তুমি আমার প্রিয়তমা পর্ব ১১+১২

#তুমি_আমার_প্রিয়তমা
#লেখিকা_Amaya_Nafshiyat
#পর্ব_১১

সন্ধ্যার সময় রিসিপশন পার্টি।এজন্য আগেই খানস প্যালেস কনভেনশন হল বুকিং করা হয়েছে।দুপুর থেকেই সকলে ভীষণ ব্যস্ত।মি.শফিক,মি.সালাম মি.মুজাফফরকে নিয়ে কনভেনশন হলে চলে গেছেন ওখানকার সবকিছু ঠিকঠাক মতো হচ্ছে কী না তদারকি করতে।বাকিরা বাসায়ই আছে।

সারাকে ও অন্যান্যদেরকে সাজাতে পার্লার থেকে দুজন মেয়ে এসেছে।তাই ওরা সবাই সাজতে ব্যস্ত।প্রিয়তা তার মা ফুফুদেরকে শাড়ি পড়ায় হেল্প করছে।বিকাল হয়ে গেছে প্রায়,কিছুক্ষণ পর ধরণীর বুকে সন্ধ্যা নেমে আসবে।তাই সবার মধ্যেই তাড়াহুড়ো বিদ্যমান।

সৌরভ গত রাতে তার মাকে প্রিয়তার কথা বলার মতো কোনো স্কোপই পায় নি।বাসা ভর্তি মেহমান,এত হইচইপূর্ণ পরিবেশে এরকম গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা সম্ভবই নয়।মিসেস মিনা তো একমুহূর্তের জন্যও একা ছিলেন না।সাথে আরও অনেকে ছিলো।তাই আর জানাতে পারে নি সে।

প্রিয়তা সবাইকে তৈরি হতে টুকটাক সাহায্য করে নিজেও তৈরি হতে রুমে চলে এলো।ফুলহাতা লম্বা প্রচুর ঘের দেয়া একটা ডার্ক পার্পল কালারের একটা গাউন পরিধান করলো প্রিয়তা।সাথে সেইম কালারের বড় একটা ওড়না দিয়ে মার্জিতভাবে হিজাব বেঁধে হালকা সেজে নিলো।প্রয়োজনীয় কিছু অর্নামেন্টস পড়ে সে পুরোপুরি রূপে তৈরী হয়ে গেল।

সন্ধ্যার কিছু মুহূর্ত আগে,
মুসকান কী একটা প্রয়োজনে কনভেনশন হলে আগেই চলে গেছে।ওর সাথে আকিলও গেছে।তাই যাবার আগে মুসকান সৌরভকে অনুরোধ করে বলে গেছে যে প্রিয়তাকে যেন সে তার সাথে করে নিয়ে আসে।সৌরভও তাকে এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে।সে নিয়ে যাবে প্রিয়তাকে সাথে করে।

একে একে সবাই সেন্টারের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে।প্রিয়তা হাসিমুখে সৌরভের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।সৌরভ বাইকের সামনে পোজ নিয়ে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে প্রিয়তাকে লক্ষ্য করছে।আশেপাশে যারা আছে তারা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত।প্রিয়তা আর সৌরভের দিকে কারও নজর নেই।

সৌরভ:-বাইকে ওঠে বসো।

এই বলে সৌরভ বাইকে ওঠে ইগনিশনে চাবি ঢুকালো।প্রিয়তা একমুহূর্ত দেরি না করে ওঠে বসলো।তারপর দু’হাতে ঝাপটে ধরলো সৌরভকে।সৌরভ চমকে পিছন ফিরে তাকালো প্রিয়তার দিকে।প্রিয়তা বিনিময়ে একটা চমৎকার হাসি উপহার দিলো।সৌরভ কিছুটা থতমত খেয়ে বললো;

সৌরভ:-এ,এভাবে ধরেছো কেন?সুন্দর ভাবে ধরে বসো।

প্রিয়তা:-ওমা,আমি তো সুন্দর ভাবেই ধরেছি।আর কীভাবে ধরে বসে মানুষ শুনি তো?

সৌরভ:-ন,নাহ।ঠিক আছে।

সৌরভ বাইক স্টার্ট দিয়ে গেটের বাইরে বেরিয়ে এলো।বাইক চলছে তার আপন গতিতে।প্রিয়তা সৌরভের পিঠে মাথা এলিয়ে দিলো।সৌরভের শরীর বেয়ে যেন হীম শীতল স্রোত বয়ে গেল।এক অন্যরকম অনুভূতি কানাকানি করে গেল তার মন জুড়ে।

আজকের সন্ধ্যাটা যেন একান্ত তাদের জন্যই এমন রোমাঞ্চকর পরিবেশের সৃষ্টি করেছে।দুজনের মনেই টিমটিমে অনুভূতির সঞ্চার ঘটেছে।

প্রিয়তা:-হালাল ভাবেই আপনাকে পেতে চাই সৌরজগত।প্লিজ রাজী হয়ে যান,একদম আপনার মনের মতো হয়ে দেখাবো কথা দিচ্ছি।

সৌরভ:-অল্প কদিনে কেউ কাউকে ভালোবাসতে পারে না।তোমার আবেগকে সরিয়ে বাস্তবে ফিরে আসো।

প্রিয়তা:-দেখুন আমি অন্যান্য মেয়েদের মতো পেটের ভেতর কিছু লুকিয়ে চুরিয়ে রাখতে পারি না।আমি যা বলি সোজাসাপ্টা বলি,এখনও সেটাই বলছি।আমি আপনাকে পছন্দ করি।পছন্দটা সাংঘাতিক লেভেলের।আপনাকে আমার প্রথম দেখাতেই অনেক ভালো লেগেছে।যাকে বলে লাভ এট ফার্স্ট সাইট।আমিও কিন্তু কিছুটা আপনার মতো,লাইক বিয়ের পর হালাল রিলেশনে বিশ্বাসী।তাই তো এত জোর জবরদস্তি করছি।নয়তো আগে চুটিয়ে দুয়েক বছর প্রেম পিরিতি করতাম,তারপর বিয়ের কথা চিন্তা করতাম।এবং আমি বাস্তবেই আছি,মোটেও আবেগের ওপর ভাসছি না।

সৌরভ:-হুম তা তো বুঝতেই পারছি।তবে তুমি নাহয় আমাকে পছন্দ করো,বাট আমি তোমায় পছন্দ করি কখনো বলেছি কী?

প্রিয়তা:-না বললে নাই,আপনার কথায় পাত্তা দিচ্ছেটা কে?এই প্রথম একটা ছেলেকে অন্য কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে দেখে অন্তরটা জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে গেল,তার হাসি দেখে মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়,অকারণে তার দিকে তাকাতে মন চায়।এটা যে আমার প্রেমে পড়ার লক্ষন তা আমি ঢের বুঝতে পেরেছি।জীবনের প্রথম অনুভূতি!কী করে হাতছাড়া করি বলুন তো?আপনাকে আমার চাই মানে চাই।যেকোনো মূল্যে!আপনি না চাইলেও হবে।

সৌরভ হাসছে মিটিমিটি তবে প্রিয়তা সেটা দেখতে পাচ্ছে না।সৌরভ আবারও গম্ভীর কন্ঠে বললো;

সৌরভ:-কিন্তু আমি তো অন্য কাউকে পছন্দ করি।তবে তোমাকে কী করে বিয়ে করবো বলো?

প্রিয়তা:-পছন্দ করেন,,ভালো তো আর বাসেন না।আমি জানি আপনি চির সিঙ্গেল।আপনার জীবনে এমন কেউ নেই।শুধু জুইকে বিয়ে করবেন না বলে এমনটা বলেছেন।আর যদি থাকেও তাতে আমার কিছু যায় আসে না।কারণ আমিই সেই প্রথম নারী যে আপনাকে ছুঁয়েছি।এবং আপনিই আমার জীবনের প্রথম পুরুষ।তো বিয়ে কিন্তু আপনাকেই করবো।এবং বিয়ের পর আমাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে ওসব সো কলড পছন্দ-টছন্দ জানালা দিয়ে পালাবে।

সৌরভ হাসতে চাইলেও পারছে না,নিজেকে তো গম্ভীর প্রমাণ করতে হবে।

সৌরভ:-তুমি এখনো যথেষ্ট ছোট।এসব চিন্তা ভাবনা করার বয়স তোমার এখনও হয় নি।

প্রিয়তা:-আরে রাখেন তো,খালি ছোট ছোট করে যাচ্ছেন।সঠিক সময়ে বিয়ে হলে আমি এখন দুই বাচ্চার মা থাকতাম।

সৌরভ হতভম্ব প্রিয়তার বলা কথা শুনে।এত এডভান্স চিন্তা কেমনে করে আল্লাহ জানেন!এত ফ্রি হয়ে কথা বলছে যেন সৌরভের সাথে তার অনেকগুলো বছরের সম্পর্ক।সৌরভ আর কিছু বললো না সারা রাস্তা প্রিয়তা একাই বকবক করে গেল।প্রায় মিনিট সাতেক পর পৌঁছে গেলো ওরা গন্তব্যে।

সৌরভ একপাশে বাইক পার্ক করে প্রিয়তার সাথে হাঁটা ধরলো।প্রিয়তা সবার আড়ালে সৌরভকে ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দিয়ে ভেতরে চলে গেল।সৌরভ বাইরে কয়েকজন ছেলের সাথে কথা বলতে বলতে ভেতরে আসছে।প্রিয়তার ফ্লাইং কিস ছুঁড়ে দেয়া দেখে মনটায় অজানা এক শিরশিরে অনুভূতি করে ওঠলো তার।মেয়েটা সৌরভের জন্য পাগল হয়ে গেছে বোধকরি।

সেন্টারের ভেতর প্রিয়তা জারার সাথে গল্প করে করে হাঁটছে।কিন্তু মনটা তো পড়ে রয়েছে তার সৌরভের নিকট।কিছুক্ষণ পর মিসেস প্রমির ডাক শুনে প্রিয়তা সেদিকে গেল।মিসেস প্রমি দুজন মহিলার সাথে প্রিয়তার পরিচয় করিয়ে দিলেন।মহিলা১ প্রিয়তার থুতনি ধরে প্রশংসার স্বরে বললেন;

~আরে বাহ,আপনার মেয়ে দেখছি কিউটের ডিব্বা ভাবী।

জবাবে মিসেস প্রমি হাসলেন।প্রিয়তাও লাজুক হাসলো।কেউ তার প্রশংসা করলে ভীষণ লজ্জা লাগে।মহিলা২ বললেন;

~আপনার মেয়েটাকে আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।ইচ্ছে করছে এখনই আমার ছেলের জন্য আপনার মেয়েকে নিয়ে যাই।

এই কথাটা শুনে প্রিয়তার মুখটা ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেল।মিসেস প্রমি একটু বিব্রত কন্ঠে মার্জিতভাবে জবাব দিলেন;

মিসেস প্রমি:-আসলে আমিও চাইছিলাম মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিতে।কিন্তু ওর ভাই,মানে আমার বড় ছেলে মুসকান ওসবে সাফসাফ নিষেধ করে দিয়েছে।সে তার বোনকে পড়ালেখা করিয়ে আগে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় তারপর বিয়ের বিষয় চিন্তা করে দেখবে।

প্রিয়তা আর শোনার প্রয়োজন অনুভব করছে না।তাই সে ওনাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে অন্যদিকে চলে এলো।

অনুষ্ঠান সুন্দর মতোই হচ্ছে।পরিবারের সবাই মিলে আবির আর সারার সাথে গ্রুপ ফটো তুলছে।সৌরভ স্টেজে ওঠার সময় আরচোখে একবার প্রিয়তার দিকে তাকালো।প্রিয়তা তো আগে থেকেই ড্যাবড্যাব করে তার পানে তাকিয়ে আছে।
হলরুমে সফট ভাবে সাউন্ড বক্সে গান বাজছে যা প্রকাশ করছে সৌরভ ও প্রিয়তার মনের অপ্রকাশিত অনুভূতি।

মেরি আখোকি দোয়া হ্যায়
চেহরা তেরা
আব দেখে বিন তুঝে
না গুজারা হু মেরা!
মে সাস্ বি লু তুঝে চাহে বিনা
আব হোগানা ইয়ে হামসে।
কে তোরা তোরা পেয়ার হুয়া তুমছে
কে তোরা তোরা পেয়ার হুয়া তুমছে
কে জিয়াদা বি হগা তুমহিছে
কে তোরা তোরা পেয়ার হুয়া তুমছে।

ভালোয় ভালোয় অনুষ্ঠানটা সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন হয়েছে।এখন রাত প্রায় দশটা বাজে।সবাই বিদায় নিয়ে যে যার মতো চলে যেতে লাগলো।প্রিয়তার হাত ধরে রেখেছে মুসকান।দু ভাই বোন একসাথে যাবে তাই।সৌরভদের ফুপুর পরিবার ও প্রিয়তার পরিবার বাদে বাকিরা ওনাদের বাসায় চলে গেছেন।একটু পর ওরাও সবাই রওনা দিলো সৌরভদের বাসার উদ্দেশ্যে।আবির আর সারা দুজন আলাদা কারে করে যাচ্ছে।ওরা দুজন কালকে বিকেলে সারাদের বাসায় যাবে নিয়ম অনুযায়ী,যাকে সিলেটের সবাই বলে ফিরা যাত্রা।

বাসায় পৌঁছে গেলো ওরা।আজকে কাজিনরা সবাই মিলে ছাদে বসে অনেকক্ষণ ধরে গল্প গুজব করলো ও আড্ডা দিলো।প্রিয়তা তো মুসকানের ভয়ে বেশি সৌরভের দিকে তাকাতে পারলো না।সৌরভ এমনিতেও বেশি তাকায় না প্রিয়তার দিকে।সে চায় বিয়ের পর যা হবে সব হালাল ভাবে হোক।হোক না সেটা মন ভরে দেখা,চোখের তৃষ্ণা মেটানো।সেটাও হালাল ভাবে অধিকারস্বরুপ তারপর হবে।

🖤

যথারীতি রাত গিয়ে নতুন ভোরের সূচনা ঘটলো।নতুন একটা সকাল এলো ধরনীর বুকে।শীতের সকালের এমন আরামদায়ক পরিবেশে সবাই কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।কেউ কেউ আবার হাঁটতে বেরিয়েছে,কেউ আবার রবের ইবাদাতে ব্যস্ত।আজকে সৌরভ নামাজ পড়ে হাঁটতে বেরিয়েছে লেনে।পরণে তার হুডি ও ফোর কোয়ার্টার টাওজার।মুখে মাস্ক।কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে ইসলামিক মোটিভেশনাল স্পিচ শুনছে আর চারিদিকে তাকিয়ে হাঁটছে।পরিবেশটা খুব বেশিই সুন্দর।রোদ ওঠে নি এখনও।কিন্তু আকাশ পরিষ্কার।অনেক ভালো লাগছে হাঁটতে।

প্রিয়তা আর জারাও আজকে হাঁটতে গিয়েছে লেনে।প্রিয়তা জানতো না পথিমধ্যে সৌরভকে দেখতে পাবে সে।খুশিতে তার দুচোখের তারা নেচে উঠে সৌরভকে দেখে।সৌরভও প্রিয়তাকে খেয়াল করেছে।প্রিয়তা জারার হাত ধরে হেঁটে সৌরভের কাছে আসলো।সৌরভ হুডির পকেটে দুহাত ভরে রেখেছে।

জারা:-আরে ভাইয়া আপনিও দেখি আমাদের মতো হাটতে বেরিয়েছেন?

সৌরভ:-হুম,,শীতের সকালে লেনে হাঁটতে অনেক ভালো লাগে।

প্রিয়তা কিছু না বলেই সৌরভকে একমনে দেখে যাচ্ছে।যত দেখে ততই যেন দেখার তৃষ্ণা বেড়ে যায়।এ তৃষ্ণা যে কখনোই মিটবে না।জারার কথায় ধ্যানভঙ্গ হলো প্রিয়তার।

জারা:-তাহলে ভাইয়া দেখা হয়েছে যখন তখন চলেন একসাথেই হাঁটি।

সৌরভ:-আচ্ছা ঠিক আছে।

প্রিয়তা মাঝখানে,প্রিয়তার একপাশে সৌরভ অন্যপাশে জারা,তিনজনেই গল্প করে করে হেঁটে যাচ্ছে।প্রিয়তা নিশ্চুপ,জারা বকবক করতেই আছে আর সৌরভ প্রতিত্তোরে হু হা করছে।

প্রায় ঘন্টাখানেক হাঁটাহাঁটি করে বাসায় ফিরলো ওরা।সৌরভ বাসায় এসেই গেল গোসল করতে।প্রিয়তা ডাইনিংএ চেয়ার টেনে বসে নাস্তা করতে লাগলো।ওর সাথে জারাও ছিলো।

আজকে প্রিয়তা তার বাসায় চলে যাবে পরিবারের সাথে।সে সারা’দের বাসায় ডলি ও তানিয়াদের সাথে যেতে চাইছিলো।কিন্তু মুসকান বারণ করেছে কারণ সামনে তার এইচএসসি পরীক্ষা।এখন বেশি ঘুরাঘুরিতে থাকলে পড়ালেখাতে মারাত্মক ক্ষতি হবে।ফলে কী আর করা অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাসায় যেতে হবে।

সবাই যখন নিচে কথা বলায় ব্যস্ত ঠিক তখন প্রিয়তা পা টিপে টিপে লুকিয়ে চুরিয়ে সৌরভের রুমে ঢুকলো।সৌরভ তখন ল্যাপটপে কিছু একটা করছিলো।প্রিয়তাকে রুমে ঢুকতে দেখে খানিকটা অবাক হলো সে।কপালে ভাঁজ পড়লো।প্রিয়তার এখানে আসার কারণ বুঝতে পারলো না সৌরভ।
প্রিয়তা আলতো পায়ে হেঁটে সৌরভের সামনে এসে দাঁড়ালো।সৌরভ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল;

সৌরভ:-তুমি হঠাৎ এখানে?কী মনে করে?

প্রিয়তা:-কেন আসতে পারি না বুঝি?

সৌরভ:-না তা বলি নি।বাট আমার কাছে কী দরকার থাকতে পারে তোমার?

প্রিয়তা:-অনেক দরকার আপনাকে আমার।মনের কারিগরিতে ত্রুটি দেখা দিয়েছে,তা সারাতে তো একজন মনের ইন্জিনিয়ার দরকার।এবং সেটা হলেন একমাত্র আপনি।

সৌরভ:-বাচ্চা মেয়ে পড়ালেখার নামে নাই,অথচ সারাদিন এসব মাথায় ঘুরে তাই না।এসব বললেও তো আমি পটবো না।

প্রিয়তা:-একটু পটে যান না।কী ক্ষতি হবে পটলে?আপনাকে পটাতে পটাতে দেখা যাবে আমারই বিয়ে হয়ে গেছে।জানেন কালকে এক মহিলা তার ছেলের জন্য আমাকে পছন্দ করেছে।যতটুকু বুঝলাম আম্মুও মনে মনে রাজি।এখন বাসায় নিয়ে গিয়ে আব্বু আর ভাইয়াকে কনভিন্স করার চেষ্টা করবে আম্মু।বাসায় আসার পর আম্মু বললো ছেলে নাকি ভীষণ ভালো,সুন্দর সাথে ডক্টরও ব্লা ব্লা।এখন আমি কী করবো বলেন।আমি আপনাকে চাই।অন্য কাউকে না।সুন্দর দিয়ে আমি খাট্টা খাবো নাকি!আপনার ধারেকাছেও আসবে না কিউটনেসের দিক দিয়ে।

একনাগাড়ে বলা প্রিয়তার কথাগুলো শুনে সৌরভ পুরো গম্ভীর হয়ে গেছে।যদিও তার চেহারার রিয়াকশন দেখে বোঝার কুদরত নেই তার মনে আসলে কী চলছে।প্রিয়তা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সৌরভের দিকে।প্রিয়তা আবারও বললো;

প্রিয়তা:-দেখুন আপনার ভার্জিনিটিতে আমি হাত দিয়েছি,আপনাকে টাচ্ করে আমার ভার্জিনিটিও ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।এমতাবস্থায় আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না।আমি যেহেতু জীবনের প্রথম আপনাকেই স্পর্শ করেছি তাই আমার আপনাকেই চাই।প্লিজ রাজী হয়ে যান।আপনি বিয়ের প্রস্তাব দিলে আমার আব্বু আম্মু চোখ বন্ধ করে রাজী হয়ে যাবে।আমার ভাইয়াও নাকচ করবে না,আপনি এমন একটা ছেলে যাকে সবাই ভীষণ সম্মান করে সাথে ভালোও বাসে।প্লিজ রাজি হয়ে যান।

সৌরভ:-নিচে যাও প্রিয়।তোমার ভাই আমার রুমে তোমাকে দেখলে তুমিই বকা খাবা।

প্রিয়তা আকুতি মিনতি করে তারপর রাগত স্বরে গজগজ করতে লাগলো;

প্রিয়তা:-এমন করছেন কেন?মেয়ে হয়েও বেহায়ার মতো আপনাকে প্রস্তাব দিচ্ছি,এজন্য কী পায়া ভারী হয়ে গেছে আপনার?এত কীসের দেমাগ দেখাচ্ছেন?বুঝতে পেরেছি,আমি তো তেমন ফর্সা নয় ওই মেয়েটা কী যেন নাম হ্যা জেসিকার মতো!এত স্টাইলিশও নই।এজন্যই তো রিজেক্ট করছেন তাই না?ঠিক আছে থাকুন আপনি।মনের মতো সুন্দরী ও ভালো মেয়েকে বিয়ে করুন।জাহান্নামে যান।আমি আর কোনো মিনতি করবো না।গুডবাই ফরেবার।ভালো থাকুন মনের মতো মেয়েকে বিয়ে করে।আমাকে আর দেখতে হবে না।আমি ওই ডক্টর ছেলেটাকেই বিয়ে করবো।

রাগে লাল হয়ে রুম থেকে প্রায় ঘুর্ণিঝড়ের মতো তান্ডব চালিয়ে বেরিয়ে গেলো প্রিয়তা।সৌরভ মুচকি হাসতে গিয়েও হাসলো না।প্রিয়তা আজ বড্ড রেগেছে।তবে আশা করা যায় রাগটা বেশিদিন স্থায়ী হবে না।ওই ডক্টর ছেলেটা বিয়ের প্রস্তাব রাখার আগেই সে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে ফেলবে।আর মাত্র কিছুদিন সবর করতে হবে,তারপর তার প্রিয়তমাকে মনের খাঁচায় বন্দী করে রাখবে সে।এসব ভেবেই আনমনে হেসে ল্যাপটপে মনোনিবেশ করলো সৌরভ।

🖤

প্রিয়তা নিজের কাপড় চোপড় সব গুছিয়ে নিয়েছে।একটু পর বাসায় চলে যাবে ওরা।প্রিয়তার রাগ এখনো কমে নি।তখন থেকেই রাগে ফুলে ফেঁপে বসে আছে সে।

কিছুক্ষণ পর মুসকানের ডাক শোনা গেল।প্রিয়তাকে নিচে আসতে বলছে সে।প্রিয়তা বোরকা পড়ে তৈরি হয়েই আছে।ডাক পড়তেই নিচে চলে আসে সে তার ব্যাগ নিয়ে।

আবিররাও তৈরি হয়ে একদম নিচে নেমে এসেছে।ওদের জন্য গাড়ি অপেক্ষা করছে।আবিররা বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলো।একটু পর মুসকানরাও বিদায় নিলো বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে।সৌরভ নিচেই ছিলো।সে চুপচাপ প্রিয়তার কার্যকলাপ লক্ষ্য করছে।প্রিয়তা রাগের চোটে একবারও সৌরভের দিকে তাকালো না।সৌরভ সবাইকে হাসিমুখে বিদায় জানালো।প্রিয়তা একদম চুপচাপ।

মুসকানের সাথে বাইকে ওঠে বসলো প্রিয়তা।ওদের বাবা মি.মুজাফফরেরও বাইক আছে।ওনার পিছনে মিসেস প্রমি বসেছেন।মিসেস শিলা প্রিয়তার কপালে চুমু খেয়ে আদুরে কন্ঠে বললেন তাকে ভালো করে মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করতে।প্রিয়তা মাথা নেড়ে সায় জানালো।

শেষবারের মতো সৌরভের দিকে একবার তাকালো প্রিয়তা।এই তাকানোতে জমে রয়েছে একরাশ অভিমান।রওনা দিলো ওরা বাসার উদ্দেশ্যে।দেখতে দেখতে একসময় বাড়ির সীমানা ছাড়িয়ে গেল।দীর্ঘঃশ্বাস ছাড়লো প্রিয়তা।আজ বুকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে তার।এতদিন সৌরভকে দেখে দেখে বদঅভ্যেস হয়ে গেছে।এখন থেকে চোখের দেখাটাও দেখতে পারবে না।ভাবতেই বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করে প্রিয়তা।#তুমি_আমার_প্রিয়তমা
#লেখিকা_Amaya_Nafshiyat
#পর্ব_১২

বাসায় এসেই নিজের রুমে চলে গেল প্রিয়তা।মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে আছে তার।এই মুহূর্তে ইচ্ছা করছে সৌরভের মাথার চুলগুলো টেনে ছিঁড়ে ফেলতে।রাগে শরীরটা জ্বলে যাচ্ছে।প্রচন্ড অভিমান কাজ করছে মনের ভেতর।সৌরভ আসলেই তাকে কখনো পাত্তা দেয় নি,সেই শুধু বেহায়ার মতো পিছু পিছু ঘুরেছে।

কিছুক্ষণ পর মুসকানের রুমে বই খাতা নিয়ে যাওয়ার ডাক পড়ে তার।নিজেকে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক করে বই খাতা নিয়ে ভাইয়ের রুমে ছুটলো সে।পড়াশোনায় একটু এদিক ওদিক হলে মাথায় গাট্টা খেতে হবে।

🖤

বাসা এখন প্রায় খালিই বলা যায়।ডলি,তানিয়া,আকিল,জুই,পান্না ওরা কেউ বাসায় নেই।ওরা সবাই আবিরের শ্বশুর বাড়ি গেছে আবিরদের সাথে।বাসায় শুধু পরিবারের বড় রা,ভাই ভাবী ওনারা আছেন।গতকালকেও উৎসব মুখর পরিবেশ ছিলো পুরো বাসা জুড়ে,অথচ আজ একদম আগের মতো স্বাভাবিক হয়ে গেছে সবকিছু।পরিবারে এক্সট্রা সদস্য শুধু মিসেস জেসমিন ও ওনার স্বামী।আর কেউ নেই।

সৌরভের মনটা খালি খালি লাগছে।তার কাছে মনে হচ্ছে বাসার পরিবেশ একদম বিরসতায় ছেয়ে গেছে।কারও হাসিমাখা মুখটাকে সে ভীষণ মিস করছে।সারাবাড়ি জুড়ে বিচরণ করা সেই চঞ্চল কিশোরী মেয়েটাকে সে অনেক বেশি মিস করছে।এই একটামাত্র মানুষ চলে গেছে দেখে বাসাটাকে সম্পূর্ণ ফাঁকা ফাঁকা লাগছে তার কাছে।যাকে সে মিস করছে সে আর কেউ নয়,তারই প্রিয়তমা প্রিয়তা।

সৌরভ ধীরগতিতে হেঁটে হেঁটে নিজের বাবা মায়ের রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে নক করলো।মিসেস মিনা ভেতর থেকে সাড়া দিতেই সৌরভ ভেতরে প্রবেশ করে।মিসেস মিনা বিছানায় বসে বাটার পান সাজাচ্ছিলেন,ছেলেকে দেখে এক অমায়িক হাসি দিয়ে বললেন;

মিসেস মিনা:-এখানে এসে বস বাবা।

সৌরভ মুচকি হেসে মায়ের সামনে এসে মায়ের কোলে মাথা রেখে সরাসরি শুয়ে পড়লো।মিসেস মিনা সস্নেহে ছেলের মাথায় আদুরে পরশ বুলিয়ে দিতে লাগলেন।স্নেহ মাখা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন;

মিসেস মিনা:-তোর কী মন খারাপ বাবা?কিছু হয়েছে কী?

সৌরভ:-নাহ আম্মু,আমি ঠিক আছি।কী আর হবে?

মিসেস মিনা:-ওহহ,

দুজনেই চুপ।কয়েক মুহূর্ত নিরবতার পর সৌরভ নিজে থেকেই বললো;

সৌরভ:-আম্মু,,

মিসেস মিনা:-হুম বাবা!

সৌরভ:-আমি তোমায় আগে বলেছিলাম না আমার একজনকে পছন্দ হয়েছে!

মিসেস মিনা:-হ্যা,

সৌরভ:-জানতে চাও না সে কে হতে পারে?

মিসেস মিনা:-না বললে কীভাবে জানবো?তুই আমাদের কাউকেই কিছু জানাস নি।কীভাবে আন্দাজ করি বলতো?

সৌরভ হাসলো মায়ের কথা শুনে।

সৌরভ:-শুনে খুশি হবে কী না এজন্য বলতে সংকোচ বোধ করছি।

মিসেস মিনা:-কোনো সংকোচ করবি না,মায়ের কাছে আবার সংকোচ কীসের?আমার ছেলে যখন পছন্দ করেছে তখন সেরা কাউকে পছন্দ করেছে বলে আমার বিশ্বাস।এখন আমায় সব বলে দে বাবা,মেয়ের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাই।

সৌরভ:-আচ্ছা আম্মু,প্রিয়তাকে তোমার কাছে কেমন লাগে?(জানতে চেয়ে)

মিসেস মিনা:-প্রিয়ু!!তাকে তো অনেক ভালো লাগে।মেয়েটা ভীষণ প্রাণবন্ত।সবার সাথে হেসেখেলে কথা বলে।আমার কাছে ওকে খুব ভালো লাগে।মেয়েটার মধ্যে প্যাঁচগোছ কিছু নেই।যা বলে সোজাসাপ্টা বলে দেয়।স্পষ্টভাষী সাথে অমায়িকও।ও বাসায় আসলে বাসাটা একদম উৎসবমুখর হয়ে যায়।

সৌরভ:-তারমানে ওকে ভালো লাগে তোমার?

মিসেস মিনা:-হ্যা,,কিন্তু হঠাৎ ওর কথা কেন তুললি?(কৌতুহলী কন্ঠে)

সৌরভ:-এই সেই মেয়ে যাকে আমি পছন্দ করেছি।

সৌরভের কথা শুনে মিসেস মিনা বিস্মিত হলেন খুব।ওনি একবারের জন্যও এমন কিছু ভাবেন নি।তারমানে প্রিয়তাকেই মনে ধরেছে তাঁর ছেলের?

মিসেস মিনা:-প্রিয়ুকে তুই পছন্দ করেছিস?প্রিয়ু কী জানে এ কথা?

সৌরভ:-আমি যে তাকে পছন্দ করি সে এ কথা জানে না,তবে ও যে আমায় পছন্দ করে সেটা আমি জানি!

মিসেস মিনা এতক্ষণ ছেলের কথা বিস্ময়ের সহিত শুনলেন।তার ছেলে আর কাউকে নয় প্রিয়তাকে দেখেই ফিদা।অথচ প্রিয়তার চাইতে জুই অনেক সুন্দর আর স্টাইলিশ।

মিসেস মিনা:-প্রিয়ু তোকে বলেছে যে সে তোকে পছন্দ করে?

সৌরভ:-হুম।তবে আমরা কেউই কোনোরকম সম্পর্কে জড়াই নি।আমি ওকে পছন্দ করলেও কখনো ওর দিকে অন্য নজরে তাকাই নি।আমি চাই আমাদের সম্পর্কটা হালালভাবে সৃষ্টি হোক।এজন্য তোমাদের মতামত দরকার।আমি চাইলেই ওকে বলতে পারতাম যে আমি তাকে চাই।কিন্তু আমি তোমার কথা ভেবে কিছুই বলি নি।কারণ চাই নি তোমার অবাধ্য হতে।যদি তুমি প্রিয়তাকে নিজের ছেলের বউ হিসেবে মেনে নিতে না পারো,এই আশংকায়!এখন দেখাে তুমি যা বলবে তাই হবে!তোমার অবাধ্য হবো না আম্মু।

মিসেস মিনা আবেগাপ্লুত হয়ে গেছেন ছেলের কথা শুনে।সৌরভের কপালে চুমু খেয়ে আদুরে কন্ঠে বললেন;

মিসেস মিনা:-এজন্যই তুই আমার সব থেকে বেশি আদরের রে বাপ।আমার অন্যান্য সন্তানরা হয়তো নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিয়ে নিতে পারে,কিন্তু একমাত্র তুইই আমার কথামতো চলিস সবসময়।আমার আদেশ নিষেধের তোয়াক্কা করিস।আমি তোর কানাডা যাওয়ার সময় বাঁধা দিই নি তাই তুই এই সিদ্ধান্তে এগিয়েছিলি,তবে আমি জানি আমি যদি তোকে সেদিন একবার বাঁধা দিতাম তবে তুই জীবনেও কানাডাতে যাওয়ার চিন্তা করতি না।তুই যখন বলেছিস প্রিয়ুকে তোর ভালো লেগেছে,তখন তুই নিশ্চিত থাক,প্রিয়ুকে আমি তোর জন্য এনেই ছাড়বো।কয়েকটা দিন পর যাবো বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।আমার সোনার টুকরো ছেলেকে তারাও খুশি মনে মেয়ে দেবে,না করার প্রশ্নই আসে না।

সৌরভ:-অনেক ভালোবাসি তোমায় আম্মু।তুমি হচ্ছো আমার বেস্ট আম্মু,কখনো কিছুতে মানা করো না।

মিসেস মিনা প্রসঙ্গ পাল্টে বললেন;

মিসেস মিনা:-আচ্ছা ঠিক আছে,তুই খেয়েছিস কিছু?

সৌরভ:-নাহ আম্মু।

মিসেস মিনা:-তাহলে আয়,তোর খাবার বেড়ে দিই।

সৌরভ শোয়া থেকে ওঠে বসতেই মিসেস মিনা তাকে আসতে বলে নিচে চলে গেলেন।সৌরভও হাসিমুখে খুশিমনে খেতে চলে গেল।

🖤

এভাবেই কেটে গেছে প্রায় পাঁচ-পাঁচটা দিন।আজকে সৌরভের পরিবার প্রিয়তাদের বাসায় আসবে।কীজন্য আসছে তা বড়রা ইঙ্গিত পেয়েছেন কিছুটা,তবে বিস্তারিত কেউ কিছুই জানেন না।মিসেস প্রমি কাজের মেয়েদের নিয়ে নানারকম রান্না বান্না করতে ব্যস্ত।প্রিয়তা নিজের রুমে বসে বসে বই পড়ছে একমনে।একটু আগে সীমের খোসা ও পেয়াজ রসুনের খোসা ছাড়াতে সাহায্য করে এসেছে তাদের।তাকে দিয়ে যে আর কিছুই হবে না সেটা মিসেস প্রমি ঢের ভালো জানেন।

এই পাঁচদিন,সৌরভ প্রিয়তাকে আর প্রিয়তা সৌরভকে শুধু মিসই করে গেছে।না কেউ কারো দেখা পেয়েছে আর না কেউ কারও সাথে যোগাযোগ করেছে।কিছুই করে নি তবে শুধু অনুভব করেছে একজন আরেকজনকে।কল্পনার জগৎ সাজিয়েছে দুজন দুজনাকে নিয়ে।প্রিয়তা একদিন কলেজে গিয়েছিল শুধু,গিয়ে পড়ার জন্য ইমপোর্টেন্ট কিছু নোট নিয়ে এসেছে,সাথে ফ্রেন্ড মিশির সাথে সবকিছু শেয়ার করে এসেছে।মিশি তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছে ভাগ্যে থাকলে সৌরভ এমনিতেই তার হবে।

এখন প্রিয়তা নামাজে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেছে।তাকে এখন আর এ ব্যাপারে কিছু বলতে হয় না।সে নিজে থেকেই এখন নামাজ পড়ে।গান শোনা তুলনামূলক কমিয়ে দিয়েছে।কলেজ থেকে ফেরার পথে কয়েকটা ইসলামিক মোটিভেশনাল বই কিনে নিয়ে এসেছে।দুটো অলরেডি পড়া শেষ।অনেক অনুপ্রাণিত হয়েছে সে।নিজেকে এখন পালকের মতো হালকা মনে হয় তার।এই যে গুনাহ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার প্রচেষ্টা,এতেই সে অন্য এক প্রিয়তাতে রূপান্তরিত করার চেষ্টা করছে নিজেকে।

প্রায় বিকেলের দিকে সৌরভরা সবাই হাজির খান মঞ্জিলে।ড্রয়িং রুম জুড়ে সবাই আড্ডা দিচ্ছে,কথা বলছে নাশতা খাচ্ছে।প্রিয়তাও আছে সবার সাথে।সৌরভের প্রতি চাপা ক্ষোভ তার এখনও কমে নি।তাই সৌরভের দিকে বেশি তাকাচ্ছেও না।কিন্তু সৌরভ বারংবার ঘুরেফিরে প্রিয়তাকেই দেখছে।এ দেখার যেন শেষ নেই।এতদিনের না দেখার তৃষ্ণা মেটাতে ব্যস্ত সে।

হঠাৎ করে মি.শফিক প্রসঙ্গ পাল্টে বললেন;

মি.শফিক:-তা ভাইজান,মেয়েকে কী বিয়ে দেবেন না?

মি.মুজাফফর:-জ্বী ভাইসাহেব,অবশ্যই দিবো।তবে ছেলের ইচ্ছা তার বোন যাতে হাইয়ার এডুকেটেড হয়,নিজের পায়ে যেন আগে দাঁড়ায় তারপর বিয়ে।তাই মুসকানের কথার ওপর আমিও যাচ্ছি না।পড়বে যখন পড়ুক মেয়েটা সমস্যা নেই।

মি.শফিক:-দেখুন ভাইজান,আমি যা বলি সোজাসাপ্টা বলে দিই।আসলে আমি আমার ছেলে সৌরভের জন্য আপনার মেয়েকে পছন্দ করেছি।পড়ালেখা নিয়ে সমস্যা নেই।প্রিয়ু মা ডলি তানিয়াদের সাথে পড়তে পারবে।আমাদের কারোরই এ নিয়ে অসুবিধা নেই।শুধু আপনার মেয়েটাকে ছেলের বউ হিসেবে নিতে চাই।

এতক্ষণ যাবৎ ওনাদের দুজনের কথা শুনছিলো প্রিয়তা।তবে মি.শফিকের লাস্ট কথাগুলো শুনে যেন কারেন্টের শক খেল সে।ঝট করে তাকালো সৌরভের দিকে,দেখলো সৌরভ তারই দিকে তাকিয়ে আছে।সে যারপরনাই বিস্মিত হয়েছে।এখনও ঘোরের মধ্যে রয়েছে,বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তার।

মি.মুজাফফর একবার স্ত্রীর দিকে আর একবার ছেলের দিকে তাকালেন।ওনি আসলে বুঝতে পারছেন না প্রতুত্তরে কী জবাব দেবেন।মুসকান আগের তুলনায় গম্ভীর হয়ে গেছে।মিসেস প্রমি নির্বিকার।এবং প্রিয়তা হতভম্ব।

মিসেস মিনা:-ভাই আপনি তো চেনেন আমার সৌরভকে।ছোট থেকেই দেখে আসছেন।মা হয়ে বলছি,আজতক নিজেই আমি আমার ছেলের কোনো খুঁত খুঁজে পাই নি।ছেলেটা আমার সবসময়েরই সাদামাটা ও স্পষ্টভাষী।গর্ব করে বলতে পারি আমার ছেলে অন্যান্য ছেলেদের আইডল।

মি.মুজাফফর:-না আপা,আমি জানি সৌরভ কেমন ছেলে।আমি আমার মেয়ের জন্য এমন একটা ছেলেই খুঁজি সবসময়।কিন্তু মেয়ের আগে ছেলের মতামতটাকে প্রাধান্য দিতে হবে এক্ষেত্রে।কারণ সত্যি বলতে আমাদের থেকে সবচাইতে বেশি যদি প্রিয়ুর ওপর কারও অধিকার থেকে থাকে তবে তা হলো মুসকানের।ছেলে যদি মেনে নেয় তবে আমার এ বিষয়ে কোনো আপত্তি নেই।

মিসেস শিলা:-বাবা মুসকান,রাজী হয়ে যা বাবা।তুই তো চিনিস সৌরভকে!তুই নিজেই তো সবসময় তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকিস!তবে দিবি না প্রিয়ুকে তার হাতে তুলে?আমাদের পরিবারের ছেলেটা সোনার টুকরো ছেলে।এমন ছেলে লাখে একটা মেলে।তুই অমত করিস না বাবা।

মুসকান বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে সময় লাগিয়ে চিন্তা করলো।তারপর গম্ভীর স্বরে জবাব দিলো;

মুসকান:-মেয়ে হয়ে যখন জন্মেছে তখন বিয়ে তো দিতেই হবে।এবং পাত্র হিসেবে সৌরভ ভাইয়া মন্দ নয় তা আমি জানি।কিন্তু আমার বোনকে আমি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই।আমি চাই সেও নিজের পায়ে দাঁড়াক।যাতে খারাপ কোনো পরিস্থিতিতে সে পড়লেও নিজেকে সামলে নিতে পারে।বিয়ে দিতে চাচ্ছিলাম না এখন।এইচএসসিটাও দেয় নি।এত জলদি বিয়ে,,,

মুসকানের কথাগুলো সবাই বুঝতে পারছে।এবার সৌরভ নিজে কথা বলে উঠে;

সৌরভ:-দেখাে মুসকান,একজন ভাই হিসেবে তুমি এমনটাই চাইবে তা আমরা জানি।শুধু তুমি কেন,একজন ভাই হিসেবে আমারও এমন দায়িত্ব আছে।তবে তুমি নিশ্চিত থাকতে পারো তোমার বোনের পড়াশোনা নিয়ে।বিয়ের পর আমি নিজে তাকে পড়াশোনায় গাইড করবো।আমিও চাইবো আমার বউ পড়াশোনা কমপ্লিট করুক।আর যেহেতু আত্মীয়ের মধ্যে,সেহেতু প্রিয়তার জন্য সেটা আরও সুবিধাজনক হবে।

—➤আপন ফুপ্পি আছেন যে তাকে মায়ের মতো আগলে রাখবে।এবং আমরা প্রিয়তাকে যেভাবে আগলে রাখবো,অন্য কোথাও বিয়ে দিলে হয়তো এমনটা নাও হতে পারে।এমনকি অন্য পরিবার চাইবে তাদের বৌমা সংসারী হোক পড়াশোনা ছেড়ে,বাট আমরা এটা চাইবো না।আমাদের বাসায় ওকে জীবনেও কেউ ফোর্স করবে না ঘরের কাজকর্ম এবং রান্নাবান্না করার জন্য।সে তার ইচ্ছে মতো থাকবে,যেমনটা নিজের বাসায় থাকে।এখন দেখাে মুসকান,তুমি যেটা ভালো বুঝো।পড়াশোনা নিয়ে চিন্তা না করলেও চলবে।এটা তুমি না বললেও আমি চাইতাম।

সৌরভের কথার গুরুত্ব প্রিয়তার পরিবারের সবাই বুঝতে পেরেছে।সৌরভ যে মিথ্যা বলার ছেলে নয় তা সবাই জানে।এককথার ব্যক্তিরা এমনই হয়।প্রিয়তা ধ্যান দিয়ে তাকিয়ে আছে সৌরভের দিকে।তার কল্পনা যে এত জলদি বাস্তবে রূপ দিতে চাচ্ছে সৌরভ তা সে স্বপ্নেও কখনো ভাবে নি।বেশি খুশির ঠেলায় অনুভূতিহীন হয়ে গেছে বেচারি।কেউ একটা চিমটি কাটলে হয়তো হুঁশে ফিরে আসতো।

মুসকান বেশ কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে জবাব দিলো;

মুসকান:-আপনাকে আমার বোনজামাই হিসেবে মেনে নিতে কোনো সমস্যা নেই।এখন প্রিয়তা যদি আপনাকে পছন্দ করে,তবে আমরা বিষয়টা নিয়ে সামনে আগাবো।প্রিয়ু?তোর কী মত?সৌরভ ভাইয়াকে কী তোর স্বামী হিসেবে পছন্দ হয়েছে?

মুসকানের কথা শুনে হুট করে প্রিয়তা মারাত্মক লজ্জায় পড়ে গেল।সবার সামনে এমন একটা প্রশ্ন করায় সে শরমে নুয়ে গেছে।

মুসকান:-কী হলো জবাব দে?

প্রিয়তা হুট করে বসা থেকে ওঠে লজ্জা পেয়ে একদৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল।যাওয়ার আগে জানিয়ে গেল;

প্রিয়তা:-আমি জানি না।তোমরা যা বলবে তাই হবে।

প্রিয়তার লজ্জা পেয়ে চলে যাওয়া দেখে সবাই সমস্বরে হেসে উঠলো।মি.সালাম হেসে হেসে বললেন;

মি.সালাম:-মেয়েটা ভারী লজ্জা পেয়েছে।

বিয়ের প্রসঙ্গ নিয়ে সবাই কথা বলতে লাগলো।তবে একটা সময় দ্বিমত প্রকাশ করলো মুসকান আর সৌরভ।সৌরভ চায় একসপ্তাহের মধ্যে বিয়ে করতে,এবং মুসকান চায় প্রিয়তার এইচএসসি পরীক্ষার পর বিয়ে দিতে।অনেকক্ষণ কথাবার্তার পর সৌরভের কথাই প্রাধান্য পেল সবার কাছে।সৌরভ যুক্তি দিয়ে মুসকানকে কুপোকাত করে দিয়েছে।সৌরভ মুসকানকে কথা দিলো সে নিজে প্রিয়তার এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে।সৌরভ যে এতদিন তার প্রিয়তমার থেকে দূরে থাকাটা সহ্য করতে পারবে না।তাই এত তর্কবিতর্ক।

ঠিক হলো সামনের শুক্রবারেই বিয়ে।গায়ে হলুদ,মেহেন্দি অনুষ্ঠান এসব না হলেও বিয়ে সেন্টারেই হবে।কারণ দুই পরিবারের বহু আত্মীয় স্বজন আছে।এবং ওনারা বিয়েতে আসবেনই আসবেন।বাসায় একটা বিয়ের অনুষ্ঠান করার মতো এত জায়গা নেই।তবে বিয়ে সেন্টারে হলেও বিষয়টা একদম নিকটাত্মীয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।এত বেশি ঝুট-ঝামেলা সৌরভ পছন্দ করে না।

সৌরভ নিজেই তার পছন্দ অনুযায়ী সবকিছু ডিসকাস করলো মুসকানের সাথে।বাকিরা নিরব শ্রোতাদের মতো সবকিছু শ্রবণ করে গেল।সৌরভের অধিকাংশ কথাই মুসকানের পছন্দ হয়েছে তাই মুসকানও সৌরভের প্রতিটি কথায় সায় দিয়েছে।বাকিরা তো সবকিছুতেই একপায়ে খাঁড়া।

মি.মুজাফফর ও মি.সালাম সৌরভকে প্রিয়তার সাথে একান্তে কথা বলার জন্য পাঠালেন প্রিয়তার রুমে।যতই প্রিয়তার রুমের দিকে এগোচ্ছে ততই সৌরভের বুক ধুকপুক করছে অজানা আশংকায়।সে জানে না তাকে দেখে প্রিয়তা কেমন রিয়েক্ট করবে।বহুত কষ্টে নিজেকে ধাতস্থ করে রুমের ভেতর প্রবেশ করলো সৌরভ।

রুমে ঢুকেই হার্টবিট মিস হলো তার।কোমড় অবধি লম্বা চুল ছেড়ে দিয়ে বুকশেলফের সামনে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়তা।শরীরে ওড়না নেই।শরীরে এক অন্যরকম শিহরণ খেলে গেল তার।অদ্ভুত ফিলিংস!

প্রিয়তাও অবাক হয়েছে সৌরভকে হঠাৎ তার রুমে দেখে।সে ভাবে নি সৌরভ এভাবে তার রুমে চলে আসবে।প্রিয়তা দ্রুত একটা ওড়না শরীরে জড়িয়ে নিলো।সৌরভ দরজা হালকা ভিড়িয়ে রাখলো।প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে হাসলো সে।হাসি দেখেই গলে গেছে প্রিয়তা।

সৌরভ এগিয়ে এলো প্রিয়তার দিকে।প্রিয়তা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে আগের জায়গায়।যেন কেউ তাকে সম্মোহন করে রেখেছে।সৌরভ একটা আঙ্গুল প্রিয়তার গালে ছুঁয়ে দিলো।আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললো প্রিয়তা।

সৌরভ:-আমার ভার্জিনিটিতে হাত দিয়েছো তুমি,এত সহজে কীভাবে ছেড়ে দিই বলো তো?এজন্যই আজকে এমন সারপ্রাইজ দিলাম।কেমন লাগলো সারপ্রাইজ?

প্রিয়তা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ঢোক গিলে জবাব দিলো;

প্রিয়তা:-খুবই বাজে।এতদিন কষ্ট দিয়ে এখন আসছেন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।হুহ করবো না বিয়ে আপনাকে!

সৌরভ আরেকটু এগিয়ে প্রিয়তার ঠোঁটের ওপর আঙ্গুল রাখলো।ফিসফিসে কন্ঠে বললো;

সৌরভ:-হুঁশশ,,এমন কথা বলো না।তুমি যেহেতু আমায় ছুঁয়েছো,সেহেতু আমাকে বিয়েও তোমায় করতে হবে।তৈরী থেকো,একসপ্তাহ পর উঠিয়ে নিয়ে যাবো তোমাকে।একদম নিজের করে নিয়ে।তখন কোনো বাঁধা থাকবে না আমার তোমাকে অন্তরঙ্গ ভাবে স্পর্শ করতে।এতদিন তুমি তোমার ভেলকি দেখিয়েছো,বিয়ের পর আমার ভেল্কি দেখতে পাবে।যাকগে,এখন আসি তাহলে।বি রেডি প্রিয়,,

প্রিয়তা তাকিয়েই আছে সৌরভের চোখের দিকে।এ দেখা যেন অফুরন্ত।সৌরভ প্রিয়তার মাথায় আলতো ভাবে হাত বুলিয়ে দিয়ে চলে গেল।প্রিয়তা তাকিয়েই আছে তার যাওয়ার পানে।এখনও ঘোর ভাঙে নি তার।

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here