#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১৮
আয়নার দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছো শান্ত। চোখ ছোট ছোট করে সামনে এগিয়ে নিজের দিকে আঙুল তুলে বলল, “শান্ত তুই! শেষে তুই কি না এই চশমিশের হাত থেকে পা*লিয়ে এলি । কিন্তু পা*লিয়ে এলি কেন?
বলেই বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইল। মাথা ঝাঁকিয়ে ঘন ঘন শ্বাস নিতে লাগল। এ কি হচ্ছে তার সাথে। কেন হচ্ছে? আর যাই হোক সেটা একটা এ*ক্সিডেন্ট ছিল। এই নিয়ে এতো ভাববার কি আছে। মনে তো হয় না মিশ চশমিশ এটা নিয়ে এতো ভাবছো। নিশ্চিত ভাবছে না, ভাবলে তো আর ওর কাছে আসতো না। না আমিও আর ভাববো না এই নিয়ে। এতো ভাববার কিছু নেই। বলেই নিজেকে ঠিক করে নিল শান্ত।
অতঃপর আফিনের ফোন পেয়ে বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেল শান্ত। তানিশা, দিয়া আর আহিম অপেক্ষা করছে ক্লাবের বাইরে। আহনাফের গাড়ি ঢুকলো তখন। আহনাফ কে দেখে অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে নিল তানিশা। সকালের কথা এখনো ভুলে যায় নি সে। আর যাবেও না। এদিকে শান্ত, আর নীলাভ্র বাইক নিয়ে ক্লাবে ঢুকলো। শান্ত হেলমেট খুলে বলল,
“কাজ কমপ্লিট!
“সব তো কমপ্লিট কিন্তু যে কাজটা করবে সে তো এখনো এলো না।
দিয়া বলল!
“আফিন তো সবে কল করলো আমায়। বলল বের হচ্ছে!
আহনাফ বলে উঠল, “ভেতরের কাজ কতটুকু এগিয়েছে! আর রিয়া আসবে কখন?
উপস্থিত সবাই মুখ ফিরে তাকাল তানিশা’র দিকে। তানিশা আমতা আমতা করে ১৫ মিনিটের কথা বলে ভেতরে চলে গেল। আহিমও সকলের উদ্দেশ্যে বলল, “আমাদের ভেতরে গিয়ে একবার সবকিছু দেখা উচিত!
তার কথায় সায় দিয়ে সবাই ভিতরে গেল। ভেতরের ডেকোরেশন দারুন হয়েছে। মেঝের বেলুন গুলো থেকে একটা বেলুন উঠিয়ে নিল আহনাফ। সামনেই বড় করে লেখা আছে, “উইল ইউ মেরি মি রিয়া!
এই কাজটা আজ করতে চলেছে আফিন! তার প্রেমের সম্পর্ক অনেকদিনের কিন্তু এখন অবদি ব্যাপারটা খোলাসা করে নি কেউ। তবুও ধরে ফেলল সবাই আর সবার প্রথমে ধরল তো শান্ত নিজেই! কিন্তু এর মাঝেই বিপত্তি ঘটে গেল। রিয়া’র পরিবার চাপ দিচ্ছিল বিয়ের জন্য। আফিন কে বলতেই আফিন সংকোচ এ বলল, “আমি এখনো এই বিষয় নিয়ে তৈরি নই রিয়া!
ব্যস কাজ হয়ে গেল। রিয়া রেগে তখনই ব্রেকাপ করে চলে গেল। বেচারা আফিন রাত ভোর নেশা করে পড়ে রইল শান্ত’র বাসায়! শান্ত একটা কথা কিছুতেই বুঝে না, সব বিরহ প্রেমিক রাত হতেই কেন তার বাড়িতে এসে উঠে। আফিনের পর পরই এসে ভর করল আহনাফ। ভাগ্যিস নে*শা টা সে করে নি। নাহলে এই দুই মা*তাল কে সামলানো মুশকিল। শেষমেষ আফিন সিদ্ধান্ত নিয়েই নিল রিয়া কে বিয়ের প্রোপজাল করেই রাগ ভাঙাবে। এছাড়া আর কোন উপায় নেই!
কথামতো কাজ! আফিন এসে উপস্থিত। এক কোনে বসে তানিশা ওয়াইনের ক্লাসে চুমুক দিয়ে আফিনের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। আফিন কে আজ একটু বেশিই হ্যান্ডসাম লাগছিল। আহনাফ শান্ত’র কানে ফিসফিসিয়ে বলে, “কাজি আনাই বাকি ছিল, দেখে তো মনে হচ্ছে আজ’ই বিয়ের কাজ সেরে ফেলবে আফিন।
শান্ত মুখ টিপে হাসল। আফিন ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল,
“হাসছিস কেন?
“আরে না না কিছু না। খুব হ্যান্ডসাম লাগছে তোকে।
“তো এটা তো ভালো কথা, হাসবার কি হলো?
আহিম আর নীলাভ্র এসে আফিনের কাঁধে হাত রেখে সবলল, “বানরের গলায় মুক্তোর মালা কথাটা শুনেছিস!
“তুই কি আমাকে বানর বললি!
তানিশা দূর থেকে বলে উঠলো, “নাহলে আর কি? আমার বেস্টু মুক্তোর চেয়ে কম কি? কিন্তু আহিম ওটা মুক্তো না ডায়মন্ড হবে বুঝলি! 😏
আফিন মুখ ভেংচি কেটে সামনে এগিয়ে গেল। দিয়া হেসে বলল, “ডায়মন্ডের কথা শুনে মনে পড়ল, রিং এসেছিস! প্রপোজ করবি কি দিয়ে?
আফিন পকেট থেকে রিং এর বক্স টা বের করল। দিয়া আহিম আর নীলাভ্র ছুটে এলো রিং টা দেখতে। দিয়া হাতে নিয়ে, বাহ বেশ তো! তোর পছন্দ তো দারুন!
শান্ত দিয়া’র ঘাড়ে হাত রেখে বলল, “দারুন বলেই তো আজ রিয়া কে প্রপোজ করতে চলেছে!
তানিশা ফোড়ন কেটে বলল, “আফসোস তো হচ্ছে রিয়া’র জন্য। গাধিটা আর কাউকে পেলো না শেষমেষ আফিন কে। যারা জানেই না ভালোবাসা কি?
কথাটা আহনাফ কে উদ্দেশ্য করেই বলল। আহনাফ মুচকি হেসে চেয়ার টেনে বসল। আফিন উঠে এসে দাঁড়াল তানিশা’র সামনে। তানিশা গ্লাসে ওয়াইন ঢেলে বলল, “কি?
আফিন রেগে তানিশার হাতের গ্লাস কেড়ে নিয়ে পুরোটা খেল। তানিশা রেগে বলল, “কি করছিস?
“ফোন কর ওকে, কোথায় ও?
বলেই চলে গেল। তানিশা মুখ ভেংচি কেটে ফোন করল রিয়া কে। রিয়া বলল, ২ মিনিটে আসছি!
তানিশা লাফিয়ে উঠে বলল, “দু মিনিটে আসছে!
সবার তাড়াহুড়ো লেগে গেল। লাইট সব বন্ধ করে দিয়ে একটা লাইট জ্বালানো হলো। সেই আলো ফেলল দরজায় উপর। আফিন একটা ফিতে এসে ধরাল আহিমের হাতে। বার বার করে ফেলল দরজা খুলতেই যেন ফিতা ধরে টান দেয়। তাহলে রিয়ার উপর ফুলের বর্ষন হবে। তাড়াহুড়ো করে হাঁটতে গিয়ে বাড়ি খেল চেয়ারের সাথে। এক পা নিয়েই লাফাতে লাগল। শান্ত আর আহনাফ শব্দ করে হেসে বলল, “ধীরে ধীরে!
আফিন পা হাত দিয়ে ধরেই নীলাভ্র কে বলল, “গানের টিউন বাজাতে। সবাই হাসতে লাগল! অতঃপর অপেক্ষা সমাপ্তি!
আফিন দরজার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল। পায়ের যন্ত্রণা কমে নি এখনো। ঠোঁট ভিজিয়ে রিং বক্স হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করল। দরজা নড়াচড়া করছে। অতঃপর দরজা খুলতেই আলো পড়ল সেখানে। কেউ একজন তো ঢুকল। আহিম সাথে সাথেই ফিতা টান দিল। ফুল বর্ষণ হলো তার উপর। শান্ত আকস্মিক ভাবে তাকিয়ে রইল সামানের দিকে। এটা রিয়া না মিস ঝুম! ফুলের বর্ষণ দেখে ভয় পেয়ে হাত দিয়ে ঢেকে দাঁড়িয়ে আছে সে। উপস্থিত সবাই বাকরুদ্ধ! তানিশা দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “এই মেয়েটা এখানে কেন?
আহনাফও অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। আফিন চোখ মেলতে মেলতে বলল, “উইল ইউ মেরি…
বলতে গিয়েই ধমকে গেল। দিয়া সমস্ত আরো জ্বা*লিয়ে দিল। তিথি আর ইফা ঢুকল সাথে সাথে। আফিন অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সামনের দিকে। এতো রিয়া নই। নিঝুম এবার মুখ থেকে হাত সরিয়ে দিয়ে দাঁত বের করে হাসার চেষ্টা করল। আফিন কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, “তুমি!
তৎক্ষণাৎ প্রবেশ ঘটল রিয়া’র। ফোনে কথা বলতে বলতে ভেতরে এলো সে। কিছু একটা হয়েছে বুঝতে পেরে সামনে তাকাল। আফিন কে নিঝুমের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে থাকতে দেখে হতবাক সে। তার উপর আফিনের হাতে রিং বক্স। রেগে চেঁচিয়ে আফিন কে ডাকল, “আফিনের বাচ্চা” ! আফিনের ঘোর ভাঙল। হাতের ফোনটা ছুঁ*ড়ে মারল আফিনের গায়ে। আফিন সরে গেল, ভা*গ্যিস তার গায়ে লাগল না। ভূ*মিকম্পের উৎপত্তি দেখে তটস্থ সবাই। নিঝুম হাতের আঙুল কামড়াতে লাগল। ভয়ে তার পা সেখানেই জমে গেছে। তিথি আর ইফা চমকে দাঁড়িয়ে আছে। কি যে হচ্ছে কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না। আহনাফ উঠে এসে নিঝুমের হাত ধরে সরিয়ে নিল সেখান থেকে। তার পিছু পিছু তিথি আর ইফা! আফিন রিয়া কে কিছু বলবার চেষ্টা করতেই রিয়া তার কলার ধরে বলতে লাগলো,
“সাহ*স কতো তোর? ব্রেকআপের সাতদিনও পার হয় নি আর তুই অন্য মেয়ে কে প্রপোজ করতে চলে এলি। কিভাবে পারল এমনটা করতে তুই কিভাবে? দুশ্চ*রিত্র লোক! আমাকে এভাবে ঠ*কালি তুই। পুলি*শে দেবো তোকে আমি। ছাড়বো না কিছুতেই ছা*ড়বো না। মে*রে ফেলবো। সমু*দ্রে চুবিয়ে মারবো।
বলেই চেঁচামেচি করতে লাগলো। ভয়ে শুকনো ঢোক গিলল সবাই। আজ তো আফিন গেছে। সে যে কিছু বলবে এই সুযোগ’ই দিচ্ছে না রিয়া । নিঝুম ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিল। আহনাফ তার পাশে দাঁড়ানো। শান্ত অবাক চোখে তাকিয়ে আছে রিয়ার দিকে। রিয়া আফিন কে ছেড়ে এবার তাকাল নিঝুমের দিকে। চেঁচিয়ে বলল, “আর তুই! আমার জায়গা নিতে তুই এসেছিস। আজ তো তোকে আমি!
বলেই বিস্ফো*রিত দৃষ্টিতে এগিয়ে যেতে নিল তার দিকে। নিঝুম ভয়ে আহনাফের সাথে মিশে দাঁড়াল। তানিশা রেগে গ্লাসকে নিজের মুষ্টিবদ্ধ করল।
নিঝুমের কাছে আসতেই শেষ মুহূর্তে তাকে আটকে নিল আফিন। রিয়া নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। আফিন বলছে, “থাম রিয়া, একটু থাম
“ওহ আচ্ছা এখন এতো দরদ। এই কয়েকদিনে এতো দরদ বেড়ে গেলো তোর।
তিথি মুখে হাত দিয়ে ইফা কে ফিসফিসিয়ে বলে, “রিয়া আজ পা*গল হয়ে গেছে, পাগ*ল হয়ে গেছে ও। নিঝুম তো গেল। আজ নিঝুমকে বাঁচা*নোর কেউ নেই।
ইফা ভড়কে সামনে তাকিয়ে আছে। আফিন কোনমতে রিয়া কে শান্ত করার চেষ্টা করল। অতঃপর শান্ত এসে রিয়ার হাত ধরে বলল, “চুপ! চেঁচামেচি বন্ধ কর।
“তুই! তুইও এখন ..
বাকি কথা বলার আগেই শান্ত তার গাল ধরে মুখটা ঘুরিয়ে দিল। সামনে থাকা আলোর মাঝে লেখাগুলো পড়ল রিয়া। রিয়া মুখ ভেংচি কেটে বলল, “উইল ইউ মেরি মি রিয়া আর প্রপোজ করছে এই মেয়েটা। বাহ!
আফিন বলে উঠল, “এটা তোর জন্য আর প্রপোজ আমি তোকেই করবো!
রিয়া কোমরে হাত রেখে আফিনের দিকে ঘুরে বলল, “ওহ আচ্ছা! ওই মেয়েটার নাম কি রিয়া না আমি। কোনটা বল। দেখলাম তো হাঁটু গেড়ে ওর সামনে বসে আছিস। আচ্ছা আমায় বল তো কোনদিন হাঁটু গেড়ে একটা গোলাপ দিয়েছিস। যা বলতি সব তো ফোনের ট্যাক্স এ। আর এখানে এতো কিছু!
আফিন বলে উঠল, “আমার কথাটা ঠান্ডা মাথায় একটু শোন। আমি নিঝুম কে প্রপোজ করতে চায় নি আরে এই কথা তো আমি ভাবতেই পারি নি।
“তাহলে ও ! ও তখন এখানে কি করছিল?
ইফা বলে উঠল, “আসলে ভুলটা আমার ছিল। আমি তো শুধু ওদের সাথে নিয়ে এখানে এসেছিলাম কিন্তু আমি জানতাম না ক্লাব আজ তোমরা বুক করেছিলে।
রিয়া এবার ঘন ঘন শ্বাস নিয়ে ঠান্ডা হতে লাগল। আফিন তাকে কাছে এনে জড়িয়ে ধরল। বলে উঠল, “এটা শুধু একটা ভুল বোঝাবুঝি! তুই আসবি ভেবে আমি তৈরি হয়েছিলাম কিন্তু ভুল বশত নিঝুম ওরা আগে চলে আসে। তাই এতো কান্ড ঘটে গেল।
দিয়া বলে উঠে, “এই মেয়েটার স্বভাবই তো এমন। সবকিছু ভেস্তে দেওয়া।
তানিশা দাঁতে দাঁত চেপে নিঝুমের দিকে তাকিয়ে বলল, “কিভাবে দুজনের মাঝে আসতে এটা ভালো করেই জানে।
নিঝুম বুঝতে পেরেই আহনাফের থেকে একটু সরে দাঁড়ায়। ব্যাপারটা খেয়াল করে আহনাফ!
এদিকে হঠাৎ করে রিয়া আফিনের দিকে নিজেকে ছাড়িয়ে বলে, “সাহস তো কম না তোর। জড়িয়ে ধরেছিস কেন আমায়?
“বাহ রে আমার গার্লফ্রেন্ড কে আমি ধরেছি এতে কার কি?
রিয়া রেগে বলে উঠে, “গার্লফ্রেন্ড! ব্রেকআপের হয়েছিল আমাদের ভুলে গেছিস!
বলেই হাত তুলতে নিল। আফিন চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে নিল। রিয়া চারপাশ তাকাল। সবাই তার দিকেই তাকিয়ে আছে। শান্ত মাথা খেয়ে নেড়ে না না করছে। রিয়া হালকা কেশে আফিনের গাল টেনে বলে, “তা এইসব কি সত্যি আমার জন্য!
আফিন মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, “হ্যাঁ!
“ওই রিং!
“ওটাও।
“তাহলে দাঁড়িয়ে আহিস কেন পড়িয়ে দে!
আফিন দ্রুত হাঁটু গেড়ে বসে বলে, “উইল ইউ মেরি মি রিয়া!
রিয়া ভ্রু কুঁচকে বলে, *সত্যি বিয়ে করবি তো, নাকি বিয়ের আসল ছেড়ে পালি*য়ে যাবি।
“আরে না না সত্যি!
রিয়া মুখ ভেংচি কেটে হাত বাড়িয়ে দিল। সবাই খুশিতে হাত তালি দিল। নিঝুম তো দাঁড়িয়ে দেখতেই লাগলো। ভয়ে তার হাত পা এখনো কাঁপছে। শান্ত’র ইশারায় আলো আবারো বন্ধ হয়ে গেল। গানের টিউন বাজছে। শান্ত এসে আরেকটা ফিতা টানতেই দুজনের উপর আরো এক ফুল বর্ষণ ঘটল। এরা দুজন তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে। আশপাশ যে কেউ আছে এটা তাদের মাথায়’ই নেই। আফিন উঠে দাঁড়াল। রিয়া মুচকি হেসে তার হাতের রিং দেখছে। আফিন হেসে বলল, “আর ইউ হ্যাপি!
রিয়া হেসে মাথা নাড়ল। আফিন লজ্জা পেয়ে মাথা চুলকাতে লাগলো। রিয়া এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আফিনের দিকে। হুট করেই কিছু বোঝার আছে রিয়া আফিনের গলার টাই ধরে টেনে চুমু খেল তার ঠোঁটে। এমন কিছু হবে এটা সবার ধারণার বাইরে ছিল। বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আছে সবাই। নিঝুম তো দ্রুত আহনাফের পিছনেই লুকিয়ে পড়ল। সবাই চোখে হাত দিল। তানিশা মুচকি হেসে ঘুরে গিয়ে ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিল। শুধুমাত্র শান্ত এক দৃষ্টিতে দেখছে তাদের।তাদের দেখতে দেখতে নিজের ভাবনার মধ্যে চলে গেল। তার হার্টবিট বাড়ছে দ্রুত। তখনকার সেই মুহুর্তে যেন ভাসছে তার চোখের সামনে। তখনকার সেই অনুভূতি এখন টের পাচ্ছে সে। নিঝুম চুমু খেয়েছিল তাকে, মাথায় ঘুরছে এই কথা। শুকনো ঢোক গিলল শান্ত। হঠাৎ করেই ঘোড় ভাঙল তার। আহনাফ জোরে কেশে বলল, “অনেক হয়েছে, বিয়ের কথাটা পাকা হয়েছে বিয়ে না।
এদিকে তানিশা তার হাতের গ্লাসটা মাটিতে ফেলল। রিয়া আর আফিন দ্রুত ছেড়ে দিল দুজনকে। বোকামো হয়েছে। এখানে যে আরো কেউ ছিল এটাই ভুলে গেছিল তারা।
নিঝুম চোখ মেলল। কাঁধের ব্যাগটা শক্ত করে ধরে বলল,
“আমি চলে যাই বরং!
ইফা বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ তাই চল!
আফিন বলে উঠে, “আহ তা কেন? আজ আমার জন্য খুব বিশেষ একটা দিন। তোমরা কেন চলে যাবো থাকো নাহ!
নিঝুম শুকনো ঢোক গিলে তাকাল রিয়ার দিকে। আফিনও তাকিয়ে আছে তার দিকে। রিয়া বলে উঠল, “হ্যাঁ তাই। চাইলে থাকতেই পারো। আমার মন আজ খুব ভালো।
বলতে নাচতে নাচতে চলে গেল তানিশার কাছে। আফিন হেসে তাকাল নিঝুমের দিকে। নিঝুম মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, “সরি আমি বুঝতে পারি নি। আমার জন্য এতো কিছু হলো!
আফিন হেসে বলল, “ঠিক বলেছ! একমাত্র তোমার কারণে এই দিনটি মনে থাকবে সবার।
আহনাফ এই কথা শুনে শব্দ করে হাসতে লাগলো। নিঝুমও চোখের চশমা ঠিক করে হাসতে লাগলো। ইফা দৌড়ে এসে আফিন কে ধরে বলল, “ট্রিট!
“এরপরও ট্রিট!
ইফা দাঁত বের করে হাসতে লাগলো।
গান বাজছে। গানের তালে তালে নাচছে রিয়া। নীলাভ্র আর দিয়া নাচছে তাদের পাশে পাশে। তিথি একা একা দাঁড়িয়েই নাচতে লাগলো। আহিম তাকে জিজ্ঞেস না করেই হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল ফ্লোরে। তিথির প্রিয় গান ছিল বলে না করতে পারলো না।
ইফা’র পাশে দাঁড়ানো শান্ত। শান্ত’র দৃষ্টি নিঝুমের দিকে। নিঝুম আর আহনাফ দাঁড়ানো একসাথে। আহনাফ নিঝুমের হাতে একটা কোল্ড ড্রিংক দিয়ে বলল, “খেতে পারো সমস্যা নেই।
নিঝুম হেসে হাতে নিল গ্লাস টা। অতঃপর আহনাফের দিকে ফিরে বলল, “সরি!
“কেন?
“সেদিন ওই ভাবে কথা গুলো বলা উচিত হয় নি আমার।
“ওহ আচ্ছা! কিন্তু ওই কথা আমি ভুলতে পারি এক শর্তে।
“কি শর্ত!
আহনাফ উঠে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে, “ডান্স করবে আমার সাথে।
নিঝুম থতমত খেয়ে গেল। মুখ ফিরে তাকাল তানিশা দিকে। তানিশার বিস্ফোরিত দৃষ্টি দেখে রক্তশূন্য তার মুখ। আহনাফ আর অপেক্ষা না করেই হাত টেনে নিয়ে গেল ফ্লোরে। দুজনে নাচতে লাগলো একসাথে। তানিশা রেগে এবার ওয়াইনের বোতল মুখে দিল।
ইফা শান্ত’র হাত টেনে বলল, “শান্ত ভাইয়া চলো, আমরাও একসাথে নাচি! সবাই নাচছে।
বলেই তাকে ডান্স ফ্লোরে নিয়ে গেল। একসাথে তাল মিলিয়ে নাচছে সবাই। হঠাৎ করেই আহিম, আফিন, নীলাভ্র, আহনাফ আর শান্ত সবাই সবার দিকে তাকাল। চোখ টিপ দিয়ে গোল হয়ে দাঁড়ালো তারা। তাদের পার্টনারদের ঘুরিয়ে বদলে নিল একেকজন। শান্ত সাথে প্রথমে এলো রিয়া। শান্ত তাকে দেখে মিটিমিটি হাসতেই লজ্জায় লাল হয়ে গেল সে। এরপর দিয়া। অতঃপর তিথি! তিথি তাকে দেখে একগাল হাসল। শান্ত হেসে তার সাথে তাল মিলালো। অতঃপর এলো নিঝুম। শান্ত প্রথমে থমকে গেলে। নিঝুম দাঁড়িয়ে আছে। হাত রাখছে না শান্ত’র কাঁধে। শান্ত মুখ শক্ত করে নিজেই তার হাত রাখল কাঁধে। নিঝুম ফিসফিসিয়ে শান্ত কে বলল,
“আপনি আমাকে দেখে পালিয়ে যান কেন অশান্ত!
“কি বললে তুমি!
নিঝুম হি হি করে হেসে চলে গেলো অন্য পার্টনারের কাছে। শান্ত রেগে তাকিয়ে আছে তার দিকে। নিঝুম ঘুড়ে আবারো এলো আহনাফের কাছে। ফোনটা বেজে উঠল আহনাফের। ফোন হাতে নাচের মাঝেই চলে গেল সে। নিঝুমও চলে নাচের ফ্লোর থেকে। এক ফাঁকে শান্তও নেমে এলো। পেছন থেকে নিঝুমের চুল টেনে বলল, “ওই চশমিশ কি বললে তুমি তখন?
নিঝুম হেসে বলল, “আপনি আমায় দেখে পালিয়ে যান!
শান্ত ভ্রু কুঁচকে সামনে আগাতে আগাতে বলল, “তোমার সত্যি মনে হয় তোমায় দেখে আমি পালিয়ে যাই।
অশান্ত’র সামনে এগিয়ে আসা দেখে নিঝুম পিছুতে। না অশান্ত কে এখন অন্যরকম লাগছে। নিঝুম ঢোক গিলে বলে, “ননননা তো! আপনি আমার কাছে আসছেন কেন এভাবে!
“তোমাকে দেখাচ্ছি আমি পালিয়ে যাচ্ছি না।
এভাবে পিছু যেতে হঠাৎ করেই নিঝুম কিছুর সাথে বাড়ি খেয়ে পড়ে যেতে নেয়। অন্যহাত দিয়ে শান্ত’র শার্ট আঁকড়ে ধরে সে। এতে শান্তও তার সাথে পড়ে যেতে নেয়। কিন্তু তৎক্ষণাৎ একহাত দেওয়ালে আর অন্য হাত দিয়ে নিঝুমের কোমড় আঁকড়ে ধরে সে। নিঝুম চোখ মুখ বন্ধ করে আছে। শান্ত ঠিক তার অনেকটা কাছে ছিল।তার নিশ্বাস পড়ছিল নিঝুমের উপর! শান্ত মোহিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিঝুমের ওষ্ঠজোড়ার দিকে। অতঃপর…
#চলবে….#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১৯
নিঝুম মিটিমিটি করে চোখ মেলে তাকাল। মুখ খুলতেই শান্ত’র মুখ দেখেই একটা চিৎকার দিলো সে। তার চিৎকারে শান্ত ছেড়ে দিল তাকে। নিঝুমও ছেড়ে দিল শান্তকে। ধপাস করে মেঝেতে পড়ে গেল নিঝুম। মুখ তুলে তাকাল শান্ত’র দিকে। শান্ত ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে তার দিকে। নিঝুম বলে উঠে,
“আআআআ ! আমায় ফে*লে দিলেন কেন আপনি?
“তুমি চেঁচিয়ে আমার কান ধরে ফেলেছ তাই!
“এজন্য ফেলে দিবেন। জানেন প*ড়ে গিয়ে কতোটা ব্যাথা পেয়েছি আমি।
“ভালো হয়েছে পেয়েছ!
বলেই মুখ ভেংচি কাটলো শান্ত! নিঝুম মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। শান্ত খানিকক্ষণ চিন্তা ভাবনার পর ভাবল হাত বাড়িয়ে নিঝুম কে উঠানোর কথা। কিন্তু যখন’ই সে হাত বাড়াতে অমনি আহনাফ এসে তুলল নিঝুম কে। শান্ত হাত গুটিয়ে নিল।
ফোনে কথা শেষ করে এখানে এসে আহনাফ দেখল নিঝুম নিচে বসে শান্ত’র সাথে ঝগড়া করছে। সবসময় সাপ বেজির মতো লেগে থাকে দুজন। আহনাফ হেসে এগিয়ে আসে নিঝুম কে তুলতে।
আহনাফ নিঝুম কে তুলে বলল, “পড়ে গেলে কিভাবে?
“এই অশান্ত ফেলে দিয়েছে আমাকে।
“একদম মিথ্যে বলবে না,আমার কানের সামনে এসে চেঁচিয়েছো তুমি।
“আপনি মিথ্যে বলছেন, আমাকে এসে ভয় দেখান নি আপনি। আপনাকে কারণে পড়ে গেছি আমি না রীতিমতো আমাকে ফে*লে দিয়েছেন আপনি।
শান্ত দাঁতে চেপে বলল “চশমিশ কোথাকার!
বলেই চলে গেল। নিঝুম তেড়ে গিয়ে বলল, “এই এই অশান্ত কি বললেন আপনি!
আহনাফ হেসে নিঝুমের হাত ধরে তাকে থামিয়ে বলল,”থামো থামো! বেশি ঝগড়া করে দাঁত পড়ে যাবে
“আপনাকে এই কথা কে বলল!
“কেন তুমি শোন নি।
“হ্যাঁ শুনেছি, কিন্তু এটা তো ছোটবেলায়। এখন কি কারো দাঁত পড়ে নাকি।
আহনাফ হেসে নিঝুমের মাথায় হাত রেখে বলে, “তুমি এখনো ছোট’ই আছো। বড় হও নি বুঝলে!
বলেই চলে গেল । নিঝুম মিটিমিটি হেসে তাকিয়ে রইল আহনাফের চলে যাবার পথে। এদিকে তানিশা দূর থেকে আহনাফ আর নিঝুম কে একসাথে দেখে ওয়াইনের বোতল আবারো মুখে পড়ল!
অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে একটু রাত করেই। তানিশা একদম নেশা*য় ডুবে আছে। আহনাফের হাত ধরে চিপকে দাঁড়িয়ে আছে আছে সে আর ঝুলছে। একবার পড়ে যেতে নিলে আহনাফ তার বাহু আঁকড়ে ধরল। নেশা করবার পর তানিশা আর জ্ঞানে নেই। আহনাফ কে কোনমতেই ছাড়ছে না সে। দিয়া আর রিয়া এসে একবার ছাড়ানোর চেষ্টা করল। কিন্তু তানিশা আহনাফের শার্ট শক্ত করে রইল। আহনাফ কে এই অবস্থায় দেখে মিটিমিটি হাসছে নীলাভ্র, শান্ত, আহিম আর আফিন। তিথি আর ইফা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। নিঝুম কি ভাবছে বোঝা মুশকিল। তাকে চোখ সরল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শেষে আহনাফ বলে উঠল, *তানিশা কে আমি বাসায় পৌছে দিয়ে আসছি।
সবাই তার কথায় মাথা নাড়ল। আহনাফ বলে উঠলো, “ইফা আমার সাথে আয়!
ইফাও মাথা নাড়িয়ে গাড়ির দিকে চলে যেতে নেয়। আহনাফ নিঝুমের ব্যাপারে বলতে নিতেই আহিম বলে উঠে, “ওদের টা আমরা দেখছি। তুই চলে যা। অনেক রাত হয়েছে!
আহনাফ মাথা নেড়ে বলে, “আচ্ছা! নিঝুম আর তিথি সাবধানে যেও। শান্ত দেখে রাখিস এই পিচ্চি গুলো কে।
শান্ত মুখ ভেংচি কাটে। নিঝুম ও মুখ ফুলিয়ে বলে, “আমি পিচ্চি না, নিজের খেয়াল রাখতে পারি। আপনি তানিশা আপু কে নিয়ে বের হন!
আহনাফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাকাল তানিশা’র দিকে। তার হাতে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। অতঃপর আহনাফ তানিশা কে নিয়ে কোনমতে গাড়ির কাছে এলো। রিয়া আর আফিন সবার আগেই চলে গেছে বাইক নিয়ে! দিয়া নীলাভ্রের হাত টেনে বলে, “তুই আমার সাথে চল, বাবা কে ম্যানেজ করতে হবে।
“আরে আমি কেন?
“আমার বাবা তোর প্রশংসা বেশি করে তাই! চল এখন!
বলেই নীলাভ্র কে টেনে নিয়ে যায়। নিঝুম কাঁধের ব্যাগ শক্ত করে ধরে আহিম কে কিছু বলার আগেই আহিম হুট করে তিথির হাত টেনে বলে, “চলো তোমাকে আমি দিয়ে আসছি!
তিথি ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাকিয়ে রইল। নিঝুম চট করে বলে উঠল, “তাহলে আমি!
“তুমি ওই শান্ত আছে না ও তোমাকে নিয়ে যাবে!
শান্ত আর নিঝুম দুজনে দুজনের দিকে ফিরে বলে, “কোনমতে না!
আহিম হেসে বলে, “তাহলে তোমাদের ইচ্ছা। তিথি তুমি চলো!
তিথি বলে উঠে, “কিন্তু নিঝু…
“হ্যাঁ হ্যাঁ চলো চলো!
বলেই তাকে নিয়ে চলে গেল। একসাথে নীলাভ্র আর আহিমের বাইক বের হলো। নিঝুম মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে শান্ত’র দিকে। শান্ত চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে। নিঝুম দাঁতে দাঁত চেপে বের হয়ে গেল রাস্তায়। কাঁধের ব্যাগটা শক্ত করে ধরে রাস্তায় হাঁটা ধরল। হেঁটেই যাবে তবুও এই অশান্ত’র সাথে যাবে না সে। ভুলেও না!
মাঝরাস্তায় একা একা হাঁটছে নিঝুম। দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে পা আগাচ্ছে। ভুতের অসম্ভব ভয় আছে তার। তবুও ওই অশান্ত’র হাতে পড়ার চেয়ে ভুত শতগুন ভালো। পারলে ওই অশান্ত কে পেত্নির সাথে বিয়ে পড়িয়ে দিত। পেত্নির পারফেক্ট স্বামী হতো ওই অশান্ত! হি হি হি!
বলেই হাসতে থাকে। হঠাৎ করেই পেছন থেকে জোরে বাইক আসার আওয়াজ পায় সে। বাইক টা ধেয়ে তার কাছেই আসছে। নিঝুম ভয়ে রাস্তার এক কোনে ছুটে যায়। কিন্তু যেতে নিতেই ধপাস পড়ে যায় রাস্তার কোনায়। বাইক থামিয়ে হেলমেট খুলে শান্ত। মুখ টিপে হেসে বলে, “আহ! চশমিশ বেশি ব্যাথা পেয়েছো!
“আপনি! আপনি আমার সাথে এমন করলেন।
“কি করলাম আমি, তোমায় কে বলেছে দৌড়াতে!
নিঝুম নাক ফুলিয়ে চোখের চশমা ঠিক করে চট করে উঠে দাঁড়ায়। শান্ত’র সামনে এসে আঙুল তুলে বলে, “এই অশান্ত দেখে নিবো আপনাকে। একদম আমার পিছনে লাগতে আসবেন না।
শান্ত হেসে নিঝুমের আঙুল নামিয়ে বলে, “আজ ছেড়ে দিলাম। পড়ে এর শোধ তুলবো।
“শাসাছেন কাকে? ভয় পাই নাকি আপনাকে। আমি নিঝুম! বুঝলেন নিঝুম। নিঝুম কাউকে ভয় পায় না।
“তাই নাকি!
বলেই বাঁকা হেসে শান্ত বাইক নিয়ে চলে গেলে। নিঝুম রেগে দু একটা কথা শোনানোর জন্য বাইকের পিছনে চেঁচামেচি করতে লাগল। একটু আগাতে যেতেই আবার পড়ে গেল।
মাঝরাস্তায় বসে জুতোর হাতে নিয়ে তাকাল নিঝুম। ছিঁড়ে গেল জুতো টা। রেগে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, “সব দোষ ওই অশান্ত’র ! জুতোটা ওর কারণেই ছিঁড়ে গেছে। তাকে পেলে না বাঘ মামা’র লাঞ্চ করে ছাড়বো। জুতোটা ছিঁড়ে গেল! এখন হাটবো কিভাবে। ধ্যাত ছাই জিবনটাই অতিষ্ট! ভালো লাগে না কিছু!
অতঃপর এক বস্তা দুঃখ নিয়ে জুতো হাতে নিয়ে হাঁটা ধরল নিঝুম। আর একটু সামনে গেলেই মেইন রোড।সেখান থেকে বাস, রিক্সা কিছু একটা তো পাবে!
অনেকখানি পথ হাঁটল নিঝুম। খালি পায়ে হাঁটার কারণে আরো বেশি ক্লান্ত সে। পায়ের অবস্থা বেহাল! হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে হেঁটে যাচ্ছে কিন্তু রাস্তা যেন শেষ হচ্ছে না। এখনো মেইন রোড চোখে পড়ল না। ব্যাপারটা কি?
ঘন ঘন শ্বাস ফেলে হেঁটে যাচ্ছে নিঝুম। পাশ থেকে শান্ত বলে উঠল,
“আরে ঝুম নাকি!
নিঝুম চোখ মুখ শক্ত করে ওপাশে তাকাল। চায়ের দোকানের কাছে বাইকের সাথে হেলান দিয়ে চা খাচ্ছে শান্ত! নিঝুম কে দেখে একগাল হেসে বলল, “জুতো পায়ে পড়ার জিনিস কিন্তু তোমার মতো কিছু গাধি সেটা এখন মাথায় তুলে রাখবে।
নিঝুম হেসে শান্ত’র সামনে এসে দাঁড়াল। শান্ত ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। নিঝুম হুট করেই জুতা জোড়া শান্ত’র মুখের সামনে তুলে ধরল। শান্ত চমকে পিছনে চলে গেল। নিঝুম দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “দেখছেন তো! জুতোটা ছিঁড়ে গেছে, এখন ছিঁড়ে যাওয়া জুতো কোন ভদ্রলোক পায়ে পড়ে বলুন তো।
“তাই বলে তুমি জুতো আমার মুখের সামনে ধরবে। সরো সরো!
নিঝুম দীর্ঘশ্বাস ফেলে দোকানের বেঞ্চে বসে পড়ল। দোকান একটা ছোট ছেলে বসা। বয়স এই কি ১২ – ১৩ হবে। নিঝুম তার দিকে ফিরে বলল, “একটু পানি দিবে ভাইয়া!
ছেলেটা এক গ্লাস পানি দিল নিঝুম। ঢক ঢক করে পুরো পানি খেলো নিঝুম। শান্ত চোখ ঘুড়িয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ফোন বাজছে। নিশ্চিত মা’র ফোন। নিঝুম কতোকগুলো বক বক করে ফোন রাখল। মা কে বলল, “এই তো আধ ঘণ্টায় চলে আসছি!
শান্ত হেসে বলল, “বাইক দিয়ে যেতেও এখন ঘন্টা খানিক লাগবে।
“কি? কি বলছেন এসব। এই তো সামনে মেইন রোড থেকে বাস নিলে ১০ মিনিটের পথ।
শান্ত চায়ের কাপ টা রেখে নিঝুমের সামনে এলো। নিঝুম দাঁড়িয়ে গেল। শান্ত তার মাথায় হাত রেখে পিছনে ঘুড়িয়ে হাত দিয়ে দেখিয়ে বলল, “এখান দিয়ে যেতে হবে। মিনিমাম আধঘন্টা লাগবে মেইন রাস্তায় যেতে। তারপর সেখান থেকে তোমার বাসা। ঘন্টা খানিক ছাড়া কথাই ভেবে না
“কি পাগলের প্রলাপ দিচ্ছেন। আমি তো এখান দিয়েই…. ( শান্ত’র দিকে ফিরে ) তার মানে আমি এতোক্ষণ ভুল রাস্তায় ছিলাম!
“জ্বি হ্যাঁ!
“আপনি জানতেন! তাও কিছু বললেন না। কতোটা পথ হেঁটে এলাম আমি আপনি জানেন।
“পথ তো তুমি ধরেছ!
“আপনি বলতে পারতেন!
“কেন বলবো!
বলেই মুখ ঘুরিয়ে নিল শান্ত। নিঝুম বের হয়ে যাবার পর’ই বাইক নিয়ে বের হয়েছিল শান্ত। ঠিক রাস্তা ধরে অনেক পথ সামনে এগিয়েও নিঝুম কে পেলো না সে। তখন ধরেই নিল নিঝুম উল্টো রাস্তা ধরেছে। আবারো সেখান থেকে ব্যাক করে এই রাস্তায় এলো সে।
এদিকে নিঝুম রেগে আরেক গ্লাস পানি নিল। শান্ত’র ঘাড়ে হাত রেখে তাকে ডাকতেই পানি তার মুখে ছুড়ে মারল। শান্ত চেঁচিয়ে বলল,
“এটা কি করলে?
“ঘুমিয়ে ছিলেন এতোক্ষণ তাই জাগিয়ে দিলাম!
বলেই রেগে হন হন করে হেঁটে চলে গেল। শান্ত রেগে তাকিয়ে আছে নিঝুমের দিকে। দ্রুত চায়ের দাম মিটিয়ে বাইকে বসল সে। মিস চশমিশ কে এখন পেলে আচ্ছা করে জব্দ করবে। কিন্তু খানিকক্ষণ পথ এগিয়ে দেখল নিঝুম হেলেদুলে হাঁটছে। শান্ত বাইকের গতি কমিয়ে দিল। নিঝুম খালি পায়ে এই রাস্তার মাঝে হাঁটছে। শান্ত এবার বাইক আনল নিঝুমের পাশে। শান্ত কে দেখেই দূরে সরে গেল নিঝুম।
রাস্তার এক কোনে হাঁটছে নিঝুম আর এপাশে শান্ত। বাইকের গতি কমিয়ে দিয়ে চালাচ্ছে। নিঝুম মুখ ভেংচি কেটে বির বির করছে, “কতোটা অ*সভ্য লোক! বাইক ধীরে ধীরে চালাচ্ছে অথচ বলছে না আমার সাথে বাইকে বসো। আসলেই অশান্তি একটা!
হঠাৎ করেই বাইকের গতি বাড়িয়ে দিয়ে চলে গেল শান্ত। নিঝুম হা হয়ে থাকা রইল। চেঁচিয়ে বলে উঠল, “কি অ*ভদ্র লোক , একা একটা মেয়ে কে এভাবে রাস্তায় ফেলে দিয়ে চলে যাচ্ছে! হুহ।
শান্ত হেসে বাইক থামাল। দূরে বাইক থামতে দেখে নিঝুম এক দৌড়ে বাইকের কাছে চলে এলো। শান্ত একটা হেলমেট নিঝুমের দিকে এগিয়ে বলল, “পড়ে নাও! তোমার কিছু হলে কিন্তু আমি দায়ি থাকবো না!
নিঝুম মুখ ভেংচি কেটে হেলমেট হাতে নিল। অতঃপর বসে পড়ল শান্ত’র বাইকে। শান্ত’র কাঁধে হাত রেখে বলল, “চলুন!
শান্ত ঠোঁট কামড়ে ধরে বলল, “জুতো গুলো ব্যাগে রাখো!
নিঝুম জিহ্বা কামড়ে হাত সরিয়ে নিল। জুতোসহ’ই শান্ত’র কাঁধে হাত রেখেছিল। নিঝুম দাঁত বের করে হেসে বলল, “সরি সরি!
শান্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এই কোন মেয়ের পাল্লায় পড়ল সে!
অবশেষে দু’জনে এসে নিঝুমের বাড়ির সামনে থামল। নিঝুম শব্দ করে শ্বাস ফেলে বাইক থেকে নামল। শান্ত’র হাতে হেলমেট দিয়ে বাড়ির দিকে তাকাল সে। অতঃপর পেছনে ফিরে শান্ত কে ধন্যবাদ বলার আগেই সে দ্রুথ গতিতে চলে গেল। নিঝুম অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। অতঃপর নাক ফুলিয়ে বলল, “ভাব কতো! ভালোই হয়েছে ধন্যবাদ দেই নি। কেন দেবো! অশান্ত কোথাকার। একদিন সুদে আসলে শোধ করে দেবো সবটা।
——-
গত রাতের কান্ডকারখানার জন্য আহনাফের সামনে যেতে লজ্জা লাগছে তানিশা’র। নে”শা করে এমনটা করবে কখনো ভাবি নি। ভাবতেই শরীর শিউরে উঠছে তার। ছিঃ ছিঃ কিভাবে এমনটা করল সে। আহনাফের সাথে নাকি চিপকে ছিল সারাক্ষণ আর কি কি অঘটন ঘটিয়েছে কে জানে। কিছুই মনে নেই তার!
শান্ত তানিশা কে এমন অস্থির দেখে মিটিমিটি হাসছে। তানিশা হালকা কেশে বলে, “হাসছিস কেন এভাবে কি হয়েছে?
“গতরাত তুই যা করলি সেটাই ভাবছি।
আফিন গলা পরিষ্কার করে বলল, “আহনাফ তুমি শুধু আমার, শুধু আমার! তানিশা রেগে পানির গ্লাসটাই ছুঁড়ে মার*তে চাইলো। কিন্তু না রাগ সংযত করতে হবে এখন।
সবাই হেসে উঠলো তার কান্ড দেখে। হুট করেই আহিম বলে উঠল, “আরে আহনাফ নাকি!
তানিশা দ্রুত গিয়ে টেবিলের নিচে বসে পড়ল। হাসির রোল পড়ে গেল সেখানে। তানিশার বুঝতে বাকি রইল না সবাই তাকে নিয়ে মজা করছে। তানিশা রেগে শান্ত’র কান টেনে দিয়ে হন হন করে চলে এলো।
ক্যান্টিন থেকে বের হতেই মুখোমুখি হলো আহনাফের। লজ্জায় তানিশার গাল হয়ে যাচ্ছে। আহনাফ তাকিয়ে আছে তার দিকে। এদিকে তানিশা কাঁপছে। তার হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেছে। দ্রুত সেখান থেকে চলে যেতে নিলে আহনাফ জিজ্ঞেস করে উঠলো,
“এখন কেমন আছো?
তানিশা থমকে গেল। ঢোক গিলে বলল, “ভালো!
অতঃপর দ্রুত চলে এলো সেখান থেকে। আহনাফ ব্যাপারটা নিয়ে আর এতো ভাবলো না!
——-
রাত্রি ১০ টা, বাসায় উদ্দেশ্যে হাঁটছে নিঝুম। এতোক্ষণ ছিল তিথি’র বাসায়। আজ তিথি’র জন্মদিন ছিল। সেই উপলক্ষে সেখানে এতোক্ষণ ছিল সে। খুব দেরি হয়ে গেছে। বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে নিঝুম। মা এই ফোন করলো বলে। হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে সে।
আজকের দিনটা তার জন্য বেশ ভালো ছিল। কিভাবে জানি আজ অশান্ত’র সাথে দেখাই হয় নি তার। অবিশ্বাস্য হলেও এটা সত্য। শান্ত আজ তাকে জ্বালা*তে আসে নি। নিঝুম দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসল। অনেকদিন এমন রাতের আকাশ দেখা হয় না তার। রাতের আকাশ ভারী সুন্দর!
তিথির বার্থ ডে উপলক্ষে আয়োজন তেমন বিশেষ কিছু ছিল না। তবে হ্যাঁ তিথির পাগলামি ছিল বটে। নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াবে সে। রান্নাও করল কিন্তু সেই খাবার কারো মুখে রুচল না। ব্যাপারটা মনে করতেই হাসি পাচ্ছে নিঝুমের। এতো গুলো খাবার নষ্ট হলো। কিছুই মুখে তোলা যাচ্ছিল না। তিথির মুখটা দেখার মতো ছিল। বেচারি আরেকটু হলেই কেঁদে দিত। শেষমেষ আন্টি সামলে নিল তাকে। আবারো রান্না বসাল তাদের জন্য। এই জন্যই আজ এতো দেরি।
একটা দোকান খোলা দেখতে পেয়ে থেমে গেল নিঝুম। আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে তার। একটা আইসক্রিম কিনে হাঁটতে হাঁটতে খাওয়া শুরু করল। কিছুদূর হাঁটার পর’ই দেখতে পেল সামনে কিছু একটা হয়েছে। এখানকার দোকান পাট ও তেমন নেই। কেমন সব শান্ত নিরিবিলি। হুট করেই ভয় লাগতে শুরু করল। বাসার রাস্তা এখনো অনেক। ইফার বাড়ি বিপরীত দিকে ছিল বলে তাকে একাই আসতে হলো।
আইসক্রিম মুখে দিয়ে এগিয়ে এলো নিঝুম। ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়ানো কিছু ছেলে কে দেখা যাচ্ছে। নিঝুমের মনে হচ্ছে এরা ছিন*তাইকারি। আরেকটু সামনে আগাল নিঝুম। হত*চকিয়ে উঠল সে। আরে এতো অশান্ত! দুটো ছেলে ধরে রেখেছে তাকে। সামনের থাকা ছেলেটা ছু*রি বের করতেই নিঝুমের মুখ ফসকে বেরিয়ে বলে,
“অশান্ত!
নিঝুমের কথা কানে গেল ছেলেগুলোর। তারা পিছন ফিরে তাকাল নিঝুমের দিকে। নিঝুম আতঙ্কি*ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আরেকবার তার মুখে নামটা শোনা গেল, “অশান্ত!
#চলবে….