তোমার মনের মধ্যিখানি পর্ব -১৬+১৭

#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_১৬_ও_১৭

বিছানায় বসে চোখে চশমাটা ঠিক করল নিঝুম।‌ কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা হাতে নিল সে। অন করল সেই রেকর্ডিং! খুব মনোযোগ দিয়েই সবটা শুনতে লাগল। অতঃপর হঠাৎ করেই ধপাস করে সেই পড়ে যাবার শব্দ।এরপরেই নিস্তব্ধতা। অতঃপর দুজনের চিৎকার। নিঝুম তখন’ই রেকর্ডিং বন্ধ করে কানে হাত দিয়ে বালিশে মুখ গুজল। ছিঃ ছিঃ নাক কাটা যাচ্ছে তার। কি থেকে কি হয়ে গেল এটা।‌ এসব কি তাহলে সত্যি’ই। মুখ তুলল নিঝুম, নিজের ঠোঁটে হাত রেখে তখনকার কথা মনে করতে লাগল, সত্যি কি শান্ত কে কিস করল তাহলে সে! আআআআআ করে চিৎকার করে উঠল সে। দরজার বাইরে থাকা হিনা আর মা দুজনেই অবাক চোখে তাকাল দরজার দিকে। বুঝতে পারছে না আজকাল তাদের মেয়েটার কি হলো! যখনতখন চিৎকার কেন করে উঠে এই মেয়ে! হিনা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “মা তোমার মেয়ে নির্ঘাত পাগল হয়েছে নাহলে তাকে ভূতে ধরেছে। খেয়াল করছো কতোকদিন পর পরই একা ঘরে বসে চিৎকার চেঁচামেচি করে। এটা জ্বীন ভূতের লক্ষণ। হয়তো কোন কবিরাজ ধরো নাহলে শীঘ্রই কোন পাগলা গারদের ব্যবস্থা করতে হবে।

মা একটু কঠিন গলায় বললেন, “চুপ থাক! এতো বেশি কথা বলিস না।

“কিছু বললেই বেশি কথা বলি!

“আহ! পড়তে বসেছিস পড় না। এতো দিকে মনোযোগ দেবার কোন দরকার নেই!

হিনা মুখ ভেংচি কেটে বইয়ের পাতায় মুখ গুজলেন। মা একবার মুখ ফিরে তাকালেন নিঝুমের ঘরের দিকে!

——-

শান্ত সবে ঘরে ঢুকল। প্রচুর ক্ষিধে পেয়েছে তার। প্রথমে গোসল সারতে গেল অতঃপর ফ্রিজে যা ছিল তাই গরম করল সে। খেতে খেতে টিভি অন করল। খাওয়া দাওয়ার পর নিজের প্লেট নিজে ধুয়ে রেখে দিল সে। এখন বাইরে বের হবার সময়। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তৈরি হতে লাগল শান্ত। এই নিজের চুল ঠিক করে গায়ে শার্ট পড়তে পড়তে ভাবল কিছু একটা ভুলছে সে। কিন্তু কি ভুলছে ঠিক মনে পড়ছে না। আয়নার আরো কাছে এসে নিজের মুখের দিকে তাকালো। ভ্রু কুন্চিত করে ভাবতে লাগলো কিছু। হঠাৎ করেই চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল তার। ধপাস করে মেঝেতে বসে পড়ল শান্ত। হাত দিয়ে নিজের ঠোঁটে হাত দিতেই তখনকার ঘটনা মনে পড়ল তার। মাথা নেড়ে না না করতে লাগলো। এই কথা তো ভুলেই গেছিল সে। হঠাৎ এখন কি করে মনে পড়ল তার। শান্ত ঘন ঘন শ্বাস নিতে লাগল। ঘরে তো মনে হচ্ছে পর্যাপ্ত অক্সিজেন আছে। তাহলে তার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে কেন। আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখল শান্ত ঘামছে। তার কান লাল হয়ে গেছে। ছোট থেকেই লজ্জা পেলে শান্ত’র কান লাল হতো। এখন কি তবে সে লজ্জা পাচ্ছে। আজব তো লজ্জা কেন পাবে। উঠে এসে দাঁড়াল বেলকনিতে। কপাল বেয়ে ঘাম ঝড়ে পড়ছে তার। তার অস্তিত্ব লাগছে, আর এই অস্থিরতার কারণ একমাত্র মিস চশমিশ। ছাড়বে না তাকে। কতো বড় সাহস শান্ত কে কিস করে সে। এতো সাহস মেয়েটার হয় কি করে। যেখানে শান্ত’র ধারে কাছে কোন মেয়ে টিকতে পারে না সেখানে কি না এই মেয়ে শেষে চুমু খেল তাকে। ঠোঁট কামড়ে ধরে রাগ সংযত করার চেষ্টা করছে শান্ত! কাল’ই এই ঝুমের খবর নিবে সে।

——–

আহনাফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। তার নাম্বারের পাশে দুটি সংখ্যা উঠে আছে। ২০ বার কল দিল তাকে কিন্তু সে ফোন তুলল না। গতকাল রাত থেকেই ফোন দিয়ে যাচ্ছিল কিন্তু ফোন তুলে নি। এদিকে আজকের দিনটাও শেষ। এখনো কোন খবর নেই তার। ঠিক আছে তো! কিছু হলো না তো আবার। চিন্তায় পড়ে যাচ্ছে আহনাফ। শেষবারের মতো একটা মেসেজ করল সে, “আর ইউ ওকে!

অতঃপর ফোনটা রেখে দিল। খানিকক্ষণ পড়েই মনে হয় মেসেজ এলো, “ইয়াহ আ”ম ফাইন। একটু ব্যস্ত আছি, ফ্রি হলেই কল করছি!

তার এতো প্রতীক্ষার পর এই এতোটুকু মেসেজ’ই যথেষ্ট হলো ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটাতে। আহনাফ কিঞ্চিত হেসে নিজের ফোনটা রেখে দিল। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বুক শেলফের কাছে গেল। বিভূতিভূষণের “ইছামতী” বইটা বের করলো। এসে আবারো বসল সোফায়। বইয়ের পাতায় সবে চোখ রাখল তখনই ফোনের রিংটোন কানে এলো। আহনাফ ভ্রু কুঁচকে সামনের দিকে তাকাল। তার ফোন বাজছে না, ইফা’র ফোন বাজছে। আহনাফ ফোনটা হাতে নিয়ে ইফা কে ডাকার প্রয়াস করতেই ফোনের স্ক্রিনে থাকা নিঝুম নামটা চোখ কাড়ল তার। অজান্তেই হাসল আহনাফ। এই নিঝুম মেয়েটাকে বেশ লাগে তার। মেয়েটার মাঝে ‌আলাদা কিছু আছে। ফোনটা রিসিভ করে কানে দিল সে। ওপাশ থেকে নিঝুমের বকবক শুরু,

“হ্যালো, ইফা। শোন না, মাঝখানে কতোদিন তো আমি ভার্সিটিতে গেলাম না। তাই কিছু নোট না আমার কাছে নেই। এছাড়াও আরো অনেক ঝামেলায় পড়ে গেছি। তিথি কে বললাম হেল্প করতে , কিন্তু আমার মনে হচ্ছে না ও আদৌ কিছু করেছে। তার উপর টেবিলে বসে আছি। পড়া কিছুই মাথায় ঢুকছে না। আআআআআ কি করবো আমি এখন! কাল ওই রাক্ষস স্যারের ক্লাসও তো আছে!

এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলল নিঝুম। ওপাশ থেকে আহনাফের হাসির শব্দ শোনা গেল। নিঝুম বলে উঠল, ” আহ তুই হাসছিস!

আহনাফ হাসি থামিয়ে বলল, “তুমি প্রথমে একটু দম নিয়ে নাও। তারপর বলো কি হয়েছে ?

ধপাস করেই নিঝুমের হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেল। নিঝুম রুদ্ধশ্বাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফোনের দিকে। কার গলার আওয়াজ শুনলো সে। ওপাশ থেকে আহনাফ বলছে , ” হ্যালো! নিঝুম, কি হলো?

নিঝুম চট করেই ফোনটা কানে নিয়ে বলল , “আপনি আমার নাম্বার কোথায় পেলেন , আর আমাকে ফোন করলেন কেন?

“কিন্তু ফোন তো তুমি করলে!

নিঝুম থতবত খেল। হ্যাঁ তাইতো ফোন তো সে করেছে। কিন্তু আহনাফ’র নাম্বার সেই বা পাবে কোথায়। নিঝুম ফোনের দিকে তাকাল। নাম্বার চেক করে বলল , “এটা ইফার নাম্বার না!

“নাম্বার ও ইফার আর ফোনটাও!

“তাহলে আপনি কি করছেন, ইফা কে দিন

“সে বোধহয় এখন ঘুমাচ্ছে!

“ওহ, হ্যাঁ অনেক রাত হয়েছে তো।‌ আচ্ছা ঠিক আছে

“আমি একটা কথা বলি?

“হুম!

“তুমি বরং কাল সকালে ভার্সিটিতে যাবার আগে এখানে একবার এসো। ইফা’র থেকে পড়াটা বুঝে নাও!

“হ্যাঁ গুড আইডিয়া। আচ্ছা ঠিক আছে আমি কাল সকালে যাবো। বাই!

বলেই কলটা কেটে দিল নিঝুম। আহনাফ খানিকটা অবাক হলো। ফোনটা রেখে আবারো বইয়ের পাতায় মুখ গুজল ঠিক তখনি ফোনটা বেজে উঠলো। আহনাফ তাকিয়ে দেখল নিঝুমের কল! রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নিঝুম আমতা আমতা করে বলল, “কিন্তু আমি তো ইফার বাসা চিনি না!

আহনাফ হেসে দিল, হাসির শব্দ পাচ্ছে নিঝুম। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে। তার শরীর কেমন কাঁটা দিয়ে উঠছে। আহনাফ হেসে তাকে বাড়ির ঠিকানা দিল! নিঝুম আমতা আমতা করে ফোন কেটে দিল।

——

পরদিন সকালে ফোন হাতে নিয়ে আশপাশ তাকিয়ে হাঁটছে নিঝুম। তার ফোনের ভিতর ম্যাপ দেখে হেঁটে যাচ্ছে সে। একবার এদিক তাকিয়ে যাচ্ছে তো আরেকবার ওদিক। তার কাঁধে ব্যাগ আর হাতে মোটা মোটা দুটি বই! সামনে আগাতে গিয়ে হঠাৎ করেই দেখা হলো আহনাফের সাথে। ফাঁকা রাস্তায় দুজনেই তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে, চিনতে কষ্ট হলো না।আহনাফ নিঝুমের দিকেই তাকিয়ে আছে। নিঝুম তার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করল। আহনাফ একটা বাড়ির ভেতর থেকে সবে মাত্র বের হলো। নিঝুম ভাবল এখানেই বুঝি তারা থাকে। নিঝুম কে দেখে আহনাফ এগিয়ে এলো। অতঃপর বলল, “তুমি এখানে!

“হ্যাঁ মানে, আপনি তো…

“ইফা’র কাছে যাও নি!

নিঝুম খানিকটা অবাক হলো। আহনাফ আর ইফা তো একসাথেই থাকে। তাহলে ইফার কথা কেন জিজ্ঞেস করছে। তবে কি সেই ভুল রাস্তা ধরল নাকি। অতঃপর বলল, “আসলে আমি রিক্সায় করে যাচ্ছিলাম তো বড় রাস্তায় মোড়ে রাস্তায় কাজ চলছিল। তাই রাস্তা বন্ধ ছিল। তাই রিক্সাওয়ালা মামা আমাকে সেখানেই থামিয়ে দিল। ইফা কে ফোন করেও পেলাম না। আর এই সকালে আর কোন রিক্সা খুঁজে পাই নি। রাস্তা গুলিয়ে ফেলেছি, তাই ম্যাপ দেখে দেখে আসছিলাম!

আহনাফ মুচকি হেসে বলে, “আহ ভালো বুদ্ধি, কিন্তু তুমি উল্টো পথ ধরেছ!

নিঝুম পেছনে একবার তাকিয়ে আহনাফের দিকে তাকাল। আহনাফ শব্দ করেই হেসে উঠলো। নিঝুম লজ্জায় মাথা নিচু করে নিল। আহনাফ বলল, “আচ্ছা চলো আমার সাথে, আমি বাড়ির দিকেই যাচ্ছি!

নিঝুম ওই বাড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, “তাহলে এখানে আপনি কি করছেন?

“এখানে! ওহ এখানে তো শান্ত থাকে। এই অ্যাপার্টমেন্ট’র ২৭ নাম্বার ফ্লাটে থাকে শান্ত।

শান্ত’র কথা শুনেই ঢোক গিলল নিঝুম। আহনাফ ওদিক তাকিয়ে থেকে বলল, “গতকাল রাতে এখানেই ছিলাম ওর সাথে! তোমার সাথে কথা বলার চলে এলাম। এখান থেকে বাড়ির পথ কিন্তু অনেক।

নিঝুমের হেঁচকি উঠে গেল মুহুর্তেই। অশান্ত’র বাড়ির সামনে দাঁড়ানো সে, অশান্ত জানতে পারলে আর আস্ত থাকবে না সে। আহনাফ হেসে বলল, “অশান্ত’র নাম শুনে হেঁচকি এলো নাকি।

নিঝুম মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলল। আহনাফ হেসে বলল, “আচ্ছা চলো। গাড়িতে মনে হয় পানি’র বোতল আছে!

নিঝুম হেঁচকি’র সাথেই বলল, আমার কাছেই পানি আছে!

বলেই ব্যাগ থেকে পানি বের করতে লাগলো। আহনাফ তার হাতের বইগুলো তখন নিজের হাতে নিল। নিঝুম পানির বোতল বের করে পানি খেতে থাকল। আহনাফ বলে উঠলো, “চলো তাহলে!

অতঃপর হাঁটা ধরল তারা। বই গুলো আহনাফের হাতেই, কিন্তু তার হাত থেকে বইগুলো কিভাবে নেবে নিঝুম, এটাই এখন তার ভাবনা। অতঃপর গাড়ির কাছে আসতেই আহনাফ গাড়ির দরজা খুলে নিঝুম কে বলল, “নাও বসো!

নিঝুম হাসার চেষ্টা করে গাড়িতে বসল। আহনাফ এবার বই গুলো এগিয়ে দিল। অতঃপর গাড়ির দরজা বন্ধ করে আবারো খুলে নিঝুম কে বলল, “সিট বেল্ট!

নিঝুম আগে থেকেই নার্ভাস! আহনাফের তৎক্ষণাৎ কথা বুঝতে সময় লাগল তার। আহনাফ মুচকি হেসে নিজেই সিট বেল্ট বেঁধে দিল। নিঝুম দম বন্ধ করে বসে রইল। আহনাফ গাড়ির দরজায় হাত রেখে নিঝুমের মাথায় হাত রেখে বলল, “তোমার বোকামি গুলো দারুন। উল্টো পথ ধরেও আমার কাছেই আসলে শেষমেষ!

বলেই গাড়ির দরজা বন্ধ করে নিজের সিটে এসে বসল। নিঝুম যেমন ছিল এখনো তেমন আছে।‌ পাশ ফিরিয়ে পাশে তাকিয়ে দেখছে আহনাফ কে। আহনাফ তার পাশে বসা। এটা ভাবতেই তার অস্থিরতা বেড়ে গেল। নিঝুম নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে বসে পড়ল। আহনাফ গান ছাড়ল। অনুপমের গাওয়া গানটা বাজছে,

“আমাকে আমার মতো থাকতে দাও
আমি নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছি
যেটা ছিলোনা ছিলোনা, সেটা না পাওয়াই থাক
সব পেলে ন*ষ্ট জীবন..!”

অতঃপর গাড়ি এসে থামলো বাড়ির কাছে। যে নিঝুম এক দন্ড কথা ছাড়া থাকতে পারে না, সে পুরো রাস্তা কথা না বলেই ছিল। আহনাফ শুধু জিজ্ঞেস করেছিল, তোমার পরিবারে কে কে আছে? নিঝুম শুধু তার উওর দিল। এরপর আর কথা হয় নি তাদের মাঝে‌। নিঝুম কে দেখতে পেয়ে ইফা খানিকটা অবাক হলো। অতঃপর তার ঘরে গিয়ে একগাদা কথা শুনাল নিঝুম। গতকাল রাত থেকে এখানে আসবার কাহিনী অবদি। ইফাও গালে হাত দিয়ে পুরোটা শুনল। অতঃপর হামি ছেড়ে বলল, “অনেক কান্ড দেখছি!

নিঝুম হেসে কলম দিয়ে মাথা চুলকাতে লাগলো। ইফা হেসে বলল, “এখন পড়া শুরু কর।

অতঃপর নিঝুম পড়া বুঝে নোট করতে লাগলো। সবকিছু নোট করা হয় নি এখনো, কিন্তু ভার্সিটিতে যাবার সময় হয়ে গেছে। তাই ইফা আর নিঝুম ঘর থেকে বের হলো। বসার ঘরে এসে আহনাফ কে বসে থাকতে দেখে ইফা বলল, “তুমি এখনো যাও নি!

“হুম তোদের জন্য বসে ছিলাম।

“কেন? অন্যসময় তো আরো আগেই চলে যাও।

আহনাফ হেসে নিঝুমের দিকে তাকিয়ে বলল, “ভাবলাম যদি আবার উল্টো পথে চলে যাস!

নিঝুম লজ্জায় চোখ মুখ খিচে ঘুড়িয়ে নিল। ইফা হেসে উঠলো। অতঃপর আহনাফের সাথেই বের হলো তারা। একটা কথা বলা হয় নি, আহনাফের বাড়ির কাছেই কিন্তু ফুলের বাগান। কাঠগোলাপ ও আছে সেখানে, নিঝুম এতোক্ষণে বুঝল আহনাফ কাঠ গোলাপ কোথায় পেতো!
মালি’রা ফুল গাছে পানি দিচ্ছে, সেখান থেকেই একটা ফুল তুলে নিল আহনাফ! নিঝুম শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল তার দিকে! সূর্যের কিরণ এসে পড়ছে তার মুখের উপর। সূর্যের উজ্জ্বল কিরণ আর এই স্নিগ্ধ ফুলের কম্বিনেশন টা দারুন লাগল নিঝুমের।

——-

তানিশা, রিয়া,দিয়া, আহিম, আফিন আর নীলাভ্র ছয়জন একসাথে। তানিশা একটু পর পরই পার্কিং লটের দিকে তাকিয়ে যাচ্ছে। আহনাফ আজ বড্ড দেরি করছে। রিয়া তার কাঁধে হাত রেখে বলল, “ওই তো এসে পড়েছে!

তানিশা তাকিয়ে দেখল গাড়ি ঢুকছে, আহনাফের গাড়ি। দাঁড়িয়ে গেল সে। আহনাফ কে গাড়ি থেকে নামতে দেখে মৃদু হাসল সে। কিন্তু হাসি বেশিক্ষণ রইল না মুখে। নিঝুম কে দেখেই চোয়াল শক্ত করে নিল তানিশা। আহনাফ হেসে নিঝুমের সাথে কথা বলছে দেখে দাঁতে দাঁত চেপে চলে গেল সেখান থেকে। আফিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আজ এই নিঝুমের কপালে দুঃখ আছে।

আহিম ভ্রু কুঁচকে নিল!

—–

শান্ত”র বাইক এসে ঢুকল ভার্সিটিতে। কোথায় ফুল দেখতে পাচ্ছে না আজ। ব্যাপারটা কি হলো? আজ পর্যন্ত এমনটা হয় নি তানিশা আহনাফ কে চিরকুট দেয় নি আর প্রতিবার’ই সেই চিরকুটের পরিবর্তে ফুল পেলো সে। এই ফুল অন্য কোন ফুল না, ব্যর্থ প্রেমের ফুল!
ভাবতেই মুচকি হাসল শান্ত!

খুঁজছে আহনাফ কে! ফুলের রহস্য ভেদ করতে হবে। মাঝপথেই আহিম কে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করল আহনাফের কথা। আহিম বলে উঠল,

“ওহ আহনাফ কে খুছজিস, আমি তো ভাবলাম মিস চশমিশের কথা জিজ্ঞেস করবি!

শান্ত’র কুল‌ মুড টা নিমিষেই হট হয়ে গেল। আহিম হেসে বলল, “কি শিকারে যাবি না আজ।

“পরে দেখছি!

“তোর শিকার বোধহয় আজ তানিশা’ই করবে।

“কেন?

“আরে, আহনাফ তো নিঝুম কে তার গাড়ি করে ভার্সিটিতে নিয়ে এলো। আপাতত এটা দেখেই তানিশার মাথায় আ*গুন জ্ব*লছে।

শান্ত কিঞ্চিত হেসে, “আমি বরং পানি দেবার ব্যবস্থা করে আসি!

বলেই রওনা দিলো আহনাফের কাছে। আহনাফ তার বেঞ্চিতে বসা ছিল। এটা তার নিত্যদিনের রুটিন। শান্ত তার পাশে এসে ধপাস করে বসে পড়ল। আহনাফ তাকাল শান্ত’র দিকে। মিটিমিটি হাসছে শান্ত। আহনাফ জিজ্ঞেস করল,

“হাসছিস কেন এভাবে?

“একজনের মাথায় আ*গুন জ্বলছে, পানি দেবার ব্যবস্থা কর!

“কি বলছিস এসব?

“নিঝুম কে নাকি গাড়ি করে নিয়ে এসেছিস

“ইফা’র সাথে ছিল, দুজনকেই একসাথে এনেছি।

“হুমমম! একজনের চোখ তো ওদিকেই পড়েছে।

“কার কথা বলছিস বল তো?

“ফুল টা কি এখনো তোর কাছে, চিরকুট টা কি পাস নি!

আহনাফ কিছু বলতে গিয়েও চুপ হয়ে গেল। কথার অর্থ বুঝতে লাগল সে। শান্ত হেসে উঠে গেল সেখান থেকে। আহনাফ আশপাশ তাকিয়ে তানিশা কে খুঁজতে লাগল। না সে নেই এখানে। হঠাৎ করেই সেদিনের কথা মনে পড়ল। কাঁদতে কাঁদতে নিঝুমের বের হয়ে যাওয়া। আজও কি তাই হবে নাকি!

নিঝুম, তিথি আর ইফা তিনজন’ই ক্লাসে যাবার উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরল। হঠাৎ করেই ইফা বলে উঠে, “আমার একটু লাইব্রেরীতে যাওয়া লাগবে। নিঝুম একটু চল না।

“না না আমি এতোক্ষণ অনেক পড়েছি, আর না!

ইফা চোখ ঘুড়িয়ে তাকাল তিথি’র দিকে। তিথি একলাফে গিয়ে দাঁড়াল নিঝুমের পিছনে। ইফা ওদিক তাকিয়ে বলতে লাগল, *শুনলাম আদনান স্যার নাকি ইদানিং লাইব্রেরী অনেকক্ষণ বসে বই পড়ে থাকেন

“সত্যি!

“চাইলে দেখে আসতে পারিস, যাবি!

তিথি আবারো এক লাফে এসে দাঁড়াল ইফা’র পাশে। নিঝুম আর ইফা হাসতে লাগল। তিথিও তাদের সাথে হাসতে থাকলো। অতঃপর ইফা তিথি’র কাঁধে হাত রেখে তাকে নিয়ে লাইব্রেরীর দিকে গেল। নিঝুম একাই হাঁটা ধরল ক্লাসরুমের দিকে। তার হাতে বইটার দিকে তাকাতেই মিটিমিটি হাসতে লাগল সে। হঠাৎ করেই কোখান থেকে দিয়া আর রিয়া এসে তার দুই হাত ধরে বসল। নিঝুম অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। রিয়া আর দিয়া তাকে টেনে নিয়ে যেতে লাগল। নিঝুম তাদের হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো।

“কোথায় নিয়ে যাচ্ছ আমায়, ছাড়ো! ছাড়ো বলছি।

“তানিশার কাছে!

*তা..তানিশা! কিন্তু কেন?

“গেলেই বুঝতে পারবে!

অতঃপর খালি ক্লাসরুমের ভেতর নিয়ে গেল নিঝুম কে। হাই বেঞ্চের উপর বসে চকলেট খাচ্ছে তানিশা। দিয়া আর রিয়া, নিঝুম কে এনে রাখল তানিশার কাছে। নিঝুম ঢোক গিলে তাকাল তানিশার কাছে। তানিশা হেসে বলল,

“কেমন আছো নিঝুম?

“আ..আমি!

“নিঝুম তো তোমরাই নাম তাই না।

“হুম ভালো!

” তা চকলেট খাবে।

নিঝুম মাথা নেড়ে না না করল। তানিশা হেসে নামল। এসে দাঁড়াল নিঝুমের সামনে। নিঝুম ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে। তানিশা চকলেট’র প্যাকেট নিঝুমের দিকে এগিয়ে বলল, “নাও খাও!

“না আমি খাবো না।

“আরে খাও না, নাও খাও!

বলেই মুখের সামনে নিয়ে জোড়াজোড়ি করতে লাগল। উপায়ান্তর না পেয়ে নিঝুম চকলেট হাতে নিল।‌ তানিশা হেসে তার দিকে ঘুরতে লাগলো। নিঝুম বলে উঠল,

“আমাকে এখানে কেন এনেছ?

“আহ এভাবেই, দেখতে ইচ্ছে হলো তোমায়। খুব সুন্দরী তুমি। ( নিঝুমের সামনে দাঁড়িয়ে ) তোমার রূপ দারুন, ( মাথায় হাত রেখে ) চুল গুলাও সুন্দর!

বলেই মাথায় হাত বোলাতে লাগল। ঠিক আহনাফের মতোই। নিঝুমের বুঝতে আর বাকি রইল না। নিঝুম শব্দ করে শ্বাস ফেলে বলল, “আপু তুমি যেমন ভাবছো তেমন কিছু না। আমি উনার কাছে যায় নি।

“না তা কেন? আহনাফ তো তোমার কাছে এসেছে তাই না!

“না তা না। আমি বলছি কি?

হঠাৎ করেই তানিশা রেগে নিঝুমের চু*লের মুঠি ধরে বসল! নিঝুম ব্যাথায় তানিশার হাত ধরে বসল।

“কি করছো কি আমার লাগছে?

“বুঝিয়েছিলাম একবার, তবুও কেন বুঝতে চাও না তুমি বলো তো। কেন?

“আমার লাগছে, ছাড়ো!

তানিশা আরো শক্ত করে চুলের মু*ঠি ধরে কাছে নিয়ে আসলো। নিঝুম রেগে ঠোঁট কামড়ে তানিশার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। তানিশা রেগে ছু*ড়ে ফেলল নিঝুম কে। তখনই হঠাৎ করে এসে আহনাফ ধরে ফেলল নিঝুম কে। নিঝুম মুখ উঠিয়ে তাকাল আহনাফ’র দিকে‌ । রিয়া আর দিয়া হতবাক। তানিশা রেগে তাকিয়ে আছে। সহ্য হচ্ছে না এসব তার। আহনাফ নিঝুম কে দাড় করিয়ে তানিশার দিকে ফিরে বলল, “আমার বন্ধুর গায়ে হাত তো*লার সাহস তুমি পাও কোথায়?

“ও‌ তোমার বন্ধু!

“হ্যাঁ, আমার বন্ধু। এরপর ওর সাথে এমন কিছু করার কথা আর ভাববেও না। চলো নিঝুম!

বলেই নিঝুমের হাত ধরে টেনে বাইরে চলে গেল। রিয়া পেছন থেকে বহুবার ডাকল আহনাফ কে। কিন্তু আহনাফ কান দিল না। তানিশা রেগে পা দিয়ে মাটিতে জোড়ে আঘাত করল। এদিকে একমাত্র নিঝুম, যে কি না কিছুই বুঝতে পারছে না। সব কিছুই মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে তার। আহনাফ তার হাত ধরে বাইরে নিয়ে আসতেই নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় সে। কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থাকে আহনাফের দিকে। আহনাফ হেসে মাথার এলোমেলো চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করে দেয়। নিঝুম চট করে বলে উঠে,”আমি আপনার বন্ধু হলাম কবে থেকে!

“তুমি না হতে চাইলে সমস্যা নেই, কিন্তু তোমাকে বাঁচানোর জন্য শুধু কথাটা বললাম!

“আপনি আমায় বাঁচান নি, বরং আরো বি*পদে ফেলেছেন। আপনার কোন বন্ধুর সাথে আমার ভালো সম্পর্ক নেই। আর সবচেয়ে বড় শ*ত্রু তো..

“অশান্ত!

“হুম! অশান্তির মূল তো তিনিই! তার মাঝে আপনার এই কথা আমার উপর কি প্রভাব ফেলবে আপনি ভাবতেও পারছেন না।

“তাহলে তুমি বলতে চাইছো তুমি আমার বন্ধু হবে না!

নিঝুম চুপ হয়ে গেল। কথা গলায় আটকে গেছে তার। আহনাফ কিঞ্চিত হেসে কিছু না বলেই চলে গেল। দূর থেকে এসব ঘটনার সাক্ষী হলো আহিম!

শান্ত বেঞ্চিতে বসে অপেক্ষা করছে আহনাফের। কিন্তু তার আগেই আহিম এসে পৌঁছাল সেখানে। পাশে বসে বলল, “চাইলে তো তুই বাঁচাতে পারতি, আহনাফ কে পাঠানোর দরকার কি ছিল?

মুখ ঘুরিয়ে আহিমের দিকে ফিরল সে। মৃদু হেসে বলল, “আমার কাজ মিস ঝুম কে জ্বালানো, বাঁচানো না।

অবাক চোখে তাকিয়ে রইল আহিম। শান্ত উঠে দাঁড়িয়ে হাত উপরে তুলে বলল, “যাই মিস চশমিশ কে একটু জ্বালিয়ে আসি!

বলেই হাঁটা ধরল সে। আহিম ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল তার যাওয়ার পথে।

—–

ওয়াশরুম থেকে মুখে পানি ছিটিয়ে বের হলো নিঝুম। বুঝতে পারে না, যা সে চায় না তাই কেন হতে হয় তার সাথে। ব্যাগের থেকে টিস্যু বের করে চোখের চশমা হাতে নিয়ে মুখ মুছে বের হতে থাকে। হঠাৎ করেই কারো বুকের সাথে ধাক্কা খেলো সে। নিঝুম দ্রুত সরে গিয়ে সরি বলতে থাকে। মানুষটি তখনো তার সামনেই দাঁড়ানো কিন্তু নিঝুম তাকে স্পষ্ট দেখতে পারছে না।

শান্ত দাঁড়িয়ে আছে নিঝুমের সামনে। নিঝুমের চোখের পাতা তীব্র ভাবে লাফাচ্ছে। মিন মিন করে কি দেখার চেষ্টা করছে। মেয়েটা বোকা নাকি, হাতে চশমা রেখে এভাবে কি দেখার চেষ্টা করছে সে। মুখে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে তার। মলিন ওষ্ঠজোড়ায় পানিতে চকচকে করছে।‌ শান্ত’র দৃষ্টি সেখানে। আহ! এ কি করছে সে? নিজের মধ্যে নেই নাকি। শুকনো ঢোক গিলল শান্ত। না আর এখানে দাঁড়ানো যাবে না। যা সে ভুলতে চাইছে সেটা দূরত্ব রেখে ভুলতে হবে।

নিঝুম খানিকক্ষণ এভাবে তাকানোর পর মনে পড়ল চশমা তার হাতে। দ্রুত চশমা পড়ে নিল চোখে। কিন্তু সামনে তাকাতেই কাউকে দেখতে পেলো না। এ কি করে সম্ভব! কেউ তো ছিল, তবে কি চলে গেল। পা বাড়িয়ে একটু এগিয়ে দেখল কেউ যাচ্ছে। মন বলছে, এই জন’ই তার সামনে দাঁড়ানো ছিল। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করল ‌ পেছন থেকে দেখেই বেশ চেনা চেনা লাগছে। চোখের দৃষ্টি এবার আতংকে রূপ নিল। এতো অশান্ত! কি সর্বনাশ! মুখ ঘুড়িয়ে দ্রুত পালিয়ে গেল নিঝুম। অশান্ত’র সামনে আজ কোনভাবেই পড়া যাবে না তার।

——-

আজ তিনদিন হলো, অশান্ত’র মুখোমুখি হয় নি নিঝুম। কোনভাবেই নয়। এর মানে তা নয় যে অশান্ত ভার্সিটিতে আসে নি। এসেছে! দু একবার দূর থেকে দেখেছে। একবার তো এমন হলো নিঝুম সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে আর অশান্ত নামছে। দুজনেই মুখোমুখি হওয়াতে নিঝুম দ্রুত উল্টো পথে হাঁটা ধরল। শান্ত ও তাই! আবারো সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল সে।

সেদিন ক্যান্টিনে এক কোনে বসে ছিল শান্ত! নিঝুম ক্যান্টিনে আসতেই অন্য রাস্তা দিয়ে চলে গেলো সে। এদিকে নিঝুম পুরো ক্যান্টিন পরিক্ষা করে অতঃপর টেবিলে বসল। ঘটনা গুলো সবার চোখ থেকে আড়াল হলেও আহিমের চোখ থেকে আড়াল হলো না। তবে প্রথমে এসব নিয়ে না ভাবলেও এখন ভাবছে নিঝুম। কারণ অশান্ত কোন কান্ড ঘটায় নি। এ কি করে হয়? অশান্ত কি শান্ত হয়ে গেল নাকি। না না, এতো সহজে তো হবার কথা না। নাকি বড় কোন কিছু, তাকে বড় কোন ফাঁদে ফেলার ফন্দি করছে না তো। এখন থেকে তো শান্ত’র সামনে পড়াই যাবে না। কিন্তু তার আগে একটা পরিক্ষা করতে হবে তাকে।

তিথি বলে উঠে, “কি পরিক্ষা করবি?

“আমার মনে হয় কি, আমি যেমন অশান্ত কে দেখে পা*লিয়ে আসি। তেমনি অশান্ত আমাকে দেখে পা*লায়।

“হতেই পারে না।

“কিন্তু আমার মনে তো হচ্ছে এটাই।

ইফা মনোযোগ দিয়ে কথা শোনার পর বলে,”এটা তবে অষ্টম আশ্চর্য হবে। শান্ত ভাইয়া কে আমি চিনি। তার মুড সুইং করে বার বার। দেখ হয়তো অন্য কাউকে হয়তো পেয়েছে। তাকে জ্বা*লাবে এখন!

তিথিও সহমত দিল ইফার কথায়। কিন্তু মন মানলো না নিঝুমের! তাকে তো একবার পরিক্ষা করতেই হবে।

ভেবে শুনে ইচ্ছে করেই দাঁড়িয়ে রইল অশান্ত’র ক্লাসের বাইরে। তানিশা, রিয়া আর দিয়ার নজরে পড়ল। তানিশা তার কাছে আসতে নিলেই রিয়া কানের কাছে এসে বলল, আহনাফ পিছনে!

কিছু না করতে পেয়ে রেগে ফুসফুস করতে করতে ক্লাসে ঢুকল তারা। নিঝুম অবশ্য তানিশা কে দেখলো না। মুখ ফিরতেই চোখাচোখি হলো আহনাফের সাথে। সেদিনের পর আহনাফের সাথে কথা হয় নি তার। আহনাফ নিঝুমের থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে ক্লাসের দিকে চলে গেল। দীর্ঘশ্বাস ফেলল নিঝুম। এবার সামনে তাকাতেই দেখল অশান্ত আসছে। আসার পথে এই আহিম, আফিন আর নীলাভ্র সাথে কি কথা নিয়ে হাসাহাসি করছে। নিঝুম মন কে শক্ত করে দাঁড়াল সেখানে। তার দৃষ্টি অশান্ত’র দিকে। অতঃপর শান্ত সামনে তাকাতেই ভড়কে গেল। নিঝুম তার বরাবর দাঁড়ানো। পা থেমে গেল মাঝপথেই। নিঝুম এগিয়ে আসতে নিল। তার এগিয়ে আসা দেখে হতচকিয়ে গেল শান্ত। কি করবে এই চশমিশ!

না আর সম্ভব না, শান্ত এবার পিছনে ঘুরল। নিঝুম অবাক হয়ে গেল। উল্টো পথেই হাঁটা ধরল শান্ত। নিঝুমের মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল, “এই অশান্ত!

তবুও অশান্ত দাঁড়ালো না। আহিম, নীলাভ্র আর আফিন হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। নিঝুম শান্ত’র পিছু পিছু যাচ্ছে। শান্ত তার হাঁটার গতি বাড়াল। নিঝুম এখন তার পিছনে দৌড়াচ্ছে। হঠাৎ করেই শান্ত কে হারিয়ে ফেলল সে। এই যা ব্যাপারটা কি হলো? অশান্ত পা*লাচ্ছে কেন তাকে দেখে!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here