ে যে বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গেছে সেটাও বলতে হবে।

প্রিয়তা:-নাআআ,ফুপ্পি।এভাবে আমার মানইজ্জতের ফালুদা করতে পারো না তুমি।আমি বিয়ের কথা কখন বললাম।আমি তো একটু রান্না করতে চাইছি।তোমরা এমন করছো কেন?আমি আজ একটু নাশতা বানাই প্লিজ,প্লিজ,প্লিজ।

প্রিয়তার মিনতিতে মিসেস শিলা রাজী হলেন।কান ছেড়ে দিয়ে বললেন;

মিসেস শিলা:-আচ্ছা কী বানাবি বানা গিয়ে যা।যদি কোনো কিছুর হেরফের হয় তাহলে আজকে তোর খবর আছে কিন্তু।

প্রিয়তা খুশিতে গদগদ হয়ে বললো;

প্রিয়তা:-ও তুমি চিন্তা করো না ফুপ্পি।আমি খুব ভালোমতোন রান্না করবো।থ্যাংকিউ সো মাচ মাই ডিয়ার ফুপ্পি।

এই বলে প্রিয়তা মিসেস শিলাকে একটা টাইট হাগ করলো।মিসেস শিলা হাসলেন ভাতিজির পাগলামো দেখে।

প্রিয়তা কাল সারারাত ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সৌরভকে নিয়ে মধুর স্বপ্ন দেখেছে।সৌরভকে তার এত ভালো লেগেছে যে আজ সে একমাত্র সৌরভের প্রশংসা পাওয়ার জন্য এত কষ্ট করে নাশতা বানাতে চলে এসেছে।নয়তো এই শীতের সকালে আরামদায়ক ঘুম ছেড়ে কে রান্নাঘরে আসতে যাচ্ছে?

প্রিয়তা ঠিক করলো প্রথমে ব্ল্যাক ফরেস্ট স্পঞ্জ কেক বানাবে।একবার তার আম্মু বানিয়েছিলেন তার স্বাদটা এখনো প্রিয়তার জিভে লেগে রয়েছে।কিন্তু কথা হলো সে এটার রেসিপি ভুলে গেছে।এখন কী করা যায়?এটা ভাবতে ভাবতেই ইউটিউবের কথা মনে পড়লো তার।সে ঝটপট দৌড়ে ওপরের তলায় গিয়ে ফোন নিয়ে আবার ফিরে এলো।তারপর ইউটিউবে সার্চ মেরে মনমতো একটা রেসিপি খুঁজে বের করে ফেললো।ইশা আর এশা প্রিয়তাকে সবকিছু এগিয়ে দিয়ে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে গেছে।

রেসিপি দেখে দেখে প্রিয়তা কাজ করতে লাগলো।মাঝেমধ্যে যখন আটকে যায়,তখন এশা হেল্প করে।এভাবেই প্রায় একঘন্টা সময় লাগিয়ে অবশেষে কেক বানাতে সক্ষম হলো সে।কেক বানিয়ে সাকসেসফুল হতেই খুশিতে একটা লাফ দিলো সে।ইশা ও এশা প্রিয়তার লাফালাফি দেখে হাসতে হাসতে শেষ।মিসেস মিনা আর মিসেস শিলা মিটিমিটি হাসছেন।প্রিয়তা গিয়ে ডলি আর তানিয়াকে ডেকে নিয়ে এসে তার হাতে বানানো কেক দেখাতে লাগলো।ডলি হামি দিতে দিতে বললো;

ডলি:-একটা কেক বানিয়ে এত লাফালাফি না করে বরং আরও ভালো কিছু নাশতা বানা।শুধু কেক খেয়ে তো আর পেট ভরবে না আমাদের।তাই না?

প্রিয়তা এবার মনে মনে ভাবলো,তাই তো!শুধু কেক বানিয়ে কী হবে!কেক তো যে কেউই বানাতে পারে!সৌরভ ঘুম থেকে ওঠার আগে যে করেই হোক আরও ভালো কিছু বানাতে হবে।কিন্তু প্রিয়তার চিন্তায় মিসেস মিনা এবার বাঁধ সেধে বললেন;

মিসেস মিনা:-এই না।মেয়েটা এত কষ্ট করে কেক বানিয়েছে তাই যথেষ্ট।আর কিছু বানাতে হবে না।প্রিয়ু মা,তুই গিয়ে রেস্ট নে যা মা এই বাঁদরের কথা শুনিস না।

প্রিয়তা:-নাহ বড়আন্টি।ডলিপু তো ঠিক কথাই বলেছেন।আমি আরও কিছু বানাবো।

প্রিয়তা নাছোড়বান্দার মতো নিজের জেদেই অটল রইলো।মিসেস মিনা আর কিছু বললেন না।তিনি জানেন প্রিয়তা যখন বলেছে তখন তা সে করেই ছাড়বে।হাজার বারণ করলেও শুনবে না।ডলি মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল।জুই আর তার বোন পান্না এখনো মরার মতো ঘুমাচ্ছে।বাকি সবাইও ঘুমে মগ্ন।

প্রিয়তা এবার সংক্ষেপের মধ্যে আলু ও ডিমের পরোটা বানাতে শুরু করলো।পরোটা গুলো পুরোপুরি গোল হয়নি।আবার এত বাজেও হয় নি।মোটামুটি ভালো একটা শেপ আছে।পরোটা বানানো শেষে ইশার সাহায্যে ডিম ও আলু একসাথে ভাজি করলো।তারপর বুটের ডাল ঝাল করে ভুনা করলো।এগুলো তৈরী করতে করতেই সবাই ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে এসেছে নাশতা খেতে।

প্রিয়তা রান্নাঘরের একপাশে রাখা চেয়ারে বসে রেস্ট করছে।এই কয়েকটা আইটেম বানাতে গিয়েই সে পটল তোলার মতো অবস্থা।আলসে মানুষ যখন কোনো কাজকর্ম করে তখন বোধহয় এমনই হয়।প্রিয়তা আজ হারে হারে নিজের মা,ফুপু,ভাবী তাদের সবার কষ্ট উপলব্ধি করেছে।রান্না করা মোটেও কোনো সহজ কাজ নয়।

সৌরভও ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে এসেছে।ডাইনিং রুমে প্রিয়তা সবার মধ্যমণি হয়ে বসে আছে।ইতিমধ্যে সবাই জেনেছে যে আজকের নাশতা সে বানিয়েছে।সবাই তো বাহবা দিতে দিতে তাকে ফুলিয়ে ফেলেছে।আকিল একটু বদনাম করতেই প্রিয়তা তার পিঠের মধ্যভাগে সেই জোরসে এক কিল মেরে বেচারার পিঠ ভেঙে এসেছে।

সৌরভকে দেখে জুই তার নিজের চেয়ার ছেড়ে পাশের চেয়ারে বসলো।মনে মনে আশা যে সৌরভ তার পাশে বসবে।কিন্তু তার আশায় এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে সৌরভ আবিদের পাশের চেয়ারে বসলো।জুইয়ের মুখ কালো হয়ে গেছে সৌরভের এমন ইগনোর দেখে।প্রিয়তা দৃশ্যটা দেখে এক পৈশাচিক আনন্দ পেল।ঠোঁটে তার চতুর হাসি খেলা করছে।

প্রিয়তা নিজে সৌরভকে নাশতা বেড়ে দিলো।হেসে হেসে বললো;

প্রিয়তা:-ভাইয়া আজকের নাশতা কিন্তু আমি বানিয়েছি।খেয়ে বলেন ভালো হয়েছে কি না!

সৌরভ মৃদু হেসে মাথা ঝাকিয়ে সায় দিয়ে প্রথমে পরোটা ও ভাজি এবং ডাল খেতে লাগে।একদম রেস্তোরাঁর খাবারের মতো না হলেও সুস্বাদু তো বটেই।খেতে ভালো লাগলো সৌরভের।প্রায় পেটপুরে চেটেপুটে খেল সৌরভ।তারপর প্রিয়তার হাতে বানানো নরম তুলতুলে কেক দিয়ে চা খেল।সত্যিই অসাধারণ হয়েছে।সৌরভ প্রশংসার সুরে বললো;

সৌরভ:-সত্যিই ভীষণ মজাদার হয়েছে নাশতাগুলো।ধন্যবাদ প্রিয় এত ভালো রান্না করে আমাদের সবাইকে খাওয়ানোর জন্য।

প্রিয়তা তো সৌরভের মুখ থেকে নিজের রান্নার প্রশংসা শুনে আকাশে ভাসছে।সে এই প্রশংসা শোনার জন্য আজ এত কষ্ট করলো নয়তো তার এত ঠেকা পড়সে নাকি যে এত এত মানুষের জন্য নাশতা বানাবে!সৌজন্যতার খাতিরে প্রিয়তা একটা ঝলমলে হাসি উপহার দিলো সৌরভকে।প্রতিত্তোরে সৌরভও হাসলো।

সৌরভের ফুপ্পি মিসেস জেসমিন বললেন;

মিসেস জেসমিন:-হ্যা নাশতাটা খুব ভালো বানিয়েছে তো প্রিয়ু।এরকম একটা মেয়েই আমার তূর্যের জন্য আমি খুঁজছিলাম।তাহলে এক কাজ করি,প্রিয়ুকেই আমি আমার পুত্রবধূ বানিয়ে ফেলি।কী বলিস প্রিয়ু?

প্রিয়তা মুখ বাঁকিয়ে বলে উঠে;

প্রিয়তা:-এহ্,আমার এত ঠেকা পড়ে নাই আন্টি যে তোমার ছেলেকে বিয়ে করবো।তোমার ছেলে আস্ত একটা খাচ্চোর।শীতের সময় এক সপ্তাহে একবার গোসল করে কী না সন্দেহ!গায়ের গন্ধ দূর করতে পারফিউম ইউজ করে।এমন আজব পাবলিককে আমি কেন কোনো মেয়েই বিয়ে করবে না।

বেচারা তূর্যের মানইজ্জত প্লাস্টিক করে দিলো প্রিয়তা।সমস্বরে হেসে উঠে সবাই।

তূর্য:-আমারও ঠেকা পড়ে নাই তোমাকে বিয়ে করতে।তুমি যা বাঁদরামি করো তাতে আমি কেন কোনো ছেলেই তোমাকে বউ হিসেবে চাইবে না।আমি তো আম্মুর নিষ্পাপ মাছুম একটা ছেলে।তোমাকে বিয়ে করলে আমার লাইফ একদম ত্যানা ত্যানা হয়ে যাবে।

প্রিয়তা:-হেহ্,আমাকে ব্লেম করতে আসছে।আমি এমন একটা ছেলেকে বিয়ে করবো যে কীনা শীতকালেও প্রতিদিন গোসল করে।তোমার মতো অপরিষ্কার বান্দাকে তো মোটেই নয়।

ডলি:-তাহলে এক কাজ কর প্রিয়ু,তুই বরং আমাদের সৌরভ ভাইয়াকে বিয়ে করে ফেল।সৌরভ ভাইয়া শীতকালে প্রতিদিন গোসল করে তাও আবার ঠান্ডা পানি দিয়ে!এমন দুর্লভ প্রজাতির প্রাণী তুই আর দ্বিতীয়টা খুঁজে পাবি না।

সৌরভ এতক্ষণ তাদের ঝগড়াঝাটি উপভোগ করছিলো।হঠাৎ ডলির বলা এমন অনাকাঙ্ক্ষিত একটা কথা শুনে ঝগড়া থেমে গেছে।কথাটা শুনামাত্রই সৌরভ সরাসরি প্রিয়তার চোখের দিকে তাকালো।প্রিয়তা তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হলো।বড়দের সামনে এমন একটা কথা বলায় প্রিয়তা সাংঘাতিক লজ্জা পেয়েছে।ততক্ষণে নাশতা করাও শেষ।লজ্জায় প্রিয়তা চুপিচুপি কেটে পড়ে এখান থেকে।আর দাঁড়ায় না।সৌরভ হাসতে হাসতে হাত ধুয়ে চলে গেল।আবির ডলির মাথায় একটা চাপড় মেরে বললো;

আবির:-বলদ একটা,কোথায় কী বলতে হয় তাও বুঝতে পারিস না।

ডলি:-ওমা,সত্যিই তো বললাম।

জুই:-তোর সত্যির নিকুচি করি।গাধা।

ডলি হাবলার মতো তাদের তিরস্কার শুনলো।সে বুঝতে পারলো না ভুলটা কী বললো।বেচারি!

সৌরভ ছাদের কোণে রেলিঙের ওপর হাত রেখে দাঁড়িয়ে আশপাশ দেখছে।ডলির বলা কথা বারংবার কানে বাজছে তার।বিষয়টা সত্যি হলে কিন্তু মন্দ হয় না।হয়তো সৌরভের যেমন চাহিদা তেমন পুরোপুরি নয়।তবে শিখিয়ে পড়িয়ে তাকে মানিয়ে নেয়া যাবে সহজে।মেয়েটা দুষ্টু হলেও বেয়াদব নয়।বিশেষ করে সৌরভের ক্ষেত্রে।সৌরভকে প্রিয়তা খুব মান্য করে।সেটা সৌরভ খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে।

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here