তুমি আমার প্রিয়তমা পর্ব ৭+৮

#তুমি_আমার_প্রিয়তমা
#লেখিকা_Amaya_Nafshiyat
#পর্ব_০৭

একমনে প্রিয়তাকে নিয়ে চিন্তা করছে সৌরভ।বিয়ে করলে প্রিয়তাকেই করবে ভেবে রাখলো।কারণ যাকে পছন্দ হয়েছে তার সাথে নির্বিঘ্নে সুন্দরমতো সংসার করা যাবে।দুজনের একটা টোনাটুনির সংসার গড়ে তোলার পরিকল্পনা করাই যায়!

এসব কথা ভাবতে ভাবতেই ছাদ থেকে নেমে নিজের রুমে চলে গেল সৌরভ।তারপর গোসল করে ড্রয়িং রুমে চলে এলো সে।

🖤

প্রিয়তা নিজের রুমে বসে লজ্জায় লাল নীল হতে হতে শেষ।এত লজ্জা কেন যে লাগছে বুঝতে পারছে না সে।সে এত সহজে কোনো কিছুতে লজ্জা পায় না।ভাবতেই অবাক লাগছে যে,ডানপিটে দুষ্টু মেয়েটা এখন লজ্জাবতীও হয়ে গেছে।সৌরভের কথা ভাবলেই এখন প্রিয়তার গাল দুটো ব্লাশিং হয়ে যায়।ছেলেটা যে এই কয়েকটা দিনে তার মন চুরি করে নিয়েছে!

এ-সব ভাবার মধ্যেই তানিয়া রুমে এসে প্রিয়তাকে ডেকে নিচে চলে গেল।প্রিয়তাও নিজেকে ঠিকঠাক করে নিচে চলে আসে।এসেই মুসকানকে দেখতে পায় সে।প্রিয়তার বড়ভাই হলো মুসকান।মুসকান আর এক বছর পর সফটওয়্যার ইন্জিনিয়ার হয়ে যাবে।

প্রিয়তা মুসকানকে অনেক ভয় পায়।তার ভাইটা যে আগুনের গোলা।রাগ তার নাকের ডগায় থাকে।প্রিয়তার ব্যাপারে তো সে হাই লেভেলের কড়া।প্রিয়তা দুষ্টামি করলে মুসকান তাকে ধমকেই সাইজ করে দেয়।মুসকানের সাথে প্রিয়তার মা মিসেস প্রমিও প্রিয়তাকে শাসনে রাখেন।প্রিয়তা সবকিছুতে একমাত্র সাপোর্ট পায় তার বাবা মি.মুজাফফরের কাছে।হাজার দুষ্টামি করলেও বাবার কারণে সে সবসময় পার পেয়ে যায়।বাবার একমাত্র আদরের আহ্লাদী রাজকন্যা বলে কথা!

প্রিয়তা ভাইয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো;

প্রিয়তা:-কখন এলে ভাইয়া?

মুসকান কোকের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বললো;

মুসকান:-এই তো কিছুক্ষণ আগে।কী অবস্থা তোর?পড়ালেখা থেকে তো পার পেয়ে গেছিস মনে হয়!কল দিলে রিসিভ করিস না,ফোন কোথায় থাকে তোর?(জিজ্ঞাসু কন্ঠে)

প্রিয়তা:-ইয়ে মানে ভাইয়া,খেয়াল করি নি আসলে।

মুসকান:-তা খেয়াল থাকবে কী করে!সারাদিন তো টইটই করে ঘুরিস।কেউ যে ফোন দিতে পারে তা তো মনে থাকে না।

এই বলে একটা পলিথিনের প্যাকেট এগিয়ে দিলো প্রিয়তার দিকে।প্রিয়তা হাত বাড়িয়ে নিলো তা।প্যাকেটের ভেতরে চিপস,চকোলেট,জুস আরও হাবিজাবি কী যেন।

মুসকান:-একা একা খাস না।ডলি,তানু,জুই,পান্না ওদেরকেও দিস।

প্রিয়তা মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে বললো;

প্রিয়তা:-আচ্ছা দিবো নে।আম্মু আব্বু এলেন না কেন ভাইয়া?

মুসকান:-ওনারা কালকে আসবেন।আজকে আব্বুর হসপিটালে ইমারজেন্সি ছিলো।তাই আব্বুর জন্য আম্মুও আসতে পারেন নি।

প্রিয়তা:-ওহহো।

সৌরভও কোকের গ্লাসে চুমুক দিয়ে মুসকানকে জিজ্ঞেস করলো;

সৌরভ:-তা তোমার পড়ালেখা কেমন চলছে মুসকান?

মুসকান:-আলহামদুলিল্লাহ,ভালোই চলছে।তা ভাইয়ার জবের ব্যাপারটা কী হলো?

সৌরভ:-কানাডায় থাকতেই কনফার্ম ছিলো সবকিছু।জানুয়ারি ১ তারিখ থেকে জয়েনিং।

মুসকান:-ওহহ।

একমুহূর্ত নিরবতা।তারপর আকিল মুসকানের পিঠে আলতো ভাবে চাপড় মেরে জিজ্ঞেস করলো;

আকিল:-যাবি আজ কোথাও বেড়াতে!অনেকদিন হলো কোথাও ঘুরতে যাই না।

মুসকান:-আজকে এমনিতেই আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেল সবাই মিলে মৌলভীবাজার যাবো।তুই চাইলে এড হতে পারিস আমাদের সাথে।

আকিল:-আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে।

মিসেস মিনা:-কী রে আকিল?এখন ঘুরতে গেলে বিয়ে বাড়ির কত কাজ বাকি সেসব করবে কে?

আকিল:-আরে বড় আম্মু চিন্তা করো না।আমরা চলে আসবো তো!আজকে থেকে মুসকানও আমাদের সাথে থাকবে।তো হাতে হাতে সব কাজ হয়ে যাবে।কীরে মুসকান কিছু বল?

মুসকান:-হ্যা আন্টি।আমি আজকে থেকে এখানেই থাকবো।কালকে আব্বু আম্মুও চলে আসবেন।চিন্তা করবেন না,সবকাজ সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করবো আমরা।

মিসেস মিনা:-আচ্ছা ঠিক আছে।কালকে কিছু কেনাকাটা করতে যেতে হবে মার্কেটে।কালকে কিন্তু কোথাও যেতে পারবি না বলে রাখলাম।

আকিল এবং মুসকান একসাথে আচ্ছা বলে উঠলো জবাবে।হঠাৎ করে প্রিয়তা টাকা চাইলো মুসকানের কাছে।বললো;

প্রিয়তা:-ভাইয়া আমাকে টাকা দিয়ে যাও।

মুসকান:-টাকা দিয়ে কী করবি তুই?এই না খাবার জন্য কতকিছু কিনে আনলাম!

প্রিয়তা:-দাও না ভাইয়া প্লিজ।আমার একটু দরকার আছে।

মুসকান কী মনে করে জেরা করা ছাড়াই পকেট থেকে ৫০০ টাকার নোট বের করে হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো;

মুসকান:-এই নে।খালি উল্টাপাল্টা খাতে খরচ করবি,তো তোর খবর আছে।

প্রিয়তা দাঁত কেলিয়ে হেসে জবাব দিলো;

প্রিয়তা:-নাহ ভালো কাজেই খরচ করবো।

কিছুক্ষণ পর আকিল আর মুসকান বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো মৌলভীবাজার যাওয়ার উদ্দেশ্যে।সৌরভ আর আবির শুধু বাসায় আছে।

আবিরের শ্যামলি ও শুকরিয়া মার্কেটে নিজের ৩ টা দোকান আছে।একটা ছেলেদের কাপড় চোপড়,একটা মেয়েদের কাপড় চোপড় এবং একটা কসমেটিকস ও অর্নামেন্টসের বিরাট দোকান।এই শো রুম গুলো চালানোর জন্য আলাদা করে মানুষ রাখা আছে।আবির শুধু মাঝেমধ্যে তদারকি করে,হিসাব নিকাশ চেক করে ও প্রতিদিনের টাকা নিয়ে আসে।ব্যস আর তেমন একটা কাজ নেই তার।

আকিল শাহজালাল ইউনিভার্সিটির অনার্স ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট।ডলি এবং তানিয়া এমসি কলেজের স্টুডেন্ট।ডলি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে এবং তানিয়া বিবিএ ফার্স ইয়ারে।

সৌরভ আর আবির বসে বসে গল্প করছে।ডলি, তানিয়া,জুই ও পান্নাও আছে সেখানে।প্রিয়তা আবিরের কাছে দাঁড়িয়ে আছে।হঠাৎ করে প্রিয়তা আবিরকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে;

প্রিয়তা:-আবির ভাইয়া,চলো না আজকে মেলায় যাই আমরা।আমি আমার ভাইয়ার কাছ থেকে ৫০০ টাকা রেখেছি।আমার কাছে আগের আছে ১০০০ টাকা।টুকটাক কিছু কিনেই চলে আসবো।প্লিজ যাই চলো।

আবির:-কীসের মেলা রে?(ভ্রু কুঁচকে)

ডলি:-ভাইয়া ও বানিজ্য মেলার কথা বলছে।

সৌরভ:-বানিজ্য মেলা কবে শুরু হলো?

তানিয়া:-এই তো ভাইয়া কিছুদিন আগে।

প্রিয়তা:-প্লিজ ভাইয়া প্লিজ প্লিজ চলো না।সারা আপুকেও আসতে বলবো।প্লিজ মানা করো না।

জুই:-বাপরে প্রিয়ু কী চালাক!আবির ভাইয়া যদি রাজি না হয় এজন্য আগে ভাগেই সারা আপুর নাম বলে দিসে।(হেসে দিয়ে)

সৌরভ আর আবির হেসে ফেললো প্রিয়তার বুদ্ধি দেখে।সৌরভ মুচকি হেসে বললো;

সৌরভ:-যাওয়াই যায়।বুদ্ধিটা মন্দ হয় না।তবে আমার একটা শর্ত আছে।এই শর্ত মানলে তবেই মেলায় নিয়ে যাবো তোমাদের সবাইকে।

প্রিয়তা যেন লুফে নিলো সৌরভের শর্তটা।না শুনেই বললো;

প্রিয়তা:-যেকোনো শর্তেই রাজি আমি ভাইয়া।আমার কোনো প্রবলেম নেই।

তানিয়া:-আগে শুনি ভাইয়ার শর্ত কী!

পান্না:-হ্যা ভাইয়া বলো।

সৌরভ:-তোমাদের সবাইকে ঢোলাঢালা বোরকা ও বড় হিজাব পড়তে হবে।মোটকথা পর্দা করে যেতে চাইলে তবেই নেয়া হবে নয়তো না।মেলায় কতরকমের কত মানুষ আসে।ঝামেলাপূর্ণ পরিবেশ।আমি এরকম একটা পরিবেশে তোমাদেরকে বেপর্দায় নিয়ে যাবো না।নাও চয়েস ইজ ইউরস।কী করবে দ্রুত সিদ্ধান্ত জানাও।

প্রিয়তা নিঃসংকোচে জবাব দিলো;

প্রিয়তা:-আমি রাজী ভাইয়া।আপনি না বললেও আমি বোরকা পড়েই যেতাম।

ডলি এবং তানিয়াও সায় জানিয়ে জবাব দিলো;

ডলি:-ডান।

তানিয়া:-আমিও রাজী।

পান্না:-আমারও কোনো অসুবিধা নেই ভাইয়া।

সবাই রাজী হলেও জুই একটু নাখোশ নাখোশ করতে লাগলো।সে আসলে বোরকা ছাড়া সবসময় চলাফেরা করে।সবাই তো আর সমান নয়।জুই ও তেমনই ব্যতিক্রম।জুই আমতা আমতা করে বললো;

জুই:-বোরকা পড়ে না গেলে হয় না সৌরভ ভাইয়া।আমি আসলে বোরকা পড়তে কম্ফোর্ট ফিল করি না।বোরকা ছাড়া লং ড্রেস বা গাউন হলে চলবে না?

সৌরভ:-আসলে দেখাে তোমাদেরকে আমি জোর করছি না।তবে একটা কথা কী জানো তো?মেয়েরা হলো মণিমাণিক্যের মতো দামী সম্পদ।এবং মণিমুক্তাদি মানুষ সবসময় লোকচক্ষুর আড়ালে লুকিয়ে রাখে।কারণ বলা যায় না কখন কে তা চুরি করে নিয়ে যায়।তেমনি মেয়েদের অন্যতম সুরক্ষা ব্যবস্থা হলো গিয়ে পর্দা।যে মেয়ে যথাযথ পর্দা করে সেই মেয়ে ওই লুকায়িত মণিমুক্তাদির সমতুল্য।সে সব ধরনের কলুষতা থেকে মুক্ত থাকে।ওই মেয়েটির ওপর আল্লাহর রহমত থাকে।আল্লাহ তায়ালা কিন্তু সকল মেয়েদের জন্য পর্দা ফরজ করেছেন।পবিত্র কোরআনে ও হাদিসসমূহে মেয়েদের পর্দার কথা ও পর্দার গুরুত্ব সম্পর্কে বহুবার আলোচনা করা হয়েছে।তা পড়লেই তোমরা বুঝতে পারবে।আমি তোমাদের ভালো চাই তাই এই কথাগুলো বলছি।আমি এজ এ বড়ভাই তোমাদেরকে জাস্ট উপদেশ দিচ্ছি।এখন আমার কথা শুনলে তোমরাই লাভবান হবে,আবার না শুনলে তোমাদেরই লস।

জুই এবার বিরস মুখে জবাব দিলো;

জুই:-আচ্ছা ভাইয়া ঠিক আছে।আমি রাজি।

সৌরভ:-গুড।তবে আমার ভয়ে নয়।আল্লাহর ভয়ে এই আদেশটা পালন করো।পরকালের ওপর ভয় রাখো।জোর জবরদস্তি নয়।নিজের ভালো নিজেরই বুঝতে হবে।মেয়েদের এত স্টাইলিশ ভাবে বাইরে বের হতে নেই।আমি কী বোঝাতে চাচ্ছি আশা করি তোমরা তা বুঝতে পেরেছো।

সবাই মাথা দুলিয়ে সায় জানালো।প্রিয়তা মুগ্ধ হয়ে গেছে সৌরভের কথা শুনে।মনে মনে ঠিক করে ফেললো আজকে থেকে সবসময় পর্দা করবে।আর কোনো অবহেলা নয় এ ব্যাপারে।পরকালের শাস্তির বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে।পরিপূর্ণ মুসলিমাহ হয়ে বাঁচতে হবে।তবেই না আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবে।

আবিরের কথায় ধ্যান ভাঙ্গে প্রিয়তার।

আবির:-বানিজ্য মেলায় রাতে যেতে খুব মজা লাগে।আমরাও নাহয় রাতে যাই।

সৌরভ সাথে সাথে নাকচ করে দিলো প্রস্তাবটা।

সৌরভ:-নাহ রাতে না।রাতের বেলা মেয়েমানুষ সাথে নিয়ে যাওয়াটা সেফ না।সারাকেও মামা রাতের বেলা বেরোতে দেবেন না তাই আমরা কিছুক্ষণ পর দুপুরের খাবার খেয়েই বেরিয়ে যাবো।এবং শেষ বিকেলের দিকে বা সন্ধ্যায় বাসায় ফিরবো।

সৌরভের কথায় যুক্তি আছে তাই তার কথা সবাই বিনাবাক্যব্যয়ে মেনে নিলো।আবির জুইকে বললো তূর্যকে ফোন করে আসতে বলতে।জুই বসা থেকে ওঠে চলে গেল তূর্যকে কল করতে।

আজকে বয়োজ্যেষ্ঠরা সবাই আত্মীয় স্বজনদেরকে দাওয়াত দিতে গিয়েছেন তাই বাসায় প্রায় কেউ নেই।মিসেস মিনা ও মিসেস শিলা পুত্রবধূদেরকে সাথে নিয়ে দরকারী সব জিনিসের লিস্ট করছেন রুমে বসে।মিসেস জেসমিন দূরের আত্মীয় স্বজনদেরকে ফোনকলে দাওয়াত করছেন।সবাই কাজে ব্যস্ত শুধু সৌরভরা বাদে।

দুপুরের খাবার খেয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়েই মিসেস মিনার কাছ থেকে পারমিশন আদায় করে সবাই মেলায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।তূর্য দুটো সিএনজি নিয়ে এসেছে আসার সময়।একটা সিএনজিতে সৌরভ,প্রিয়তা ও জুই ওঠে বসলো।অন্য সিএনজিতে তূর্য,ডলি,তানিয়া,পান্না ও আবির বসলো।সবাই ঠিকঠাক মতো বসতেই সিএনজি চালক গাড়ি চালাতে শুরু করলো।

আজকে প্রত্যেকটা মেয়েই বোরকা পড়েছে।জুই বাদে বাকি সবাই সৌরভের কথা শুনে অনুপ্রাণিত হয়ে পর্দা করেছে।জুই একটু স্টাইলিশ বেশি তাই তার নিজেকে একটু অন্যরকম লাগছে আজ।কেমন ক্ষ্যাত ক্ষ্যাত টাইপের।

🖤

মেলার সামনে থামতেই একটা প্রাইভেট কারের সামনে সারা ও তার বোন জারাকে দেখা গেল।আবির গাড়ি ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে সারার দিকে এগিয়ে গেলো।তূর্য সৌরভের দায়িত্বে সব মেয়েদেরকে রেখে সে টিকেট কাটতে চলে গেল।সারা আর জারাকে নিয়ে ওদের কাছে এলো আবির।সারা আর জারা সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো।তূর্য টিকিট নিয়ে আসতেই সবাই লাইন ধরে মেলায় ঢুকলো।

প্রিয়তা সৌরভের পাশাপাশি হাঁটছে।মেলায় প্রচুর ভিড়।তানিয়া আর ডলি একসাথে হাঁটছে।জারা আর জুই একসাথে,সারা আবির একসাথে ও পান্না এবং তূর্য একসাথে হাঁটছে।সবাই জোড়ায় জোড়ায় ঘুরছে।প্রিয়তা নিজে যেচেই সৌরভের হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে হাঁটতে লাগলো।সৌরভ একবার হাতের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো কিছু বললো না।আসলে প্রিয়তা অন্য কিছু মিন করে হাত ধরে নি।এতদিন মেলায় আসলে বা কোথাও শপিং করতে গেলে সবসময় বাবা,মা,ভাই,ফুপ্পি অথবা ফ্রেন্ডের হাত ধরে হাঁটতো।আজও অভ্যাসবসত সৌরভের হাত ধরেছে।

প্রিয়তা চুড়ির দোকান দেখে চুড়ি কেনার জন্য পাগল হয়ে গেল।ওর দেখাদেখি বাকি মেয়েরাও চুড়ি নুপুর ওসব মেয়েলি জিনিস চুজ করতে লাগলো।সৌরভ প্রিয়তার পাশেই দাঁড়িয়ে।আবির সারাকে চুড়ি পড়িয়ে দিচ্ছে হাতে।সবাই সবার পছন্দসই চুড়ি কিনছে।প্রিয়তা কয়েক ডজন চুড়ি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সে একা একা কালার চুজ করতে পারছে না।সৌরভ তাকে হেল্প করলো।সৌরভ বেছে বেছে সুন্দর কালারগুলো চুজ করে দিলো তাকে।

প্রিয়তা অনেক গুলো চুড়ি কিনলো।ভেলভেট চুড়ি একবক্স,রেশমি চুড়ি ৬ ডজন,কাঠের চুড়ি ৪ টা,রেসিনের চুড়ি ২ টা মেটাল চুড়ি ২ ডজন।সাথে ২ জোড়া নুপুর নিলো।২ জোড়া কানের দুল কিনলো।এগুলো কেনার পর প্রিয়তা পার্স থেকে টাকা বের করতে নিলে সৌরভ আটকে ফেললো তাকে।প্রিয়তা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই দেখতে পেল সৌরভ নিজের মানিব্যাগ থেকে টাকা বের করে দোকানির হাতে ধরিয়ে দিয়েছে।প্রিয়তা হা হয়ে গেছে সৌরভের এমন কর্মে।হায় হায় করে বলে উঠে;

প্রিয়তা:-ভাইয়া এটা কী করলেন আপনি?আমার কাছে তো টাকা ছিলো।আপনি কেন দিতে গেলেন?

সৌরভ জবাব না দিয়ে ডলি ও তানিয়ার চুড়ি কেনার টাকাও দিলো।বাকি মেয়েরার জিনিস কেনার টাকা আবির আর তূর্য দিয়েছে।সৌরভ প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে জবাব দিলো;

সৌরভ:-সৌজন্যতার খাতিরে দিই নি।তানিয়া আর ডলির মতো তুমিও আমার কাছে ইমপোর্টেন্ট।মনে আছে,ছোটবেলায় তুমি আমার কাছে এসে বায়না ধরতে তোমাকে এটাসেটা কিনে দেয়ার জন্য।আমাদের বাসায় এলে তো আমার কোল থেকে আর নামতে চাইতে না।এতটাই পছন্দ করতে আমায়।তখন যদি কতকিছু কিনে দিতে পেরেছি তবে আজ কেন পারবো না।আর তুমিই বা এত কেন সংকোচ বোধ করছো?বি নরমাল ওকে!জানো তো,,কেউ ভালোবেসে কিছু দিতে চাইলে তা গ্রহণ করতে হয়!

সৌরভের মিষ্টিস্বরে বলা কথা গুলো শুনে প্রিয়তা পুরো গলে গেল যেন।সৌরভের দিকে তাকিয়ে ঝলমলে হাসি উপহার দিলো সে।সৌরভ প্রিয়তার প্যাকেটগুলো হাতে নিয়ে একহাতে প্রিয়তার হাত ধরে দোকান থেকে বেরিয়ে এলো।সবাই বিষয়টা স্বাভাবিকই নিয়েছে।কারণ প্রিয়তা সবার চেয়ে ছোট এবং আদরের একজন সদস্য।সবাই যে তাকে বেশি প্রায়োরিটি দেয় তা প্রত্যেকেই জানে।

এভাবেই সারা মেলা চষে বেড়ালো ওরা।সাথে যার যা পছন্দ হয়েছে তা-ই কিনে নিয়েছে।প্রিয়তা সৌরভকে একটা ঘড়ি আর মানিব্যাগ গিফট করলো নিজের টাকা দিয়ে।সৌরভ তা সাদরে গ্রহণ করলো।বাসার সদস্যদের জন্যও টুকটাক কিছু কেনা হয়েছে।আবির,সৌরভ আর তূর্য মিলে মেয়েদেরকে একটা করে ওয়ানপিস কিনে দিলো।তারপর সবাই একসাথে ফুচকা চটপটি খেলো।দুজন দুজন করে নাগরদোলায় দোললো।সাথে বিভিন্ন এংগেলে ফটো তোলা তো বাধ্যতামূলক আছেই।

প্রচুর হাসি ঠাট্টা ও আনন্দ ফুর্তির মাধ্যমে ফুরুৎ করে দিন কেটে গিয়ে সন্ধা হয়ে তারপর রাত নেমে এলো ধরনীর বুকে।অতঃপর সবাই রওয়ানা দেয় বাসার উদ্দেশ্যে।আবির সারা আর জারাকে পৌঁছে দিতে তাদের সাথে গেল।প্রিয়তা সারাটাদিন সৌরভের হাতে হাত রেখে হেঁটেছে।সৌরভের সাথে সে একদম ফ্রি হয়ে গেছে।দুজন দুজনকে বেশ ভালো করেই চিনেছে আজ।একজন আরেকজনের পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কে অবগত হয়েছে।

আজ তাদের মধ্যে প্রচুর আলাপ হয়েছে।কথায় কথায় সৌরভের কেমন মেয়ে পছন্দ তা জেনেছে প্রিয়তা।তন্মধ্যে বেশ কয়েকটা গুণ তার মধ্যে নিহিত।চাইলে বাকিগুলোও নিজের আয়ত্ত্বে করে নিতে পারবে প্রিয়তা।সৌরভও প্রিয়তার গুণগুলো জেনে নিয়েছে গল্পের ছলে।সৌরভের মনে এই ছিলো যে সে প্রিয়তাকে একটু ভালো করে বাজিয়ে দেখবে।তার মনমতো হতে পারার গুণ প্রিয়তার মধ্যে আছে তা সে ঠিকই বুঝতে পেরেছে।মনে মনে কিছু প্ল্যান করে নিলো সৌরভ।#তুমি_আমার_প্রিয়তমা
#লেখিকা_Amaya_Nafshiyat
#পর্ব_০৮

মুসকান এবং আকিল এখনও ফেরেনি বাসায়।আসতে বেশ রাত হতে পারে বলে ফোন দিয়ে জানিয়েছে আবিদকে।আবিদ সে কথা তার মা চাচীকে জানিয়ে দিয়েছে যাতে ওনারা টেনশন না করেন।

সৌরভ ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে ভাতিজা জিহানকে কোলে নিয়ে আবিরের বিয়ের কার্ড খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো।রাজকীয় কুশিয়ারা সেন্টারে বিয়ে হবে বলে ঠিক করা হয়েছে কনে পক্ষ থেকে।আর সৌরভদের পক্ষ থেকে ওয়ালিমা হবে খানস প্যালেস কনভেনশন হলে।এবং গায়ে হলুদ যার যার বাসায় হবে।

তূর্য একে একে দরকারী সব জিনিসের নাম পড়ে শোনালো লিস্ট থেকে।ওয়ালিমার আগে একটা গরু কিনে আনতে হবে।মুরগী থেকে শুরু করে যা যা দরকার তা সবই নিয়ে আসতে হবে।এবং এটার দায়িত্ব আবিদ,হৃদয় আর মি.শফিক নিয়েছেন।মি.সালাম ও তূর্যের বাবা মি.মিছবাহ তদারকির দায়িত্বে আছেন।সবকিছু ডেকোরেশনের দায়িত্ব তূর্য,আকিল,মুসকান ও সৌরভের।কনেদের বাড়িতে পাঠানো সব তথ্য সাজানোর দায়িত্ব মেয়েদেরকে দেয়া হয়েছে।পিঠেপুলি বানানোর দায়িত্ব সব মহিলাদের।এসবকিছু নিয়ে ডিসকাস করা হলো অনেকক্ষণ যাবৎ।

মিসেস জেসমিন হঠাৎ মিসেস মিনাকে জিজ্ঞেস করলেন;

মিসেস জেসমিন:-সবই তো বুঝলাম ভাবী!আবিরের তো বিয়ে হয়ে যাচ্ছে,তবে সৌরভ কেন বাদ যাবে?ওরও বিয়ে দেয়া দরকার।তোমরা যদি বলো তবে আমি আমার জুইয়ের সাথে আমার ভাইপোর বিয়ের কথা আগাতে পারি।

মিসেস মিনা নির্বিকার ভাবে জবাব দিলেন;

মিসেস মিনা:-বললেই তো হয়ে যায় না গো ননদী।ছেলের পছন্দ তো হতে হবে।সৌরভ যদি জুইকে বিয়ে করতে রাজি হয় তবে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।আমার ছেলের খুশিতেই আমরা খুশি।

ওনাদের কথা শুনে জুই লজ্জায় লাল টমেটো হয়ে গেছে পুরো।প্রিয়তা রাগে জ্বলতে জ্বলতে এটমবোম্ব হয়ে গেছে প্রায়।প্রিয়তা এ কদিনে বুঝে গেছে যে সৌরভকে তার চাই।সৌরভকে সে খুব পছন্দ করে।এতই পছন্দ করে যে এখন তার জুইকেই সহ্য হয় না।অথচ জুইয়ের সাথে তার খুব ভাব ছিলো।জুই সৌরভের প্রতি দুর্বল বলে এখন জুইকে অপছন্দ করতে শুরু করেছে সে মনের অজান্তেই।সৌরভের প্রতি এ ভালোলাগাটা সে ভালোবাসা অবধি নিতে চায়।সে বুঝতে পারছে না ওনাদের বলা কথা শুনে তার এত কেন ফাটছে!এত কেন কষ্ট হচ্ছে বুকে?

এসব কথা শুনে একমাত্র সৌরভের মধ্যেই কোনো ভাবান্তর ঘটলো না।মিসেস জেসমিন এবার সৌরভকে জিজ্ঞেস করলেন;

সৌরভ:-কী রে সৌরভ!করবি আমার মেয়েকে বিয়ে?

সৌরভ একবার আরচোখে প্রিয়তাকে দেখে নিলো।প্রিয়তার গাল ফোলানো দেখে সে যা বোঝার বুঝে ফেললো।ঠোঁটে মৃদু হাসি ঝুলিয়ে একবার জুইয়ের দিকে তাকালো সৌরভ।জুই নববধূর মতো লজ্জায় টুকটুকে হয়ে বসে আছে।সৌরভ সহাস্যে জবাব দিলো;

সৌরভ:-সরি ফুপ্পি।আসলে আমার অন্য কাউকে পছন্দ।এবং আল্লাহ চাহেন তো আমি একমাত্র তাকেই বিয়ে করবো।সে ব্যতিত অন্য কাউকে নয়।জুই আমার চাইতে আরও ভালো কাউকে ডিজার্ভ করে।তাই জুইকে আমি আমার লাইফ পার্টনার হিসেবে চাই না।

সৌরভের কথা শুনে জুইয়ের লাজুক মুখটা চুপসে গেল।প্রিয়তা কিছুটা খুশি হলেও পুরোপুরি হতে পারে নি।কারণ সৌরভ জুইকে নয় অন্য কাউকে পছন্দ করে।এ কথা শুনেই সে আর মন থেকে খুশি হতে পারে নি।কষ্ট হচ্ছে খুব তার মনের মধ্যে।প্রিয়তা চুপচাপ বসে বসে টিভি দেখছে।সৌরভের দিকে আর একবারও তাকালো না অভিমানে।

মিসেস মিনা থেকে শুরু করে উপস্থিত যারা সৌরভের পছন্দের কথা জানে না তারা অবাক হয়ে গেছে সৌরভের কথা শুনে।মিসেস মিনা কৌতুহলী কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন;

মিসেস মিনা:-তাই নাকি বাবা?তোর মেয়ে আগে থেকে পছন্দ করা আছে?কে সে?আমায় বল,আমি দরকার পড়লে কালকেই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবো।

মি.শফিক:-হ্যা সৌরভ,বলে দে তোর কাকে পছন্দ।আমরা তো আর তোকে মানা করবো না।

আবিদ:-তলে তলে ট্যাম্পু চলে আর আমরা জিগাইলে কস হরতাল,তাই না?(সৌরভের পিঠে চাপড় মেরে)

সৌরভ:-ওসব কিছু না ভাইয়া।জাস্ট পছন্দ করেছি।কোনো রিলেশন নেই মেয়েটার সাথে।তবে আগে আবিরের বিয়ের ঝামেলা মিটুক।তারপর আমি নিজে থেকেই জানাবো তার কথা তোমাদেরকে।তখন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেও।

মি.সালাম:-আচ্ছা তবে ঠিক আছে তাই হবে।তুই চিন্তা করিস না বাবা।ওই মেয়েটার সাথেই তোর বিয়ে দিবো আমরা।আমাদের ছেলের একমাত্র পছন্দ বলে কথা।নিশ্চয়ই ভালো কাউকে পছন্দ করেছে।

হৃদয়:-হুম তা তো বটেই।যাকগে ইশা বাচ্চাদেরকে খাবার খাইয়ে আমার জন্য খাবার বাড়ো টেবিলে।খুব খিদে পেয়েছে আমার।সারাদিনে পেটে কিছু পড়ে নি।

ইশা:-তুমি ডাইনিংয়ে আসো তাহলে,আমি খাবার বাড়ছি।

হৃদয়:-হ্যা আসছি।

বড়রা রুমে চলে যেতেই মেয়েদের গল্পের আসর জমে ওঠে ড্রয়িং রুম জুড়ে।তানিয়া,ডলি,পান্না ওরা কালকে কী কী কিনবে সেসব আলোচনা করছে ধুমসে জুই ফ্যাঁকাশে চেহারা নিয়ে তাদের কথায় হু হা করে জবাব দিচ্ছে।প্রিয়তাও বেশ চুপচাপ হয়ে বসে আছে।আবির,সৌরভ ও তূর্য ওরা খেলা দেখছে সোফায় আয়েশ করে বসে।

🖤

রাতের খাবার সেড়ে সবাই যে যার রুমে চলে গেল।প্রিয়তা বিছানায় শুয়ে শুধু এপাশ ওপাশ করছে।তার একটুও ঘুম আসছে না।বারবার খালি সৌরভের বলা কথাটা কানে বাজছে।মনের মধ্যে তুমুল অশান্তি শুরু হয়েছে তার।অশান্ত মন যে কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না!এখন এর থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?

প্রিয়তা খুব ভালো করে জানে যে এখন তার আব্বু আম্মু মরে গেলেও তাকে বিয়ে দেবে না।ভাই তো আরও এককাঠি সরেস।ওনাদের সবার ইচ্ছা যে প্রিয়তা হাইয়ার স্টাডি কমপ্লিট করে তারপর বড় পদের চাকরি করবে।কিন্তু এদিকে প্রিয়তার পড়াশোনা করতে মোটেও ভালো লাগে না।পড়াশোনায় ঢিলও দিতে পারে না কারণ মুসকান কান টেনে ছিঁড়ে ফেলবে তার এমন কথা চিন্তা করলে।একটামাত্র বোনকে নিয়ে সে মারাত্মক পসেসিভ।পড়ায় নিজে গাইড করে।টিচার কী পড়িয়েছে না পড়িয়েছে সব পাই টু পাই চেক করে মুসকান।এমতাবস্থায় বিয়ে অসম্ভব।আর সৌরভ তো অন্য কাউকে ভালোবাসে।তাহলে এখন কী হবে?

এ-সব ভাবতে ভাবতেই প্রিয়তা জীবনের প্রথম কোনো নির্ঘুম রাত কাটালো।
এদিকে সৌরভ মনে মনে ভাবছে প্রিয়তার গাল ফোলানোর কথা।সৌরভ এটা বুঝে গেছে যে প্রিয়তা মনে মনে তাকে বেশ পছন্দ করে।এটা ভাবতেই এক প্রশান্তির বাতাস মন ছুঁয়ে গেল তার।ঠোঁটের কোণে একটুকরো তৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠে।আরামের ঘুম নেমে এলো তার চোখদ্বয়ে।

🖤

পরদিন,,
শেষ দুপুরের দিকে সবাই তৈরী হয়ে শপিংয়ের উদ্দেশ্যে বেরোলো।রাতে ঘুম না হওয়ায় প্রিয়তার আজকে ঘুম ভাঙতে বড্ড দেরি হয়েছে।প্রিয়তার বাবা মাও সকাল সকাল এসে পড়েছেন সৌরভদের বাসায়।তাই সবাই মিলে আজ শপিংয়ে যাচ্ছেন কেনাকাটা করতে।

যতজনের হাইয়েস গাড়িতে জায়গা হয়েছে ততজন গাড়িতে করেই চলে গেলেন।প্রিয়তা মুসকানের বাইকে ওঠে বসলো।সৌরভের বাইকে ডলি,তূর্যর বাইকে জুই,আকিলের বাইকে তানিয়া এবং আবিরের বাইকে পান্না বসেছে।সবাই ঠিকঠাক মতো বসতেই বাইক স্টার্ট দেয়া হয়।প্রিয়তা মুসকানকে ধরে বসে সৌরভের দিকে মলিন দৃষ্টিতে তাকালো।যদি এমন কোনো ক্ষমতা তার হাতে থাকতো তবে এই মুহুর্তে সৌরভকে সে নিজের করে নিতো।

প্রায় মিনিট পনেরো পর ব্লু ওয়াটার শপিং সিটিতে গিয়ে পৌঁছালো সবাই।গাড়ি বাইক সব যথাস্থানে পার্কিং করে শপিং মলে প্রবেশ করলো ওরা।মুসকান প্রিয়তার হাত ধরে রেখেছে শক্ত করে।সৌরভ আগে আগে আবিরের সাথে কথা বলতে বলতে হাঁটছে।

সবাই সবার মতো কেনাকাটা করছে।মুসকান প্রিয়তাকে প্রিয়তার পছন্দমতো কাপড় চোপড় কিনে দিচ্ছে।একটামাত্র আদরের ছোট বোন।তাকে দেবে না তো কাকে দেবে!

প্রিয়তার শপিংয়ে মন বসছে না।তার বেহায়া চোখ জোড়া বারবার ঘুরেফিরে সৌরভকেই প্রত্যক্ষ করছে।সৌরভ সে আবিরকে সাথে নিয়ে জেন্টস শো রুমে গেল কাপড় কিনতে।মিসেস মিনা বাকি মহিলাদের সাথে ডিসকাস করে কনেপক্ষের সবার জন্য কাপড় চোপড় ক্রয় করছেন।

কেনাকাটা শেষ হতে হতে রাত ৯ টা বেজে গেছে প্রায় তাই সবাই পানসি রেস্টুরেন্টে গিয়ে রাতের খাবার খাওয়া সেড়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।সারাটা দিনে সৌরভ আর প্রিয়তার মধ্যে কোনো কথা বার্তা হয়নি।একমাত্র চোখাচোখি ব্যতিত।নিজের মনের মধ্যেই ছটফট করতে করতে শেষ প্রিয়তা।

প্রিয়তা বিয়ে উপলক্ষে আজ অনেক কেনাকাটা করেছে কিন্তু তার মন এসবে নেই।সে বড্ড হতাশ হয়ে আছে গতকাল থেকে।এখন ঠিকই বুঝছে এখন প্রেমে পড়ার জ্বালা।এতদিন অন্যান্য মানুষকে এসব নিয়ে কতকিছু শুনিয়েছে,কত ব্যঙ্গ করেছে,কিন্তু আজ তাকেই ভেঙালো যেন প্রকৃতি।

আজকেও ছটফট করতে করতে মাঝরাতের দিকে ঘুমালো প্রিয়তা।সৌরভ সে তার মতো নরমাল আছে।কোনো চিন্তা নেই প্যারাও নেই।চিল মুড!

🖤

সকাল থেকে শুরু হলো সব কাজকর্ম।একটা বিয়ে বাড়ির কতরকমের কতশত কাজ থাকে তা না বলাই বাহুল্য।প্রিয়তা সকাল থেকেই ব্যস্ত।তথ্য সাজানোর গুরুদায়িত্ব তার ওপর পড়েছে।কারণ সে এসব কাজ অনেক ভালো পারে।

সৌরভ ডেকোরেশনের সবকিছু তদারকি করছে।আজকে বেশ কয়েকজন লোক এসেছে ডেকোরেটার্স থেকে।ওই লোকগুলো মরিচবাতি লাগানো ও গেট সাজানোর কাজ করছে।তূর্য সৌরভের সাথে আছে।মুসকান প্রয়োজনীয় কিসব আনতে গিয়েছে দোকানে।সবাই একটা না একটা কাজে ব্যস্ত।

২ দিন পর বিয়ে।তাই এত ব্যস্ততা।কালকে গায়ে হলুদ ও মেহেদী অনুষ্ঠান একসাথে অনুষ্ঠিত হবে।

সৌরভ একটা টিশার্ট ও একটা ফোর কোয়ার্টার টাওজার পড়েছে আজ।তাকে অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে।প্রিয়তা গোসল করে ছাদে কাপড় মেলতে এসেছিলো।সামনের দিকে তাকাতেই নিচে সৌরভকে দেখতে পেল সে।দৃষ্টিটা ওখানেই স্থির হয়ে গেছে তার।পায়ে পায়ে এগিয়ে এলো রেলিঙের কাছটাতে।এককোণে দাঁড়িয়ে একমনে সৌরভকে লক্ষ্য করছে সে।

হঠাৎ ছাদের দিকে তাকাতেই প্রিয়তার দিকে নজর গেল সৌরভের।সেও কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেল।তারপর সম্বিৎ ফিরে পেতেই মৃদু হেসে হাত দিয়ে হাই ইশারা করলো।এমনসময় মুসকানকে আসতে দেখে প্রিয়তা দ্রুত ছাদ থেকে নেমে পড়ে।সৌরভ ঠোঁট এলিয়ে হাসলো প্রিয়তার তড়িঘড়ি করে চলে যাওয়া দেখে।

🖤

পরদিন,,
দুপুরের সময় আবিরকে হলুদ মাখিয়ে গোসল করানো হলো।গতকালকে সারা’দের বাসায় সব তথ্য পাঠানো হয়েছে।

রাতে স্পিকার বক্সে ফুল ভলিউম দিয়ে গান বাজানো হচ্ছে।রোমান্টিক হিন্দি গান।ছাদের ওপর প্যান্ডেল বেঁধে সেখানে সব ছেলেরা দল বেঁধে বসে আছে।সবাই আজ পাঞ্জাবি পাজামা পড়েছে।বিকেলের দিকে দল বেঁধে নিকট আত্মীয় স্বজনরা চলে এসেছেন এখানে।সারা বাসা জুড়ে মেহমানরা গিজগিজ করছে।

প্রিয়তা আজকে মেহেদী ও হলুদ রঙা ডিজাইনার ঘেরওয়ালা স্কার্ট ও ফুলহাতা ফতুয়া পড়েছে।সাথে হাতভর্তি চুড়ি ও পায়ে নুপুর।মুখে হালকা মেকআপ টাচ্।চোখে গাঢ় কাজল।ঠোঁটে হালকা মেরুন রঙের লিপস্টিক।চুলগুলো ছাড়া।এতে তাকে ভীষণ সুন্দরী লাগছে দেখতে।একদম নজরকাঁড়ার মতো একজন লাগছে তাকে।

ডলি আর তানিয়ার সাথে সেও ছাদের ওপর গেল।সৌরভ একবার তাকায় প্রিয়তার দিকে।প্রিয়তাকে এভাবে সাজুগুজু করতে দেখে তার মেজাজটা একটু গরম হয়ে গেল।ছাদে এত এত ছেলেপুলে।তাদের ফ্রেন্ডসার্কেল ও কাজিন টাজিন কত ছেলে আছে এখানে।এর মাঝে প্রিয়তা কীভাবে এরকম করে সেজে এলো চুল টুল ছেড়ে ভাবতেই বিরক্ত লাগছে তার।

তবে সৌরভের আর কিছু বলতে হলো না মুসকান নিজেই প্রিয়তার কাছে এগিয়ে গিয়ে একটু বকাঝকা করে প্রিয়তার চুলগুলো নিজে খোঁপা করে দিয়ে ওড়না মাথায় সুন্দর করে প্যাচিয়ে হিজাব বেঁধে দিলো।বেচারি প্রিয়তা জুই আর পান্নার কথায় এরকম চুল ছেড়ে রেখেছিলো।নয়তো সে এরকম ছাদে আসতো না।সৌরভ প্রশান্তির শ্বাস ফেলে অনুষ্ঠানে মনযোগ দেয়।

ট্রেডিশনাল গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে যা যা হয়,আবিরের গায়ে হলুদেও তা হয়েছে।সাথে চলছে অসংখ্য ফটোগ্রাফি।সবশেষে প্রিয়তা ও পান্না আবিরের হাতে মেহেদী লাগিয়ে দিতে স্টেজে ওঠে দুজন আবিরের দুপাশে বসলো।সৌরভ সামনের সারিতে একটা চেয়ারে বসে ক্যামেরা হাতে ভিডিও করছে।পাশে ফটোগ্রাফার দুজনও ফটো তুলছে প্লাস ভিডিও করছে।প্রিয়তা মাঝেমধ্যে পরোক্ষ দৃষ্টিতে সৌরভকে খেয়াল করছে।সৌরভ তো ডিরেক্ট প্রিয়তাকে দেখছে।

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here