#তুমি_আমার_প্রেয়সী
#সিজন ৩
#তাসনিম_জাহান_রিয়া
#পর্ব_৪
আমি আজকে আপনার সাথে অফিসে যাব।
আদিয়াত কণার দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়। কপাল কুচকে বলে,
কেনো? এমনিতে ভার্সিটি অনেক দিন মিস গেছে। এখন তোমার অফিস যাওয়া টাওয়া চলবে না। সোজা ভার্সিটিতে যাও।
নিয়ে চলুন নাহ প্লিজ।
আদিয়াত এক রোখা ভাব নিয়ে বলে, না।
কণা মুখ গোমড়া করে বলে, প্লিজ নিয়ে চলুন নাহ। আমি তো প্রতিদিন আপনার অফিসে যায় না। প্লিজ আজকেই যাই না।
আদিয়াত কণাকে ছেড়ে দিয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ঘড়ি পড়তে পড়তে বলে,
কী চলছে তোমার মাথার মধ্যে?
আপনি নিবেন না আমাকে?
না।
আমিও দেখি আপনি আমাকে না নিয়ে কী করে যান।
কণা নিজের খোপা করা চুলগুলো খুলে দিয়ে আদিয়াতের সামনে দাঁড়ায়। আদিয়াতের পায়ের ওপর দাঁড়িয়ে গলা জড়িয়ে ধরে। কণা একটু একটু করে আদিয়াতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আদিয়াত ঢোক গিলে কণার দিকে তাকায়। কণার পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে। কণার পরনে একটা গোলাপী রঙের শাড়ি। কোমড় অব্দি চুলগুলো ছাড়া। ঠোঁটে গোলাপি রঙের লিপস্টিক। এক হাতে ঘড়ি। আরেক হাতে কিছু চুড়ি। কণার চুল থেকে মাতাল করা ঘ্রাণ আসছে। আদিয়াত আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে। আদিয়াত বাঁকা হেসে বলে,
কী ব্যাপার মিসেস আপনি কী আমাকে সিডিউস করতে চাইছেন?
আপনার যদি মনে হয় আমি আপনাকে সিডিউস করতে চাইছি। তাহলে আমি সিডিউসই করতে চাইছি।
আদিয়াত আয়মান তুর্ণকে সিডিউস করা এতো সহজ না।
আপনি যদি আদিয়াত আয়মান তুর্ণ হন তাহলে আমিও মিসেস আদিয়াত আয়মান।
তাই নাকি।
হু।
আদিয়াত দুজনের অধর যুগল এক করে দেয়। কণার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।
৭৭
প্রথম বারের মতো কণা আদিয়াতের অফিসে এসেছে। কণার এখানে আসার মুল উদ্দেশ্য হলো এলিনার একটা ব্যবস্থা করা। আদিয়াত কণার হাত ধরেই অফিসে ঢুকে। আদিয়াতের এক হাতে ফোন। ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। আরেক হাতে কণাকে ধরে রেখেছে। আদিয়াত আর কণা অফিসে ঢুকতেই এলিনা এসে সামনে দাঁড়ায়।
গুড মর্নিং স্যার।
দাঁত কেলিয়ে বলে এলিনা। কণার এই মেয়েটার হাসি একদমি ভালো লাগছে না। কণা মেয়েটাকে চিনে না। কিন্তু কণা আন্দাজ করে নিয়েছে এটাই এলিনা। বিরক্তিতে কণার চোখ মুখ কুচকে ফেলে। আদিয়াত ফোনে কথা বলছে বলে কণা চুপ করে আছে। আদিয়াত ফোনের লোকটাকে বলে,
” OK I’ll call you back in two minutes.”
হোয়াট দ্যা হেল এলিনা। তোমাকে আমি বলেছিলাম না আমি যখন ফোনে কথা বলি তখন আমাকে ডিস্টার্ভ করবে না।
সরি স্যার।
শুনো আমার কেবিনে দুজনের ব্রেকফাস্ট নিয়ে আসো।
দুজনের কেনো?
এতো প্রশ্ন করো কেনো? আমার জন্য আর ওর জন্য।
ও কে?
ও না ম্যাডাম বলো। হি ইজ মাই ওয়াইফ। মিসেস কণা আয়মান। সো রেসপেক্ট হিম।
কণা নামটা শুনে এলিনা চমকে কণার দিকে তাকায়। কণার চোখ দুটো ছাড়া এলিনা আর কিছুই দেখতে পারল না। এলিনা মাথা নিচু করে ফেলে। সে মনে মনে ভাবছে তার চাকরিটা বুঝি এবার চলেই গেলো।
চলো।
আদিয়াত কণার হাত ধরেই এলিনার সামনে থেকে চলে যায়। এলিনা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কণা আর আদিয়াতের হাতের দিকে।
কণা আদিয়াতের কেবিনে গিয়ে ঘুরে ঘুরে সম্পূর্ণ কেবিন দেখছে। কেবিনের এটার্চ ওয়াশরুম আর আরেকটা রুম আছে। আদিয়াত কণার দিকে বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে বলে,
এভাবে ঘুর ঘুর করছো কেনো? এভাবে ঘুর ঘুর না করে এক জায়গায় স্থির হয়ে বসো।
আমি ঘুর ঘুর করি বা দৌড়া দৌড়ি করি তাতে আপনার কী? আপনি আমার দিকে নজর দিচ্ছেন কেনো? আপনি আপনার কাজ করুন আমার দিকে না তাকিয়ে।
আদিয়াত নিজের চেয়ার ছেড়ে ওঠে এসে কণার সামনে দাঁড়ায়। হঠাও এভাবে কণার সামনে আদিয়াত দাঁড়িয়ে পড়ায় কণা বিব্রত হয়ে পড়ে। আদিয়াত কণার একবারে সামনে এসে দাঁড়ায়। কণা এদিক ওদিক তাকাতে থাকে। কণা আদিয়াতকে এক হাতে ধাক্কা দিয়ে একটু দূরে সরিয়ে দিয়ে বলে,
ঐটা কার রুম?
আমার।
ঐ রুমের ভিতরে কী আমি যেতে পারি?
আদিয়াত কণার দিকে একটু ঝুঁকে বলে,
ঐ রুমে যাওয়ার এতো ইচ্ছে। তুমি তো দেখি দিন দিন বেশ রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছো।
মানে?
আদিয়াত বাঁকা হেসে বলে, মানেটা এখনি বুঝতে পারবে।
আদিয়াত কণাকে কোলে তুলে নেয়। কণাকে কোলে নিয়েই ঐ রুমে আসে। ঐ রুমে এসে কণাকে বেডে ফেলে দেয়। কণা ঢোক গিলে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। সে নিজেই নিজের বিপদ ডেকে এনেছে। আদিয়াত নিজের টাই ডিলে ডিলে করতে করতে কণার দিকে এগিয়ে আসছে। কণা বেড থেকে ওঠতে নিলেই আদিয়াত এক হাত দিয়ে ঠেলে কণাকে শুইয়ে দেয়। কণার ওপর আধশোয়া হয়ে বলে,
এতো তাড়া কীসের? এই রুমে আসার তো তোমার অনেক ইচ্ছে। তাহলে ভালো করে দেখে নাও।
আপনি আমার দিকে এভাবে এগুচ্ছেন কেনো?
তুমি বুঝতে পারছো না কেনো?
তখনি কেউ কেবিনের দরজা খুলে। দরজা খোলার শব্দ আদিয়াত রেগে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকায়। দরজার সামনে এলিনাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আদিয়াতের রাগটা বহু গুন বেড়ে যায়। আদিয়াত তাড়াতাড়ি কণার ওপর থেকে ওঠে দাঁড়ায়। কণাও শোয়া থেকে ওঠে বসে। তাড়াতাড়ি করে নিজের শাড়ির আঁচল ঠিক করে নেয়। আদিয়াত চিৎকার করে বলে,
হোয়াট আর ইউ ডয়িং হেয়ার। তোমার কোনো কমনসেন্স নেই? কার্টেসি ঙ্গান নেই। কারো রুমে প্রবেশ করলে যে তার অনুমতি নিতে হয় সেটা জানো না।
সরি স্যার।
সরি মাই ফুট। সবকিছু সরি বলে সমাধান হয় না। আমার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট কখনোই মেয়ে ছিল না। তোমাকে আমার পিএ বানাতে বাধ্য হয়েছিলাম। তোমার বাবা আমার বাবার পিএ ছিল। তারপর আমার। উনাকে আমি ভীষণ শ্রদ্ধা করতাম আর ভালোও বাসতাম। উনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যান আর আমাকে রিকুয়েস্ট করেন তোমাকে আমার পিএ হিসেবে জব দেওয়ার জন্য। আমি উনাকে না করতে পারিনি। আর তুমি আমার ভালো মানুষির সুযোগ নিলে। আমার নামে উল্টাপাল্টা কথা অফিসে ছড়িয়ে দিলে। সেটার জন্য তোমাকে ক্ষমা করে দিলেও গতকালকের ঘটনার জন্য আমি তোমাকে ক্ষমা করবো না। এর জন্য তোমাকে শাস্তি পেতেই হবে।
সরি স্যার। আমি আসলে বুঝতে পারিনি ওঠা ম্যামের ফোন ছিল।
কেনো বুঝতে পারোনি? তুমি তো কানা না আর না অশিক্ষিত। কণার নাম্বারটা ওয়াইফি দিয়ে সেইভ করা ছিল সেটা তুমি দেখনি। আমার সাথে মিথ্যা বলার চেষ্টা করবা না। যাস্ট গেট আউট।
স্যার প্লিজ আমার জবটা কেড়ে নিবেন নাহ। জবটা চলে গেলে আমার ভীষণ ক্ষতি হয়ে যাবে। স্যার প্লিজ আমার এতো বড় ক্ষতি করবেন নাহ।
এতোগুলো অন্যায় করার আগে তোমার এটা ভাবা উচিত ছিল যে, আমি এগুলো জানতে পারলে তোমার চাকরি থাকবে না। আমি অনেক কষ্টে নিজেকে কনট্রোল করে রেখেছি। নিজেকে কনট্রোল করা আমার জন্য কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। আমার সামনে থেকে চলে যাও। নাহলে তোমাকে খুন করে ফেলতোও আমি দুইবার ভাববো না। এটা ভাবতেই আমার মাথায় রাগ ধপধপ করছে যে, তোমার জন্য আমার কণার চোখ থেকে অশ্রু ঝড়েছে। গেট লস্ট।
মাথা নিচু করে এলিনা রুম থেকে বের হয়ে যায়। আদিয়াত রাগে জুড়ে জুড়ে শ্বাস নিচ্ছে। কণা নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। সে এখন কিছু বললেই আগুনেই ঘি ঢালার মতো কাজ করবে আর সে এই মেয়ের পক্ষ হয়ে কিছু বলতেও যাবে না।
চলবে…..