তোমাতে আসক্ত পর্ব ১৫

#তোমাতে-আসক্ত

নীলচুড়ি (রোকসানা)

পর্ব (১৫)

“”কি হলো আরমান তুমি কি আমার কান্নার শব্দ শুনতে পারছোনা? তুমি তো বলেছিলে একদিন আমি ঠিকই তোমার জন্য কান্না করবো। আর সেদিন তুমি নিজের হাতে আমার চোখের পানি মুছে দিবে। দেখ আজ তুমি জিতে গেছো। তোমার অথৈ ঠিকই তোমার জন্যে কান্না করছে। কিন্তু তুমি তো পানি মুছে দিচ্ছোনা।”””

আরমান চোখ পিটপিট করে খুলতে লাগলো। অথৈর কান্না দেখে তার চোখের কোনা দিয়ে অঝর ধারায় বৃষ্টি বয়ে যেতে লাগলো। তার অথৈমনি যে আজ তার জন্য কাদছে। উফ! এত কষ্ট কিভাবে সয়বে সে?? নিজের সর্বস্ব শক্তি দিয়ে হাতটা বাড়িয়ে দিতে লাগলো অথৈর চোখের পানি মুছে দেওয়ার জন্য কিন্তু তার শরীর যে তার সঙ্গ দিচ্ছেনা। হাতের আংগুলগুলো হালকা নড়ে উঠলেও হাতটা উপরে তুলতে পারছেনা। আল্লাহ কি তার সহায় হবেনা? তাকে কি একটু শক্তি দান করা যায় না যাতে অথৈর চোখের পানি মুছতে পারে?? তার অথৈ যে খুব করে চাচ্ছে তার হাত দিয়েই চোখের পানি মুছাবে!!!

হঠাৎ মাহির এসে আরমানের হাতটা আকড়ে ধরলো। আরমানের হাতটা উচু করে হাতের আংগুলগুলো দিয়ে অথৈর পানি ছুয়ে দিলো। এতে যেন আরমানের প্রাণ জুড়িয়ে গেলো। অথৈর চোখের উষ্ণ পানির ছোয়া আরমানের রিদয়টাকে শান্ত করে দিলো।

“”অথৈ দেখ, আরমান তোমার চোখের পানি মুছে দিয়েছে। আর কান্না করেনা লক্ষীটি। তুমি জানোনা তোমার চোখের পানি ও সয়তে পারেনা? নাও চোখের পানিটা মুছে নাও। তোমার যে এখন আরমানকে বিয়ে করতে হবে!!””

অথৈ চোখের পানি মুছে মাহিরের দিকে ভেজা চোখে তাকালো। মাহির সে চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলোনা। তার ভেতরে কি চলছে সেটা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ বুঝবেনা এমনকি মাহির নিজেও।

“”কাজী বিয়ে পড়ান।””

অথৈ পাশ ফিরে তাকাতেই থুতনিতে দাড়ী আর মাথায় টুপী পড়া মাঝবয়সী এক লোককে দেখতে পেলো। মাহির কি করতে চাচ্ছে?? অথৈ জিজ্ঞাসু চোখে ময়হিরের দিকে তাকাতেই মাহির গরগর করে বলতে লাগলো।

“”আপনিতো চেয়েছিলেন আরমানের শেষ ইচ্ছে পুরন করতে আমি সেটাই করছি অথৈ। হয়তো আপনার আরমানকে আপনার কাছে ফিরিয়ে দিতে পারিনি কিন্তু ওকে খালি হাতে চলে যেতে দিবোনা। আপনার প্রমিস ভেংগে যেতে দিবোনা। আপনি শুধু আমাকে একটু সাহায্য করেন তাহলেই হবে। করবেন তো অথৈ???””

অথৈর চোখ ঝলঝল করে উঠলো। মাহিরের কথায় মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিতে দিতে নিজের চোখদুটো আবার মুছে নিলো।

কাজী তার নিয়মানুযায়ী বিয়ে পড়াতে লাগলো। অথৈ কান্নাজড়িত কন্ঠে কবুল বলে নিলো। তারপর মাহির আরমানের কানের কাছে নিচু স্বরে কবুল বলতে বললো। আরমানের চোখ দিয়ে শুধু টপটপ করে পানি পড়ছে। সে অস্পষ্ট স্বরে তার ঠোটদুটো নড়াতে লাগলো। আরমান নিজের কর্নদ্বয় আরমানের ঠোটের কাছে নিয়ে গেলো।

মাহির শুধু ইসলামীকভাবে নয় আইনি নিয়মেও বিয়ে পড়ানের জন্য ব্যবস্থা করে নিলো যাতে কোনোদিক দিয়ে ত্রুটি না থাকে। অথৈর দিকে বিয়ের রেজিস্ট্রি পেপারটা এগিয়ে দিলো।

“”অথৈ,এটাতে সাইন করে দিন।””

অথৈ চুপচাপ বাধ্য মেয়ের মতো সাইন করে দিতেই আরমানের দিকে এগুলো। আরমানের বৃদ্ধা আংঙুলটি নিজের হাতের মুঠোয়পুরে নিলো মাহির। নীলকালীর বাক্সতে হালকা চাপ দিয়ে ভিজে কালী ভরিয়ে নিলো আরমানের আংঙুলে। তারপর পেপারে টিপসই নিয়ে বিয়ের কার্যকলাপ সমাপ্তি করে রুম থেকে বেরিয়ে এলো।

নিজেকে খুব অসহায় আর খুব একা লাগছে মাহিরের। স্যার তো বলেছিলো আমি কোমল মনের মানুষ। কিন্তু একটা কোমল মনের মানুষ কি কখনোও এভাবে নিজের বউয়ের বিয়ে পড়াতে পারে? কখনোই না!! আমি হলাম কঠিন মনের মানুষ তাই এমন একটা কঠিন কাজ করার শক্তি পেয়েছিলাম। হ্যা আমি খুব কঠিন মনের মানুষ।

“”কিরে মাহির আজকেও খালি হাতে ফিরে এলি?? অথৈর সাথে দেখা হয়েছিলো??””
“”হ্যা,খালামনি। দেখা আবার হবেনা? আমি গেছি শুনেইতো বাইমমাছের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে আমার কাছে ছুটে এলো। আমাকে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না। তুমি যদি একবার দেখতেনা খালামনি তোমার চোখেও পানি চলে আসতো!! আমাকে কত কি রান্না করে খাওয়ালো।””

মাহির নিজের শার্টটা খুলার বাহানায় ওয়াশরুমে ঢুকতে গেলে মিসেস ইরানী সামনে এসে দাড়ালো।

“”তাই নাকি! এতোই যদি কান্না করলো,এতোই যদি ভালোবাসা লাফ খাচ্ছে তাহলে ওই বাসায় ফেলে এলি কেন?””
“”তুমিও না খালামনি,কিছু বুঝোনা। ওতো আসতেই চাইলো আমিই তো বললাম আর কিছুদিন থেকে তারপর আসতে। আমার তো এখন ভার্সিটিতে পরীক্ষার ডিউটি পড়েছে,সারাদিন ওখানেই থাকতে হয় আর তাছাড়া ওরও তো সামনে এক্সাম। এখানে আসলে কি পড়তে চাইবে? পরে তো ফেল করে আমার দোষ দিবে।””

মাহির টাওয়ালটা নেওয়ার বাহানায় চোখটা মুছে নিলো। আর সাথে সাথে মিসেস ইরানী টাওয়ালটা কেড়ে নিয়ে বললো,

“”আর কত মিথ্যে বলবি আমার সাথে? তোর কি একটুও লজ্জা লাগেনা? আমাকে কি তোর পিচ্চি মেয়ে মনে হয়??””

মাহির আর চোখের পানি লুকাতে পারলোনা। খালমনিকে জড়িয়ে নিয়ে চোখে যত পানি জমে আছে সব বের করে দিতে চাইলো।

“”ও কেন এমন করে খালামনি? ও কি বুঝেনা ওকে দেখার জন্য আমার চোখটা কতটা জ্বালা করছে? ওর কন্ঠ শোনার জন্য আমার কানগুলো অন্য কিছু শুনা বাদ দিয়ে দিয়েছে? ও যে আমার নেশা হয়ে গেছে খালামনি। যা পাওয়ার জন্য আমাকে দুমড়ে মুচড়ে খেয়ে ফেলছে।””
“”শান্ত হ,বাবা। সব ঠিক হয়ে যাবে। ওকে একটু সময় দে।””
মাহির এবার রেগে গেলো। পানিতে ভেজা শীতলচোখ দুটো আগুনে পরিনত হয়ে গেলো।

“”আর কত সময় দেব খালামনি? আরমান চলে গেছে আজ ৫ টা মাস হয়ে গেলো। এর মধ্যে একটাবারও আমার সাথে কন্টাক্ট করার প্রয়োজন মনে করেনি। আমি ঘন্টার পর ঘন্টা ড্রয়িং রুমে বসে ওর জন্য ওয়েট করেছি কিন্তু ও একটাবারও চোখের দেখা পর্য়ন্ত করতে দেয়নি। দরজা আটকে রুমের ভেতর গিয়ে বসে ছিলো। আমাকে আর কত কষ্ট দিবে? ওকে বিয়ে করে কি আমি এতোই ভুল করেছিলাম যে আমাকে এতোটা কষ্ট দিচ্ছে তাও রাগ কমাচ্ছেনা????
“”তোর মতো হাদারামের এমনি হওয়া উচিত।””
“”খালামনি ঠিক করে কথা বলো।””
“”কি ঠিক করবো? তুই যা তাইতো বললাম। তোর বউ যদি দরজা আটকাতে পারে তুই ভাংতে পারিসনা? তোর বউ যদি তোর সাথে আসতে না চায় তুই তুলে আনতে পারিসনা?? তোর খালুকে দেখেও তো শিখতে পারিস। আমি তো ভেবেছিলাম তুই অনেক বুদ্ধিমান ছেলে কিন্তু তোর ভিতরে তো সাগর কলা!!””
“”মানে??””
“”তোর আর মানে বুঝে কাজ নেই যা ফ্রেস হয়ে আয় আমি খাবার দিচ্ছি।””

মিসেস ইরানী অনেকটা তাচ্ছিলো সুরে কথাগুলো বলে ডাইনিংরুমে চলে গেলেন। ছেলেটা আমার এতো বোকা কেন যে হলো আল্লাহই জানে। বেশ হতাশামনেই খাবার টেবিলটা সাজাতে লাগলেন।

“”আরে! আরে!! এতো রাতে আবার কোথায় যাচ্ছিস মাহির? একটু আগেই তো আসলি।””
“”গুন্ডামী করতে খালামনি। আমার রুমটা একটু গুছিয়ে রেখোতো।””

মাহির চোখ টিপ দিয়ে শার্টের হাতাগুলো ভাজ করতে করতে ঠোটে হাসি ফুটালো। আজকে আবার একটি শার্টের ইন্তেকাল হবে!!!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here