#তুমি_বললে_আজ_২
লেখনীতেঃ #রিধিমা_জান্নাত_রূপা
পর্বঃ ১২.
.
সকল দ্বিধা, দূরত্ব, অভিমান, অভিযোগ ভুলে গেলাম যেন এক মুহুর্তের জন্য। তাসফি ভাইকে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে জাপটে ধরলাম। এতদিনের জমিয়ে রাখা অনুভূতি গুলো ডানা ঝাপটিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইলো যেন, ওনার বুকে মুখ গুঁজে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম। অস্পষ্ট সুরে বলতে লাগলাম,
“আ..আপনি কেন আমাকে ফেলে গেলেন তাসফি ভাই? কেন আমাকে, এভাবে ঠোকালেন? কেন আমার জায়গাটা অন্য কাউকে দেওয়ার চেষ্টা করলেন, কেন অন্য কাউকে আপনাকে ছোঁয়ার অধিকার দিলেন?”
“এই রুপুসোনা, তাকা আমার দিকে, একবার দেখ। কেন বারবার আমাকে ঠোকানোর কথা বলছিস? আমি তো তোকে ঠোকাই নি, ইচ্ছে করে ফেলে রেখে যেতে চাই নি তোকে, আমি তো….”
“আমার জায়গাটা যখন অন্য কাউকে দিয়েই দিলেন, তাহলে আবার কেন আসতে চাইছেন আমার জীবনে? চলে যান না এখান থেকে, আর আমার সামনে আসেন না, সহ্য করতে পারছি না আমি আপনাকে। একটু ভালো থাকতে দেন আমায়, একটুখানি ভালো থাকতে দেন।”
ওনার বুকে মুখ গুঁজে ফুপিয়ে কেঁদেই চলেছি। এতদিনের জমানো অভিমান গুলো যেন কান্নার দলা পাকিয়ে বেরিয়ে আসছে। তাসফি ভাই কিছু বললেন না, আমার কথার প্রতিত্তোরে। নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে শুধু বেঁধে রাখলেন। এই মুহুর্তে আমার ইচ্ছে হলো না ওনাকে সরিয়ে দেবার। এতটুকু তো আমার প্রাপ্য, হোক না সেটা দ্বিতীয় নারী হিসেবে। শেষ বারের মতো ওনার একটুখানি ভালোবাসা নিয়েই না হয় বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিলাম।
বেশ কিছু সময় কে*টে গেল, কান্নার রেশটাও কমে এসেছে আমার। এতক্ষণেও তাসফি ভাইয়া একটা কথাও বলেন নি আমার সাথে। হয়তো একটুখানি সময় দিচ্ছেন আমাকে। কান্নার দাপট কমে এলেও একই ভাবে পড়ে রইলাম ওনার বুকে, ছাড়িয়ে নিতে ইচ্ছে হলো না এতটুকুও। একসময় দু’জনের নিশ্বাসের শব্দ ছাড়া কিছুই এলো না। কিছুক্ষণ পর একদম আমার কানের সন্নিকটে মুখ আস্তে করে বলে উঠলেন,
“চার বছর আসলেই অনেক বেশি সময় রুপু, এই চার বছরে যেমন অনেকটা বড় হয়ে গেছিস, ঠিক তেমনি পাহাড় সমান অভিমানও জমিয়ে রেখেছিস। চার বছরের অভিমানের উপসংহার হতে একটু তো সময় লাগবেই। না হয় তোকে আরও চার মাস সময় দিলাম।”
থামলেন উনি, একটু চুপ থেকে আবারও বলতে লাগলেন,
“তারপর আর সময় পারি না, এতটুকুও সময় পাবি না। তখন সময়গুলো শুধুই আমার হবে, শুধুই আমার। গুছিয়ে নে নিজেকে, 🖤🖤🖤
নিরুত্তর হয়ে ঘাপটি মে*রে পরে রইলাম ওনার বুকে। নিক না উনি আরও চার মাস সময়, ভেঙে দিক না আমার অভিমান গুলো, মিথ্যা হয়ে যাক না সেই অপ্রিয় সত্য। আমি তো চাই এই মানুষটাকে, খুব করে কাছে পেতে চাই, এভাবেই বাঁধা পড়ে থাকতে চাই ওনার সাথে। মামাতো বোন থেকে মামাতো বউ হবার অধিকার চাই।
মামাতো বউ…. কথাটা মাথায় আসতেই আবারও মনে পরে গেল অতীতের কথাগুলো। ভেসে উঠলো সুখময় জর্জরিত স্মৃতি গুলো। কতই না বোকা বোকা কথা বলেছিলাম সেদিন, সবার হাসি দেখে একটু হলেও উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম। কিন্তু সেদিন সবাই আমাকে অবাক করে দিয়ে তাসফি ভাইয়ের সত্যিকারের মামাতো বউ হবার খেতাবটাও দিয়ে দিয়েছিলো।
অতীত….
.
আমার কথায় সকলের অট্টহাসি দেখে কিছুটা মন খারাপ করে রুমে চলে আসি। আর সেই রাগটা গিয়ে পরে মি. বজ্জাত তাসফির উপর। সারা সন্ধ্যা রুমে কাটিয়ে দিলেও রাতে ঠিকই হয়েছিলো সবার সামনে, রাতের খাবার খাওয়ার জন্য। মুখটাকে কিছুটা গোমড়া করে খাবার খেতে শুরু করতেই দাদু বলে উঠেন,
” কি ছোট বউ, এমন মুখ গোমড়া করে মনমরা হয়ে আছো কেন?”
“কিছু হয় নি বুড়ো বর, এমনিতেই।”
“এমনি এমনি তো কিছু হয় নি, কি হয়েছে তাড়াতাড়ি বলে ফেলো, ছোট বউ।”
“কি আবার হবে, তোমার মতো বুড়ো বর ওর পছন্দ হচ্ছে না। তাড়াতাড়ি আমার সত্যিকারের মামাতো বউ বানানোর ব্যবস্থা করো। ও তো এটাই চাচ্ছে। কি রে, বল রুপু।”
তাসফি ভাইয়ার কথা শুনে ফট করে তাকালাম ওনার দিকে। কি বলেন উনি? আমি আবার কখন বললাম এসব কথা?
“মিথ্যা কথা বলছেন কেন তাসফি ভাইয়া, আমি কখন আপনাকে এসব কথা বলতে গেলাম?”
“আমি মিথ্যা বলছি, তাই না? তুই যে বিকেল থেকে বায়না ধরছিস, মামাতো বউ হয় কোলে উঠবি, চুমু খাবি।”
“কি… আমি তো শুধু আপনাকে….. ”
“থাম তো তোরা, খাবার সময় কি শুরু করলি? চুপচাপ খেয়ে উঠে যা, সময় হলে ঠিকই দু’জনকে ধরে বেঁধে বিয়ে দিয়ে দিবো।”
বড়মার কথায় চুপ হয়ে গেলাম দুজনেই। সাথে অবাকও হলাম কিছুটা। ধরে বেঁধে বিয়ে দিয়ে দিবে মানে? তাও তাসফি ভাইয়ার সাথে। কথাটা ভাবতেই গলায় খাবার আটকে গেল আমার, হেঁচকি উঠতে লাগলো সমানে। তাসফি ভাই পাশে থেকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিতেই সাথে সাথে এক ঢোকে শেষ করলাম। ওনার দিকে ফিরে তাকাতেই দেখি হেঁসে চলেছেন আমার অবস্থা দেখে। বাকিদের দিকে তাকিয়ে দেখি, বাকিরাও একই ভাবে হেঁসে চলেছে। তাদের হাসিটা বোধগম্য হলো না আমার। সত্যি সত্যিই কি সবাই মিলে ওনার সাথে আমার বিয়ের প্ল্যান করছেন? তাসফি ভাই কে ভালো লাগলেও বিয়ের কথা তো স্বপ্নেও ভাবি নি। সারাক্ষণ ওনার সাথে সময় কাটাতে, ওনার আশে পাশে থাকতে ভালো লাগলেও, বিয়ে করে ওনার সাথে থাকা অসম্ভব। কিছুতেই এই বজ্জাত লোকটার সাথে বিয়ে করে থাকতে পারবো না আমি।
আমার ভাবনা গুলো কে সত্যি করে দিয়ে আব্বু বলে উঠলো,
“সেটা তো এখনো অনেক সময়, মাত্র তো এইটের বোর্ড পরীক্ষা দিলো। বড় হোক আগে, তাসফিও প্রতিষ্ঠিত হোক, তারপরই না চার হাত এক হবে।”
আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলাম আব্বুর দিকে। কি বলে এগুলো আব্বু? বড় বাবা বলে উঠলেন,
“তাসফিরও তো মাত্র ইন্জিনিয়ারিং পরীক্ষা শেষ হলো। রেজাল্ট দিক, স্কলারশিপ পেলে তো আর দেশে থাকছে না, বাইরে থেকে ডিগ্রি নিয়ে আসুক, তারপর ওদের বিয়ের চিন্তা।”
“আমি স্কলারশিপ পেলেও দেশের বাইরে যাবো না মামা।”
তাসফি ভাই বলে উঠতেই সবার দৃষ্টি ওনার দিকে নিবদ্ধ হলো। বড় বাবা বলে উঠলেন,
“কেন তাসফি? তোর তো সব সেমিস্টারের রেজাল্ট মাশা-আল্লাহ ভালো, শুধু ভালো নয় বুয়েটে সেরা ১০ জনের মাঝে আছিস। স্কলারশিপ তোর থাকবে সেটা আমরা সবাই জানি, তাহলে যাবি না কেন?”
“যাবো না আমি, নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে গিয়ে চার বছর, সাড়ে বছর কিছুতেই থাকতে পারবো না আমি।”
আব্বু বলে উঠলো,
“সেটা কেমন কথা তাসফি? বাইরের দেশে যাবার সুযোগ পেলে হাতছাড়া কেন করবি?”
“কাছের মানুষগুলো কে এখানে ফেলে রেখে কিছুতেই থাকতে পারবো না আমি। বিদেশ টিদেশ যাবার কোন ইচ্ছে নেই আমার, তার চেয়ে দেশেই বিসিএস দিয়ে জবে ঢুকবো।”
তাসফি ভাইয়ার কথায় হতাশার নিশ্বাস ছাড়লো সবাই। হার মেনে নিলো ওনার কথায়। বড়৷ বাবা বললেন,
“এসব চিন্তা ভাবনা না করলেই ভালো হলো তাসফি। সুযোগ পেলে হাত ছাড়া না করাই ভালো। তুই ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট, তোকে নিয়ে আমাদের অনেক গর্ভ।”
“উফ্! থামো তো তুমি। ছেলেটা খেতে বসেছে, খাবার সময় এসব কথা না বললেই কি নয়।”
বড়মা কথাটা বলতেই আর এই বিষয়ে কেউ কিছু বললো না। চুপচাপ খাওয়ায় মন দিলো সবাই। আমি চুপচাপ তাকিয়ে দেখতে লাগলাম শুধু, কিছু কিছু বোধগম্য করার চেষ্টা করলাম। এর মাঝেই দাদু হঠাৎ বলে উঠলেন,
“সে না হয় হবে। দাদু ভাইয়ের যেটা ভালো হয় সেটা করুক, আমরা বাঁধা দিবো না। কিন্তু আমার শরীরটা যে আর ভালো যাচ্ছে না।”
“কেন আব্বা কি হয়েছে হঠাৎ।”
সহসায় বলে উঠলেন বড় বাবা। দাদুর অগাধ ভালোবাসায় এ বাড়ির সবাই নিজের পরিবারেরই একজন হিসেবে মেনে চলে দাদুকে, ফুপি ছাড়াও বড়রা সবাই আব্বা বলেই ডাকে দাদুকে। দুদু কিছু বলার আগেই ফুপি বলে উঠলো,
“কি আর বলি ভাই, আব্বর শরীরটা দিন দিন হুটহাট করে খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তাসফি আর ওর বাবা কয়েক দিন আগে ডাক্তারও দেখিয়ে আনলো।এখন কিছুটা সুস্থ আছে।”
“আমাদের তো একটাবার জানালি না রেহেনা? কিছু একটা হয়ে গেলে।”
“তেমন কিছু সিরিয়াস নয়, বউমার সেবায় আর ছোট বউয়ের ভালোবাসায় এখন একদম ফিট আছি।”
দাদু কথাটা বলতেই স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লেন বড় বাবা। দাদু একটু থেমে আবারও বলে উঠলেন,
“তবে কখন কি হয়ে যায় বলা তো যায় না। মাঝে মাঝে অনেক আফসোস হয়, তাসফি রূপার বিয়েটা দেখে যেতে পারবো নি না, আমার বউমার মতো ছোট বউকেও নাতবউ করে ঘরে তুলতে পারবো কি না?”
আমি আবারও ফ্যালফ্যাল করে তাকালাম দাদুর দিকে। কি বলেন দাদু, তাসফি রূপার বিয়ে মানে? তাহলে কি সত্যি সত্যিই বাড়ির সবাই মিলে ওনার সাথে আমার বিয়ের ব্যবস্থা করছে? সবার কথার দিকে আর কান না দিয়ে, ফট করে চোখ তুলে তাকালাম তাসফি ভাইয়ের দিকে। মুচকি হেঁসে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে, আমাকে তাকাতে দেখে তার হাসিটা যেন আরও বেড়ে গেল। আমার একটু দিকে একটু ঝুঁকে এসে আস্তে করে বলে উঠলেন,
“তাড়াতাড়ি নিজেকে তৈরি করে নে, কোলে উঠে আদরের সাথে সাথে চুমু খাওয়ার জন্য। আমার সত্যিকারের মামাতো বউ হতে আর কিন্তু বেশি দেরি নেই।”
ওনার কথায় চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যেতেই পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিলেন, পানির গ্লাসটা দেখে আবারও বিষম উঠে গেল আমার।
.
তাসফি ভাইয়া কে একরাশ ভালো লাগলেও বিয়ে নামক জিনিসটার কথা কল্পনাতেও আনি নি। কিন্তু বাসার লোকজন শুধু কল্পনায় নয়, বাস্তবেও সেটা পূরণ করার তোড়জোড় চালিয়ে যাচ্ছে। কথায় কথায় রিফাপুর থেকেও জানতে পেরেছি অনেক আগে থেকেই নাকি সবাই মিলে তাসফি ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করে রেখছে। বিশেষ করে তাসফি ভাইয়ার দাদু এবং দাদী। প্রথম প্রস্তাবটা নাকি দাদুই রেখেছিলেন, তারপর থেকে দাদীও আমাদের এক করার জন্য অনেক চেষ্টায় রাজি করিয়াছেন পরিবারের সবাইকে।
তাসফি ভাইয়া কে ভয় পেলেও এখন কেমন জানি লজ্জা অনুভূতি হচ্ছে। স্কুলের বান্ধবীদের থেকে তাদের হাজারো প্রেম কাহিনি শুনেছি, বিয়ে না হলেও বিয়ের পর কি কি করবে, সেগুলোর শতশত গল্প শুনেছি। তাসফি ভাইয়ের সাথে বিয়ে হলে, ওনার সাথেই তো বান্ধবীদের বলা কথাগুলোর মতোই সময় কাটাতে হবে ওনার সাথে। ইস্! ভেবেই লজ্জা লাগছে।
তাসফি ভাইয়ের সাথে সময় কাটাতে ভালো লাগলেও বিয়ের পর থাকবে কি করে? এমনিতেই সারাক্ষণ ধমকের উপর রাখেন, তখন তো আরও বেশি হবে।
ভয় হোক বা লজ্জা, তাসফি সাথে আমার বিয়ের কথাটা শোনার পর ওনার সামনে আর যেতে পারলাম না, আর না পারলাম নিজের শত শত বায়না গুলো ওনাকে দিয়ে পূরণ করাতে। উল্টাপাল্টা হাজারো কথা চিন্তা করতে করতে কেটে গেল এক সপ্তাহ। সেই সাথে একটু হলেও ভুলে গেলাম বজ্জাত লোকটার সাথে আমার বিয়ের কথাটা।
পরীক্ষার পর বাসায় বসে বসে বোরিং সময় কাটাতেই রিফাপুকে বললাম, কোথাও দেখে ঘুরে আসি। কিন্তু তার পড়াশোনার চাপে সোজা না করে দিলো আমাকে। ব্যার্থ মন নিয়ে আরও দু’দিন কাটিয়ে দিলাম। কিন্তু আমার মন খারাপ কে ভালো করে দিয়ে হুট করে তাসফি ভাইয়ের আগমন ঘটলো বাসায়। ওনাকে দেখেই আমার ওনাকে করা আমার বায়নাগুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। একমাত্র এই মানুষটাই আমাকে যেকোন মুহুর্তে সঙ্গ দিতে রাজি। প্রথমে একটু বকাঝকা করবে, তারপর ঠিকই রাজি হয়ে যাবে।
তাসফি ভাইকে রুমে ঢুকতে দেখেই ছুটে গেলাম রুমের ভেতর। আমাকে ঢুকতে দেখেই বলে উঠলেন,
“কি হয়েছে? কি চাই?”
“আপনাকে…..”
বলেই দাঁত কেলিয়ে হাসলাম আমি। উনি কিছুক্ষণ অবাক নয়নে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে একটু কাছে এগিয়ে আসলেন। বলে উঠলেন,
“ওওও আচ্ছা…. তা আমাকে কেন চাই? কোলে উঠবি? চুমু খাবি?”
খুকখুক করে কেশে উঠলাম আমি। কত্ত বড় বজ্জাত লোক একটা। ওনার কোলে উঠে নাকি চুমু খেতে চাই? আর কি কোন কাজ থাকতে পারে না নাকি? হালজা চেঁচিয়ে বলে উঠলাম,
“কেন? আপনার কোলে উঠে চুমু খাওয়ার জন্যই কি আপনাকে প্রয়োজন? তাছাড়া কি আর কোন কাজ থাকতে পারে না?”
“এগুলো ছাড়া আপাতত তো আর কোন কাজ দেখছি না। এত আসা নিয়ে যখন এসেছিস তখন এদিকে আয়, চুমু থেরাপি শুরু করা যাক।”
“আপনি এত বজ্জাত কেন তাসফি ভাই, এগুলো ছাড়া আর কোন কাজ থাকতে পারে নাকি?”
কিছুটা ধমকেই বলে উঠলাম। উনি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছেন। একটু পর নিজেকে ধাতস্থ করে গলার সুর পাল্টালাম। মিনমিন গলায় বলে উঠলাম,
“একটু ঘুরতে নিয়ে চলেন না, তাসফি ভাইয়া। বাসায় বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না।”
“তোকে নিয়ে কোথাও যাবো না।”
ওনার সোজাসাপ্টা কথায় ব্যাথিত হলো আমার ছোট মনটা। আস্তে করে বললাম,
“কেন? একটু নিয়ে গেলে কি হবে?”
“আমাকে ধমক দিস, আবার আমাকেই বলসি ঘুরতে নিয়ে যাবার কথা? তোর সাহস দেখে আমি ভীষণ অবাক হচ্ছি রুপু।”
“প্লিজ ভাইয়া প্লিজ, এমন করবেন না। আর বলবো না, সরি! প্লিজ এবার নিয়ে চেলেন।”
এগিয়ে এসে তাসফি ভাইয়ার হাত ধরে বলতে লাগলাম। তাতেও কাজ হলো। আবারও বলে উঠলেন,
“হবে না।”
“সরি তো! আর এমন করবো না। প্লিজ প্লিজ প্লিজ….”
“আচ্ছা যা, এবারের মতো ক্ষমা করে দিলাম। রেডি হয়ে আয়।”
তাসফি ভাইয়া কথাটা বলতেই আস্তে করে চিৎকার দিয়ে উঠলাম যেন। ‘আমি এখনি আসছি’ বলে এক ছুটে বেড়িয়ে গেলাম রুম ছেড়ে।”
সেদিন সহ আরও সাত দিন আমায় বায়নার জোরে তাসফি ভাই আমাকে ঘুরতে নিয়ে গেলেন। এর মাঝে দুই একদিন বাদ গেলেও বাকি দিনগুলো সারাদিন ওনার বাইকে করে আমকে এখানে সেখানে ঘুরিয়েছেন। আজকেও যাবার কথা। একটু পরেই হয়তো বাইক নিয়ে চলে আসবেন।
যাবার জন্য রেডি হচ্ছিলাম এর মাঝেই আম্মু হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো রুমে। আমার দিকে না তাকিয়েই বলে উঠলো,
“তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে রূপা, এখনি তোর ফুপির বাসায় যেতে হবে। আব্বা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পরেছেন। তোকে দেখতে চাইছেন। হাতে একদম সময় নেই, তাড়াতাড়ি আয়।”
বলেই যে ভাবে এসেছিলো সেভাবেই চলে গেল আম্মু। আমি হাজারো বিষ্ময় নিয়ে স্থির হয়ে রইলাম। দাদুর অসুস্থতার কথাটা কি ঠিক শুনলাম, না-কি ভুল বুঝে উঠতে পারছি না যেন। এর মাঝে রিফাপু এসে আবারও একই কথা বলতেই যেন হুস এলো আমার। তাড়াহুড়ো করে চুল গুলো কোন রকম ভাবে রাবার দিয়ে বেঁধেই বেরিয়ে গেলাম রুম ছেড়ে।
.
.
চলবে…….
রিচেইক দেওয়া হয় নি, ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।🖤